স্বাধীনতা আন্দোলন এবং অসমে জাতীয় জাগরণ, Chapter-4, Part-1, Class 10 SEBA, New Course

1.অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

১। ইয়ান্ডাবু সন্ধি কখন হয়েছিল?

উত্তর: ইয়ান্ডাবু সন্ধি হয়েছিল ১৮২৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে।

২। কোম্পানির আমল বলতে কোন সময়কে বোঝায়?

উত্তর: কোম্পানির আমল বলতে ভারতে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালকে বোঝায়।

৩। অসমে বাংলা ভাষার প্রচলন কবে হয়েছিল। অরুণোদয় পত্রিকার প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন?

উত্তর: অসমে বাংলা ভাষার প্রচলন হয়েছিল ১৮৩৬ সালের এপ্রিল মাসে। অরুণোদয় পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন ডাঃ নাথান ব্রাউন।

৪। বাংলা ভাষার পরিবর্তে অসমে অসমিয়া ভাষার পুনর্বার প্রচলন কখন হয়েছিল?

উত্তর: বাংলা ভাষার পরিবর্তে অসমে অসমিয়া ভাষার পুনর্বার প্রচলন হয়েছিল ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে।

৫। অসম ছাত্র সম্মিলনের মুখপত্রটির নাম কী ছিল?

উত্তর: অসম ছাত্র সম্মিলনের মুখপত্রটির নাম ছিল আলোচনী।

৬। রায়ত সভাগুলির মুখ্য উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর: রায়ত সভাগুলির মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল প্রধানত ভূমি রাজস্বের হার কমানো, রায়তদের জমি থেকে উচ্ছেদ বন্ধ করা এবং ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন শোষণমূলক নীতির বিরোধিতা করা। এগুলি ছিল আসামের কৃষকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার রক্ষার জন্য গঠিত সংগঠন।

৭। সারা অসম রায়ত সভার গঠন কবে হয়েছিল?

উত্তর: সারা অসম রায়ত সভা আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয়েছিল ১৯৩৩ সালে।

৮। আহোম সভার সম্পাদক কে ছিলেন?

উত্তর: আহোম সভার সম্পাদক ছিলেন পদ্মনাথ গোহাঞিবরুয়া।

৯। যোরহাট সর্বজনীন সভা কখন এবং কার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল?

উত্তর: যোরহাট সর্বজনীন সভা ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে জগন্নাথ বরুয়া-র নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল।

১০। অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রথম সভাপতি এবং সম্পাদক কে ছিলেন?

উত্তর: অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির (গঠন: ১৯২১) প্রথম সভাপতি ছিলেন কুলধর চলিহা এবং প্রথম সম্পাদক ছিলেন নবীন চন্দ্র বরদলৈ।

১১। অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত প্রথম সভাপতি কে ছিলেন?

উত্তর: অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত প্রথম সভাপতি ছিলেন কুলধর চলিহা।

১২। অসমের প্রথম প্রধানমন্ত্রী কে এবং তিনি কখন নির্বাচিত হয়েছিলেন?

উত্তর: অসমের প্রথম প্রধানমন্ত্রী (তখন মুখ্যমন্ত্রী পদকে প্রধানমন্ত্রী বলা হত) ছিলেন স্যার সৈয়দ মুহাম্মদ সাদুল্লা, যিনি ১ এপ্রিল ১৯৩৭ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

১৩। কুশল কোঁঅরকে কী অপরাধে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল?

উত্তর: কুশল কোঁঅরকে ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় গোলঘাট জেলার সেনাপতি রেল স্টেশনে ব্রিটিশ সামরিক ট্রেন লাইনচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।

১৪। গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় কখন স্থাপিত হয়েছিল?

উত্তর: গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ২৬ জানুয়ারি।

১৫। অসম চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে কখন নামাঙ্কিত হয়?

উত্তর: অসম চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৪৭ সালের ৩ নভেম্বর নামাঙ্কিত হয় (পূর্বে এর নাম ছিল ‘বেড়ি হোয়াইট মেডিকেল স্কুল’)।

১৬। গুয়াহাটি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় কখন আনুষ্ঠানিকভাবে আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তর: গুয়াহাটি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (Gauhati Medical College) আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে আরম্ভ হয়েছিল।

১৭। অসম চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় আনু। ঠানিক ভাবে কখন নামাঙ্কিত হয়?

উত্তর: অসম চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৪৭ সালের ৩ নভেম্বর নামাঙ্কিত হয়।

১৮। গুয়াহাটি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় কখন আনুষ্ঠানিক ভাবে আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তর: গুয়াহাটি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে আরম্ভ হয়েছিল।

১৯। ‘বন্দিনী ভারত’ নাটকের রচয়িতা কে?

উত্তর: ‘বন্দিনী ভারত’ নাটকের রচয়িতা হলেন অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরী।

 

2. সংক্ষেপে আলোচনা কর ।

 

১। ‘অসমিয়া লিটারেরি সোসাইটি’ সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

Ans.’অসমিয়া লিটারেরি সোসাইটি’ ছিল আনন্দরাম ঢেকিয়াল ফুকন-এর পুত্র জগন্নাথ ফুকন-এর উদ্যোগে ১৮৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি সংগঠন। এই সভা মূলত সাহিত্য চর্চা এবং অসমিয়া ভাষার উন্নতির জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি অসমে আধুনিক সাহিত্য ও ভাষা আন্দোলনের সূচনাপর্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২। জোনাকি যুগের উল্লেখযোগ্য জাতীয়তাবাদী উত্তরণের একটি আভাস দাও।

Ans.জোনাকি যুগ (১৮৮৯-এর দশক থেকে শুরু) ছিল অসমিয়া সাহিত্যের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ সময়, যা একইসাথে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছিল। এই সময়ের উল্লেখযোগ্য জাতীয়তাবাদী উত্তরণের মধ্যে রয়েছে:

* অসমিয়া ভাষা ও সাহিত্যের পুনরুদ্ধার: ‘জোনাকি’ পত্রিকার মাধ্যমে অসমিয়া ভাষাকে শিক্ষণ-মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার আন্দোলন জোরদার হয় এবং এক নতুন সাহিত্যিক পুনর্জাগরণ ঘটে।

* স্বদেশপ্রেমের জাগরণ: সাহিত্যিকরা তাঁদের রচনায় অসমের অতীত গৌরব, প্রকৃতি ও জনজীবনের কথা তুলে ধরে মানুষের মধ্যে এক গভীর স্বদেশপ্রেম ও জাতীয় ঐক্যবোধ জাগিয়ে তোলেন।

* শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান: পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত একদল যুবক, যাঁরা মূলত ‘জোনাকি’ গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন, তাঁরাই অসমে আধুনিক জাতীয়তাবাদী ভাবধারার প্রচার ও প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা নেন।

৩। আহোম সভার রাজনৈতিক দাবি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

Ans. আহোম সভা ১৮৯৩ সালে মূলত আহোম জনগোষ্ঠীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত উন্নতির জন্য গঠিত হলেও পরবর্তীকালে এর রাজনৈতিক দাবি উত্থাপন করে। তাদের প্রধান রাজনৈতিক দাবিগুলির মধ্যে ছিল:

* আহোমদের জন্য পৃথক জনপ্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা বা আসন সংরক্ষণ।

* আহোমদের ক্ষত্রিয় মর্যাদা প্রদান এবং তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা করা।

* আহোমদের জন্য সরকারি চাকরি ও প্রশাসনে অধিক সুযোগ-সুবিধার দাবি।

* অনেক সময় এই সভা আহোম রাজবংশের পুনরুদ্ধারের মতো আবেগপূর্ণ দাবিও তুলে ধরত, যদিও তা মূল রাজনৈতিক ধারার অংশ ছিল না।

৪। আসাম এসোসিয়েশন ব্রিটিশ সরকারের নিকটকী কী বিষয় উত্থাপন করেছিল?

Ans. আসাম এসোসিয়েশন (১৯০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত) ছিল অসমে জাতীয় চেতনার উন্মেষের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংগঠন। ব্রিটিশ সরকারের কাছে তাদের উত্থাপিত প্রধান বিষয়গুলি ছিল:

* অসমকে বাংলার সঙ্গে যুক্ত করার বিরোধিতা: ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ববঙ্গ ও আসামকে যুক্ত করে যে নতুন প্রদেশ তৈরি হয়েছিল, আসাম এসোসিয়েশন তার বিরোধিতা করেছিল এবং অসমের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পরিচয় বজায় রাখার দাবি জানিয়েছিল।

* অসমে সাংবিধানিক সংস্কারের দাবি: তারা অসমের জন্য পর্যাপ্ত রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব, আইনসভার সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রশাসনকে আরও বেশি জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ করার দাবি জানায়।

* ভূমি রাজস্বের বৃদ্ধি রোধ: জনগণের উপর চাপানো বর্ধিত ভূমি রাজস্ব এবং কর কমানোর দাবি করেছিল।

* অসমিয়াদের স্ব-শাসন ও অধিকার প্রতিষ্ঠা: সরকারি চাকরি ও প্রশাসনে অসমিয়াদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং অসমের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি তুলেছিল।

৫। অসমে অসহযোগ আন্দোলনে যে-সকল অসমিয়া নেতা নেতৃত্ব দান করেছিলেন তাঁদের সম্পর্কে যা জান উল্লেখ করো।

Ans. অসমে অসহযোগ আন্দোলনে (১৯২০-২২) যে-সকল অসমিয়া নেতা নেতৃত্ব দান করেছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:

* তরুণ রাম ফুকন (দেশভক্ত): অসমে অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম প্রধান স্থপতি ও নেতা। তাঁর বাগ্মিতা জনসাধারণকে ব্যাপক অনুপ্রাণিত করে। তিনি আসাম এসোসিয়েশনকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

* নবীন চন্দ্র বরদলৈ (কর্মবীর): তিনিও ছিলেন আন্দোলনের একজন প্রথম সারির নেতা। তিনি অসহযোগ আন্দোলনের বার্তা গ্রাম থেকে গ্রামে পৌঁছে দিতে সহায়তা করেন এবং আইন অমান্য ও বিদেশি দ্রব্য বর্জনে সক্রিয় ভূমিকা নেন। আসামকে জাতীয় কংগ্রেসের মূলস্রোতে আনতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।

* চন্দ্রনাথ শর্মা: একজন তরুণ এবং অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা, যিনি তেজপুর অঞ্চলে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তিনি আইনজীবীর পেশা ত্যাগ করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং জনগণের মধ্যে তীব্র দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তোলেন।

৬। কানিংহাম সার্কুলার সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

Ans. কানিংহাম সার্কুলার ছিল ১৯৩০ সালে অসমের শিক্ষা বিভাগের পরিচালক কানিংহাম কর্তৃক জারি করা একটি নির্দেশিকা। এর মূল বিষয়বস্তু ছিল:

* অসহযোগ আন্দোলনের সময় ছাত্রদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখা।

* যদি কোনো ছাত্র বা তার অভিভাবক আইন অমান্য আন্দোলন বা রাজনৈতিক বিক্ষোভে অংশ নেয়, তবে সেই ছাত্রকে স্কুল-কলেজ থেকে বিতাড়িত করা হবে।

* এই সার্কুলার ছাত্র সমাজকে দমনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল এবং এর প্রতিবাদে অসমে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন, বিশেষত ধর্মঘট শুরু হয়, যা অসহযোগ আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তোলে।

৭। গোপীনাথ বরদলৈ মন্ত্রিসভা স্বাধীনতার ক্ষেত্রে যে-সকল সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন সে-সম্পর্কে লেখো।

Ans.গোপীনাথ বরদলৈ ছিলেন স্বাধীন ভারতের অসমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী। স্বাধীনতার অব্যবহিত পূর্বে এবং পরে তাঁর মন্ত্রিসভা যে-সকল গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল, তার মধ্যে প্রধান ছিল:

* ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনা ও গ্রুপিন সমস্যা: এই পরিকল্পনা অনুসারে অসমকে বাংলার সাথে একটি গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা হয়েছিল, যা অসমের জনগণ ও বরদলৈ তীব্রভাবে বিরোধিতা করেছিলেন। এটি অসমের অখণ্ডতা রক্ষার ক্ষেত্রে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল।

* পূর্ব পাকিস্তান থেকে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর আগমন: দেশভাগের পর পূর্ব বাংলা (পূর্ব পাকিস্তান) থেকে অসংখ্য হিন্দু শরণার্থী অসমে আশ্রয় নিতে শুরু করলে, তা প্রশাসন, খাদ্য সরবরাহ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা সৃষ্টি করেছিল।

* আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও জাতিগত উত্তেজনা: নতুন সীমান্তের কারণে অনুপ্রবেশ এবং জাতি-উপজাতিদের মধ্যে বিভেদ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, যা কঠোর হাতে মোকাবিলা করতে হয়েছিল।

* আর্থ-সামাজিক পুনর্গঠন: যুদ্ধকালীন অর্থনৈতিক দুর্বলতা, শিল্প ও কৃষির পুনর্গঠন এবং শিক্ষার প্রসারের মতো মৌলিক কাজগুলি ছিল তাঁর মন্ত্রিসভার সামনে আরও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

৮। অসম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখো।

Ans.অসম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (Assam Agricultural University – AAU) প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস হলো:

* অসমে কৃষি গবেষণার প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘকাল ধরে অনুভূত হচ্ছিল। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত যোরহাট কৃষি মহাবিদ্যালয় ছিল এর ভিত্তি।

* স্বাধীনতার পর সরকার কৃষির উন্নয়নের জন্য মনোযোগ দেয়। অবশেষে, ১৯৬৯ সালের এপ্রিল মাসে যোরহাটে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।

* এটি কৃষি, পশুপালন, মৎস্যবিজ্ঞান ও গৃহ বিজ্ঞানের শিক্ষণ, গবেষণা ও সম্প্রসারণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটিই উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম ও প্রধান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি কৃষিতে গবেষণার মাধ্যমে অসমের কৃষকদের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

৯। অসম চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখো।

Ans.অসম চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (Assam Medical College – AMC) প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস হলো:

* অসমে চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রসারের ভিত্তি স্থাপিত হয় ১৯০০ সালে ডিব্রুগড়ের বেরি হোয়াইট মেডিকেল স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে।

* দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব আরও বাড়ে। অবশেষে, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার ঠিক প্রাক্কালে, এই বেরি হোয়াইট মেডিকেল স্কুলটিকে উন্নত করে পূর্ণাঙ্গ অসম চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়।

* এটি ছিল তৎকালীন সময়ে সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রতিষ্ঠিত প্রথম ও প্রধান চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়। এটি শুধুমাত্র চিকিৎসার শিক্ষণ কেন্দ্র নয়, বরং সমগ্র অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে আসছে।

১০। অসমে বিদেশী দ্রব্য বর্জন আন্দোলনের কার্যাবলি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

Ans.অসমে বিদেশী দ্রব্য বর্জন আন্দোলন ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বিভিন্ন পর্যায়ে, বিশেষত বঙ্গভঙ্গ বিরোধী ও অসহযোগ আন্দোলনের সময়, একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। এর কার্যাবলি ছিল:

* বিদেশি কাপড় ও পণ্যের দোকানে পিকেটিং: আন্দোলনকারীরা বিদেশি কাপড় ও অন্যান্য বিলাসবহুল পণ্যের দোকানে ভিড় করে গ্রাহকদের সেগুলি কিনতে বাধা দিত।

* বিদেশি কাপড় পোড়ানো: জনসমক্ষে বিপুল পরিমাণে বিদেশি কাপড় একত্রিত করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হতো, যা ছিল প্রতিবাদের একটি শক্তিশালী প্রতীক।

* স্বদেশী পণ্যের প্রচার: এর বিপরীতে তাঁত শিল্প সহ দেশীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহারের জন্য জোর প্রচার চালানো হতো। খাদি ও দেশীয় কারিগরদের তৈরি জিনিস কেনার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করা হতো।

* স্বদেশী ভান্ডার স্থাপন: স্থানীয়ভাবে তৈরি পণ্য বিক্রির জন্য অস্থায়ী দোকান বা ভান্ডার খোলা হয়েছিল। অসমে এই বর্জন আন্দোলন চা-বাগান এবং গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

১১। কানির (মদ্যের) প্রচলন সম্পর্কে যোরহাট সর্বজনীন সভার স্থিতি কেমন ছিল সংক্ষেপে লেখো।

Ans.যোরহাট সর্বজনীন সভা (১৮৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত) ছিল অসমের জনসচেতনতা সৃষ্টি ও সামাজিক সংস্কারের ক্ষেত্রে একটি অগ্রণী সংগঠন। কানি (আফিম, যা তখন ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল) এবং অন্যান্য মদ্যের প্রচলনের বিরুদ্ধে তাদের স্থিতি ছিল তীব্র বিরোধী ও সংস্কারমূলক:

* বিরোধিতা: সভা মনে করত যে কানির ব্যবহার জনগণের স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং নৈতিকতার উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। তারা ব্রিটিশ সরকারের কাছে কানির সহজলভ্যতা ও বিক্রি নিয়ন্ত্রণের জন্য বারবার দাবি জানাত।

* সচেতনতা বৃদ্ধি: তারা সভা-সমিতি করে এবং প্রচারপত্রের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে কানির কুফল সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করত এবং মানুষকে এই অভ্যাস ত্যাগ করতে উৎসাহিত করত।

* আইনি পদক্ষেপের দাবি: তাদের প্রধান দাবি ছিল কানির উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আনা এবং এর ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা। এই সভা কানি ও মদ্যপান বিরোধী আন্দোলনে অসমে এক গুরুত্বপূর্ণ জনমত তৈরি করেছিল।

3. দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর।

১। অসমিয়া ভাষা উন্নতি সাধিনী সভার ভূমিকা এবং কার্যাবলি আলোচনা করো।

Ans.অসমিয়া ভাষা উন্নতি সাধিনী সভা (সংক্ষেপে: আভাউসা) ছিল অসমীয়া সাহিত্য ও ভাষা বিকাশের জন্য গঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন। ১৮৮৮ সালের ২৫ আগস্ট এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি অসম সাহিত্য সভার পূর্ববর্তী পর্যায় ছিল।

ভূমিকা ও উদ্দেশ্য

এই সভার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল অসমিয়া ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতি সাধন এবং অসমীয়া ভাষাকে আধুনিক রূপ দেওয়া।

এর প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল:

* অসমীয়া ভাষা সাহিত্যের উন্নতি সাধন।

* অসমের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অসমীয়া ভাষার প্রচলন করা।

* অশুদ্ধ ব্যাকরণ ও বানান সংশোধন করে শুদ্ধ ব্যাকরণ ও বানান প্রবর্তন করা।

* সংস্কৃত বা অন্যান্য ভাষায় লিখিত উৎকৃষ্ট গ্রন্থগুলির অসমিয়াতে অনুবাদ করা।

* পুরাতন অসমিয়া গ্রন্থ সংগ্রহ ও প্রকাশ করা।

* অসমের সামাজিক ও ধার্মিক রীতিনীতির বৃত্তান্ত সংগ্রহ করে ইতিহাস প্রণয়ন করা।

কার্যাবলি

* ভাষাশিক্ষা ও প্রকাশন: অসমিয়া ভাষা শিক্ষার প্রচার ও প্রসার করা এবং নতুন পাঠ্যপুস্তক ও সাহিত্য প্রকাশ করা।

* সাংবাদিকতা: অসমিয়া ভাষায় সাময়িক পত্র, সংবাদপত্র এবং জার্নাল প্রকাশ করে জনসাধরণের মধ্যে ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে জ্ঞান বৃদ্ধি করা। এর মাধ্যমে এটি জনগণের মধ্যে ভাষাগত সচেতনতা সৃষ্টিতে সহায়ক হয়।

* সাংস্কৃতিক সুরক্ষা: অসমিয়া লোকসাহিত্য, সংগীত এবং সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ ও বিকাশ করা।

২। অসম ছাত্র সম্মিলনের অবদান কী ব্যাখ্যা করো।

Ans.অসম ছাত্র সম্মিলন (Assam Students’ Conference) ছিল অসমে জাতীয় জাগরণ ও আধুনিক অসমীয়া চেতনার উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী একটি ছাত্র সংগঠন। যদিও পরবর্তীকালে এটি সর্ব অসম ছাত্র সংস্থা (AASU)-এর জন্ম দেয়, প্রাথমিকভাবে এর মূল অবদানগুলি ছিল:

* জাতীয়তাবাদের প্রচার: এই সংগঠনটি ছাত্র ও যুবকদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটায় এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিতে উৎসাহিত করে।

* ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ: অসমীয়া ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ, সংরক্ষণ এবং প্রচার-প্রসারে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

* শিক্ষার প্রসার: শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে উদ্যোগী হওয়া।

* রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি: ছাত্রদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে তোলা এবং ব্রিটিশ বিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত করা।

৩। রায়ত সভাগুলোর উদ্দেশ্য এবং ভূমিকা সম্পর্কে একটি খতিয়ান দাও।

Ans.অসমে রায়ত সভা বা কৃষক সভাগুলি মূলত ব্রিটিশ শাসনাধীন অসমে কৃষকদের অধিকার রক্ষার জন্য গড়ে উঠেছিল।

উদ্দেশ্য

* রাজস্ব হ্রাস: ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অত্যধিক ভূমি রাজস্বের হার কমানোর জন্য আন্দোলন করা।

* কৃষকদের অধিকার রক্ষা: কৃষকদের (রায়তদের) জমির ওপর তাদের দখল স্বত্ব ও অধিকার সুরক্ষিত করা।

* কৃষি ব্যবস্থার উন্নতি: কৃষি ও কৃষকের অবস্থার উন্নতির জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো।

* জমিদারি প্রথার বিরোধিতা: যেখানে জমিদারি প্রথা ছিল সেখানে রায়তদের শোষণ থেকে রক্ষা করা।

ভূমিকা

* সংগঠন ও সচেতনতা: রায়ত সভাগুলি অসমে কৃষকদের একত্রিত করে এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলে, যা এক বৃহত্তর কৃষক আন্দোলনের জন্ম দেয়।

* প্রতিবাদ ও আন্দোলন: অত্যধিক খাজনা, নতুন করে কর ধার্য এবং বন আইন প্রবর্তনের বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশ ও পিকেটিং-এর মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো।

* জাতীয় আন্দোলনে যোগ: রায়ত সভাগুলির মাধ্যমে কৃষকরা পরে কংগ্রেসের নেতৃত্বে অসহযোগ এবং আইন অমান্য আন্দোলনের মতো জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে যুক্ত হন।

৪। যোরহাট সর্বজনীন সভার উদ্দেশ্য এবং কার্যাবলি সম্পর্কে লেখো।

Ans. যোরহাট সর্বজনীন সভা ছিল ব্রিটিশ শাসনাধীন অসমে গড়ে ওঠা প্রথম দিককার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি ১৮৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

উদ্দেশ্য

* জনগণের অভাব-অভিযোগ নিবারণ: ব্রিটিশ সরকারের কাছে অসমে বসবাসকারী সাধারণ জনগণের অভাব-অভিযোগ এবং দাবি-দাওয়া তুলে ধরা।

* রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি: জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ও জাতীয়তাবাদী চেতনার সঞ্চার করা।

* জনকল্যাণ: স্থানীয় সমস্যাগুলির সমাধান করা এবং জনকল্যাণমূলক কাজ করা।

কার্যাবলি

* স্থানীয় ও প্রাদেশিক সরকারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা।

* বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা সভা আয়োজন করে জনগণের মতামত সংগ্রহ করা।

* অসমে ভূমি রাজস্ব সংক্রান্ত সমস্যা, বিচার ব্যবস্থার সংস্কার, এবং স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

* অসমীয়া ভাষা ও সংস্কৃতির প্রসারেও এই সভা পরোক্ষভাবে সহায়ক হয়েছিল।

৫। ব্রিটিশ শাসনাধীন অসমে সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে আসাম এসোসিয়েশনের অবদান কী সংক্ষেপে লেখো।

Ans.আসাম এসোসিয়েশন (Assam Association) ১৯০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও এর মূল লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দাবি আদায়, এটি সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

* শিক্ষার প্রসার: অ্যাসোসিয়েশন অসমে শিক্ষার প্রসারে জোর দেয়, যা সমাজে কুসংস্কার দূর করতে এবং আধুনিক জ্ঞান লাভে সহায়ক হয়।

* সামাজিক সচেতনতা: সভা, সম্মেলন ও আলোচনার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করে।

* স্থানীয় সমাজের প্রতিনিধি: ব্রিটিশ সরকারের কাছে স্থানীয় সমাজের অভাব-অভিযোগ তুলে ধরে, যার ফলে সামাজিক সমস্যাগুলির দিকে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়।

* রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি: এটি এমন একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক ভিত্তি তৈরি করে যার ওপর নির্ভর করে পরবর্তীকালে অসমে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রসার ঘটে এবং বহু সামাজিক সংস্কারক উৎসাহিত হন।

৬। অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির উদ্ভব ও মুখ্য ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

Ans.ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও অসমে এর শাখা গড়ে উঠতে সময় লাগে। অসম এসোসিয়েশন ছিল প্রথমদিকের সংগঠন যা জাতীয় আন্দোলনে যোগদানের পক্ষে ছিল। মহাত্মা গান্ধী ও অন্যান্য জাতীয় নেতাদের প্রভাবে অসমে রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পাওয়ায়, ১৯২১ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একটি প্রাদেশিক শাখা হিসেবে অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি (APCC) গঠিত হয়।

মুখ্য ভূমিকা

* জাতীয় আন্দোলনের বিস্তার: সর্বভারতীয় জাতীয় আন্দোলনের মূল স্রোত, যেমন অসহযোগ আন্দোলন, আইন অমান্য আন্দোলন এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে অসমে সংগঠিত করা ও জনগণের মধ্যে বিস্তার ঘটানো।

* রাজনৈতিক নেতৃত্ব সৃষ্টি: গোপীনাথ বরদলৈ, তরুণরাম ফুকন, নবীন চন্দ্র বরদলৈ, মহাত্মা গান্ধী-এর মতো নেতাদের নেতৃত্বে অসমে রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে তোলা।

* সামাজিক কর্মসূচি: খাদির ব্যবহার, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ এবং মদ্যপান-বিরোধী কর্মসূচির মতো গঠনমূলক সামাজিক কাজগুলিতে গুরুত্ব দেওয়া।

* ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন পরিচালনা: ব্রিটিশ সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিবাদ ও আন্দোলন পরিচালনা করা।

* গণভিত্তি নির্মাণ: সমাজের সকল স্তর, বিশেষ করে কৃষক, শ্রমিক, এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রচার করে একটি শক্তিশালী গণভিত্তি তৈরি করা।

৭। স্বদেশী আন্দোলনে অসমের ভূমিকা কী ছিল সে-বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

Ans. স্বদেশী আন্দোলন (১৯০৫-১১) ছিল মূলত বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ আন্দোলন। অসমেও এই আন্দোলনের প্রভাব পড়েছিল।

* প্রতিবাদ সভা: স্বদেশী আন্দোলনের সমর্থনে অসমে বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সভা ও মিছিলের আয়োজন করা হয়।

* বিদেশী পণ্য বর্জন: ছাত্র ও সাধারণ মানুষ ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করে এবং দেশীয় শিল্পজাত পণ্য ব্যবহারে উৎসাহী হয়। বিশেষ করে, বিদেশী লবণের পরিবর্তে দেশীয় লবণ ব্যবহার ও বিদেশী কাপড়ের পরিবর্তে খাদি বা স্থানীয় হাতে তৈরি কাপড় ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হয়।

* শিক্ষায় প্রভাব: জাতীয় শিক্ষা বিস্তারের জন্য অসমে জাতীয় বিদ্যালয় ও কলেজ স্থাপন করা হয়, যেমন আর্ল ল কলেজ (Earl Law College)।

* রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ: এই আন্দোলন অসমে রাজনৈতিক চেতনার জন্ম দেয় এবং ছাত্র ও যুব সমাজকে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকে প্রথমবার বড় আকারে আকৃষ্ট করে। অসম এসোসিয়েশন-এর মতো সংগঠনগুলিও আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন দেয়।

৮। অসহযোগ আন্দোলনে অসমের ভূমিকা সম্পর্কে একটি খতিয়ান প্রস্তুত করো।

Ans.মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে ১৯২০-২২ সালে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলন অসমে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

| ক্ষেত্র | ভূমিকা ও কার্যকলাপ |

| রাজনৈতিক নেতৃত্ব | তরুণরাম ফুকন ও নবীন চন্দ্র বরদলৈ-এর মতো নেতারা জাতীয় কংগ্রেসের নীতি অসমে প্রচার করেন। অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি (APCC) গঠন করে আন্দোলনকে সংগঠিত রূপ দেওয়া হয়। |

| শিক্ষায় বর্জন | বহু ছাত্র সরকারি স্কুল-কলেজ ছেড়ে বেরিয়ে আসে। এর ফলস্বরূপ জাতীয় বিদ্যালয় ও জাতীয় মহাবিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। |

| আইন ও পদত্যাগ | আইনজীবীরা আদালত বর্জন করেন এবং সরকারি কর্মচারীরা চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। |

| গঠনমূলক কর্মসূচি | খাদি-র প্রচলন, মাদক বর্জন, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ এবং হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের মতো গঠনমূলক কাজে জোর দেওয়া হয়। |

| অর্থনৈতিক প্রভাব | চা বাগান শ্রমিকদের ধর্মঘট এবং কৃষকদের খাজনা না দেওয়ার আন্দোলন স্থানীয় অর্থনীতি ও ব্রিটিশ প্রশাসনকে চাপে ফেলে। |

| গণআন্দোলন | এই আন্দোলনের মাধ্যমে প্রথমবার অসমে ব্যাপক সংখ্যক জনগণ, বিশেষ করে ছাত্র ও নারীরা, স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। |

৯। আইন অমান্য আন্দোলনে অসমের ভূমিকা সম্পর্কে একটি খতিয়ান প্রস্তুত করো।

Ans. আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০-৩৪) অসমেও তীব্র আকার ধারণ করেছিল।

| ক্ষেত্র | ভূমিকা ও কার্যকলাপ

| লবণ সত্যাগ্রহ | যদিও অসমে লবণ উৎপাদন কম ছিল, প্রতীকীভাবে স্থানীয়ভাবে লবণ তৈরি করে আইন অমান্য করা হয়। চন্দ্রপ্রভা সাইকিয়ানী-এর মতো নারী নেত্রীরা এই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। |

| কর প্রদানে অস্বীকৃতি | কৃষকরা ভূমি রাজস্ব ও অন্যান্য কর প্রদানে অস্বীকার করেন। ডিব্রুগড়, নওগাঁও, ও শিবসাগরে এই আন্দোলন জোরালো ছিল। |

| বন আইন ভঙ্গ | অসমে বন সংরক্ষণ আইনকে ব্রিটিশদের শোষণের হাতিয়ার হিসেবে দেখা হতো। মানুষজন প্রতীকীভাবে বন আইন অমান্য করে প্রতিবাদ জানায়। |

| শিক্ষায় বর্জন | ছাত্ররা আবারও স্কুল-কলেজ বর্জন করে আন্দোলনে যোগ দেয় এবং পিকেটিং করে। |

| নারী ও আদিবাসীদের অংশগ্রহণ | আইন অমান্য আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল নারী এবং স্থানীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিপুল সংখ্যক অংশগ্রহণ। |

| দমন ও গ্রেপ্তার | ব্রিটিশ সরকার আন্দোলন দমনের জন্য ব্যাপক ধরপাকড় চালায়। বহু নেতা ও কর্মী গ্রেপ্তার হন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *