ভারতের উদ্যোগ এবং পরিবহন ব্যবস্থা, Chapter – 5, Class – 8,

পাঠ্যবইয়ের ভিতরের এবং অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর


ভারতের উদ্যোগ এবং পরিবহন ব্যবস্থা: ক্রিয়াকলাপ ও অনুশীলনী (পৃষ্ঠা ৪৬ – ৫৪)

পৃষ্ঠা ৪৭ (ক্রিয়াকলাপ)
প্রশ্ন ১. নিচে দেওয়া ভারতের খনিজ বলয়ের মানচিত্রটি লক্ষ কর এবং খনিজ বলয়গুলোতে কী কী রাজ্য বা প্রধান স্থান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেটা জেনে নাও। ভূ-চিত্রাবলীর সাহায্য নিতে পারো।
উত্তর ১. প্রদত্ত তথ্য ও মানচিত্র অনুযায়ী ভারতের প্রধান ছয়টি খনিজ বলয় ও সেগুলোতে অন্তর্ভুক্ত রাজ্য/স্থানগুলি হলো:
* উত্তর-পূর্ব উপদ্বীপ বলয়: ছোটোনাগপুর মালভূমি—ওড়িশা—ঝাড়খণ্ড—পশ্চিমবঙ্গ—ছত্তিশগড়—অন্ধ্র প্রদেশ—মধ্য প্রদেশ—এবং মহারাষ্ট্রের অংশবিশেষ।
* মধ্য বলয়: ঝাড়খণ্ড—মধ্য প্রদেশ—ছত্তিশগড়।
* দক্ষিণ বলয়: কর্ণাটক—এবং তামিলনাডু।
* দক্ষিণ-পশ্চিম বলয়: কর্ণাটক—এবং গোয়া।
* উত্তর-পশ্চিম বলয়: আরাবল্লী পর্বতের সঙ্গে রাজস্থান—এবং গুজরাট।
* উত্তর-পূর্ব তৈল বলয়: অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা।

পৃষ্ঠা ৪৯ (ক্রিয়াকলাপ)
প্রশ্ন ১. মুম্বাই, তামিলনাড়ু, আহমেদাবাদ অঞ্চলে বয়ন উদ্যোগসমূহ গড়ে উঠার কারণ কী লেখো।
উত্তর ১. এই অঞ্চলগুলোতে বয়ন উদ্যোগ গড়ে ওঠার প্রধান কারণগুলো হলো:
* কাঁচামালের যোগান: মহারাষ্ট্র, গুজরাট এবং তামিলনাডু হলো প্রধান কার্পাস উৎপাদনকারী রাজ্য—ফলে সহজে কাঁচামাল কার্পাস পাওয়া যায়।
* বন্দরের সুবিধা: মুম্বাই ও চেন্নাইয়ের মতো বন্দরগুলোতে যন্ত্রাংশ—রং—রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি এবং উৎপাদিত কাপড় রপ্তানি করার সুবিধা রয়েছে।
* জলবায়ু ও মানব সম্পদ: এই অঞ্চলের আর্দ্র জলবায়ু সুতা কাটার জন্য উপযোগী—এছাড়া দক্ষ শ্রমিকের সহজলভ্যতাও একটি কারণ।

প্রশ্ন ২. অতীত থেকে বর্তমান অবধি পরিবহন ব্যবস্থার কী কী পরিবর্তন হয়েছে? পরিবহন ব্যবস্থায় এধরনের পরিবর্তন কেন হয়েছে লেখো।
উত্তর ২. পরিবহণ ব্যবস্থার পরিবর্তন:
* অতীত: মানুষ পায়ে হেঁটে—বা হাতি—ঘোড়া—গাধা—মোষের পিঠে উঠে যাতায়াত করত—জলপথে নৌকা বা জাহাজে জিনিসপত্র আনা-নেওয়া করত।
* বর্তমান: স্থলপথে অত্যাধুনিক সুবিধাযুক্ত মোটর-গাড়ি—রেলগাড়ি—জলপথে যন্ত্রচালিত নৌকা ও জাহাজ—এবং আকাশ পথে বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে।
পরিবহণ পরিবর্তনের কারণ:
* বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার অগ্রগতি—যা অত্যাধুনিক যানের উদ্ভাবন সম্ভব করেছে।
* অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বাণিজ্যের প্রসার—যা দ্রুত ও কম ব্যয়বহুল পরিবহণের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করেছে।
* জনসংখ্যার বৃদ্ধি—যা সামগ্রী ও যাত্রী পরিবহণের জন্য উন্নত ব্যবস্থার দাবি করে।

অনুশীলনী (পৃষ্ঠা ৫৩ – ৫৪)
১। সংক্ষেপে উত্তর দাও
প্রশ্ন ১. (ক) আকরিক লৌহ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এমন একটি উদ্যোগের নাম লেখো।
উত্তর ১. (ক) লৌহ-ইস্পাত উদ্যোগ।
প্রশ্ন ১. (খ) এক প্রকার খনিজ ইন্ধনের নাম লেখো।
উত্তর ১. (খ) কয়লা—বা পেট্রোলিয়াম—বা প্রাকৃতিক গ্যাস।
প্রশ্ন ১. (গ) ভারতের একটি কার্পাস উৎপাদনকারী রাজ্যের নাম লেখো।
উত্তর ১. (গ) মহারাষ্ট্র—বা গুজরাট—বা তামিলনাডু।
প্রশ্ন ১. (ঘ) ভারতে সবচাইতে বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত পরিবহন সেবার নাম লেখো।
উত্তর ১. (ঘ) রেল পরিবহন (বা সড়কপথ)।

২। শুদ্ধ উত্তরটি লেখো
প্রশ্ন ২. (ক) অভ্র উৎপাদনে ভারতের স্থান পৃথিবীর মধ্যে
উত্তর ২. (গ) প্রথম
প্রশ্ন ২. (খ) ভারতে প্রথম রেল চলাচল করে-
উত্তর ২. (গ) ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে
প্রশ্ন ২. (গ) ভারতের দীর্ঘতম রাষ্ট্রীয় সড়কপথটি হল-
উত্তর ২. (গ) ৭নং রাষ্ট্রীয় সড়কপথ (পুরোনো নাম, যা বারাণসী থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত বিস্তৃত)।
প্রশ্ন ২. (ঘ) ভারতের সবচেয়ে বেশি ঘনত্বের পথ এই রাজ্যে আছে-
উত্তর ২. (খ) কেরল

৩। উত্তর লেখো
প্রশ্ন ৩. (ক) ভারতবর্ষের প্রধান খনিজ বলয়সমূহ কী কী? অসম কি কোন খনিজ বলয়ের অন্তর্ভুক্ত?
উত্তর ৩. (ক) ভারতবর্ষের প্রধান ছয়টি খনিজ বলয়সমূহ হলো:
১. উত্তর-পূর্ব উপদ্বীপ বলয়—২. মধ্য বলয়—৩. দক্ষিণ বলয়—৪. দক্ষিণ-পশ্চিম বলয়—৫. উত্তর-পশ্চিম বলয়—৬. উত্তর-পূর্ব তৈল বলয়।
—হ্যাঁ—অসম উত্তর-পূর্ব তৈল বলয়ের অন্তর্ভুক্ত।

প্রশ্ন ৩. (খ) ভারতের পাঁচটি প্রধান লৌহ-ইস্পাত উদ্যোগের নাম লেখো।
উত্তর ৩. (খ) ভারতের পাঁচটি প্রধান লৌহ-ইস্পাত উদ্যোগের নাম হলো:
১. টাটা লৌহ-ইস্পাত উদ্যোগ (জামশেদপুর)—২. বার্ণপুর লৌহ এবং ইস্পাত উদ্যোগ—৩. ভিলাই ইস্পাত উদ্যোগ—৪. দুর্গাপুর ইস্পাত উদ্যোগ—৫. রাউরকেল্লা ইস্পাত উদ্যোগ।

প্রশ্ন ৩. (গ) মুম্বাই-আহমেদাবাদ অঞ্চলে বয়ন উদ্যোগসমূহ কেন গড়ে উঠেছে? কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর ৩. (গ) মুম্বাই-আহমেদাবাদ অঞ্চলে বয়ন উদ্যোগসমূহ গড়ে ওঠার প্রধান কারণগুলো হলো:
* কাঁচামালের সহজলভ্যতা: এই অঞ্চলগুলো কার্পাস উৎপাদনকারী মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্যের কেন্দ্রে অবস্থিত।
* বন্দরের নৈকট্য: মুম্বাই ও আহমেদাবাদ বন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় যন্ত্রপাতি—রং—রাসায়নিক দ্রব্য সহজে আমদানি করা যায় এবং উৎপাদিত বস্ত্রাদি রপ্তানি করার সুবিধা পাওয়া যায়।
* আর্দ্র জলবায়ু: সুতা কাটার জন্য এই অঞ্চলের আর্দ্র জলবায়ু বেশ উপযোগী।
* মূলধন ও শ্রমিক: এই অঞ্চলগুলিতে মূলধন ও দক্ষ শ্রমিকের সহজলভ্যতা আছে।

প্রশ্ন ৪. বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিদ্যার প্রয়োগ স্থল, জল এবং বায়ু পরিবহনের ক্ষেত্রে কী ধরনের পরিবর্তন সাধন করেছে লেখো।
উত্তর ৪. বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির প্রয়োগে পরিবহণ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন এসেছে:
* স্থলপথ (রেলপথ ও সড়কপথ): প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যাধুনিক মোটর-গাড়ি—উচ্চ গতিসম্পন্ন রেলগাড়ি—এবং উন্নতমানের রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে পরিবহণ দ্রুত—নিরাপদ—এবং আরামদায়ক হয়েছে।
* জলপথ: যন্ত্রচালিত ভারী জাহাজ—ফেরি—ইত্যাদি নির্মাণ সম্ভব হওয়ায় জলপথে কম খরচে ভারী এবং বৃহৎ পরিমাণের সামগ্রী সহজেই পরিবহন করা যায়।
* আকাশপথ: আকাশী যান বা বিমান তৈরি হওয়ায় অতি কম সময়ের মধ্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া যায়, যা সবচেয়ে দ্রুত পরিষেবা।
   —মোটকথা, প্রযুক্তির ফলে পরিবহণ ব্যবস্থা দ্রুততর—দক্ষ—এবং বৃহত্তর পরিসরের হয়েছে।

প্রশ্ন ৫. পরিবহন ব্যবস্থা একটি দেশের শিরা-উপশিরা স্বরূপ—কথাটির সমর্থনে তিনটি যুক্তি দর্শাও।
উত্তর ৫. পরিবহন ব্যবস্থা একটি দেশের শিরা-উপশিরা স্বরূপ—এই কথাটির সমর্থনে তিনটি যুক্তি নিচে দেওয়া হলো:
* ১. অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ভিত্তি: যেমন শিরা-উপশিরা দেহের প্রতিটি কোণে পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহ করে—তেমনি পরিবহন ব্যবস্থা দেশের প্রতিটি অঞ্চলের শিল্পজাত দ্রব্য—কৃষিজাত সামগ্রী এবং কাঁচামাল বাজার ও উদ্যোগ পর্যন্ত পৌঁছে দেয়—যা দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা বজায় রাখে।
* ২. কর্মসংস্থান ও যোগাযোগ: পরিবহন ব্যবস্থা লাখো মানুষকে নিযুক্তির সুযোগ দেয়—এটি দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে যোগাযোগ—যাতায়াত—এবং আন্তঃসম্পর্ক স্থাপন করে—যা সামাজিক সংহতি বৃদ্ধি করে।
* ৩. জাতীয় নিরাপত্তা ও সমন্বয়: দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জরুরি পরিষেবা—যেমন সেনা ও রসদ—দুর্যোগ ত্রাণ—দ্রুত পৌঁছে দিতে পরিবহণ ব্যবস্থা অপরিহার্য—যা দেশের শিরা-উপশিরার মতো কাজ করে—একতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখে।

প্রশ্ন ৬। ভূচিত্রাবলীর সাহায্যে লেখো-
(ক) অসমে রাষ্ট্রীয় সড়কপথ সমূহ যে সব জেলা সদরকে স্পর্শ করেছে।
উত্তর ৬. (ক) অসমে রাষ্ট্রীয় সড়কপথ সমূহ যে সব জেলা সদরকে স্পর্শ করেছে (যেমন):
—ধুবড়ি—কোকরাঝার—বঙাইগাঁও—গোয়ালপাড়া—গুয়াহাটি (কামরূপ মহানগর)—তেজপুর (শোণিতপুর)—নগাঁও—যোরহাট—ডিব্রুগড়—তিনসুকিয়া—শিলচর (কাছাড়)—করিমগঞ্জ—হাইলাকান্দি—দিফু (কার্বি আংলং)—হাফলং (ডিমা হাসাও)—ইত্যাদি।

(খ) উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর নাম যেগুলো এখনো রেলপথে সংযুক্ত হয়নি।
উত্তর ৬. (খ) উত্তর-পূর্ব ভারতের এমন কোনো রাজ্য নেই যেটি বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে রেলপথে সংযুক্ত নয়—তবে কিছু রাজ্যের রেল সংযোগের প্রসার এখনও অপেক্ষাকৃত কম (যেমন: মিজোরাম এবং মেঘালয়ের কিছু পাহাড়ি অঞ্চল)।

(গ) ব্রহ্মপুত্রের উত্তর পারে স্থিত ধেমাজি জেলার রেলপথের শেষ রেল ষ্টেশনটির নাম।
উত্তর ৬. (গ) ব্রহ্মপুত্রের উত্তর পারে স্থিত ধেমাজি জেলার রেলপথের শেষ রেল ষ্টেশনটির নাম হলো মুরকংসেলেক (Murkongselek)।

প্রশ্ন ৭. আন্তজার্তিক বিমান বন্দর সমূহের ভূমিকা কেন গুরুত্বপূর্ণ? লেখো।
উত্তর ৭. আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সমূহের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ:
* বৈদেশিক বাণিজ্য ও অর্থনীতি: এরা দেশের দ্রুত এবং মূল্যবান সামগ্রী আমদানি ও রপ্তানির প্রধান মাধ্যম—যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটায় এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে।
* পর্যটন ও যোগাযোগ: এই বিমান বন্দরগুলো বিদেশী পর্যটকদের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে—যা পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটায়—এবং আন্তর্জাতিক স্তরে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করে।
* জাতীয় মর্যাদা: একটি দেশে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের উপস্থিতি বিশ্বমানের পরিকাঠামো এবং দেশের উন্নত আর্থিক স্থিতিকে প্রতিফলিত করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *