‘আত্মকথা’ Chapter- 14, Class-9, SEBA
শব্দার্থ
এখানে পাঠ্যাংশে ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ শব্দের অর্থ দেওয়া হলো:
* বৈঠকখানা – মজলিস ঘর, বহির্বাটিতে বসবার ঘর।
* কল্পতরু – আকাঙ্ক্ষা তরু; সর্বকামনা পূরণকারী বৃক্ষ বিশেষ।
* জ্যেষ্ঠতাতপুত্র – জেঠা মশাইয়ের ছেলে।
* মুটে – মোট বা বোঝা বহনকারী, মজুর।
* আসবাব – উপকরণ, জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় জিনিস।
* ঘুচে না – মোছে না, শেষ হয় না।
* কৌচে – আরাম করে বসবার আসবাব।
* প্রহর – তিন ঘণ্টা সময়; কাল গণনার সাবেক একক।
* নির্জন – জনহীন, লোকমানব শূন্য।
* সমাধিস্তম্ভ – সমাধির স্মারক, মৃতব্যক্তির স্মৃতিরক্ষার্থে নির্মিত স্মারক।
* বিষয় – বিষয়-আশয়, টাকা-পয়সা-সা-সম্পত্তি।
* প্রলোভন – লোভ, আসক্তি, বাসনা।
* বাটী – বাড়ি, গৃহ, আবাস।
* সুপণ্ডিত – বিদ্বান, বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানী।
* তেজস্বী – তেজদীপ্ত, প্রখর, বুদ্ধিসম্পন্ন।
* সহি – দস্তখত, সই।
* প্রণিধান – ধ্যান, অভিনিবেশ।
* নিরাশ্রয় – আশ্রয়হীন।
* প্রতিপালন – লালন-পালন, দেখ-ভাল।
* অঙ্গীকার – প্রতিজ্ঞা, বাগ্দান।
* তদবধি – তখন থেকে, সেই সময় থেকে।
* মতি – নিষ্ঠা, মনের প্রস্তুতি, আগ্রহ।
* অনুরক্ত – প্রীত, আসক্ত।
* পরলোকগত – যিনি দেহত্যাগ করেছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন।
* নিপুণরূপে – সুকৌশলে, দক্ষভাবে।
* সংস্কার – মানসিক বিশ্বাস।
* ধর্মপিপাসা – ধর্মের প্রতি জিজ্ঞাসা, আগ্রহ, তৃষ্ণা।
* ভস্মসাৎ – ভস্মে পরিণত।
* ঘূর্ণাবর্ত – ঘূর্ণি, আবর্ত, ঝড়।
* বিষম – সাংঘাতিক।
* বিপাক – বিপদ।
প্রশ্নাবলি (প্রশ্ন ও উত্তর)
১. দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দিদিমার নাম কী ছিল? (সঠিক উত্তর নির্বাচন করো)
উত্তর: প্রদত্ত পাঠ্যাংশে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দিদিমার মৃত্যুর কথা উল্লেখ আছে, কিন্তু তাঁর নামের উল্লেখ নেই।
(দ্রষ্টব্য: পাঠ্যাংশের ‘লেখক পরিচয়’ অংশে তাঁর মায়ের নাম ‘দিগম্বরী দেবী’ বলে উল্লেখ আছে, যিনি বিকল্প ‘ঘ’-তে আছেন।)
২. ব্রজবাবু কে?
উত্তর: ব্রজবাবু ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠতাত-পুত্র, অর্থাৎ জেঠামশাইয়ের ছেলে।
৩. দেবেন্দ্রনাথের প্রথম গানটি কী ছিল লেখো।
উত্তর: দেবেন্দ্রনাথের প্রথম গানটি ছিল: “হবে, কি হবে দিবা-আলোকে, জ্ঞান বিনা সব অন্ধকার।”
৪. তোমার জ্ঞাত একটি চাণক্য শ্লোক উল্লেখ করো।
উত্তর: পাঠ্যপুস্তকের ‘টীকা’ অংশে উল্লিখিত একটি চাণক্য শ্লোক হলো: “উৎসবে ব্যসনে চৈব দুর্ভিক্ষে রাষ্ট্রবিপ্লবে। রাজদ্বারে শ্মশানে চ য তিষ্ঠতি স বান্ধবঃ।।”
৫. দেবেন্দ্রনাথের বাড়িতে যে সভাপণ্ডিত ছিলেন তাঁর নাম কী? (সঠিক উত্তর নির্বাচন করো)
উত্তর: ঘ. কমলাকান্ত চূড়ামণি
৬. কমলাকান্ত চূড়ামণির বাড়ি কোথায় ছিল?
উত্তর: কমলাকান্ত চূড়ামণির বাড়ি বা নিবাস ছিল বাঁশবেড়েতে।
৭. চূড়ামণির পুত্রের নাম ছিল- (সঠিক উত্তর নির্বাচন করো)
উত্তর: ক. শ্যামাচরণ
৮. ধৌম্য ঋষি কে? তাঁর সম্পর্কে যা জান লেখো।
উত্তর: পাঠ্যপুস্তকের ‘টীকা’ অনুসারে, ধৌম্য ঋষি ছিলেন মহর্ষি দেবলের কনিষ্ঠ ভ্রাতা। উৎকোচক তীর্থে তাঁর সঙ্গে পাণ্ডুপুত্র অর্জুনের দেখা হয়েছিল। অর্জুনের অনুরোধে, ধৌম্য ঋষি পাণ্ডবদের পৌরোহিত্য করতে রাজি হন। এমনও কথিত আছে যে, যুধিষ্ঠিরের ময়দানব নির্মিত সভায় যে সকল ঋষিরা উপস্থিত ছিলেন, ধৌম্য ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। এছাড়া, লঙ্কা যুদ্ধে জয়লাভের পর তিনি রামচন্দ্রকে আশীর্বাদ করার জন্য অযোধ্যাতেও গিয়েছিলেন।
৯. সঠিক উত্তর নির্বাচন করো।
১. দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতার নাম বলো।
উত্তর: গ. দ্বারকানাথ
২. শ্যামাচরণ দেবেন্দ্রনাথকে পড়তে বলেছিলেন-
উত্তর: খ. মহাভারত
৩. ‘তোমাদের ধর্মে মতি হউক’- এই কথাটি কোন গ্রন্থে আছে।
উত্তর: গ. মহাভারতে
১০. অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।
ক. ‘ভালোই তো আমি তোমাকে পড়াইব’- উক্তটি কার?
উত্তর: উক্তিটি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপণ্ডিত কমলাকান্ত চূড়ামণির।
খ. ‘আমার পিতার মৃত্যু হইয়াছে,’- উক্তিটি কার?
উত্তর: উক্তিটি কমলাকান্ত চূড়ামণির পুত্র শ্যামাচরণের।
গ. দেবেন্দ্রনাথ কীভাবে ঈশ্বরকে লাভ করতে চেয়েছেন?
উত্তর: দেবেন্দ্রনাথ অন্ধবিশ্বাসে নয়, বরং জ্ঞানের আলোকে ঈশ্বরকে লাভ করতে চেয়েছেন।
১১. সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।
ক. ঈশ্বর লাভের জন্য দেবেন্দ্রনাথ কী কী করলেন?
উত্তর: ঈশ্বর লাভের জন্য দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথমে ধর্ম বিষয়ে আগ্রহী হয়ে দর্শন, উপনিষদ ইত্যাদি গ্রন্থ পাঠ করেন। তিনি তাঁর সভাপণ্ডিত কমলাকান্ত চূড়ামণির পুত্র শ্যামাচরণের কাছে মহাভারত পড়তে আরম্ভ করেন। এর পাশাপাশি তিনি ইউরোপীয় দর্শনশাস্ত্রও বিস্তর পড়াশোনা করেন।
খ. কমলাকান্ত চূড়ামণির সঙ্গে দেবেন্দ্রনাথের সম্পর্ক কেমন ছিল?
উত্তর: কমলাকান্ত চূড়ামণির সঙ্গে দেবেন্দ্রনাথের সম্পর্ক অত্যন্ত স্নেহ ও শ্রদ্ধার ছিল। চূড়ামণি দেবেন্দ্রনাথকে খুব ভালোবাসতেন এবং দেবেন্দ্রনাথও তাঁকে ভক্তি করতেন ও তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পোষণ করতেন।
গ. ঈশ্বরের তত্ত্বকথার হদিস দেবেন্দ্রনাথ কার নির্দেশে কোথায় পেয়েছিলেন?
উত্তর: দেবেন্দ্রনাথ ঈশ্বরের তত্ত্বকথার হদিস শ্যামাচরণের (কমলাকান্ত চূড়ামণির পুত্র) নির্দেশে মহাভারতে পেয়েছিলেন।
১২. দশটি বাক্যে উত্তর দাও।
ক. ‘কিন্তু আমার মনের যে বিষাদ, সেই বিষাদ!’ উক্তিটি কার? তাঁর এমন বিষাদের কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: উক্তিটি লেখক দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের।
তাঁর এই বিষাদের কারণ হলো দিদিমার মৃত্যুর পর তাঁর মনে গভীর উদাসীনতা আসে। তিনি তাঁর বৈঠকখানার সমস্ত আসবাবপত্র বিলিয়ে দেন, কিন্তু তাতেও তাঁর মনের বিষাদ দূর হয়নি। তাঁর বিষাদের মূল কারণ ছিল এক গভীর আধ্যাত্মিক শূন্যতা। তিনি লিখেছেন যে, তাঁর “বিষয়ের প্রলোভন আর নাই, কিন্তু ঈশ্বরের ভাবও কিছুই পাইতেছি না”। এই “পার্থিব ও স্বর্গীয়, সকল প্রকার সুখেরই অভাব” তাঁর জীবনকে নীরস করে তুলেছিল এবং পৃথিবীকে তাঁর কাছে শ্মশানতুল্য মনে হচ্ছিল।
খ. কমলাকান্ত চূড়ামণির সঙ্গে দেবেন্দ্রনাথের সম্পর্কের বিবরণ দাও।
উত্তর: দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর বাড়ির সভাপণ্ডিত কমলাকান্ত চূড়ামণির সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর শ্রদ্ধা ও স্নেহের ছিল। চূড়ামণি ছিলেন সুপণ্ডিত ও তেজস্বী, এবং তিনি অল্পবয়সী দেবেন্দ্রনাথকে খুব ভালোবাসতেন। অন্যদিকে, দেবেন্দ্রনাথও তাঁকে অত্যন্ত ভক্তি করতেন। তাঁদের সম্পর্কের গভীরতা এতটাই ছিল যে, দেবেন্দ্রনাথ যখন সংস্কৃত শেখার ইচ্ছা প্রকাশ করে চূড়ামণির কাছে মুগ্ধবোধ ব্যাকরণ পড়তে চান, তিনি আনন্দের সঙ্গে রাজি হন। দেবেন্দ্রনাথের তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা এত অটুট ছিল যে, যখন চূড়ামণি তাঁকে একটি কাগজে সই করতে বলেন, যাতে লেখা ছিল যে দেবেন্দ্রনাথকে তাঁর পুত্র শ্যামাচরণের প্রতিপালনের দায়িত্ব নিতে হবে, তিনি কিছুমাত্র প্রণিধান না করেই তাতে সই করে দেন। [cite: 20-22] এই ঘটনাই তাঁদের গভীর পারস্পরিক বিশ্বাস ও স্নেহের পরিচয় দেয়।
গ. [cite_start]দেবেন্দ্রনাথ ঈশ্বর অন্বেষণে কী কী উপায় অবলম্বন করেছিলেন?
উত্তর: দিদিমার মৃত্যুর পর গভীর বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ঈশ্বরের অন্বেষণে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। প্রথমে তিনি নির্জনতা খুঁজতেন; তিনি বোটানিক্যাল উদ্যানে গিয়ে একটি সমাধিস্তম্ভে বসে থাকতেন এবং সেখানেই তাঁর প্রথম গান “হবে, কি হবে দিবা-আলোকে, জ্ঞান বিনা সব অন্ধকার” রচনা করেন।
এরপর তিনি জ্ঞানের মাধ্যমে ঈশ্বরকে লাভ করার চেষ্টা করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি সংস্কৃত ভাষা শেখা শুরু করেন এবং কমলাকান্ত চূড়ামণির কাছে মুগ্ধবোধ ব্যাকরণ পড়েন। পরে, চূড়ামণির পুত্র শ্যামাচরণের নির্দেশে তিনি “ঈশ্বরের তত্ত্বকথা” খোঁজার জন্য মহাভারত পাঠ শুরু করেন। এক দিকে যেমন তিনি মহাভারত, উপনিষদ ও অন্যান্য দর্শন গ্রন্থ পাঠে মগ্ন হন, অন্য দিকে তিনি “ইউরোপীয় দর্শনশাস্ত্র বিস্তর পড়িয়াছিলেন।” কিন্তু এত কিছু করেও তিনি শান্তি পাচ্ছিলেন না, কারণ তিনি অন্ধবিশ্বাসে নয়, “জ্ঞানের আলোকে” ঈশ্বরকে পেতে চাইছিলেন।
ঘ. উপমন্যুর কথা কোন গ্রন্থে আছে? উপমন্যুর কথা তোমার নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
উত্তর: উপমন্যুর কথা মহাভারতে আছে।
পাঠ্যপুস্তকের ‘টীকা’ অনুসারে, উপমন্যু ছিলেন মহর্ষি আয়ুধধৌম্যের অন্যতম শিষ্য। গুরুভক্তির পরীক্ষায় তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। একদিন তাঁর উপাধ্যায় বা গুরু তাঁকে গরুর পাল চরাতে পাঠান। গুরু ধীরে ধীরে তাঁর সমস্ত আহার রদ করলেন। প্রথমে তিনি ভিক্ষা করে খেতেন, কিন্তু গুরু তা জানতে পেরে বলেন যে ভিক্ষালব্ধ দ্রব্য গুরুকে না জানিয়ে খাওয়া উচিত নয়। এরপর উপমন্যু সমস্ত ভিক্ষান্ন এনে গুরুকে দিতেন, এবং গুরু তার সবটাই গ্রহণ করতেন, উপমন্যুকে কিছুই খেতে দিতেন না। এভাবে গুরুর আদেশে কঠিন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে গিয়ে উপমন্যু অবশেষে দিব্যজ্ঞান লাভ করেছিলেন।
১৩. রচনাধর্মী উত্তর লেখো।
ক. দেবেন্দ্রনাথের আধ্যাত্ম সাধনার কথা বর্ণনা করো।
উত্তর: মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আত্মকথা’ অংশে তাঁর আধ্যাত্ম-সাধনার এক গভীর চিত্র ফুটে উঠেছে। এই সাধনার শুরু হয় তাঁর দিদিমার মৃত্যুর পর থেকে। এই ঘটনায় তাঁর মনে যে গভীর বিষাদ ও শূন্যতা তৈরি হয়, তা তাঁকে জাগতিক সুখ বা “বিষয়ের প্রলোভন” থেকে সম্পূর্ণ বিমুখ করে তোলে। কিন্তু পার্থিব সুখে উদাসীন হলেও তিনি “ঈশ্বরের ভাবও কিছুই পাইতেছি না” বলে এক তীব্র মানসিক অশান্তিতে ভোগেন।
তাঁর আধ্যাত্ম-সাধনার প্রথম পর্যায় ছিল নির্জনবাস। তিনি প্রায়ই বোটানিক্যাল গার্ডেনের এক সমাধিস্তম্ভে গিয়ে একাকী বসে থাকতেন। সেখানেই তিনি তাঁর প্রথম গান “হবে, কি হবে দিবা-আলোকে, জ্ঞান বিনা সব অন্ধকার” রচনা করেন।
তাঁর সাধনার দ্বিতীয় পর্যায় ছিল জ্ঞানের মাধ্যমে ঈশ্বরকে খোঁজা। তিনি অন্ধবিশ্বাসের পরিবর্তে “জ্ঞানের আলোকে” ঈশ্বরকে লাভ করতে চেয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি সংস্কৃত শেখা শুরু করেন এবং শ্যামাচরণের পরামর্শে ‘মহাভারত’ পাঠ আরম্ভ করেন। মহাভারতের “ধর্মে মতি ভবতু বঃ” শ্লোকটি তাঁকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে। এর পাশাপাশি তিনি “ইউরোপীয় দর্শনশাস্ত্র বিস্তর পড়িয়াছিলেন।” কিন্তু এই পথও তাঁকে সম্পূর্ণ তৃপ্তি দিতে পারেনি। তিনি অনুভব করেন যে ইন্দ্রিয় দ্বারা লব্ধ জ্ঞান (যা ইউরোপীয় দর্শনশাস্ত্রের ভিত্তি) চূড়ান্ত নয়, যা একজন নাস্তিকের জন্য যথেষ্ট হলেও তাঁর আধ্যাত্মিক তৃষ্ণা মেটাতে পারছিল না। এই অতৃপ্তি ও ব্যাকুলতা তাঁর সাধনার তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল।
খ. অন্তরের বিষাদ ভাব দূর করার জন্য দেবেন্দ্রনাথ যে উপায় অবলম্বন করেছিলেন তা বর্ণনা করো।
উত্তর: দিদিমার মৃত্যুর পর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনে যে গভীর বিষাদ নেমে আসে, তা দূর করার জন্য তিনি বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেছিলেন, কিন্তু কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলেন না।
প্রথমে, তিনি জাগতিক আসক্তি থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি ‘কল্পতরু’ হয়ে তাঁর বৈঠকখানার সমস্ত মূল্যবান আসবাব, ছবি ও পোশাক তাঁর জ্যেষ্ঠতাত-পুত্র ব্রজবাবুকে দান করে দেন। কিন্তু এই ত্যাগের পরেও তাঁর “মনের যে বিষাদ, সেই বিষাদ!”, তা দূর হয়নি।
দ্বিতীয়ত, তিনি নির্জনতাকে আশ্রয় করেন। তিনি প্রায়ই একাকী বোটানিক্যাল উদ্যানে যেতেন এবং একটি সমাধিস্তম্ভে বসে থাকতেন। এই নির্জনতায় তাঁর মন এতটাই বিষণ্ণ ছিল যে, তিনি চারিদিক অন্ধকার দেখতেন এবং জীবনকে নীরস ও পৃথিবীকে শ্মশানতুল্য মনে করতেন।
তৃতীয়ত, তিনি জ্ঞানের মাধ্যমে শান্তি খোঁজার চেষ্টা করেন। তিনি সংস্কৃত ভাষা শেখা শুরু করেন এবং ঈশ্বরের তত্ত্বকথা জানার জন্য শ্যামাচরণের নির্দেশে ‘মহাভারত’ পাঠ করেন। একই সাথে তিনি “ইউরোপীয় দর্শনশাস্ত্র বিস্তর পড়িয়াছিলেন।”
কিন্তু এই সমস্ত উপায় অবলম্বন করেও তাঁর মনের বিষাদ বা অশান্তি দূর হয়নি। পার্থিব ও স্বর্গীয়—সকল প্রকার সুখের অভাব এবং জ্ঞানের আলোকেও ঈশ্বরকে খুঁজে না পাওয়ার ব্যাকুলতা তাঁর হৃদয়কে আরও বেশি ব্যথিত করে তুলেছিল।
গ. ধৌম্য ঋষির উপাখ্যান তথা উপমন্যুর গুরু ভক্তির কথা যা জান লেখো।
উত্তর: ‘আত্মকথা’ পাঠ্যাংশে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাভারত পড়ার প্রসঙ্গে ধৌম্য ঋষির উপাখ্যান এবং উপমন্যুর গুরুভক্তির কথা উল্লেখ করেছেন।
পাঠ্যপুস্তকের ‘টীকা’ অনুযায়ী, ধৌম্য ঋষি ছিলেন মহর্ষি দেবলের কনিষ্ঠ ভ্রাতা। তিনি পাণ্ডবদের পুরোহিত ছিলেন। কথিত আছে, উৎকোচক তীর্থে অর্জুনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাঁরই প্রার্থনায় তিনি পাণ্ডবদের পৌরোহিত্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যুধিষ্ঠিরের রাজসভায় উপস্থিত ঋষিদের মধ্যেও তিনি অন্যতম ছিলেন।
এই ধৌম্য ঋষিরই এক শিষ্য ছিলেন উপমন্যু, যিনি গুরুভক্তির এক অনন্য নিদর্শন স্থাপন করেছিলেন। উপমন্যুর গুরুভক্তির পরীক্ষা নেওয়ার জন্য, মহর্ষি আয়ুধধৌম্য তাঁকে গোচারণের দায়িত্ব দেন। গুরু একে একে তাঁর সমস্ত আহার বন্ধ করে দেন। উপমন্যু যখন ভিক্ষা করে নিজের আহার জোগাড় করতে শুরু করেন, গুরু তাঁকে নির্দেশ দেন যে ভিক্ষালব্ধ অন্ন গুরুকে না জানিয়ে গ্রহণ করা অনুচিত। এরপর থেকে উপমন্যু সমস্ত ভিক্ষান্ন গুরুকে এনে দিতেন, এবং গুরু সেই সমস্তটাই গ্রহণ করতেন, শিষ্যকে কিছুই দিতেন না। এই কঠোর পরীক্ষার মাধ্যমে গুরুর প্রতি সম্পূর্ণ সমর্পণ ও ভক্তি প্রদর্শন করে উপমন্যু অবশেষে দিব্যজ্ঞান লাভ করেন।
