জীবের প্রজনন কিভাবে হয়? CHAPTER -8
জীবের প্রজনন কিভাবে হয়? CHAPTER -8
অনুশীলনী (পৃষ্ঠা ১৫)
১. মুকুলোদ্গম পদ্ধতিতে অযৌন প্রজনন নিম্নলিখিত কোন্ জীবে হয়?
(ক) এ্যামিবা
(খ) ইষ্ট
(গ) প্লাসমোডিয়াম
(ঘ) লেস্মানিয়া।
উত্তর: (খ) ইষ্ট
২. মানুষের দেহে নীচের কোনটি স্ত্রী জনন অঙ্গ নয়?
(ক) ডিম্বাশয়।
(খ) জরায়ু
(গ) শুক্রবাহী নালী
(ঘ) ফ্যালোপিয়ান নলী।
উত্তর: (গ) শুক্রবাহী নালী (এটি পুরুষ জনন অঙ্গ)
৩. পরাগ কোষে থাকে
(ক) বৃতি
(খ) ডিম্বানু
(গ) ডিম্বক
(ঘ) পরাগ রেণু
উত্তর: (ঘ) পরাগ রেণু
৪. অযৌন প্রজনন থেকে যৌন প্রজননে কি কি সুবিধা বেশী?
উত্তর: অযৌন প্রজননের তুলনায় যৌন প্রজননের প্রধান সুবিধা হলো এটি নতুন প্রজন্মে প্রকারণ (Variation) সৃষ্টি করে। অযৌন প্রজননে DNA কপিং পদ্ধতিতে সামান্য প্রকারণ এলেও তা খুব ধীর গতিতে হয়। যৌন প্রজননে দুটি ভিন্ন জীবের DNA মিলিত হয়, ফলে পূর্ববর্তী প্রজন্মের প্রকারণগুলি একত্রিত হয়ে নতুন সংমিশ্রণ তৈরি হয় ।এই অধিক প্রকারণ পরিবর্তিত পরিবেশে কোনো প্রজাতির টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় এবং বিবর্তনে সাহায্য করে ।
৫. মানুষের দেহে অণ্ডকোষ (Testes) কি কি কাজ করে?
উত্তর: মানুষের দেহে অণ্ডকোষ বা শুক্রাশয়ের (Testes) প্রধান কাজগুলি হলো:
* শুক্রাণু উৎপাদন: এটি পুরুষ জনন কোষ বা শুক্রাণু (Sperm) উৎপন্ন করে।
* হরমোন নিঃসরণ: এটি টেস্টোস্টেরন (Testosterone) নামক পুরুষ হরমোন নিঃসরণ করে, যা শুক্রাণু উৎপাদনে সহায়তা করে এবং যৌবনারম্ভের সময়ে ছেলেদের শরীরে গৌণ যৌন লক্ষণগুলির (যেমন দাড়ি গজানো, গলার স্বর পরিবর্তন) প্রকাশ ঘটায় ।
৬. মাসিক ঋতু চক্র (Menstruation) কেন হয়?
উত্তর: প্রতি মাসে মহিলাদের ডিম্বাশয় থেকে একটি পরিণত ডিম্বাণু নির্গত হয়। একই সময়ে, সম্ভাব্য গর্ভধারণের জন্য জরায়ু নিজেকে প্রস্তুত করে – এর ভিতরের স্তর বা আস্তরণটি (Lining) রক্ত সরবরাহ সমৃদ্ধ হয়ে পুরু ও স্পঞ্জি হয়ে ওঠে, যাতে নিষিক্ত ডিম্বাণু (ভ্রূণ) প্রতিস্থাপিত হতে পারে এবং পুষ্টি পেতে পারে যদি ডিম্বাণুটি শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত না হয়, তবে এই পুরু আস্তরণটির আর প্রয়োজন থাকে না। তখন এই আস্তরণটি ধীরে ধীরে ভেঙে যায় এবং রক্ত ও মিউকাস হিসাবে যোনিপথ দিয়ে দেহের বাইরে নির্গত হয়। এই চক্রাকার ঘটনাটি প্রতি মাসে ঘটে বলেই একে মাসিক ঋতুচক্র বলে।
৭. একটি ফুলের লম্বা ব্যবচ্ছেদের চিত্র এঁকে বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত কর।
উত্তর: (পাঠ্যপুস্তকের চিত্র-৪.7 দেখুন)
* প্রধান অংশগুলি: বৃতি (Sepal), পাপড়ি (Petal), পুংকেশর (Stamen) [যার অংশ পরাগকোষ (Anther) ও পুংদণ্ড (Filament)], এবং গর্ভকেশর (Pistil/Carpel) [যার অংশ গর্ভমুণ্ড (Stigma), গর্ভদণ্ড (Style) ও ডিম্বাশয় (Ovary)]। ডিম্বাশয়ের ভিতরে ডিম্বক (Ovule) থাকে।
৮. গর্ভনিরোধ করার বিভিন্ন পদ্ধতির আলোচনা কর।
উত্তর: গর্ভনিরোধ করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে:
* যান্ত্রিক বাধা (Barrier Methods): এই পদ্ধতিতে শুক্রাণুকে ডিম্বাণুর সংস্পর্শে আসতে বাধা দেওয়া হয়। উদাহরণ: পুরুষদের জন্য কনডোম (লিঙ্গের আবরণী) এবং মহিলাদের জন্য যোনিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন আবরণী। কনডোম যৌনরোগ সংক্রমণ থেকেও সুরক্ষা দেয়।
* রাসায়নিক পদ্ধতি (Hormonal Methods): এই পদ্ধতিতে ঔষধ (যেমন খাবার বড়ি বা পিল) ব্যবহার করে মহিলাদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তন করা হয়, যার ফলে ডিম্বাণু নির্গমন বন্ধ হয়ে যায় বা নিষেক ঘটে না। এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।
* ইন্ট্রাইউটেরাইন ডিভাইস (IUDs): যেমন কপার-টি (Copper-T) বা লুপ জরায়ুতে স্থাপন করা হয়, যা নিষেক বা ভ্রূণ প্রতিস্থাপনে বাধা দেয়। এর দ্বারাও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
* স্থায়ী পদ্ধতি (Surgical Methods):
* পুরুষদের ক্ষেত্রে (ভ্যাসেকটমি): শুক্রবাহী নালী (Vas deferens) কেটে বা বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে শুক্রাণু বাইরে আসতে না পারে।
* মহিলাদের ক্ষেত্রে (টিউবেকটমি): ডিম্ববাহী নালী (Fallopian tube) কেটে বা বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে ডিম্বাণু জরায়ুতে পৌঁছাতে না পারে এবং শুক্রাণুর সাথে মিলিত হতে না পারে। এগুলি স্থায়ী পদ্ধতি এবং শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
৯. এককোষী এবং বহুকোষী জীবের প্রজননের উপায়ের কি কি পার্থক্য আছে?
উত্তর:
| বৈশিষ্ট্য | এককোষী জীব | বহুকোষী জীব |
|—|—|—|
| জটিলতা | প্রজনন পদ্ধতি সরল। | প্রজনন পদ্ধতি অপেক্ষাকৃত জটিল। |
| অংশগ্রহণকারী কোষ | সাধারণত একটি মাত্র কোষ বিভাজিত হয়ে অপত্য জীব সৃষ্টি করে। | সাধারণত বিশেষ জনন কোষ (Gamete) প্রজননে অংশ নেয় (যৌন জনন) অথবা অঙ্গজ অংশ (অযৌন জনন) ব্যবহৃত হয়। |
| কলার বিশেষত্ব | কোনো বিশেষ প্রজনন অঙ্গ বা কলার প্রয়োজন হয় না। | যৌন প্রজননের জন্য নির্দিষ্ট প্রজনন অঙ্গ ও কলার প্রয়োজন হয়। |
| প্রজনন পদ্ধতি | প্রধানত অযৌন; যেমন – বিভাজন (দ্বিবিভাজন, বহুবিভাজন), মুকুলোদ্গম অযৌন (যেমন – খণ্ডন, পুনরুৎপত্তি, মুকুলোদ্গম, অঙ্গজ জনন, রেণু গঠন) এবং যৌন উভয় পদ্ধতিই দেখা যায়। |
| প্রকারণ (Variation) | অযৌন জননে প্রকারণ খুব কম হয়। | যৌন জননে প্রকারণ অনেক বেশি হয়। |
১০. কোনও জীবের প্রজাতির জনসংখ্যার স্থিরতা সঠিক রাখার জন্য প্রজনন কিভাবে সাহায্য করে?
উত্তর: প্রজনন হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জীব নিজ প্রজাতির নতুন সদস্য সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে:
* প্রতিস্থাপন: স্বাভাবিক মৃত্যু, রোগ বা শিকারীর দ্বারা সদস্য সংখ্যা কমে গেলে, প্রজনন নতুন সদস্য তৈরি করে সেই ঘাটতি পূরণ করে এবং প্রজাতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।
* জনসংখ্যা বৃদ্ধি: অনুকূল পরিবেশে প্রজননের মাধ্যমে প্রজাতির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
* স্থিতিশীলতা: প্রজনন নিশ্চিত করে যে একটি নির্দিষ্ট বাসস্থানে (niche) ওই প্রজাতির জীবের সংখ্যা যেন মোটামুটি স্থির থাকে, যাতে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় থাকে । যদিও বাহ্যিক কারণ (যেমন পরিবেশের পরিবর্তন) জনসংখ্যার উপর প্রভাব ফেলে ।
১১. গর্ভনিরোধক ব্যবস্থার গ্রহণ করার কি কি কারণ থাকতে পারে?
উত্তর: গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে:
* অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ রোধ: ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক কারণে গর্ভধারণ বিলম্বিত করা বা এড়িয়ে যাওয়া।মানসিক বা শারীরিক ভাবে প্রস্তুত না থাকলে গর্ভধারণ এড়ানো।
* জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ: দেশের বা বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা।
* স্বাস্থ্য রক্ষা: ঘন ঘন গর্ভধারণ বা অল্প বয়সে গর্ভধারণ মায়ের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে, তা এড়ানো।
* যৌনরোগ প্রতিরোধ: কনডোমের মতো কিছু গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা যৌন সংসর্গের মাধ্যমে ছড়ানো রোগ (যেমন গনোরিয়া, সিফিলিস, HIV-AIDS) প্রতিরোধে সাহায্য করে ।
* পারিবারিক পরিকল্পনা: দুটি সন্তানের জন্মের মধ্যে ব্যবধান রাখা বা পরিবারের সদস্য সংখ্যা সীমিত রাখা।
