উপমন্যু , Chapter – 11
২। উত্তর বলো ও লেখো।
প্রশ্ন (ক): উপমন্যু চরিত্র আলোচনা করে তার চরিত্রে কী কী শিক্ষণীয় আছে লিপিবদ্ধ করো।
উত্তর:
উপমন্যু ছিলেন আয়োদধৌম্যের একনিষ্ঠ ও গুণবান শিষ্য। তাঁর চরিত্রে গুরুভক্তি, সহনশীলতা, সত্যবাদিতা, কর্তব্যপরায়ণতা ও বিনয় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি গুরুর প্রতিটি আদেশ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছিলেন। গুরু যখন তাঁকে ভিক্ষান্ন, দ্বিতীয়বার ভিক্ষা, দুধ, এমনকি ফেন পান করতেও নিষেধ করেছিলেন, তখন তিনি কোনো আপত্তি করেননি। গুরুর অনুমতি ছাড়া দেববৈদ্য অশ্বিনীকুমারদের দেওয়া পিঠাও গ্রহণ করেননি। কষ্ট, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মধ্যেও তিনি ধৈর্য হারাননি। তাঁর সত্যবাদিতা ও বিনয় তাঁকে আরও মহান করেছে। উপমন্যুর চরিত্র থেকে শেখা যায়—গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা, ধৈর্য, সততা ও আনুগত্য জীবনের মূল শিক্ষা।
—
প্রশ্ন (খ): উপাধ্যায় যখন গোরু চরানোর সময় উপমন্যুকে সকল প্রকার আহার বারণ করলেন, তখন উপমন্যু কী খেয়েছিলেন? এর পরিণতি কী দাঁড়িয়েছিল? উপমন্যু অন্ধত্ব থেকে কীভাবে মুক্তি পেয়েছিলেন?
উত্তর:
গুরু আয়োদধৌম্য যখন উপমন্যুকে ভিক্ষান্ন, দ্বিতীয়বার ভিক্ষা ও দুগ্ধ পান করতে নিষেধ করেন, তখন উপমন্যু ক্ষুধা নিবারণের জন্য বৎসদের মুখ থেকে বের হওয়া ফেন পান করতে শুরু করেন। পরে গুরু সেই ফেন পান করাও নিষিদ্ধ করেন। তখন তিনি ক্ষুধার তাড়নায় অরণ্যে গিয়ে অর্কপত্র অর্থাৎ আকন্দপাতা খেয়ে ফেলেন। এর ফলে তাঁর চোখে দোষ জন্মায় এবং তিনি অন্ধ হয়ে কূপে পড়ে যান। পরে গুরুর আদেশে তিনি ঋগ্বেদের স্তবপাঠ করে দেববৈদ্য অশ্বিনীকুমার যুগলের আরাধনা করেন। তাঁদের কৃপায় তিনি দিব্য দৃষ্টি ফিরে পান এবং অন্ধত্ব থেকে মুক্ত হন।
—
প্রশ্ন (গ): অশ্বিনীকুমার উপমন্যুকে পিঠা খেতে দিলে উপমন্যু কী বলেছিলেন? এতে খুশি হয়ে অশ্বিনীকুমারদ্বয় তাকে কী আশীর্বাদ করেছিলেন?
উত্তর:
অশ্বিনীকুমারদ্বয় উপমন্যুর স্তবে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে অপূপ বা পিঠা খেতে বলেন। কিন্তু উপমন্যু বিনয়ের সঙ্গে বলেন, “আপনারা যাহা বলেন তা কখনো বৃথা হয় না, কিন্তু আমি গুরুর অনুমতি ছাড়া পিঠা খেতে পারি না।” তাঁর এই গুরুভক্তি ও আনুগত্য দেখে অশ্বিনীকুমারদ্বয় অত্যন্ত প্রীত হন। তাঁরা আশীর্বাদ করেন যে, তাঁর গুরুর দন্ত লৌহময় হলেও তাঁর দন্ত হিরণ্ময় হবে, তিনি পুনরায় দৃষ্টি ফিরে পাবেন এবং জীবনে শ্রেয়ঃপ্রাপ্ত হবেন।
প্রশ্ন (ঘ): আয়োদধৌম্য উপমন্যুকে কীভাবে পরীক্ষা করেছিলেন? পরীক্ষায় উপমন্যু সাফল্য লাভ করেছিলেন কি?
উত্তর:
আয়োদধৌম্য উপমন্যুর গুরুভক্তি ও আনুগত্য যাচাই করার জন্য তাঁকে গোরক্ষার দায়িত্ব দেন এবং বিভিন্ন আহার নিষিদ্ধ করে পরীক্ষা নেন। প্রথমে উপমন্যুর সংগৃহীত ভিক্ষান্ন নিজে খেয়ে নেন, তারপর দ্বিতীয়বার ভিক্ষা করতে বারণ করেন। পরে দুধ পান করতেও নিষেধ করেন এবং শেষে বৎসদের ফেন পান করাও নিষিদ্ধ করেন। উপমন্যু কোনো আদেশ অমান্য করেননি। তিনি গুরুর প্রতি সম্পূর্ণ ভক্তি ও আনুগত্য প্রদর্শন করেছিলেন। ফলস্বরূপ তিনি দেববৈদ্য অশ্বিনীকুমারদের কৃপায় দিব্য দৃষ্টি, স্বর্ণদন্ত ও গুরুর আশীর্বাদে সর্বমঙ্গললাভ করেন। অতএব, উপমন্যু পরীক্ষায় সম্পূর্ণ সাফল্য লাভ করেছিলেন।
৩। পাঠের কঠিন শব্দের অর্থ
– উপাধ্যায় : গুরু, শিক্ষক
– গোরক্ষা : গরু চরানো বা রক্ষা করা
– দিবাভাগে : দিনের বেলায়
– সায়াহ্নে বা প্রদোষভাগে : সন্ধ্যায়
– প্রত্যাগমন : ফিরে আসা
– স্থূলকায় : স্থূল শরীর, মোটা
– ভিক্ষালব্ধ : ভিক্ষা করে যা পাওয়া যায়
– উদরপূর্তি : পেট ভরা
– নিবেদন : বিনীতভাবে কিছু বলা বা জানানো
– বৃত্তি প্রতিরোধ : জীবিকা নির্বাহে বাধা দেওয়া
– অনুজ্ঞা : আদেশ, অনুমতি
– ফেন উদ্গার : গরুর বাছুর দুধ পান করার সময় মুখে যে ফেনা ওঠে
– প্রতিষিদ্ধ : নিষেধ করা হয়েছে এমন
– অর্কপত্র : আকন্দ গাছের পাতা
– অভ্যবহার : ভক্ষণ, খাওয়া
– অস্তাচলাবলম্বী : অস্তমিত
– অন্বেষণ : খোঁজ করা
– সমভিব্যাহারে : সঙ্গে নিয়ে
– উচ্চৈঃস্বরে : উচ্চস্বরে, জোরে
– অশ্বিনীকুমার যুগল : স্বর্গের যমজ চিকিৎসক
– অপূপ : পিঠা, মালপোয়া জাতীয় মিষ্টি খাবার
– হিরণ্ময় : সোনার মতো
– আদ্যোপান্ত : গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত
৪। শুদ্ধ অংশ চিহ্নিত করো
– উপমন্যু আয়োদধৌম্যের শিষ্য ছিলেন।
– আকন্দ পাতা খেয়ে অন্ধ হয়ে উপমন্যু কূপে পতিত হয়েছিলেন।
– উপমন্যু উপাধ্যায়ের আদেশ অনুসারে ঋগ্বেদ বাক্যদ্বারা অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের স্তব আরম্ভ করলেন।
– অশ্বিনীকুমারদ্বয় উপমন্যুর স্তবে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে অপূপ অর্থাৎ পিঠা খেতে দিয়েছিলেন।
– অশ্বিনীকুমারদ্বয় দেববৈদ্য অর্থাৎ দেবতাদের কবিরাজ ছিলেন।
৫। নীচে সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য বুঝে নাও
– সর্প — সাপ
– হস্ত — হাত
– কৃষ্ণ — কালো
– রাত্রি — রাত
– চক্ষু — চোখ
– দুগ্ধ — দুধ
৬। চলিত ও সাধু ভাষায় সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া পদের ব্যবহার
– করিতেছে — করছে
– করিয়াছে — করেছে
– করিলাম — করলাম
– করিতাম — করতাম
– করিবে — করবে
– পড়িয়া — পড়ে
– চলিতে — চলতে
– বলিবার — বলার
– ধরিবার — ধরার
– করিবার — করার
৭। সর্বনাম পদ সাধু ও চলিত ভাষায়
– তাহারা — তারা
– যাহারা — যারা
– কাহারা — কারা
– তাহার — তার
– যাহার — যার
– এই — এ
৮। নিম্নলিখিত বাক্যগুলো শুদ্ধরূপে লেখো
(ক) আমি যখন যাইতেছিলাম তখন সে বাঁশি বাজাচ্ছিল।
– সাধু : আমি যখন যাইতেছিলাম তখন সে বাঁশি বাজাইতেছিল।
– চলিত : আমি যখন যাচ্ছিলাম তখন সে বাঁশি বাজাচ্ছিল।
(খ) সে পড়িতে বসিয়াই কাঁদতে শুরু করল।
– সাধু : সে পড়িতে বসিয়াই ক্রন্দন করিতে শুরু করিল।
– চলিত : সে পড়তে বসেই কাঁদতে শুরু করল।
(গ) তাঁহার কথা মন দিয়ে শুনবে।
– সাধু : তাঁহার কথা মন দিয়া শুনিবে।
– চলিত : তাঁর কথা মন দিয়ে শুনবে।
(ঘ) আমি খেতে গিয়ে জিনিসটি লক্ষ করিলাম।
– সাধু : আমি খাইতে গিয়া জিনিসটি লক্ষ করিলাম।
– চলিত : আমি খেতে গিয়ে জিনিসটি লক্ষ করলাম।
৯। বিপরীতার্থক শব্দ
– শিষ্য — গুরু বা উপাধ্যায়
– স্থূলকায় — কৃশকায় বা রোগা
– গ্রহণ — বর্জন বা দান
– আহার — অনশন বা উপবাস
– সুশীল — দুঃশীল বা অসৎ
– অধিক — কম বা স্বল্প
– প্রস্থান — আগমন বা প্রত্যাবর্তন
– উচ্চৈঃস্বরে — নিম্নস্বরে বা ধীরে
১০। অর্থের পার্থক্য দেখিয়ে বাক্য রচনা করো
– আদেশ : নির্দেশ, হুকুম — গুরুর আদেশ শিরোধার্য।
– আদিষ্ট : আজ্ঞা প্রাপ্ত — উপমন্যু গুরু কর্তৃক আদিষ্ট হইয়াছিলেন।
– কূপ : কুয়ো — অন্ধকারে পথ চলতে গিয়ে সে কূপে পতিত হল।
– কুপিত : ক্রুদ্ধ — উপাধ্যায় মনে করিলেন, উপমন্যু হয়তো কুপিত হইয়াছে।
১১। অশুদ্ধ সংশোধন করো
– প্রেরন — প্রেরণ
– বিলক্ষন — বিলক্ষণ
– বাক্যনুসারে — বাক্যানুসারে
– সুশিল — সুশীল
– স্থুল — স্থূল
– প্রদাণ — প্রদান
– আদিস্ট — আদিষ্ট
– অপুপ — অপূপ
– জিবীকা — জীবিকা
– অন্বেষন — অন্বেষণ
১২। সন্ধি-বিচ্ছেদ করো
– বাক্যানুসারে : বাক্য + অনুসারে
– প্রত্যাগমন : প্রতি + আগমন
– ভিক্ষান্ন : ভিক্ষা + অন্ন
– পুরোভাগ : পুরঃ + ভাগ
– অস্তাচল : অস্ত + অচল
– প্রত্যাগত : প্রতি + আগত
– অন্বেষণ : অনু + এষণ
– আদ্যোপান্ত : আদ্য + উপান্ত
১৩। কারক-বিভক্তি নির্ণয় করো
(ক) আমি ভিক্ষালব্ধ অন্নদ্বারা উদরপূর্তি করি।
– পদ : ভিক্ষালব্ধ অন্নদ্বারা
– কারক : করণ কারক
– বিভক্তি : দ্বারা অনুসর্গে তৃতীয়া বিভক্তি
(খ) উপমন্য আর এইরূপ করিব না বলিয়া প্রতিজ্ঞা করিল।
– পদ : প্রতিজ্ঞা
– কারক : কর্ম কারক
– বিভক্তি : শূন্য বিভক্তি
(গ) তোমার ফেন পান করা উচিত নহে।
– পদ : ফেন পান
– কারক : কর্ম কারক
– বিভক্তি : শূন্য বিভক্তি
(ঘ) তোমার দন্ত সকল হিরণ্ময় হইবে।
– পদ : হিরণ্ময়
– কারক : কর্তৃ কারক
– বিভক্তি : শূন্য বিভক্তি
১৪। বাক্যের প্রকার নির্ণয় করো
– উপমন্যু গোরক্ষা করিতে লাগিলেন — সরল বাক্য
– উপমন্যু ভিক্ষা করিও না — সরল বাক্য
– যে পরিশ্রম করে সে জীবন প্রতিষ্ঠিত হয় — জটিল বাক্য
– সে যে ক্ষুধার্ত তা তার মুখ দেখেই বোঝা যায় — জটিল বাক্য
– তিনি না খেয়ে থাকবেন, তবু ভিক্ষা করবেন না — যৌগিক বাক্য
– আমি বাজারে গেলাম ও মাছ-সবজি কিনলাম — যৌগিক বাক্য
১৫। প্রতিটি প্রকারের একটি করে উদাহরণ
– সরল বাক্য : আমি রোজ সকালে বই পড়ি।
– জটিল বাক্য : যখন বৃষ্টি আসে, তখন আমি ছাতা ব্যবহার করি।
– যৌগিক বাক্য : আকাশ মেঘলা ছিল, কিন্তু বৃষ্টি হলো না।
১৬। নীচের অনুচ্ছেদটি চলিত ভাষায় লেখো
মানুষ ফলমূল, লতাগুল্মাদি খায় বটে, কিন্তু আমার সন্দেহ হয় যে, প্রাচীন কালে কখনও কোনো মানুষকে ঘাস খেতে দেখেছি কি না, তা বলতে পারি না। মানুষেরা খুব যত্ন করে নিজের বাগানে ঘাস তৈরি করে। আমার মনে হয়, ওরা ঘাস খেয়ে থাকে। তা না হলে ঘাসের প্রতি তাদের এত যত্ন কেন?
১৭। সাধু ভাষায় দশটি বাক্য
১। এক্ষণে আমি বিদ্যালয় হইতে নিজ গৃহে প্রত্যাগমন করিলাম।
২। তিনি অতি প্রত্যুষে গাত্রোত্থানপূর্বক অধ্যয়ন করিতে বসিলেন।
৩। দীন-দুঃখী দেখিলে তাঁহার অন্তঃকরণে দয়ার সঞ্চার হইত।
৪। এক্ষণে আমরা তাঁহার আদেশানুসারে কার্য করিব।
৫। সূর্যদেব অস্তাচলে গমন করিলে দিবা অবসান হইল।
৬। দরিদ্রের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা আমাদের কর্তব্য।
৭। সে নিরন্তর কেবল খেলাইয়া সময় নষ্ট করিত।
৮। বালকেরা প্রাঙ্গণে সমবেত হইয়া ক্রীড়া করিতেছিল।
৯। তাহাদের এই প্রকার আচরণ বিধেয় নহে।
১০। আমি তোমাকে এই পুস্তকের সমুদয় বৃত্তান্ত কহিব।
