বিদ্যুৎ প্রবাহের চুম্বকীয় প্রভাব, Chapter -13, Class-10, SEBA, NCERT solutions

বিদ্যুৎ প্রবাহের চুম্বকীয় প্রভাব, Chapter -13

বিদ্যুৎ প্রবাহের চুম্বকীয় প্রভাব, Chapter -13

অনুশীলনী (পৃষ্ঠা ১৮-১৯)
১. নীচের কোনটি কোন দীর্ঘ ঋজু তারের নিকটে চুম্বকক্ষেত্রের সঠিক বর্ননা-
(a) ক্ষেত্রটি তারের লম্বভাবে থাকা কতকগুলো সরলরেখার সমষ্টি।
(b) ক্ষেত্রটি তারের সমান্তরাল ভাবে থাকা কতকগুলো সরলরেখার সমষ্টি।
(c) ক্ষেত্রটি তার থেকে উৎপন্ন অরীয় (ব্যাসার্দ্ধের ন্যায়) রেখার সমষ্টি।
(d) ক্ষেত্রটি তারকে কেন্দ্র করে কতকগুলো এককেন্দ্রিক বৃত্তের সমষ্টি।
উত্তর: (d) ক্ষেত্রটি তারকে কেন্দ্র করে কতকগুলো এককেন্দ্রিক বৃত্তের সমষ্টি।
২. বিদ্যুত চুম্বক আবেশ হল এমন পরিঘটনা যারদ্বারা
(a) কোন বস্তুকে আধানযুক্ত করা যায়।
(b) কোন কুন্ডলীতে বিদ্যুত প্রবাহের সাহায্যে চুম্বকক্ষেত্র উৎপন্ন করা যায়।
(c) চুম্বক ও কুন্ডলীর মধ্যে আপেক্ষিক গতির সাহায্যে কুন্ডলীতে আবিষ্ট-বিদ্যুত উৎপাদন করা যায়।
(d) বৈদ্যুতিক মটরের কুন্ডলীকে ঘুরানো যায়।
উত্তর: (c) চুম্বক ও কুন্ডলীর মধ্যে আপেক্ষিক গতির সাহায্যে কুন্ডলীতে আবিষ্ট-বিদ্যুত উৎপাদন করা যায়।
৩. বিদ্যুত উৎপাদনের কৌশলকে বলে-
(a) বিদ্যুত উৎপাদনক (Generator)
(b) গ্যালভেনোমিটার।
(c) অ্যামিটার।
(d) মটর।
উত্তর: (a) বিদ্যুত উৎপাদনক (Generator)
৪. AC উৎপাদক এবং DC উৎপাদকের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য এই যে-
(a) AC উৎপাদকে বিদ্যুত চুম্বক এবং DC উৎপাদকে স্থায়ী চুম্বক ব্যবহার করা হয়।
(b) DC উৎপাদক উচ্চতর ভোল্টেজ উৎপন্ন করে।
(c) AC উৎপাদক উচ্চতর ভোল্টেজ উৎপন্ন করে।
(d) AC উৎপাদকে স্লিপরিং এবং DC উৎপাদকে কমুটেটার ব্যবহার করা হয়।
[cite_start]উত্তর: (d) AC উৎপাদকে স্লিপরিং (আংটি) এবং DC উৎপাদকে স্প্লিটরিং কমুটেটার ব্যবহার করা হয়।
৫. শট সার্কিটের সময় বর্তনীতে বিদ্যুত প্রবাহের পরিমান
(a) অধিক হ্রাস পায়।
(b) পরিবর্তিত হয় না।
(c) অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়।
(d) অবিরামভাবে পরিবর্তিত হয়।
উত্তর: (c) অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়।
৬. নীচের বাক্যগুলি সত্য না মিথ্যা-
(a) বৈদ্যুতিক মটর যান্ত্রিক শক্তিকে বিদ্যুত শক্তিতে রূপান্তরিত করে। – মিথ্যা (বিদ্যুৎ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে)।
(b) বিদ্যুত উৎপাদনক বিদ্যুত চুম্বকীয় আবেশ নীতির দ্বারা কর্মক্ষম হয়। – সত্য।
(c) বিদ্যুতবাহী কোন বৃত্তাকার কুন্ডলীয় কেন্দ্রে চুম্বকক্ষেত্ররেখা সমান্তরাল সরলরৈখিক হয়। – সত্য ।
(d) সবুজ অন্তরক যুক্ত তার সাধারনতঃ বিদ্যুত সরবরাহের লাইভ ওয়ার। – মিথ্যা (সবুজ তার আর্থ ওয়ার, লাল তার লাইভ ওয়ার)।
৭. চুম্বকক্ষেত্র উৎপাদনের দুইটি পদ্ধতি উল্লেখ কর।
উত্তর: চুম্বকক্ষেত্র উৎপাদনের দুটি পদ্ধতি হলো:
* স্থায়ী চুম্বক ব্যবহার করে: দণ্ড চুম্বক বা অশ্বখুরাকৃতি চুম্বকের চারপাশে স্বাভাবিকভাবেই চুম্বকক্ষেত্র থাকে।
* বিদ্যুৎ প্রবাহ ব্যবহার করে: কোনো পরিবাহী তারের (যেমন ঋজু তার, বৃত্তাকার কুন্ডলী বা সোলেনয়েড) মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ চালনা করলে তার চারপাশে চুম্বকক্ষেত্র সৃষ্টি হয়।
৮. সোলেনয়েড কিভাবে চুম্বকের মত আচরন করে? দণ্ডচুম্বকের সাহায্যে বিদ্যুতবাহী সোলেনয়েডে উত্তর এবং দক্ষিন মেরু চিহ্নিত করা যায় কি? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:
* চুম্বকের মতো আচরণ: যখন একটি সোলেনয়েডের (লম্বা অন্তরিত তারের কুন্ডলী) মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ চালনা করা হয়, তখন তার অভ্যন্তরে এবং চারপাশে চুম্বকক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। এই চুম্বকক্ষেত্রের ক্ষেত্ররেখাগুলি একটি দণ্ড চুম্বকের ক্ষেত্ররেখার অনুরূপ হয়। সোলেনয়েডের একটি প্রান্ত উত্তর মেরু এবং অপর প্রান্ত দক্ষিণ মেরুর মতো আচরণ করে। সোলেনয়েডের অভ্যন্তরে চুম্বকক্ষেত্র সুষম ও শক্তিশালী হয় ।
* মেরু চিহ্নিতকরণ: হ্যাঁ, একটি দণ্ড চুম্বকের সাহায্যে সোলেনয়েডের মেরু চিহ্নিত করা যায়। একটি জ্ঞাত দণ্ড চুম্বকের উত্তর মেরুকে সোলেনয়েডের একটি প্রান্তের কাছে আনলে যদি বিকর্ষণ ঘটে, তবে সোলেনয়েডের ওই প্রান্তটি উত্তর মেরু। আর যদি আকর্ষণ ঘটে, তবে ওই প্রান্তটি দক্ষিণ মেরু। বিপরীতভাবে দণ্ড চুম্বকের দক্ষিণ মেরু ব্যবহার করেও পরীক্ষাটি করা যায় (সম মেরু বিকর্ষণ করে, বিষম মেরু আকর্ষণ করে)।
৯. কোন চুম্বকক্ষেত্রে স্থাপিত বিদ্যুতবাহী পরিবাহীর উপর কখন সর্ব্বোচ্চ পরিমান বল ক্রিয়াশীল হয়?
উত্তর: কোনো চুম্বকক্ষেত্রে স্থাপিত বিদ্যুৎবাহী পরিবাহীর উপর ক্রিয়াশীল বলের পরিমাণ সর্বোচ্চ হয় যখন বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক এবং চুম্বক ক্ষেত্রের দিক পরস্পর লম্বভাবে (সমকোণে) অবস্থান করে।
১০. কল্পনা কর কোন কক্ষে দেওয়ালের দিকে পিঠ দিয়ে তুমি বসে আছ। পেছনের দেওয়াল থেকে সামনের দেওয়ালের দিকে অনুভূমিকভাবে ইলেক্ট্রন রশ্মি গতি করার সময় তোমার ডান দিক থেকে একটি শক্তিশালী চুম্বকক্ষেত্র এর বিক্ষেপন ঘটায়। চুম্বকক্ষেত্রের দিক কি হবে?
উত্তর:
* ইলেক্ট্রন রশ্মি পিছন থেকে সামনের দিকে যাচ্ছে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক ইলেকট্রনের গতির বিপরীত দিকে হয়, অর্থাৎ সামনের দেওয়াল থেকে পিছনের দেওয়ালের দিকে।
* ইলেকট্রন রশ্মির বিক্ষেপণ হচ্ছে ডান দিকে (এটিই প্রযুক্ত বলের দিক)।
* ফ্লেমিং-এর বাম হস্ত নিয়ম প্রয়োগ করে:
   * মধ্যমা (বিদ্যুৎ প্রবাহ) = সামনের দেওয়াল থেকে পিছনের দিকে।
   * বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ (বলের দিক / বিক্ষেপণের দিক) = ডান দিকে।
   * তাহলে তর্জনী (চুম্বক ক্ষেত্রের দিক) নির্দেশ করবে উল্লম্বভাবে নীচের দিকে।
     সুতরাং, চুম্বকক্ষেত্রের দিক হবে নীচের দিকে।
১১. বৈদ্যুতি মটরের একটি রেখাচিত্র অঙ্কন কর। এর নীতি ও কার্যপ্রনালী ব্যাখ্যা কর। বৈদ্যুতিক মটরে স্পিটরিং এর ভূমিকা কি?
উত্তর:
* রেখাচিত্র:  (পাঠ্যপুস্তকের চিত্র- 13.15 দেখুন)
* নীতি: বৈদ্যুতিক মটরের মূল নীতি হলো, যখন একটি চুম্বকক্ষেত্রে স্থাপিত কোনো পরিবাহী কুন্ডলীর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ চালনা করা হয়, তখন কুন্ডলীটি একটি বল (টর্ক) অনুভব করে এবং ঘুরতে শুরু করে। এই বলের দিক ফ্লেমিং-এর বাম হস্ত নিয়ম দ্বারা নির্ধারিত হয়।
* কার্যপ্রণালী:
   * একটি আয়তাকার কুন্ডলী (আর্মেচার) শক্তিশালী চুম্বকের দুই মেরুর মাঝে রাখা হয়।
   * ব্যাটারী থেকে ব্রাশ ও স্প্লিট রিং কমুটেটরের মাধ্যমে কুন্ডলীতে বিদ্যুৎ প্রবাহ পাঠানো হয়।
   * ধরা যাক, প্রবাহ AB বাহুতে A থেকে B এবং CD বাহুতে C থেকে D দিকে যাচ্ছে। চুম্বকক্ষেত্র N থেকে S মেরুর দিকে।
   * ফ্লেমিং-এর বাম হস্ত নিয়ম অনুযায়ী, AB বাহু নীচের দিকে এবং CD বাহু উপরের দিকে বল অনুভব করে। এই দুটি বল একটি টর্ক সৃষ্টি করে এবং কুন্ডলীটি ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ঘুরতে শুরু করে।
   * অর্ধেক ঘূর্ণনের পর, স্প্লিট রিং-এর মাধ্যমে কুন্ডলীতে প্রবাহের দিক উল্টে যায় (DCBA পথে)। ফলে AB বাহু এবার উপরের দিকে এবং CD বাহু নীচের দিকে বল অনুভব করে। এতে কুন্ডলীটি একই দিকে ঘুরতে থাকে ।
   * এইভাবে প্রতি অর্ধ ঘূর্ণনে প্রবাহের দিক পরিবর্তনের ফলে কুন্ডলীটি নিরবচ্ছিন্নভাবে ঘুরতে থাকে, যা যান্ত্রিক শক্তি উৎপন্ন করে।
* স্প্লিট রিং (Split Ring Commutator) এর ভূমিকা: স্প্লিট রিং কমুটেটরের প্রধান কাজ হলো প্রতি অর্ধ ঘূর্ণন পর কুন্ডলীতে বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক পরিবর্তন (উল্টে দেওয়া) । এর ফলেই কুন্ডলীটি সর্বদা একই দিকে ঘূর্ণন বল লাভ করে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে ঘুরতে পারে।
১২. কয়েকটি যন্ত্রের নাম উল্লেখ কর যাতে বৈদ্যুতিক মটর ব্যবহৃত হয়।
উত্তর: বৈদ্যুতিক পাখা, রেফ্রিজারেটর, মিক্সার (গ্রাইন্ডার), ওয়াশিং মেশিন, কম্পিউটার (হার্ড ডিস্ক, কুলিং ফ্যান), MP3 প্লেয়ার (ডিস্ক ঘোরানোর জন্য), বৈদ্যুতিক খেলনা গাড়ি, জল তোলার পাম্প ইত্যাদি যন্ত্রে বৈদ্যুতিক মটর ব্যবহৃত হয়।
১৩. অন্তরিত কপার তারের একটি কুন্ডলী গ্যালভেনোমিটারের, সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। কি ঘটবে যদি একটি দণ্ড চুম্বককে (i) কুন্ডলীতে ঠেলে দেওয়া হয় (ii) কুন্ডলীর অভ্যন্তর থেকে টেনে বার করা হয় (iii) কুন্ডলীর ভিতরে স্থির অবস্থায় রাখা হয়?
উত্তর:
(i) কুন্ডলীতে ঠেলে দেওয়া হলে: কুন্ডলীর সাথে জড়িত চুম্বকক্ষেত্রের পরিবর্তন ঘটবে। ফলে, কুন্ডলীতে একটি ক্ষণস্থায়ী তড়িৎ প্রবাহ আবিষ্ট হবে এবং গ্যালভেনোমিটারের কাঁটার বিক্ষেপণ (একদিকে) দেখা যাবে ।
(ii) কুন্ডলীর অভ্যন্তর থেকে টেনে বার করা হলে: আবারও কুন্ডলীর সাথে জড়িত চুম্বকক্ষেত্রের পরিবর্তন ঘটবে। [cite_start]ফলে, কুন্ডলীতে পুনরায় ক্ষণস্থায়ী তড়িৎ প্রবাহ আবিষ্ট হবে, কিন্তু এবার প্রবাহের দিক আগের বিপরীত হবে, তাই গ্যালভেনোমিটারের কাঁটার বিপরীত দিকে বিক্ষেপণ দেখা যাবে ।
(iii) কুন্ডলীর ভিতরে স্থির অবস্থায় রাখা হলে: কুন্ডলী এবং চুম্বকের মধ্যে কোনো আপেক্ষিক গতি না থাকায়, কুন্ডলীর সাথে জড়িত চুম্বকক্ষেত্রের কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। ফলে, কোনো তড়িৎ প্রবাহ আবিষ্ট হবে না এবং গ্যালভেনোমিটারের কাঁটার কোনো বিক্ষেপণ হবে না।
১৪. দুইটি বৃত্তাকার কুন্ডলী A এবং B পরস্পরের কাছাকাছি রাখা হয়েছে। যদি প্রথম কুন্ডলী A তে বিদ্যুত প্রবাহের পরিমান পরিবর্তন করা হয়, দ্বিতীয় কুন্ডলী B তে কি কিছু পরিমান বিদ্যুত আবিষ্ট হবে? কারন দর্শাও।
উত্তর: হ্যাঁ, দ্বিতীয় কুন্ডলী B তে বিদ্যুৎ আবিষ্ট হবে।
* কারণ: যখন প্রথম কুন্ডলী A-তে বিদ্যুৎ প্রবাহের পরিবর্তন করা হয় (যেমন প্রবাহ চালু করা, বন্ধ করা বা বাড়ানো-কমানো), তখন A কুন্ডলী দ্বারা সৃষ্ট চুম্বকক্ষেত্রেরও পরিবর্তন ঘটে। যেহেতু B কুন্ডলীটি A-এর কাছাকাছি রাখা আছে, তাই A-এর চুম্বকক্ষেত্রের পরিবর্তন B কুন্ডলীর সাথে জড়িত চুম্বকক্ষেত্র রেখারও পরিবর্তন ঘটায়। এই পরিবর্তনশীল চুম্বকক্ষেত্রের প্রভাবেই দ্বিতীয় কুন্ডলী B-তে তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ ঘটে এবং একটি ক্ষণস্থায়ী আবিষ্ট বিদ্যুৎ প্রবাহ উৎপন্ন হয়।
১৫. দিক নির্ণয়ের নিয়ম উল্লেখ কর (i) বিদ্যুতবাহী ঋজু পরিবাহীর চারদিকে উৎপন্ন চুম্বক ক্ষেত্রের (ii) কোন চুম্বক ক্ষেত্রে লম্বভাবে স্থাপিত বিদ্যুতবাহী ঋজু পরিবাহীরদ্বারা অনুভব করা বলের (iii) কোন চুম্বক ক্ষেত্রে ঘূর্ণনশীল কুন্ডলীতে উৎপন্ন আবিষ্ট বিদ্যুতের।
উত্তর:
(i) বিদ্যুৎবাহী ঋজু পরিবাহীর চারদিকে চুম্বক ক্ষেত্রের দিক: ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি নিয়ম (Right-hand thumb rule)। নিয়মটি হলো: যদি একটি বিদ্যুৎবাহী ঋজু পরিবাহীকে ডান হাত দিয়ে এমনভাবে ধরা হয় যাতে বৃদ্ধাঙ্গুলি বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক নির্দেশ করে, তবে অন্যান্য আঙ্গুলগুলি যেদিকে বেঁকে থাকে, সেই দিকই চুম্বক ক্ষেত্ররেখার দিক নির্দেশ করে ।
(ii) চুম্বক ক্ষেত্রে বিদ্যুৎবাহী পরিবাহীর উপর ক্রিয়াশীল বলের দিক: ফ্লেমিং-এর বাম হস্ত নিয়ম (Fleming’s left-hand rule)। নিয়মটি হলো: বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি, তর্জনী ও মধ্যমা পরস্পর সমকোণে রাখলে, যদি তর্জনী চুম্বক ক্ষেত্রের দিক এবং মধ্যমা বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক নির্দেশ করে, তবে বৃদ্ধাঙ্গুলি পরিবাহীর উপর ক্রিয়াশীল বলের দিক নির্দেশ করবে ।
(iii) চুম্বক ক্ষেত্রে ঘূর্ণনশীল কুন্ডলীতে আবিষ্ট বিদ্যুতের দিক: ফ্লেমিং-এর ডান হস্ত নিয়ম (Fleming’s right-hand rule)।নিয়মটি হলো: ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি, তর্জনী ও মধ্যমা পরস্পর সমকোণে রাখলে, যদি তর্জনী চুম্বক ক্ষেত্রের দিক এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি পরিবাহীর গতির দিক নির্দেশ করে, তবে মধ্যমা পরিবাহীতে আবিষ্ট বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক নির্দেশ করবে।
১৬. একটি চিহ্নিত রেখা চিত্রের সাহায্যে বিদ্যুত উৎপাদকের নীতি ও কার্য প্রনালী ব্যাখ্যা কর। এখানে ব্রাসের ভূমিকা কি?
উত্তর:
* রেখাচিত্র:  (পাঠ্যপুস্তকের চিত্র- 13.19 দেখুন)
* নীতি: বিদ্যুৎ উৎপাদক বা জেনারেটর তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ (Electromagnetic Induction) নীতির উপর ভিত্তি করে কাজ করে। নীতিটি হলো: যখন কোনো বদ্ধ কুন্ডলীর সাথে জড়িত চুম্বকক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটে, তখন কুন্ডলীতে একটি তড়িৎ প্রবাহ আবিষ্ট হয়। যান্ত্রিক শক্তি ব্যবহার করে চুম্বকক্ষেত্রে কুন্ডলীকে ঘোরানোর ফলে এই পরিবর্তন ঘটানো হয়।
* কার্যপ্রণালী:
   * একটি আয়তাকার কুন্ডলী (ABCD) একটি শক্তিশালী স্থায়ী চুম্বকের দুই মেরুর মাঝে এমনভাবে রাখা হয় যাতে এটি ঘুরতে পারে।
   * কুন্ডলীর দুই প্রান্ত দুটি পৃথক স্লিপ রিং (AC জেনারেটরের ক্ষেত্রে) বা স্প্লিট রিং (DC জেনারেটরের ক্ষেত্রে) R₁ ও R₂ এর সাথে যুক্ত থাকে।
   * দুটি স্থির পরিবাহী ব্রাশ (B₁ ও B₂) রিংদুটিকে স্পর্শ করে থাকে এবং বহিঃবর্তনীতে গ্যালভেনোমিটারের সাথে যুক্ত থাকে ।
   * যখন কুন্ডলীটিকে যান্ত্রিক শক্তি প্রয়োগে ঘোরানো হয় (ধরা যাক AB বাহু উপরে ও CD বাহু নীচে নামে), তখন কুন্ডলীর মধ্য দিয়ে যাওয়া চুম্বকক্ষেত্র রেখার পরিবর্তন ঘটে।
   *ফ্লেমিং-এর ডান হস্ত নিয়ম অনুসারে, AB ও CD বাহুতে আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহ উৎপন্ন হয় (ধরা যাক ABCD পথে) । এই প্রবাহ ব্রাশ B₂ থেকে B₁ এর দিকে বহিঃবর্তনীতে যায়।
   * অর্ধেক ঘূর্ণনের পর, CD বাহু উপরে ও AB বাহু নীচে নামে। ফলে আবিষ্ট প্রবাহের দিক উল্টে যায় (DCBA পথে)। এবার বহিঃবর্তনীতে প্রবাহ B₁ থেকে B₂ এর দিকে যায় ।
   *এইভাবে প্রতি অর্ধ ঘূর্ণনে প্রবাহের দিক পরিবর্তিত হতে থাকায় পরিবর্তী প্রবাহ (AC) উৎপন্ন হয়। (DC জেনারেটরে স্প্লিট রিং কমুটেটর থাকায় বহিঃবর্তনীতে প্রবাহ সর্বদা একই দিকে থাকে।
* ব্রাশের ভূমিকা: ব্রাশগুলি স্থির পরিবাহী যা ঘূর্ণায়মান রিং (স্লিপ রিং বা স্প্লিট রিং) এবং স্থির বহিঃবর্তনী (যেমন গ্যালভেনোমিটার বা লোড)-এর মধ্যে বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন করে। ঘূর্ণায়মান কুন্ডলীতে উৎপন্ন আবিষ্ট বিদ্যুৎ ব্রাশের মাধ্যমে বহিঃবর্তনীতে প্রবাহিত হয়।
১৭. বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট কখন উৎপন্ন হয়?
উত্তর: সাধারণত বিদ্যুতের লাইনে দুটি তার থাকে – একটি লাইভ বা পজিটিভ তার (লাল অন্তরক) এবং অন্যটি নিউট্রাল বা নিগেটিভ তার (কালো অন্তরক)। কোনো কারণে (যেমন তারের অন্তরক নষ্ট হয়ে গেলে বা যন্ত্রে ত্রুটি দেখা দিলে) যদি এই লাইভ তার এবং নিউট্রাল তার সরাসরি সংস্পর্শে আসে, তখন বর্তনীর রোধ প্রায় শূন্য হয়ে যায়। এর ফলে ওমের সূত্র (I = V/R) অনুযায়ী বর্তনীতে অত্যন্ত উচ্চ মানের বিদ্যুৎ প্রবাহ শুরু হয়। এই ঘটনাকেই বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট বলে ।
১৮. আর্থ ওয়ারের কাজ কি? ধাতব যন্ত্রাদির আর্থিং প্রয়োজনীয় কেন?
উত্তর:
আর্থ ওয়ারের কাজ: আর্থ ওয়ার (সবুজ অন্তরক যুক্ত) একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা। এটি বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ধাতব আবরণের সাথে যুক্ত থাকে এবং অন্য প্রান্তটি মাটির গভীরে পোঁতা একটি ধাতব পাতের সাথে যুক্ত থাকে এর প্রধান কাজ হলো, কোনো কারণে যন্ত্রের ধাতব আবরণ লাইভ তারের সংস্পর্শে চলে এলে উৎপন্ন অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রবাহকে কম রোধের পথে মাটিতে পাঠিয়ে দেওয়া।
* আর্থিং-এর প্রয়োজনীয়তা: ধাতব যন্ত্রাদির (যেমন ইস্ত্রি, টোস্টার, ফ্রিজ) আবরণ বিদ্যুত পরিবাহী। যদি কোনো ত্রুটির কারণে লাইভ তার এই আবরণের সংস্পর্শে আসে, তবে যন্ত্রটি বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় কেউ যন্ত্রটি স্পর্শ করলে তার শরীরের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ মাটিতে প্রবাহিত হবে এবং মারাত্মক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার (Electric shock) সম্ভাবনা থাকে। আর্থিং করা থাকলে, ত্রুটি ঘটামাত্র অতিরিক্ত বিদ্যুৎ আর্থ ওয়ারের মাধ্যমে নিরাপদে মাটিতে চলে যায়, যন্ত্রের বিভব পৃথিবীর বিভবের সমান থাকে এবং ব্যবহারকারী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পায়। অনেক সময় এই অতিরিক্ত প্রবাহের ফলে ফিউজ গলে যায় বা সার্কিট ব্রেকার ট্রিপ করে, যা আরও সুরক্ষা প্রদান করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *