পদার্থ ঃ ধাতু ও অধাতু ,Chapter -4, Science, Class-8 ,SEBA
পদার্থ ঃ ধাতু ও অধাতু ,Chapter -4, Science, Class-8 ,SEBA
অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর (Exercises)
1) নীচের কোনটিকে পিটিয়ে পাতলা পাতে পরিণত করা যায়।
(a) জিংক (b) ফসফরাস (c) সালফার (d) অক্সিজেন
উত্তর:
(a) জিংক (Zn)
ব্যাখ্যা: ধাতুকে পিটিয়ে পাতলা পাতে পরিণত করা যায়। ধাতুর এই ধর্মকে ঘাতসহিষ্ণুতা (Malleability) বলে। জিংক একটি ধাতু, তাই এটিকে পিটিয়ে পাতলা পাতে পরিণত করা যায়। ফসফরাস, সালফার এবং অক্সিজেন হলো অধাতু, এদের ঘাতসহিষ্ণুতা ধর্ম নেই।
2) নীচের উক্তিগুলোর কোনটি শুদ্ধ?
(a) সব ধাতু নমনীয়।
(b) সব অধাতু নমনীয়।
(c) সাধারণত ধাতুগুলো নমনীয়।
(d) কিছু অধাতু নমনীয়।
উত্তর:
(c) সাধারণত ধাতুগুলো নমনীয়।
ব্যাখ্যা: ধাতুগুলোকে টেনে তার প্রস্তুত করা যায়। ধাতুর এই গুণকে নমনীয়তা (Ductility) বলা হয়। এটি ধাতুর একটি সাধারণ ধর্ম। যদিও সোডিয়াম (Sodium) এবং পটাশিয়ামের (Potassium) মতো ধাতুগুলো নরম এবং পারদ (Mercury) তরল, তাই সবচেয়ে সঠিক উক্তি হলো “সাধারণত ধাতুগুলো নমনীয়”। অধাতুগুলো নমনীয় নয়।
3) শূন্যস্থান পূরণ করো।
উত্তর:
[a] ফসফরাস খুব সক্রিয় অধাতু।
[b] ধাতুগুলো তাপ ও বিদ্যুতের সুপরিবাহী।
[c] লোহা, তামা থেকে তার প্রস্তুত হয়।
[d] ধাতু অ্যাসিডের (অম্ল) সঙ্গে বিক্রিয়া করে ধাতব লবণ ও হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে।
4) শুদ্ধ উক্তি চিহ্নিত করো ‘T’ এবং ভুল উক্তি চিহ্নিত করো ‘F’ দ্বারা চিহ্নিত করো।
উত্তর:
[a] সাধারণত অধাতু অ্যাসিডের (অম্ল) সঙ্গে বিক্রিয়া করে। [F]
[b] সোডিয়াম খুব সক্রিয় ধাতু। [T]
[c] জিঙ্ক সালফেটের দ্রবণ থেকে কপার জিঙ্ককে প্রতিস্থাপিত করতে পারে। [F]
[d] কয়লাকে টেনে তারে পরিণত করা যায়। [F]
5) নীচের তালিকায় কতকগুলো ধর্ম দেওয়া আছে। ধর্মের উপর ভিত্তি করে ধাতু ও অধাতুর পার্থক্যগুলো উল্লেখ করো।
আকৃতি-প্রকৃতিধাতু: সাধারণত উজ্জ্বল বা দ্যুতিময়অধাতু: সাধারণত অনুজ্জ্বল
কঠিনতাধাতু: সাধারণত কঠিন (ব্যতিক্রম: সোডিয়াম, পটাশিয়াম নরম, পারদ তরল)অধাতু: সাধারণত নরম
ঘাতসহিষ্ণুতাধাতু: ঘাতসহী — পিটিয়ে পাতলা পাতে পরিণত করা যায়অধাতু: ঘাতসহী নয় — সামান্য আঘাত করলে গুঁড়ো পদার্থে পরিণত হয়
নমনীয়তাধাতু: নমনীয় — টেনে তার প্রস্তুত করা যায়অধাতু: নমনীয় নয়
তাপ পরিবাহনধাতু: তাপের সুপরিবাহীঅধাতু: তাপের কুপরিবাহী
বিদ্যুৎ পরিবাহনধাতু: বিদ্যুতের সুপরিবাহীঅধাতু: বিদ্যুতের কুপরিবাহী (ব্যতিক্রম: কার্বনের একটি রূপভেদ গ্রাফাইট বিদ্যুতের সুপরিবাহী
6) নীচে দেওয়া উক্তিগুলোর কারণ উল্লেখ করো:
[a] অ্যালুমিনিয়ামের পাতলা পাত দিয়ে খাবারের জিনিস মোড়ানো হয়।
[b] তরল পদার্থ গরম করার জন্য ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক হিটারের তার ধাতু দ্বারা প্রস্তুত করা হয়।
[c] জিঙ্ক লবণের জলীয় দ্রবণ থেকে কপার জিঙ্ককে প্রতিস্থাপিত করতে পারে না।
[d] সোডিয়াম ও পটাশিয়ামকে কেরোসিনে সংরক্ষণ করা হয়।
উত্তর:
[a] অ্যালুমিনিয়ামের পাতলা পাত দিয়ে খাবারের জিনিস মোড়ানো হয়:
* অ্যালুমিনিয়াম একটি ধাতু। ধাতুকে পিটিয়ে পাতলা পাতে (তবক) পরিণত করা যায়। ধাতুর এই ধর্মকে ঘাতসহিষ্ণুতা (Malleability) বলে।
* খাদ্যবস্তু মোড়ানোর জন্য অ্যালুমিনিয়ামের পাতলা তবকের ব্যবহার করা হয়।
[b] তরল পদার্থ গরম করার জন্য ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক হিটারের তার ধাতু দ্বারা প্রস্তুত করা হয়:
* ধাতুগুলো তাপ ও বিদ্যুতের সুপরিবাহী (Good Conductor)।
* বৈদ্যুতিক হিটারে বিদ্যুৎ প্রবাহের মাধ্যমে দ্রুত তাপ উৎপন্ন করতে এবং সেই তাপকে তরল পদার্থে পৌঁছে দিতে ধাতব তার ব্যবহৃত হয়, কারণ ধাতু তাপের সুপরিবাহী।
[c] জিঙ্ক লবণের জলীয় দ্রবণ থেকে কপার জিঙ্ককে প্রতিস্থাপিত করতে পারে না:
* এখানে নিয়ম হলো বেশি সক্রিয় ধাতু কম সক্রিয় ধাতুকে অপসারিত করতে পারে, কিন্তু কম সক্রিয় ধাতু বেশি সক্রিয় ধাতুকে অপসারিত করতে পারে না।
* জিঙ্ক (Zn) কপার (Cu) থেকে রাসায়নিকভাবে বেশি সক্রিয় ধাতু।
* তাই, কপার (কম সক্রিয় ধাতু) জিঙ্ক সালফেটের দ্রবণ থেকে জিঙ্ককে (বেশি সক্রিয় ধাতু) অপসারিত বা প্রতিস্থাপিত করতে পারে না।
[d] সোডিয়াম ও পটাশিয়ামকে কেরোসিনে সংরক্ষণ করা হয়:
* সোডিয়াম ধাতু খুব সক্রিয়ভাবে বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করে। এটি খুব প্রবলভাবে অক্সিজেন (বায়ু) ও জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে।
* এই বিক্রিয়ায় প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়।
* বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন ও জলের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখার জন্য সোডিয়াম ও পটাশিয়ামকে কেরোসিনে ডুবিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।
7) তুমি কি লেবুর আচারের অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে সংরক্ষণ করতে পারবে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
না, লেবুর আচারের অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে সংরক্ষণ করা উচিত নয়।
ব্যাখ্যা:
* লেবুর আচার হলো আম্লিক (Acidic) বা অ্যাসিডযুক্ত কারণ এতে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে।
* অ্যালুমিনিয়াম একটি ধাতু।
* ধাতুগুলো অ্যাসিডের (অম্ল) সঙ্গে বিক্রিয়া করে এবং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে।
* লেবুর আচারে থাকা অ্যাসিড অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রের সঙ্গে বিক্রিয়া করে বিষাক্ত যৌগ উৎপন্ন করতে পারে, যা খাবারকে দূষিত করে।
8) স্তম্ভ A তে দেওয়া দ্রব্যগুলোর স্তম্ভ B তে দেওয়া ব্যবহারের সঙ্গে সঠিকভাবে মেলাও।
| A | B |
উত্তর:
| A | B |
| [i] সোনা (Gold) | [d] অলংকার |
| [ii] লোহা (Iron) | [e] যন্ত্রপাতি |
| [iii] অ্যালুমিনিয়াম (Aluminium) | [c] খাদ্য বস্তু আবরণের জন্য |
| [iv] কার্বন (Carbon) | [f] জ্বালানি |
| [v] তামা (Copper) | [b] বৈদ্যুতিক কেবলের তার |
| [vi] পারদ (Mercury) | [a] থার্মোমিটার |
9) কী হবে যখন:
[a] কপারের থালায় লঘু সালফিউরিক অ্যাসিড ঢালা হয়।
[b] কপার সালফেটের দ্রবণে লোহার পেরেক রাখা হয়।
(বিক্রিয়াগুলোর সমীকরণ লেখো)
উত্তর:
[a] কপারের থালায় লঘু সালফিউরিক অ্যাসিড ঢালা হয়:
* সাধারণ উষ্ণতায় বা তাপ না দিলে কোনো বিক্রিয়া হয় না। তামা (কপার) লঘু হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের (অম্ল) সঙ্গে তাপ দিয়েও বিক্রিয়া করে না, তবে লঘু সালফিউরিক অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। যদি উষ্ণতা প্রয়োগ করা হয়, তবে কপার সালফিউরিক অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে কপার সালফেট এবং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করবে।
* বিক্রিয়ার সমীকরণ (উত্তপ্ত করলে):
Cu + H_2SO_4 -> CuSO_4 + H_2
(কপার + সালফিউরিক অ্যাসিড \rightarrow কপার সালফেট + হাইড্রোজেন গ্যাস)
[b] কপার সালফেটের দ্রবণে লোহার পেরেক রাখা হয়:
* লোহার পেরেকটি লালচে বাদামী রঙ ধারণ করবে এবং কপার সালফেটের দ্রবণের নীল রঙ ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে সবুজ রঙ ধারণ করবে।
* লোহা (Fe) কপার (Cu) থেকে বেশি সক্রিয় ধাতু।
* তাই, লোহা কপার সালফেট (CuSO_4) এর জলীয় দ্রবণ থেকে কম সক্রিয় ধাতু কপারকে অপসারিত বা প্রতিস্থাপিত করবে এবং আয়রন সালফেট (FeSO_4) উৎপন্ন করবে।
* বিক্রিয়ার সমীকরণ:
CuSO_4 \text{ (নীল)} + Fe -> FeSO_4 \text{ (সবুজ)} + Cu{ (লাল)}
(কপার সালফেট + লোহা \rightarrow আয়রন সালফেট + কপার)
10) সালোনি এক টুকরো জ্বলন্ত কাঠকয়লা নিল এবং উৎপাদিত গ্যাস একটি টেস্ট টিউবে সংগ্রহ করল।
[a] সে কীভাবে গ্যাসের প্রকৃতি নিরূপণ করবে?
[b] এই প্রক্রিয়ার বিক্রিয়াগুলো সমীকরণ আকারে লেখো।
উত্তর:
[a] সে কীভাবে গ্যাসের প্রকৃতি নিরূপণ করবে:
* কাঠকয়লা (কার্বন) অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে প্রধানত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন করে, যা হলো একটি অধাতব অক্সাইড।
* এই গ্যাসটিকে টেস্ট টিউব থেকে সামান্য জলের মধ্যে দ্রবীভূত করতে হবে।
* কার্বন ডাই-অক্সাইড জলে দ্রবীভূত হয়ে কার্বনিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে, যা একটি আম্লিক দ্রবণ।
* এই দ্রবণটিকে নীল লিটমাস কাগজ দ্বারা পরীক্ষা করতে হবে। যদি দ্রবণটি আম্লিক হয়, তবে নীল লিটমাস কাগজ লাল রঙে পরিবর্তিত হবে।
[b] এই প্রক্রিয়ার বিক্রিয়াগুলো সমীকরণ আকারে লেখো:
* কাঠকয়লার দহন (কার্বন এবং অক্সিজেনের বিক্রিয়া):
C \text{ (কাঠকয়লা)} + O_2 \rightarrow CO_2 \text{ (কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস)}
* গ্যাসের জলের সঙ্গে বিক্রিয়া (অ্যাসিড তৈরি):
CO_2 \text{ (কার্বন ডাই-অক্সাইড)} + H_2O \text{ (জল)} \rightarrow H_2CO_3 \text{ (কার্বনিক অ্যাসিড)}
11) একদিন রিতা তার মাকে নিয়ে অলংকারের দোকানে গেল। তার মা স্বর্ণকারকে সোনার একটি পুরোনো অলংকার পরিষ্কার করার জন্য দিলেন। পরের দিন যখন তারা অলংকারটি ফিরিয়ে নিতে গেল তখন তারা দেখল যে অলংকারটির ওজন কিছুটা কমে গেছে। তুমি ওজন কমার কোনো কারণ বুঝতে পেরেছ কি?
উত্তর:
হ্যাঁ, রিতা অলংকারের ওজন কমার কারণ বুঝতে পেরেছে।
কারণ:
* সোনার অলংকার পরিষ্কার করার জন্য স্বর্ণকাররা সাধারণত একটি শক্তিশালী অ্যাসিড দ্রবণ (যেমন অ্যাকোয়া রেজিয়া) ব্যবহার করেন।
* এই অ্যাসিড দ্রবণ যখন পুরোনো অলংকারে ব্যবহার করা হয়, তখন অলংকারের উপরের স্তরের কিছু অংশ দ্রবীভূত হয়ে যায়।
* অলংকার পরিষ্কারের ফলে তার উপরের স্তরের ময়লা, মরিচা বা পুরোনো স্তর দূর হয় এবং অলংকারটি উজ্জ্বল দেখায়। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় সোনার একটি সূক্ষ্ম পরিমাণ অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে দ্রবণটিতে মিশে যায়।
* এর ফলে অলংকারটির মোট ওজন সামান্য কমে যায়।
