বংশগতি এবং বিবর্তন , Chapter -9,Class-10 , SEBA, NCERT solutions

বংশগতি এবং বিবর্তন , Chapter -9,Class-10 , SEBA, NCERT solutions


বংশগতি এবং বিবর্তন , Chapter -9,Class-10 , SEBA, NCERT solutions

অনুশীলনী (পৃষ্ঠা ১৮)
১. বেগুণী রঙের ফুল থাকা দীর্ঘ মটর গাছের সঙ্গে সাদা ফুল থাকা খর্বকায় মটর গাছের মেণ্ডেলীয় পরীক্ষা করা হল। প্রথম অপত্য বংশে সব গাছে বেগুণী ফুল হ’ল কিন্তু অর্ধেক গাছ খর্বকায় হ’ল। পিত-বংশের জিন কি রূপ ছিল?
(a) TTWW
(b) TTww
(c) TtWW
(d) TtWw
(টীকা: এখানে দীর্ঘ/খর্বকায় এর জন্য T/t এবং বেগুণী/সাদা ফুলের জন্য W/w জিন ধরা যাক। বেগুণী (W) প্রভাবী, সাদা (w) অপ্রভাবী; দীর্ঘ (T) প্রভাবী, খর্বকায় (t) অপ্রভাবী)
বিশ্লেষণ:
* প্রথম অপত্য বংশে (F1) সব গাছে বেগুণী ফুল হয়েছে, তার মানে পিতা-মাতার মধ্যে অন্তত একজন বিশুদ্ধ বেগুণী (WW) অথবা পিতা-মাতার জিনোটাইপ এমন ছিল যে সাদা (ww) বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়নি। যেহেতু একটি পিতৃগাছ সাদা ফুল (ww), তাই অন্য পিতৃগাছটি অবশ্যই বিশুদ্ধ বেগুণী (WW) হতে হবে যাতে F1-এ সব বেগুণী (Ww) হয়।
* F1 বংশে অর্ধেক গাছ খর্বকায় (tt) হয়েছে। এটি তখনই সম্ভব যদি একটি পিতৃগাছ বিশুদ্ধ দীর্ঘ (TT) এবং অন্যটি বিশুদ্ধ খর্বকায় (tt) না হয়। যেহেতু একটি পিতৃগাছ খর্বকায় (tt), তাহলে অন্য পিতৃগাছটি অবশ্যই সংকর দীর্ঘ (Tt) হতে হবে। Tt × tt সংমিশ্রণে অর্ধেক দীর্ঘ (Tt) এবং অর্ধেক খর্বকায় (tt) গাছ উৎপন্ন হয়।
সুতরাং, পিতৃ-বংশের জিনোটাইপ ছিল TtWW (সংকর দীর্ঘ, বিশুদ্ধ বেগুণী) এবং ttww (বিশুদ্ধ খর্বকায়, বিশুদ্ধ সাদা)। विकल्पों মধ্যে (c) TtWW একটি পিতৃ-বংশের জিনোটাইপ হতে পারে।
উত্তর: (c) TtWW (এবং অন্যটি ttww)
২. সমসংস্থ অঙ্গের উদাহরণ
(a) আমাদের হাত ও কুকুরের অগ্র-পদ।
(b) আমাদের দাঁত ও হাতীর দাঁত।
(c) আলু এবং ঘাসের রানার।
(d) উপরের সব কয়টি।
উত্তর: (d) উপরের সব কয়টি।
* ব্যাখ্যা:
   * (a) মানুষের হাত ও কুকুরের অগ্রপদ উভয়েরই অভ্যন্তরীণ গঠন একই (হিউমেরাস, রেডিয়াস-আলনা ইত্যাদি অস্থি), যদিও কাজ ভিন্ন। এটি সমসংস্থ অঙ্গ।
   * (b) মানুষের দাঁত ও হাতির দাঁত (প্রকৃতপক্ষে রূপান্তরিত ছেদন দাঁত) উভয়ের উৎপত্তি ও গঠনগত ভিত্তি এক, যদিও আকৃতি ও কাজ ভিন্ন। এটি সমসংস্থ অঙ্গ।
   * (c) আলু (রূপান্তরিত কাণ্ড) এবং ঘাসের রানার (রূপান্তরিত কাণ্ড) উভয়েই কাণ্ডের রূপান্তর এবং গঠনগতভাবে এক, যদিও কাজ ভিন্ন (আলু খাদ্য সঞ্চয়, রানার অঙ্গজ জনন)। এটি সমসংস্থ অঙ্গ।
৩. বিবর্তনের দিক্ দিয়ে আমাদের সাথে বেশী মিল আছে-
(a) একটি চীনা স্কুলের ছেলের
(b) একটি শিম্পাঞ্জী
(c) একটি মাকড়সা
(d) একটি ব্যাক্টেরিয়া।
উত্তর: (a) একটি চীনা স্কুলের ছেলের
* ব্যাখ্যা: সমস্ত মানুষ (Homo sapiens) একই প্রজাতির অন্তর্গত এবং জিনগতভাবে অত্যন্ত সদৃশ, তারা যে দেশেরই হোক না কেন । শিম্পাঞ্জী আমাদের নিকটতম আত্মীয় হলেও তারা ভিন্ন প্রজাতি। মাকড়সা ও ব্যাকটেরিয়া বিবর্তনের ধারায় মানুষ থেকে অনেক দূরে।
৪. একটি পরীক্ষাদ্বারা কটা চোখ থাকা শিশুর মাতা-পিতারও কটা চোখ থাকে বলে পাওয়া গেল। এর উপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারব কি এই চোখ কটা হওয়া চারিত্রিক লক্ষণটি প্রভাবী বা অপ্রভাবী। কেন এবং কেন নয়?
উত্তর: না, এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে চোখ কটা হওয়া লক্ষণটি প্রভাবী না অপ্রভাবী তা বলা যাবে না।
* কারণ: যদি কটা চোখ একটি প্রভাবী লক্ষণ হয়, তবে পিতা-মাতা উভয়ের সংকর (Aa) জিনোটাইপ থাকলে বা একজন বিশুদ্ধ (AA) ও অন্যজন সংকর (Aa) বা অপ্রভাবী (aa) হলেও সন্তানের কটা চোখ হতে পারে। আবার, যদি কটা চোখ একটি অপ্রভাবী লক্ষণ (aa) হয়, তবে পিতা-মাতা উভয়েরই অপ্রভাবী (aa) জিনোটাইপ থাকলে সন্তানের অবশ্যই কটা চোখ হবে। যেহেতু পিতা-মাতার জিনোটাইপ বা অন্যান্য সন্তানদের চোখের রঙ সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া নেই, শুধুমাত্র একটি শিশু ও তার পিতা-মাতার চোখের রঙ দেখে কোনো সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয়। প্রভাবী বা অপ্রভাবী নির্ধারণ করতে হলে অন্তত দুই বা তিন প্রজন্মের তথ্য বা নির্দিষ্ট সংকরায়ণের ফলাফল জানা প্রয়োজন।
৫. বিবর্তন এবং শ্রেণীবিভাগ এই দুইটি অধ্যয়নের বিষয় কিভাবে সম্পর্কিত?
উত্তর: বিবর্তন এবং শ্রেণীবিভাগ ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। জীবের শ্রেণীবিভাগ মূলত তাদের বিবর্তনীয় সম্পর্কের (Evolutionary relationships) উপর ভিত্তি করেই করা হয়।
* যেসব জীবের মধ্যে সাধারণ বৈশিষ্ট্য বেশি থাকে, তাদের শ্রেণীবিভাগে কাছাকাছি দলে রাখা হয়। মনে করা হয়, এই সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি তারা একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে।
* যত বেশি সংখ্যক সাধারণ বৈশিষ্ট্য দুটি প্রজাতির মধ্যে পাওয়া যায়, তাদের সাধারণ পূর্বপুরুষ তত নিকট অতীতের বলে ধরে নেওয়া হয় এবং তারা শ্রেণীবিভাগে তত কাছাকাছি স্থান পায়।
* সুতরাং, জীবের শ্রেণীবিভাগ একটি হায়ারআর্কি বা ক্রমোচ্চ শ্রেণী গঠন করে যা আসলে তাদের বিবর্তনের পথ বা বংশলতিকা (phylogeny)-কেই প্রতিফলিত করে।
৬. উদাহরণসহ সমসংস্থ এবং সমবৃত্তি অঙ্গ কাকে বলে বুলিয়ে দাও।
উত্তর:
* সমসংস্থ অঙ্গ (Homologous Organs): যেসব অঙ্গের অভ্যন্তরীণ গঠন ও উৎপত্তি এক, কিন্তু বিভিন্ন পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার ফলে তাদের বাহ্যিক গঠন ও কাজ ভিন্ন প্রকৃতির হয়, তাদের সমসংস্থ অঙ্গ বলে । এরা অপসারী বিবর্তন (Divergent evolution) নির্দেশ করে।
   * উদাহরণ: মানুষের হাত, পাখির ডানা, তিমির ফ্লিপার, ঘোড়ার অগ্রপদ – এদের প্রত্যেকের অভ্যন্তরীণ অস্থির গঠন (হিউমেরাস, রেডিয়াস-আলনা, কার্পাল, মেটাকার্পাল, ফ্যালাঞ্জেস) একই রকম, কিন্তু কাজ ভিন্ন ( ধরা, ওড়া, সাঁতার কাটা, দৌড়ানো)।
* সমবৃত্তি অঙ্গ (Analogous Organs): যেসব অঙ্গের উৎপত্তি ও অভ্যন্তরীণ গঠন ভিন্ন, কিন্তু একই পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার ফলে তাদের কাজ এক এবং বাহ্যিক গঠনে সাদৃশ্য দেখা যায়, তাদের সমবৃত্তি অঙ্গ বলে। এরা অভিসারী বিবর্তন (Convergent evolution) নির্দেশ করে।
   * উদাহরণ: পাখির ডানা ও পতঙ্গের ডানা – উভয়ের কাজ ওড়া, কিন্তু পাখির ডানা অগ্রপদের রূপান্তর (অস্থি, মাংসপেশি, পালক দ্বারা গঠিত) আর পতঙ্গের ডানা মূলত কাইটিন নির্মিত পর্দার মতো প্রসারিত অংশ। এদের উৎপত্তি ও গঠন সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাদুড়ের ডানাও সমবৃত্তি অঙ্গের উদাহরণ ।
৭. কুকুরের লোমের রঙে প্রভাবী চারিত্রিক লক্ষণ বোঝাতে পরীক্ষা দেখাও।
উত্তর: কুকুরের লোমের রঙে কোন লক্ষণটি প্রভাবী তা বোঝাতে নিম্নলিখিত পরীক্ষা করা যেতে পারে:
* জনক নির্বাচন: একটি বিশুদ্ধ কালো লোমযুক্ত পুরুষ কুকুর (ধরা যাক জিনোটাইপ BB) এবং একটি বিশুদ্ধ সাদা লোমযুক্ত স্ত্রী কুকুর (ধরা যাক জিনোটাইপ bb) নির্বাচন করতে হবে। (বিপরীত লিঙ্গও নেওয়া যেতে পারে)।
* সংকরায়ণ (P জনু): এই দুটি কুকুরের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটাতে হবে।
* প্রথম অপত্য জনু (F1): উৎপন্ন অপত্য কুকুরগুলির (F1 জনু) লোমের রঙ পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
   * ফলাফল বিশ্লেষণ: যদি F1 জনুর সব কুকুরের লোমের রঙ কালো হয়, তবে কালো রঙ (B) সাদা রঙের (b) উপর প্রভাবী। (F1 জনুর জিনোটাইপ হবে Bb)।
   * যদি F1 জনুর সব কুকুরের রঙ সাদা হয়, তবে সাদা রঙ প্রভাবী।
   * যদি F1 জনুর কুকুরগুলির রঙ কালো ও সাদার মাঝামাঝি কোনো রঙ (যেমন ছাই রঙ) হয়, তবে এটি অসম্পূর্ণ প্রকটতার উদাহরণ।
* (ঐচ্ছিক) দ্বিতীয় অপত্য জনু (F2): F1 জনুর দুটি কালো কুকুরের (Bb × Bb) মধ্যে সংকরায়ণ ঘটালে F2 জনুতে কালো ও সাদা উভয় রঙের কুকুরই পাওয়া যাবে (কালো : সাদা = ৩ : ১ অনুপাতে), যা কালো রঙের প্রভাবী হওয়ার প্রমাণকে আরও জোরালো করবে।
৮. বিবর্তনীয় আত্মীয়তার সিদ্ধান্তে জীবাশ্মের গুরুত্ব বোঝাও।
উত্তর: বিবর্তনীয় আত্মীয়তার সিদ্ধান্তে জীবাশ্ম (Fossils) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:
  লুপ্ত জীবের প্রমাণ: জীবাশ্ম হলো বহু পূর্বে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া জীবের সংরক্ষিত দেহাংশ বা ছাপ। এগুলি প্রমাণ করে যে অতীতে এমন অনেক জীব ছিল যাদের অস্তিত্ব বর্তমানে নেই।
* বিবর্তনের ধারা: বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক স্তরে পাওয়া জীবাশ্মগুলি পর্যবেক্ষণ করে জীবের সরল গঠন থেকে ক্রমশ জটিল গঠনে পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা বোঝা যায়। নিচের স্তরের জীবাশ্মগুলি সাধারণত সরলতর ও প্রাচীনতর হয়।
* সংযোগকারী লিঙ্ক (Connecting Links): কিছু জীবাশ্ম পাওয়া গেছে যেগুলি দুটি ভিন্ন জীবগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য বহন করে (যেমন আর্কিওপটেরিক্স – সরীসৃপ ও পাখির বৈশিষ্ট্য)। এগুলি প্রমাণ করে একটি গোষ্ঠী থেকে অন্য গোষ্ঠীর উৎপত্তি ঘটেছে এবং তাদের মধ্যে বিবর্তনীয় সম্পর্ক বিদ্যমান।
* পূর্বপুরুষ নির্ণয়: বিভিন্ন জীবের জীবাশ্মের গঠনগত তুলনা করে তাদের সাধারণ পূর্বপুরুষ এবং বিবর্তনের পথ সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
৯. জড় পদার্থ থেকে জীবের উৎপত্তি কি ভাবে হয়েছে তার প্রমান দাও।
উত্তর: জড় পদার্থ থেকে জীবের উৎপত্তি (Abiogenesis) কিভাবে হয়েছে, তার সরাসরি প্রমাণ দেওয়া কঠিন কারণ এটি কোটি কোটি বছর আগে ঘটেছিল। তবে বিজ্ঞানী জে.বি.এস. হ্যালডেন ও পরে ওপারিন প্রস্তাব করেন যে, পৃথিবীর আদিম পরিবেশে (যেখানে অক্সিজেন ছিল না, কিন্তু মিথেন, অ্যামোনিয়া, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি ছিল এবং বজ্রপাত বা অতিবেগুনী রশ্মির মতো শক্তির উৎস ছিল) সরল অজৈব অণু থেকে ধীরে ধীরে জটিল জৈব অণু (যেমন অ্যামিনো অ্যাসিড, নিউক্লিক অ্যাসিড) সৃষ্টি হয়েছিল। এই জৈব অণুগুলি একত্রিত হয়ে প্রথম কোষ বা জীবনের সৃষ্টি করে।
* পরীক্ষামূলক প্রমাণ: ১৯৫৩ সালে স্ট্যানলি মিলার এবং হ্যারল্ড উরে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে এই তত্ত্বের স্বপক্ষে প্রমাণ দেন। তাঁরা গবেষণাগারে পৃথিবীর আদিম পরিবেশের অনুরূপ অবস্থা সৃষ্টি করে (মিথেন, অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন ও জলীয় বাষ্পের মিশ্রণে বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ প্রবাহিত করে) দেখান যে সরল অজৈব পদার্থ থেকে অ্যামিনো অ্যাসিডের মতো গুরুত্বপূর্ণ জৈব অণু সংশ্লেষিত হতে পারে। এটি প্রমাণ করে যে জড় পদার্থ থেকে জীবনের রাসায়নিক উৎপত্তি সম্ভব।
১০. অযৌন প্রজনন অপেক্ষা যৌন প্রজনন বেশী জীবনক্ষম প্রকারন প্রদান করে কিভাবে বোঝাও। যৌন প্রজননক্ষম জীবের বিবর্তনে এর প্রভাব কিভাবে পরে।
উত্তর:
* প্রকারণ সৃষ্টি: অযৌন প্রজননে মূলত DNA কপিং-এর সময় সামান্য ভুলের (Mutation) কারণে প্রকারণ সৃষ্টি হয়, যা খুব ধীর প্রক্রিয়া। অন্যদিকে, যৌন প্রজননে দুটি ভিন্ন উৎস (পিতা ও মাতা) থেকে আসা DNA মিলিত হয়। এই মিলনের সময় জিনের নতুন সংমিশ্রণ (Combination) ঘটে এবং ক্রোমোজোমের মধ্যে অংশের বিনিময় (Crossing over) হতে পারে। এর ফলে প্রতিটি অপত্য জীব জিনগতভাবে অনন্য হয় এবং অনেক বেশি ও নতুন প্রকারণ সৃষ্টি হয়।
* বিবর্তনে প্রভাব: যৌন প্রজননের ফলে সৃষ্ট এই ব্যাপক প্রকারণ প্রজাতির মধ্যে বৈচিত্র্য আনে। পরিবেশ পরিবর্তিত হলে, এই বৈচিত্র্যের মধ্যে কিছু প্রকারণ নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে বা টিকে থাকতে সাহায্য করে (অভিযোজন)। প্রাকৃতিক নির্বাচন এই অনুকূল প্রকারণগুলিকে নির্বাচন করে, ফলে সেই বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীবের সংখ্যা বাড়ে এবং কালক্রমে প্রজাতির বিবর্তন ঘটে । সুতরাং, যৌন প্রজনন অধিক প্রকারণ সৃষ্টি করে বিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে।
১১. পিতা এবং মাতার সমান সমান জিনগত অবদান পরের প্রজন্মে কি ঘটায়?
[cite_start]উত্তর: যৌন প্রজননে পিতা ও মাতা উভয়েই জননকোষের (শুক্রাণু ও ডিম্বাণু) মাধ্যমে তাদের জিনগত উপাদানের (ক্রোমোজোম বা DNA) অর্ধেক করে সন্তানের মধ্যে সঞ্চারিত করে। এই সমান সমান অবদানের ফলে:
* ক্রোমোজোম সংখ্যার ধ্রুবকতা: প্রজাতির নির্দিষ্ট ক্রোমোজোম সংখ্যা (যেমন মানুষের ক্ষেত্রে ৪৬টি) বংশপরম্পরায় ধ্রুবক থাকে। জননকোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা অর্ধেক (হ্যাপ্লয়েড) হয়ে যায় এবং নিষেকের পর অপত্য জীবে আবার পূর্ণ সংখ্যা (ডিপ্লয়েড) ফিরে আসে।
* বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ: সন্তান পিতা ও মাতা উভয়ের কাছ থেকে জিন পাওয়ায়, তার মধ্যে উভয় বংশের বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণ ঘটে।
* প্রকারণ: পিতা ও মাতার জিনের নতুন সমন্বয়ের ফলে সন্তানের মধ্যে নতুন বৈশিষ্ট্যের বা প্রকারণের উদ্ভব হয়, যা বিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
১২. কোনও গোষ্ঠীতে কোনও জীবের প্রজাতির বেঁচে থাকার সুবিধা দেয় কেবলমাত্র প্রকারন। তুমি কি এব্যাপারে একই মত পোষণ কর? কেন বা কেন নয়?
উত্তর: না, এই বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণরূপে একমত হওয়া যায় না। প্রকারণ অবশ্যই প্রজাতির বেঁচে থাকার জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, কারণ এটি পরিবর্তিত পরিবেশে অভিযোজিত হতে সাহায্য করে । তবে এটিই একমাত্র কারণ নয়।
* অন্যান্য কারণ: জীবের বেঁচে থাকার সুবিধা নির্ভর করে তার পরিবেশের সাথে মিথস্ক্রিয়া, খাদ্য ও বাসস্থানের পর্যাপ্ততা, শিকারীর অনুপস্থিতি, রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং নির্দিষ্ট পরিবেশে তার বিদ্যমান অভিযোজনের উপর।
* জিনগত প্রবাহ (Genetic Drift): কখনও কখনও কোনও প্রকারণ বেঁচে থাকার সুবিধা না দিলেও শুধুমাত্র দৈবক্রমে (chance event) বা জিনগত প্রবাহের কারণে সেটি গোষ্ঠীতে প্রধান হয়ে উঠতে পারে । উদাহরণস্বরূপ, নীল গুবরে পোকার সংখ্যা বৃদ্ধি (উদাহরণ 9.3.1) বেঁচে থাকার সুবিধা ছাড়াই ঘটেছিল।
* প্রকারণের প্রকৃতি: সব প্রকারণই সুবিধাজনক হয় না, কিছু প্রকারণ ক্ষতিকরও হতে পারে বা পরিবেশের উপর কোনো প্রভাব নাও ফেলতে পারে।
সুতরাং, প্রকারণ বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ায়, কিন্তু এটিই বেঁচে থাকার সুবিধার একমাত্র নির্ধারক নয়। বিদ্যমান অভিযোজন এবং পরিবেশগত কারণগুলিও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *