বনাঞ্ছলঃ আমাদের জীবন রেখা ,Chapter-17, Class-7, Science, SEBA

বনাঞ্ছলঃ আমাদের জীবন রেখা ,Chapter-17, Science,SEBA

বনাঞ্ছলঃ আমাদের জীবন রেখা ,Chapter-17, Science,SEBA

1) বনাঞ্চলে বসবাসকারী প্রাণীরা কীভাবে সেখানের উৎপাদন এবং পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে ব্যাখ্যা করে।
উত্তর: বনাঞ্চলে বসবাসকারী প্রাণীরা বিভিন্নভাবে সেখানের উৎপাদন এবং পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে:
* পুষ্টি চক্র (Nutrient Cycling): বিয়োজক (Decomposer), যার মধ্যে অনেক অনুজীব ও প্রাণী অন্তর্ভুক্ত, মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষকে হিউমাসে (Humus) পরিণত করে। এই হিউমাস মাটির পুষ্টিকর পদার্থ বাড়ায়, যা জীবিত উদ্ভিদ মূলের সাহায্যে শোষণ করে। এছাড়াও মৃত প্রাণীগুলি শকুনি, কাক, খেঁকশিয়াল এবং কীটপতঙ্গের খাদ্যে পরিণত হয়। এইভাবে পুষ্টিকর পদার্থগুলো চক্রাকারে ঘুরতে থাকে।
* বীজের বিস্তার (Seed Dispersal): প্রাণীরা বনাঞ্চলে কিছু কিছু উদ্ভিদের বীজ বিস্তার করতে সাহায্য করে।
* অঙ্কুরোদগমে সাহায্য: প্রাণীদের পচা গলা দেহ বা মল (Dropping) অংকুরিত গাছগুলোকে পুষ্টির যোগান দেয়।
* খাদ্য শৃঙ্খল: প্রাণীদের এই বৈচিত্র্য (খাদ্য শৃঙ্খলের মাধ্যমে) বনাঞ্চলকে পুনরুজ্জীবিত (Regeneration) করতে সাহায্য করে।

2) বন্যা প্রতিরোধে বনাঞ্চলের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বনাঞ্চল বন্যা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:
* বনাঞ্চল একটি প্রাকৃতিক শোষক (Natural absorber) হিসেবে কাজ করে এবং বৃষ্টির জলকে শোষণ করতে পারে।
* বনাঞ্চলের উপরের স্তরের চাঁদুয়া (Canopy) বা চন্দ্রতাপ বৃষ্টির ফোঁটাগুলোকে সরাসরি মাটিতে পড়তে দেয় না। জল গাছের ডাল ও কাণ্ড বেয়ে ধীরে ধীরে নীচে নেমে আসে।
* বৃক্ষ বা উদ্ভিদের অনুপস্থিতিতে মাটি জল ধরে রাখতে পারে না, ফলে বন্যা হয়। কিন্তু বনাঞ্চলের গাছের মূলগুলো মাটিকে শক্ত করে বেঁধে রাখে এবং জলস্তরকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
* যদি গাছপালা না থাকত, তবে বৃষ্টির জল সোজাসুজি মাটিতে পড়ত এবং বন্যার সৃষ্টি হত।

3) বিয়োজক কি? তাদের দুটোর নাম লিখো। বনাঞ্চলে তারা কী করে?
উত্তর:
* বিয়োজক (Decomposer): যে সমস্ত অনুজীব মৃত উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহাবশেষকে হিউমাস (Humus) নামক গাঢ় রঙের পদার্থে পরিণত করে, তাদের বিয়োজক বলে।
* দুটি নাম: ব্যাঙের ছাতা (Mushroom) এবং গোবরে পোকা (এছাড়াও অন্যান্য কীটপতঙ্গ, পিঁপড়ে ও অনুজীব)।
* বনাঞ্চলে কাজ: বিয়োজকগুলো বনাঞ্চলে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তারা মৃত উদ্ভিদ এবং প্রাণীর দেহাবশেষ খেয়ে সেগুলোকে হিউমাসে পরিণত করে। এই হিউমাস মাটিকে পুষ্টিকর পদার্থ সরবরাহ করে, যা জীবিত উদ্ভিদের মূল শোষণ করে। এইভাবে বিয়োজকরা বনাঞ্চলের উদ্ভিদগুলোকে পুষ্টিকারক দ্রব্য সরবরাহ করতে সাহায্য করে।

4) বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের সমতা রক্ষা করতে বনাঞ্চলের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বনাঞ্চল বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সমতা রক্ষায় প্রধান ভূমিকা পালন করে। উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। এই অক্সিজেন প্রাণীরা শ্বাসকার্যের জন্য গ্রহণ করে। এইভাবে, উদ্ভিদ (বনাঞ্চল) বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সমতা রক্ষা করতে সাহায্য করে। এই কারণেই বনাঞ্চলকে “সবুজ ফুসফুস” (Green lung) বলা হয়।

5) বনাঞ্চলে কোন কিছুর অপচয় হয় না কেন ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বনাঞ্চলে কোনো কিছুর অপচয় হয় না কারণ সেখানে পুষ্টিকর পদার্থগুলো চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। যখন কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণী মারা যায়, তখন সেই মৃত দেহাবশেষ বিয়োজক (Decomposer) এবং অন্যান্য প্রাণী যেমন শকুনি, কাক, খেঁকশিয়াল ও কীটপতঙ্গের খাদ্যে পরিণত হয়। বিয়োজকগুলো মৃতদেহকে হিউমাসে পরিণত করে, যা মাটির পুষ্টি বাড়ায় এবং সেই পুষ্টি আবার জীবিত উদ্ভিদ গ্রহণ করে। এইভাবেই বনাঞ্চলে কোনো জিনিস অপচয় হয় না।

6) বনাঞ্চল থেকে প্রাপ্ত পাঁচটি বস্তুর নাম লিখো।
উত্তর: বনাঞ্চল থেকে প্রাপ্ত পাঁচটি বস্তু হলো:
* প্লাইউড
* জ্বালানি কাঠ
* আঁঠা
* মধু
* ঔষধ জাতীয় উদ্ভিদ।
*
7. শূণ্য স্থান পূর্ণ করোঃ
(ক) কীট পতঙ্গ, প্রজাপতি, মৌমাছি পাখি সপুষ্পক উদ্ভিদকে পরাগসংযোগ করতে সাহায্য করে।
(খ) বনাঞ্চল জল এবং বায়ু কে বিশুদ্ধ করে।
(গ) ছোটো ছোটো ঝোপঝাড় বনাঞ্চলের সবচেয়ে নীচের স্তর সৃষ্টি করে।
(ঘ) পচাগলা পাতা এবং প্রাণী বনাঞ্চলে হিউমাস সমৃদ্ধি করে।

8. বহু দূরে অবস্থিত বনাঞ্চলে সংঘটিত হওয়া বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমরা কেন চিন্তা করি?
উত্তর: বহু দূরে অবস্থিত বনাঞ্চলে সংঘটিত হওয়া বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও আমরা চিন্তা করি কারণ বনাঞ্চল শুধুমাত্র স্থানীয় পরিবেশকেই নয়, বরং সমগ্র পৃথিবীকে প্রভাবিত করে।
* বনাঞ্চল সমগ্র বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সমতা রক্ষা করে। যদি বনাঞ্চল ধ্বংস হয়, তবে বায়ুতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে পৃথিবীর উষ্ণতাও বৃদ্ধি পাবে।
* বনাঞ্চল বিশ্বব্যাপী জলবায়ু এবং জলচক্রের উপর প্রভাব বিস্তার করে। বনাঞ্চল ধ্বংস হলে বৃষ্টিপাত কমে যেতে পারে এবং জলস্তর প্রভাবিত হতে পারে।
* বনাঞ্চল ধ্বংস হলে মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এই সকল প্রভাব বিশ্বব্যাপী, তাই দূরের বনাঞ্চলের সমস্যাও আমাদের চিন্তার কারণ।

9. বনাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ এবং প্রাণীর প্রয়োজন কেন আলোচনা করো।
উত্তর: বনাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ এবং প্রাণীর প্রয়োজন কারণ বনাঞ্চলের প্রতিটি উপাদান একটি অন্যটির উপর নির্ভরশীল।
* খাদ্য শৃঙ্খল: বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী খাদ্য শৃঙ্খল (Food chain) তৈরি করে। উদ্ভিদ খাদ্য প্রস্তুত করে, তৃণভোজী প্রাণীরা সেই উদ্ভিদ খায়, এবং মাংসাশী প্রাণীরা তৃণভোজীদের ভক্ষণ করে। যদি কোনো একটি উপাদান অনুপস্থিত থাকে, তবে তা অন্য খাদ্য শৃঙ্খলের উপর প্রভাব ফেলে।
* বাসস্থান ও সুরক্ষা: ঘন ঝোপ ও উঁচু ঘাসের মতো বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রাণীদের খাদ্য যোগায় এবং সুরক্ষা প্রদান করে।
* পুনরুজ্জীবন (Regeneration): প্রাণীদের বৈচিত্র্য বনাঞ্চলকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। প্রাণীরা উদ্ভিদের বীজের বিস্তারে সাহায্য করে, এবং বিয়োজকরা (অনুজীব ও প্রাণী) মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীকে পচিয়ে মাটির পুষ্টি (হিউমাস) ফিরিয়ে দেয়, যা নতুন উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

10. চিত্র 17.15-এ চিত্রকর ছবিতে চিহ্নিত করণ এবং দিক নির্দেশ করতে ভুলে গেছেন। দিক নির্দেশ করার জন্য তির চিহ্ন এবং নিম্নলিখিত বস্তু গুলোক ছবিতে চিহ্নিত করো মেঘ, বৃষ্টি, আবহাওয়া, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, অক্সিজেন, উদ্ভিদ, প্রাণী, মাটি, মূল, জলপৃষ্ঠ।
উত্তর: (এই উত্তরে ছবিটি বর্ণনা করা হলো, কারণ এখানে আঁকা সম্ভব নয়।)
* মেঘ: আকাশের উপরের সাদা অংশগুলি।
* বৃষ্টি: মেঘ থেকে নীচের দিকে পড়া ফোঁটাগুলি (তির চিহ্ন নীচের দিকে)।
* আবহাওয়া: ছবির সমগ্র পটভূমি (আকাশ, মেঘ, বৃষ্টি)।
* অক্সিজেন: ‘উদ্ভিদ’ (গাছ) থেকে ‘প্রাণী’ (হরিণ)-এর দিকে একটি তির চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করতে হবে।
* কার্বন-ডাই-অক্সাইড: ‘প্রাণী’ (হরিণ) থেকে ‘উদ্ভিদ’ (গাছ)-এর দিকে একটি তির চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করতে হবে।
* উদ্ভিদ: বড় গাছটি।
* প্রাণী: হরিণটি।
* মাটি: গাছ ও হরিণ যার উপর দাঁড়িয়ে আছে (ভূমির উপরিভাগ)।
* মূল: গাছের মাটির নীচের অংশগুলি।
* জলপৃষ্ঠ: মাটির নীচে দেখানো জলের স্তর।

11. নীচের কোনগুলো বনজ সম্পদ নয়?
(ক) আঁঠা (Gum)
(খ) প্লাইউড (Plywood)
(গ) সিলমোহরের মোম
(ঘ) কেরোসিন (Kerosene)
উত্তর: (ঘ) কেরোসিন (Kerosene)


12. নীচের কোন উক্তিটি সত্য নয়?
(ক) বনাঞ্চল মাটির ক্ষয় রোধ করে।
(খ) বনাঞ্চলে প্রাণী এবং উদ্ভিদ একে অন্যের উপর নির্ভরশীল নয়।
(গ) বনাঞ্চল জলবায়ু এবং জলচক্রের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
(ঘ) মাটি বনাঞ্চলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে এবং পুণরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে।
উত্তর: (খ) বনাঞ্চলে প্রাণী এবং উদ্ভিদ একে অন্যের উপর নির্ভরশীল নয়।

13. অনুজীব মৃত গাছ পালার উপর ক্রিয়া করে প্রস্তুত করা সামগ্রীটি হল-
(ক) বালি, (খ) ব্যাঙের ছাতা, (গ) হিউমাছ, (ঘ) কাঠ
উত্তর: (গ) হিউমাছ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *