কবর, Chapter- 4, Class-9, SEBA

কবর, Chapter- 4, Class-9, SEBA

কবর, Chapter- 4, Class-9, SEBA
D. ৩/৪ টি বাক্যে উত্তর দাও।
Q.1. ছোটো বয়সের স্ত্রীকে বিয়ে করার পর দাদুর মনোভাব কেমন ছিল?
ANS:- ছোটো বয়সের স্ত্রীকে বিয়ে করার পর দাদু তাকে আপন ঘরে পরম সমাদরে এনে তুলেছিলেন। ছোটো ছোটো দুটি পায়ে সে যখন বাড়িময় এঘর থেকে ওঘরে ঘুরে বেড়াত, মুহূর্তের জন্য চোখের আড়ালে চলে যেত তখন তাকে হারানোর অমূলক আশংকায় কেঁপে উঠত যুবক স্বামীর অন্তর। এছাড়া সেই সঙ্গে এক বিচিত্র অনুভূতিতেও তাঁর স্বামীর হৃদয় পরিপূর্ণ হয়ে যেত।
Q.2. শ্বশুর বাড়িতে যাবার সময় দাদু স্ত্রীর জন্য যে সব জিনিস নিতেন তা উল্লেখ করো।
ANS:- পত্নী বাপের বাড়ি গেলে পর দাদু সময় সুযোগমতো শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে মাঝে-মধ্যে তাকে দেখে আসতেন। তখন প্রিয় মিলনের প্রত্যাশায় তার বুক দরুদুরু করতো। যাওয়ার আগে শাপলার হাটে ছয় পয়সা পাল্লা তরমুজ বিক্রি করে পত্নীর জন্য একছড়া পুঁতির মালা, দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন সঙ্গে নিয়ে যেতে তাঁর কখনোই ভুল হতো না।
Q.3. উপহার পেয়ে দাদির খুশি কবি কীভাবে প্রকাশ করেছেন?
ANS:- সামান্য পুঁতির মালা, তামাক ও মাজন উপহার পেয়ে দাদি প্রচণ্ড খুশি হতেন। কবি দাদির খুশির এই ভাবকে প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন যে দাদি নথ নেড়ে নেড়ে হেসে উঠতেন। মৃদু অনুযোগের সুরে বলতেন, এতদিন পরে দাদুর আসা হলো কেন ?
E. রচনাধর্মী উত্তর লেখো।
Q.1. কবর’ কবিতার সারমর্ম লেখো।
ANS:- প্রিয়তমা পত্নীর মৃত্যুর পটভূমিতে সাংসারিক স্নেহ প্রেমের আশ্চর্য করুণাঘন রূপ ফুটে উঠেছে কবিতাটিতে। জীবন সমুদ্রের বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে অতীত জীবনের সুখের স্মৃতিগুলো রোমন্থন করছে দাদু, তার একমাত্র নাতির কাছে। ত্রিশ বছরের বিপত্নীক জীবন দাদুর কাছে বড় দুঃসহ হয়ে ওঠে। দাদুর স্ত্রী ছিল অত্যন্ত সুন্দরী। ছোট্ট সুন্দরী বধূর রূপ লাবণ্যে সারা বাড়ি সোনালি রঙে উজ্জ্বল হতো। দাদু লাঙল নিয়ে মাঠে যাবার সময় আড়চোখে বারবার স্ত্রীকে দেখে নিতেন। দাদির স্বতঃস্ফুর্ত প্রেমঘন সান্নিধ্য দাদুর মনকে অভিষিক্ত করে দিয়েছিল। দাদি বাপের বাড়ি যাবার সময় দাদুকে বারবার অনুরোধ করতেন যেন মাঝে মাঝেই তাঁকে দেখে আসেন। বৃদ্ধা দাদু শাপলার হাট থেকে তরমুজ বিক্রি করে কিছু পয়সা বাঁচিয়ে স্ত্রীর জন্য তামাক, মাজন ও পুঁতির মালা নিয়ে সন্ধ্যাবেলা শ্বশুর বাড়িতে যেতেন। এই সমস্ত উপহার পেয়ে দাদি ভীষণ খুশি হতো এবং দাদুর আসার আশায় কত যে অপেক্ষা করতো সে কথাও হাসি মুখে জানিয়ে দিত। কবিতাটি সরল সুন্দর গ্রামবাংলার ঘরোয়া জীবনচিত্র।
Q.2. কবর’ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা আলোচনা কর।
ANS:- কবর’ কবিতাটির সূচনাই হয়েছে কবরের প্রসঙ্গ দিয়ে। বিপত্নীক এক বৃদ্ধ তিরিশ বছর আগে প্রয়াত তার স্ত্রীর কবরের প্রতি নিজের নাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে ।একদিন যে রূপবতী বালিকাকে তিনি বধূরূপে বরণ করে ঘরে এনেছিলেন, তার সঙ্গে দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনযাপনের কত সুখস্মৃতিই না তিনি নিজ মুখে ব্যক্ত করেছেন। পবিত্র ভালোবাসার বন্ধন উভয়ের জীবন একসূত্রে গ্রথিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করে প্রিয় স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা উপেক্ষা করে তাঁর প্রিয় পত্নী আজ কেমন করে নীরব নিভৃত স্মরের তলদেশে চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছে, বৃদ্ধের হাহাকার মাখা কণ্ঠে এই নিরুত্তর প্রশ্নই আজ বড়ো হয়ে উঠেছে।।সেই দুঃখময় অভিজ্ঞতার স্মৃতি তিনি আজো ভুলতে পারেননি। এইরূপে দেখা যায় যে, কবর’ কবিতার বিষয়বস্তু কোনো না কোনো প্রিয়জনের কবরকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে এবং পাঠক মনে সাড়া জাগিয়েছে। সুতরাং বিষয়বস্তুর সঙ্গে সংগতিসূত্রে কবিতাটির কবর’ নামকরণ সম্পূর্ণ সার্থক।
Q.3. বালিকাবধূর রূপ লাবণ্যে বিমোহিত বৃদ্ধ দাদু তার স্ত্রীর রূপের যে বর্ণনা দিয়েছেন, সে বিষয়ে আলোচনা করো।
ANS:- যৌবনের সূচনাকালে সোনার প্রতিমার মতো সুন্দরী ছোট্ট মেয়েটিকে বিয়ে করে তিনি ঘরে এনেছিলেন। সেই স্বর্ণকান্তি ছোট্ট মেয়েটি যখন বাড়ির ভিতর এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াত, মনে হত, কারা যেন বাড়িময় রাশি রাশি সোনা ছড়িয়ে দিয়েছে। সেই অপরূপ দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে তিনি মুগ্ধ হয়ে যেনে। ভোরবেলার সোনালি আলোয় নতুন বউয়ের সুন্দর মুখখানি যখন আরো সুন্দর, আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠত। তখন সেই সুন্দর মুখের ছবি দুই চোখে ভরে নিয়ে, লাল কাঁধে করে, গ্রামের পথ ধরে তিনি চাষের খেতের দিকে এগিয়ে যেতেন। কিন্তু চলার পথে অতৃপ্ত বাসনায় তিনি সেই সুন্দরী বধূর লাবণ্যময় মুখখানি বারবার ফিরে চেয়ে দেখতেন। তাঁর ভাবি-সাব তাকে এ নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করলেও তিনি তাতে কিছু মনে করতেন না। এইভাবে প্রতিদিনের ক্ষুদ্র সুখ-দুঃখের মধ্য দিয়ে দুটি জীবনের ধারা কখন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে, তার হিসাব রাখা সম্ভব নয়।
Q.4. ‘কবর’ কবিতা অবলম্বনে বৃদ্ধদাদুর গভীর দাম্পত্য প্রেমের সৌন্দর্য কিভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখো।
ANS:- এক বৃদ্ধের স্ত্রী’র কবর যা তিনি তার নাতিকে দেখিয়েছেন। বিগত তিরিশ বছরের অশ্রুজলে সিক্ত এই কবর। এই সূত্রে বৃদ্ধের মনে পড়েছে সেই বিগতদিনের স্মৃতিকথা যখন সেই বালিকা তার পুতুলের সংসার ভেঙে দিয়ে। চলে আসে স্বামীর সংসার করবে বলে। তার উপস্থিতিতে স্বামীর সংসার স্বর্ণময়।  লাঙল নিয়ে তিনি বখন মাঠে যেনে তখন বারবার ফিরে ফিরে তাকাতেন কারণ তাকে দেখে দেখে আঁখি না ফিরে। এই নিয়ে তার বৌদি প্রভৃতি বাড়ির আত্মীয় স্বজনেরা ঠাট্টা তামাশা করতেন। যা তার জীবনকে আনন্দে দিশেহারা করে দিত। ওই বালিকাটির দিদা যখন পিতৃগৃহে যেত তখন বারবার স্মরণ করিয়ে দিত—“আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু, উজান-তলীর গাঁ।” এবং তার দাদুও পুতির একছড়া মালা নিয়ে, দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন গাঁটে করে শ্বশুর বাড়ির পথে সন্ধ্যাকালে উপস্থিত হত। এই সামান্য উপহারে তার দাদি’ কত না আনন্দ পেত। সঙ্গে সঙ্গে অভিমান করে অভিযোগও জানাত।
F. সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো।
Q.1.         এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,
সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা।
ANS:- আলোচ্য অংশটি কবি জসীম উদ্দীনের লেখা কবর কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। উদ্ধৃত পঙক্তিটিতে কবি কল্পিত বৃদ্ধের স্মৃতিচারণায় তার বালিকা বধূর অপরিমিত সৌন্দর্য বর্ণনা প্রসঙ্গে সোনা ছড়ানোর তুলনা করা হয়েছে। উপমাটির অত্যাশ্চর্য প্রয়োগ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। দাদির মুখখানা সোনার মতো তিনি বালিকাসুলভ চাপল্যের কারণে সারা বাড়িময় ছোটাছুটি করলে সোনার আভায় চারিদিক যেন আলোকিত হয়ে উঠত। প্রভাতের স্বর্ণবর্ণের সূর্যের রঙের সঙ্গে বক্তার স্ত্রীর গায়ের রং যেন মিলেমিশে প্রভাতের ঔজ্বল্যকে আরও বাড়িয়ে দিত।।
Q.2.         এমনি করিয়া জানি না কখন জীবনের সাথে মিশে
ছোটখাট তার হাসিব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।
ANS:- আলোচ্য অংশটি কবি জসীম উদ্দীনের লেখা কবর কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। উদ্ধৃতাংশে দাদুর বিবাহের প্রসঙ্গে উপরের পঙক্তি দুটির অবতারণা করা হয়েছে। বিবাহের পর দাদু ও দাদির জীবন চলার পথ মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। একস্রোতে প্রবাহিত হয়েছিল। প্রবল সহানুভূতির এবং ভালোবাসার অমোঘ প্রভাবে বধূর ক্ষুদ্র সুখ, ক্ষুদ্র দুঃখ, হাসিকান্না, আনন্দ বেদনাকে নিজের বলে মেনে নিয়ে তারই মাঝে তিনি আত্মহারা হয়ে গেছে। নিজের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ভুলে গেছে।
Q.3.         দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া গাঁটে,
সন্ধ্যাবেলায় ছুটে যাইতাম শ্বশুর বাড়ির বাটে।
ANS:- আলোচ্য অংশটি কবি জসীম উদ্দীনের লেখা ‘কবর’ কবিতা থেকে নগ্ন হয়েছে। আলোচ্য কবিতায় কল্পিত বৃদ্ধ পিতামহ, একদিন তিনিই ছিলেন সময় স্বামী। আর তখন তার বয়সও তেমন বেশি ছিল না। সেজন্য ক্ষুদ্র আশা আকাঙক্ষায় ঘেরা জীবনের অংশীদার তরুণী পত্নীর নিতান্ত অন্য শখ আহলাদ তিনি আগ্রহের সঙ্গে হাসিমুখে পরিপূর্ণ করতে এগিয়ে আসতেন। এ ব্যাপারে তার কোনো ত্রুটি বা গাফিলতি ছিল না। সেজন্য বাপের বাড়িতে স্বামীর পথ চেয়ে বসে থাকা তরুণী পত্নীর সাধের তামাক-মাজন হাট থেকে কিনে নিয়ে হাট থেকে ফেরার সময় কৃষক স্বামী শ্বশুরবাড়ির পথ ধরে দ্রুত পায়ে এসে সেখানে হাজির হলে।

G. ভাষা ব্যাকরণ
Q.1. প্রত্যয় নির্ণয় করো।
সোনালি ; হাসি ; উজান ; মাজন ; হাসিয়া।
ANS:- সোনালি—সোনা+আলি। হাসি-হাস্+ই। উজান উদ্যান। মাজন-মাল্+অন্। হাসিয়া হাইয়া।
Q.2. ‘কবর’ কবিতা থেকে পাঁচটি অসমাপিকা ক্রিয়াপদের উল্লেখ করো।
ANS:- নীচে কবর’ কবিতা থেকে পাঁচটি অসমাপিকা ক্রিয়াপদের উল্লেখ করা হচ্ছে –
ভিজায়ে, ঘুরিয়া, লইয়া, হাসিয়া, জড়ায়ে।।
Q.3. বাক্য রচনা করো ?
কবর ; নয়ন ; পুতুল ; তামাশা ; গাঁটে।
ANS:-
কবর : মুসলমানরা মারা গেলে মৃতদেহ কবর দেওয়া হয়।
নয়ন : নয়ন ভরা জল গো তোমার, আঁচল ভরা ফুল।
পুতুল : ছোট মেয়েরা পুতুল নিয়ে খেলতে ভালোবাসে।
তামাশা : গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলাকালীন তামাশা চলে না।
গাটে : গাঁটে যথেষ্ট টাকাকড়ি নিয়ে বাজারে যেতে হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *