গ্রাহকের সজাগতা, অধিকার এবং সুরক্ষা, Chapter -12, Class – 8, SEBA

পাঠ্যবইয়ের ভিতরের এবং অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর


পাঠ-১২: গ্রাহকের সজাগতা, অধিকার এবং সুরক্ষা

পৃষ্ঠা ৯৬-এর প্রশ্নাবলী
উত্তর লেখো-
* গ্রাহক মানে কী?
   উত্তর: যে নিজের প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী এবং সেবা বাজার থেকে ক্রয় করে উপভোগ করে তাকেই আমরা ক্রেতা বা গ্রাহক বলি। অর্থনীতির ভাষায় গ্রাহককে উপভোক্তা বলা হয়।
* গ্রাহক বা উপভোক্তা কীভাবে দেশের উন্নয়নে অংশীদার হতে পারে?
   উত্তর: উৎপাদিত দ্রব্য এবং সেবা উপভোগ করে উপভোক্তা দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়াতে অংশগ্রহণ করে। কর্মী, উদ্যমী এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন উপভোক্তাই কেবল দেশের উন্নয়নে অংশীদার হতে পারে।
* অর্থনৈতিক কার্যাবলিসমূহ কীভাবে সাধিত হয়?
   উত্তর: উৎপাদন, উপভোগ, বিনিময়, বিনিয়োগ, বিতরণ, নিয়োগ ইত্যাদি অর্থনৈতিক কার্যাবলির প্রতিটি কার্যই পরস্পর পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতার মধ্য দিয়েই সমগ্র অর্থনৈতিক কার্যাবলি সম্পন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ, ভোগ এবং উৎপাদন একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল।
* উপভোক্তার উপভোগের জন্য কীসের প্রয়োজন?
   উত্তর: উপভোক্তার উপভোগের জন্য উৎপাদনের প্রয়োজন।
পৃষ্ঠা ৯৮-এর প্রশ্নাবলী
উত্তর লেখো-
* ফার্মাসিস্ট বুড়নকে ওষুধ বিক্রি করার জন্য কী প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল?
   উত্তর: ফার্মাসিস্ট বুড়নকে মেয়াদ উত্তীর্ণ (expired) ওষুধ বিক্রি করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল।
* ওষুধ খেয়ে বুড়নের মায়ের অসুখ ভালো হয়েছিল কী?
   উত্তর: না, ওষুধ খেয়ে বুড়নের মায়ের অসুখ ভালো তো হয়ইনি, বরং পেটের ব্যথা কমার বদলে আরও বেড়ে গিয়েছিল।
* বুড়নের পরিবার কেন শারীরিক ও মানসিক ভাবে কষ্ট পেয়েছিল?
   উত্তর: মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ খেয়ে বুড়নের মায়ের অবস্থা খুব শোচনীয় হয়ে গিয়েছিল, যার ফলে সম্পূর্ণ পরিবারটি শারীরিক ও মানসিকভাবে যথেষ্ট কষ্ট পেয়েছিল।
* ফার্মাসিস্টের এধরনের অসাধু কাজ করার কারণ কী?
   উত্তর: ফার্মাসিস্টের এধরনের অসাধু কাজ করার কারণ হল ব্যক্তিগত লাভের আশায় বিক্রেতা গ্রাহককে ঠগানোর চেষ্টা করে।
* তিতলী ওষুধ কেনার সময় কী ভুল করেছিল?
   উত্তর: কাহিনিটিতে তিতলী নামে কারো উল্লেখ নেই, তবে বুড়ন ওষুধ কেনার সময় ক্যাশমেমো না নিয়েই চলে এসেছিল।
পৃষ্ঠা ১০২-এর প্রশ্নাবলী
উত্তর লেখো-
* পণ্য-দ্রব্যটি কী করে বিক্রেতার কাছে এসেছিল?
   উত্তর: প্রথম কাহিনিতে, বুড়নের বাবা লক্ষীপুর শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, তিনি শিলচর গিয়েছিলেন। লক্ষীপুর শহরের পাশের ফার্মাসি থেকে বুড়ন ওষুধ কিনেছিল। দ্বিতীয় কাহিনিগুলিতে বিক্রেতা কোনো স্থান থেকে সামগ্রী কিনে আনার কথা সেভাবে উল্লেখ নেই।
* বিক্রেতা কী কারণে গ্রাহকের কাছে এসেছিল?
   উত্তর: দ্বিতীয় গল্পে, ক্রেতা ভুলবশত নষ্ট হয়ে যাওয়া মেমোরি কার্ড ফেরত দিতে বিক্রেতার কাছে এসেছিলেন, তৃতীয় গল্পে, ক্রেতা তাঁর পছন্দসই মোবাইল সেটের গুণাগুণ ও সুবিধা-অসুবিধা জানতে বিক্রেতার কাছে এসেছিলেন, এবং চতুর্থ গল্পে, ক্রেতা বাজারের থেকে সস্তায় জিনিস কেনার জন্য বিক্রেতার কাছে এসেছিলেন।
* ফার্মাসিস্টের কাছ থেকে প্রবঞ্চিত হওয়ার পর বুড়নের বাবা কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন?
   উত্তর: ফার্মাসিস্টের কাছ থেকে প্রবঞ্চিত হওয়ার পর বুড়নের বাবা রেগে গিয়েও স্ত্রীর অবস্থা সংকটজনক দেখে সেই চিন্তা বাদ দিয়ে রাত্রের মধ্যেই স্ত্রীকে নিয়ে পয়লাপুলের ইমানুয়েল ক্লিনিকে গিয়েছিলেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর তিনি ফার্মাসিস্টের বিরুদ্ধে গ্রাহক আদালতে মামলা করেছিলেন।
* ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যেকার সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?
   উত্তর: ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যেকার সম্পর্ক বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সজাগতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। বিক্রেতার সৎ এবং নৈতিক হওয়া উচিত এবং গ্রাহকেরও প্রতিটি সামগ্রী কেনার সময় সজাগ থাকা উচিত।
* অভিযোগ কেন আবশ্যক?
   উত্তর: প্রতারণামূলক কাজগুলো রোধ করার জন্য এবং গ্রাহকের অধিকার ও সুরক্ষার জন্য অভিযোগ করা আবশ্যক। এটি বিক্রেতাকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সম্মুখীন করতে সাহায্য করে।
* বিচার কী করে পাওয়া যায়?
   উত্তর: গ্রাহকের অভিযোগের ক্ষেত্রে গ্রাহক সুরক্ষা সমিতি বা গ্রাহক আদালতে মামলা করলে বিচার পাওয়া যায়।
পৃষ্ঠা ১০৪-এর অনুশীলনী
পাঠ-১২: গ্রাহকের সজাগতা, অধিকার এবং সুরক্ষা
১। উত্তর লেখো —
(ক) গ্রাহক সজাগতার আবশ্যকতা আছে কী? তোমার উত্তরের সপক্ষে দুটি যুক্তি দাও।
উত্তর: হ্যাঁ, গ্রাহক সজাগতার আবশ্যকতা আছে।
সপক্ষে দুটি যুক্তি:
১. প্রতারণা রোধ: প্রতারণামূলক কাজগুলো রোধ করার জন্য গ্রাহককে সজাগ হতে হবে। সজাগতা থাকলে বিক্রেতার অসাধু উপায় অবলম্বন থেকে গ্রাহক নিজেকে রক্ষা করতে পারে।
২. সামাজিক কল্যাণ সাধন: প্রতারণামূলক কাজগুলো অনৈতিক কাজে উৎসাহ যোগায় এবং সামাজিক কল্যাণ সাধনে বাধার সৃষ্টি করে। গ্রাহক সজাগতা এই প্রতারণামূলক কাজগুলো রোধ করে সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের গতি মন্থর হওয়া থেকে রক্ষা করে।
(খ) গ্রাহককে শোষণ করার কৌশলসমূহ কী কী?
উত্তর: বিক্রেতারা গ্রাহককে শোষণ বা প্রতারণা করার জন্য যেসব কৌশল অবলম্বন করে, তার মধ্যে কয়েকটি হলো:
* বস্তুর ওজন সঠিকভাবে না করা।
* ভেজাল বস্তু বিক্রি করা।
* বস্তু বা সেবা উপযুক্ত মানবিশিষ্ট না হওয়া।
* ক্রয় করা বস্তু বা সেবার নগদ রশিদ (Cash memo) না দেওয়া বা অশুদ্ধভাবে দেওয়া।
* সামগ্রী প্রস্তুতকরণের প্রকৃত তারিখ মুছে ফেলা বা নকল তারিখ লাগানো।
* প্রকৃত মূল্যের ওপরে নকল মূল্যের লেবেল লাগানো।
* মানসূচক চিহ্নসমূহ নকল করা।
* নামী-দামি কোম্পানি উৎপাদিত সামগ্রীর হুবহু নকল করা।
* ডাকসেবা, টেলিফোন বা ইন্টারনেট যোগে অর্ডার দেওয়া বস্তু সময়মতো না দেওয়া।
(গ) গ্রাহক হিসেবে তোমার কর্তব্য কী? বাজারে বস্তু কেনার সময় কোন কথাগুলো মনে রাখা উচিত?
উত্তর: গ্রাহক হিসেবে কিছু কর্তব্য পালন করা উচিত যার সাহায্যে প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বাজারে বস্তু বা সেবা ক্রয় করার সময় নিম্নলিখিত কথাগুলো মনে রাখা উচিত বা সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত:
* বস্তু বা সেবা কেনার সময় তার গুণাগুণ, দাম, বিশুদ্ধতা ইত্যাদি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া।
* পরিমাপের যন্ত্রগুলি (যেমন- দাঁড়ি-পাল্লা, বৈদ্যুতিক মাপক যন্ত্র) সঠিক এবং বিজ্ঞান সম্মত কী না তা পরীক্ষা করে দেখা।
* যেকোনো বস্তু কেনার পর বস্তুর বিবরণ এবং মূল্য লেখা নগদ রশিদ (Cash memo) চেয়ে নেওয়া।
* বিভিন্ন ক্ষেত্রের উৎপাদিত সামগ্রীসমূহের জন্য সরকারের নির্ণীত চিহ্নসমূহ যেমন অ্যাগমার্ক, আই এস আই মার্ক, হলমার্ক, এফ পি ও ইত্যাদি চিহ্ন কিনে নেওয়া সামগ্রীতে আছে কী না তা পরীক্ষা করে দেখা।
* দীর্ঘস্থায়ী বস্তুর ক্ষেত্রে বিক্রেতা থেকে গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টী কার্ড চেয়ে নেওয়া।
* প্যাকেটজাত সামগ্রী কেনার ক্ষেত্রে উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, MRP (সর্বোচ্চ খুচরো মূল্য) ইত্যাদি লক্ষ করা।
(ঘ) গ্রাহকের অধিকার মানে কী? এধরনের অধিকারের বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: গ্রাহকের অধিকার মানে হলো সরকারের দ্বারা গ্রাহকদের কল্যাণ ও সুরক্ষার জন্য প্রদান করা অধিকার ও আইনি ব্যবস্থাসমূহ। এই অধিকারসমূহ আমাদের দেশের সব নাগরিকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
গ্রাহকদের লব্ধ অধিকারসমূহ হলো:
* যেকোনো বস্তু কেনার সময় বস্তুর মূল্য, ওজন, বিশুদ্ধতা, গুণাগুণ ইত্যাদি বিচার করার অধিকার।
* গ্রাহক সুরক্ষার জন্য গ্রাহক সুরক্ষা সমিতি গঠন করার অধিকার।
* গ্রাহকদের অভাব অভিযোগ ইত্যাদি গ্রাহক সুরক্ষা সমিতি বা গ্রাহক আদালতে দাখিল করার অধিকার।
* প্রয়োজন সাপেক্ষে গ্রাহক সুরক্ষা আইনের সাহায্য নেওয়ার অধিকার।
* প্রতারণাকারী বিক্রেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবী করার অধিকার।
* গ্রাহক শিক্ষা লাভ করার অধিকার।
* বিক্রেতা থেকে বস্তু বা সেবা কেনার ক্ষেত্রে প্রতারণার ফলে হওয়া ক্ষতির জন্য গ্রাহকের ক্ষতিপূরণ পাওয়াটা আইনগত অধিকার।
   বিশ্বজুড়ে ১৫ই মার্চ তারিখে গ্রাহক অধিকার দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
(ঙ) গ্রাহকের সুরক্ষার জন্য সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সমূহের বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: গ্রাহকদের কল্যাণ ও সুরক্ষার জন্য সরকার নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করেছে:
১. আইনি ব্যবস্থা: গ্রাহকদের কল্যাণ ও সুরক্ষার জন্য সরকার গ্রাহক সুরক্ষা আইন প্রবর্তন করেছে। পূর্বের গ্রাহক সুরক্ষা আইন ১৯৮৬-এর পরিবর্তে ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসের ৯ তারিখে গ্রাহক সুরক্ষা আইন, ২০১৯ বলবৎ করা হয়।
২. বিবাদ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা: গ্রাহক সুরক্ষা আইন, ২০১৯-এর অধীনে গ্রাহকের বিভিন্ন প্রকারের অভিযোগ আপত্তি সঠিক সময়ে এবং সঠিক উপায়ে নিষ্পতিকরণের ব্যবস্থা করা হয়।
৩. গ্রাহক সুরক্ষা পরিষদ: গ্রাহকের অধিকার ও বিবাদ নিষ্পত্তিকরণ সম্পর্কীয় বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য এই আইনের অধীনে কেন্দ্রীয়, রাজ্যিক এবং জিলা পর্যায়ে ‘গ্রাহক সুরক্ষা পরিষদ’ (Consumer Protection Council) নামের উপদেষ্টাধর্মী পরিষদ গঠন করা হয়।
৪. সজাগতা সৃষ্টি: সরকার ‘জাগো গ্রাহক জাগো…’ স্লোগানের মাধ্যমে রেডিও, টেলিভিশন, খবরের কাগজ ইত্যাদি প্রচার মাধ্যমে গ্রাহকদের মধ্যে সজাগতা সৃষ্টি করার জন্য বিজ্ঞাপন প্রচার করে।
৫. মানসূচক চিহ্ন: সরকার বিভিন্ন সামগ্রীর গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য অ্যাগমার্ক, আই এস আই, হলমার্ক, এফ পি ও ইত্যাদি প্রামাণিক চিহ্ন নির্ণয় করেছে।
২। সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো-
(ক) গ্রাহক সুরক্ষা আইন
উত্তর: গ্রাহক সুরক্ষা আইন হলো একটি আইনি ব্যবস্থা যা গ্রাহকের অধিকার ও সুরক্ষার জন্য সরকার দ্বারা প্রবর্তিত হয়েছে। গ্রাহক সুরক্ষা আইন, ২০১৯ (৯ আগস্ট, ২০১৯ থেকে বলবৎ) গ্রাহকের বিভিন্ন প্রকারের অভিযোগ আপত্তি সঠিক সময়ে এবং সঠিক উপায়ে নিষ্পত্তিকরণের ব্যবস্থা করে। এই আইনের অধীনে গ্রাহক সুরক্ষার জন্য গ্রাহক সুরক্ষা পরিষদ এবং বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য গ্রাহক আদালত গঠিত হয়।
(খ) গ্রাহক সজাগতা
উত্তর: গ্রাহক সজাগতা হলো ক্রেতা বা উপভোক্তার বস্তু বা সেবা কেনার সময় সতর্ক থাকা। এর আবশ্যকতা আছে কারণ এটি প্রতারণামূলক কাজ রোধ করে এবং সামাজিক কল্যাণে সাহায্য করে। সজাগ থাকতে হলে গ্রাহককে পণ্যের গুণাগুণ, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, MRP ইত্যাদি পরীক্ষা করতে হয় এবং নগদ রশিদ (Cash memo) চেয়ে নিতে হয়। সরকার ‘জাগো গ্রাহক জাগো…’ স্লোগানের মাধ্যমে গ্রাহকদের মধ্যে সজাগতা সৃষ্টি করে।
(গ) গ্রাহক প্রতারণা
উত্তর: গ্রাহক প্রতারণা হলো বিক্রেতার দ্বারা ব্যক্তিগত লাভের জন্য গ্রাহককে ঠকানোর জন্য অবলম্বন করা অসাধু কৌশল। এর মধ্যে রয়েছে ভেজাল বস্তু বিক্রি করা, সঠিক ওজন না করা, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ মুছে ফেলা, নকল লেবেল লাগানো ইত্যাদি। গ্রাহক প্রতারণা অনৈতিক কাজে উৎসাহ যোগায় এবং সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি করে।
(ঘ) গ্রাহকের অধিকার
উত্তর: গ্রাহকের অধিকার হলো সরকারের দেওয়া আইনি সুরক্ষা এবং সুযোগ-সুবিধা। এর মধ্যে রয়েছে মূল্য, ওজন, বিশুদ্ধতা ইত্যাদি বিচার করার অধিকার, ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আইনগত অধিকার, এবং গ্রাহক আদালতে অভিযোগ দায়ের করার অধিকার। এই অধিকারগুলো ভোগ করার জন্য গ্রাহকদের আগ্রহী এবং সচেতন হওয়া উচিত। ১৫ই মার্চ বিশ্ব গ্রাহক অধিকার দিবস হিসেবে পালিত হয়।
(ঙ) গ্রাহক আদালত
উত্তর: গ্রাহক আদালত (Consumer Disputes Redressal Commission) হলো গ্রাহক সুরক্ষা আইন, ২০১৯-এর অধীনে গঠিত একটি সংস্থা যা গ্রাহকের অভিযোগ ও বিবাদ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করে। এটি তিন স্তরে কাজ করে— জেলা ফোরাম (১ কোটি টাকা পর্যন্ত), রাজ্যিক কমিশন (১ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত), এবং কেন্দ্রীয় কমিশন (১০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে)। প্রতারিত গ্রাহককে তার অভিযোগ এখানে দাখিল করতে হয়।
৩। শুদ্ধ/অশুদ্ধ নির্ণয় করো-
(ক) গ্রাহক সুরক্ষা আইন কেবল দোকান থেকে কেনা বস্তুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
উত্তর: অশুদ্ধ (বস্তু বা সেবা, উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এটি ডাকসেবা, টেলিফোন বা ইন্টারনেট যোগে অর্ডার দেওয়া বস্তুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য)।
(খ) গ্রাহকের সুরক্ষার জন্য ভারতই একমাত্র রাষ্ট্র যে আইন প্রণয়ন করেছে।
উত্তর: অশুদ্ধ (গ্রাহক অধিকার বিশ্বজুড়ে এক জনজাগরণের সৃষ্টি করেছে, এবং ১৫ই মার্চ বিশ্ব গ্রাহক অধিকার দিবস পালিত হয়)।
(গ) শোষণের বলি হওয়া গ্রাহককে জেলা বিবাদ নিষ্পত্তিকরণ ফোরামে অভিযোগ করতে হয়।
উত্তর: অশুদ্ধ (এটি জেলা, রাজ্যিক বা কেন্দ্রীয় ফোরামে অভিযোগ করা যায়, বিবাদের মূল্য অনুসারে)।
(ঘ) কেবল মূল্যবান এবং দামি বস্তুর ক্ষেত্রেই গ্রাহক সুরক্ষা আইন প্রযোজ্য।
উত্তর: অশুদ্ধ (সমস্ত দ্রব্য সামগ্রী এবং সেবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য)।
(ঙ) কৃষিজাত সামগ্রীর মানবিশিষ্টতার প্রমাণ হিসেবে হলমার্ক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
উত্তর: অশুদ্ধ (কৃষিজাত সামগ্রীর জন্য অ্যাগমার্ক (AGMARK) এবং হলমার্ক মূল্যবান ধাতুর জন্য ব্যবহৃত হয়)।
(চ) বিক্রেতা থেকে বস্তু বা সেবা কেনার ক্ষেত্রে প্রতারণার ফলে হওয়া ক্ষতির জন্য গ্রাহকের ক্ষতিপূরণ পাওয়াটা আইনগত অধিকার।
উত্তর: শুদ্ধ (গ্রাহকের অধিকারসমূহ: প্রতারণাকারী বিক্রেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবী করা; বিবাদ নিষ্পত্তিকরণ: ক্ষতিপূরণ পাওয়া)।
৪। প্রকল্প-
(ক) গ্রাহকদের মধ্যে সজাগতা সৃষ্টি করার জন্য তোমরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে পাঁচটি করে শ্লোগান লেখো।
উত্তর: গ্রাহকদের মধ্যে সজাগতা সৃষ্টির জন্য পাঁচটি শ্লোগান:
১. “জাগো গ্রাহক জাগো…!” — আপনার অধিকারের বিষয়ে সচেতন হন।
২. “নগদ রশিদ না নিলে, প্রতারণার শিকার হলে!” — ক্যাশমেমো চেয়ে নিন, নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন।
৩. “মেয়াদ শেষ? হাতে রেশ! — জিনিস কেনার আগে তারিখ দেখুন বেশ।” — মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ লক্ষ করুন।
৪. “হলমার্ক সোনার দাম, আই এস আই মান, প্রতারণা রুখতে এইটুকুই জ্ঞান।” — প্রামাণিক চিহ্ন দেখে নিন।
৫. “ওজন-দাম ঠিকঠাক, তবেই কেনাকাটা হোক পাকাপাক।” — মূল্য ও ওজন যাচাই করুন।
(খ) তোমার বাড়ির আশে পাশে চার/পাঁচজন মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাদের ব্যক্তিগতভাবে লব্ধ করা গ্রাহক প্রতারণার অভিজ্ঞতাগুলোর বিবরণ লিখে সেই প্রতারণাগুলোর বিরুদ্ধে তাদের গৃহীত ব্যবস্থাগুলোর বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আপনাকে চার/পাঁচজন মানুষের সাক্ষাৎকার নিতে হবে এবং তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জানতে হবে। এটি একটি ব্যবহারিক কাজ।
(সংক্ষিপ্ত নমুনা প্রতিবেদন:
| ক্রমিক সংখ্যা | ব্যক্তির নাম (ছদ্মনাম) | প্রতারণার বিবরণ | প্রতারণার বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থা |
| :—: | :—: | :—: | :—: |
| ১ | শ্রীমতী রীতা | স্থানীয় দোকানে চাল কেনার সময় ওজনে কম দেওয়া হয়েছিল। | বিক্রেতাকে সরাসরি জানানোর পর ওজন ঠিক করে নেওয়া হয়, কিন্তু কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করা হয়নি। |
| ২ | শ্রী অরুণ | ইন্টারনেট থেকে একটি ক্যামেরা অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। সময়মতো না দিয়ে প্রায় দু সপ্তাহ পরে ক্যামেরাটি আসে এবং সেটি ত্রুটিপূর্ণ ছিল। | কোম্পানির গ্রাহক সেবায় ফোন করে অভিযোগ করা হয়। অনেক ঝামেলার পর পণ্যটি ফেরত নেওয়া হয় এবং টাকা ফেরত আসে। |
| ৩ | শ্রীমতী শিখা | একটি ফলের দোকান থেকে পচা ফল বিক্রি করা হয়েছিল, যা উপরে ভালো ফল দিয়ে ঢাকা ছিল। | পরদিন দোকানে গিয়ে প্রতিবাদ করার পর বিক্রেতা অনিচ্ছা সত্ত্বেও নতুন ফল দেয়। |
| ৪ | শ্রী বিকাশ | একটি মোবাইল ফোনের ওয়ারেন্টি কার্ডে বিক্রেতা তারিখ লিখতে ভুলে যান, ফলে পরে সার্ভিসিং নিতে সমস্যা হয়। | ফোনের সার্ভিসিং কেন্দ্রে বিক্রেতার ফোন নম্বর দিয়ে কথা বলার ব্যবস্থা করে কাজটি সম্পন্ন করা হয়। গ্রাহক আদালতে যাননি। |
| ৫ | শ্রীমতী আলিয়া | স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার সময় অতিরিক্ত সুদ আরোপ করা হয়েছিল। | ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করে মহাজনের কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করেন। |
পর্যবেক্ষণ: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ ছোটোখাটো প্রতারণার জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সরাসরি বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে বা পরিস্থিতি এড়িয়ে চলে। এর থেকে বোঝা যায় যে, গ্রাহক সুরক্ষা আইনের বিষয়ে এখনও অনেক মানুষের সজাগতার অভাব রয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *