১। ভারত এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে জলপথ আবিষ্কার করা প্রথম পর্তুগিজ কে ছিলেন ? তিনি কখন এবং ভারতের কোথায় প্রথম উপস্থিত হয়েছিলেন ?
উত্তরঃ ভারত এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে জলপথ আবিষ্কার করা প্রথম পর্তুগিজ ছিলেন নাবিক ভাস্কোডাগামা। তিনি ১৯৪৮ সালে দক্ষিণ ভারতের কালিকট বন্দরে উপস্থিত হয়েছিলেন।
প্রশ্ন ২। জলপথে পৃথিবী প্রদক্ষিণে সফল ইংরেজ নাবিক কে ছিলেন ?
উত্তরঃ জলপথে পৃথিবী প্রদক্ষিণে সফল ইংরেজ নাবিক ছিলেন ফ্রান্সিস ড্রেক।
প্রশ্ন ৩। কোন ইংরেজ নাবিক ভারতে প্রথম এবং কখন এসেছিলেন ?
উত্তরঃ ইংরেজ নাবিক জেম মিলডেন হল ভারতে প্রথম। ১৫৯৯ সনে এসেছিলেন।
প্রশ্ন ৪। ব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী কখন, কোথায় গঠিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ ব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ১৬০০ সালে, লণ্ডনে গঠিত হয়েছিল।
প্রশ্ন ৫। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ভারতে ঘাটি স্থাপনের দুটি উদ্দেশ্য লিখ।
উত্তরঃ ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ভারতে ঘাটি স্থাপনের প্রথম এবং প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ব্যাবস্থা বাণিজ্য করা। এছাড়া দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসা বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে ভারতের শাসন ব্যাবস্থা গ্ৰহন করা।
প্রশ্ন ৬। ভারতের কোথায়, কখন ইংরেজদের প্রথম বাণিজ্য কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছিল ?
উত্তরঃ ভারতের মসলিপট্টমে, ১৬১১ সালে ইংরেজদের প্রথম বাণিজ্য কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছিল।
প্রশ্ন ৭। ‘ফোর্ট উইলিয়াম’ কি ?
উত্তরঃ ‘ফোর্ট উইলিয়াম’ একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র। পরবর্তীকালে এটি সামরিক দুর্গে পরিণত হয়।
প্রশ্ন ৮। ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালকে কোন দুটি মূল ভাগে ভাগ করা যায় লিখ।
উত্তরঃ ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালকে যে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় সেগুলি হল।
(১) মোগল সাম্রাজ্যের পতন থেকে শুরু করে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ পর্যন্ত।
(২) ১৮৫৮ সাল থেকে ১৯৪৭ সালে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর পর্যন্ত।
প্রশ্ন ৯। ‘ভারত সরকার আইন’ কে, কখন, কী উদ্দেশ্যে প্রণয়ন করেছিল ?
উত্তরঃ ব্রিটিশ সংসদ, ১৮৫৮ সালের ২রা আগষ্ট ‘ভারত সরকার আইন প্রণয়ন করেছিল।
প্রশ্ন ১০। ‘ভারতীয় পরিষদ আইন’ কখন, কী উদ্দেশ্যে প্রণয়ন হয়েছিল ?
উত্তরঃ ‘ভারতীয় পরিষদ আইন’ ১৮৬১ সালে, আধুনিক প্রশাসন ব্যাবস্থার সঙ্গে শিক্ষিত ভারতবাসীকে যুক্ত করার উদ্দেশ্যে প্রণয়ন করা হয়েছিল।
সংক্ষিপ্ত / দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য ইংরেজদের উদ্যোগ কখন সম্পূর্ণ হয়েছিল ? পদক্ষেপগুলো সংক্ষেপে লিখ।
উত্তরঃ ইংরেজদের ভারতে বাণিজ্য চুক্তি করার উদ্যোগ ১৫৯৯ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু হয়। ১৬০০ সালে ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথ কোম্পানীকে প্রাচ্যের সঙ্গে বাণিজ্য করার একচেটিয়া অধিকার দেন। প্রথমে, মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর এর রাজত্বকালে ইংরেজ বণিকরা সুরাট বন্দরে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন। ১৬১৫ সালে, ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের দূত স্যার টমাস রো জাহাঙ্গীরের দরবারে গিয়ে সুরাট ছাড়াও আগ্রা ও আহমেদাবাদে বাণিজ্য কুঠি স্থাপনের অনুমতি লাভ করেন।
১৬৩৯ সালে, ফ্রান্সিস ডে চন্দ্রগিরি রাজা থেকে চেন্নাই (মাদ্রাজ) শহরের কাছে একটি বাণিজ্য কুঠি তৈরি করেন। পরবর্তীতে, ইংল্যান্ডের রাজা চার্লস ১৬৬১ সালে পর্তুগীজ রাজকন্যা ক্যাথারিন কে বিবাহ করে বোম্বাই দ্বীপটি যৌতুক হিসেবে লাভ করেন। ১৬৮৮ সালে কোম্পানি তাদের কার্যালয় সুরাট থেকে বোম্বাইয়ে স্থানান্তরিত করে।
১৬৯০ সালে, ইংরেজ কর্মচারী জব চার্ণক কলকাতার সুতানুটি, কালীঘাট ও গোবিন্দপুর অঞ্চলে জমিদারী লাভ করে কলিকাতা শহর প্রতিষ্ঠা করেন এবং ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণ করেন। এর মাধ্যমে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে তিনটি প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র— কলকাতা, মাদ্রাজ, বোম্বাই স্থাপন করে।
প্রশ্ন ২। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী কীভাবে ভারতের তিনটি মূল স্থানে বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপন করেছিল ? তাদের তিনটি মূল কৌশল সম্পর্কে লিখ।
উত্তরঃ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি ভারতের তিনটি মূল স্থানে বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপন করার জন্য কয়েকটি কৌশল অবলম্বন করেছিল। প্রথমত, ১৬১১ সালে ইংরেজরা গোলকুণ্ডা রাজ্যের সুলতানের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মছলিপট্টমে একটি বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপন করে। দ্বিতীয়ত, ১৬৩৬ সালে আরমা গ্রামের বাণিজ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে কোম্পানি দক্ষিণ ভারতে তাদের প্রভাব বৃদ্ধি করে। পরবর্তীতে, ১৬৩৯ সালে চন্দ্রগিরি রাজার সঙ্গে চুক্তি করে ফোর্ট সেন্ট জর্জ নামে মাদ্রাজের নিকট একটি নতুন বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। তৃতীয়ত, ১৬৬১ সালে ইংল্যান্ডের রাজা চার্লস II পর্তুগীজ রাজকন্যা ক্যাথারিনকে বিবাহ করে বোম্বাই নগর লাভ করেন, যা ১৬৬৮ সালে ইংরেজ কোম্পানিকে পঞ্চাশ হাজার পাউন্ডে হস্তান্তর করা হয়।
সবশেষে, ১৬৯০ সালে কোম্পানির কর্মী জব চার্ণক সিরাজউদ্দৌলার সাথে চুক্তি করে কলিকাতা, সুতানুটি এবং গোবিন্দপুর নামে তিনটি গ্রামের জমিদারি লাভ করে এবং এখানে একটি বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপন করে। এই তিনটি স্থানের সমন্বয়ে পরে কলিকাতা নগরের ভিত্তি স্থাপিত হয়, যার নাম রাখা হয় ফোর্ট উইলিয়াম।
প্রশ্ন ৩। ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যেবাদ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে তুলতে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর কোন ব্যক্তি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন ? তিনি কী কী কৌশলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন চারটি যুক্তি দেখাও।
উত্তরঃ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির রবার্ট ক্লাইভ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বিভিন্ন কূটনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। প্রথমত, ক্লাইভ অন্য ইউরোপীয় বণিক কোম্পানিগুলিকে ভারত থেকে বিতাড়িত করার পরিকল্পনা করেন। দ্বিতীয়ত, তিনি দেশীয় রাজাদেরকে যুদ্ধ বা মিত্রতার মাধ্যমে কোম্পানির অনুগত করেন। তৃতীয়ত, বাংলার নবাব, হায়দ্রাবাদের নিজাম, অযোধ্যার নবাব এবং রাজপুতানার রাজাদেরকে কোম্পানির সঙ্গে মিত্রতা করতে বাধ্য করেন। চতুর্থত, পলাশী যুদ্ধে (১৭৫৭) তিনি বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে কৌশলে পরাজিত করে কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। এই কৌশলগুলির মাধ্যমে ক্লাইভ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তি শক্তিশালী করেন।
প্রশ্ন ৪। সিপাহী বিদ্রোহের চারটি কারণ লিখ।
Ans.সিপাহী বিদ্রোহের চারটি প্রধান কারণ হলো:
১. রাজনৈতিক কারণ: লর্ড ডালহৌসীর রাজ্য অধিকার নীতি, যেমন পেশোয়া দ্বিতীয় বাজীরাও এবং নানা সাহেবকে বৃত্তি থেকে বঞ্চিত করা, ভারতীয় রাজাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল। এই কারণে অনেক রাজা ও নবাব ইংরেজদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হন।
২. অর্থনৈতিক কারণ: ব্রিটিশ শাসনের অধীনে অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়েছিল। বেন্টিঙ্কের আমলে নিষ্কর জমি বাজেয়াপ্ত করায় অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছিল এবং দেশীয় রাজ্যের অধিকারী কর্মচারীরা বেকার হয়ে যান, যা জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করেছিল।
৩. সামাজিক সংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ: ইংরেজ সরকারের সামাজিক সংস্কার, যেমন সতীদাহ প্রথার বিলোপ ও হিন্দু বিধবার পুনর্বিবাহ আইন, হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল। তাদের মনে হয়েছিল যে ইংরেজরা তাদের ধর্ম নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
প্রশ্ন ৫। সিপাহী বিদ্রোহের চারটি উল্লেখযোগ্য ফলাফল লিখ।
সিপাহী বিদ্রোহের চারটি উল্লেখযোগ্য ফলাফল হলো:
১. ইংরেজ সরকারের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন: সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার কোম্পানি শাসন বাতিল করে ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ সরকারের হাতে তুলে নেয়। ১৮৫৮ সালের ১লা নভেম্বর ভারত শাসন আইন প্রণীত হয়, যার মাধ্যমে ভারতে কোম্পানি সরকারের অধিকার শেষ হয়ে ব্রিটিশ রাজ্যের সরাসরি শাসন শুরু হয়। এ সময় ভারত সচিবের পদ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৫ সদস্যের একটি পরিষদ গঠন করা হয়।
২. নতুন সামরিক ব্যবস্থা: বিদ্রোহের পর ইংরেজরা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সংস্কার আনে। সিপাহীদের মধ্যে অসন্তোষের কারণে সিপাহী বাহিনীতে ভারতের সৈন্য সংখ্যা কমিয়ে আনা হয় এবং সৈন্যদের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা স্থাপন করতে ব্রিটিশরা সতর্ক পদক্ষেপ নেয়।
৩. দেশীয় রাজন্যদের ভূমিকা পরিবর্তন: সিপাহী বিদ্রোহের পর দেশীয় রাজন্যবর্গের ভূমিকা নতুন করে নির্ধারিত হয়। যারা বিদ্রোহের সময়ে ব্রিটিশদের পাশে ছিল, তাদের পুরস্কৃত করা হয় এবং তারা রাজ্য পরিচালনায় আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে।
৪. সামাজিক সংস্কৃতির পরিবর্তন: সিপাহী বিদ্রোহের পর ভারতীয় সমাজে আধুনিক পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। বিদ্রোহের পরের সময়কাল থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আধুনিক শিক্ষা, শিল্প এবং সামাজিক সংস্কারের সূচনা হয়, যা দেশটির পরবর্তী উন্নতির পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রশ্ন ৬। ‘ভারত সরকার আইন’-এর মাধ্যমে চারটি পরিবর্তন উল্লেখ করা।
উত্তরঃ ‘ভারত সরকার আইন’-এর মাধ্যমে চারটি পরিবর্তন:
(১) গভর্নর–জেনারেলকে ভাইসরয় হিসেবে খেতাব দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সরকারের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
(২) ভাইসরয় এবং প্রাদেশিক গভর্নরদের নিয়োগের ক্ষমতা ব্রিটিশ সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হয়, এবং কোম্পানির সামরিক বাহিনী ব্রিটিশ সরকারের অধীনে আনা হয়।
(৩) ভারত সচিব এবং ব্রিটিশ সরকারের অন্যান্য কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ভারত থেকে সংগৃহীত রাজস্ব দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
(৪) ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং নিজেকে মহারানী ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধি ঘোষণা করে ভারতীয় প্রজা ও দেশীয় শাসকদের মধ্যে সৃষ্ট সন্দেহ ও অশান্তি দূর করতে চেয়েছিলেন।
প্রশ্ন ৭। লর্ড ক্যানিং–এর দুটি প্রধান সংস্কারের বিষয়ে লিখ।
উত্তরঃ লর্ড ক্যানিং–এর দুটি প্রধান সংস্কার:
(১) উডের শিক্ষা সংস্কার প্রকল্প প্রবর্তন করে প্রাদেশিক শিক্ষাবিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন।
(২) সেনাবাহিনীতে মিশ্রিত ভারতীয় সেনা গোষ্ঠী গঠন করে বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের সৈন্যদের একত্রিত করেন, যাতে ইউরোপীয় সেনাও ছিল।
প্রশ্ন ৮। ‘ভারতীয় পরিষদ আইন’র দুটি গুণ ও দুটি দোষ লিখ।
উত্তরঃ ভারতীয় পরিষদ আইনের দুটি গুণ:
(১) এই আইনে একটি পাঁচ সদস্যের কার্যবাহী পরিষদ গঠনের প্রস্তাব ছিল। ভারত সচিবকে তিনজন সদস্য মনোনীত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়, যাদের মধ্যে অন্তত দশ বছর ভারতে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা উচিত ছিল। ব্রিটিশ সংসদ আরও দুজন সদস্যকে নিয়োগ করতে পারত, একজন আইনি সদস্য এবং অপরজন বিত্তীয় সদস্য হিসেবে।
(২) কার্যবাহী পরিষদ পরিচালনার সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব ভাইসরয়কে দেওয়া হয়েছিল। ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং প্রথমে পরিষদের সদস্যদের মধ্যে দপ্তর ভাগ করে দেন এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সদস্যদের ভাইসরয়ের পরামর্শ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। এর ফলে কেবিনেট শাসন প্রণালীর সূচনা হয়, যেখানে ভাইসরয়ের পরামর্শেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো।
ভারতীয় পরিষদ আইনের দুটি দোষ:
(১) এই আইনে ভারতীয়দের আইনসভায় সদস্যপদ দেওয়া হলেও, তারা প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় জনসাধারণের প্রকৃত প্রতিনিধি ছিল না। তারা মূলত উচ্চবংশজাত এবং সম্ভ্রান্ত ভূস্বামীদের প্রতিনিধি ছিল, যারা সাধারণ জনগণের মতামত এবং দাবিকে প্রতিফলিত করতে পারেনি।
(২) কেন্দ্রীয় আইনসভা রাজস্ব, প্রতিরক্ষা, এবং সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে পরামর্শ ও আইন প্রণয়নের ক্ষমতা পেলেও, ভাইসরয়কে প্রস্তাবিত আইন অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে ভারতীয় পরিষদের প্রভাব সীমিত ছিল এবং ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত ছিল।
প্রশ্ন ৯। ইংরেজ শাসনকালে স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসনের মাধ্যমে আসা পরিবর্তন সমূহ নিয়ে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ইংরেজ শাসনকালে স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। ১৮৭০ সালে লর্ড মেয়োর শাসনকালে প্রথমবারের মতো বিত্তীয় ব্যবস্থাকে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক স্তরে ভাগ করা হয় এবং এর সাথে সঙ্গতি রেখে নগর সমিতি ও জেলা পরিষদ গঠন করা হয়। লর্ড রিপনের সময়ে স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন ব্যবস্থায় আরও উন্নতি আসে। তিনি লোক্যাল বোর্ড গঠন করে গ্রাম্য এলাকার শাসন, জনস্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট নির্মাণ, শিক্ষা, মহামারী নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কার্যক্রমের দায়িত্ব ওই বোর্ডগুলির ওপর ন্যস্ত করেন। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনের ক্ষমতা ও স্বাধীনতা বৃদ্ধি পায়। তবে, স্বায়ত্ব শাসন ব্যবস্থা পূর্বেও মুম্বাই প্রেসিডেন্সিতে কিছুটা প্রচলিত ছিল, তবে লর্ড রিপনের সময় তা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়।প্রশ্ন ১০। প্রশাসনিক সেবার ভারতীয়দের কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ? এই সেবার বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ১৮৫৮ সালের পর ব্রিটিশ সরকার ভারতের প্রশাসনিক সেবায় ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্তির জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও, প্রকৃতপক্ষে তা ছিল খুবই সীমিত এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া ছিল বৈষম্যমূলক। ১৮৫৮ সালে মহারানীর ঘোষণাপত্রে ব্রিটিশরা ভারতীয়দের অসামরিক সেবায় নিযুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তবে বাস্তবে ভারতীয়দের এই সেবায় অন্তর্ভুক্তি ছিল এক ধরনের কৌশলপূর্ণ বাধা। ব্রিটিশরা তাদের নিজস্ব সুবিধা রক্ষা করতে এবং প্রশাসনে তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ভারতীয়দের অনেক ক্ষেত্রেই উচ্চপদে নিযুক্তির সুযোগ সীমিত রাখে।
১৮৬১ সালে, ভারতীয়দের অসামরিক সেবায় নিযুক্তির ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করা হয়, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল মহারানীর ঘোষণার প্রতিশ্রুতি রূপায়ণ করা। এই কমিটির পরামর্শে ১৮৬১ সালে ভারতীয় লোকসেবা আইন প্রণীত হয়। তবে, এই আইন শুধুমাত্র নীচু স্তরের চাকরির জন্য ছিল, উচ্চপদে ইংরেজদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছিল।
১৮৬৩ সালে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম ভারতীয় হিসেবে ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। পরবর্তীতে, ১৮৭০ সালে ভারতীয় সরকার আরও একটি আইন প্রণয়ন করে, যার মাধ্যমে ভারতীয়দের জন্য অসামরিক সেবায় যোগদানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়, তবে বাস্তবে এটি খুবই অপ্রতুল ছিল। ১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর, কংগ্রেস সরকারের কাছে ভারতীয়দের জন্য প্রশাসনিক পদে অধিক সুযোগের দাবি তোলে। এর ফলস্বরূপ ১৮৮৬ সালে ভাইসরয় লর্ড ডাফরিন একটি আয়োগ গঠন করেন এবং তার প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয় যে, গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহ ইংরেজদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হোক এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা শুধুমাত্র ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হোক।
এই পদক্ষেপগুলি ভারতীয়দের জন্য কিছু সুযোগ সৃষ্টি করলেও, ব্রিটিশ শাসনের অধীনে তাদের ভূমিকা ছিল সীমাবদ্ধ এবং বৈষম্যমূলক।
প্রশ্ন ১১। ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত এবং স্বাধীন ভারতে প্রশাসনিক সেবা সম্পর্কে তিনটি পার্থক্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত এবং স্বাধীন ভারতে প্রশাসনিক সেবা সম্পর্কে তিনটি পার্থক্য হল—
(ক) ব্রিটিশ শাসনকালে অসামরিক লোকসেবার প্রার্থীর বয়সের উচ্চসীমা ২২ বছর ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর বয়সের উর্দ্ধসীমা ২৫ বছর করা হয়েছে।
(খ) ব্রিটিশ শাসনকালে সর্বভারতীয় পর্যায়ে লোকসেবা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করা হয়েছিল। স্বাধীন ভারতবর্ষে সর্বভারতীয় এবং প্রাদেশিক উভয় পর্যায়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করা হয়েছিল।
(গ) ব্রিটিশ শাসনকালে লোকসেবা আয়োগের পরীক্ষা লণ্ডনে অনুষ্ঠিত হত কিন্তু স্বাধীনতার পর লোকসেবা আয়োগের পরীক্ষা ভারতের প্রায় সকল রাজ্যে অনুষ্ঠিত করা হয়।