বর্জিত জলের গল্প , Chapter-18, Class -7, Science,SEBA

বর্জিত জলের গল্প , Chapter-18, Science,SEBA

বর্জিত জলের গল্প , Chapter-18, Science,SEBA
1। শূণ্যস্থান পূর্ণ করো:
(ক) জল পরিশোধন প্রক্রিয়া হচ্ছে প্রদূষক পৃথকীকরণ।
(খ) বাড়ি থেকে বর্জিত জলকে আবর্জনা বলে।
(গ) শুকানো কাদা সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
(ঘ) নর্দমা তেল এবং চর্বি এর দ্বারা বন্ধ হয়ে যায়।


2। বর্জিত নোংরা জল কী? উপাচার না করা বর্জিত নোংরা জল নদীতে বা সাগরে ফেলা ক্ষতিকর কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
বর্জিত নোংরা জল (Sewage): বর্জিত জল বা আবর্জনা হলো নোংরা জল যা বাড়ি-ঘর, কল-কারখানা, হাসপাতাল, অফিস-আদালত বা অন্যান্য স্থান থেকে নির্গত হয়। এটি একটি জটিল মিশ্র পদার্থ যাতে কঠিন, জৈব এবং অজৈব পদার্থ, পুষ্টিকারক দ্রব্য, বিভিন্ন রোগের জীবাণু (ব্যাক্টেরিয়া) এবং অন্যান্য অনুজীব থাকে।
ক্ষতিকর প্রভাব: উপাচার না করা বর্জিত নোংরা জল নদীতে বা সাগরে ফেলা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
* এই বর্জিত পদার্থ জল ও মাটি উভয়কেই প্রদূষিত করে।
* এর ফলে মাটির উপরের জল (নদী, পুকুর) এবং ভূগর্ভস্থ জল—উভয়ই দূষিত হয়।
* এই দূষিত জল, জলবাহিত রোগের একটি প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে। এর থেকে কলেরা, টাইফয়েড, পোলিও, হেপাটাইটিস এবং আমাশয়ের মতো মারাত্মক রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে।

3। তেল এবং চর্বি জাতীয় পদার্থ নালাতে ফেলা উচিত নয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
তেল এবং চর্বি জাতীয় পদার্থ নালাতে ফেলা উচিত নয় কারণ:
* এই পদার্থগুলো নালার ভেতরের পাইপকে শক্ত করে জমতে পারে এবং নালা বন্ধ করে দিতে পারে।
* চর্বি মাটির ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দেয়, যার ফলে মাটির স্বাভাবিক জল পরিশোধন করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

4। বর্জিত জল থেকে পরিশোধিত জল পেতে হলে কী কী ধাপ অতিক্রম করতে হয় সেগুলো বর্ণনা করো।
উত্তর:
বর্জিত জল থেকে পরিশোধিত জল পাওয়ার প্রক্রিয়াটি (বর্জিত জলের উপাচার প্রকল্প) কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়:
* দণ্ড আবরণ (Bar Screen): প্রথমে বর্জিত জলকে একটি দণ্ড আবরণের মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়। এর ফলে জলের মধ্যে থাকা বড় আকারের পদার্থ যেমন ছেঁড়া কাপড়, কাঠি, প্লাস্টিকের প্যাকেট, কৌটা ইত্যাদি পৃথক করা হয়।
* পাথর ও বালু পৃথকীকরণ: এরপর জলকে এমন একটি জলাধারে পাঠানো হয় যেখানে জলের স্রোত কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলে জলের মধ্যে থাকা বালু, পাথর ইত্যাদি নীচে থিতিয়ে পড়ে।
* থিতানো (Settling): জলকে এরপর একটি বড় জলাধারে রাখা হয় যার ভেতরের দিকটা ঢালু থাকে। এখানে গাদের মতো কঠিন পদার্থ (যেমন মল) তলায় জমা হয়, যাকে ‘কাদা’ (Sludge) বলা হয়। একইসাথে, ভাসমান পদার্থ যেমন তেল ও গ্রিজ ইত্যাদি যন্ত্রের সাহায্যে পৃথক করা হয়। এই জলকে ‘পরিষ্কৃত জল’ (Clarified water) বলে।
* বায়ু সঞ্চালন (Aeration): পরিষ্কৃত জলে বাতাস চালনা করা হয় যাতে বায়বীয় ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই ব্যাক্টেরিয়াগুলো জলে অবশিষ্ট থাকা মানুষের মলমূত্র, খাদ্যের অবশেষ, সাবান ইত্যাদি পদার্থ ভক্ষণ করে জলকে আরও পরিষ্কার করে।
* বীজাণুমুক্তকরণ (Disinfection): সবশেষে, উপচার করা জলকে নদী বা সাগরে ছাড়ার আগে ক্লোরিন বা ওজোনের মতো রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে বীজাণুমুক্ত করা হয়।

5। কাদা কি? ইহাকে কীভাবে শোধন করা হয়?
উত্তর:
কাদা (Sludge): বর্জিত জলের উপাচার প্রকল্পে, জল থিতানোর সময় জলাধারের তলায় যে গাদ (যেমন মানুষের মল) জমা হয়, তাকে কাদা (Sludge) বলা হয়।
কাদার শোধন:
* এই কাদাকে একটি আলাদা জলাধারে পাঠানো হয়, যেখানে ‘অবায়বীয় ব্যাক্টেরিয়া’ (Anaerobic bacteria) এগুলোর বিয়োজন ঘটায়।
* এই প্রক্রিয়ায় ‘জৈব গ্যাস’ (Biogas) সৃষ্টি হয়, যা জ্বালানী বা বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যায়।
* কাদাতে থাকা অতিরিক্ত জল (প্রায় 97%) শুকনো বালুর আস্তরণ বা যন্ত্রের সাহায্যে বের করা হয়।
* শুকনো কাদা মাটির পুষ্টি হিসেবে বা সার (Manure) হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

6। উপাচার না হওয়া মানুষের মলমূত্র স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
উপাচার না হওয়া মানুষের মলমূত্র স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। যখন এই মলমূত্র খোলা জায়গায়, মাঠে বা সরাসরি জলে ফেলা হয়, তখন তা জল ও মাটি উভয়কেই মারাত্মকভাবে প্রদূষণ করে। এর ফলে মাটির উপরের জল (যেমন নদী, ঝর্ণা) এবং ভূগর্ভস্থ জল (যেমন কুয়ো, টিউবওয়েল) উভয়ই দূষিত হয়। এই দূষিত জল, জলবাহিত রোগের প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে এবং কলেরা, টাইফয়েড, পোলিও, হেপাটাইটিস ও আমাশয়ের মতো রোগের জীবাণু ছড়িয়ে দেয়।

7। দুটি রাসায়নিক পদার্থের নাম বলো যার দ্বারা জল জীবাণুমুক্ত করা হয়।
উত্তর:
জল জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহৃত দুটি রাসায়নিক পদার্থ হলো ক্লোরিন (Chlorine) এবং ওজোন (Ozone)।

8। বর্জিত জলের উপাচার ব্যবস্থায় বার স্ক্রিন বা দন্ড আবরণের কাজ কী?
উত্তর:
বর্জিত জলের উপাচার ব্যবস্থায় বার স্ক্রিন বা দণ্ড আবরণের কাজ হলো বর্জিত জলের প্রবাহ থেকে বড় আকারের পদার্থ যেমন ছেঁড়া কাপড়, কাঠি, কৌটা, প্লাস্টিকের প্যাকেট, রুমাল বা তোয়ালে ইত্যাদি পৃথক করা।

9। বিধিসম্মত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উৎকর্ষ সাধন ও অসুখের মধ্যে সম্পর্ক কী?
উত্তর:
বিধিসম্মত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা (Sanitation) এবং অসুখের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
* অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং দূষিত জল অনেক রোগের সৃষ্টির প্রধান কারণ।
* যখন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খারাপ থাকে, যেমন খোলা নর্দমা বা খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করা হয়, তখন তা জল ও মাটিকে দূষিত করে।
* এই দূষিত পরিবেশ জলবাহিত রোগের (যেমন কলেরা, টাইফয়েড) জীবাণুর বিস্তার ঘটায় এবং মশা, মাছি ও অন্যান্য রোগ সৃষ্টিকারী জীবের উৎপত্তি ঘটায়।
* অন্যদিকে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উৎকর্ষ সাধন বা উন্নতি ঘটালে পরিবেশ পরিষ্কার থাকে, জল দূষিত হয় না এবং এর ফলে অসুখ-বিসুখের হার অনেক কমে যায়।

10। বিধিসম্মত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উৎকর্ষ সাধনে সুনাগরিক হিসেবে তোমার দায়িত্ব বুঝিয়ে লিখো।
উত্তর:
বিধিসম্মত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উৎকর্ষ সাধনে একজন সুনাগরিক হিসেবে আমার দায়িত্বগুলি হলো:
* পৌরপ্রতিষ্ঠান বা গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে গিয়ে উন্মুক্ত নালাগুলো ঢেকে রাখার জন্য জোর দেওয়া।
* রান্নার তেল, চর্বি, রাসায়নিক পদার্থ, চাপাতা, খাদ্যের অবশেষ, তুলো বা খেলনার মতো আবর্জনা সরাসরি নর্দমায় না ফেলে নির্দিষ্ট জঞ্জাল ফেলার পাত্রে (Dustbin) ফেলা।
* যদি কোনো বাড়ির আবর্জনা পরিবেশকে নোংরা করে, তবে সেই বাড়ির লোকদের অন্যের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে যত্নবান হওয়ার জন্য অনুরোধ করা।
* জনবহুল জায়গায়, যেমন মেলা, বাস ডিপো বা রেল স্টেশনে, যত্রতত্র আবর্জনা বা জল না ফেলা। যদি নির্দিষ্ট পাত্র না থাকে, তবে আবর্জনা বাড়িতে নিয়ে এসে জঞ্জাল ফেলার পাত্রে ফেলা।
*
11। এখানে একটি শব্দজাল দেওয়া আছে l
উত্তর:
শব্দজালের সূত্র অনুযায়ী উত্তরগুলি হলো:
অনুভূমিকভাবে:
* 3। যে ব্যাক্টেরিয়া অক্সিজেনের উপস্থিতিতে নিজেদের জীবনক্রিয়া সম্পন্ন করে: বায়বীয়
* 4। বর্জিত জলে থাকা একটি পোষক দ্রব্য: নাইট্রেট (বা ফসফেট)
* 7। জলে অপকারী ও অবাঞ্চিত পদার্থ মিশ্রিত হওয়ার প্রক্রিয়া: দূষণ
উলম্বভাবে:
* 1। আধুনিক প্রযুক্তির দ্বারা মানুষের মল-মূত্র নিষ্পত্তি করার সময় উৎপাদিত ইন্ধন: জৈবগ্যাস
* 2। একটি জল জনিত রোগ: কলেরা (বা টাইফয়েড, আমাশয়)
* 5। উড়োজাহাজ ইত্যাদিতে ব্যবহার করা এক ধরণের আধুনিক শৌচাগার: রাসায়নিক (শৌচাগার)
* 6। জলকে বীজাণুমুক্ত করতে ব্যবহার করা একটি রাসায়নিক পদার্থ: ওজোন (বা ক্লোরিন)
12। ওজোন সম্বন্ধে নীচের বাক্যগুলো পড়ো-
(ক) জীবের শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য এটি প্রয়োজনীয়।
(খ) এটি জলের নির্বীজন করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
(গ) এটি অতি বেগুনি রশ্মি শোষণ করে।
(ঘ) বাতাসে এটির অনুপাত প্রায় 3%।
উপরের উক্তিগুলোর কোনগুলো শুদ্ধ
(i) (ক), (খ) ও (গ)
(ii) (খ) ও (গ)
(iii) (ক) ও (ঘ)
(iv) উপরের চারটিই
উত্তর: (ii) (খ) ও (গ)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *