পাঠ – ১২: সুখ (কামিনী রায়)
পাঠ – ১২: সুখ (কামিনী রায়)
ক – পাঠভিত্তিক ক্রিয়াকলাপ
১। কবিতাটি শুদ্ধ উচ্চারণে পড়ো ও আবৃত্তি করো।
* উত্তর: (এটি একটি আবৃত্তিমূলক কাজ, যার উত্তর লেখা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদের কবিতাটি শুদ্ধ উচ্চারণে আবৃত্তি করার জন্য বলা হয়েছে।)
২। উত্তর দাও।
(ক) পরের জন্য কী ত্যাগ করতে হয়?
* উত্তর: পরের কারণে (পরের জন্য) নিজের স্বার্থ, জীবন এবং মন সকলি ত্যাগ করতে হয়।
(খ) ‘সুখ’ ‘সুখ’ করে কাঁদলে কী বাড়ে?
* উত্তর: ‘সুখ’ ‘সুখ’ করে কাঁদলে হৃদয়-ভার (মনের কষ্ট) ততই বাড়ে।
(গ) সকলের হাসি দেখে কী মোছা যায়?
* উত্তর: সকলের মুখ হাসি-ভরা দেখে নিজের বিষাদ-ভার (মনের দুঃখ) চাপিয়া নয়ন-ধার (চোখের জল) মোছা যায়।
(ঘ) আমাদের সকলের জীবন কার জন্য?
* উত্তর: আমাদের সকলের জীবন পরের তরে (অন্যের জন্য)।
(ঙ) পৃথিবীতে আমরা কেন এসেছি?
* উত্তর: আমরা পৃথিবীতে এসেছি আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে (নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে) নয়, বরং পরহিত-ব্রতে (অন্যের উপকারের ব্রতে) নিজেদের নিয়োজিত করতে।
৩। শব্দের অর্থগুলো দাগ দিয়ে মেলাও।
(এখানে ব্যাসবাক্য বা শব্দের অর্থগুলি মেলাতে বলা হয়েছে, যা ড্যাশ ব্যবহার করে দেখানো হলো।)
* দুঃখ – বিষাদ (পাঠের শব্দ-সম্ভারে নেই, তবে সাধারণত দুঃখ বিষাদের প্রতিশব্দ)
* ব্যতিব্যস্ত – বিব্রত
* মন, চিত্ত – হৃদয়
* অবশ্যপালনীয় কর্ম – ব্রত
* নিজের লাভ বা উপকার – স্বার্থ
* চোখ – নয়ন
* পৃথিবী – অবনি
৪। কবিতাটির মূলভাব নিজের মতো করে লেখো।
* উত্তর:
কামিনী রায় রচিত ‘সুখ’ কবিতায় কবি বুঝিয়েছেন যে, নিঃস্বার্থভাবে পরের উপকারে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়াই হলো প্রকৃত সুখের পথ। মানুষ সাধারণত নিজের সুখের সন্ধানে ব্যস্ত থাকে, কিন্তু কবি বলেছেন যে, কেবল নিজের কথা ভুলে গিয়ে অন্যের সুখে খুশি হলেই জীবনের তাৎপর্য বোঝা সম্ভব।
কবি মনে করেন, কেবল নিজের সুখের কথা ভেবে কেঁদে বেড়ালে মনের কষ্ট বা হৃদয়-ভার আরও বাড়ে। এর চেয়ে বরং নিজের বিষাদ-ভার চেপে রেখে সকলের মুখ হাসি-ভরা দেখলে তবেই প্রকৃত সুখ লাভ হয়। এই পৃথিবীতে কেউ শুধু নিজের জন্য আসেনি; ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’— এই মহৎ মন্ত্রকে গ্রহণ করে পরহিত-ব্রতে নিজেদের নিয়োজিত করাই মানবজীবনের প্রধান উদ্দেশ্য।
৫। শূন্যস্থান পূর্ণ করো।
* উত্তর:
সকলের মুখ হাসি-ভরা দেখে
পার না মুছিতে নয়ন-ধার?
পরহিত-ব্রতে পার না রাখিতে
চাপিয়া আপন বিষাদ-ভার?
৬। প্রসঙ্গের সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যাখ্যা করো।
“আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনি পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা,
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।।”
* উত্তর:
* প্রসঙ্গ: কামিনী রায় রচিত ‘সুখ’ কবিতার এই পংক্তিগুলিতে কবি মানবজীবনের মূল উদ্দেশ্য এবং সামাজিক দায়িত্ববোধকে তুলে ধরেছেন।
* ব্যাখ্যা: কবি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছেন যে, মানুষ এই পৃথিবীতে (অবনি পরে) কেবলমাত্র নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত (বিব্রত) থাকার জন্য আসেনি। মানবজন্মের সার্থকতা হলো পরহিতব্রতে (অন্যের উপকারের ব্রতে) নিজেকে উৎসর্গ করা। এই জগৎ একটি সামাজিক বন্ধন দ্বারা পরিচালিত। এই সমাজের প্রতিটি মানুষ একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল, তাই ‘সকলের তরে সকলে আমরা’ এবং এর মাধ্যমে ‘প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’। কবি এই নিঃস্বার্থ পরোপকারের আদর্শকে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই ব্যক্তিগত সুখের চেয়ে বৃহত্তর সামাজিক সুখের গুরুত্বকে তুলে ধরেছেন।
খ- ভাষা-অধ্যয়ন (ব্যবহারিক ব্যাকরণ)
৭। নীচের শব্দগুলোর বানান অশুদ্ধ থাকলে শুদ্ধ করো।
* উত্তর:
* প্রণাম – প্রণাম (শুদ্ধ)
* বিশেষন – বিশেষণ
* অনুসরণ – অনুসরণ (শুদ্ধ)
* পরিনয় – পরিণয়
* প্রাণ – প্রাণ (শুদ্ধ)
* প্রনব – প্রণব
৮। এবার নীচে শুদ্ধ শব্দে \checkmark চিহ্ন দাও।
* উত্তর:
* (ক) ঋস্য, ঋষ্য \checkmark, না ঋষ্য (এক ধরনের হরিণ, কৃষ্ণসার মৃগ)
* (খ) বৃস্টি, বৃষ্টি \checkmark, না বৃস্টি
* (গ) বৃষ \checkmark, বৃস, না বৃশ
* (ঘ) দৃস্টি, দৃষ্টি \checkmark, না দৃষ্টী
৯। ‘ষ্ট’ ও ‘ষ্ঠ’ যুক্ত পাঁচটি করে শব্দ লেখো।
* উত্তর:
* ষ্ট যুক্ত শব্দ:
* কষ্ট
* সৃষ্টি
* গোষ্ঠী
* মিষ্টি
* স্টেশন
* ষ্ঠ যুক্ত শব্দ:
* শ্রেষ্ঠ
* প্রতিষ্ঠা
* কনিষ্ঠ
* যুধিষ্ঠির
* অঙ্গুষ্ঠ
১০। নীচের শুদ্ধ বানানটিকে খুঁজে বের করে লেখো।
* উত্তর:
* অষম/ অসম \checkmark
* বিমর্শ/ বিমর্ষ \checkmark
* শশ্য/ শস্য \checkmark
* কৃশ/ কৃষ \checkmark
* বিষেশন/ বিশেষণ \checkmark
* মানসিক \checkmark/ মানষিক
১১। বাক্য রচনা করো।
* উত্তর:
* স্বার্থ: স্বার্থ ত্যাগ করে অন্যের সেবা করাই প্রকৃত সুখ।
* জীবন: পরের কারণে নিজের জীবন বিলিয়ে দেওয়াই মানব ধর্ম।
* হৃদয়: ‘সুখ’ ‘সুখ’ করে কাঁদলে হৃদয়-ভার বাড়ে।
* পরহিত: পরহিত-ব্রত পালন করলে জীবন সুখময় ও অর্থপূর্ণ হয়।
* বিষাদ: সকলের হাসি দেখে আপন বিষাদ-ভার চাপতে হয়।
* অবনি: এই অবনি-তে (পৃথিবীতে) কেউ একা নিজের জন্য আসেনি।
* বিব্রত: আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনি পরে।
১২। বিপরীত শব্দ লেখো।
* উত্তর:
* জীবন – মরণ
* হাসি – কান্না/অশ্রু
* দিন – রাত/রাত্রি
* সুখ – দুঃখ/বিষাদ
* পরে – পূর্বে/আগে
* সকলে – একা/কেউ নয়
১৩। নীচের ব্যাসবাক্যগুলোকে সমস্ত পদে পরিবর্তন করো।
(তৎপুরুষ সমাস)
* শরণকে আগত – শরণাগত (দ্বিতীয়া তৎপুরুষ)
* সুখকে প্রাপ্ত – সুখপ্রাপ্ত (দ্বিতীয়া তৎপুরুষ)
* আধাভাবে ফোটা – আধফোটা (অব্যয়ীভাবের মতো হলেও তৎপুরুষের বিভাজনে অনেক সময় আসে)
* দানে বীর – দানবীর (সপ্তমী তৎপুরুষ)
১৪। নীচের সমস্ত পদগুলোকে ব্যাস বাক্যে পরিবর্তন করো।
(তৎপুরুষ সমাস)
* চিরসুখ – চিরকাল ধরে সুখ (দ্বিতীয়া তৎপুরুষ/নিত্য সমাসের মতো)
* বিষয়াপন্ন – বিষয়কে আপন্ন (প্রাপ্ত) (দ্বিতীয়া তৎপুরুষ)
* অর্ধমৃত – অর্ধ দ্বারা মৃত (তৃতীয়া তৎপুরুষ)
* মধুমাখা – মধুর দ্বারা মাখা (তৃতীয়া তৎপুরুষ)
* বিদ্যাহীন – বিদ্যা হইতে হীন (পঞ্চমী তৎপুরুষ)
* বজ্রাহত – বজ্রের দ্বারা আহত (তৃতীয়া তৎপুরুষ)
* রান্নাঘর – রান্নার নিমিত্ত ঘর (চতুর্থী তৎপুরুষ)
* ছাত্রাবাস – ছাত্রদের নিমিত্ত আবাস (চতুর্থী তৎপুরুষ)
* শান্তিনিকেতন – শান্তির নিমিত্ত নিকেতন (চতুর্থী তৎপুরুষ)
* ধর্মভ্রষ্ট – ধর্ম থেকে ভ্রষ্ট (পঞ্চমী তৎপুরুষ)
* গাছপাড়া – গাছ থেকে পাড়া (পঞ্চমী তৎপুরুষ)
* রোগমুক্তি – রোগ থেকে মুক্তি (পঞ্চমী তৎপুরুষ)
* নরোত্তম – নরদিগের মধ্যে উত্তম (ষষ্ঠী তৎপুরুষ)
* শিক্ষামন্ত্রী – শিক্ষার মন্ত্রী (ষষ্ঠী তৎপুরুষ)
* দেশবন্ধু – দেশের বন্ধু (ষষ্ঠী তৎপুরুষ)
* কার্যদক্ষ – কার্যে দক্ষ (সপ্তমী তৎপুরুষ)
* সংখ্যালঘু – সংখ্যায় লঘু (সপ্তমী তৎপুরুষ)
* বিশ্ববিখ্যাত – বিশ্বে বিখ্যাত (সপ্তমী তৎপুরুষ)
* হাতেকাটা – হাতে কাটা (অলুক তৎপুরুষ)
* ঘানির তেল – ঘানিতে তৈরি তেল (অলুক তৎপুরুষ)
* কানে শোনা – কানে শোনা (অলুক তৎপুরুষ)
* অসুখ – নয় সুখ (নঞ তৎপুরুষ)
* অনন্ত – নয় অন্ত (নঞ তৎপুরুষ)
গ – জ্ঞান-সম্প্রসারণ
১৫। দু-জন করে দলে ভাগ হয়ে নীচের কবিতার অংশটি আবৃত্তি করো। যে-শব্দগুলোকে অপরিচিত মনে হবে, দলের একজন তা খুঁজে বের করবে, আরেকজন অভিধান থেকে সেই শব্দগুলোর অর্থ দেখে নেবে। তারপর দু-জনে মিলে শব্দার্থ মিলিয়ে কবিতাটির অর্থ বোঝার চেষ্টা করবে।
(পংক্তিগুলি: বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে। / করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে, / দীন যে, দীনের বন্ধু! – উজ্জ্বল জগতে / হেমাদ্রির হেমকান্তি অম্লান কিরণে।)
* উত্তর: (এটি দলবদ্ধ ও আবৃত্তিমূলক কাজ। শিক্ষার্থীরা নিচে দেওয়া অপরিচিত শব্দগুলির অর্থ জেনে কবিতাটির তাৎপর্য বুঝবে।)
* অপরিচিত শব্দ ও অর্থ:
* করুণার সিন্ধু: দয়ার সাগর
* দীন: দরিদ্র, অসহায়
* উজ্জ্বল জগতে: আলোকময় পৃথিবীতে
* হেমাদ্রি: সোনার পর্বত (হিমালয়)
* হেমকান্তি: সোনার মতো উজ্জ্বল
* অম্লান কিরণ: ম্লান হয় না এমন আলো বা জ্যোতি
১৬। ওপরের ঘটনা থেকে তোমরা বন্ধুবাৎসল্য ও সেবাপরায়ণতার পরিচয় পেলে। বন্ধুর বিপদে তোমরাও এভাবে এগিয়ে আসবে। যতটুকু পার অন্যকে সাহায্য করার চেষ্টা করবে। এ-বিষয়ে তোমার কোনো অভিজ্ঞতা শিক্ষক/শিক্ষয়িত্রীকে লিখে দেখাবে।
* উত্তর: (এটি একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাভিত্তিক কাজ। শিক্ষার্থীর নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা লিখতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো বন্ধুর অসুস্থতায় তাকে সাহায্য করা বা কোনো বয়স্ক ব্যক্তিকে পথ পার হতে সাহায্য করার মতো ঘটনা লেখা যেতে পারে।)
১৭। নীচের প্রার্থনা-সংগীতটি তোমরা সমবেতভাবে গাও।
(প্রার্থনা-সংগীত: আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে / বিরাজ’, সত্য সুন্দর।। / মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগন মাঝে, / জগৎ বেষ্টিত চরণে….।।)
* উত্তর: (এটি একটি সমবেত সঙ্গীত গাওয়ার কাজ।)
ঘ – প্রকল্প
১৮। তুমি তোমার গুরুজন, স্নেহভাজন ও বন্ধুস্থানীয় ব্যক্তিদের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কী ভাবে সম্ভাষণ জানাবে, সে-বিষয়ে দলে ভাগ হয়ে আলোচনা করে একটি তালিকা তৈরি করো।
* উত্তর: (এটি একটি দলবদ্ধ আলোচনাভিত্তিক কাজ। নীচে একটি উদাহরণ তালিকা দেওয়া হলো।)
| গুরুজন (শিক্ষক/দাদু)
সকালে দেখা হলে — প্রণাম / শুভ সকাল / নমস্কার
বিদায় নেওয়ার সময় — আসি / ভালো থাকবেন
অসুস্থ হলে — কেমন আছেন? / সাবধানে থাকবেন
স্নেহভাজন (ছোটো ভাই/বোন)
দেখা হলে — কেমন আছিস? / হাই (Hi)
শুভ কামনা জানাতে — মন দিয়ে পড়িস / ভালো হোক
বন্ধুস্থানীয় (সহপাঠী)
দেখা হলে — কেমন চলছে? / কী খবর?
বিদায় নেওয়ার সময় — পরে দেখা হবে / চলি রে / বাই (Bye)
