জাগো, জাগো ভারত-সন্তান Chapter 4, Class 8, SEBA, New Syllabus

পাঠ-৪: জাগো, জাগো ভারত-সন্তান (প্রশ্ন ও উত্তর)

ক – পাঠভিত্তিক (Text-based)

২। উত্তর বলো ও লেখো। (Say and write the answers.)

(ক) কবি এখানে কাকে, কেন জেগে উঠতে বলেছেন?

উত্তর: কবি এখানে ভারত-সন্তানদের জেগে উঠতে বলেছেন। কারণ, স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতবর্ষ তখন পর-পদাঘাতে দলিতা, লাঞ্ছিতা, দীনা কাঙ্গালিনী এবং অলসতা ও কাল-ঘুমঘোরে আচ্ছন্ন ছিল। চীন ও জাপানের মতো দেশ যখন নবীন আলোয় জেগে উঠেছে, তখন ভারতকেও তার শত বরষের অলসতা ঝেড়ে ফেলে স্বদেশ-স্বজাতির উন্নতির অভিযানে যোগ দিতে এবং দেশমাতার সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখতে জেগে ওঠা প্রয়োজন।


(খ) কালঘুম না ভাঙলে ভারতের কী অবস্থা হবে?

উত্তর: কাল-ঘুমঘোর বা অলসতা না ভাঙলে ভারতবর্ষ পর-পদাঘাতে দলিতা, লাঞ্ছিতা, দীনা কাঙ্গালিনী হয়েই থাকবে। ভারতবাসীরা নিজের বাসভূমে পরবাসী হয়ে থাকবে এবং তাদের আকাশ, বাতাস বা কোনো কিছুই আর তাদের নিজের থাকবে না।


(গ) কোটি কণ্ঠের বন্দেমাতরম ধ্বনিতে কী হবে?

উত্তর: কোটি কণ্ঠস্বরে উচ্চৈঃস্বরে গাওয়া বন্দেমাতরম ধ্বনি শুনে স্বরগে (স্বর্গে) তার প্রতিধ্বনি হবে। এই মহান ধ্বনির প্রভাবে শত বরষের অলস পরাণ (ভারতবাসীর মন) জেগে উঠবে।


৫। শূন্যস্থান পূর্ণ করো।

লোহিত বরনে পূরব গগনে, উদিত তরুণ তপন রে!

জাগিছে চীন, জেগেছে জাপান, নবীন আলোক রে!


৬। প্রসঙ্গের সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যাখ্যা করো।
কোটি কণ্ঠস্বরে গাও উচ্চৈঃস্বরে বন্দেমাতরম্ রে!
শুনিয়া সে ধ্বনি স্বরগে অমনি হবে প্রতিধ্বনি রে!
শত বরষের অলস পরাণ, জাগিবে জাগিবে রে!

Ans। ব্যাখ্যা: কবি পরাধীনতার কাল-ঘুমঘোরে আচ্ছন্ন ভারত-সন্তানদের জেগে ওঠার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি চান, ভারতবাসী তাদের অলস পরাণ (মন) ঝেড়ে ফেলে একতাবদ্ধ হোক। তাই কবি বলছেন, কোটি কোটি ভারতবাসী যেন একই সঙ্গে উচ্চস্বরে ‘বন্দেমাতরম্’ ধ্বনি দেয়। এই ধ্বনি এত শক্তিশালী যে তা পৃথিবীতে প্রতিধ্বনিত হওয়ার পাশাপাশি স্বর্গেও প্রতিধ্বনিত হবে। এই মহৎ ধ্বনির জাগরণে শত বছরের অলসতা ভারতবাসীর মন থেকে দূর হবে এবং তারা দেশমাতার আহ্বানে নিজেদের কর্তব্য পালনে উদ্যোগী হবে।


খ- ভাষা-অধ্যয়ন (ব্যবহারিক ব্যাকরণ)

৭। নীচের উদাহরণ অনুযায়ী দুটি করে বাক্য লেখো।

(ক) সমাপিকা ক্রিয়া

যে ক্রিয়াপদ দ্বারা বাক্যের অর্থ শেষ হয়ে যায় এবং অন্য ক্রিয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে না, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে।

তারা মাঠে খেলে।

আমি বইটি পড়লাম।


(খ) অসমাপিকা ক্রিয়া

যে ক্রিয়াপদ দ্বারা বাক্যের অর্থ শেষ হয় না, অন্য ক্রিয়াপদের অপেক্ষা করতে হয় অর্থাৎ আরও কিছু বলবার আকাঙ্ক্ষা থাকে তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে।

সে গান গিয়ে থেমে গেল।

আমরা বন্দেমাতরম ধ্বনি শুনে আনন্দে মেতে উঠলাম।


(গ) সকর্মক ক্রিয়া (Transitive Verb):

যে ক্রিয়ার কর্মপদ থাকে তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে।

মা রান্না করছেন।

ছাত্ররা কবিতা লিখছে।


(ঘ) অকর্মক ক্রিয়া

যে ক্রিয়ার কর্মপদ নেই তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে।

সে হাসে।

সূর্য ওঠে।


৮। বাক্য রচনা করো।

লোহিত: সূর্যোদয়ের আগে পূরব গগন লোহিত বর্ণ ধারণ করে।

লাঞ্ছিতা: পরাধীন দেশমাতা লাঞ্ছিতা হয়ে আছে।

প্রতিধ্বনি: পাহাড়ের দেওয়ালে আওয়াজ করলে তার প্রতিধ্বনি শোনা যায়।

অলস: অলস হয়ে বসে থাকলে জীবনে উন্নতি করা যায় না।

নবীন: নবীন প্রজন্মই দেশের ভবিষ্যৎ।


৯। নীচের বাক্যটি ভালো করে পড়ো এবং প্রশ্নের উত্তর দাও।
“তীর্থক্ষেত্রে রাজা নিজহস্তে ভান্ডার থেকে দরিদ্রকে ধন দিচ্ছেন।”

(ক) কে দিচ্ছেন? – রাজা – কর্তৃ কারক
(খ) কি দিচ্ছেন? – ধন – কর্ম কারক
(গ) কি দিয়ে দিচ্ছেন? – নিজহস্তে – করণ কারক
(ঘ) কাকে দিচ্ছেন? – দরিদ্রকে – সম্প্রদান কারক
(ঙ) কোথা হতে দিচ্ছেন? – ভান্ডার থেকে – অপাদান কারক
(চ) কোথায় দিচ্ছেন? – তীর্থক্ষেত্রে – অধিকরণ কারক

১০। নীচের বাক্যটি থেকে বিভিন্ন কারকের বিভক্তির পরিচয় বের করো।
“তীর্থক্ষেত্রে রাজা নিজহস্তে ভান্ডার থেকে দরিদ্রকে ধন দিচ্ছেন।”

রাজা — কর্তৃ কারক — শূন্য বিভক্তি

ধন — কর্ম কারক — শূন্য বিভক্তি

নিজহস্তে — করণ কারক — ‘এ’ বিভক্তি (বা অনুসর্গ ‘দ্বারা’)

দরিদ্রকে — সম্প্রদান কারক — ‘কে’ বিভক্তি

ভান্ডার থেকে — অপাদান কারক — ‘থেকে’ অনুসর্গ

তীর্থক্ষেত্রে — অধিকরণ কারক — ‘এ’ বিভক্তি (বা ‘তে’)


১১। সন্ধি করো। (Perform Sandhi.)

দুঃ + ছেদ্য — দুশ্ছেদ্য — চ বা ছ পরে থাকলে বিসর্গ স্থানে শ্ হয়।

পুনঃ + আদেশ — পুনরাদেশ — র পরে থাকলে বিসর্গ স্থানে র্ হয়।

নভঃ + তল — নভস্তল — ত পরে থাকলে বিসর্গ স্থানে স্ হয়।

নিঃ + অন্তর — নিরন্তর — অ, আ ছাড়া অন্য স্বরের পরের বিসর্গ স্থানে র্ হয়।

মনঃ + কাম — মনস্কাম — ক বা প পরে থাকলে অ-কারের পরবর্তী বিসর্গ স্থানে স্ হয়।

তেজঃ + ময় — তেজোময় — ব্যঞ্জনবর্ণ পরে থাকলে অ-কারের পরবর্তী বিসর্গ স্থানে ও হয়।


১২। সন্ধি করো। (Perform Sandhi.)

সম্ + বাদ — সংবাদ — অন্তঃস্থবর্ণ পরে থাকলে ম্-স্থানে অনুস্বার হয়।

প্রশন্ + সা — প্রশংসা — উষ্মবর্ণ পরে থাকলে পদমধ্যস্থিত ন্ স্থানে অনুস্বার হয়।

কিম্ + নর — কিন্নর — অন্তঃস্থবর্ণ পরে।

দন্ + শন — দংশন — উষ্মবর্ণ পরে।

প্রিয়ম্ + বদা — প্রিয়ংবদা — অন্তঃস্থবর্ণ পরে থাকলে ম্-স্থানে অনুস্বার হয়।

সিন্ + ধু — সিন্ধু — অন্যান্য নিয়ম।

সম্ + লগ্ন — সংলগ্ন — অন্তঃস্থবর্ণ পরে থাকলে ম্-স্থানে অনুস্বার হয়।

সম্ + হার — সংহার — উষ্মবর্ণ পরে থাকলে ম্-স্থানে অনুস্বার হয়।


১৩। পাঠ থেকে খুঁজে নীচের শব্দগুলোকে বিপরীত লিঙ্গে পরিবর্তন করো।

দলিত — দলিতা

লাঞ্ছিত — লাঞ্ছিতা

দীন — দীনা

কাঙ্গাল — কাঙ্গালিনী


১৪। সমার্থক শব্দ লেখো।

তপন — সূর্য, রবি, ভানু

আকাশ — গগন, ব্যোম, নভঃ

প্রভাত — ঊষা, ভোর, সকাল


১৫। এক কথায় প্রকাশ করো।

যে পরের ভূমিতে বাস করে — পরবাসী

যে কাজ করতে চায় না — অলস


১৬। এবার এই ব্যক্তিবাচক শব্দ অর্থাৎ পুরুষ দিয়ে বাক্য গঠন করো।

উত্তম পুরুষ: আমি রোজ স্কুলে যাই।

আমরা একত্রে খেলি।

মধ্যম পুরুষ: তুমি বইটি পড়ো।

তোমরা খেলা দেখো।

প্রথম পুরুষ: তিনি আজ আসবেন।

তাঁরা গান গাইছেন।


১৭। নীচের বাক্যগুলোয় ব্যবহৃত বিশেষ্য ও সর্বনামের বচন ভেদে পুরুষ নির্দেশ করো।

সূর্য উঠেছে — সূর্য — একবচন — প্রথম পুরুষ

ভারতবর্ষ জেগে উঠেছে — ভারতবর্ষ — একবচন — প্রথম পুরুষ

তোমাদের খাওয়া হয়ে গেছে? — তোমাদের — বহুবচন — মধ্যম পুরুষ

আমি রোজ স্কুলে যাই — আমি — একবচন — উত্তম পুরুষ

ওরা খুব ভালো — ওরা — বহুবচন — প্রথম পুরুষ

শিক্ষকেরা আমাদের গুরুজন — শিক্ষকেরা — বহুবচন — প্রথম পুরুষ


১৮। বিভিন্ন কারকে শূন্য বিভক্তি প্রয়োগ করে বাক্য রচনা করো।

কর্তৃ কারক: শিক্ষক ক্লাসে পড়াচ্ছেন।

কর্ম কারক: সে গান শুনছে।

করণ কারক: হাত দিয়ে লিখছে।

অপাদান কারক: গাছ থেকে ফল পড়ছে।

অধিকরণ কারক: বাড়িতে কেউ নেই।


গ – জ্ঞান-সম্প্রসারণ (Knowledge Expansion)

২০। উপরের কবিতা ভালো করে বুঝে নীচের পংক্তি দুটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

নানা ভাষা নানা মত, নানা পরিধান,
বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান;

তাৎপর্য: এই পংক্তিগুলি কবি অতুলপ্রসাদ সেনের দেশাত্মবোধক কবিতার অংশ। কবি বলেছেন যে ভারতবর্ষ বহু ভাষা, বহু মত (ধর্ম, বিশ্বাস) এবং বহু প্রকার পোশাক-পরিচ্ছদের (পরিধান) দেশ। অর্থাৎ, এই দেশে প্রচুর বৈচিত্র্য (বিবিধতা) বিদ্যমান। কিন্তু এই বিবিধতা ও বৈচিত্র্যের মাঝেই ভারতবাসীরা এক মহান মিলনের বন্ধনে আবদ্ধ। এই ঐক্যবদ্ধতাই হলো ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি এবং এই জাতীয় উত্থান দেখে জগতের মানুষ বিস্মিত হবে। কবি এই মিলনের বার্তা দিয়ে ভারতবাসীকে সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে দেশের জয়ে উদ্যোগী হতে আহ্বান জানিয়েছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *