আগামী’ , Chapter- 13, Class-9, SEBA
‘আগামী’ , Chapter- 13, Class-9, SEBA
১. শুদ্ধ উত্তরটি লেখো
(ক) ‘আগামী’ কবিতাটির কবি কে?
(১) নজরুল, (২) শঙ্খ ঘোষ, (৩) সুকান্ত ভট্টাচার্য, (৪) মধুসূদন দত্ত
উত্তর: (৩) সুকান্ত ভট্টাচার্য
(খ) কবি সুকান্তের জন্ম সাল কত?
(১) ১৯২৫, (২) ১৯২৬, (৩) ১৯১৯, (৪) ১৯৪৭ সাল
উত্তর: (২) ১৯২৬
(গ) কবি সুকান্ত কত সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দিয়েছিলেন?
(ক) ১৯৩০ সালে (খ) ১৯৪৫ সালে (গ) ১৯৪৭ সালে (ঘ) ১৯৫০ সালে।
উত্তর: (খ) ১৯৪৫ সালে
(ঘ) কবি কত মাসের জন্য তাঁর কাঙ্ক্ষিত ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তি দেখে যেতে পারেননি?
(ক) ৪ মাস (খ) ৫ মাস (গ) ২ মাস (ঘ) ৩ মাস।
উত্তর: (ঘ) ৩ মাস
(ঙ) কবি সুকান্তের মায়ের নাম কী ছিল?
(ক) সুনীতি দেবী (খ) মায়াদেবী (গ) ছায়াদেবী (ঘ) করুণা দেবী
উত্তর: (ক) সুনীতি দেবী
২. শূন্যস্থানে উপযুক্ত শব্দ বসাও
(ক) ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই- জানি আমি ভাবী বনস্পতি।
(খ) জড় নই, মৃত নই, নই অন্ধকারের খনিজ,
(গ) সংহত কঠিন ঝড়ে দৃঢ়প্রাণ প্রত্যেক শিকড়।
(ঘ) মেলেছি সন্দিগ্ধ চোখ, স্বপ্ন ঘিরে রয়েছে আমাকে,
(ঙ) বৃষ্টির, মাটির রসে পাই আমি তারি তো সম্মতি।
৩. অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন
(ক) আগামী কবিতাটির রচয়িতা কে?
উত্তর: ‘আগামী’ কবিতাটির রচয়িতা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য।
(খ) কত সালে কবি সুকান্ত মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: ১৯৪৭ সালের ১৩ মে কবি সুকান্ত মৃত্যুবরণ করেন।
(গ) কবি সুকান্তের পিতা ও মাতার নাম কী ছিল?
উত্তর: কবি সুকান্তের পিতার নাম ছিল নিবারণ চন্দ্র ভট্টাচার্য এবং মাতার নাম ছিল সুনীতি দেবী।
(ঘ) কবি সুকান্ত কোন রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন?
উত্তর: প্রদত্ত পাঠ্য অংশে কবি সুকান্তের নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক মতবাদের কথা সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। তবে তাঁকে ‘বিপ্লব ও বিদ্রোহের কবি’ বলা হয়েছে এবং তাঁর কবিতায় শোষণমুক্ত সমাজ ও দরিদ্র-নিপীড়িত খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি সহানুভূতির মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে।
(ঙ) কবির শৈশবকাল কোথায় কেটেছিল?
উত্তর: কবির শৈশবকাল প্রথমে বাগবাজারের নিবেদিতা লেনে মামার বাড়িতে এবং পরে বেলেঘাটায় হরমোহন ঘোষ লেনে নিজেদের বাড়িতে কেটেছিল।
(চ) কবি কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান?
উত্তর: কবি ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
(ছ) কবি সুকান্ত কার কাছে কুসংস্কার-বিরোধী মনোভাব পেয়েছিলেন?
উত্তর: কবি সুকান্ত তাঁর দাদা মহাশয়ের নিকট কুসংস্কার-বিরোধী মনোভাব পেয়েছিলেন।
(জ) কবি সুকান্ত দিদিমার নিকট থেকে কী শক্তি আহরণ করেছিলেন?
উত্তর: কবি সুকান্ত দিদিমার নিকট থেকে গরিব-দুঃখীর প্রতি মমত্ববোধ-শক্তি আহরণ করেছিলেন।
(ঝ) অঙ্কুরিত বীজ কীসের প্রতীক?
উত্তর: ‘আগামী’ কবিতায় অঙ্কুরিত বীজটি একটি ছোট্ট বালকের বা ভাবী সু-নাগরিকের প্রতীক, যার মধ্যে বড় হয়ে ওঠার মহৎ আকাঙ্ক্ষা ও অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে।
(ঞ) অনেকের কাছে কবি সুকান্ত কী কবি বলে অভিহিত?
উত্তর: অনেকের কাছে কবি সুকান্ত ‘কিশোর কবি’ এবং ‘বিপ্লব ও বিদ্রোহের কবি’ বলে অভিহিত।
৪. সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন
(ক) কবিতাটিতে কবি কীসের সম্ভাবনার কথা বলেছেন?
উত্তর: ‘আগামী’ কবিতাটিতে কবি একটি অঙ্কুরিত বীজের রূপকে এক ছোট্ট বালকের বা ভাবী প্রজন্মের বড় হয়ে ওঠার বিরাট সম্ভাবনার কথা বলেছেন। বীজটি যেমন জল, হাওয়া, মাটি ও আলোর স্পর্শে মাটির বাধা বিদীর্ণ করে ভবিষ্যতে এক বিশাল বনস্পতি বা মহীরুহে পরিণত হয়, ঠিক তেমনি এই ছোট্ট বালকটিও ভবিষ্যতে এক সু-নাগরিকে পরিণত হবে, যার মধ্যে অরণ্যের বিশাল চেতনা রয়েছে।
(খ) কবিতায় অঙ্কুরিত বীজটির অন্তরে কীসের স্বপ্ন ফুটে উঠেছে?
উত্তর: কবিতায় অঙ্কুরিত বীজটির অন্তরে ভবিষ্যতে এক বিশাল বনস্পতি বা মহীরুহে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন ফুটে উঠেছে। সে তুচ্ছ বটবৃক্ষের সমাজে নগণ্য হয়ে থাকতে চায় না। সে স্বপ্ন দেখে, আকাশের ডাকে সাড়া দিয়ে সে একদিন দৃপ্ত শাখা মেলে দেবে, প্রতিবেশী গাছেদের মুখে বিস্মিত ফুল ফোটাবে এবং আগামী বসন্তে বৃহতের দলে মিশে যাবে।
(গ) অঙ্কুরিত বীজটি বড় হয়ে কী করবে বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ?
উত্তর: অঙ্কুরিত বীজটি বড় হয়ে ‘ভাবী বনস্পতিতে’ পরিণত হয়ে মানুষকে সর্বতোভাবে সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে সমাজের উচ্চ-নীচ নির্বিশেষে সকলকে ‘আপনার জন’ হিসেবে গ্রহণ করবে। সে পথিককে ছায়া দেবে, ফল, ফুল ও পাখির কূজন উপহার দেবে। এমনকি যদি কেউ তাকে কঠিন কুঠার দিয়ে আঘাতও করে, তবুও সে শত্রুকেও বারে বারে হাতছানি দিয়ে ডাকবে।
(ঘ) ‘ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই’- কথাটির অর্থ বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: ‘ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই’—এই উক্তিটির মাধ্যমে অঙ্কুরিত বীজটি বা তার প্রতীক ছোট্ট বালকটি বোঝাতে চেয়েছে যে, বর্তমানে সে আকারে বা বয়সে নগণ্য ও ক্ষুদ্র হলেও সে তুচ্ছ বা মূল্যহীন নয়। কারণ তার ক্ষুদ্র শরীরের মধ্যেই ভবিষ্যতের বিরাট সম্ভাবনা এবং অরণ্যের বিশাল চেতনা লুকিয়ে আছে। সে নিজেকে ‘ভাবী বনস্পতি’ বা ‘ভাবী সু-নাগরিক’ হিসেবে জানে, যে আগামী দিনে বৃহতের দলে মিশে গিয়ে সমাজের কল্যাণ করবে।
(ঙ) কবিতাটির মর্মার্থ সংক্ষেপে ব্যক্ত করো।
উত্তর: ‘আগামী’ কবিতাটিতে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য একটি অঙ্কুরিত বীজের রূপকে ভাবী প্রজন্মের বা এক ছোট্ট বালকের অপার সম্ভাবনার জয়গান গেয়েছেন। বীজটি বর্তমানে ক্ষুদ্র ও নগণ্য হলেও সে জড় বা মৃত নয়, তার মধ্যে ভবিষ্যতের ‘ভাবী বনস্পতি’ বা মহীরুহ হওয়ার স্বপ্ন ও ‘অরণ্যের বিশাল চেতনা’ রয়েছে। সে সমস্ত প্রতিকূলতা ও ঝড়কে প্রতিহত করে একদিন বৃহতের দলে মিশে যাবে। এই ভাবী সু-নাগরিক ভবিষ্যতে সমাজের ক্লিষ্ট, তাপিত ও খেটে খাওয়া মানুষদের শোষণমুক্ত করতে চায়। সে সমাজের সকলকে ‘আপনার জন’ হিসেবে গ্রহণ করে ছায়া, ফল ও ফুল দিয়ে সাহায্য করতে এবং একতাবদ্ধ সমাজ গড়তে চায়।
৫. রচনাধর্মী উত্তর লেখো
(ক) আগামী কবিতায় কবির বক্তব্য বিষয় আলোচনা করো।
উত্তর: ‘আগামী’ কবিতাটি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। এই কবিতায় কবি একটি অঙ্কুরিত বীজের প্রতীকে ভাবী প্রজন্মের অপার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন।
১. আত্মবিশ্বাস ও সম্ভাবনা: কবিতাটির কেন্দ্রীয় চরিত্র এক অঙ্কুরিত বীজ। সে নিজেকে জড়, মৃত বা অন্ধকারের খনিজ মনে করে না। সে এক জীবন্ত প্রাণ, যার মধ্যে ভবিষ্যতের ‘ভাবী বনস্পতি’ হওয়ার স্বপ্ন ও সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে।
২. প্রতিকূলতা জয়: সে জানে, বড় হওয়ার পথ সহজ নয়। তাই সে শিকড়কে দৃঢ় করে ‘সংহত কঠিন ঝড়ে’র মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। সে মাটি বিদীর্ণ করে আলোর জগতে এসেছে।
৩. সামাজিক চেতনা: কবির মূল বক্তব্য ফুটে উঠেছে এই বীজের সামাজিক দায়বদ্ধতার অঙ্গীকারে। এই বীজ শুধু নিজে বড় হতে চায় না, সে ‘অঙ্কুরিত বন্ধু’দেরও আহ্বান জানায় ‘নব অরণ্যের গানে’ মুখরিত হতে। এটি কবির সামাজিক একতাবোধ ও সংহতির প্রকাশ।
৪. কল্যাণকামী মনোভাব: বড় হয়ে বনস্পতিতে পরিণত হলে সে সমাজের সকলকে, এমনকি যে তাকে কুঠার দিয়ে আঘাত করবে তাকেও, ছায়া, ফল, ফুল ও পাখির কূজন দান করবে। কবির মতে, এই ভাবী প্রজন্মই সমাজের কুসংস্কার, শোষণ দূর করে উচ্চ-নীচ ভেদাভেদ ভুলে সকলকে ‘আপনার জন’ হিসেবে গ্রহণ করবে।
এভাবেই কবি এই কবিতায় শোষণমুক্ত সমাজ এবং জাতীয় সংহতির এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চিত্র এঁকেছেন।
(খ) কবিতাটির সারাংশ লেখো।
উত্তর: ‘আগামী’ কবিতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য একটি অঙ্কুরিত বীজের আত্মকথনের মধ্য দিয়ে ভাবী প্রজন্মের সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছেন। বীজটি নিজেকে জড় বা মৃত মনে করে না, সে নিজেকে জীবন্ত ও সম্ভাবনাময় মনে করে। যদিও সে বটবৃক্ষের সমাজে নগণ্য, তবুও তার ক্ষুদ্র শরীরে ভবিষ্যতের মহীরুহ হওয়ার স্বপ্ন ও অরণ্যের বিশাল চেতনা রয়েছে। সে মাটি বিদীর্ণ করে আলোর সন্ধান পেয়েছে। সে আত্মবিশ্বাসী যে একদিন সে ক্ষুদ্র পাতা ও দৃপ্ত শাখায় সজ্জিত হয়ে ফুল ফোটাবে। সে তার শিকড়কে সংহত ও দৃঢ় করে কঠিন ঝড়কে প্রতিহত করতে প্রস্তুত। সে তার বন্ধুদেরও নব অরণ্যের গানে আহ্বান জানায়। সে জানে, আগামী বসন্তে সে বৃহতের দলে মিশে যাবে এবং কিশলয়রা তাকে সম্বর্ধনা জানাবে। বৃষ্টি ও মাটির রসে সে ভাবী বনস্পতি হওয়ার সম্মতি পেয়েছে। ভবিষ্যতে সে যখন বিশাল বনস্পতিতে পরিণত হবে, তখন সে তাকে আঘাতকারীকেও ছায়া, ফল, ফুল ও পাখির কূজন দিয়ে আপন করে নেবে।
(গ) কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তর: ‘আগামী’ শব্দের অর্থ হলো ভাবী বা পরবর্তী । কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ‘আগামী’ কবিতায় এই ‘আগামী’ বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অপার সম্ভাবনার কথাই ব্যক্ত করেছেন।
কবিতাটির কেন্দ্রীয় চরিত্র একটি ‘অঙ্কুরিত বীজ’, যা বর্তমানের ক্ষুদ্র সত্তা হলেও ভবিষ্যতের ‘ভাবী বনস্পতি’ বা ‘ভাবী সু-নাগরিক’। সে বর্তমানের নগণ্য অবস্থাকে স্বীকার করেও ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে।
কবিতার প্রতিটি ছত্রে ভবিষ্যতের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে:
১. বীজটি ‘আজ শুধু অঙ্কুরিত’ হলেও ‘কাল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাতা’ মেলবে এবং ‘তারপর দৃপ্ত শাখা’ বিস্তার করবে।
২. সে ‘আগামী বসন্তে’ বৃহতের দলে মিশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে।
৩. সে নিজেকে ‘ভাবী বনস্পতি’ হিসেবে ঘোষণা করে।
৪. এই বীজটিই হলো ‘আগামী’ দিনের প্রতীক, যে ভবিষ্যতে সমাজের শোষণ, কুসংস্কার দূর করে এক সুস্থ সমাজ গড়ে তুলবে।
কবিতার মূল সুরটিই হলো বর্তমানের ক্ষুদ্রতাকে অতিক্রম করে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া। তাই ‘আগামী’ নামটি কবিতাটির বিষয়বস্তু ও মূল ভাবকে সার্থকভাবে ধারণ করেছে।
(ঘ) ‘ফল দেব, ফুল দেব, দেব আমি পাখিরও কূজন, / একই মাটিতে পুষ্ট তোমাদের আপনার জন।’-উদ্ধৃত কবিতাংশের কবির বক্তব্য আলোচনা করো।
উত্তর: উদ্ধৃত অংশটি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আগামী’ কবিতার শেষ দুই পঙক্তি। এই অংশে কবির গভীর সামাজিক একতাবোধ এবং কল্যাণকামী মনোভাব ফুটে উঠেছে।
‘ভাবী বনস্পতি’ বা ভাবী সু-নাগরিক যখন বড় হয়ে উঠবে, তখন সে সমাজের সকলকে, নির্বিশেষে, উপকার করবে। সে মানুষকে ফল, ফুল ও পাখির কূজনের মতো প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ দানগুলি উপহার দেবে। তার এই দান নিঃশর্ত। এমনকি পূর্ববর্তী পঙক্তিতে বলা হয়েছে, যে তাকে ‘কঠিন কুঠারে’ আঘাত করবে, তাকেও সে ছায়া দেবে এবং বারে বারে হাতছানি দিয়ে ডাকবে।
দ্বিতীয় পঙক্তিতে এর কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কবি বলেছেন, আঘাতকারী এবং এই বনস্পতি (বীজ) উভয়েই ‘একই মাটিতে পুষ্ট’। অর্থাৎ, সমাজের শোষক ও শোষিত, উচ্চ ও নীচ, সকলেই একই সমাজের অংশ, একই দেশের সন্তান। তাই তারা পরস্পরের ‘আপনার জন’। এই গভীর মমত্ববোধ ও একতার কারণেই ভাবী প্রজন্ম অতীতের সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কল্যাণ করতে চায়।
৬. তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো
(ক) তবু ক্ষুদ্র এ শরীরে গোপনে মর্মরধ্বনি বাজে
উত্তর: উক্তিটি ‘আগামী’ কবিতার অঙ্কুরিত বীজের আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ। বীজটি বর্তমানে বটবৃক্ষের সমাজে নগণ্য এবং তার শরীর ‘ক্ষুদ্র’। কিন্তু বাইরে থেকে ক্ষুদ্র দেখালেও তার অন্তরে, ‘গোপনে’, অরণ্যের বিশাল চেতনা ও বড় হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা ধ্বনিত হচ্ছে। ‘মর্মরধ্বনি’ এখানে কেবল পাতার শব্দ নয়, এটি বীজের ভেতরের জীবন্ত প্রাণের স্পন্দন এবং ভাবী বনস্পতি হওয়ার বিরাট সম্ভাবনার ইঙ্গিত।
(খ) বৃষ্টির, মাটির রসে পাই আমি তারি তো সম্মতি।
উত্তর: ‘আগামী’ কবিতায় অঙ্কুরিত বীজটি নিজেকে ‘ভাবী বনস্পতি’ বলে ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণায় তার যে আত্মবিশ্বাস, তা ভিত্তিহীন নয়। সে তার এই বড় হয়ে ওঠার সম্মতি বা অনুমোদন পেয়েছে প্রকৃতির কাছ থেকে। ‘বৃষ্টির’ জল এবং ‘মাটির রস’ হলো প্রাণের উৎস, যা বীজকে অঙ্কুরিত করে এবং মহীরুহে পরিণত হতে সাহায্য করে। প্রকৃতির এই উপাদানগুলি গ্রহণ করেই সে বেঁচে আছে এবং বেড়ে উঠছে। তাই প্রকৃতিই তাকে সম্মতি দিয়েছে যে সে একদিন ক্ষুদ্রতা পেরিয়ে বিশাল বনস্পতিতে পরিণত হবে।
(গ) শিকড়ে আমার তাই অরণ্যের বিশাল চেতনা।
উত্তর: অঙ্কুরিত বীজটি মাটি বিদীর্ণ করে পৃথিবীর আলো দেখেছে। তার শিকড় মাটির গভীরে প্রবেশ করেছে। এই শিকড়ের মাধ্যমেই সে মাটিরস এবং পূর্ববর্তী অরণ্যের ঐতিহ্যকে ধারণ করে। তাই সে শুধু একটি একক বীজ নয়, সে সমগ্র ‘অরণ্যের বিশাল চেতনা’র উত্তরাধিকারী। তার এই চেতনাই তাকে ক্ষুদ্রতা থেকে বৃহতের দলে যোগ দেওয়ার অনুপ্রেরণা জোগায়। এই চেতনা হলো একতাবদ্ধ হওয়া এবং ভবিষ্যতে এক নতুন ‘নব অরণ্যের গানে’ সকলকে মুখরিত করার চেতনা।
৭. টীকা লেখো
সুকান্ত ভট্টাচার্য:
‘আগামী’ কবিতার কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা সাহিত্যের এক অন্যতম প্রতিবাদী কবি। তাঁকে ‘কিশোর কবি’ এবং ‘বিপ্লব ও বিদ্রোহের কবি’ বলা হয়। তাঁর জন্ম ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট। তাঁর বাবার নাম নিবারণ চন্দ্র ভট্টাচার্য এবং মা সুনীতি দেবী। কবির পূর্বপুরুষের আদি নিবাস বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার কোটালিপাড়া গ্রামে। তিনি দাদা মহাশয়ের কাছে কুসংস্কার-বিরোধী মনোভাব এবং দিদিমার কাছে গরিব-দুঃখীর প্রতি মমত্ববোধ লাভ করেন। তাঁর কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো দরিদ্র-নিপীড়িত ও খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি সহানুভূতি এবং শোষণমুক্ত সমাজের আকাঙ্ক্ষা। অসুস্থতার কারণে তিনি ১৯৪৫ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে পারেননি। ‘ছাড়পত্র’, ‘ঘুম নেই’ ও ‘মিঠে কড়া’ তাঁর প্রধান কাব্যগ্রন্থ। মাত্র ২১ বছর বয়সে, ১৯৪৭ সালের ১৩ মে, ক্ষয়রোগে এই প্রতিভাবান কবির মৃত্যু হয়।
বনস্পতি:
‘বনস্পতি’ শব্দের অর্থ হলো বিশাল গাছ । সাধারণত যে সকল উদ্ভিদের ফুল হয় না, কিন্তু ফল হয় (যেমন বট, অশ্বত্থ), তাদের বনস্পতি বলা হয়।
তবে ‘আগামী’ কবিতায় ‘বনস্পতি’ শব্দটি কেবল একটি বিশাল গাছকে বোঝায়নি, এটি একটি প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কবিতায় ‘অঙ্কুরিত বীজ’ নিজেকে ‘ভাবী বনস্পতি’ বলেছে। এখানে ‘বনস্পতি’ হলো ভবিষ্যতের সেই বিশাল সত্তা বা ভাবী সু-নাগরিক, যে ক্ষুদ্র অবস্থা থেকে বেড়ে উঠে মহীরুহে পরিণত হবে। এই বনস্পতি সমাজের সকলকে ছায়া দেবে, ফল-ফুল দেবে এবং সমস্ত ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে সমাজকে রক্ষা করার প্রতীক হয়ে উঠবে। এটি বৃহতের দলে যোগ দেওয়ার এবং সমাজের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণের প্রতীক।
৮. ভাষা ব্যাকরণ
(ক) সন্ধি বিশ্লেষণ করো।
* চলন্ত: চল্ + অন্ত
* ঘুমন্ত: ঘুম্ + অন্ত
* শয়ন: শে + অন
* নীরেন্দ্র: নীর + ইন্দ্র
* সমরেন্দ্র: সমর + ইন্দ্র
* কটুক্তি: কটু + উক্তি
* গণেশ: গণ + ঈশ
(খ) পদ পরিবর্তন করো।
* গোপন: গোপনীয়তা (বিশেষ্য)
* বিশাল: বিশালতা (বিশেষ্য)
* মুখরিত: মুখর (বিশেষণ), মুখরতা (বিশেষ্য)
* পুষ্ট: পুষ্টি (বিশেষ্য)
* সম্বর্ধনা: সম্বর্ধিত (বিশেষণ)
* রস: রসাল, রসিক (বিশেষণ)
* খনিজ: খনি (বিশেষ্য)
* আকাশ: আকাশী (বিশেষণ)
(গ) বিপরীত শব্দ লেখো।
* বিশাল: ক্ষুদ্র
* সম্মতি: অসম্মতি
* বিনাশ: সৃষ্টি
* বন্ধু: শত্রু
* চেতন: অচেতন, জড়
* গোপন: প্রকাশ্য
