উদ্ভিদ ও প্রাণীর সংরক্ষণ,Chapter -7, Science, Class-8 ,SEBA
১. শূন্যস্থান পূরণ করো
(a) যে অঞ্চলে প্রাণী তার প্রাকৃতিক আবাসস্থলে সুরক্ষিত থাকে তাকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বলা হয়।
(b) যে প্রজাতিগুলি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে পাওয়া যায়, তাদের স্থানীয় প্রজাতি বলা হয়।
(c) জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে পরিযায়ী পাখিরা দূর-দূরান্তে উড়ে যায়।
২. পার্থক্য লেখো
বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য (Wildlife Sanctuary) — এটি এমন একটি সুরক্ষিত অঞ্চল যেখানে প্রাণী এবং তাদের আবাসস্থলকে কোনো ক্ষতি না করে সুরক্ষা দেওয়া হয়। সাধারণত জীবমণ্ডল সংরক্ষিত অঞ্চলের চেয়ে ছোট হয়।
জীবমণ্ডল সংরক্ষিত অঞ্চল (Biosphere Reserve) — এটি একটি বিশাল এলাকা, যেখানে জৈব-বৈচিত্র্য এবং সেই অঞ্চলের জনজাতির পরম্পরাগত জীবনশৈলী সংরক্ষণ করা হয়। এটি অনেক বড় এলাকা, যার মধ্যে অন্যান্য সংরক্ষিত অঞ্চল যেমন জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্য অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
(b) চিড়িয়াখানা (Zoo) এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য (Wildlife Sanctuary)
চিড়িয়াখানা (Zoo) — চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের কৃত্রিম পরিবেশে রাখা হয় এবং এটি জনসাধারণের প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রাণীরা মানুষের তত্ত্বাবধানে থাকে।
বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য (Wildlife Sanctuary) — অভয়ারণ্য হলো এমন সুরক্ষিত অঞ্চল যেখানে প্রাণীরা তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থলেই বাস করে। প্রাণীরা স্বাধীনভাবে বিচরণ করে
(c) বিপন্ন প্রজাতি (Endangered Species) এবং বিলুপ্ত প্রজাতি (Extinct Species)
বিপন্ন প্রজাতি (Endangered Species) — যে সকল প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা কমে আসছে এবং বিলুপ্তির মুখে রয়েছে, তাদের বিপন্ন প্রজাতি বলা হয়। উদাহরণ: কালো হরিণ, বাঘ, গণ্ডার ইত্যাদি।
বিলুপ্ত প্রজাতি (Extinct Species) — যে সকল প্রজাতি পৃথিবী থেকে পুরোপুরি হারিয়ে গেছে বা আর খুঁজে পাওয়া যায় না, তাদের বিলুপ্ত প্রজাতি বলা হয়। উদাহরণ: ডোডো পাখি, ক্যারিবিয়ান মঙ্ক সিল ইত্যাদি।
(d) উদ্ভিদকুল (Flora) এবং প্রাণীকুল (Fauna)
উদ্ভিদকুল (Flora) — কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে পাওয়া সমস্ত উদ্ভিদকে একত্রে সেই এলাকার উদ্ভিদকুল বলা হয়। উদাহরণ: শাল, সেগুন, আম, জাম, অর্জুন ইত্যাদি।
প্রাণীকুল (Fauna) — কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে পাওয়া সমস্ত প্রাণীকে একত্রে সেই এলাকার প্রাণীকুল বলা হয়। উদাহরণ: চিংকারা, নীলগাই, হরিণ, চিতাবাঘ ইত্যাদি।
৩. নির্বনানীকরণের (Deforestation) পরিণতি
নির্বনানীকরণের ফলে নিচের দেওয়াগুলোতে যে প্রভাব পড়ে তা আলোচনা করা হলো:
(a) বন্যপ্রাণী (Wild animals): নির্বনানীকরণের ফলে বন্যপ্রাণীদের প্রাকৃতিক বাসস্থান ধ্বংস হয়। তাদের খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাব দেখা দেয়, ফলে তাদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে এবং কিছু প্রজাতি বিলুপ্তও হতে পারে। (সার্চ রেজাল্ট)
(b) পরিবেশ (Environment):
* বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যায়, যা বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming) ঘটায়।
* বৃষ্টিপাত (Rainfall) এবং মাটির উর্বরতা (Fertility of soil) কমে যায়।
* বন্যা (Flood) ও খরার (Drought) মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
* ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নীচে নেমে যায় এবং প্রকৃতির ভারসাম্য বাধাগ্রস্ত হয়।
(c) গ্রাম (Rural areas): নির্বনানীকরণের ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায় এবং মাটির উপরিভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এতে ধীরে ধীরে উর্বর জমি মরুভূমিতে পরিণত হয়, যাকে মরুভবন (Desertification) বলে। এতে কৃষিকাজ ব্যাহত হয় এবং জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ে।
(d) শহর (Urban areas): নির্বনানীকরণের ফলে তাপমাত্রা এবং দূষণের মাত্রা বাড়ে। এর ফলে শহরের জীবনযাত্রার মানও খারাপ হয়। (সার্চ রেজাল্ট)
(e) পৃথিবী (Earth): নির্বনানীকরণ পৃথিবীর জলচক্রকে বাধাগ্রস্ত করে। মাটির জল ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায় এবং মাটির নিচে জলের অনুপ্রবেশের হারও কমে যায়, ফলে বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
(f) পরবর্তী প্রজন্ম (The next generation): নির্বনানীকরণের কারণে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের হ্রাস পরবর্তী প্রজন্মের জীবনকে অত্যন্ত কঠিন করে তুলবে।
৪. সংক্ষেপে উত্তর দাও
(a) আমাদের জৈব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা উচিত কেন?
জৈব বৈচিত্র্য (Biodiversity) হলো পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের জীব, তাদের মধ্যে সম্পর্ক এবং পরিবেশের সাথে তাদের সম্পর্ক। মানবজাতির উপকার এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য সমস্ত জীব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জৈব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা উচিত কারণ এটি সমগ্র পরিস্থিতি তন্ত্রকে (Ecosystem) রক্ষণাবেক্ষণ করে, যা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
(b) সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলিও বন্যপ্রাণীদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ নয় কেন?
সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলিও সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়, কারণ:
* সংরক্ষিত অঞ্চলগুলিতে আইন থাকা সত্ত্বেও চুরি করে শিকার করা বা প্রাণীহত্যা সম্পূর্ণ বন্ধ করা যায় না।
* প্রতিবেশী এলাকার জনজাতিরা অরণ্যের সম্পদগুলো নষ্ট করে এবং অবৈধ কার্যকলাপ যেমন— গরু-মহিষ চড়ানো, গাছ কাটা ইত্যাদি করে বন্যপ্রাণীদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটায়।
(c) কিছু উপজাতিরা জঙ্গলের উপর নির্ভর করে, কীভাবে?
জঙ্গলে বসবাসকারী উপজাতিরা তাদের খাদ্য, ওষুধ, পোশাক, আশ্রয় এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য সম্পূর্ণরূপে জঙ্গলের উপর নির্ভর করে। তারা বনজ দ্রব্য সংগ্রহ করে এবং ঐতিহ্যগতভাবে জীবনযাপন করে।
(d) নির্বনানীকরণের কারণ ও পরিণতি কী?
* কারণ: কৃষিকাজের জন্য জমি তৈরি করা, ঘর ও কারখানা তৈরি করা, আসবাব তৈরি বা জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করা। প্রাকৃতিক কারণের মধ্যে রয়েছে জঙ্গলে আগুন লাগা এবং খরা।
* পরিণতি: বিশ্ব উষ্ণায়ন, বন্যা, খরা, মরুভবন এবং জৈব বৈচিত্র্যের ক্ষতি।
(e) রেড ডেটা বুক (Red Data Book) কী?
লাল তথ্যাবলীর বই (Red Data Book) হল একটি বই, যেখানে বিপদগ্রস্ত (Endangered) সমস্ত প্রাণী ও উদ্ভিদের তথ্য নথিবদ্ধ করা আছে। এটি বিভিন্ন প্রজাতি (উদ্ভিদ, প্রাণী ও অন্যান্য) এর জন্য ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
(f) প্রব্রজন (Migration) বলতে কী বোঝ?
প্রব্রজন হলো সেই প্রক্রিয়া, যেখানে কোনো প্রজাতির প্রাণী বা পাখি জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বা ডিম পাড়ার মতো প্রজননের জন্য বছরের একটি বিশেষ সময়ে তাদের আসল বাসস্থান ছেড়ে বহু দূর-দূরান্তে উড়ে যায় বা চলে যায়।
৫. পুনর্বনায়ন (Reforestation) বলতে কী বোঝায়?
পুনর্বনায়ন হলো ধ্বংস হয়ে যাওয়া অরণ্যগুলিকে পুনরায় সৃষ্টি করার প্রক্রিয়া। এতে যে গাছগুলি কেটে ফেলা হয়েছিল সেই একই প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়। পুনর্বনায়ন দ্বারা গাছগুলিকে কাটা বা ধ্বংস হওয়ার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
