নব্য ধর্মীয় ভাবধারার উত্থান , এই পাঠের ভিতরের এবং অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর
এখানে পাঠ্যপুস্তকের নব্য ধর্মীয় ভাবধারার উত্থান সমস্ত প্রশ্ন ও তার উত্তর প্রদান করা হলো।
ক্রিয়াকলাপ
• তোমাদের আশেপাশে কী কী ধর্মীয় অনুষ্ঠান আছে? সেখানে কীভাবে ঈশ্বর বা ভগবানের প্রার্থনা করা হয়? দলগতভাবে আলোচনা করে লেখো।
উত্তর: আমাদের আশেপাশে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালিত হয়, যেমন দুর্গাপূজা, ঈদ, বড়দিন এবং বিভিন্ন নামকীর্তন ও ভজনের অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানগুলিতে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হয়।
* হিন্দু ধর্মে: পূজা-অর্চনার মাধ্যমে দেব-দেবীর আরাধনা করা হয়, আবার নামকীর্তন ও ভজনের মাধ্যমে ভক্তরা সমবেতভাবে ভগবানের নামগান করেন।
* ইসলাম ধর্মে: মসজিদে নামাজ পড়া হয় এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মৌনভাবে বা সমবেতভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয়।
* খ্রিস্টান ধর্মে: গির্জায় প্রার্থনার মাধ্যমে যিশুর কাছে আশীর্বাদ কামনা করা হয়।
• অসমে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী কারা? শিক্ষকের সাহায্যে জেনে নিয়ে তার একটি তালিকা প্রস্তুত করো।
উত্তর: এই পাঠ্যপুস্তকে অসমে বসবাসকারী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর কোনো নির্দিষ্ট তালিকা দেওয়া নেই। তবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভক্তিবাদের ধারণা এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাও তা গ্রহণ করেছিল। এটি একটি প্রকল্পভিত্তিক কাজ, তাই শিক্ষক বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাহায্যে অসমের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়, যেমন—খামতি, সিংফৌ, আইতন, ফাকেয়াল ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর বিষয়ে একটি তালিকা তৈরি করা যেতে পারে।
• ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভের জন্য আড়ম্বরপূর্ণ পূজার্চনার প্রয়োজন আছে বলে মনে করো কি? যুক্তি সহকারে বোঝাও।
উত্তর: না, ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভের জন্য আড়ম্বরপূর্ণ পূজার্চনার প্রয়োজন নেই। ভক্তি আন্দোলনের মূল কথাই হলো, একান্ত ভক্তি ও সরল মনে ভগবানের নাম স্মরণ করলেই তাঁকে লাভ করা যায়। ভাগবত গীতাতেও বলা হয়েছে যে, ভগবানের প্রতি একান্ত ভক্তিই মানুষকে সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্তি দেয়। ধর্ম, বর্ণ বা ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে যে কেউ শুধুমাত্র ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরকে পেতে পারে। তাই বাহ্যিক আড়ম্বরের চেয়ে আন্তরিক ভক্তিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
• কী কারণে মধ্যযুগে একাংশ হিন্দু জনসাধারণ ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল? দলগতভাবে আলোচনা করো।
উত্তর: মধ্যযুগে হিন্দু সমাজের একাংশ ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কয়েকটি প্রধান কারণ ছিল:
* হিন্দু ধর্মের কঠোরতা: তৎকালীন হিন্দু ধর্মে কঠোর নিয়ম-নীতি, জাতিভেদ প্রথা এবং উচ্চ-নীচ ও ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য সাধারণ মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল।
* ইসলাম ধর্মের সরলতা: ইসলাম ধর্মে আড়ম্বরপূর্ণ যাগ-যজ্ঞ বা মূর্তিপূজা ছিল না।
* একেশ্বরবাদ ও সাম্য: ইসলাম ধর্মে একজন ঈশ্বরকে (আল্লাহ) উপাসনা করা হয় এবং আল্লাহর দৃষ্টিতে সকল মানুষ সমান। এই সাম্যের ধারণা হিন্দু সমাজের অবহেলিত মানুষদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করেছিল।
• শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের রচিত গ্রন্থগুলোর একটি তালিকা প্রস্তুত করো। (প্রয়োজন বোধে শিক্ষক এবং অভিভাবকের সাহায্য নেবে)।
উত্তর: এই পাঠ্যপুস্তকে শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের রচিত গ্রন্থগুলির কোনো নির্দিষ্ট তালিকা দেওয়া নেই। তবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি ব্রজবুলি ভাষায় সঙ্গীত, পদ, নাটক, ভাওনা ইত্যাদি রচনা করে বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার করেছিলেন। এটি একটি প্রকল্পভিত্তিক কাজ। শিক্ষক বা অভিভাবকের সাহায্যে তাঁর রচিত প্রধান গ্রন্থগুলির একটি তালিকা তৈরি করা যেতে পারে, যেমন: কীর্তন-ঘোষা, দশম, গুণমালা, রাম বিজয় নাটক ইত্যাদি।
• “ভক্তিবাদ ভারতীয় সমাজে সাহিত্য-সংস্কৃতির পরিসর বিস্তৃত করেছে”- কথাগুলোর তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: এই উক্তিটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ভক্তিবাদ আন্দোলন শুধুমাত্র ধর্মীয় ক্ষেত্রেই নয়, সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগতেও এক বিপ্লব এনেছিল। এর প্রধান কারণগুলি হলো:
* আঞ্চলিক ভাষার বিকাশ: ভক্তি আন্দোলনের প্রচারকগণ তাঁদের মতবাদ সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সংস্কৃতের পরিবর্তে হিন্দি, বাংলা, মারাঠি, অসমিয়া, ব্রজবুলির মতো আঞ্চলিক ভাষায় তাঁদের বাণী প্রচার করতেন। এর ফলে এই ভাষাগুলির সাহিত্য ভান্ডার অত্যন্ত সমৃদ্ধ হয়।
* নতুন সাহিত্য সৃষ্টি: কবীরের ‘দোঁহা’, মীরাবাঈয়ের ‘ভজন’, তুলসীদাসের ‘রামচরিত-মানস’, শঙ্করদেবের ‘বরগীত’ ও ‘অঙ্কীয়া নাট’ ইত্যাদি ভক্তি সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হিসেবে আজও সমাদৃত।
* সাংস্কৃতিক ঐক্য: এই সাহিত্য ও সঙ্গীত হিন্দু-মুসলমান সহ সমাজের সকল শ্রেণির মানুষকে একত্রিত করে একটি সাংস্কৃতিক ঐক্য ও সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরি করেছিল।
অনুশীলনী
১। উত্তর লেখো-
(ক) ভক্তিবাদ বলতে কি বোঝায়?
উত্তর: ‘ভক্তি’ শব্দটি সংস্কৃত ‘ভজ’ ধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ পূজা করা বা আনুগত্য প্রকাশ করা। ভক্তিবাদ হলো একটি মতবাদ, যেখানে ঈশ্বরের প্রতি অগাধ প্রেম ও ভক্তির মাধ্যমে মানবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটি একটি মানসিক অবস্থা, যার মাধ্যমে ভক্ত ভগবানের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে আনন্দ লাভ করে।
(খ) ভক্তিবাদ আন্দোলন গড়ে উঠার দুটি কারণ কী কী?
উত্তর: ভক্তিবাদ আন্দোলন গড়ে ওঠার দুটি প্রধান কারণ হলো:
* তৎকালীন হিন্দু সমাজে প্রচলিত কঠোর ধর্মীয় নিয়ম-নীতি, জাতিভেদ প্রথা এবং উচ্চ-নীচের বৈষম্য, যা সাধারণ মানুষের মনে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছিল।
* ভারতবর্ষে ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব, যা সাম্য ও একেশ্বরবাদের সহজ-সরল ধারণা দিয়ে হিন্দু সমাজের একাংশকে আকৃষ্ট করেছিল এবং হিন্দু ধর্মে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছিল।
(গ) ‘দিব্য প্রবন্ধম’ কী?
উত্তর: ‘দিব্য প্রবন্ধম’ হলো দাক্ষিণাত্যের আলভারস সম্প্রদায়ের গান-বাজনা ও মৌখিক সাহিত্যের সংকলিত রূপ।
(ঘ) উত্তর ভারতে ভক্তি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত চারজন প্রধান ব্যক্তির নাম লেখো।
উত্তর: উত্তর ভারতে ভক্তি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত চারজন প্রধান ব্যক্তি হলেন রামানন্দ, কবীর, গুরু নানক এবং মীরাবাঈ।
(ঙ) শঙ্করদেবের মতে মানুষ কীভাবে মুক্তি লাভ করতে পারে?
উত্তর: শঙ্করদেবের মতে, প্রচলিত যাগ-যজ্ঞ বা বলি-বিধানের পরিবর্তে শুধুমাত্র নাম-কীর্তনের দ্বারাই মানুষ মুক্তি বা মোক্ষ লাভ করতে পারে।
২। পাঠের ভেতরের উপযুক্ত শব্দ দিয়ে নীচের শূন্য স্থান পূর্ণ করো-
(ক) শঙ্করাচার্য ছিলেন অদ্বৈতবাদে বিশ্বাসী।
(খ) খ্রিস্টীয় নবম শতক থেকে ভারতবর্ষে ইসলাম ধর্মাবলম্বী তুর্কি-আফগানদের আবির্ভাব ঘটেছিল।
(গ) রামানন্দের মূল উপাস্য দেবতা ছিলেন বিষ্ণুর অবতার রাম।
(ঘ) তুলসীদাসকে বাল্মীকির অবতার বলে গণ্য করা হত।
(ঙ) কবীরের দ্বারা রচিত ভক্তিমার্গের কবিতা সমূহকে ‘দোঁহা’ বলা হয়।
৩। সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো-
(ক) শঙ্করাচার্য: শঙ্করাচার্য ছিলেন দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের একজন দার্শনিক। তিনি অদ্বৈতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন, যার মূল কথা হলো আত্মা এবং পরমাত্মার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তাঁর মতে, সৎজ্ঞান ও সৎকর্মের দ্বারাই মানুষ মুক্তি লাভ করতে পারে।
(খ) জ্ঞানদেব: জ্ঞানদেব ছিলেন খ্রিস্টীয় ১৩শ শতকে মহারাষ্ট্রের ভক্তি আন্দোলনের প্রধান প্রচারক। তিনি গান-বাজনার মাধ্যমে ভগবানের ভক্তির বাণী প্রচার করতেন। তিনি জাতিভেদ প্রথা ও সামাজিক বৈষম্যের বিরোধিতা করে সহজ-সরল জীবনযাপনের উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
(গ) রামানন্দ: রামানন্দ ছিলেন উত্তর ভারতের একজন प्रमुख পণ্ডিত ও সমাজ সংস্কারক। তাঁর উপাস্য দেবতা ছিলেন বিষ্ণুর অবতার রাম। তিনি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য ধর্মের দ্বার খুলে দিয়েছিলেন এবং হিন্দি ভাষায় ভক্তি ধর্ম প্রচার করেছিলেন। কবীর ছিলেন তাঁর অন্যতম শিষ্য।
(ঘ) নানক: গুরু নানক ছিলেন উত্তর ভারতে ভক্তিমার্গের অন্যতম প্রচারক। তিনি এক নিরাকার ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন, যাঁকে তিনি ‘রব’ নামে উপাসনা করতেন। তিনি মূর্তিপূজা ও জাতিভেদ প্রথার বিরোধী ছিলেন। তাঁর শিষ্যরাই পরবর্তীকালে শিখ নামে পরিচিত হন এবং তাঁর বাণী ‘গুরুগ্রন্থসাহেব’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে।
(ঙ) মীরাবাঈ: মীরাবাঈ ছিলেন রাজস্থানের একজন প্রসিদ্ধ ভক্তিবাদী সাধিকা। তিনি ভজন ও কীর্তনের মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি তাঁর গভীর ভক্তি প্রকাশ করতেন। তাঁর ভক্তি মার্গ সাধারণ মানুষকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল।
৪। আলভারসগণ কারা ছিলেন? তাঁদের মূল ধর্মমত কী ছিল?
উত্তর: আলভারসগণ ছিলেন খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে দাক্ষিণাত্যের তামিল রাজ্যের একটি বৈষ্ণবপন্থী সম্প্রদায়, যাঁরা ভক্তি আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন।
তাঁদের মূল ধর্মমত ছিল:
* বিষ্ণুই হলেন শ্রেষ্ঠ এবং সৃষ্টির মূল।
* অহংকার ত্যাগ করে ভগবানের কাছে নিজেকে সম্পূর্ণ উৎসর্গ করলেই মোক্ষ লাভ সম্ভব।
* সকল জীবের মধ্যেই ভগবান বিরাজমান, তাই জীবপ্রেমই হলো ভগবৎ প্রেমের ভিত্তি।
৫। সুফিবাদের মূলমন্ত্র কী ছিল? ভারতবর্ষে সুফিবাদের প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন, এমন দুজন ব্যক্তির নাম লেখো।
উত্তর: সুফিবাদের মূলমন্ত্র ছিল ধর্মীয় গোঁড়ামি পরিহার করে শান্তি, উদারতা এবং প্রেমের মাধ্যমে ঈশ্বরের উপাসনা করা। পার্থিব সুখ ত্যাগ করে সঙ্গীতের মাধ্যমে আনন্দে বিভোর হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করাই ছিল তাঁদের পথ।
ভারতবর্ষে সুফিবাদের প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী দুজন সাধক হলেন মইনউদ্দিন চিস্তি এবং নিজামউদ্দিন আউলিয়া।
৬। কবীর কেন হিন্দু এবং ইসলাম ধর্মের মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন?
উত্তর: কবীর হিন্দু এবং মুসলমান উভয়ের মধ্যেই জনপ্রিয় ছিলেন কারণ তিনি কোনো একটি নির্দিষ্ট ধর্মের কঠোর নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি ভগবানকে রাম, হরি, আল্লাহ, খোদা ইত্যাদি বিভিন্ন নামে ডাকতেন এবং এক ঈশ্বরের উপাসনা করতেন। তাঁর ‘দোঁহা’ গুলিতে তিনি উভয় ধর্মের কঠোর নীতিগুলির সমালোচনা করতেন। ফলে, মুসলমানরা তাঁকে সুফি সাধক এবং হিন্দুরা তাঁকে রামভক্ত হিসেবে সম্মান করত, এবং উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিল।
৭। ভক্তি আন্দোলনের নেতাগণ ধর্ম ছাড়াও সমাজ সংস্কারের কাজে কেন মনোনিবেশ করে ছিলেন?
উত্তর: ভক্তি আন্দোলনের নেতারা ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি সমাজ সংস্কারে মনোনিবেশ করেছিলেন কারণ তৎকালীন সমাজ নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। জাতিভেদ প্রথা, উচ্চ-নীচ ও ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য, এবং কঠোর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। ভক্তিবাদের নেতাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল সর্বসাধারণের কল্যাণ সাধন করা, যা সামাজিক কুপ্রথাগুলো দূর না করে সম্ভব ছিল না। তাই তাঁরা একটি সাম্য ও সম্প্রীতিপূর্ণ সমাজ গঠনের জন্য কাজ করেছিলেন।
৮। ভারতবর্ষে ভক্তি আন্দোলন জনপ্রিয় হওয়ার কারণ কী?
উত্তর: ভারতবর্ষে ভক্তি আন্দোলন জনপ্রিয় হওয়ার প্রধান কারণগুলি হলো:
* সরল পথ: এটি যাগ-যজ্ঞের মতো জটিল পথের পরিবর্তে ভক্তি ও নামকীর্তনের মতো সহজ-সরল পথে মোক্ষ লাভের কথা বলেছিল।
* সাম্যের বার্তা: এই আন্দোলন জাতিভেদ প্রথা, ধনী-দরিদ্র ও উচ্চ-নীচের ভেদাভেদকে অস্বীকার করে ঈশ্বরের চোখে সকলকে সমান বলে ঘোষণা করেছিল।
* আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার: প্রচারকরা সাধারণ মানুষের বোধগম্য আঞ্চলিক ভাষায় তাঁদের বাণী প্রচার করায় তা সহজেই জনপ্রিয়তা লাভ করে।
* সামাজিক প্রাসঙ্গিকতা: এটি তৎকালীন সামাজিক কুসংস্কার ও কঠোর নিয়ম-নীতির বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ছিল।
৯। অসমিয়া সমাজে শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের অবদানের বিষয়ে ৫০টি শব্দের ভেতর একটি টীকা লেখো।
উত্তর: শ্রীমন্ত শঙ্করদেব ছিলেন একাধারে একজন পণ্ডিত, সমাজ সংস্কারক এবং নব্য অসমীয়া সমাজের স্রষ্টা। তিনি ‘একশরণ নাম ধর্ম’ প্রচার করে যাগ-যজ্ঞের পরিবর্তে নামকীর্তনের মাধ্যমে মোক্ষ লাভের সহজ পথ দেখান। তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে শিষ্যত্ব প্রদান করে এবং সঙ্গীত, নাটক ও সাহিত্যের মাধ্যমে অসমীয়া সমাজে একতা ও সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় করেছিলেন।
