ক) ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটির কবি কে ?
উত্তর : কবি জীবনানন্দ দাশ “আবার আসিব ফিরে” কবিতাটি রচনা করেছিলেন।
(খ) কবিতাটি কোন কাব্যের’ অন্তর্গত ?
উত্তর : আলোচ্য কবিতাটি কবি জীবনানন্দ দাশের “রূপসী বাংলা” নামক কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ।
(গ) কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত প্রধান কাব্যগ্রন্থটির নাম কী ?
উত্তর : কবি জীবনানন্দ দাশের রচিত মূল কাব্য গ্রন্থটির নাম হলো “বনলতা সেন”
(ঘ) কবি জীবনানন্দ দাশ কর্মজীবনে কী করতেন ?
উত্তর : কবি তার মূল কর্মজীবনে ছিলেন একজন ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক।
(ঙ) আবার আসিব ফিরে ‘কবিতাটিতে কবি কোথায় ফিরে আসতে চেয়েছেন ?
উত্তর : কবিতাটিতে কবি তার জন্মভুমি বাংলাতেই ফিরতে চেয়েছিলেন।
(চ) কবি মৃত্যুর পর কীভাবে জন্মভূমিতে ফিরে আসতে চান ?
উত্তর : কবি জীবনানন্দ দাশ তার মৃত্যুর পর হাঁস, কাক, সাদা বক বা লক্ষীপেঁচা হয়ে আবার তার জন্মভূমি বাংলাদেশে ফায়ার আস্তে চেয়েছিলেন।
(ছ) কবিটিতে কোন নদীর কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর : আলোচ্য কবিতাটিতে জলঙ্গী নদীর কথা বলা হয়েছিল।
(জ) কবি কোন জন্মে পায়ে ঘুঙুর থাকবে বলে বলেছেন ?
উত্তর : কবিতায় কবি বলেছিলেন যখন তিনি হাঁস রূপে জন্ম গ্রহণ করবেন সেইসময় তার পায়ে থাকবে ঘুঙুর।
(ঝ) লক্ষ্মীপেঁচা কোন গাছের ডালে ডাকে ?
উত্তর : কবিতায় শিমুল গাছের ডালে লক্ষ্মীপেঁচা বসে থাকে।
(ঞ) কবি কিভাবে কাঁঠাল ছায়ায় আসবেন বলে আশা করেন ?
উত্তর : কবি যখণ কাক রূপে জন্ম নেবেন তখন তিনি কুয়াশার বুকে কাঁঠাল ছায়ায় আসবেন বলে আসা করে ছিলেন।
(৪) শূন্যস্থান পূরণ করো :
(ক) রূপসার ___ জলে হয়তো ___ এক সাদা ছেড়া পালে ___ বায় ।
উত্তর :ঘোলা , কিশোর , ডিঙা
(খ) শুনিবে এক ___ ডাকিতেছে ___ ডালে হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে।
উত্তর : লক্ষ্মীপেঁচা , শিমূলের
(গ) আবার আসিব আমি ___ নদী মাঠ খেত ___ , ___ ঢেডয়ে ভেজা বাংলার এ ___ করুণ ___ ।
উত্তর : বাংলার, ভালোবেসে , জলঙ্গীর , সবুজ , ডাঙ্গায় ।
Q.1 কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত চারটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।
Ans:- ‘বনলতা সেন’, ‘সাতটি তারার তিমির’, ‘রূপসী বাংলা’ ও ‘মহাপৃথিবী’।
Q.2 কবির কাব্যগুলোতে বিশেষত কী কী ভাবের আকর্ষণ বেশি দেখা যায়?
Ans:- কবির কাব্যগুলোতে ইতিহাস-চেতনা, বিপন্ন মানবতার ব্যথা, বিষন্নতা ও নিঃসঙ্গতা, প্রকৃতি চেতনা প্রভৃতি ভাবের আকর্ষণ বেশি দেখা যায়।
Q.3 ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি কোন্ কোন্ রূপে পুনরায় জন্ম নিয়ে ফিরে আসতে চান?
Ans:- কবি ভোরের কাক, শঙ্খচিল, শালিক, হাঁস, বক, কিশোর, লক্ষ্মীপেঁচা, সুদর্শন এর মধ্যে যে কোনো একটি রূপে পুনরায় জন্ম নিয়ে ফিরে আসতে চান।
Q.4 কবি যখন হাঁস হবেন তখন তিনি কী করবেন?
Ans:- কবি যখন হাঁস রূপে জন্ম নেবেন তখন তিনি সারাদিন বাংলার কোন কলমি ঘেরা পুকুরের জলে সাঁতার কেটে ভেসে বেড়াবেন।
Q.5 কবির জন্ম ও মৃত্যু বিষয়ে লেখো।
Ans:- কবি জীবনানন্দ দাশ পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) বরিশাল শহরে ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর ট্রাম দুর্ঘটনায় কলকাতায় মৃত্যু হয়।
Q.1 কবি পুনঃজন্মে বিশ্বাস করেন কী? এ বিষয়ে যা জান বর্ণনা করো।
Ans:- কবি পূনঃ জন্মে বিশ্বাস করেন। আলোচ্য কবিতায় আমরা দেখতে পাই কবি তার উন্মভূমি রূপসী বাংলাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন। তিনি বাংলার নদী, মাঠঘাটি, পশু-পাখি, গাছ-পালার প্রতি দুর্বার আকর্ষণ অনুভব করেন। তিনি বাংলার নিসর্গ সৌন্দর্যে বিভোর। তাই পরজন্মে মানুষ হয়ে জন্মাতে না পারলেও বিভিন্ন পশু পাখির মধ্যে নিজেকে ফিরে পাবার আশা রাখেন।
Q.2 কবি হাঁস হয়ে পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে চান কেন?
Ans:- কবি জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী। তিনি বাংলার মাঠ, ঘাট, পশু-পাখি, গাছলা সব কিছুর প্রতি গভীর আকর্ষণ অনুভব করেন। বাংলার সজল শ্যামল প্রকৃতি ও তার বুকে লালিত পালিত মানুষ ও প্রাণীদের দেখে তার আশ মেটে না। তিনি বার বার এই রূপসী বাংলায় ফিরে আসতে চান। তাই তিনি কলমির গন্ধ ভরা পুকুরের জলে ভাসমান হাঁসরূপে পরজন্মে এই বাংলার বুকে ফিরে আসতে চান।
Q.3 নবান্ন উৎসব কী? এ বিষয়ে কী জান লেখো।
Ans:- গ্রাম বাংলায় নতুন ধান কাটার পর বাঙালির ঘরে ঘরে যে উৎসব পালিত হয়, তাকে নবান্ন উৎসব বলা হয়। হেমন্তকালে বাংলাদেশে শালিধান কাটার পর কৃষকরা নতুন ধান থেকে নতুন চালের অন্ন গ্রহণ করা উপলক্ষে এক বিশেষ উৎসবের আয়োজন করে। এই উৎসবই নবান্ন উৎসব। তাই প্রতি বছর শালিধান কাটার পর অগ্রহায়ণ মাসে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে এই উৎসব পালিত হয়।
Q.4 টীকা লেখো – জলাঙ্গী, ধানসিড়ি।
Ans:-
জলাঙ্গী – জলাঙ্গী পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য নদী। এটি একটি ছোট নদী। কিন্তু বর্ষায় এই নদী বেশ খরস্রোতা হয়ে ভীষণরূপ ধারণ করে। নদীটি মেঘালয়ের শিলং থেকে অসমের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বাংলার কৃষিকাজে এই নদীর জল অত্যন্ত সহায়ক হয়।
ধানসিড়ি – ধানগিড়ি বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি ছোট্ট নদী। এই নদীতে বছরের বেশিরভাগ সময় জাল থাকে না। এই নদীর স্রোত শান্ত ও ধীর প্রকৃতির। এই নদীর জলে হাঁস, বক খেলা করে মাছ ধরে। এই নদীটি বাংলাদেশের শীহট্ট, বরিশালের উপর দিয়ে প্রবাহিত। কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় এই নদীটির নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
Q.5 “ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে” – উদ্ধৃতাংশটির অন্তর্নিহিত অর্থ কি?
Ans:- ‘কার্তিকের নবান্নের দেশে’ বলতে কবি জীবনানন্দ দাশ এখানে রূপসী বাংলাদেশের কথা বলেছেন। এই বাংলার মাটিতে মানুষ, পশু, পাখি যে কোনো রূপে কবি বার বার ফিরে আসতে চেয়েছেন। তার বিশ্বাস মৃত্যুর পর হয়তো বা তিনি কোন এক কাক রূপে এই বাংলায় ফিরে আসতে পারেন। তাই উদ্ধৃতাংশটিতে রূপসী বাংলাদেশে কবির ফিরে আসার আকুতি বার বার ধ্বনিত হয়েছে।
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
Q.6 ‘আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে’ – এই উদ্ধৃতাংশটির অন্তর্নিহিত অর্থ ব্যাখ্যা করো।
Ans:- ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ মানুষের রূপে না হলেও অন্য যে কোনো রূপে ফিরে আসতে চান। তিনি ফিরে আসতে চান ধানসিড়ি নদীর তীরে শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে। কুয়াশার ভোরের কাক হয়ে ফিরে আসতে চান। হয়তো বা তিনি কলমির গন্ধে ভরা পুকুরে সারাদিন সাঁতার কেটে ভেসে বেড়ানো হাঁস হয়ে আসবেন। সন্ধ্যার আকাশে তিনি সুদর্শন হয়ে উড়বেন। শিমুলের ডালে কোনো এক লক্ষ্মীপেঁচা হয়ে ডাকতে পারেন। আবার সাদা পালতোলা ডিঙা বাইতে থাকা কিশোরের মধ্যেও কবিকে দেখা যেতে পারে। এদের ভিড়ে আমরা অবশ্যই কবিকে খোজে পাব বলে কবির দৃঢ় বিশ্বাস।
Q.7 কবি জীবনানন্দ দাশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
Ans:- কবি জীবনানন্দ দাশ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। তিনি পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) বরিশাল শহরে ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রবীন্দ্র পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন। তার রচনায় ইতিহাস চেতনা, বিপন্ন মানবতার ব্যথায় বিষন্নতা ও নিঃসঙ্গতা, ইনিয় গ্রাহ্য রূপ রস গন্ধ স্পর্শের উপলব্ধি, জগতের প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি গভীর আকর্ষণের ভাবধারা পরিলক্ষিত হয়। তার রচিত ‘বনলতা সেন’ ‘আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাবাগ্রন্থ। কবি জীবনানন্দ দাশের রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘ঝারাপালক’। তার রচিত অন্নান্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল রুপসী বাংলা, ধূসর পাণ্ডুলিপি ও সাতটি তারার তিমির।
১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর ট্রাম দুর্ঘটনায় কলকাতায় মৃত্যু হয়।
Q.1 “এই কার্তিকের নবান্নের দেশে” – এর অর্নহিত ভাব প্রকাশ করো।
Ans:- কবি জীবনানন্দ দাশ গ্রাম বাংলার নিসর্গ সৌন্দর্যে বিভোর। তাই তিনি মৃত্যুর পরও পুনরায় এর বুকেই ফিরে আসতে চান। আলোচ্য কবিতায় তার সেই দৃঢ় বিশ্বাসই ফুটে উঠেছে। ‘কার্তিকের নবান্নের দেশে’ বলতে কবি এখানে রূপসী বাংলাদেশের কথা বলেছেন। এই রূপসী বাংলায় জন্মে তিনি গর্বিত। কার্তিক মাসে শালিধান কেটে ফসল ঘরে তোলার পর বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্নের উৎসব। প্রতিটি বাঙালির ঘরে আসে খুশির জোয়ার। তাই তিনি তার জন্মভূমি বাংলাদেশকে ‘কার্তিকের নবান্নের দেশ’ বলেছেন এবং পরজন্মে ভোরের কাক হয়ে এই নবান্নের দেশে অর্থাৎ রূপসী বাংলায় ফিরে আসতে চান।
Q.2 ‘আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে’ – কবি পুনরায় জন্মগ্রহণ করে কাদের ভিড়ে ফিরে আসতে চান, বর্ণনা করো।
Ans:- কবি জীবননান্দ দাশ বাংলার নদী-মাঠ-খেতকে মনে প্রাণে ভালোবেসেছেন। তাই তিনি যে-কোনো রূপে এই বাংলার বুকে ফিরে আসতে চেয়েছেন। মানুষ রূপে না হলেও অন্য কোনোরূপে কবি এই বাংলার বুকে ফিরে আসতে চান পরজন্মে। তিনি বলেছেন ধানসিড়ি নদীর তীরে নিজ গ্রামে একদিন ফিরে আসবেন শঙ্খচিল বা শালিকরূপে। হয়তো বা কলমির গন্ধে ভরা পুকুরের নির্মল জলে হাঁস হয়ে সাঁতার কাটবেন। হয়তো বা সন্ধ্যার আকাশে সুদর্শন হয়ে উড়বেন। শিমুলের ডালে বসে ডাকতে থাকা কোনো এক লক্ষ্মীপেঁচা হয়েও ফিরে আসতে পারেন। আবার উঠোনের ঘাসে বসে ধান ছড়াতে থাকা কোনোও এক শিশুরূপে ফিরে আসতে পারেন। রূপসার ঘোলা জলে সাদা ছেড়া পাল তোলা ডিঙা বাইতে থাকা কোনও এক কিশোরের বেশেও তিনি এই বাংলায় ফিরে আসতে পাবেন। হয়তো বা সন্ধ্যায় রাঙা মেঘ সাঁতরে নীড়ে ফিরে আসা একঝাক সাদা বকের মধ্যে তাকে দেখা যেতে পারে। তাই কবি বলেছেন পরজন্মে তাকে এদের ভিড়েই খোজে পাওয়া যাবে।
Q.3 কবিতাটির সারাংশ সংক্ষেপে ব্যক্ত করো।
Ans:- সারাংশ :
কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার মাটি, নদী, প্রকৃতি ও মানুষকে গভীরভাবে ভালোবেসেছেন। তাই জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী কবি আবার এই বাংলায় ফিরে আসতে চান। তিনি ধান সিড়ি নদীর তীরে কোথাও জন্ম নিতে চান! হয়তো তিনি মনুষ্যরূপে জনু নাও নিতে পারেন, তবে শঙ্খচিল, শালিক বা ভোরের কাক হয়েও জন্ম নিতে পারেন। কার্তিক মাসে ফসল ঘরে তোলার পর বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্ন উৎসব। মেতে উঠা এই নবান্ন উৎসবে কুয়াশায় কবি ভেসে আসবেন একদিন কাঠাল ছায়ায়। হয়তো বা হাঁস হবেন। সারাদিন তার কেটে যাবে কলমির গন্ধ ভরা বাংলার খাল-বিলের জলের উপর ভেসে ভেসে। তিনি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেতকে গভীরভাবে ভালোবাসেন। তাই কবি হয়তো বাংলার মাঠে, ঘাটে, ক্ষেতে, জলাঙ্গীর ডাঙায় কোন প্রাণীর মধ্যে মিশে থাকতে পারেন । হয়তো তিনি হতে পারেন শিমুল গাছের ডালে বসে ডাকতে থাকা এক শ’স্পেশ্চাও। আবার তাকে দেখা যেতে পারে উঠোনের ঘাসে ধান ছড়াতে থাকা এক শিশুর মধ্যে কিংবা বুপসা নদীর ঘোলা জলে সাদা ছেড়া পাল তুলে ডিঙা বাইতে থাকা কোন এক কিশোরের মধ্যে। তিনি ফিরে আসতে পারেন রাঙা মেঘের ভেতর দিয়ে সন্ধ্যার আকাশে নীড়ে ফিরে আসা কোন সাদা বকের প্রতি ছিবির মধ্যে। পরনে এদের সবার ভিড়ে কবি নিজেকে ফিরে পেতে চান। কবির এ বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে কবিতায় ফুটে উঠেছে।
Q.4 ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
Ans:- নামকরণঃ
কৰি বাংলার নিসর্গ সৌন্দর্যে বিভোর। কবি জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী। পরজন্মে তিনি এই বাংলার বুকেই জন্মগ্রহণ করতে চান। হয়তো ব্য তিনি মানুষ না হয়েও জন্মাতে পারেন। তবে বাংলার প্রকৃতির পটে বিচরণশীল পশু, পাখি ও মানুষের ভিড় কোনো না কোন রুপে থাকবেনই। তিনি পুনরায় বাংলার বুকে জন্ম নেবেন। তিনি ফিরে আসবেন ধানসিড়িটির তীরে, হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে। কবির ধারণা তিনি হয়তো ভোরের কাক, হয়তো বা সাদা বক হয়ে জন্ম নিয়ে ফিরে যাবেন। অথবা পরনে শিমুল গাছে বসে ডাকতে থাকা কোন লক্ষ্মীপেঁচা হয়ে আসবেন। তিনি হয়তো হাঁস হয়ে কলমির গন্ধভরা বাংলার খাল বিলের জলের উপর ভেসে সারাদিন কাটিয়ে দিতে পারেন। আবার তিনি থাকতে পারেন উঠোনের ঘাসে ধান ছড়াতে থাকা কোন এক শিশুর মধ্যে কিংবা থাকতে পারেন রূপসানদীর ঘোলা জলে সাদা ছেড়া পাল তুলে ডিঙা বাইতে যাওয়া কোন এক কিশোরের মধ্যে। তিনি ফিরে আসতে পারেন রাঙা মেঘ সাঁতরে সন্ধ্যার আকাশে নীড়ে ফিরে আসা কোন ধবল বকের প্রতিচ্ছবির মধ্যে। কবি আবার এদের ভিড়ে নিজেকে ফিরে পেতে চান পরজন্মে। কবির এ বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে তার কবিতায় ফুটে। উঠেছে। তাই আলোচ্য কবিতার নামকরণ ‘আবার আসিব ফিরে’ সার্থক হয়েছে।
Q.5 ব্যাখ্যা লেখো – ‘ভোরের কাক হয়ে এই নবান্নের দেশে’।
Ans:- আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা ‘আবার আসিব ফিরে’ শীর্ষক কবিতা হতে গৃহীত হয়েছে। কবি এখানে পরজন্মে মানুষ রুপে না হলেও অন্য যে কোন রুপে ফিরে আসতে চেয়েছেন।
কবি গ্রাম বাংলার অনন্ত সৌন্দর্যে বিভোর। এই বাংলার বুকে তিনি মানুষ রূপে না হলেও অন্য যে কোনো কালে যে কোন রুপে ফিরে আসতে চেয়েছেন। হয়তো ভোরের কাক হয়ে ফিরে আসতে পারেন। এখানে নবান্নের দশ বলতে বাংলাদেশের সব ঘরে কার্তিক মাসের শেষে শালিধান কেটে ঘরে তোলার পর গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব পালিত হয়।তাই কবি বাংলাকে ‘নবান্নের দেশ’ বলেছেন এবং পরজন্মে কবি এই নবান্নের দেশে ভোরের কাক হয়ে ফিরে আসতে চেয়েছেন।
Q.6 ব্যাখ্যা লেখো – “বাংলার নদী মাঠ খেত ভালোবেসে”।
Ans:- আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার অংশ বিশেষ। উদ্ধৃত অংশে কবির সমস্ত মনের বাসনা, সমস্ত অনুভূতি গ্রাম বাংলাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে।
কবি জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী। তিনি পরজন্মে তার জন্মভূমি রূপসী বাংলার বুকে ফিরে আসতে চান। কারণ বাংলার নদী, মাঠ, খেত সবকিছুকে তিনি গভীরভাবে ভালোবাসেন। বাংলার চিরন্তন রূপ দেখে তার আশা মেটে না। তিনি বার বার বাংলার নিসর্গ সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করতে চান। বাংলার নদী-মাঠ-খেতের সঙ্গে কবির গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক। তাই পরজন্মেও এই বাংলার বুকে জন্ম নিতে চান। কারণ তিনি এই বাংলার নদী মাঠ, খেত সবকিছুকেই মনে প্রাণে ভালোবাসেন।
Q.7 ব্যাখ্যা লেখো – ‘আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে’।
Ans:- উদ্ধৃতাংশটি কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার অন্তর্গত। কবি এখানে যে কোন রূপে বাংলার বুকে ফিরে আসতে চেয়েছেন।
‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ মানুষের রূপে না হলেও অন্য যে কোনো রূপে ফিরে আসতে চান। তিনি ফিরে আসতে চান ধানসিড়ি নদীর তীরে শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে। কুয়াশার ভোরের কাক হয়ে ফিরে আসতে চান। হয়তো বা তিনি কলমির গন্ধে ভরা পুকুরে সারাদিন সাঁতার কেটে ভেসে বেড়ানো হাঁস হয়ে আসবেন। সন্ধ্যার আকাশে তিনি সুদর্শন হয়ে উড়বেন। শিমুলের ডালে কোনো এক লক্ষ্মীপেঁচা হয়ে ডাকতে পারেন। আবার সাদা পালতোলা ডিঙা বাইতে থাকা কিশোরের মধ্যেও কবিকে দেখা যেতে পারে। এদের ভিড়ে আমরা অবশ্যই কবিকে খোজে পাব বলে কবির দৃঢ় বিশ্বাস।
Q.8 ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি কোথায় এবং কেন ফিরে আসতে চেয়েছেন?
Ans:- কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার মাটি, নদী, প্রকৃতি ও মানুষকে গভীরভাবে ভালোবেসেছেন। তাই জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী কবি আবার এই বাংলায় ফিরে আসতে চান। তিনি ধান সিড়ি নদীর তীরে কোথাও জন্ম নিতে চান! হয়তো তিনি মনুষ্যরূপে জনু নাও নিতে পারেন, তবে শঙ্খচিল, শালিক বা ভোরের কাক হয়েও জন্ম নিতে পারেন। কার্তিক মাসে ফসল ঘরে তোলার পর বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্ন উৎসব। মেতে উঠা এই নবান্ন উৎসবে কুয়াশায় কবি ভেসে আসবেন একদিন কাঠাল ছায়ায়। হয়তো বা হাঁস হবেন। সারাদিন তার কেটে যাবে কলমির গন্ধ ভরা বাংলার খাল-বিলের জলের উপর ভেসে ভেসে। তিনি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেতকে গভীরভাবে ভালোবাসেন। তাই কবি হয়তো বাংলার মাঠে, ঘাটে, ক্ষেতে, জলাঙ্গীর ডাঙায় কোন প্রাণীর মধ্যে মিশে থাকতে পারেন । হয়তো তিনি হতে পারেন শিমুল গাছের ডালে বসে ডাকতে থাকা এক শ’স্পেশ্চাও। আবার তাকে দেখা যেতে পারে উঠোনের ঘাসে ধান ছড়াতে থাকা এক শিশুর মধ্যে কিংবা বুপসা নদীর ঘোলা জলে সাদা ছেড়া পাল তুলে ডিঙা বাইতে থাকা কোন এক কিশোরের মধ্যে। তিনি ফিরে আসতে পারেন রাঙা মেঘের ভেতর দিয়ে সন্ধ্যার আকাশে নীড়ে ফিরে আসা কোন সাদা বকের প্রতি ছিবির মধ্যে। পরনে এদের সবার ভিড়ে কবি নিজেকে ফিরে পেতে চান। কবির এ বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে কবিতায় ফুটে উঠেছে।
