


বিশ্বজুড়ে ভারতীয়দের জন্য গর্বের মুহূর্ত: গীতা ও নাট্যশাস্ত্র ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে
নয়াদিল্লি, ১৮ এপ্রিল ২০২৫: ভারতের প্রাচীন শাস্ত্র ভগবদ্গীতা এবং নাট্যশাস্ত্র ইউনেস্কোর মর্যাদাপূর্ণ মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে স্থান পেয়েছে, যা ভারতীয় সংস্কৃতি ও জ্ঞানের ঐতিহ্যের প্রতি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই ঘোষণা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ভারতীয়দের মধ্যে গর্ব ও উৎসাহের সঞ্চার করেছে।
ভগবদ্গীতা: আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অমর গ্রন্থ
ভগবদ্গীতা, যা মহাভারতের একটি অংশ, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অর্জুনকে দেওয়া উপদেশের একটি দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক সংকলন। এই গ্রন্থে জীবন, কর্তব্য, ধর্ম, এবং মোক্ষের পথ নিয়ে গভীর শিক্ষা রয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গীতা মানুষের চেতনাকে আলোকিত করেছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। গীতার শিক্ষা আধুনিক বিশ্বেও নৈতিকতা, নেতৃত্ব, এবং মানসিক স্থিরতার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি গীতার সর্বজনীন আবেদন এবং এর কালজয়ী জ্ঞানকে বিশ্ব মঞ্চে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। এটি শুধু ভারতীয়দের জন্যই নয়, বিশ্বের সকল জ্ঞানপিপাসুর জন্য একটি গর্বের বিষয়।
নাট্যশাস্ত্র: শিল্পকলার প্রাচীন ভিত্তি
নাট্যশাস্ত্র, যা ঋষি ভরতমুনি রচিত বলে মনে করা হয়, ভারতীয় নাট্যকলা, সঙ্গীত, নৃত্য, এবং অভিনয়ের একটি বিস্তৃত গ্রন্থ। এটি শুধুমাত্র শিল্পকলার কৌশলগত দিকই নয়, বরং মানব আবেগ (রস) এবং নান্দনিকতার (সৌন্দর্যবোধ) দার্শনিক ব্যাখ্যাও প্রদান করে। নাট্যশাস্ত্র ভারতীয় সংস্কৃতির শিল্পকলার ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং এর প্রভাব ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে।
এই গ্রন্থের শিক্ষা আজও ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য, থিয়েটার, এবং চলচ্চিত্র নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইউনেস্কোর রেজিস্টারে নাট্যশাস্ত্রের অন্তর্ভুক্তি ভারতীয় শিল্পকলার সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছে।
ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার
ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দলিল, পাণ্ডুলিপি, এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য কাজ করে। গীতা এবং নাট্যশাস্ত্রের এই রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্তি প্রমাণ করে যে এই গ্রন্থগুলি শুধু ভারতের নয়, বরং সমগ্র মানব সভ্যতার জন্য অমূল্য সম্পদ। এই স্বীকৃতি এই গ্রন্থগুলির সংরক্ষণ এবং গবেষণার জন্য নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করবে।
ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া
এই ঘোষণার পর ভারতের সরকার, সাংস্কৃতিক সংগঠন, এবং সাধারণ মানুষ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ভারতীয়রা এই অর্জনকে তাদের সংস্কৃতির গৌরব হিসেবে উদযাপন করছেন। অনেকে মনে করছেন, এই স্বীকৃতি ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রতি নতুন প্রজন্মের আগ্রহ বাড়াবে এবং বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব আরও ছড়িয়ে পড়বে।
ভবিষ্যৎ প্রভাব
ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি ভগবদ্গীতা এবং নাট্যশাস্ত্রের বৈশ্বিক গবেষণা, অনুবাদ, এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এটি ভারতের অন্যান্য প্রাচীন গ্রন্থ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণের জন্যও উৎসাহ প্রদান করবে। ভারতীয় সংস্কৃতির এই বিজয় বিশ্বকে একটি বার্তা দিচ্ছে—যে প্রাচীন জ্ঞান ও শিল্পকলা আধুনিক বিশ্বেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক এবং অনুপ্রেরণাদায়ী।
এই গর্বের মুহূর্তে ভারতীয়রা তাদের ঐতিহ্যের গভীরতা ও সৌন্দর্যকে উদযাপন করছে, এবং বিশ্বের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে যে ভারতের সাংস্কৃতিক সম্পদ সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি অমূল্য উপহার।