কার্বন এবং ইহার যৌগ, Chapter -4
কার্বন এবং ইহার যৌগ, Chapter -4
অনুশীলনী (পৃষ্ঠা ২০-২১)
১. C₂H₆ অণুর সমযোজী বন্ধনের সংখ্যা নির্ণয়: (a) ৬টি সমযোজী বন্ধন (b) ৭টি সমযোজী বন্ধন (c) ৪টি সমযোজী বন্ধন (d) ৯টি সমযোজী বন্ধন
উত্তর: (b) ৭টি সমযোজী বন্ধন
ব্যাখ্যা: ইথেনের গঠন হলো H₃C-CH₃। এতে ১টি কার্বন-কার্বন (C-C) একবন্ধন এবং ৬টি কার্বন-হাইড্রোজেন (C-H) একবন্ধন থাকে। সুতরাং, মোট সমযোজী বন্ধনের সংখ্যা = ১ + ৬ = ৭।
২. ৪টি কার্বন পরমাণু বিশিষ্ট যৌগ বিউটানোনের কার্যকরী মূলক: (a) কার্বক্সিলিক অ্যাসিড (b) এলডিহাইড (c) কিটোন (d) এলকোহল
উত্তর: (c) কিটোন
ব্যাখ্যা: যৌগের নামের শেষে “ওন” (one) অনুসর্গটি কিটোন কার্যকরী মূলকের উপস্থিতি নির্দেশ করে (যেমন প্রপানোন)।
৩. রান্নার সময় পাত্রের তলার কালো হওয়া অর্থ: (a) খাদ্য পুরোপুরি রান্না হয়নি (b) ইন্ধনের দহন সঠিক হচ্ছে না (c) ইন্ধনটি ভেজা (d) ইন্ধন সম্পূর্ণ দাহিত হয়েছে
উত্তর: (b) ইন্ধনের দহন সঠিক হচ্ছে না
ব্যাখ্যা: পাত্রের তলায় কালো কালি বা soot জমা হয়, যা মূলত কার্বন। সীমিত পরিমাণ বায়ুর উপস্থিতিতে ইন্ধনের অসম্পূর্ণ দহন (দহন সঠিক না হলে) ধোঁয়াযুক্ত শিখা ও কালির উৎপত্তি করে।
৪. CH₃Cl এ বন্ধনের প্রকৃতি আলোচনা: উত্তর: দুটি পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রন জোড়ার সমভাগ বা অংশীদারিত্বের মাধ্যমে যে বন্ধন গঠিত হয়, তাকে সমযোজী বন্ধন বলে।
CH₃Cl (মিথাইল ক্লোরাইড) অণুতে কার্বন (যোজক ইলেকট্রন ৪), হাইড্রোজেন (যোজক ইলেকট্রন ১) এবং ক্লোরিন (যোজক ইলেকট্রন ৭) থাকে।
কার্বন তার ৪টি যোজক ইলেকট্রনকে ৩টি হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে (৩টি C-H বন্ধন) এবং ১টি ক্লোরিন পরমাণুর সাথে (১টি C-Cl বন্ধন) সমভাগ করে।
সমযোজী বন্ধনের প্রকৃতি:
বন্ধন শক্তি: অণুগুলির মধ্যে বন্ধনগুলি প্রবল হয়।
আন্তঃআণবিক বল: অণুগুলির মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল দুর্বল।
গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক: দুর্বল আন্তঃআণবিক বলের কারণে সমযোজী যৌগগুলির গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক সাধারণত কম হয়।
তড়িৎ পরিবাহিতা: ইলেকট্রন সমভাগের ফলে কোনো আধানযুক্ত কণা বা আয়ন সৃষ্টি হয় না, তাই সমযোজী যৌগগুলি সাধারণত তড়িতের কুপরিবাহী হয়।
৫. নিম্নোক্তগুলোর ইলেকট্রন বিন্দু গঠন এঁকে দেখাও।
(a) ইথানয়িক অ্যাসিড (CH₃COOH)
“`
H :Ö:
.. ..
H : C : C : Ö : H
.. ..
H
“`
(b) হাইড্রজেন সালফাইড (H₂S) (সালফারের যোজক ইলেকট্রন ৬টি)
“`
..
H : S : H
..
“`
(c) প্রপানোন (CH₃COCH₃)
“`
H :Ö: H
.. .. ..
H : C : C : C : H
.. ..
H H
“`
(d) ফ্লুরিন (F₂) (ফ্লুরিনের যোজক ইলেকট্রন ৭টি)
“`
.. ..
: F : F :
.. ..
“`
৬. সমগনীয় শ্রেণি কি? উদাহরনসহ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:
সমগনীয় শ্রেণি (Homologous Series): একই কার্যকরী মূলক বিশিষ্ট যৌগগুলির শ্রেণিকে সমগনীয় শ্রেণি বলা হয়।এই শ্রেণির যৌগগুলিকে তাদের আণবিক ভরের ঊর্ধক্রমে সাজালে পরপর দুটি যৌগের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট -CH_2- মূলকের পার্থক্য থাকে।
বৈশিষ্ট্য:
১. একই শ্রেণির সকল যৌগের রাসায়নিক ধর্ম প্রায় একই থাকে, কারণ তাদের কার্যকরী মূলক এক।
২. আণবিক ভর বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে যৌগগুলির ভৌতিক ধর্মে (যেমন গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক) ক্রমিক পরিবর্তন দেখা যায়।
উদাহরণ:
এলকেন শ্রেণি:
* মিথেন (CH_4)
* ইথেন (C_2H_6)
* প্রোপেন (C_3H_8)
(এখানে পরপর দুটি যৌগের মধ্যে -CH_2- পার্থক্য রয়েছে)।
[cite_start]এলকোহল শ্রেণি:
* মিথানল (CH_3OH)
* ইথানল (C_2H_5OH)
* প্রপানল (C_3H_7OH)
৭.ভৌতিক এবং রাসায়নিক ধর্মের উপর ভিত্তি করে ইথানল এবং ইথানয়িক অ্যাসিডের মধ্যে কী ভাবে পার্থক্য দেখানো যায় লেখ।
উত্তর:
ইথানল এবং ইথানয়িক অ্যাসিডের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:
ভৌতিক ধর্মের পার্থক্য:
১.গন্ধ: ইথানলের একটি বিশেষ গন্ধ আছে (সাধারণত এলকোহলীয়), যেখানে ইথানয়িক অ্যাসিডের গন্ধ ভিনিগারের মতো তীব্র ও ঝাঁঝালো।
২. গলনাঙ্ক: ইথানয়িক অ্যাসিডের গলনাঙ্ক 290K, তাই শীতকালে এটি জমে যায় (গ্লেসিয়াল অ্যাসিটিক অ্যাসিড)ইথানলের গলনাঙ্ক অনেক কম (156K), তাই এটি জমে না।
রাসায়নিক ধর্মের পার্থক্য (পরীক্ষা):
১. লিটমাস পরীক্ষা: ইথানয়িক অ্যাসিড আম্লিক প্রকৃতির, তাই এটি নীল লিটমাসকে লাল করে। ইথানল প্রশম, তাই লিটমাসের রঙ পরিবর্তন করে না।
২. কার্বনেট পরীক্ষা: ইথানয়িক অ্যাসিড সোডিয়াম কার্বনেট বা সোডিয়াম হাইড্রোজেন কার্বনেটের সাথে বিক্রিয়া করে বুদবুদসহ কার্বন ডাই অক্সাইড (CO_2) গ্যাস উৎপন্ন করে [cite: 617-618]। ইথানল এই বিক্রিয়া করে না।
*2CH₃COOH + Na₂CO₃ → 2CH₃COONa + H₂O + CO₂
৮. সাবান জলের সঙ্গে যোগ করলে কেন মাইছেল গঠিত হয়? [cite_start]অন্য দ্রাবক যেমন ইথানলেও কি মাইছেল গঠিত হবে?
উত্তর:
মাইছেল গঠন: সাবানের অণুগুলির দুটি পৃথক প্রান্ত থাকে:
১. জলাকর্ষী (Hydrophilic) প্রান্ত: এটি আয়নীয় প্রান্ত, যা জলে দ্রবীভূত হয়।
২. জলবিকর্ষী (Hydrophobic) প্রান্ত: এটি দীর্ঘ হাইড্রকার্বন শৃঙ্খল, যা জলে দ্রবীভূত হয় না কিন্তু তেল বা ময়লায় দ্রবীভূত হয়।
যখন সাবান জলে মেশানো হয়, তখন জলবিকর্ষী প্রান্তগুলি জল থেকে দূরে থাকতে চায় এবং গুচ্ছ গঠন করে। এই গুচ্ছের কেন্দ্রে তেল বা ময়লা জমা হয় এবং জলাকর্ষী আয়নীয় প্রান্তগুলি বাইরের দিকে জলের মধ্যে প্রলম্বিত থাকে। এই বিশেষ অণু-বিন্যাস বা গুচ্ছকেই মাইছেল (Micelle) বলে।
ইথানলে মাইছেল: না, ইথানলের মতো অন্য দ্রাবকে মাইছেল গঠিত হবে না। কারণ ইথানল একটি জৈব দ্রাবক, যাতে সাবানের জলবিকর্ষী (হাইড্রোকার্বন) অংশটিও দ্রবীভূত হতে পারে। যেহেতু কোনো জলবিকর্ষী প্রভাব নেই, তাই মাইছেল গঠনের কোনো চালিকাশক্তি থাকে না।
৯. কেন বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ইন্ধন হিসাবে কার্বন ও কার্বনের যৌগ সমূহকে ব্যবহার করা হয়?
উত্তর: কার্বন এবং এর যৌগগুলিকে ইন্ধন হিসাবে ব্যবহারের প্রধান কারণ হলো, এগুলি অক্সিজেনে দহনের ফলে প্রচুর পরিমাণে তাপ এবং আলো উৎপন্ন করে । এই উচ্চ তাপশক্তির (High Calorific Value) জন্যই এগুলি উৎকৃষ্ট ইন্ধন।
১০. খর জলের সঙ্গে যখন সাবান ব্যবহার করা হয় তখন গাদ (scum) কীভাবে গঠিত হয় ব্যাখ্যা কর। উত্তর: খর জলে ক্যালসিয়াম (Ca²⁺) এবং ম্যাগনেসিয়াম (Mg²⁺) লবণ দ্রবীভূত থাকে। সাবান, যা দীর্ঘ শৃঙ্খল কার্বক্সিলিক অ্যাসিডের সোডিয়াম বা পটাশিয়াম লবণ, এই ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আয়নের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অদ্রবণীয় ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম লবণ উৎপন্ন করে। এই সাদা, অদ্রবণীয় অধঃক্ষেপকেই গাদ বা scum বলা হয়। এই গাদ উৎপন্ন হওয়ার ফলে সাবান খর জলে সহজে ফেনা তৈরি করতে পারে না।
১১. লিটমাস কাগজ দিয়ে সাবান পরীক্ষা করলে পরিবর্তন: উত্তর: সাবান হলো তীব্র ক্ষার (যেমন NaOH) এবং মৃদু অ্যাসিড (Fatty Acid) থেকে উৎপন্ন লবণ। তাই সাবানের জলীয় দ্রবণ ক্ষারকীয় প্রকৃতির হয়।
লাল লিটমাস কাগজ নীল হবে।
নীল লিটমাস কাগজের কোনো রঙ পরিবর্তন হবে না।
১২. হাইড্রজেনেশন (হাইড্রোজেন সংযোজন): উত্তর: নিকেল (Ni) বা প্যালাডিয়াম (Pd) অনুঘটকের উপস্থিতিতে অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনগুলি (যাদের দ্বিবন্ধন বা ত্রিবন্ধন আছে) হাইড্রোজেন (H₂) এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন তৈরি করে। এই বিক্রিয়াকে হাইড্রজেনেশন বা হাইড্রোজেন সংযোজন বলে।
বানিজ্যিক প্রয়োগ: উদ্ভিদজাত তেল (অসম্পৃক্ত) থেকে বনস্পতি ঘি (সম্পৃক্ত) উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়।
১৩. নিম্নোক্ত হাইড্রকার্বনগুলোর মধ্যে কোনগুলো যোগাত্মক বিক্রিয়া দেখাবে: C₂H₆, C₃H₈, C₃H₆, C₂H₂, CH₄ উত্তর: যোগাত্মক বিক্রিয়া শুধুমাত্র অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন (যাদের দ্বিবন্ধন বা ত্রিবন্ধন আছে) দেখায়।
C₂H₆ (ইথেন), C₃H₈ (প্রোপেন), CH₄ (মিথেন) হলো সম্পৃক্ত যৌগ।
C₃H₆ (প্রোপিন) দ্বিবন্ধনযুক্ত এলকিন।
C₂H₂ (ইথাইন) ত্রিবন্ধনযুক্ত এলকাইন। সুতরাং, C₃H₆ এবং C₂H₂ যোগাত্মক বিক্রিয়া দেখাবে।
১৪. মাখন এবং রান্নার তেলের পারস্পরিক পার্থক্য পরীক্ষা: উত্তর: মাখন হলো প্রাণীজাত চর্বি, যা সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড দিয়ে গঠিত। রান্নার তেল হলো উদ্ভিদজাত, যা অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড দিয়ে গঠিত।
পরীক্ষা (হাইড্রজেনেশন): একটি পরীক্ষানলে অল্প রান্নার তেল নিয়ে তাতে নিকেল অনুঘটক যোগ করে হাইড্রোজেন (H₂) গ্যাস চালানো হলে তেলটি সম্পৃক্ত হয়ে কঠিন ঘি হয়ে যায়।
মাখনকে একই অবস্থায় রাখলে কোনো হাইড্রোজেন সংযোজন বা যোগাত্মক বিক্রিয়া হয় না।
বিকল্প পরীক্ষা: ব্রোমিন জলের বর্ণ দূরীকরণ পরীক্ষা—অসম্পৃক্ত তেল ব্রোমিন জলের বর্ণ দূর করে, সম্পৃক্ত মাখন করে না।
১৫. সাবানের ময়লা দূরীকরণ পদ্ধতি: উত্তর: সাবানের ময়লা দূরীকরণ মাইছেল (Micelle) গঠনের উপর নির্ভর করে।
বেশীর ভাগ ময়লা তৈলাক্ত প্রকৃতির এবং জলে অদ্রবণীয়।
সাবানের অণুর দুটি অংশ থাকে: জলবিকর্ষী (Hydrophobic) হাইড্রোকার্বন লেজ এবং জলাকর্ষী (Hydrophilic) আয়নীয় মাথা।
সাবান ব্যবহারে, হাইড্রোকার্বন লেজগুলি তেল বা ময়লার কণার মধ্যে দ্রবীভূত হয় বা সেটিকে ঘিরে ধরে।
জলাকর্ষী মাথাগুলি বাইরের দিকে জলের সংস্পর্শে থাকে।
ফলে গোলকাকার গুচ্ছ বা মাইছেল গঠিত হয়, যার কেন্দ্রে তৈলাক্ত ময়লা আবদ্ধ থাকে।
এই মাইছেলগুলি দ্রবণে ভাসতে থাকে এবং পরস্পরের সাথে জুড়ে গিয়ে অধঃক্ষিপ্ত হয় না।
জল দিয়ে ধোয়ার সময় মাইছেল (ময়লা সহ) অপসারিত হয়, ফলে কাপড় পরিষ্কার হয়।
