ভারতীয় সভ্যতার সূচনা, Chapter -8, Class -6, SEBA, New Syllabus
ভারতীয় সভ্যতার সূচনা, Chapter -8, Class -6, SEBA, New Syllabus
অনুশীলনী – ১ (পৃষ্ঠা ৬৫)
১। নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও-
* (ক) সভ্যতা বলতে কী বোঝো?
Ans.কৃষিক্ষেত্রে অতিরিক্ত উৎপাদন ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ খুলে দেয়, যা বাজার এবং পরে নগর সৃষ্টিতে সাহায্য করে। এভাবে কিছু স্থান ও সমাজ সমসাময়িক অন্য স্থান বা সমাজ থেকে বেশি বিকশিত হয়ে ওঠে। এই উন্নত স্থানগুলোকে কেন্দ্র করে মানুষের চিন্তা-চর্চা এবং জীবন প্রণালীতে যে নতুন গতি সঞ্চারিত হয় এবং জড়িত স্থান ও সমাজ তুলনামূলকভাবে উন্নত রূপে গড়ে ওঠে, তাকেই সভ্যতা বলা যেতে পারে।
* (খ) সভ্যতার বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করো।
Ans. প্রাচীন সভ্যতাগুলোর বিকাশের কয়েকটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য হল:
* শিলা, ধাতু, কাঠের মতো কাঁচামাল সুলভ ছিল এবং তা থেকে শিল্পজাত সামগ্রী উৎপাদন ও পরিচালনার সুব্যবস্থা ছিল।
* কাছাকাছি অঞ্চলগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিল, ফলে অভ্যন্তরীণ এবং বহির্বাণিজ্যের সুব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল।
* সেই সভ্যতার সাক্ষ্য বহন করা নির্ভরযোগ্য তথ্য এখনো পাওয়া যায়।
* লিখিত সাহিত্য, ফলক, শিলালিপি ইত্যাদি সৃষ্টিশীল কাজের মাধ্যমে সেই সময়ের জনজীবনের প্রতিফলন দেখা যায়।
* উপযুক্ত কৃষি ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রামগুলো নগরকে খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্য জোগান দিতে পারত।
* (গ) নীল নদীর পারে কোন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল?
Ans.নীল নদীর তীরে মিশরীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।
* (ঘ) যে কোনো দুটি প্রাচীন সভ্যতার নাম লেখো।
Ans. দুটি প্রাচীন সভ্যতার নাম হল – হরপ্পা সভ্যতা এবং মিশরীয় সভ্যতা।
অনুশীলনী – ২ (পৃষ্ঠা ৬৮)
১। নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও –
* (ক) সিন্ধু সভ্যতাকে অন্য কী কী নামে জানা যায়?
Ans. সিন্ধু সভ্যতাকে হরপ্পা সভ্যতা এবং সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতা নামেও জানা যায়।
* (খ) হরপ্পা সভ্যতার উল্লেখযোগ্য যে কোনো দুটি স্থানের নাম লেখো।
Ans. হরপ্পা সভ্যতার দুটি উল্লেখযোগ্য স্থান হল মহেঞ্জোদারো এবং লোথাল।
* (গ) হরপ্পা সভ্যতার নগরের গঠন কেমন ছিল?
Ans. হরপ্পা সভ্যতার নগরগুলো গঠনের দিক থেকে দুর্গ এবং নিম্ন শহর—এই দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। দুর্গ ছিল শহরের উঁচু অংশ, যেখানে শস্যভাণ্ডার, স্নানাগার, সভাগৃহের মতো সার্বজনীন গৃহ ছিল এবং শাসক শ্রেণি বাস করতেন। সাধারণ প্রজাদের বাসস্থানগুলো ছিল নিম্ন শহরে, যা প্রধান সড়কের দু-ধারে তৈরি করা হয়েছিল।
২। সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো- হরপ্পা সভ্যতার সময়ের-
* (ক) সরস্বতী নদী
Ans. হরপ্পা সভ্যতার বহু উল্লেখযোগ্য স্থান সিন্ধু নদী ও তার উপনদীগুলোর তীরে ছিল। এছাড়াও সরস্বতী নদীর কাছেও অসংখ্য স্থান ছিল, যা এখন ভারতে ‘ঘর্ঘরা’ এবং পাকিস্তানে ‘হকরা’ নামে পরিচিত। ঋগ্বেদে সরস্বতী নদীর উল্লেখ আছে, যেখানে এটিকে দেবী এবং পর্বত থেকে সাগর পর্যন্ত প্রবাহিত নদী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। পরবর্তী গ্রন্থগুলোতে এই নদী শুকিয়ে যাওয়া এবং বিলুপ্তির কথা বলা হয়েছে।
* (খ) বাড়ি-ঘর
Ans. হরপ্পা সভ্যতায় সাধারণ প্রজাদের বাসস্থান নিম্ন শহরে প্রধান সড়কের দু-ধারে নির্মিত হয়েছিল। বাড়িগুলো প্রধান সড়কের থেকে কিছুটা উঁচুতে তৈরি করা হত এবং সেখানে সিঁড়ির ব্যবস্থা ছিল। বেশিরভাগ বাড়িই দোতলা ছিল। প্রত্যেক বাড়িতে শৌচাগার, উঠোন, রান্নাঘর এবং একাধিক শোবার ঘর থাকত। বাড়িগুলো পোড়ানো ইট দিয়ে তৈরি হয়েছিল, যা প্রায় ৫০০০ বছর পরেও অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে।
* (গ) রাস্তা-ঘাট
Ans. হরপ্পা সভ্যতার শহরগুলোর রাস্তাঘাট প্রশস্ত ছিল এবং একটি অপরটির সমান্তরাল ছিল। প্রধান সড়ক থেকে বের হওয়া ছোট গলিগুলো সমান ব্যবধানে অন্য পথের সঙ্গে যুক্ত ছিল, ফলে রাস্তাগুলো আয়তাকার ভাগে বিভক্ত ছিল। কিছু রাস্তা পোড়া ইট দিয়ে বাঁধানো ছিল। জন্তুর টানা গাড়ি চলাচলের সুবিধার জন্য রাস্তার বাঁকগুলো কোনাকুনি না হয়ে ধনুকের মতো আকৃতির ছিল। রাস্তাঘাটগুলো সুপরিকল্পিতভাবে তৈরি করে তার ধারে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছিল।
* (ঘ) জল-নিষ্কাশণ ব্যবস্থা
Ans. হরপ্পা সভ্যতার শহরগুলোতে সুপরিকল্পিত জল-নিষ্কাশণ ব্যবস্থা ছিল। প্রত্যেক বাড়ির ব্যবহৃত জল নালার মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে যেত। রাস্তার ধারে ধারে, গলিগুলোর সমান্তরালে জল যাওয়ার নালা ছিল। সেই নালাগুলো ইটের ঢাকনা দিয়ে ঢাকা থাকত, যা থেকে বোঝা যায় বাসিন্দারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্ব দিতেন।
৩। “হরপ্পা সভ্যতার সময়ের বাসিন্দারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন।” ব্যাখ্যা করো।
Ans.হরপ্পা সভ্যতার উন্নত জল-নিষ্কাশণ ব্যবস্থা থেকে বোঝা যায় যে সেখানকার বাসিন্দারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। প্রতিটি বাড়ি থেকে ব্যবহৃত জল বের করে দেওয়ার জন্য নালার ব্যবস্থা ছিল। রাস্তার ধারে নির্মিত নালাগুলোও ঢাকা থাকত। এটি শুধু পরিকল্পনারই পরিচয় দেয় না, বরং স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে তাদের সচেতনতারও প্রমাণ দেয়।
অনুশীলনী – ৩ (পৃষ্ঠা ৬৮)
১। নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো
* (ক) হরপ্পা সভ্যতার সময়কার মানুষেরা কী কী বৃত্তির সঙ্গে জড়িত ছিলো?
Ans.হরপ্পা সভ্যতার মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি, পশুপালন এবং হস্তশিল্প।
* (খ) হরপ্পা সভ্যতার মানুষেরা কোন কোন অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন?
Ans. হরপ্পা সভ্যতার মানুষেরা মেসোপটেমিয়া এবং পারস্যর মতো সমসাময়িক সভ্যতাগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।
* (গ) বর্হিবিশ্বের সঙ্গে হরপ্পাবাসীর বাণিজ্যিক সম্পর্কের কী কী প্রমাণ পাওয়া যায়?
Ans. মেসোপটেমিয়া এবং পারস্য থেকেও হরপ্পা সভ্যতার সিল-মোহর, মাটির পাত্র ইত্যাদি পাওয়া গিয়েছে। একইভাবে, মেসোপটেমিয়ার সিল-মোহরও হরপ্পাতে পাওয়া গিয়েছে। এই উদ্ধার হওয়া সামগ্রীগুলোই বহির্বিশ্বের সঙ্গে হরপ্পার বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রমাণ।
* (ঘ) হরপ্পা সভ্যতার মানুষেরা কী কী শস্যের চাষ করতেন?
Ans. হরপ্পা সভ্যতার মানুষেরা গম, বার্লি, সরিষা, শাক-সবজি, ফলমূল এবং কার্পাস (তুলা) চাষ করতেন।
* (ঙ) হরপ্পা সভ্যতার সময়ে কীধরনের হস্তশিল্পের প্রচলন ছিল?
Ans. হরপ্পা সভ্যতার সময়ে পোড়া মাটির সামগ্রী, সোনার অলঙ্কার, তামার বাসন, ব্রোঞ্জের সামগ্রী, বয়ন সামগ্রী (কাপড়), ইট, কাঠের বস্তু, নৌকা ইত্যাদি হস্তশিল্পের প্রচলন ছিল।
* (চ) কীসের ওপর ভিত্তি করে হরপ্পা সভ্যতার সঙ্গে মেসোপটেমিয়া এবং রোমান সভ্যতার সম্পর্ক ছিল বলে বলা যেতে পারে?
Ans. হরপ্পা সভ্যতার সিল-মোহর, মাটির পাত্র ইত্যাদি মেসোপটেমিয়া ও পারস্য থেকে উদ্ধার হওয়া এবং মেসোপটেমিয়ার সিল-মোহর হরপ্পাতে পাওয়ার ভিত্তিতে এই অঞ্চলগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল বলা যেতে পারে। (পাঠ্যে রোমান সভ্যতার উল্লেখ নেই)
২। সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো- হরপ্পাকালীন (ক) জীবিকা (খ) বাণিজ্য
* (ক) জীবিকা
Ans. হরপ্পা সভ্যতার মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি, পশুপালন এবং হস্তশিল্প। তারা গম, বার্লি, সরিষা, কার্পাসসহ বিভিন্ন শস্য ও ফলমূল চাষ করত। পশুপালনের মধ্যে হাতি, উট, মহিষ, গরু, ভেড়া, ষাঁড় ইত্যাদি ছিল। হস্তশিল্পের ক্ষেত্রে তারা পোড়া মাটির পাত্র, সোনার গয়না, তামা ও ব্রোঞ্জের জিনিস, কাপড়, ইট, কাঠের বস্তু এবং নৌকা তৈরিতে দক্ষ ছিল।
* (খ) বাণিজ্য
Ans. হরপ্পাবাসীরা নিজেদের অঞ্চল ছাড়াও মেসোপটেমিয়া ও পারস্যের মতো দূরবর্তী সভ্যতাগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য করত। উভয় সভ্যতাতেই একে অপরের সিল-মোহর ও পাত্র পাওয়ার ঘটনা এই বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রমাণ দেয়। অনুমান করা হয় যে স্থলপথ ও জলপথ উভয় পথেই বাণিজ্য চলত। গুজরাটের লোথাল একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল। সম্ভবত সেই সময়ে বিনিময় প্রথার মাধ্যমে বাণিজ্য হত।
অনুশীলনী – ৪ (পৃষ্ঠা ৭০)
১। নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো-
* (ক) “ইউনিকর্ন” কী?
Ans. হরপ্পার সিল-মোহরে দেখা যাওয়া একশিং যুক্ত একটি কাল্পনিক জন্তুর প্রতিচ্ছবিকে ‘ইউনিকর্ন’ (Unicorn) বলা হয়। এটিকে হরপ্পাবাসীর ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করা হয়।
* (খ) সিল-মোহরগুলোতে কী কী জন্তুর প্রতিচ্ছবি পাওয়া গিয়েছে?
Ans. সিল-মোহরগুলোতে ষাঁড়, ভেড়া, বাঘ, হাতি এবং ইউনিকর্ন (একশিং যুক্ত জন্তু)-এর মতো বিভিন্ন জন্তুর চিত্র খোদিত পাওয়া গিয়েছে।
* (গ) হরপ্পার সময়কার লিপি কোথায় কোথায় পাওয়া গিয়েছে?
Ans. হরপ্পার সময়কার লিপিগুলো মোহর, তামার ফলক, ব্রোঞ্জের ফলক, পাথরের টুকরো, পোড়া মাটির পাত্র ইত্যাদিতে পাওয়া গিয়েছে।
২। সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো- হরপ্পার সময়ের
* (ক) ধর্মীয় বিশ্বাস
Ans. হরপ্পাবাসীর ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানা না গেলেও, প্রাপ্ত নিদর্শনের ভিত্তিতে কিছু ধারণা করা হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া মাটির তৈরি নারীমূর্তিগুলোকে ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতীক (সম্ভবত মাতৃদেবীর পূজা) বলে মনে করা হয়। সিল-মোহরে খোদিত পশু-পরিবৃত একজন পুরুষের বসে থাকা মূর্তিকে “পশুপতি শিব” বলে ধারণা করা হয়। এছাড়াও, সিল-মোহরে পাওয়া একশিং যুক্ত জন্তু ‘ইউনিকর্ন’-কেও তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের অংশ বলে মনে করা হয়।
* (খ) ভাষা ও লিপি
Ans. হরপ্পাবাসীরা কোন ভাষা ব্যবহার করতেন তা জানা যায়নি এবং তাদের লিপির পাঠোদ্ধারও সম্ভব হয়নি। তবে ভাষাবিদরা মনে করেন তাদের লিপি ছিল চিত্রলিপি, অর্থাৎ চিত্রকে বর্ণের মতো ব্যবহার করা হতো। প্রায় ৫০০টি চিত্রলিপি পাওয়া গেছে। বাক্যগুলো ডানদিক থেকে বাঁদিকে লেখা হতো। এই লিপি মোহর, তামার ফলক, পাত্র ইত্যাদিতে পাওয়া গিয়েছে।
অনুশীলনী – ৫ (পৃষ্ঠা ৭০-৭১)
১। নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও-
* (ক) হরপ্পা সভ্যতায় বেশিরভাগ বাড়ি কেমন ছিল?
Ans. হরপ্পা সভ্যতায় বেশিরভাগ বাড়িই দোতলা ছিল এবং ইট দিয়ে তৈরি হয়েছিল। প্রত্যেক বাড়ির সঙ্গে শৌচাগার, উঠোন, রান্নাঘর এবং একাধিক শোবার ঘর থাকত।
* (খ) হরপ্পা সভ্যতায় লিপির বর্ণগুলো কেমন ছিল?
Ans. হরপ্পা সভ্যতায় লিপির বর্ণগুলো ছিল চিত্রলিপি, অর্থাৎ চিত্রকে বর্ণ হিসেবে ব্যবহার করা হত।
* (গ) হরপ্পা সভ্যতায় মোহরগুলোতে কীসের চিত্র খোদিত ছিল?
Ans. হরপ্পা সভ্যতার মোহরগুলোতে বিভিন্ন জন্তু, যেমন- ষাঁড়, ভেড়া, বাঘ, হাতি এবং ইউনিকর্ন (একশিং যুক্ত জন্তু)-এর চিত্র খোদিত ছিল। এছাড়াও পশুপতি শিব বলে ধারণা করা একটি মূর্তিও পাওয়া গেছে।
* (ঘ) ১৯২১ সনে কার নেতৃত্বে মহেঞ্জেদারোতে খনন কার্য চলেছিল?
Ans. ১৯২১ সনে রাখাল দাস ব্যানার্জীর নেতৃত্বে মহেঞ্জোদারোতে খনন কার্য চলেছিল।
