পাঠ – ১: জোনাকি
কবি: সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
ক – পাঠভিত্তিক
১। কবিতাটি শুদ্ধ ও স্পষ্টভাবে পড়ো এবং আবৃত্তি করো।
উত্তর: (এটি একটি অনুশীলনমূলক কাজ, নিজে করো।)
২। উত্তর বলো ও লেখো।
(ক) কবি জোনাকির আলো কেন ভালো লাগে বলেছেন?
উত্তর: কবি জোনাকির আলো ভালো লাগে বলেছেন কারণ, এটি একটি-দু’টি পাতার উপরে মৃদু আলো ছড়ায় যা দেখতে ভারী নতুন লাগে। এই আলো আঁধার রাতে বাদলের সঙ্গী হয়ে থাকে, যখন চাঁদের জ্যোতিও কালো হয়ে যায়। এটি দুঃখীজনের ভিক্ষা মুঠি-র মতো, যা দানের সেরা দান।
(খ) কবি ‘দানের সেরা দান’ বলতে কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: কবি ‘দানের সেরা দান’ বলতে জোনাকির সেই সামান্য, মৃদু আলো-কে বুঝিয়েছেন। এটি সূর্যের (তপন) বা চাঁদের (শশী) আলোর মতো উজ্জ্বল ও বিশাল না হলেও, এটি তার বুক উজাড় করে দেওয়া শ্রেষ্ঠ দান। এটি যেন দুঃখীজনের ভিক্ষার মুঠি, যা আন্তরিকতা ও ত্যাগের কারণে অন্যান্য বড়ো দানের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।
(গ) ছোটো হলেও জোনাকির মান বেশি কেন?
উত্তর: ছোটো হলেও জোনাকির মান বেশি, কারণ এটি নিজের স্বল্প সামর্থ্য দিয়েও অন্ধকার রাতে তার যা কিছু আছে তা উজাড় করে দেয়। সে যে ছোটো, তাতে তার কোনো লজ্জা নেই। কবি মনে করেন, জোনাকি তাদের কাছের জন এবং সে তার সমস্তটুকু দিয়ে দেয় বলেই তার দান দানের সেরা দান।
(ঘ) আমরা কাদের পূজা করবো এবং কাকে ভালোবাসব?
উত্তর: আমরা সূর্য (তপন) ও চাঁদকে (শশী) পূজা করবো, কিন্তু জোনাকিকেই ভালোবাসব।
৩। কবিতাটির মূল ভাব সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: কবিতাটির মূল ভাব হলো ছোটোর মহত্ত্ব এবং আন্তরিকতার মূল্য প্রতিষ্ঠা করা।
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত জোনাকিকে একটি প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে দেখিয়েছেন যে, জোনাকি আকারে ছোটো এবং তার আলোও মৃদু।
কিন্তু সেই মৃদু আলোই অন্ধকার রাতে বা বাদলের সাথী রাতে আশা ও আনন্দের বার্তা বহন করে।
তার এই স্বল্প দান, যা সে বুক উজাড় করে দেয়, তা কোটি কোটি তারার আলোর থেকেও কবির কাছে বেশি প্রিয় ও মূল্যবান।
তাই, এই ছোটো জোনাকির দানকে তিনি ‘দানের সেরা দান’ বলে অভিহিত করেছেন।
কবিতাটি এই শিক্ষাই দেয় যে, বড়ো-ছোটো বিচার না করে যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী ত্যাগ বা অবদান রাখে, সেটিই সবচেয়ে মূল্যবান।
৪। শব্দ-সম্ভার অথবা অভিধান দেখে নীচের শব্দগুলোর অর্থ লেখো।
মৃদু – হালকা, অল্প, ধীর
বাদল – বৃষ্টি, বর্ষা
ভাতি – দীপ্তি, শোভা, জ্যোতি, আলো
তপন – সূর্য
শশী – চাঁদ
৫। প্রসঙ্গের সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যাখ্যা করো।
“যেটুকু তোর দেবার আছে
দিয়ে দে তুই আজ,
ও সে তারার মতো নাই বা হ’ল,-
তা’তেই বা কি লাজ?”
ব্যাখ্যা:
উৎস ও প্রসঙ্গ: উদ্ধৃতাংশটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত ‘জোনাকি’ কবিতার অংশ। এখানে কবি জোনাকির সামান্য দানের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেছেন।
মূল ভাব: কবি অন্ধকার রাতে জোনাকিকে আহ্বান জানিয়ে বলছেন, তার যতটুকু সামর্থ্য আছে, সে যেন আজ তা উজাড় করে দেয়। জোনাকির এই আলো তারার বা চাঁদের মতো উজ্জ্বল না-ও হতে পারে। তাতে লজ্জার কিছু নেই।
তাৎপর্য: কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, দাতার দান করার মানসিকতা এবং আন্তরিকতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, দানের পরিমাণ নয়। জোনাকি তার ছোটো শরীরে যতটুকু আলো ধারণ করে, সে ততটুকুই নিঃস্বার্থভাবে দান করে। এই স্বল্প হলেও সর্বস্ব ত্যাগের মনোভাবই কবিকে মুগ্ধ করেছে এবং এই দানকে তিনি ‘দানের সেরা দান’ বলে মনে করেন।
৬। পাঠ থেকে অন্তমিলযুক্ত শব্দগুলো লেখো।
পরে – ওরে
আলো – ভালো
রাতি – ভাতি
আজ – লাজ
মান – দান
শশী – ভালোবাসি (বাস্ব তোরেই ভালো)
খ – ভাষা-অধ্যয়ন (ব্যবহারিক ব্যাকরণ)
৭। নীচের শব্দগুলোর সমার্থক শব্দ লেখো।
তপন – সূর্য, রবি, দিবাকর, ভাস্কর
আলো – জ্যোতি, দীপ্তি, প্রভা, কিরণ
শশী – চাঁদ, চন্দ্র, সুধাকর, শশাঙ্ক
৮। বিপরীতার্থক শব্দ লেখো।
মান – অপমান, অমর্যাদা
আজ – কাল, গতকল্য, আগামীকল্য
কালো – সাদা, ফর্সা, শাদা
দুঃখী – সুখী, আনন্দিত
৯। বাক্য রচনা করো।
পাতা – গাছের পাতা সবুজ।
বাদল – বাদলের দিনে প্রকৃতি শান্ত থাকে।
মুঠি – সে এক মুঠি চাল ভিক্ষা দিল।
ভিক্ষা – জোনাকির আলো যেন দুঃখীজনের ভিক্ষা মুঠি।
সেরা – রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বাংলা সাহিত্যের সেরা কবি।
জোনাকি – গ্রীষ্মের রাতে মাঠে জোনাকি জ্বলে।
১০। নীচের শব্দের সংস্কৃত রূপকে অর্ধতৎসম রূপে পরিবর্তন করো।
ভক্তি – ভকতি
মুক্তা – মুকুতা
রৌপ্য – রূপো
রত্ন – রতন
ক্ষুধা – ক্ষিদে
গৃহিনী – গিন্নি
১১। নীচের শব্দের সংস্কৃত রূপকে তদ্ভব রূপে পরিবর্তন করো।
সর্প – সাপ
কর্ম – কাম
হস্ত – হাত
কর্ণ – কান
অদ্য – আজ
দন্ত – দাঁত
১২। ‘জোনাকি’ কবিতাটি থেকে ‘তৎসম’ ও ‘তদ্ভব’ শব্দগুলো বেছে বের করে লেখো।
তৎসম শব্দ: তপন, শশী, লাজ, পূজা, দুঃখী, ভিক্ষা
তদ্ভব শব্দ: জোনাকি, আঁধার, পাতা, ভাতি, আজ
তোমার জানা ‘তৎসম’ ও ‘তদ্ভব’ শব্দের একটি তালিকা:
তৎসম শব্দ: চন্দ্র, সূর্য, হস্ত, মৎস্য, চরণ
তদ্ভব শব্দ: চাঁদ, সুরুজ, হাত, মাছ, চরণ (পা)
১৩। তুমি দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে ইংরেজি শব্দগুলো ব্যবহার করো সেই শব্দগুলো নীচে ভাগে ভাগে লেখো।
শিক্ষা সম্বন্ধীয়: স্কেল, পেন, বোর্ড, ক্লাস, টিচার
খেলা সম্বন্ধীয়: ক্রিকেট, ফুটবল, গোল, ব্যাট, বল
যানবাহন: স্কুটার, কার, বাস, সাইকেল, ট্রেন
সাজ-পোশাক: ফ্রক, শার্ট, প্যান্ট, সুট, টাই
আসবাব: টেবিল, চেয়ার, বেড, আলমারি, সোফা
বাসন-বর্তন: কাপ, গ্লাস, প্লেট, ডিশ, ফর্ক
১৪। এক কথায় প্রকাশ করো।
ভিক্ষার অভাব – দুভিক্ষ
যা বলা হয়েছে – উক্ত
জ্বল জ্বল করে যাহা – জোনাকি
মান আছে যার – মানী
১৫। ‘জোনাকি’ কবিতাটিতে তোমরা ‘পাতার পরে, আঁধার রাতি, বুকটি ভ’রে, চাঁদের ভাতি’ এই শব্দসমষ্টি বা বাগ্ধারাগুলো পেয়েছ। এখানে পাতা, আঁধার, বুক শব্দগুলো বিশিষ্ট অর্থে প্রয়োগ করে বাক্য রচনা করো।
ওত পাতা (লুকিয়ে গোপন কথা শোনা) – কারো ব্যক্তিগত কথোপকথনে ওত পাতা উচিত নয়।
আঁধার ঘরের মানিক (একান্ত আপনজন) – নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া ছেলেটি ফিরে আসায় সে যেন মায়ের আঁধার ঘরের মানিক।
বুকের পাটা (অতিরিক্ত সাহস) – এত বড়ো ঝুঁকি নেওয়ার বুকের পাটা ক’জনের থাকে?
বুক ফুলিয়ে (গর্বের সঙ্গে) – খেলা জেতার পর ছেলেরা বুক ফুলিয়ে হেঁটে গেল।
বুক ভাঙা (হতাশ/খুব দুঃখী) – পরীক্ষা খারাপ হওয়ায় তার বুক ভেঙে গেল।
বুক বাঁধা (সাহস/আশা) – বাবার কথায় সে আবারও নতুন করে বুক বাঁধল।
চাঁদের হাট (সুন্দরের সমাবেশ) – পূজার অনুষ্ঠানে যেন এক চাঁদের হাট বসেছিল।
আমাবস্যার চাঁদ (অতি দুর্লভ/দর্শন) – ব্যস্ততার কারণে বন্ধুর দেখা পাওয়া এখন আমাবস্যার চাঁদ হয়ে উঠেছে।
গ – জ্ঞান-সম্প্রসারণ
১৬। বাক্যগুলো পড়ো, তারপর দলে আলোচনা করে প্রত্যেকে নিজের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করো ও লেখো।
(ক) রাতে পাতার ওপর জোনাকির মৃদু আলোকের প্রকাশ।
আলোচনা ও অভিজ্ঞতা: রাতের বেলায় যখন চারপাশ ঘন অন্ধকারে ঢেকে থাকে, তখন হঠাৎ পাতার ওপর বা ঘাসের ডগায় জোনাকির মৃদু আলো দেখলে মন আনন্দে ভরে যায়। মনে হয় যেন প্রকৃতি নিজেই তারার কণা ছড়িয়ে দিয়েছে। এই আলো খুবই কোমল, বড়ো নয়, কিন্তু অন্ধকারে তার উপস্থিতিই এক অপূর্ব স্নিগ্ধতা এনে দেয়।
(খ) ছোটো কাজে কোনো অপমান নেই।
আলোচনা ও অভিজ্ঞতা: ছোটো কাজ মানেই খারাপ বা অসম্মানজনক নয়। জোনাকি যেমন তার মৃদু আলো দিয়েও ‘দানের সেরা দান’ হয়, তেমনি যে কোনো কাজই, তা যত ছোটোই হোক না কেন, যদি আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে করা হয়, তবে তা মর্যাদার। কোনো কাজকেই ছোটো ভাবা উচিত নয়; নিজের কাজকে সম্মান করতে জানাটাই আসল মান।
(গ) ভালোবাসার জন সব সময়ে কাছে থাকে।
আলোচনা ও অভিজ্ঞতা: কবি জোনাকিকে ‘কাছের জন’ বলেছেন। যারা আমাদের ভালোবাসে বা যাদের আমরা ভালোবাসি, তাদের উপস্থিতি বড়ো বা উজ্জ্বল না হলেও চলে। তারা বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে ছায়ার মতো আমাদের পাশে থাকে—যাতে আমরা আশা ও ভরসা পাই। জোনাকির মৃদু আলো যেমন অন্ধকার রাতেও কাছে থেকে শক্তি যোগায়, প্রিয়জনের সামান্য উপস্থিতি বা স্মৃতিও তেমনি জীবনে বড়ো অবলম্বন হয়ে ওঠে।
১৮। ‘তুমি নও গো ঋণী কারো কাছে’, জোনাকি কারো কাছে ঋণী নয় কেন বলা হয়েছে?
উত্তর: জোনাকি সূর্য বা চন্দ্রের মতো বড়ো আলোর ওপর নির্ভরশীল নয়। সে তার আপন জীবন পূর্ণ করে আপন আলো জ্বালায়। তার এই আলো তার নিজের ভেতরের শক্তি থেকে আসে, যার আদেশ সে নিজেই পায়। অর্থাৎ, জোনাকি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং আত্মনির্ভরশীল, তাই তার অস্তিত্ব বা দানের জন্য তাকে অন্য কারো করুণা বা সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হয় না।
ঘ – প্রকল্প
১৯। প্রকৃতির কোন জিনিসটি তোমার সবচেয়ে প্রিয়। সেটির বিষয়ে একটি অনুচ্ছেদ লেখো। কেন তা প্রিয় সে কথাও লিখবে।
উত্তর (উদাহরণ):
আমার প্রিয় প্রকৃতি – বৃষ্টি ⛈️
প্রকৃতির নানা রূপের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় হলো বৃষ্টি। আকাশে মেঘ জমে আসার শব্দ, বিদ্যুতের চমক আর তারপর ঝমঝম করে বৃষ্টি নামার দৃশ্য আমাকে গভীর আনন্দ দেয়। বৃষ্টি এলে প্রকৃতির সমস্ত ক্লান্তি যেন ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যায়। চারিদিকে এক স্নিগ্ধ, শান্ত পরিবেশ তৈরি হয় এবং ধুলোয় ঢাকা গাছপালা সতেজ হয়ে ওঠে। মাটির সোঁদা গন্ধ, যা কেবল বৃষ্টির পরই পাওয়া যায়, আমার মনকে এক মুহূর্তে শান্তিতে ভরিয়ে তোলে।
বৃষ্টি আমার প্রিয়, কারণ এটি কেবল জল নয়, এটি যেন জীবনের প্রতীক। এর মধ্যে যেমন প্রচণ্ডতা আছে, তেমনি আছে সৃষ্টির ক্ষমতা। বৃষ্টি কৃষকদের মুখে হাসি ফোটায়, গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে মুক্তি দেয় এবং প্রকৃতিকে নতুন জীবন দান করে। বৃষ্টি দেখলে মনে হয়—জীবনও ঠিক তেমনি, ছোটো-বড়ো দুঃখের পরে আবার নতুন করে বাঁচার আশা ও আনন্দ ফিরে আসে। বৃষ্টির এই সজীবতা, শীতলতা ও আশা জাগানোর ক্ষমতা-ই আমাকে মুগ্ধ করে।
