আমরা” , Chapter- 12, Class-9, SEBA
“আমরা” , Chapter- 12, Class-9, SEBA
অনুশীলনী
১. (ক) সঠিক উত্তর নির্বাচন করো।
(১) ‘আমরা’ কবিতার কবি কে?
উত্তর: (১) সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
(২) কবির মতে বাঙালি কোথায় বাস করে?
উত্তর: (২) বঙ্গ
(৩) দশানন জয়ী বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: (৩) রাম
(৪) বাংলার কবি কাকে বলা হয়েছে?
উত্তর: (৪) জয়দেব
(৫) ‘ছন্দের জাদুকর’ আখ্যায় কোন কবি ভূষিত হয়েছেন?
উত্তর: (২) সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
(খ) ভুল শব্দ সরিয়ে শুদ্ধ করে বাক্যটি লেখো।
(১) মুক্তবেণীর নর্মদা যেথায় মুক্তি বিতরে রঙ্গে।
শুদ্ধ বাক্য: মুক্তবেণীর গঙ্গা যেথায় মুক্তি বিতরে রঙ্গে।
(২) নদী যাহার বন্দনা রচে শত তরঙ্গ ভঙ্গে।
শুদ্ধ বাক্য: সাগর যাহার বন্দনা রচে শত তরঙ্গ ভঙ্গে।
(৩) আমাদের ছেলে প্রতাপ সিংহ লঙ্কা করিয়া জয়।
শুদ্ধ বাক্য: আমাদের ছেলে বিজয়সিংহ লঙ্কা করিয়া জয়।
(৪) জ্বালিল জ্ঞানের দীপ চীনে বাঙালি দীপংকর।
শুদ্ধ বাক্য: জ্বালিল জ্ঞানের দীপ তিব্বতে বাঙালি দীপংকর।
(৫) বাঙালির ছেলে ফিরে এল দেশে জয়ের মুকুট পরি।
শুদ্ধ বাক্য: বাঙালির ছেলে ফিরে এল দেশে যশের মুকুট পরি।
(গ) কবিতাটি অবলম্বনে শূন্য স্থান পূর্ণ করো।
(১) আমরা বাঙালি বাস করি সেই বাঞ্ছিত ভূমি বঙ্গে।
(২) বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া আমরা বাঁচিয়া আছি।
(৩) এক হাতে মোরা মগেরে রুখেছি, মোগলেরে আর হাতে।
(৪) জ্ঞানের নিধান আদিবিদ্বান কপিল সাংখ্যকার।
(৫) শ্যাম কম্বোজে ‘ওঙ্কার-ধাম্’- মোদেরি প্রাচীন কীর্তি।
(৬) মনের গোপনে নিভৃত ভুবনে দ্বার ছিল যতগুলি।
২. অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।
(ক) ‘আমরা’ কবিতার কবি কে?
উত্তর: ‘আমরা’ কবিতার কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত।
(খ) বাংলা সাহিত্যে কে ছন্দের জাদুকর হিসেবে পরিচিত?
উত্তর: কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলা সাহিত্যে ‘ছন্দের জাদুকর’ হিসেবে পরিচিত।
(গ) গঙ্গা কী বিতরণ করে?
উত্তর: গঙ্গা মুক্তি বিতরণ করে।
(ঘ) রামচন্দ্রের পিতার নাম কী?
উত্তর: রামচন্দ্রের পিতার নাম দশরথ।
(ঙ) লঙ্কা কে জয় করেছিলেন?
উত্তর: বাঙালির ছেলে বিজয়সিংহ লঙ্কা জয় করেছিলেন।
(চ) ‘বীর সন্ন্যাসী’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘বীর সন্ন্যাসী’ বলতে স্বামী বিবেকানন্দকে বোঝানো হয়েছে।
(ছ) কবি কার ঋণ থেকে মুক্ত হতে চেয়েছেন?
উত্তর: কবি সমগ্র মানব জগতকে মিলনের মহামন্ত্রে দীক্ষিত করে দেবতার ঋণ থেকে মুক্ত হতে চেয়েছেন।
(জ) ‘আমরা’ কবিতায় আমরা কারা?
উত্তর: ‘আমরা’ কবিতায় ‘আমরা’ হলাম বাঙালি জাতি।
৩. তিন-চারটি বাক্যে উত্তর দাও।
(ক) “এই বাঙলার মাটিতে গাঁথিল সূত্রে হীরক হার।”-কে, কীভাবে হীরক হার গেঁথেছেন?
উত্তর: জ্ঞানের ভাণ্ডার, আদি বিদ্বান মহর্ষি কপিল এই বাংলার মাটিতেই সাংখ্যদর্শনের সূত্র রচনা করেছিলেন। সাংখ্য হলো ভারতের প্রাচীনতম দর্শনগুলির মধ্যে অন্যতম। কবি এই অমূল্য সাংখ্য দর্শনের সূত্রকেই ‘হীরক হার’ বা হীরের হারের সাথে তুলনা করেছেন, যা মহর্ষি কপিল এই বাংলার মাটিতেই গেঁথেছিলেন।
(খ) “আমরা বাঙালি বাস করি সেই বাঞ্ছিত ভূমি বঙ্গে।” কবি বঙ্গকে বাঞ্ছিত ভূমি বলেছেন কেন?
উত্তর: কবি বঙ্গকে ‘বাঞ্ছিত ভূমি’ বা সকলের কাঙ্ক্ষিত ভূমি বলেছেন কারণ এই ভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্পদ অতুলনীয়। এই ভূমির মধ্য দিয়ে মুক্তধারা গঙ্গা বয়ে চলে মুক্তি বিতরণ করে। এর কোলে সোনার ধান (কনক ধান্য) উৎপন্ন হয় এবং এর বুকে অপার স্নেহ-মমতা রয়েছে। বঙ্গভূমির কপালে কাঞ্চনজঙ্ঘার মুকুট শোভা পায় এবং সাগর শত তরঙ্গে তার বন্দনা করে।
(গ) কবি জয়দেবের কোমল কান্ত পদাবলির পরিচয় দাও।
উত্তর: কবি জয়দেব ছিলেন দ্বাদশ শতকের একজন বিখ্যাত বাঙালি কবি এবং বাংলার রাজা লক্ষ্মণ সেনের রাজসভার পঞ্চরত্নের অন্যতম। তাঁর বিখ্যাত রচনা হলো সংস্কৃত গীতিকাব্য ‘গীতগোবিন্দম্’। ‘আমরা’ কবিতায় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন যে, জয়দেব তাঁর কান্ত কোমল পদের (সুন্দর ও মধুর পঙ্ক্তি) দ্বারা সংস্কৃত সাহিত্যের রূপক অর্থে সোনার পদ্মকে (কাঞ্চন কোকনদ) সুরভিত করেছেন।
(ঘ) “তপের প্রভাবে বাঙালি সাধক জড়ের পেয়েছে সাড়া।”- বাঙালি সাধক বলতে কার কথা বলা হয়েছে? তিনি কীভাবে জড়ের সাড়া পেয়েছেন?
উত্তর: এই ‘বাঙালি সাধক’ বলতে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুকে বোঝানো হয়েছে, যদিও কবিতায় তাঁর নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। তিনি তাঁর বৈজ্ঞানিক সাধনা বা ‘তপের প্রভাবে’ আবিষ্কার করেছিলেন যে, উদ্ভিদের মতো জড় পদার্থের মধ্যেও প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে বা তারাও উত্তেজনায় সাড়া দেয়। তাঁর এই নবীন সাধনাকেই কবি ‘শব সাধনার বাড়া’ বা শ্রেষ্ঠ বলে অভিহিত করেছেন।
৪. রচনামূলক উত্তরের জন্য প্রশ্ন।
(ক) ‘আমরা’ কবিতার বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: ‘আমরা’ কবিতায় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বাঙালির অতীত ও বর্তমানের শৌর্য-বীর্য এবং গৌরবগাথা বর্ণনা করেছেন। কবি বঙ্গকে এক পবিত্র তীর্থভূমি হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এবং ধনধান্যে পূর্ণ।
কবিতায় দেখানো হয়েছে, বাঙালিরা বীরবিক্রমে বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করে এবং শত্রুদের রুখে দিয়ে দেশকে রক্ষা করেছে; যেমন বিজয়সিংহ লঙ্কা জয় করেছেন এবং চাঁদ রায় ও প্রতাপাদিত্য মোগলদের হঠিয়েছেন। জ্ঞানে-বিজ্ঞানেও বাঙালির অবদান অসামান্য; কপিল সাংখ্যদর্শনের সূত্র গেঁথেছেন, অতীশ দীপঙ্কর তিব্বতে জ্ঞানের দীপ জ্বেলেছেন এবং জয়দেব সংস্কৃত সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন।
স্থাপত্য ও ভাস্কর্যে বাঙালির কীর্তি বিশ্বজোড়া, যার উদাহরণ ‘বরভূধর’ ও ‘ওঙ্কার ধাম’। আধ্যাত্মিক চেতনার বলে বাঙালি মন্বন্তর ও মহামারী জয় করেছে এবং নিমাই ও বিবেকানন্দের বাণীতে বিশ্বে সমন্বয়ের পথ দেখিয়েছে। সবশেষে, কবি বাঙালির মহামিলনের গানে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন।
(খ) ‘আমরা’ কবিতা অবলম্বনে বঙ্গের সৌন্দর্য বর্ণনা করো।
উত্তর: ‘আমরা’ কবিতায় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বঙ্গভূমিকে এক আশীর্বাদধন্য বা ‘বরদ’ তীর্থভূমি রূপে বর্ণনা করেছেন।
* নদী ও সাগর: এই ভূমির ওপর দিয়ে মুক্তবেণী গঙ্গা বয়ে চলে, যা সকলকে মুক্তি বিতরণ করে। সাগর শত তরঙ্গ তুলে এই বঙ্গভূমির বন্দনাগীত রচনা করে।
* প্রাকৃতিক শোভা: এই বঙ্গের কপালে (ভালে) কাঞ্চনজঙ্ঘা শৃঙ্গের মুকুট শোভা পায়, যার কিরণে সমগ্র ভুবন আলোকিত হয়। এর কোল সোনার ধানে (কনক ধান্য) পরিপূর্ণ এবং এর বুক অপার স্নেহ-মমতায় ভরা।
* পুষ্পশোভা: অতসী ও অপরাজিতা ফুলের মতো সুন্দর পুষ্পে এই পূণ্যভূমির দেহ ভূষিত বা অলংকৃত।
এইভাবেই কবি বঙ্গদেশের এক রূপ, রস ও স্নেহে পরিপূর্ণ চিত্র এঁকেছেন, যা সকলের ‘বাঞ্ছিত’ বা কাঙ্ক্ষিত।
(গ) বাঙালির শৌর্য-বীর্যের কথা কবি কীভাবে বর্ণনা করেছেন?
উত্তর: কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘আমরা’ কবিতায় বাঙালির শৌর্য-বীর্য ও অদম্য সাহসের একাধিক উদাহরণ তুলে ধরেছেন:
* দুঃসাহসিকতা: বাঙালি জাতি ভীরু নয়; তারা বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে জানে এবং অনায়াসে বা ‘হেলায়’ ভয়ঙ্কর সাপের (নাগ) মাথায় নেচে তাকে বশীভূত করতে পারে।
* প্রাচীন যুদ্ধরীতি: বাঙালির সেনারা প্রাচীনকালেও সুসজ্জিত ‘চতুরঙ্গ’ (হস্তী, অশ্ব, রথ ও পদাতিক) বাহিনী নিয়ে যুদ্ধ করেছে। তারা দশাননজয়ী রামচন্দ্রের প্রপিতামহের সঙ্গেও যুদ্ধ করার গৌরব অর্জন করেছে।
* সাম্রাজ্য বিস্তার: বাঙালির ছেলে বিজয়সিংহ নিজের শৌর্যের পরিচয় স্বরূপ সুদূর লঙ্কা জয় করেছিলেন এবং সেই দেশের নাম ‘সিংহল’ রেখেছিলেন।
* প্রতিরোধ: বাঙালিরা এক হাতে মগ দস্যুদের এবং অন্য হাতে মোগল আক্রমণকারীদের রুখে দিয়েছে। বাংলার বীর জমিদার চাঁদ রায় ও প্রতাপাদিত্যের দাপটে স্বয়ং দিল্লিনাথকেও (মোগল সম্রাট) পিছু হঠতে হয়েছিল।
(ঘ) বিদ্যা ও জ্ঞানে বাঙালির কৃতিত্বের আলোচনা করো।
উত্তর: ‘আমরা’ কবিতা অনুসারে, বিদ্যা, জ্ঞান ও সাধনায় বাঙালির কৃতিত্ব বিশ্ববন্দিত:
* দর্শন: জ্ঞানের ভাণ্ডার স্বরূপ আদি বিদ্বান মহর্ষি কপিল এই বাংলার মাটিতেই প্রাচীন সাংখ্যদর্শনের ‘হীরক হার’ অর্থাৎ অমূল্য সূত্রগুলি রচনা করেছিলেন।
* জ্ঞান বিস্তার: বাঙালি পণ্ডিত অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞান ভয়ঙ্কর তুষারাবৃত পর্বত লঙ্ঘন করে সুদূর তিব্বতে গিয়ে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বেলেছিলেন।
* তর্কশাস্ত্র: বাঙালি ছেলে (রঘুনাথ শিরোমণি) কিশোর বয়সেই মিথিলার প্রখ্যাত পণ্ডিত পক্ষধর মিশ্রকে তর্কযুদ্ধে হারিয়ে ‘যশের মুকুট’ পরে দেশে ফিরেছিলেন।
* সাহিত্য: বাংলার কবি জয়দেব তাঁর ‘গীতগোবিন্দম্’-এর মতো কান্ত ও কোমল পদাবলি দিয়ে সংস্কৃত সাহিত্যকে সুরভিত করেছেন।
* বিজ্ঞান: বাঙালি সাধক (জগদীশচন্দ্র বসু) তাঁর তপের প্রভাবে জড় পদার্থের মধ্যেও প্রাণের সাড়া আবিষ্কার করেছেন। বাঙালি রসায়নবিদ (প্রফুল্লচন্দ্র রায়) বিষম বা ভিন্নধর্মী ধাতুর মিলন ঘটিয়ে নব্য রসায়নে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।
(ঙ) ভাস্কর্য শিল্পে বাঙালির অবদান সম্বন্ধে আলোচনা করো।
উত্তর: ‘আমরা’ কবিতা অনুসারে, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পে বাঙালির অবদান শুধু বাংলাতেই সীমাবদ্ধ নয়, তা বিদেশের মাটিতেও অক্ষয় হয়ে আছে।
* স্থাপত্য: বাঙালি স্থপতিরাই সুদূর জাভায় অবস্থিত ‘বরভূধরের’ (বোরোবুদুর) বিশাল বৌদ্ধ স্তূপের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। শুধু তাই নয়, শ্যাম কম্বোজে (বর্তমান কম্বোডিয়া) অবস্থিত বিশ্ববিখ্যাত ‘ওঙ্কার-ধাম’ (আঙ্কোরভাট) মন্দিরটিও বাঙালিদেরই প্রাচীন কীর্তি।
* ভাস্কর্য: বাঙালি ভাস্কর বিপাল (বিটপাল) আর ধীমান তাঁদের ধ্যানের মাধ্যমে মূর্তিকে সজীব রূপ দিয়েছেন; ভাস্কর্য শিল্পে তাঁদের নাম অবিনশ্বর হয়ে আছে।
* চিত্রকলা: কোনো এক সুপটু বাঙালি পটুয়া বা চিত্রশিল্পী তাঁর লীলায়িত তুলির টানে বিশ্ববিখ্যাত অজন্তার গুহায় বাঙালির পটচিত্রকে অক্ষয় করে রেখেছেন।
(চ) “বিধাতার বরে ভরিবে ভুবন বাঙালির গৌরবে”- উদ্ধৃতাংশের যথার্থতা আলোচনা করো।
উত্তর: (দ্রষ্টব্য: এই পঙ্ক্তিটি প্রদত্ত সংক্ষেপিত কবিতায় নেই, তবে কবিতার মূলভাবের উপর ভিত্তি করে এর যথার্থতা আলোচনা করা হলো।)
‘আমরা’ কবিতায় কবি বাঙালির যে গৌরবময় অতীতের চিত্র এঁকেছেন, তার ভিত্তিতেই এই ভবিষ্যৎবাণী যথার্থ। বাঙালি অতীতে শৌর্য-বীর্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং শিল্প-ভাস্কর্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রেখেছে।
কবি দেখিয়েছেন, এই ধারা বর্তমানেও বহমান। বাঙালি সাধক জড়ের মধ্যে প্রাণের সাড়া আবিষ্কার করেছেন, বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের বাণীতে বিশ্বে সমন্বয়ের পথ খুঁজে পেয়েছে এবং বাঙালি কবি জগতে মহামিলনের গান গাইছেন।
কবি আশাবাদী যে, বাঙালি সত্যকে পাথেয় করে ভবিষ্যতে বিধাতার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে। বাঙালির এই গৌরবময় কীর্তি এবং মহামিলনের আদর্শই একদিন বিধাতার আশীর্বাদে সমগ্র ভুবন ভরিয়ে তুলবে এবং মানব জগতকে মিলনের মহামন্ত্রে দীক্ষিত করবে।
৫. সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো।
(ক) আমরা বাঙালি বাস করি সেই তীর্থে- বরদ বঙ্গে।
* উৎস: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
* প্রসঙ্গ: কবি বঙ্গভূমির মাহাত্ম্য ও পবিত্রতা বর্ণনা করতে গিয়ে এই উক্তি করেছেন।
* ব্যাখ্যা: কবি তাঁর জন্মভূমি বঙ্গদেশকে ‘তীর্থ’ বা পুণ্যভূমির সাথে তুলনা করেছেন। কারণ, এই ভূমির মধ্য দিয়েই কলুষ-নাশিনী গঙ্গা বয়ে চলেছে, যা মানুষকে মুক্তি বিতরণ করে। এই বঙ্গ ‘বরদ’ অর্থাৎ বরদানকারী; এটি তার সন্তানদের সোনার ধান (কনক ধান্য) ও অপার স্নেহ-মমতা দিয়ে পালন করে। এমন পবিত্র ও আশীর্বাদধন্য ভূমিতেই আমরা, অর্থাৎ বাঙালিরা, বাস করি।
(খ) বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া আমরা বাঁচিয়া আছি, / আমরা হেলায় নাগেরে খেলাই নাগেরি মাথায় নাচি।
* উৎস: উদ্ধৃত পঙ্ক্তি দুটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
* প্রসঙ্গ: কবি বাঙালির অদম্য সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দিতে গিয়ে এই উক্তি করেছেন।
* ব্যাখ্যা: বাঙালি জাতি যে ভীরু বা কাপুরুষ নয়, তা বোঝাতে কবি বলেছেন, বাঙালিরা ভয়ঙ্কর বাঘের সঙ্গেও যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে জানে। শুধু তাই নয়, বাঙালিরা এতটাই দুঃসাহসী যে, তারা সাপকে (নাগ) অনায়াসে বা ‘হেলায়’ খেলায় এবং নির্ভীকভাবে সেই সাপের মাথায় নেচে বেড়ায়। এই পঙ্ক্তিগুলির মাধ্যমে বাঙালির দুঃসাহসিকতা এবং প্রতিকূলতাকে জয় করার মানসিকতাকে তুলে ধরা হয়েছে।
(গ) বাঙালি অতীশ লঙ্ঘিল গিরি তুষারে ভয়ংকর, / জ্বালিল জ্ঞানের দীপ তিব্বতে বাঙালি দীপংকর।
* উৎস: উদ্ধৃত পঙ্ক্তি দুটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
* প্রসঙ্গ: জ্ঞান সাধনায় বাঙালির কৃতিত্ব ও অধ্যবসায়ের বর্ণনা প্রসঙ্গে কবি এই উক্তি করেছেন।
* ব্যাখ্যা: প্রাচীনকালেও বাঙালিরা জ্ঞান বিস্তারের জন্য অসাধ্য সাধন করেছেন। তারই উদাহরণ হলেন অতীশ দীপংকর। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি পণ্ডিত ও বৌদ্ধ ভিক্ষু। জ্ঞান প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি ভয়ঙ্কর তুষারাবৃত পর্বত (হিমালয়) লঙ্ঘন করে ১০৩৭ খ্রিস্টাব্দে তিব্বতে যাত্রা করেছিলেন। সেখানে তিনি বৌদ্ধধর্ম ও জ্ঞানের প্রদীপ জ্বেলে বাঙালি হিসেবে নিজের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
(ঘ) বাঙালির ছেলে ফিরে এল দেশে যশের মুকুট পরি।
* উৎস: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
* প্রসঙ্গ: বাঙালির জ্ঞানচর্চা ও তর্কশাস্ত্রে পারদর্শিতার গৌরব বর্ণনা করতে গিয়ে কবি এই উক্তি করেছেন।
* ব্যাখ্যা: এই পঙ্ক্তিতে ‘বাঙালির ছেলে’ বলতে সম্ভবত নবদ্বীপের প্রখ্যাত নৈয়ায়িক রঘুনাথ শিরোমণির কথা বলা হয়েছে। তিনি কিশোর বয়সেই মিথিলার তৎকালীন শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত পক্ষধর মিশ্রকে তর্কযুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন। এই অসামান্য বিজয়ের মাধ্যমে তিনি ‘যশের মুকুট’ বা খ্যাতির সম্মান অর্জন করে নিজ দেশে (বাংলায়) ফিরে এসেছিলেন, যা বাঙালির প্রখর মেধা ও পাণ্ডিত্যের পরিচয় বহন করে।
(ঙ) স্থপতি মোদের স্থাপনা করেছে বরভূধরের ভিত্তি / শ্যাম কম্বোজে ‘ওঙ্কারধাম’ মোদেরি প্রাচীন কীর্তি।
* উৎস: উদ্ধৃত পঙ্ক্তি দুটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
* প্রসঙ্গ: স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পে প্রাচীন বাঙালির অসামান্য অবদানের কথা বলতে গিয়ে কবি এই উক্তি করেছেন।
* ব্যাখ্যা: বাঙালির শিল্পকীর্তি শুধু বাংলাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, তা বিদেশের মাটিতেও ছড়িয়ে পড়েছিল। কবি উল্লেখ করেছেন যে, জাভার ‘বরভূধরের’ (বোরোবুদুর) বিশাল বৌদ্ধ স্তূপের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন বাঙালি স্থপতিরাই। শুধু তাই নয়, সুদূর শ্যাম কম্বোজে (বর্তমান কম্বোডিয়া) অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন ‘ওঙ্কার-ধাম’ (আঙ্কোরভাট) মন্দিরটিও বাঙালিদেরই প্রাচীন কীর্তি।
(চ) বীর সন্ন্যাসী বিবেকের বাণী ছুটেছে জগৎময়।
* উৎস: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
* প্রসঙ্গ: বাঙালির আধ্যাত্মিক সাধনা ও বিশ্বমানবতার পথে তার অবদান বর্ণনা প্রসঙ্গে কবি এই উক্তি করেছেন।
* ব্যাখ্যা: ‘বীর সন্ন্যাসী’ বলতে কবি স্বামী বিবেকানন্দকে বুঝিয়েছেন। স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন ঊনবিংশ শতকের এক অনন্য প্রতিভা, যিনি আধুনিক ভারতে জাতীয় আত্মচেতনার রূপকার ছিলেন। তাঁর মানবতাবাদী ও সমন্বয়ের বাণী জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র জগৎময় ছড়িয়ে পড়েছিল, যা বাঙালিরই গৌরব বৃদ্ধি করেছে।
৬. ভাষা-ব্যাকরণ
(ক) প্রত্যয় নির্ণয় করো
* মুক্তি = √মুচ্ + ক্তি
* ভুবন = √ভূ + অন
* জ্ঞানী = √জ্ঞা + ইন
* ঠাকুরালি = ঠাকুর + আলি
* নবীন = নব + ঈন
* দেবতা = দেব + তা
* জয় = √জি + অল্
(খ) এক কথায় প্রকাশ করো
* বর দান করেন যিনি। = বরদ
* যে বস্তু চাওয়া হয়। = বাঞ্ছিত
* দশটি আনন যার। = দশানন
* অশ্ব, রথ, হস্তী ও পদাতিকের মিলিত বাহিনী। = চতুরঙ্গ
* এক মনুর শাসন কাল থেকে অন্য মনুর শাসন কালের আরম্ভ। = মন্বন্তর
* যার বিনাশ নেই। = অবিনশ্বর
* পুণ্য কামনায় যেখানে বহুজনের সমাবেশ ঘটে। = তীর্থ
* ধাতু, পাথর ইত্যাদি দিয়ে মূর্তি বানায় যে। = ভাস্কর
