পিতা ও পুত্র, Class 10, SEBA, New course

পিতা ও পুত্র, Class 10, SEBA, New course

প্রশ্ন ১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।
(ক) সাজাহান কে?
উত্তরঃ সাজাহান হলেন ভারত সম্রাট।
(খ) পিতা-পুত্র পাঠটি কোন নাটক থেকে গ্রহণ করা হয়েছে?
উত্তরঃ পিতা-পুত্র পাঠটি সাজাহান নাটক থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।
(গ) সাজাহান নাটকের নাট্যকার কে?
উত্তরঃ সাজাহান নাটকের নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়।
(ঘ) সম্রাটের জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম কী?
উত্তরঃ সম্রাটের জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম ছিল দারা।
(ঙ) ঔরঙ্গজীব সম্রাট সাজাহানের জ্যেষ্ঠ/কনিষ্ঠ পুত্র। (শুদ্ধ উত্তর লেখো)।
উত্তরঃ ঔরঙ্গজেব সম্রাট সাজাহানের কনিষ্ঠ পুত্র। (শুদ্ধ)।
(চ) সুজা কোথাকার নবাব ছিলেন?
উত্তরঃ সুজা বাংলার নবাব ছিলেন।
(ছ) নাটকে স্বকল্পিত রাজাটি কে?
উত্তরঃ নাটকে স্বকল্পিত রাজা হলেন মোরাদ।
(জ) যশোবন্ত সিংহ কে?
উত্তরঃ যশোবন্ত সিংহ ছিলেন মারওয়ারের অধিপতি।
(ঝ) জয়সিংহ কে?
উত্তরঃ জয়সিংহ ছিলেন বিকানীরের মহারাজ।
(ঞ) দারার স্ত্রীর নাম কী ছিল?
উত্তরঃ দারার স্ত্রীর নাম ছিল নাদিরা।
(ট) জাহানারা কে?
উত্তরঃ জাহানারা হলো ভারত সম্রাট সাজাহানের কন্যা।
(ঠ) মোহম্মদ কার পুত্র ছিল?
উত্তরঃ মোহম্মদ ঔরঙ্গজেবের পুত্র ছিল।
(ড) দারার পুত্রের নাম কী ছিল?
উত্তরঃ দারার পুত্রের নাম ছিল সোলেমান।
(ঢ) মোরাদ কোথায় রাজত্ব করতেন?
উত্তরঃ মোরাদ বাংলায় রাজত্ব করতেন।
(ণ) দিলীর খাঁ কে?
উত্তরঃ দিলীর খাঁ সৈনাধ্যক্ষ।
প্রশ্ন ২। সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।
(ক) জাহানারা কে? তার পরিচয় দাও।
উত্তরঃ জাহানারা হলো ভারত সম্রাট সাজাহানের কন্যা। জাহানারা ব্যক্তিত্বময়ী রমণী এবং ঔরঙ্গজেবের প্রতিস্পধিনী। তাঁর বুদ্ধি ক্ষুরধার, ইচ্ছাশক্তি তীব্র, ব্যক্তিত্ব প্রবল, পিতার প্রতি শ্রদ্ধাগভীর এবং ভাইয়ের প্রতিও স্নেহময়ী। নূরজাহানের পর ইতিহাসে এমন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন নারীচরিত্র মোগল ইতিহাসে দেখা যায় না।
(খ) “আমি যাচ্ছি আপনার সিংহাসন রক্ষা কর্তে”— উক্তিটি কার? কখন কাকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে? এর কারণ কী?
উত্তরঃ উক্তিটি সাজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র দারার। উক্তিটি দারা পিতা সাজাহানকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে। উদ্ধত সুজা, স্বকল্পিত সম্রাট মোরাদ এবং তার সহকারী ঔরঙ্গজেব বিদ্রোহের নিশান উড়িয়ে ডঙ্কা বাজিয়ে আগ্রায় প্রবেশ করতে চাইলেও স্নেহান্ধ পিতা তাদের শাস্তি দিতে চাইছেন না। অবাধ্য পুত্রদেব বুঝিয়ে শান্ত করতে চাইলে দারা পিতাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য উক্তিটি করেছে।
(গ) নাদিরা কার কন্যা? নাদিরার পরিচয় দাও।
উত্তরঃ নাদিরা পরভেজের কন্যা।
নাদিরা দারার মতন অসাম্প্রদায়িক, ধর্মপ্রাণা, ক্ষমতানিস্পৃহ নারী। নাদিরা স্বামীগত প্রাণা, প্রেমময়ী স্নেহশীলা। তাঁর চরিত্রে সম্রাজ্ঞীর উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই, দম্ভ ও অহমিকার প্রকাশ ঘটেনি। তাঁর কাছে একান্ত কাম্য ছিল শান্ত, নিরুদ্বেগ, সহজ, সরল জীবন। দিল্লীর মসনদের জন্য তিনি লালায়িত হননি।
(ঘ) “কিন্তু তুইও এর মধ্যে যাসনে’—উক্তিটি কার? কখন কাকে, কেন করা হয়েছে? তাঁর প্রকৃত কাজ কি হওয়া উচিত ছিল?
উত্তরঃ উক্তিটি ভারত সম্রাট সাজাহানের। উক্তিটি সাজাহান, কন্যা জাহানারাকে করেছেন।
সাজাহানের তিন পুত্র সুজা, মোরাদ এবং ঔরঙ্গজেব পিতা সাজাহানকে আক্রমণ করতে তৈরি। একমাত্র দারা পিতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তিনি এই বিদ্রোহ দমন করতে চাইছেন। জাহানারাও দারাকে সমর্থন জানিয়েছে। সেও দারাকে যুদ্ধে যাবার জন্য অনুপ্রাণিত করছে।
(ঙ) ‘সাজাহান শুধু পিতা নয় সম্রাট।’ কথাটির তাৎপর্য লেখো।
উত্তরঃ সম্রাট সাজাহানের অসুস্থতার খবর পেয়ে বঙ্গদেশে সুজা, গুজরাটে মোরাদ এবং দাক্ষিণাত্যে ঔরঙ্গজেব এই তিন পুত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করে সসৈন্যে দিল্লী অভিমুখে যাত্রা করে। জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা এদের বিদ্রোহ দমনের জন্য সৈন্য প্রেরণের অনুমতি প্রার্থনা করলে স্নেহকাতর পিতা সাজাহান দারার এই প্রস্তাবে প্রথমে অসম্মতি প্রকাশ করেন। কেননা এর ফলে ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ হবে, আর এই আত্মঘাতী যুদ্ধে নিজেরাই ধ্বংস হবে। সাজাহান স্নেহকাতর পিতা। তাঁর পুত্ররা মাতৃহারা। মাতার অবর্তমানে তিনি পিতার স্নেহ দিয়েই তাদের মানুষ করেছেন। সেজন্য তিনি স্নেহ দিয়েই বিদ্রোহী পুত্রদের শাসন করবেন।
(চ) ‘পিতা-পুত্র’ পাঠে পিতাপুত্রের পরিচয় দাও।
উত্তরঃ মোগল সম্রাট সাজাহানের চার পুত্র দারা, সুজা, মোরাদ, এবং ঔরঙ্গজেব, কন্যা জাহানারা।
সুজা ছিলেন বাংলাদেশের সুবেদার। মোরাদ নিজে স্বকল্পিত সম্রাট। কনিষ্ঠ পুত্র ঔরঙ্গজেব মোরাদের সহকারী হয়ে আগ্রায় প্রবেশ করার জন্য তৈরি। একমাত্র জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা পিতার নামে রাজ্য পরিচালনা করছেন। সাজাহান আগ্রার রাজপ্রাসাদে একমাত্র কন্যা জাহানারার তত্ত্বাবধানাধীন।
(ছ) ‘পিতা-পুত্র’ পাঠটি কোন নাটকের কোন অঙ্কের কোন দৃশ্য থেকে গ্রহণ করা হয়েছে?
উত্তরঃ ‘পিতা-পুত্র’ পাঠটি নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সাজাহান নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্য থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৩। শূন্যস্থান পূর্ণ করো।
(ক) আমার হৃদয় এক …………জানে। সে শুধু……….. শাসন।
উত্তরঃ আমার হৃদয় এক শাসন জানে। সে শুধু স্নেহের শাসন।
(খ) আমি দর্শনে………….. এর চেয়ে বড় সাম্রাজ্য পেয়েছি।
উত্তরঃ আমি দর্শনে উপনিষদে এর চেয়ে বড় সাম্রাজ্য পেয়েছি।
(গ) আমি যাচ্ছি আপনার…………… রক্ষা করতে।
উত্তরঃ আমি যাচ্ছি আপনার সিংহাসন রক্ষা করতে।
(ঘ) তা’রা জানুক সম্রাট…………. , …………. কিন্তু…………. নয়?
উত্তরঃ তা’রা জানুক সম্রাট সাজাহান স্নেহশীল কিন্তু দুর্বল নয়?
(ঙ) আমার পুত্র ……………সুজার বিরুদ্ধে যাত্রা করার জন্য লিখছি।
উত্তরঃ আমার পুত্র সোলেমানকে সুজার বিরুদ্ধে যাত্রা করার জন্য লিখছি।
(চ) আর তার সঙ্গে………….. মহারাজ………….. আর…………. দিলীর খাঁকে পাঠাচ্ছি।
উত্তরঃ আর তার সঙ্গে বিকানীরের মহারাজ জয়সিংহ আর সৈন্যাধ্যক্ষ দিলীর খাঁকে পাঠাচ্ছি।
প্রশ্ন ৫। ব্যাখ্যা করো।
(ক) ‘কিন্তু, তুইও এর মধ্যে যাস্ নে, তোঁর কাজ-স্নেহ-ভক্তি ‘অনুকম্পা’।
উত্তরঃ সাজাহান নাটকের প্রথম অঙ্ক প্রথম দৃশ্যের অন্তর্গত এই উক্তিটি সম্রাট সাজাহানের জ্যেষ্ঠ কন্যা জাহানারাকে করেছেন।
বিদ্রোহী পুত্রদের বিরুদ্ধে সৈন্য প্রেরণের জন্য দারা যে অনুমতি প্রার্থনা করেছিলেন তাতে প্রথমে সম্মতি দেননি। কিন্তু কন্যা জাহানারার তেজোদীপ্ত যুক্তিপূর্ণ কথায় সাজাহান অনুমতি না দিয়ে পারেন না। অনুমতি দিয়ে ব্যথাদীর্ণ স্নেহকাতর পিতা পুত্রদের ভবিষ্যৎ বুঝতে পারেন। সেজন্য জাহানারাকে বলেন যে, যেন এই ভ্রাতৃদ্বন্দ্বের মধ্যে জড়িয়ে না পড়ে। সে নারী, স্নেহ ভক্তি অনুকম্পা নারীর অন্তরের ভূষণ। অন্যপক্ষে সিংহাসনের লোভে আত্মঘাতী যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া আবর্জনাস্বরূপ। জাহানারা যেন এই লোভ হিংসার দ্বন্দ্ব থেকে নিজেকে দূরত্বে রেখে সংসারে সকলকে স্নেহ প্রীতি, প্রেম দিয়ে জয় করে।
(খ) ‘আমি এখন তা বলতে পারি না। সে বড় ভয়ানক না-নাথ, এই যুদ্ধ কাজ নেই।”
উত্তরঃ সাজাহান নাটকের প্রথম অঙ্ক প্রথম দৃশ্যের অন্তর্গত আলোচ্য উক্তিটি নাদিরা করেছে।
সাজাহানের বিদ্রোহী পুত্রদের দমন করতে দারা সৈন্য প্রেরণের অনুমতি প্রার্থনা করলে সাজাহান উক্তিটি করেছেন। স্নেহকাতর পিতা দারার এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে চান না। কেননা আত্মঘাতী ভ্রাতৃদ্বন্দ্বের অনিবার্য পরিণাম নিজেদেরই ধ্বংস। সেজন্য তিনি চান স্নেহ দিয়েই এই বিদ্রোহী পুত্রদের শাসন করতে। এছাড়া এই যুদ্ধে যে পক্ষেরই পরাজয় হোক না কেন, সাজাহানের সমান ক্ষতি। যদি দারা পরাজিত হয়, তবে দারা ব্যথিত হবে। যদি সুজা, মোরাদ বা ঔরঙ্গজেব পরাজিত হয়, তবে তারা ব্যথিত হয়ে ফিরে যাবে। ওরা সকলেই তাঁর কাছে সমান বেদনাদায়ক।
নাদিরা স্বামী দারার সুখ দুঃখ বিপর্যয় সকলই শান্ত সহিষ্ণুচিত্তে গ্রহণ করেছেন। নাদিরার চরিত্রে পারিবারিক যুদ্ধবৃত্তির ঐতিহ্য অপেক্ষা স্নেহবাৎসল্য প্রেমব্যাকুলতার আধিক্য লক্ষ্য করা যায়।
(গ) ‘কিন্তু এ শাস্তি তাদের— একার নয়’।
উত্তরঃ দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত সাজাহান নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র সাজাহান। নাটকে সম্রাট সাজাহানের দ্বিধাবিভক্ত হৃদয়ের পরিচয় আছে। সাজাহান ছিলেন গ্রেট মোগলের তৃতীয় মোগল ভারতবর্ষের সম্রাট। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি পুত্র-কন্যার জনক। স্বভাবতই সাজাহানের মধ্যে দুটি সত্তার অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। এই দুই সত্তার অস্তিত্বের সমন্বয় করতে না পেরে সাজাহানের জীবন এক ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। সাজাহান সম্রাট হলেও পিতৃস্নেহে অন্ধ ছিলেন। স্নেহান্ধ পিতা হিসেবে সাজাহান চেয়েছেন অবাধ্য এবং বিদ্রোহী পুত্রদের স্নেহের শাসনে বশ করতে। এটি ছিল তাঁর জীবনের চরমতম ভুল। এই ভুল সংশোধন করতে গিয়ে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে সাজাহানের হৃদয়। সাজাহান নিজে বন্দী হয়েছেন— অন্যান্য পুত্রেরা নিহত হয়েছে। আত্মক্ষয়ের তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে সাজাহানকে জীবনের শেষ দিনগুলি পার করতে হয়েছে।
(ঘ) ‘পিতা, এই কি আপনার উপযুক্ত কথা—এই দৌর্বল্য কি ভারত সম্রাট সাজাহানকে সাজে।
উত্তরঃ আলোচ্য উক্তিটি সাজাহান নাটকে জাহানারা করেছে। সম্রাট সাজাহানের অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে বঙ্গদেশে সুজা, গুজরাটে মোরাদ এবং দাক্ষিণাত্যে ঔরঙ্গজেব এই তিন পুত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করে সসৈন্যে দিল্লী অভিমুখে যাত্রা করে। সাজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা এদের বিদ্রোহ দমনের জন্য সৈন্য প্রেরণের অনুমতি প্রার্থনা করলে স্নেহকাতর পিতা সাজাহান দারার এই প্রস্তাবে প্রথমে অসম্মতি প্রকাশ করেন কেননা এর ফলে ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ হবে। আর এই আত্মঘাতী যুদ্ধে নিজেরাই ধ্বংস হবে। কিন্তু কন্যা জাহানারা পিতার এ স্নেহ দুর্বলতাকে সম্রাটের কর্তব্যচ্যুতি বলে অভিহিত করে বলে যে পুত্র কেবল পিতার অধিকারী, স্নেহের অধিকারী নয়। অবাধ্য, অন্যায়কারী পুত্রকে শাসন করাও পিতার কর্তব্য।
এর উত্তরে সাজাহান বলেছেন- তিনিই স্নেহকাতর পিতা। বিশেষ করে তাঁর পুত্ররা মাতৃহারা। মাতার অবর্তমানে তিনি পিতার স্নেহ দিয়েই তাদের মানুষ করেছেন। সেজন্য তিনি স্নেহ দিয়েই বিদ্রোহী পুত্রদের শাসন করবেন।
(ঙ) তারা জানুক, সম্রাট সাজাহান স্নেহশীল—কিন্তু দুর্বল নয়।’
উত্তরঃ আলোচ্য উক্তিটি সাজাহান নাটকে ভারত সম্রাট সাজাহান করেছেন। 
আলোচ্য নাটকটিতে দারার মুখে সুজার বিদ্রোহ ঘোষণা, মোরাদের সম্রাট নাম গ্রহণ এবং ঔরঙ্গজেবের সঙ্গে মোরাদের যোগাযোগ সাজাহানকে বিচলিত করেছে। তাই তিনি তাদের রাজধানীতে আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। সম্রাট কন্যা জাহানারা তাঁর দুর্বলতা সম্বন্ধে সচেতন করে দিলেও, সাজাহান কন্যাকে ভর্ৎসনা করেন এবং দ্বিধাহীন কণ্ঠে উচ্চারণ করেন ‘আমার হৃদয় এক শাসন মানে, সে শুধুই স্নেহের শাসন।
জ্যেষ্ঠপুত্র দারা পিতার কাছে বারংবার অনুমতি প্রার্থনা করেছে বিদ্রোহ দমন করতে। সাজাহান বারংবার অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। জাহানারা দারাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন। তিনি মনে করেন দারার লড়াই ন্যায়ের সিংহাসন রক্ষা করার লড়াই, দুষ্কৃতকে শাসন করার লড়াই, দেশের কোটি কোটি নিরীহ প্রজাদের অরাজক অত্যাচারের গ্রাস থেকে বাঁচানোর লড়াই। তখন দারা প্রতিজ্ঞা করেছেন- তিনি ভাইদের কাউকে পীড়ন বা বধ করবেন না, কেবলমাত্র তাঁদের বেঁধে পিতার পদতলে এনে দেবেন। তারপর সাজাহানের যা ইচ্ছা তখন পুত্রদের সঙ্গে করবেন। কেননা ভারত সম্রাট সাজাহানের বিদ্রোহী পুত্রেরা এতটুকু অন্তত জেনে রাখুক- সম্রাট সাজাহান স্নেহশীল পিতা কিন্তু দুর্বল সম্রাট নন। বিদ্রোহ দমন করার শক্তি এখনো তার বাহুতে রয়েছে।
প্রশ্ন ৬। তাৎপর্য লেখো।
(ক) কালরাত্রে আমি একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি।
উত্তরঃ নাদিরা দারার মহিষী এবং দারার মতন অসাম্প্রদায়িক, ধর্মপ্রাণা, ক্ষমতানিস্পৃহা নারী। নাদিরা পতিগতপ্রাণা, প্রেমময়ী, স্নেহশীল এবং ধর্ম-পরায়ণা। তিনি দিল্লীর মসনদের জন্য লালায়িত হননি। স্বামীর সুখ-দুঃখ বিপর্যয় সমস্তই শান্তসহিষ্ণুচিত্তে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তাঁর পূর্বপুরুষ বীর, সাহসী, রণনিপুণ। নাদিরার কাছে একান্ত কাম্য ছিল শান্ত, নিরুদ্বেগ, সহজ, সরল জীবন। নাটকের প্রথম দৃশ্যেই নাদিরা দুঃস্বপ্ন দর্শন করেছেন এবং দারার আসন্ন যুদ্ধের পরিণতি সম্পর্কে তাঁর অন্তরে ভীতিভাব জাগ্রত হয়েছে। তিনি সসঙ্কোচে সেই আশঙ্কা প্রকাশ করে তেজস্বিনী জাহানারার কাছে তিরস্কৃত হয়েছেন। নাদিরার দুঃস্বপ্ন ও আতঙ্ক সত্যে পরিণত হয়েছে।
(খ) এ যুদ্ধ অনিবার্য, আমি যাই।
উত্তরঃ দারা সাজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং সবচাইতে প্রিয়জন। অসুস্থ পিতার প্রতিনিধি হিসেবেই তিনি সাম্রাজ্য পরিচালনা করতেন। সম্রাট দারার প্রতি স্নেহশীল হলেও অন্যান্য পুত্রদের প্রতিও তাঁর একই পরিমাণ স্নেহ-মায়া-মমতা। সম্রাটের আদেশ দারা যেন তাঁর ভাইদের প্রতি খড়্গহস্ত না হন। নিরুৎসাহী দারা পিতার আদেশ অমান্য করতে পারে না।
এরকম পরিস্থিতিতে জাহানারা জানতে চায় যে এটা কি সম্রাট সাজাহানের উপযুক্ত কথা। এ দুর্বলতা তাঁর কি সাজে? পিতা জানান যে তাঁর পুত্রদের জন্য তাঁর একটাই শাসন-স্নেহের শাসন। দারার স্ত্রী নাদিরা দারাকে কেবলমাত্র একটি অনুরোধ জানায় যে এই যুদ্ধ আর নয়। দারা শেষবার জানায় যে এ যুদ্ধ অনিবার্য। তিনি সৈন্যদের যুদ্ধে যাবার আজ্ঞা দিতে চান। সম্রাট সাজাহান জাহানারাকে জানান যে সে যেন এ নোংরা স্পর্শে না যায়। সে পবিত্র থাকুক।
(গ) আমি দর্শনে উপনিষদে এর চেয়ে বড় সাম্রাজ্য পেয়েছি। সাম্রাজ্য কি অন্তঃপুর। একটা ছেলেখেলা।
উত্তরঃ সাজাহান নাটকে দারা উপনিষদের দর্শনে ও বেদান্তে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। ফারসী পণ্ডিতদের সাহায্যে তিনি উপনিষদের ফারসী অনুবাদ করান। তিনি ভারতীয় দর্শন ও উপনিষদকে বড় সাম্রাজ্যরূপে অভিহিত করেছেন।
সাজাহানের অসুস্থতার খবর পেয়ে সুজা, মোরাদ এবং ঔরঙ্গজেব বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তিন পুত্রের এই বিদ্রোহের খবর দারা পিতা সাজাহানকে জানায় এবং বিদ্রোহী পুত্রদের দমনের জন্য প্রেরণের অনুমতি চান। পিতা সাজাহান পুত্রদের এই আচরণে ক্ষুব্ধ হলেও তাঁর পিতৃহৃদয় পুত্রদের জীবনহানির ভয়ে সৈন্য প্রেরণের অনুমতি দিতে সম্মত, এই সময় কন্যা জাহানারা প্রবেশ করে ও পিতার উক্তি শুনে প্রতিবাদ জানায়। পিতা সাজাহান যখন বলেছে— ‘তাঁরা আমার পুত্র। আমার হৃদয় শুধু এক শাসন জানে। সে শুধু স্নেহের শাসন।’ এই কথার উত্তরে জাহানারা পিতাকে বলেন যে—পিতা পুত্রের সম্পর্ক অন্তঃপুরের —সাম্রাজ্য শাসনের ক্ষেত্রে এই সম্পর্কে কোন স্থান নেই। কারণ সাম্রাজ্য অন্তঃপুর নয়। একজন প্রজা বিদ্রোহী হলে সম্রাট তাকে শাস্তি দেন। পুত্র বিদ্রোহী হলে সেই একই শাস্তি বিধান সম্রাটের কর্তব্য। পিতাকে কর্তব্যবোধে উদ্দীপ্ত করতে জাহানারা তীব্র তীক্ষ্ণ ভাষায় নিজের আবেগকে প্রকাশ করেছে।
ব্যাকরণ
প্রশ্ন ৭। ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখো।
(ক) শাসনক্ষম — শাসনে অক্ষম (৭মী তৎপুরুষ)
(খ) মাতৃহারা — মাতার দ্বারা হারা (তৃতীয় তৎপুরুষ)
(গ) সিংহাসন — সিংহ চিহ্নিত আসন (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়)
(ঘ) সৈন্যাধ্যক্ষ — সৈন্যদের অধ্যক্ষ (ষষ্ঠী তৎপুরুষ)
(ঙ) অরাজক — ন-রাজক (নঞ তৎপুরুষ)
(চ) নির্মম — মমতা নাই যেখানে (কর্মধারয় সমাস)
প্রশ্ন ৮। বাক্যসংকোচন বা এককথায় প্রকাশ করো।
যা বলা যায় না — অবাচ্য।
রাজা নেই যেখানে — অরাজক।
যে পরে জন্মগ্রহণ করে — অনুজ।
যা দুঃখে লাভ করা যার — দুর্লভ।
বিধান করে যে — বিধায়ক।
বিচলিত মন যার — বিমনা।
বিষ্ণুর গদা — কৌমুদকী।
অশ্ব রাখার স্থান — মন্দুরা।
আকাশ ও পৃথিবী — ক্রন্দসী।
গম্ভীর ধ্বনি, হাতি বাঁধিবার শিকল, চোখের মণি, হস্তীর শাবক, পতিপুত্রহীনা নারী, লালপদ্ম, শ্বেতপদ্ম, হাতীর চিৎকার, পক্ষীর কলরব।
উত্তরঃ গম্ভীর ধ্বনি — মন্ত্র। 
হাতি বাঁধিবার শিকল — আন্দু। 
চোখের মণি — কনীনিকা। 
হস্তীর শাবক — হস্তীশাবক। 
পতিপুত্রহীনা নারী — অবীরা।
লালপদ্ম — কোকনদ। 
শ্বেতপদ্ম — পুণ্ড্ররীক, পুন্নাগ। 
হাতীর চিৎকার — বৃংহন।
পক্ষীর কলরব — কূজন, কলতান।
প্রশ্ন ১০। বিপরীতার্থক শব্দ লেখো।
আসামী — ফরিয়াদী। 
নাস্তিক — আস্তিক। 
প্রলয় — সৃষ্টি। 
উদ্ধৃত — বিনীত।
অপচয় — সঞ্চয়। 
আরদ্ধ — সমাপ্ত। 
অনুগ্রহ — নিগ্রহ।
ভীত — সাহসী। 
বন্ধন — মুক্তি।
তিরস্কার — পুরস্কার। 
অজ্ঞ — বিজ্ঞ।
নিজে করো–
নবীন, বিনাশ, সস্তা, পূজক, সাদৃশ্য, গুপ্ত, স্থাবর, সঞ্চয়, অমৃত, প্রসারণ, বর্ধমান, ন্যূন।
উত্তরঃ নবীন — পুরাতন। বিনাশ — সৃষ্টি। সস্তা — দামী। 
পূজক — সেবক।সাদৃশ্য — বৈসাদৃশ্য। গুপ্ত — খোলা। 
স্থাবর — অস্থাবর। সঞ্চয় — ব্যয়। অমৃত — গরল। প্রসারণ — সংকোচন। 
বর্ধমান — ক্ষীয়মান। 
ন্যূন — বেশি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *