আপনার দেওয়া পৃষ্ঠা (১ থেকে ১২) গুলোর প্রশ্ন ও উত্তর নিচে বাংলায় দেওয়া হলো:
পাঠ-১: প্রাকৃতিক সম্পদ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর (পৃষ্ঠা ২-৫, ১২)
পৃষ্ঠা ৩-এর প্রশ্ন
উত্তর লেখো-
১. প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে কী বোঝ?
Ans.প্রকৃতির যে সমস্ত উপাদান মানুষের কাজে লাগে, সেগুলোকে প্রাকৃতিক সম্পদ বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, মাটি, জল, বাতাস, খনিজ পদার্থ, উদ্ভিদ, বন্যপ্রাণী ইত্যাদি হলো প্রকৃতির অমূল্য ও উপযোগী প্রাকৃতিক সম্পদ।
২. ব্যবহারযোগ্য ভূমি সম্পদের চাহিদা দিনে দিন কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে?
Ans.ব্যবহারযোগ্য ভূমি সম্পদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার প্রধান দুটি কারণ হলো:
* জনসংখ্যা বৃদ্ধি: পৃথিবীতে জনসংখ্যা ক্রমে বেড়ে যাওয়ায় সেই অনুপাতে কৃষি, বসতি এবং অন্যান্য কাজের জন্য ব্যবহারোপযোগী ভূমির অভাব দেখা দিয়েছে।
* অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা: জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার কারণে চাষের জমি, বনভূমি, জলাভূমি ইত্যাদি ভূমির অত্যধিক ব্যবহার ও অপব্যবহার হচ্ছে, যার ফলস্বরূপ ব্যবহারযোগ্য মাটির চাহিদা বাড়ছে।
পৃষ্ঠা ৫-এর প্রশ্ন
উত্তর লেখো –
১. ভূমির গঠন কীভাবে হয়?
Ans. ভূমির গঠন হলো এক ধরনের ভূতাত্বিক প্রক্রিয়া, যেখানে শিলার বিচূর্ণীভবনের ফলে একটি কোমল স্তরের সৃষ্টি হয়। সাধারণত এক সেন্টিমিটার মতো মাটির একটি স্তর সৃষ্টি হতে বহু শতকের প্রয়োজন হয়।
২. কী কী কারণে ভূমির অবক্ষয় হয়?
Ans. বিভিন্ন কারণে মাটির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য, গুণাগুণ এবং গঠন বিনষ্ট হয়ে ভূমির অবক্ষয় ঘটে। এর প্রধান কারণগুলো হলো:
* অপরিকল্পিত কৃষি কার্য, ঔদ্যোগীকরণ, অরণ্য এবং ঘাসবনের অত্যধিক ব্যবহার।
* কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার, কীটনাশক দ্রব্য ইত্যাদি বেশি পরিমাণে প্রয়োগ।
* কৃষিজমিতে ইটভাটার মতো উদ্যোগ স্থাপন।
৩. ভূমি সংরক্ষণ করার ব্যবস্থাসমূহ কী কী?
Ans. ভূমির অবক্ষয় রোধ এবং সংরক্ষণের জন্য কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে:
* ভূমির গুণাগুণ সাপেক্ষে ঘাসবন এবং বৃক্ষরোপণ করা।
* পরিবেশ-অনুকূল কৃষি পদ্ধতি প্রয়োগ করা।
* উচ্চভূমি অঞ্চলে সোপান (terrace) পদ্ধতিতে চাষ করা।
* যথেচ্ছভাবে গাছ কাটা এবং পাহাড়ের মাটি কাটা বন্ধ করা।
* কৃষিক্ষেত্রের চারদিকে উপকারী গাছপালা সারিবদ্ধভাবে রোপণ করা।
পৃষ্ঠা ৫-এর প্রশ্ন
ক্রিয়াকলাপ –
পৃষ্ঠা ৯-এর প্রশ্ন
উত্তর লেখো-
১. শক্তি সম্পদ মানে কী?
Ans. যে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে শিল্প, কৃষি, পরিবহণ, ঘরোয়া কাজ এবং অন্যান্য কাজ-কর্মে প্রয়োজনীয় শক্তি বা চালিকা শক্তি পাওয়া যায়, তাকে শক্তি সম্পদ বলে।
২. জীবাশ্ম ইন্ধনসমূহ চিরদিন একই পরিমাণে না থাকার কারণ কী?
Ans. জীবাশ্ম ইন্ধন, যেমন কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি চিরদিন একই পরিমাণে না থাকার কারণ হলো:
* ব্যাপক ব্যবহার: ঘরোয়া কাজ ছাড়াও উদ্যোগসমূহে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মোটর-গাড়ি তথা অন্যান্য যান বাহন ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য জীবাশ্ম ইন্ধনের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে।
* দ্রুত হ্রাস: এই ব্যাপক ব্যবহারের ফলে জীবাশ্ম ইন্ধনগুলোর পরিমাণ দ্রুত গতিতে কমে আসছে, কারণ এই সম্পদগুলি অ-নবীকরণযোগ্য এবং সীমিত।
পৃষ্ঠা ১১-এর প্রশ্ন
উত্তর লেখো-
১. পরম্পরাগত শক্তি বলতে কী বোঝ?
Ans.যে সকল শক্তি সম্পদ দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং যার ভান্ডার সীমিত, তাকে পরম্পরাগত শক্তি বলা হয়। এগুলি মূলত অনবীকরণযোগ্য সম্পদ, যেমন:
* কয়লা: জীবাশ্ম ইন্ধন যা লৌহ-ইস্পাত উদ্যোগ, বাষ্পীয় ইঞ্জিন ও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়।
* পেট্রোলিয়াম: তরল জীবাশ্ম ইন্ধন যা পরিশোধন করে পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন ইত্যাদি উৎপন্ন হয়।
* প্রাকৃতিক গ্যাস: ভূগর্ভে পেট্রোলিয়ামের সঙ্গে মজুত থাকে এবং ঘরোয়া ও ঔদ্যোগিক ইন্ধন রূপে ব্যবহৃত হয়।
২. শক্তির বিকল্প হিসেবে অপরম্পরাগত শক্তি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
Ans. অপরম্পরাগত শক্তি, যেমন সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি ইত্যাদি শক্তির বিকল্প হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ:
* অক্ষয় বা নবীকরণযোগ্য: এই শক্তিগুলো নবীকরণযোগ্য, তাই জীবাশ্ম ইন্ধন শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই বিকল্প উৎস থেকে শক্তি আহরণের ব্যবস্থা করা সম্ভব।
* পরিবেশ-বান্ধব: এগুলোর ব্যবহারে দূষণের মাত্রা কম হয়, অর্থাৎ এগুলো পরিবেশ দূষণমুক্ত।
৩. শক্তি সম্পদ কেন সংরক্ষণ করতে হয়?
শক্তি সম্পদ সংরক্ষণ করা অত্যাবশ্যক কারণ:
* ভবিষ্যতের নিরাপত্তা: জীবাশ্ম ইন্ধনের ভান্ডার দ্রুত কমে আসছে। সংরক্ষণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইন্ধনের ভান্ডার শূন্য হওয়া থেকে বাঁচানো যায়।
* অপচয় রোধ: ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ এবং অপচয় না করলে ভবিষ্যতের জন্য সম্পদ উদ্বৃত্ত হবে।
পৃষ্ঠা ১২-এর অনুশীলনী
১। সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও-
(ক) মাটির চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ার যেকোনো দুটি কারণ:
Ans. 1. জনসংখ্যা বৃদ্ধি: জনসংখ্যা দ্রুতহারে বেড়ে যাওয়ায় খাদ্য উৎপাদন, ঘরবাড়ি নির্মাণ এবং অন্যান্য কাজের জন্য ভূমির চাহিদা বাড়ছে।
2. অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা ও ঔদ্যোগীকরণ: অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা ও উদ্যোগ স্থাপনের জন্য কৃষিজমি বা প্রাকৃতিক ভূমির উপর চাপ সৃষ্টি হওয়ায় চাহিদা বাড়ছে।
(খ) কোনো এক স্থানের জনবসতি ঘন হওয়ার কারণ:
Ans. অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ: সাধারণত উর্বর মাটি, জলের পর্যাপ্ত সুবিধা এবং কৃষি কার্যের জন্য উপযোগী সমভূমি অঞ্চলে জনবসতি ঘন হয়।
* অর্থনৈতিক সুবিধা: শিল্প, যাতায়াত, যোগাযোগ ইত্যাদি গড়ে ওঠার সুবিধা থাকলে সেই স্থানে মানুষের বসতি ঘন হয়।
(গ) ভূমি অবক্ষয় হওয়ার দুটি কারণ:
Ans. অপরিকল্পিত ব্যবহার: অপরিকল্পিত কৃষি কার্য এবং অরণ্য ও ঘাসবনের অত্যধিক ব্যবহারের ফলে মাটির গুণাগুণের পরিবর্তন ঘটে।
* দূষণ: কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দ্রব্য বেশি পরিমাণে প্রয়োগের ফলে মাটি দূষিত হয়।
(ঘ) বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে জল সংকট দেখা দেওয়ার দুটি কারণ:
Ans. জলের উৎস দূষণ: জলের উৎসসমূহ শিল্প থেকে নির্গত আবর্জনা, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দ্রব্য দ্বারা দূষিত হয়ে ক্রমে ব্যবহারযোগ্য জলের অভাব সৃষ্টি করছে।
* জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত ব্যবহার: জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জলের ব্যবহার যথেষ্ট বেড়েছে, কিন্তু সেই অনুপাতে ব্যবহারযোগ্য জলের যোগান বাড়েনি।
পৃষ্ঠা ১২-এর অনুশীলনী
২। শুদ্ধ উত্তরে চিহ্ন দাও-
(ক) জল সংরক্ষণে সাহায্য করে-
(১) বিনা কারণে জলের টেপ খুলে রাখলে, (২) ভূ-গর্ভের জলের অত্যধিক ব্যবহার করলে, (৩) বৃষ্টির জল জমিয়ে রাখলে।
Ans. (৩) বৃষ্টির জল জমিয়ে রাখলে।
(খ) বিশুদ্ধ জল পাওয়ার জন্য-
(১) নদীতে আবর্জনা ফেলতে হয়, (২) জলে রাসায়নিক সার মেশাতে হয়, (৩) জলের উৎস প্রদূষণহীন রাখা উচিত।
Ans.(৩) জলের উৎস প্রদূষণহীন রাখা উচিত।
(গ) কোনটি শক্তি সংরক্ষণে সাহায্য করে না?
(১) জীবাশ্ম ইন্ধনের ব্যবহার অধিক হলে, (২) অপরম্পরাগত শক্তির সু-ব্যবহার করলে, (৩) শক্তি সম্পদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হলে।
Ans.১) জীবাশ্ম ইন্ধনের ব্যবহার অধিক হলে,
পৃষ্ঠা ১২-এর অনুশীলনী
৩। ভূমি সম্পদের গুরুত্ব এবং ব্যবহারের বিষয়ে লেখো। (৮০টি শব্দের মধ্যে)
উত্তর:
ভূমি সম্পদের গুরুত্ব এবং ব্যবহার
ভূমি সম্পদ জীবজগতের প্রধান আধার। মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এবং ইন্ধনের মূলে এই সম্পদই রয়েছে। উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্থিতি এবং বিকাশ ভূমির ওপর নির্ভরশীল। কৃষি, শিল্প, যাতায়াত, যোগাযোগ ইত্যাদি ভূমি সম্পদের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে। মানুষের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রেও মাটির ভূমিকা সর্বাধিক।
ভূমি সাধারণত কৃষি কার্য, শিল্প স্থাপন, খনিজ সম্পদ আহরণ, বনায়ন, বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। স্থানটির অবস্থান, জলবায়ু, মাটির গুণাগুণ, জলের উৎস ও খনিজ সম্পদের মতো প্রাকৃতিক কারকের ওপর নির্ভর করে মানুষ ভূমি ব্যবহার করে।
পৃষ্ঠা ১২-এর অনুশীলনী
৫। বনজ সম্পদ এবং জলজ সম্পদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী ধরনের ভূমিকা নেওয়া উচিত?
Ans. বনজ সম্পদ এবং জলজ সম্পদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের নিম্নলিখিত ভূমিকাগুলো নেওয়া উচিত:
* বনজ সম্পদের ক্ষেত্রে:
* বনজ সম্পদের বাণিজ্যিক ব্যবহারের (যেমন কাঠ, বাঁশ, কাঁচামাল সংগ্রহ) পাশাপাশি এর পরিবেশগত উপযোগিতা (অক্সিজেন যোগান, বন্যপ্রাণীর আশ্রয়, মাটি সংরক্ষণ) নিশ্চিত করতে হবে।
* বনজ সম্পদের ধ্বংস রোধ করে সেগুলোর সংরক্ষণ এবং বৃদ্ধির জন্য সচেতন হতে হবে।
* গাছপালা ও জীব-জন্তুর পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রেখে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করতে হবে।
* জলজ সম্পদের ক্ষেত্রে (সাগর-মহাসাগরের সম্পদ):
* সামুদ্রিক মাছ, খনিজ সম্পদ (যেমন লবণ, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস) কম খরচে পরিবহন ব্যবস্থার মতো সুবিধাগুলো মানব সমাজের উপকারের জন্য ব্যবহার করতে হবে।
* সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে পরিবেশের উপর যাতে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে, সেই দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
* জলজ প্রাণীর সংখ্যা যাতে হ্রাস না পায়, তার জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
পৃষ্ঠা ১২-এর অনুশীলনী
৬। শক্তি সম্পদ সংরক্ষণের জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত?
উত্তর: শক্তি সম্পদ সংরক্ষণের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা উচিত:
* জীবাশ্ম ইন্ধনের পরিমিত ব্যবহার: কয়লা ও পেট্রোলিয়ামের মতো জীবাশ্ম ইন্ধনগুলোর ভান্ডার সীমিত, তাই এগুলোর পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।
* অপরম্পরাগত শক্তির ব্যবহার: সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ ইত্যাদির মতো নবীকরণযোগ্য এবং দূষণমুক্ত অপরম্পরাগত শক্তির উৎস ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
* সচেতনতা বৃদ্ধি: শক্তি সম্পদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী এবং সংরক্ষণের প্রতি সচেতন হওয়া প্রত্যেকেরই কর্তব্য। পরিবার, বিদ্যালয় এবং সমাজের সর্বস্তরে এ বিষয়ে প্রচেষ্টা হাতে নেওয়া উচিত।
* অপচয় রোধ: কোনো সম্পদই যেন অপচয় না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
পৃষ্ঠা ১২-এর অনুশীলনী
৭। সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো-
(ক) বন্যপ্রাণী
(খ) জীবাশ্ম ইন্ধন
(গ) মরুকরণ
(ঘ) সৌর শক্তি
(ঙ) ভূমিস্খলন
উত্তর:
(ক) বন্যপ্রাণী (Wild Life):
বন্যপ্রাণী বলতে বনাঞ্চলে বসবাসকারী জীব-জন্তুকে বোঝায়। অরণ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবানু থেকে শুরু করে অতিকায় জীব-জন্তু সবারই আশ্রয়স্থল। এই জীব-জন্তুরা বনজ সম্পদের পারিস্থিতিক ব্যবহারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এরা পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং মানুষকে আনন্দ প্রদান করে। তবে বিভিন্ন কারণে গাছপালা ধ্বংস হওয়ায় অনেক জীব-জন্তু ও পাখির প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। এদের সংরক্ষণ করা পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য অতি প্রয়োজনীয়।
(খ) জীবাশ্ম ইন্ধন (Fossil Fuel):
জীবাশ্ম ইন্ধন হলো ভূপৃষ্ঠের নিচে শিলাস্তরের মধ্যে জমা হওয়া সেই প্রাকৃতিক সম্পদ যা উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ থেকে বহু যুগ ধরে তৈরি হয়েছে। এগুলো মূলত দহন করে শক্তি উৎপাদন করা হয়। কয়লা, পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস হলো প্রধান জীবাশ্ম ইন্ধন। যেমন, কয়লাকে ঘরোয়া ইন্ধন, লৌহ-ইস্পাত উদ্যোগ ও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করা হয়। পেট্রোলিয়ামকে ‘তরল সোনা’ বলা হয় এবং পরিশোধন করে পেট্রোল, ডিজেল ইত্যাদি তৈরি হয়। এই সম্পদগুলো সীমিত, তাই এগুলোর সংরক্ষণ জরুরি।
(গ) মরুকরণ (Desertification):
প্রাকৃতিক বা মানবজনিত কারণে মরুভূমির প্রসার হওয়া বা নতুনভাবে মরুভূমির সৃষ্টি হওয়াকে মরুকরণ বলা হয়। অত্যধিক উৎপাদনের জন্য জমিতে বারে বারে চাষ, বেশি সার, রাসায়নিক দ্রব্য এবং জলসিঞ্চন প্রয়োগের ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। এতে জল ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায় এবং অঞ্চলটি শুকনো বা মরুসদৃশ হতে পারে। মরুভূমির পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বনাঞ্চল ধ্বংস এবং অধিক পশুচারণও মরুকরণের কারণ।
(ঘ) সৌর শক্তি (Solar Energy):
সূর্য অফুরন্ত শক্তির ভান্ডার। সূর্যের তাপ ও আলোকে সৌর কোষের (Solar Cell) সাহায্যে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়, যা সৌর শক্তি নামে পরিচিত। এই বিদ্যুৎ শক্তির সাহায্যে সৌর চুল্লি, সৌর হিটার ইত্যাদি চালানো হয়। সৌরশক্তি ঘড়ি, ক্যালকুলেটর, মহাকাশ যান ও উপগ্রহে ব্যবহার করা হয়। এটি একটি অক্ষয় ও দূষণমুক্ত শক্তি সম্পদ।
(ঙ) ভূমিস্খলন (Land Sliding):
ভূমিস্খলন হলো একটি প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগ, যেখানে অবিশ্রান্ত বৃষ্টি বা ভূমিকম্পের ঝাঁকুনির ফলে উঁচু স্থানের ভূখণ্ড খসে পড়ে। পাহাড়ি অঞ্চলে মাটি কাটা বা গাছপালা কাটার ফলেও ভূমিস্খলন হতে পারে। ভূমিস্খলন পরিবেশ নষ্ট করার সঙ্গে সঙ্গে বিপদও সৃষ্টি করে।
পৃষ্ঠা ১২-এর অনুশীলনী
৮। পার্থক্য দেখাও
(ক) গ্রামাঞ্চলের ভূমির ব্যবহার এবং শহরাঞ্চলের ভূমির ব্যবহার
উত্তর:
((ক) গ্রামাঞ্চলের ভূমির ব্যবহার এবং শহরাঞ্চলের ভূমির ব্যবহার:
গ্রামাঞ্চলের ভূমির ব্যবহার — মূল ব্যবহার: প্রধানত কৃষি কার্য, পশুপালন এবং বসতি স্থাপনের জন্য।
পরিবর্তনের প্রবণতা — কৃষিকার্যের জন্য বন, ঘাসবন, ডোবা ইত্যাদিকে কৃষিভূমিতে রূপান্তরিত করার প্রবণতা দেখা যায়।
উদ্দেশ্য — মূলত বেঁচে থাকার সম্বল হিসেবে চাষ-বাস করা হয়।
শহরাঞ্চলের ভূমির ব্যবহার — মূল ব্যবহার: প্রধানত বসতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, উদ্যোগ স্থাপন, রাস্তা-ঘাট নির্মাণের জন্য।
পরিবর্তনের প্রবণতা — বর্ধিত জনসংখ্যার প্রয়োজন মেটাতে কাছের কৃষিভূমি, জলাভূমি বা বনভূমি শহরে সম্প্রসারিত হয়।
উদ্দেশ্য — বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য জায়গা তৈরি, অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং প্রসারের স্বার্থে।
(খ) পরম্পরাগত এবং অপরম্পরাগত শক্তি:
Ans.পরম্পরাগত শক্তি —
উৎস: এই শক্তিগুলো দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং এদের ভান্ডার সীমিত (অনবীকরণযোগ্য)।
উদাহরণ: কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি।
পরিবেশ প্রভাব: এগুলোর ব্যবহারে দূষণ সৃষ্টি হয়।
অপরম্পরাগত শক্তি —
উৎস: এই শক্তিগুলো সম্প্রতি ব্যবহার শুরু হয়েছে এবং এদের ভান্ডার অক্ষয় বা নবীকরণযোগ্য।
উদাহরণ: সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলশক্তি, জোয়ারের শক্তি, জৈব গ্যাস ইত্যাদি।
পরিবেশ প্রভাব: এগুলোর ব্যবহারে দূষণের মাত্রা কম হয় (দূষণমুক্ত)।
পৃষ্ঠা ১২-এর অনুশীলনী
৯। তোমাদের আশে-পাশে থাকা বনজ সম্পদসমূহের সংরক্ষণ এবং বৃদ্ধির জন্য কী কী উপায় নেওয়া যায় উল্লেখ করো।
উত্তর:
আশে-পাশে থাকা বনজ সম্পদের সংরক্ষণ এবং বৃদ্ধির জন্য নিম্নলিখিত উপায়গুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:
* বৃক্ষরোপণ: খালি বা অব্যবহৃত মাটিতে নতুন গাছ ও চারা রোপণ করা এবং পুরনো গাছ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া।
* সচেতনতা বৃদ্ধি: বনজ সম্পদ যে মানুষের অক্সিজেনের যোগান, বন্যপ্রাণীকে আশ্রয় এবং মাটি সংরক্ষণে সাহায্য করে, সেই বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা।
* অত্যধিক ব্যবহার রোধ: খড়ি, কাঠ বা কাঁচামালের জন্য যথেচ্ছভাবে গাছ কাটা বন্ধ করা।
* বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ: বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করা, যারা পরিবেশে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
* অগ্নি নির্বাপণ: বনাঞ্চলে দাবানল (দাবানল) রোধ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
*
পৃষ্ঠা ১২-এর অনুশীলনী
১০। অপরম্পরাগত শক্তিসম্পদ কি? এইগুলো কিভাবে পাওয়া যায় বা সংগ্রহ করা হয় তার একটি তালিকা প্রস্তুত করো।
উত্তর: অপরম্পরাগত শক্তিসম্পদ (Non-Conventional Energy):
যে শক্তিগুলোর উৎস হল অক্ষয় বা নবীকরণযোগ্য এবং যা ব্যবহারে পরিবেশে দূষণের মাত্রা কম হয়, তাকে অপরম্পরাগত শক্তিসম্পদ বলে। এই শক্তিগুলো জীবাশ্ম ইন্ধনের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত।
অপরম্পরাগত শক্তিসম্পদ সংগ্রহ বা পাওয়ার উপায়:
শক্তিসম্পদের নাম ও সংগ্রহের পদ্ধতি:
সৌর শক্তি — সূর্যের তাপ ও আলোকে সৌর কোষের (Solar Cell) সাহায্যে বিদ্যুৎ শক্তিতে উৎপাদন করা হয়।
বায়ু শক্তি — উপকূলীয় অঞ্চল বা পর্বতের গিরিপথে যেখানে বাতাসের তীব্রতা বেশি, সেখানে বায়ু কল (Wind Mill) বসিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করা হয়।
ভূ-তাপক শক্তি — ভূ-গর্ভে স্থিত পাথর থেকে নির্গত তাপ শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয় (যেমন উষ্ণ প্রস্রবণ, গলিত লাভা)।
জোয়ার শক্তি — সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার জল আবদ্ধ করে ভাটার সময় নেমে যেতে দিয়ে টার্বাইনের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়।
জৈব গ্যাস — মৃত জীব-জন্তু ও উদ্ভিদের অবশিষ্ট, কৃষিজাত আবর্জনা, গোবর ইত্যাদিকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় গ্যাস ইন্ধনে রূপান্তরিত করা হয়।
জলবিদ্যুৎ শক্তি — নদী বা বৃষ্টির জল বাঁধের সাহায্যে আবদ্ধ করে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়।
