Class 10 Social Science Chapter 7 পরিবেশ এবং পরিবেশের সমস্যা

Class 10 Social Science Chapter 7 পরিবেশ এবং পরিবেশের সমস্যা

প্রশ্ন পরিবেশ বলতে কী বোঝায় নিজের ভাষায় লেখো  

উত্তরঃ পরিবেশ হল সেই প্রাকৃতিক পরিপার্শ্বিকতা, যেখানে উদ্ভিদ, প্রাণীকুল এবং মানুষ সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে। এতে বায়ু, পানি, মাটি, আলো, তাপ, আবহাওয়া ও জীবজগৎ অন্তর্ভুক্ত। এই উপাদানগুলোর সমন্বয়েই প্রাণীর অস্তিত্ব ও জীবনের ভারসাম্য বজায় থাকে।

প্রশ্ন ২। পরিবেশের কয়েকটি জৈব অজৈব উপাদানের কথা উল্লেখ করো  

উত্তরঃ পরিবেশ গঠিত হয় জৈব ও অজৈব উপাদানে। জৈব উপাদান হল—উদ্ভিদ, প্রাণী ও অনুজীব অর্থাৎ জীবিত সবকিছু। অজৈব উপাদান হল—জল, মাটি, সূর্যালোক, তাপমাত্রা, মাধ্যাকর্ষণ, আকাশ এবং বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থ। প্রাণ নেই এমন প্রতিটি উপাদানই অজৈব উপাদানে পড়ে। এই জৈব-অজৈব উপাদানের ভারসাম্যের মাধ্যমেই পরিবেশ টিকে থাকে।

প্রশ্ন ৩। স্থলমণ্ডল বলতে কী বোঝায় লেখো  

উত্তরঃ স্থলমণ্ডল হল পৃথিবীর সেই অংশ যা শিলা, বালি, মাটি ও খনিজ পদার্থ দ্বারা গঠিত। এটি মূলত পৃথিবীর দৃঢ় ও কঠিন ভূভাগ, যেখানে মহাদেশ, পর্বতমালা, মালভূমি এবং উপত্যকা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। জীবজগতের বসবাস, কৃষিকাজ ও নানান মানবিক কার্যকলাপ স্থলমণ্ডলের ওপরেই নির্ভর করে।

প্রশ্ন ৪। জলমণ্ডলের মধ্যে অন্য কী কী অন্তর্ভুক্ত লেখো। 

উত্তরঃ জলমণ্ডলের ভেতর সাগর – মহাসাগর , নদ – নদী , হ্রদ ইত্যাদি জলাশয়গুলো পড়ে ।

প্রশ্ন ৫। বায়ুমণ্ডল কী দিয়ে গঠিত লেখো  

উত্তরঃ বায়ুমণ্ডল অক্সিজেন , নাইট্রোজেন , হাইড্রোজেন , কার্বন – ডাই অক্সাইড , আর্গন , নিয়ন , জেনন , ধূলিকণা ও জলীয় বাষ্প দ্বারা গঠিত ।

প্রশ্ন ৬। জীবমণ্ডলের বিস্তৃতি সম্বন্ধে লেখো  

উত্তরঃ জীবমণ্ডলে পৃথিবীর জীব , অর্থাৎ উদ্ভিদ ও প্রাণী থাকা অংশসমূহকে বোঝায় । পৃথিবীতে জীব থাকা অংশগুলো হল — স্থলপৃষ্ঠ , স্থূলভাগের কয়েক মিটার গভীরতা পর্যন্ত বিস্তৃত অংশ , সাগর মহাসাগর এবং বায়ুমণ্ডলের পাখী ও কীটপতঙ্গ উড়ে থাকা অংশ । জীবমণ্ডলে মানুষ হল একটি মাত্র প্রজাতি । জীবমণ্ডলে অতি ক্ষুদ্র প্রাণী থেকে আরম্ভ করে বৃহৎ আকারের নানা জীবজন্তু আছে । প্রচণ্ড ঠাণ্ডা কুমেরু মহাদেশ থেকে আরম্ভ করে প্রচণ্ড উষ্ণ মরুভূমিতেও নানাপ্রকার জীবজন্তু বেঁচে আছে ।

প্রশ্ন ৭। পৃথিবীর পরিবেশের প্রধান মণ্ডল চারটির মধ্যে যে সম্বন্ধ বিদ্যমান তা সংক্ষেপে লেখো  

উত্তরঃ পৃথিবীর পরিবেশের চারটি মণ্ডল — স্থলমণ্ডল , জলমণ্ডল , বায়ুমণ্ডল ও জীবমণ্ডল পরস্পর নির্ভরশীল । এই মণ্ডল কয়টির মধ্যে চলে থাকা আন্তঃক্রিয়া পৃথিবীর পরিবেশ গড়ে তুলেছে । মণ্ডল কয়টির অন্তর্গত অগণন উপাদান পারস্পরিক ক্রিয়ায় এক জটিল জালের মাধ্যমে পৃথিবীর বর্তমানের পরিবেশ নির্দ্ধারণ করছে ।একটি মণ্ডলের ভারসাম্য নষ্ট হয়, তবে তার প্রভাব অন্যান্য মণ্ডলের ওপর পড়ে এবং পরিবেশ পরিবর্তিত হয়। এই পরিবেশ পরিবর্তনশীল ।

প্রশ্ন ৮। পরিবেশের পরিবর্তনের প্রধান কারকগুলো উল্লেখ করো  

উত্তরঃ পরিবেশের পরিবর্তনের প্রধান কারকগুলো হল জনসংখ্যা বৃদ্ধি , ঔদ্যোগীকরণ , নগরীকরণ , যাতায়াত পরিবহণের পরিবর্দ্ধন ইত্যাদি পৃথিবীর পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেছে । বনাঞ্চল , জলাশয় ইত্যাদি ক্রমে সংকুচিত হওয়ায় জীবমণ্ডলের সাথে বায়ুমণ্ডলেও তার কুপ্রভাব পড়েছে । পার্বত্য অঞ্চলের সাথে সাথে মরুভূমি অঞ্চলগুলোতেও মানুষের বসতি ও ক্রিয়কলাপ প্রসারিত হওয়ায় সেসব অঞ্চলের পরিবেশ দ্রুত পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছে ।

প্রশ্ন ৯। পরিবেশের সমস্যা কী ব্যাখ্যা করো  

উত্তরঃ গত তিনটি শতকের মধ্যে মানুষের সংখ্যাগত বৃদ্ধি এবং সম্পদের প্রয়োজন এতই বেশী হয়েছে যে পরিবেশের উপাদানসমূহের মধ্যে যে স্বাভাবিক সম্পর্ক আছে সেগুলো ব্যাহত হয়েছে । এর ফলে নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে । এই সমস্যাগুলো প্রধানত পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় এগুলোকে পারিবেশিক সমস্যা বলে ।

পারিবেশিক সমস্যাগুলোকে উৎপত্তি অনুসারে নানা ধরনে বিভক্ত করা যায় ।

( ক ) ভূ – আন্দোলন জনিত সমস্যা ( ভূমিকম্প , আগ্নেয়গিরি, সুনামি ইত্যাদি ) ।

( খ ) বায়ুপ্রবাহজনিত সমস্যা ( ঘূর্ণীবায়ু , ঝড় ইত্যাদি )।

( গ ) নির্বনানীকরণজনিত সমস্যা ( ভূমিক্ষয়  ভূমিস্খলন ইত্যাদি ) ,প্রদূষণজনিত সমস্যা ( বায়ু প্রদূষণ , জলপ্রদূষণ , ভূমি প্রদূষণ ইত্যাদি ) ।

ভৌগোলিক বিস্তৃতির ওপর ভিত্তি করে সমস্যাগুলোকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়-

( ক ) স্থানীয় সমস্যা ।

( খ ) আঞ্চলিক সমস্যা । এবং

( গ ) গোলকীয় সমস্যা ।

প্রশ্ন ১০। ভৌগোলিক দিক থেকে পরিবেশের সমস্যাকে কী কী ভাগে ভাগ করা যায় লেখো  

উত্তরঃ ভৌগোলিক দিক থেকে পরিবেশের সমস্যাকে তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে—

( ক ) স্থানীয় ।

( খ ) আঞ্চলিক । ও

( গ ) গোলকীয় ।

( ) স্থানীয় সমস্যা :- উৎপত্তি ও বিস্তৃতির দিক থেকে স্থানীয় সমস্যাসমূহ এক একটি ছোট এলাকাতে সীমাবদ্ধ থাকে । যেমন — একটি ক্ষুদ্র উদ্যোগে করা সীমিত ভূমিপ্রদূষণ , বিল ভর্তি হয়ে জলের অভাব , কোন একটি স্থানে নদী দ্বারা সৃষ্ট ভাঙ্গন ইত্যাদি ।

( ) আঞ্চলিক সমস্যা :- এক একটি ভৌগোলিক অঞ্চল জুড়ে কিছু কিছু পারিবেশিক সমস্যার সৃষ্টি করে । যেমন ব্রহ্মপুত্র বা বরাক উপত্যকায় বন্যার সমস্যা , বিশাল ঔদ্যোগিক অঞ্চলের জল প্রদূষণের সমস্যা , মহানগর অঞ্চলে ভূ – গর্ভস্থ জলের অভাবজনিত সমস্যা , নদী অববাহিকার ভূমিক্ষয় সমস্যা ইত্যাদি আঞ্চলিক সমস্যার উদাহরণ ।

( ) গোলকীয় সমস্যা :- কিছু সংখ্যক সমস্যা সমগ্র পৃথিবী জুড়ে বিস্তার লাভ করে । এ ধরনের সমস্যার কোনো ভৌগোলিক সীমা থাকে না । যেমন— গোলকীয় উত্তাপ । এই সমস্যা বায়ুমণ্ডলের সাথে জড়িত হবার জন্য বিস্তৃতির দিক দিয়ে অসীম । এর প্রভাব বায়ুমণ্ডলের সাথে সাথে পৃথিবীর পরিবেশের জলভাগ , স্থলভাগ ও জীবজগতের ওপর পড়ে ।

প্রশ্ন ১১। পরিবেশের স্থানীয় সমস্যা কী ? উদাহরণসহ লেখো  

উত্তরঃ স্থানীয় সমস্যা :- উৎপত্তি ও বিস্তৃতির দিক থেকে স্থানীয় সমস্যাসমূহ এক একটি ছোট এলাকাতে সীমাবদ্ধ থাকে । যেমন — একটি ক্ষুদ্র উদ্যোগে করা সীমিত ভূমিপ্রদূষণ , বিল ভর্তি হয়ে জলের অভাব , কোনো একটি স্থানে নদী দ্বারা সৃষ্ট ভাঙ্গন ইত্যাদি ।

প্রশ্ন ১২। পরিবেশের আঞ্চলিক সমস্যার দুটো উদাহরণ দাও  

উত্তরঃ ব্রহ্মপুত্র বা বরাক উপত্যকার বন্যার সমস্যা এবং নদী অববাহিকার ভূমিক্ষয় সমস্যা ।

প্রশ্ন ১৩। কোন সব সমস্যাকে গোলকীয় পরিবেশ সমস্যা বলে তা লেখো  

উত্তরঃ বায়ু প্রদূষণ , গোলকীয় উত্তাপ , ভূমিকম্প ইত্যাদি ।

প্রশ্ন ১৪। পরিবেশের প্রধান সমস্যাসমূহ উল্লেখ করো  

উত্তরঃ পরিবেশের প্রধান সমস্যাসমূহ হল – জনবসতির প্রসার , কৃষিভূমির বৃদ্ধি , উদ্যোগ ও নগরের প্রসার , যাতায়াত পরিবহণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ইত্যাদি । এছাড়া মরুকরণ , ভূমিস্খলন , ভূমিক্ষয় , গোলকীয় উত্তাপ বৃদ্ধি , কৃত্রিম বন্যা , সাগরপৃষ্ঠের উত্থান ইত্যাদি ।

প্রশ্ন ১৫। প্রদূষণের অর্থ লেখো  

উত্তরঃ পরিবেশে ক্ষতিকারক ও অনিষ্টকারী পদার্থ যুক্ত হয়ে যখন বায়ু, জল, মাটি বা শব্দের স্বাভাবিক গুণাবলিকে নষ্ট করে, তখন তাকে প্রদূষণ বলা হয়।

প্রশ্ন ১৬। জলপ্রদূষণ কী এবং কী করে হয় লেখো

উত্তরঃ জলের সঙ্গে কোনো রাসায়নিক পদার্থ , পদার্থকণা , অনুজীব , বিকিরণ ইত্যাদি মিশে জলের স্বাভাবিক গুণের পরিবর্তন ঘটায় । গুণের পরিবর্তন ঘটানো এই পরিবর্তনকে জল প্রদূষণ বলা হয় । সাধারণত ঔদ্যোগিক আবর্জনা , নগরের বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা নগর অঞ্চলের নালা – নর্দমা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দূষিত জল নদ – নদীতে পড়ে এবং জলের প্রদূষণ ঘটে । জল প্রদূষণ বিভিন্নভাবে ঘটতে পারে :

( ক ) জলের লবণতা বা ক্ষারকীয়তা বৃদ্ধি পেলে ।

( খ ) শিল্পের বর্জ্য পদার্থ জলে মিশে ।

( গ ) কৃষিজমিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বৃষ্টির জল দ্বারা বাহিত হয়ে ।

(ঘ) তেজষ্ক্রিয় পদার্থের ( সমুদ্রের তলায় পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ ইত্যাদি ) দ্বারা জল প্রদূষিত হতে পারে ।

(ঙ ) সমুদ্রে তৈলবাহী জাহাজ দুর্ঘটনাগ্রস্ত হলে জল দূষিত হয়।

প্রশ্ন ১৭। মাটি প্রদূষণ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো। 

উত্তরঃ মাটি প্রদূষণের কারণগুলোকে দুভাগে ভাগ করা যায় :-

( ক ) প্রাকৃতিক কারণ ।

( খ ) অপ্রাকৃতিক কারণ ।

( ) মাটি দূষণের প্রাকৃতিক কারণ

( ১ ) বায়ুপ্রবাহ , জলস্রোত , নদ – নদী ভূমিক্ষয় করে এবং মাটি স্তর ধুয়ে নিয়ে যায় ।

( ২ ) আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত , ভস্ম , ছাই ইত্যাদি উর্বর ভূমির ওপর পড়ে এবং কৃষিজমি নষ্ট করে ।

( ৩ ) অ্যাসিড বৃষ্টিপাতের ফলে মাটির গুণ নষ্ট হয়ে যায় ।

( ৪ ) পাহাড় থেকে ধ্বস নামলে ও উপকূলে জলোচ্ছাস ঘটলে মাটি প্রদূষিত হয় ।

( ) মাটি দূষণের অপ্রাকৃতিক কারণ :-

( ১ ) মানুষের নানা প্রকারের কাজকর্মের ফলে মাটি দূষিত হয়ে পড়ে ।

( ২ ) মানুষের যানবাহনের পরিত্যক্ত তেল , শহরের আবর্জনা, শিল্পের বর্জ্যপদার্থ , রাসায়নিক দ্রব্য প্রভৃতি মাটি দূষণের এক অন্যতম কারণ ।

( ৩ ) তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিত্যক্ত ছাই মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে ।

( ৪ ) আণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের তেজষ্ক্রিয় বর্জ্যপদার্থ ব্যাপক এলাকায় মাটি প্রদূষিত হয় ।

( ৫ ) ঘর – বাড়ি ও রাস্তাঘাট নির্মাণ , ছাই আবর্জনা নিক্ষেপ , পলিথিন প্যাকেট প্রভৃতি মাটির দূষণ ঘটায় ।

( ৬ ) আধুনিক যুগে কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার , জলসিঞ্চন , কীটনাশক ঔষধ প্রয়োগে মাটির গঠন ও স্বাভাবিক গুণ নষ্ট হয়ে যায় ।

( ৭ ) ভূ – গর্ভ থেকে কয়লা , খনিজ তেল ইত্যাদি উত্তোলন করার সময় অসাবধানবশত কিছু অংশ নিকটবর্তী মাটিতে মিশে এবং মাটি প্রদূষিত হয় ।

প্রশ্ন ১৮। বায়ু কীভাবে প্রদূষিত হয় লেখো  

উত্তরঃ প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট কারণে বায়ুমণ্ডলে কঠিন , তরল বা গ্যাসীয় পদার্থের সংযোজন ঘটলে , বায়ুর স্বাভাবিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে । এই পরিবর্তন জীব ও জড় পদার্থের ক্ষতিসাধন করলে , বায়ু প্রদূষণ বলা হয় । বায়ু প্রদূষণের কারণগুলোকে দুভাগে ভাগ করা যায়

( ক ) প্রাকৃতিক কারণ ।

( খ ) অপ্রাকৃতিক কারণ ।

( ) প্রাকৃতিক কারণ :- ( ১ ) জলাভূমির জৈব পদার্থ পচে মিথেন গ্যাসের সৃষ্টি হয় ও বায়ুকে দূষিত করে ।

( ২ ) অগ্ন্যুৎপাতের সময়ে সালফাইড , সালফার ডাই – অক্সাইড , কার্বন মনোক্সাইড প্রভৃতি আগ্নেয়গিরির মুখ থেকে বেরিয়ে আসে ও বায়ুতে মিশে বায়ুকে দূষিত করে ।

( ৩ ) দাবানলের ফলেও বায়ু দূষিত হয় ।

( ৪ ) শুষ্ক অঞ্চল ও মরুভূমি অঞ্চলের ধূলিকণাও বায়ুতে মিশে বায়ু প্রদূষিত করে ।

( ) বায়ুদূষণের অপ্রাকৃতিক কারণ :- ( ১ ) কলকারখানার দূষিত গ্যাস , তৈল শোধনাগারের নিঃসৃত গ্যাস , সিমেন্ট কারখানার প্রচুর ধূলিকণা বায়ু দূষিত করে ।

( ২ ) যানবাহনের নিঃসৃত কার্বন মনোক্সাইড , কার্বন গ্যাস শহরাঞ্চলের বায়ুদূষণের এক অন্যতম কারণ ।

( ৩ ) তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ধোঁয়া , ছাই , ময়লা , কার্বন – ডাই – অক্সাইড বায়ু দূষিত করে ।

( ৪ ) পারমানবিক শক্তি কেন্দ্রের এবং ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম খনিকেন্দ্রে নিষ্কাশিত গ্যাস ও তেজষ্ক্রিয় পদার্থ বাতাসে মিশে বায়ু প্রদূষিত করে ।

( ৫ ) আণবিক পরীক্ষা – নিরীক্ষা ও বোমা বিস্ফোরণ ব্যাপক অঞ্চলের বায়ু দূষিত করে ।

( ৫ ) এছাড়া গৃহস্থালির জ্বালানি , শহরের স্তূপীকৃত আবর্জনা , নোংরা পয়ঃপ্রণালী থেকে নির্গত গ্যাস বায়ু দূষণের কারণ ।

প্রশ্ন ১৯। মরুভূমি কাকে বলে ? মরুময়তার সংজ্ঞা দাও  

উত্তরঃ মরুভূমি হল এমন একটি পরিবেশিক অবস্থা যেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অতি কম ও বাষ্পীভবন বেশি । গাছ – পালা কম । মরুভূমি হল শুষ্ক পরিবেশ । মরুভূমি হল এমন একটি প্রক্রিয়া যে ক্রান্তীয় অঞ্চলের উৎপাদনক্ষম ভূমিকে মরুভূমিতে পরিণত করে । অর্থাৎ মরুকরণ প্রকৃতপক্ষে নিকটবর্তী এলাকাগুলোতে মরুভূমির সম্প্রসারণ ঘটাকে বোঝায় । ১৯৭৭ সালে আফ্রিকার নাইরোবিতে রাষ্ট্রসংঘের এক সম্মেলনে মরুকরণের একটি সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল এইভাবে — ‘ মরুকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া যেটা ভূমির জৈবিক সম্ভাবনা বা ক্ষমতা বিনষ্ট করে অবশেষে মরুসদৃশ অবস্থার সৃষ্টি করে । মরুকরণ প্রক্রিয়া মরুভূমিগুলোর সম্প্রসারণ ঘটায় ও নতুন নতুন স্থান মরুভূমিতে পরিণত করে ।

প্রশ্ন ২০। মরুময়তার কারণ দর্শাও  

উত্তরঃ মরুময়তার পেছনে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট উভয় কারণই দায়ী। প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে শুষ্ক আবহাওয়া, বৃষ্টিপাতের অভাব ও গোলকীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি প্রধান। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খরা দেখা দেয়, যার ফলে মাটি শুষ্ক ও অনুর্বর হয়ে পড়ে এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এর ফলে ভূমির উৎপাদনক্ষমতা কমে যায় এবং মরুকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
  অন্যদিকে, মানুষের কর্মকাণ্ডও মরুময়তার জন্য বড় কারণ। অতিরিক্ত পশুচারণ, অরণ্য ধ্বংস, কৃষির অতিরিক্ত বিস্তার, এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মরু ও আধা-মরু অঞ্চলে মানব কার্যকলাপ বেড়ে গিয়ে মরুভূমি বিস্তারে সহায়তা করছে। বিশেষত, গোলকীয় উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে এই প্রক্রিয়াটি আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

প্রশ্ন ২১। মরুময়তার সমস্যার সমাধান সম্ভব কি ? যুক্তি দাও  

উত্তরঃ মরুময়তার সমস্যার সমাধান অবশ্যই সম্ভব, তবে এর জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি। এই সমস্যা শুধু একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের নয়, বরং বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলছে। গোলকীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি, বন ধ্বংস ও অতিরিক্ত ভূমি ব্যবহার মরুকরণকে ত্বরান্বিত করছে। যদি মানব ক্রিয়াকলাপ প্রকৃতির অনুকূলে পরিচালিত হয়, যেমন—বনায়ন, টেকসই কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ, জল সংরক্ষণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি—তবে মরুময়তা রোধ করা সম্ভব। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টা ও বৈশ্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে সম্ভবপর হবে। তাই পরিবেশ সংরক্ষণে সকলের মিলিত ভূমিকা একান্ত প্রয়োজন।

প্রশ্ন ২২। গোলকীয় উত্তাপ বৃদ্ধি কী ? এর কারকগুলো উল্লেখ করো  

উত্তরঃ বাতাসে ক্রমাগত কার্বন – ডাই – অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে । সালোক – সংশ্লেষণ বা অন্য কোন পদ্ধতিতে কার্বন শোষিত হচ্ছে না । এর ফলে কার্বন চক্রে বিশৃঙ্খলতা ভয়াবহরূপে বাড়ছে । এর ফলে ইনফ্রারেড বিকিরণ ও তাপ তরঙ্গ বাড়ছে । বাতাসে কার্বন – ডাই – অক্সাইডের ঘনত্বের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়াতে আমাদের চারদিকে CO₂ এর একটি আবরণ সৃষ্টি হয়েছে । যার ফলস্বরূপ বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে । এই অবস্থাকেই গোলকীয় উত্তাপ বৃদ্ধি ( Global warming ) বলে ।

গোলকীয় উত্তাপ বৃদ্ধির কারক হিসেবে বলা যায় — অরণ্য ধবংস , আর্দ্র ভূমি ধ্বংস ( Wetland ) , কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও ঔষধের প্রয়োগ , মরুপ্রান্তীয় অঞ্চলে অত্যধিক পশুচারণ ইত্যাদি । মানুষের ক্রিয়াকলাপই প্রধান কারক ।

প্রশ্ন ২৩। গোলকীয় উত্তাপ বৃদ্ধি কী ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করবে লেখো  

উত্তরঃ গোলকীয় উত্তাপ বৃদ্ধি নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে । মেরু অঞ্চলের বিরাট বরফস্তূপের গলন , সাগরের জলপৃষ্ঠের উত্থান , উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের জন্ম , বৃদ্ধি ও ভৌগোলিক বিতরণের পরিবর্তন , শস্য উৎপাদন হ্রাস , মরুকরণ ইত্যাদি প্রধান । বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ আরও ২-৩ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে জমা হয়ে থাকা বরফগুলো গলবে এবং সাগরের জলপৃষ্ঠ প্রায় ১ মিটার ওপরে উঠে আসবে এবং পৃথিবীর উপকূলের প্রায় ৫ নিযুত বর্গ কিলোমিটার পরিমাণের ভূমি জলমগ্ন হবে । অনেক জনবসতিপূর্ণ দ্বীপ , প্রবাল দ্বীপ জলে ডুবে যাবে ।

প্রশ্ন ২৪। গোলকীয় উত্তাপ বৃদ্ধি রোধ করার উপায় কী

উত্তরঃ গোলকীয় উত্তাপ বৃদ্ধি একটি গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা, যার প্রভাব সমগ্র পৃথিবীতে পড়ছে। এই উত্তাপ বৃদ্ধি রোধ করার জন্য আমাদের জীবনযাপন ও শিল্প কার্যকলাপে সচেতন পরিবর্তন আনা জরুরি।

প্রথমত, কলকারখানা ও যানবাহনের নির্গত দূষিত গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কলকারখানার ধোঁয়া শোধন করা এবং প্রতিটি কারখানায় বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ প্লান্ট স্থাপন করা উচিত।

দ্বিতীয়ত, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যেমন—কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সীমিত করতে হবে, কারণ এগুলো প্রচুর কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে। এর পরিবর্তে সৌরশক্তি, পবনশক্তি, ভূ-তাপ শক্তি, জোয়ার-ভাটা শক্তির মতো বিকল্প ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার করা উচিত।

তৃতীয়ত, বৃক্ষরোপণ ও বনভূমি সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাছ কার্বন গ্রহণ করে এবং পরিবেশকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

চতুর্থত, এলোমেলোভাবে শিল্পকারখানা গড়ে না তুলে নির্দিষ্ট শিল্পাঞ্চলে কারখানা স্থাপন করলে লোকালয় দূষণের প্রভাব থেকে কিছুটা মুক্ত থাকবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষের সচেতনতা। দূষণকারী জিনিসপত্রের ব্যবহার সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের মতো গ্যাস ব্যবহারে সতর্কতা ও বিকল্প পদ্ধতির প্রসার ঘটাতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই গোলকীয় উত্তাপ বৃদ্ধিকে রোধ করা সম্ভব।

প্রশ্ন ২৫। তোমার নিজের বসত বাটি এলাকায় পরিবেশের কোনো সমস্যা আছে কি ? যদি আছে তার কারণ ব্যাখ্যা করো এবং সমাধানের উপায় চিন্তা করে লেখো  

উত্তরঃ হ্যাঁ, আমার বসতবাটি এলাকায় পরিবেশের একটি বড় সমস্যা হলো বায়ু ও শব্দদূষণ। মূলত যানবাহনের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে প্রতিদিন প্রচুর ধোঁয়া ও শব্দ সৃষ্টি হয়। রাস্তার ধারে অনেক ছোট ছোট দোকান ও অস্থায়ী স্থাপনা রয়েছে, যেগুলো থেকে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় আশপাশে, যার ফলে মাটিদূষণ এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।

এই সমস্যাগুলোর কারণ হলো—

  1. যথাযথ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের অভাব
  2. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতি
  3. গাছপালা ও সবুজ এলাকার অভাব
  4. মানুষের সচেতনতার অভাব

সমাধানের উপায়:

  1. ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও নির্দিষ্ট সময়ে ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ করা।
  2. এলাকাভিত্তিক বর্জ্য সংগ্রহ ও নিষ্পত্তির জন্য আধুনিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
  3. রাস্তার ধারে ও ফাঁকা জায়গায় গাছ লাগানো এবং সবুজায়নের উদ্যোগ নেওয়া।
  4. এলাকাবাসীকে সচেতন করার জন্য স্কুল, ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা।
  5. স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা প্রয়োগ করা।

এই পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করলে বসতবাটি এলাকার পরিবেশ অনেকটাই সুস্থ ও বাসযোগ্য হয়ে উঠবে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *