ভারতবর্ষে বৃটিশ শাসনের প্রতিষ্ঠা, সম্প্রসারণ এবং সুদৃঢ়করণ
১। উত্তর দাও
(ক) ইংরেজ এবং ফরাসিদের মধ্যে কীসের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল?
Ans.ভারতবর্ষে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার এবং নিজস্ব একটি সাম্রাজ্য গড়ে তোলার স্বপ্নই ছিল বৃটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং ফরাসি ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রধান কারণ। ইউরোপে শুরু হওয়া অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকারের যুদ্ধ (১৭৪০ খ্রিস্টাব্দ) এবং পরবর্তীতে সাত বৎসরের যুদ্ধের (১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দ) প্রভাবও ভারতে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল।
(খ) প্রথম এবং দ্বিতীয় কর্ণাটক যুদ্ধের সময়ে ফরাসিদের গভর্নর কে ছিলেন?
Ans.প্রথম এবং দ্বিতীয় কর্ণাটক যুদ্ধের সময়ে ফরাসিদের গভর্নর ছিলেন যোশেফ ফ্রান্সিস ডুপ্লে।
(গ) নবাব সিরাজ-উদ্-দৌল্লার প্রধান সেনাপতি কে ছিলেন?
Ans.নবাব সিরাজ-উদ-দৌল্লার প্রধান সেনাপতি ছিলেন মিরজাফর।
(ঘ) বঙ্গদেশের প্রথম গভর্নর জেনারেল কে ছিলেন?
Ans.রেগুলেটিং অ্যাক্ট (১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দ) অনুযায়ী বঙ্গদেশের গভর্নরের পদটি গভর্নর জেনারেলে উন্নীত হয়। প্রথম গভর্নর জেনারেল ছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস।
(ঙ) স্বত্ববিলোপ নীতি কে প্রবর্তন করেছিলেন?
Ans.স্বত্ববিলোপ নীতি উদ্ভাবন করেছিল কোম্পানির বোর্ডের ডাইরেকটরগণ। তবে নীতিটি কার্যকরভাবে প্রয়োগ করে ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যকে কোম্পানির শাসনাধীনে এনেছিলেন লর্ড ডালহৌসি।
—
২। শুদ্ধ উত্তর বেছে বের করো
(ক) পণ্ডিচেরী ইংরেজদের বাণিজ্য কুঠি ছিল।
উত্তর: ভুল।
(খ) ফরাসিরা সালাবৎ জং কে হায়দারাবাদের নিজাম হিসাবে অধিষ্ঠিত করেছিল।
উত্তর: শুদ্ধ।
(গ) নবাব সিরাজ-উদ-দৌল্লা আলিবর্দি খাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যার পুত্র ছিলেন।
উত্তর: অশুদ্ধ।
(ঘ) পলাশি অঞ্চলটি ভাগিরথী নদীর পারে অবস্থিত ছিল।
উত্তর: শুদ্ধ।
(ঙ) রেগুলেটিং অ্যাক্ট বঙ্গের গভর্নর পদটিকে গভর্নর জেনারেলে উন্নীত করে।
উত্তর: শুদ্ধ।
(চ) লর্ড ওয়েলেসলি স্বত্ববিলোপ নীতি প্রবর্তন করেন।
উত্তর: ভুল। লর্ড ওয়েলেসলি করদ মৈত্রী নীতি প্রবর্তন করেন এবং লর্ড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করেন।
—
৩। ক্রমানুসারে সাজাও
নবাব সিরাজ-উদ-দৌল্লা, মিরজাফর, আলিবর্দি খাঁ, মিরকাশিম
Ans.প্রথমে আলিবর্দি খাঁ (মৃত্যু ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দ), এরপর নবাব সিরাজ-উদ-দৌল্লা (আলিবর্দি খাঁর মৃত্যুর পর নবাব হন), পরবর্তী মিরজাফর (পলাশির যুদ্ধের পর নবাব হন, ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ), এবং শেষমেশ মিরকাশিম (মিরজাফরকে পদচ্যুত করার পর নবাব হন, ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দ)।
—
৪।১৩। প্রথম কর্ণাটক যুদ্ধ কী ছিল? সংক্ষেপে লিখো।
Ans.১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকারের যুদ্ধ শুরু হলে ইউরোপীয় দুই শক্তি ইংরেজ ও ফরাসি পরস্পর বিরোধী পক্ষে যোগ দেয়। ইংরেজ নৌবাহিনী ফরাসি জাহাজ অবরোধ করলে ফরাসি গভর্নর ডুপ্লে মাদ্রাজ দখল করেন এবং কর্ণাটকের নবাবের সৈন্যবাহিনীকেও পরাজিত করেন। ইউরোপে দুই জাতির মধ্যে সন্ধি হওয়ায় ভারতেও তাদের মধ্যে সন্ধি হয় এবং ফরাসিরা ইংরেজদের থেকে দখল করা স্থান ফিরিয়ে দেয়। এটিই প্রথম কর্ণাটক যুদ্ধ।
১৪। ডুপ্লে কে ছিলেন এবং তার ভূমিকা কী ছিল?
Ans.যোশেফ ফ্রান্সিস ডুপ্লে ছিলেন ফরাসি ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির দূরদর্শী ও চতুর গভর্নর। তিনি প্রথম কর্ণাটক যুদ্ধে ইংরেজদের অধীনস্থ মাদ্রাজ দখল করেন এবং কর্ণাটকের নবাবের সৈন্যবাহিনী পরাজিত করেন। তিনি হায়দারাবাদের নিজাম পদপ্রার্থী মুজাফ্ফর জং ও কর্ণাটকের নবাব পদপ্রার্থী চাঁদ সাহেবকে সাহায্য করে ভারতীয় রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেন।
১৫। পলাশির যুদ্ধ কী এবং এর গুরুত্ব কী?
Ans.১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশিতে নবাব সিরাজ-উদ-দৌল্লার সৈন্য ও ইংরেজদের মধ্যে যুদ্ধ হয়। ইংরেজরা নবাবকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য মিরজাফর ও অন্যান্য সেনাপতি ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে গোপন চুক্তি করে। প্রধান সেনাপতি মিরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে নবাব পরাজিত হন। যুদ্ধের পর মিরজাফর নবাব হন। এই জয়ের ফলে ইংরেজরা বঙ্গ ও ভারতবর্ষের রাজনীতিতে প্রভুত্ব বিস্তার করে।
১৬। রেগুলেটিং অ্যাক্ট কী?
Ans.১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সংসদ রেগুলেটিং অ্যাক্ট জারি করে। এতে বঙ্গের গভর্নরের পদ গভর্নর জেনারেলে উন্নীত হয়, চারজনের একটি কমিটি গঠন করা হয়, এবং বোম্বাই ও মাদ্রাজের গভর্নরদের গভর্নর জেনারেলের অধীনে আনা হয়। এটি কোম্পানির রাজনৈতিক কার্যকে স্বীকৃতি দেয় এবং স্থায়ী শাসনের ভিত্তি স্থাপন করে।
১৭। পিটের ভারত শাসন আইন কী?
Ans.১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে পিটের ভারত শাসন আইন জারি হয়। এতে ছয় সদস্যের নিয়ন্ত্রকমণ্ডলী গঠন করা হয়, বঙ্গদেশে গভর্নর জেনারেল পরিষদের সদস্য সংখ্যা তিনজনে হ্রাস করা হয় এবং গভর্নর জেনারেলের পদকে শক্তিশালী করা হয়। এটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শাসনের ভিত্তি স্থাপন করে।
১৮। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী ছিল?
Ans.লর্ড কর্নওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন। এতে কৃষিভূমি ভাগ করে জমিদারদের তত্ত্বাবধানে দেওয়া হয় এবং বার্ষিক নির্ধারিত রাজস্ব ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানিকে দিতে হয়। রাজস্ব না দিলে জমিদারি কোম্পানির হাতে চলে যায়। এতে নতুন ধনিক জমিদার শ্রেণি তৈরি হয়।
১৯। ‘বঙ্গের ঘরোয়া কোন্দলই ইংরেজদের বঙ্গ দখলের প্রধান কারণ’ কথার সত্যতা কী?
Ans.বঙ্গের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, নবাবের উত্তরাধিকারে ঘরোয়া কোন্দল, এবং মিরজাফর ও অন্যান্য সেনাপতি ও সভাসদদের বিশ্বাসঘাতকতা ইংরেজদের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ ও বঙ্গ দখলের পথ সুগম করে। সুতরাং কথাটি যথার্থ।
২০। বৃটিশ ইস্ট-ইণ্ডিয়া কোম্পানির কাজকর্ম যা নবাবকে অসন্তুষ্ট করেছিল, তা কী কী?
Ans.নবাবকে অসন্তুষ্ট করেছিল দুর্গ নির্মাণে হস্তক্ষেপ না করা, বাণিজ্যের সুযোগের অপব্যবহার, নবাবের কর্মচারীর আশ্রয় গ্রহণে হস্তক্ষেপ এবং ফরাসিদের দখল ও আশ্রয় প্রদানের ঘটনা।
২১। ইস্ট-ইণ্ডিয়া কোম্পানির সাম্রাজ্যবাদী নীতি কীভাবে প্রকাশ পেয়েছিল?
Ans.এটি করদ মৈত্রী নীতি, স্বত্ববিলোপ নীতি এবং সামরিক ও রাজনৈতিক আধিপত্যের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছিল। করদ মৈত্রী নীতিতে দেশীয় রাজা ইংরেজ সৈন্য বাহিনী খরচ বহন করে এবং অমান্য করলে রাজ্য সরাসরি শাসনের অধীনে আসে। স্বত্ববিলোপ নীতি অনুসারে উত্তরাধিকারী না থাকলে রাজ্য কোম্পানির অধীনে চলে আসে। সামরিক লড়াইয়ের মাধ্যমে কোম্পানি আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।
২২। লর্ড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে কোন রাজ্যগুলো কোম্পানির শাসনাধীনে এনেছিলেন?
Ans.লর্ড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে মন্দতি, কোলাবা, সাঁতারা, জৈৎপুর, সম্বলপুর, ভাগলপুর, উদয়পুর, নাগপুর এবং ঝাঁসি রাজ্যগুলো কোম্পানির শাসনাধীনে এনেছিলেন। এছাড়াও কর্ণাটকের নবাব, সুরাট এবং তাঞ্জোরের রাজার সুযোগ-সুবিধা কেড়ে ইংরেজদের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
২৩। ভারতবর্ষের মানচিত্রে পণ্ডিচেরী, মাদ্রাজ, বোম্বাই, এলাহাবাদ, অযোধ্যা, পলাশি, কর্ণাটক কোথায় অবস্থিত?
Ans.পণ্ডিচেরী দক্ষিণ ভারতের পূর্ব উপকূলে, ফরাসিদের প্রধান ঘাঁটি ছিল। মাদ্রাজও দক্ষিণ ভারতের পূর্ব উপকূলে ইংরেজদের প্রধান ঘাঁটি। বোম্বাই পশ্চিম উপকূলে ইংরেজদের প্রধান ঘাঁটি। এলাহাবাদ উত্তর ভারতে গঙ্গা ও যমুনার সঙ্গমস্থলে। অযোধ্যা উত্তর ভারতে, নবাব মিরকাশিম ও মোগল সম্রাটের সঙ্গে ইংরেজদের বক্সার যুদ্ধে জড়িত। পলাশি বঙ্গদেশে মুর্শিদাবাদ থেকে ২৩ মাইল দক্ষিণে ভাগিরথী নদীর পারে। কর্ণাটক দক্ষিণ ভারতের একটি অঞ্চল।
২৪। ইউরোপের মানচিত্রে অস্ট্রিয়া, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানি কোথায় অবস্থিত?
Ans.ইংল্যান্ড উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপে। ফ্রান্স পশ্চিম ইউরোপে। অস্ট্রিয়া মধ্য ইউরোপে, যেখানে উত্তরাধিকারের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। জার্মানি মধ্য ইউরোপে অবস্থিত, প্রুশিয়া রাজ্যের অংশ হিসেবে। এই দেশগুলো খুঁজে বের করলে ইউরোপীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বোঝা যায়।
—
১০। ইউরোপের মানচিত্রে দেশসমূহ
Ans.ইংল্যান্ড উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপে অবস্থিত। ফ্রান্স পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত। অস্ট্রিয়া মধ্য ইউরোপে অবস্থিত, যেখানে উত্তরাধিকারের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। জার্মানি মধ্য ইউরোপে অবস্থিত, প্রুশিয়া রাজ্যের অংশ হিসেবে উল্লেখযোগ্য। এই দেশগুলি খুঁজে বের করলে ইউরোপের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বোঝা যায়, যা ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানিগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রভাব ফেলেছিল।
