অসমের ভূগোল , Class 10SEBA

১। অসমের আয়তন, জনসংখ্যা এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের বিষয়ে তথ্য সহকারে সংক্ষেপে লেখো। 

Ans. ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত অসম (Assam) রাজ্যের আয়তন, জনসংখ্যা এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব নিম্নলিখিত তথ্য অনুসারে সংক্ষেপে দেওয়া হলো (মূলত ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী):

| বিবরণ | পরিমাণ |

| আয়তন | 78,438 বর্গ কিলোমিটার (প্রায়) |

| জনসংখ্যা | 3,12,05,576 (তিন কোটি বারো লক্ষ পাঁচ হাজার পাঁচশত ছিয়াত্তর) |

| জনসংখ্যার ঘনত্ব | প্রতি বর্গ কিলোমিটারে 398 জন (প্রায়) |

অসম আয়তনের দিক থেকে ভারতের একটি মাঝারি আকারের রাজ্য হলেও, এর জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় জনসংখ্যার ঘনত্ব জাতীয় গড়ের চেয়ে কিছুটা কম হলেও উল্লেখযোগ্য।

২। অসমের শিক্ষিতের হার কীভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সংক্ষেপে উল্লেখ করো।

Ans. অসমে শিক্ষিতের হার বৃদ্ধিতে মূলত সরকারি নীতি, জনসচেতনতা এবং শিক্ষণ পরিকাঠামোর উন্নয়ন প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। স্বাধীনতার পর থেকেই সরকার শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।

* বিদ্যালয় স্থাপন: প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।

* শিক্ষামূলক প্রকল্প: সর্বশিক্ষা অভিযান, মধ্যাহ্নভোজন প্রকল্প, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, এবং শিক্ষাবৃত্তি (Scholarship) প্রদানের মতো উদ্যোগগুলি শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার বাড়িয়েছে।

* উচ্চশিক্ষা: বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় (কলেজ) এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট) বৃদ্ধির ফলে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বেড়েছে।

* নারী শিক্ষা: মেয়েদের শিক্ষার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা সামগ্রিক শিক্ষিতের হার বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।

৩। ২০১১ সালের তথ্য অনুসারে অসমে কয়টি প্রথম শ্রেণির এবং কয়টি দ্বিতীয় শ্রেণির শহর আছে?

Ans. ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, অসমে প্রথম শ্রেণির (জনসংখ্যা 1,00,000 বা তার বেশি) শহর ছিল 9 টি।

দ্বিতীয় শ্রেণির (জনসংখ্যা 50,000 থেকে 99,999) শহর ছিল 10 টি।

৪। ১৯০১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত অসমের জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করো।

Ans. ১৯০১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত অসমের জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি উল্লেখযোগ্য এবং দ্রুত প্রক্রিয়া। বিশেষত স্বাধীনতার পর থেকে বৃদ্ধির হার অত্যন্ত বেশি ছিল।

| সময়কাল | জনসংখ্যার বৃদ্ধি প্রবণতা |

| ১৯০১-১৯৫০ | জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ধীর এবং স্থিতিশীল। এই সময়ে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার উন্নতির কারণে জন্মহার সামান্য বাড়লেও, উচ্চ মৃত্যুর হার বৃদ্ধির গতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। |

| ১৯৫১-১৯৮১ | এটি ছিল দ্রুততম বৃদ্ধির সময়কাল। স্বাধীনতার পর উন্নত চিকিৎসা, মহামারী নিয়ন্ত্রণ এবং বিশেষত অভিবাসন (জনপ্রব্রজন) বৃদ্ধির কারণে জন্মহার বেশি এবং মৃত্যুহার কম ছিল, ফলে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ঘটে। |

| ১৯৮১-২০১১ | বৃদ্ধির হার কমতে শুরু করে। তবে, জাতীয় গড়ের তুলনায় অসমে বৃদ্ধির হার এখনও বেশিই ছিল। পরিবার পরিকল্পনা এবং শিক্ষার প্রসারের কারণে জন্মহার কমা শুরু হয়। |

জনপ্রব্রজন (Migration), বিশেষত পার্শ্ববর্তী দেশগুলি থেকে আসা স্রোত, অসমের এই দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ।

৫। ভৌগোলিক অঞ্চলভেদে উপযুক্ত মানচিত্রের সাহায্যে অসমের জনসংখ্যার বিতরণ পর্যালোচনা করো।

Ans. ভৌগোলিক অঞ্চলভেদে অসমের জনসংখ্যার বিতরণ অসম এবং অসমান। জনসংখ্যার সিংহভাগই ব্রহ্মপুত্র ও বরাক উপত্যকার সমভূমি অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত।

* ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা সমভূমি: এটি অসমের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল। উর্বর মাটি, কৃষি কাজের সুবিধা, পরিবহন ব্যবস্থার প্রাচুর্য এবং শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্রের উপস্থিতির কারণে এই অঞ্চল, বিশেষ করে গুয়াহাটি, ডিব্রুগড়, তিনসুকিয়া, জোরহাট এবং তেজপুরের মতো শহরগুলি আশেপাশে জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

* বরাক উপত্যকা সমভূমি: এই অঞ্চলটিও তুলনামূলকভাবে ঘনবসতিপূর্ণ, তবে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার তুলনায় কম। কৃষি ও বাণিজ্য এখানে জনবসতিকে আকর্ষণ করেছে।

* পাহাড়ি অঞ্চল (কার্বি আংলং ও ডিমা হাসাও): এই জেলাগুলি বিরল বসতিপূর্ণ। দুর্গম ভূপ্রকৃতি, বনাঞ্চল এবং কৃষির সুযোগ কম থাকায় এই অঞ্চলের জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক কম।

৬। অসমের জনসংখ্যা বিতরণের ভিন্নতার কারণগুলি উদাহরণ সহ সংক্ষেপে আলোচনা করো।

Ans. অসমে জনসংখ্যা বিতরণের ভিন্নতার প্রধান কারণগুলি হলো:- ভৌগোলিক উপাদান | সমভূমি অঞ্চল (যেমন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা) উর্বর মাটি এবং জলের প্রাচুর্যের কারণে কৃষির জন্য উপযুক্ত। পাহাড়ি অঞ্চল (যেমন কার্বি আংলং) দুর্গম হওয়ায় বসতি স্থাপনে কঠিন। |

| জলবায়ু ও জলের উৎস | ব্রহ্মপুত্র ও তার উপনদীগুলির আশপাশের অঞ্চলগুলি কৃষি ও জীবনধারণের জন্য আদর্শ। পানীয় জল ও সেচের সহজলভ্যতা জনবসতিকে আকর্ষণ করে। |

| অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড | শিল্প, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান কেন্দ্রগুলির আশেপাশে জনসংখ্যা বেশি। উদাহরণস্বরূপ, গুয়াহাটি (বাণিজ্য) বা ডিব্রুগড়/তিনসুকিয়া (তেল, চা শিল্প) এর আশেপাশে জনসংখ্যা কেন্দ্রীভূত। |

| পরিবহন ব্যবস্থা | রেলপথ ও সড়কপথের সুবিধা রয়েছে এমন স্থানগুলিতে (যেমন জাতীয় সড়ক 37 এর পার্শ্ববর্তী এলাকা) বসতি স্থাপন সহজ হয়। |

| ইতিহাস ও জনপ্রব্রজন | ঐতিহাসিকভাবে বসতি স্থাপন এবং বিশেষত পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আসা অভিবাসী স্রোত নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে (যেমন সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলি) জনসংখ্যার ঘনত্ব বাড়িয়েছে। |

৭। ২০১১ সালের তথ্যনুসারে অসমের জিলাগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি এবং কম জনসংখ্যা এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব, রয়েছে সেই জিলার নাম উল্লেখ করো।

Ans. ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে অসমের জিলাগুলির (জেলা) মধ্যে:

* সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা: নগাঁও (Nagaon) জিলা।

* সবচেয়ে কম জনসংখ্যা: ডিমা হাসাও (Dima Hasao) জিলা।

* সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার ঘনত্ব: কামরূপ (মেট্রোপলিটান) (Kamrup Metropolitan) জিলা (গুয়াহাটি শহর নিয়ে গঠিত)।

* সবচেয়ে কম জনসংখ্যার ঘনত্ব: ডিমা হাসাও (Dima Hasao) জিলা।

৮। অসমের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

Ans. অসমের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলি হলো:

* উচ্চ জন্মহার ও নিম্ন মৃত্যুহার: চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি, মহামারী নিয়ন্ত্রণ এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নতির কারণে মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, কিন্তু জন্মহার এখনও তুলনামূলকভাবে বেশি।

* জনপ্রব্রজন (অভিবাসন): পার্শ্ববর্তী দেশ, বিশেষত বাংলাদেশ থেকে প্রচুর সংখ্যক মানুষের অসমে আগমন হয়েছে। এছাড়াও, অন্যান্য ভারতীয় রাজ্য থেকেও কাজের খোঁজে মানুষের আগমন রাজ্যের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

* বাল্যবিবাহ ও সামাজিক কারণ: কিছু নির্দিষ্ট সামাজিক রীতিনীতি এবং অল্প বয়সে বিবাহের প্রবণতা উচ্চ জন্মহার বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে।

* শিক্ষার অভাব: বিশেষত গ্রামীণ ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতনতার অভাবও জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি কারণ।

৯। অসমে প্রাচীন কাল থেকে বর্তমান সময় অবধি যে জনপ্রব্রজন ঘটেছে সেই স্রোতগুলি একাদিক্রমে উল্লেখ করো।

Ans. অসমে প্রাচীন কাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ঘটা জনপ্রব্রজনের প্রধান স্রোতগুলি হলো:

* প্রাচীন ও প্রারম্ভিক মধ্যযুগ: এই সময়ে মূলত বিভিন্ন মঙ্গোলয়েড জনগোষ্ঠী (যেমন বোড়ো, মিসিং, কোচ, আহোম) এবং ইন্দো-আর্য গোষ্ঠীগুলির (যেমন বাঙালি, অসমীয়াভাষী আর্য গোষ্ঠী) বিভিন্ন সময়ে আগমন ঘটেছিল।

* আহোম রাজত্বকাল (ত্রয়োদশ-ঊনবিংশ শতাব্দী): আহোমদের আগমন ছাড়াও বিভিন্ন কারিগর, শিল্পী এবং ধর্মীয় প্রচারক (যেমন পুরোহিত, পণ্ডিত) বিভিন্ন স্থান থেকে অসমে এসেছিলেন।

* ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগ (ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দী): এটি জনপ্রব্রজনের বৃহত্তম ঢেউ ছিল।

* চাষাবাদের জন্য: ব্রিটিশরা বাংলা এবং অন্যান্য অঞ্চল থেকে হাজার হাজার কৃষক (মূলত ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে) নিয়ে আসে।

* শ্রমিক: চা বাগানগুলিতে কাজের জন্য ওড়িশা, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে বহু শ্রমিক (যাদের সাধারণত ‘বাগানিয়া’ বলা হয়) নিয়ে আসা হয়।

* প্রশাসনিক ও বাণিজ্য: প্রশাসন ও বাণিজ্যের কাজের জন্য বাঙালি হিন্দু এবং অন্যান্য অঞ্চলের কর্মচারীরা আসেন।

* স্বাধীনতার পরবর্তী সময় (বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে বর্তমান): এই সময়ে প্রধানত বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তান) থেকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে বহু অভিবাসী (উভয় ধর্মের) অসমে অনুপ্রবেশ করেছেন।

১০। অসমের আহোমদের জনগোষ্ঠীয় পরিচয় বিশদ করো।

Ans. আহোম হলো এক তাই (Tai)-ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ, যারা ত্রয়োদশ শতাব্দীতে (১২২৮ খ্রিষ্টাব্দে) চাওলুং সুকাফা-এর নেতৃত্বে বর্তমান মায়ানমার (বার্মা) অঞ্চল হয়ে অসমে প্রবেশ করে। তারা মূলত:

* উৎপত্তি ও আগমন: তাদের মূল বাসস্থান ছিল চীনের ইউনান প্রদেশ এবং তারা সেখান থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে অসমে আসে। তারা তাই-আহোম ভাষা বলত, যা তাই ভাষার একটি শাখা।

* শাসন ও ইতিহাস: তারা প্রায় ৬০০ বছর (১২২৮-১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দ) ধরে অসমে এক শক্তিশালী রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা অসমের ইতিহাসে এক সুবর্ণ অধ্যায়। এই দীর্ঘ শাসনকালে তারা অসমের সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

* সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণ: সময়ের সাথে সাথে আহোমরা স্থানীয় জনজাতি এবং ইন্দো-আর্য সংস্কৃতি থেকে বহু উপাদান গ্রহণ করে এক মিশ্র সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল। তারা মূলত শাক্ত ও শৈব ধর্ম গ্রহণ করলেও তাদের ঐতিহ্যবাহী ‘ফুরা-লুং’ (পূর্বপুরুষদের পূজা) ধর্মীয় রীতিনীতিও বজায় ছিল।

* পরিচয়: বর্তমানে আহোম জনগোষ্ঠী অসমের একটি ক্ষুদ্র-জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত, যারা অসমীয়া জাতি গঠনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং রাজ্যের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের ধারক।

১১। পরিবহন ব্যবস্থা অসমের অর্থনৈতিক উন্নতিতে কীভাবে সাহায্য করেছে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

Ans. পরিবহন ব্যবস্থা অসমের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য একটি লাইফলাইন বা জীবনরেখার মতো কাজ করে। এটি নিম্নোক্ত উপায়ে সাহায্য করে:

* বাজার সংযোগ: উন্নত সড়ক, রেলপথ ও জলপথ কৃষিজাত পণ্য (যেমন ধান, চা), খনিজ সম্পদ ও শিল্পজাত পণ্যগুলিকে উৎপাদন স্থান থেকে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রুত এবং সস্তায় পৌঁছাতে সাহায্য করে। এর ফলে কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায়।

* শিল্পের বিকাশ: কাঁচামাল এবং মেশিনারিজ সহজে সরবরাহ করার মাধ্যমে শিল্পগুলির (বিশেষত চা, তেল, কাঠভিত্তিক শিল্প) উৎপাদনে সহায়তা করে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করে।

* পর্যটন উন্নয়ন: বিমান, সড়ক ও রেলপথে ভালো সংযোগ পর্যটকদের অসমে আসতে উৎসাহিত করে, যা হোটেল, পরিবহন এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবসায় অর্থপ্রবাহ বাড়ায়।

* কর্মসংস্থান সৃষ্টি: পরিবহন ও লজিস্টিকস (পরিবহন সংশ্লিষ্ট পরিষেবা) ক্ষেত্রটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হাজার হাজার মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।

১২। অসমের জলপরিবহন বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

Ans. অসমের জলপরিবহন মূলত ব্রহ্মপুত্র ও বরাক নদী এবং তাদের প্রধান উপনদীগুলির উপর নির্ভরশীল। এটি ঐতিহাসিকভাবেই এই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন এবং অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী পরিবহন মাধ্যম।

* জাতীয় জলপথ: ব্রহ্মপুত্র নদীকে জাতীয় জলপথ-২ (National Waterway-2) ঘোষণা করা হয়েছে, যা সাদিয়া থেকে ধুবড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি অসমকে পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরের মাধ্যমে কলকাতা এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।

* গুরুত্ব: চা, কাঠ, কয়লা, পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য এবং অন্যান্য ভারী পণ্য পরিবহনের জন্য জলপথ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি সড়ক ও রেলের উপর চাপ কমায় এবং পরিবেশবান্ধব।

* সমস্যা: নদীর চর গঠন, পলি সঞ্চয় এবং বর্ষাকালে নদীর গতিপথের পরিবর্তন এই পরিবহনের প্রধান বাধা। এর ফলে সারা বছর ধরে জাহাজ চলাচল বজায় রাখা কঠিন হয়।

* বর্তমান অবস্থা: সরকার বর্তমানে জাতীয় জলপথগুলির আধুনিকীকরণ, টার্মিনাল নির্মাণ এবং ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে জলপরিবহনের উন্নয়নে জোর দিয়েছে, যাতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাণিজ্যিক সংযোগ বৃদ্ধি পায়।

১৩। অসমের পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের অন্তরায়ের পাঁচটি প্রধান কারণ উল্লেখ করো।

Ans. অসমের পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের পাঁচটি প্রধান অন্তরায় বা বাধা হলো:

* নদী ও ভূপ্রকৃতির বাধা: ব্রহ্মপুত্র নদের মতো বহুপ্রবাহবিশিষ্ট নদী এবং বর্ষার বন্যা প্রায়শই সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। নদীর উপর প্রচুর সেতু নির্মাণের প্রয়োজন, যা ব্যয়বহুল।

* ভূমিকম্প প্রবণতা: অসম একটি ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চল। এর ফলে পরিকাঠামো নির্মাণে অতিরিক্ত সতর্কতা ও ব্যয় প্রয়োজন হয় এবং ভূমিকম্পে পরিকাঠামোর ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

* সীমিত সরকারি বিনিয়োগ: অসমের মতো উন্নয়নশীল রাজ্যের পরিবহন পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিশাল পুঁজির অভাব।

* পাহাড়ি ও দুর্গম অঞ্চল: রাজ্যের কিছু অংশ (যেমন কার্বি আংলং, ডিমা হাসাও) পাহাড়ি ও দুর্গম, যেখানে সড়ক ও রেললাইন নির্মাণ অত্যন্ত কঠিন এবং ব্যয়সাপেক্ষ।

* নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ: দীর্ঘ সীমান্ত এবং কিছু অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা বিনিয়োগের পরিবেশকে প্রভাবিত করে। এছাড়াও, বন্যা ও ভারী বৃষ্টির কারণে সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় খুব বেশি।

১৪। সম্পদ বলতে কী বোঝায়? অসমের প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদগুলো কী কী?

Ans. সম্পদ (Resource)- সম্পদ বলতে বোঝায় এমন উপকরণ বা উপাদান, যা মানুষের চাহিদা মেটাতে এবং অর্থনৈতিক কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। যে কোনো বস্তু যা মানুষের কাজে লাগে এবং যার উপযোগিতা (Utility) আছে, সেটাই সম্পদ। এটি হতে পারে প্রাকৃতিক (যেমন বন, খনিজ), মানবসৃষ্ট (যেমন প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি) বা মানব (যেমন জ্ঞান, দক্ষতা)।

অসমের প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ

অসম প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদগুলি হলো:

* খনিজ সম্পদ – পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস: অসম ভারতের অন্যতম প্রধান তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী রাজ্য।

কয়লা: উচ্চ মানের কয়লার কিছু মজুত রয়েছে।

চুনাপাথর: মূলত পাহাড়ি অঞ্চলগুলিতে পাওয়া যায়।

* বনজ সম্পদ: অসমের বিশাল বনাঞ্চল মূল্যবান কাঠ (যেমন শাল, সেগুন), বাঁশ, বেত এবং বিভিন্ন ঔষধি গাছ সরবরাহ করে।

* জল সম্পদ: ব্রহ্মপুত্র এবং তার বহু উপনদীগুলি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, সেচ, জলপরিবহন এবং মৎস্য চাষের বিপুল সম্ভাবনা বহন করে।

* ভূমি সম্পদ: ব্রহ্মপুত্র ও বরাক উপত্যকার উর্বর পলিমাটি কৃষি, বিশেষত চা ও ধানের চাষের জন্য আদর্শ।

১৫। অসমের প্রধান তৈলক্ষেত্রগুলো উল্লেখ করো।

Ans. অসম ভারতের প্রাচীনতম এবং প্রধান তৈল উৎপাদনকারী রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম। এর প্রধান তৈলক্ষেত্রগুলি হলো:

* দিগবই (Digboi): ভারতের প্রাচীনতম তৈলক্ষেত্র, যা ১৮৮৯ সালে আবিষ্কৃত হয়।

* নাহরকাটিয়া (Naharkatia): ডিব্রুগড় জেলার একটি বড় তৈলক্ষেত্র।

* মোরান (Moran): শিবসাগর জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।

* হাগ্রিজান (Hugrijan): তিনসুকিয়া জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ তৈল ও গ্যাস ক্ষেত্র।

* রুদ্রসাগর (Rudrasagar): শিবসাগর জেলার অন্যতম প্রধান তৈলক্ষেত্র।

* লকওয়া (Lakwa): শিবসাগর জেলার আরও একটি বৃহৎ তৈলক্ষেত্র।

উল্লেখিত এই ক্ষেত্রগুলি এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র ক্ষেত্রগুলি অসমে অবস্থিত প্রধান তেল শোধনাগার (যেমন ডিগবই, নুমালীগড়, গুয়াহাটি এবং বঙ্গাইগাঁও) এর কাঁচামাল সরবরাহ করে।

১৬। অসমের জলসম্পদের বিষয়ে সংক্ষেপে লেখো।

Ans. অসমের জলসম্পদ অত্যন্ত বিশাল এবং গুরুত্বপূর্ণ, যা রাজ্যের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মূল ভিত্তি।

* প্রধান নদী ব্যবস্থা: ব্রহ্মপুত্র ও বরাক নদী এবং এদের многочис উপনদীগুলি (যেমন সুবর্ণসিঁড়ি, মানস, কপিলা) অসমের জলসম্পদের মূল উৎস। ব্রহ্মপুত্র ভারতে একটি অন্যতম বৃহৎ নদী, যা বর্ষাকালে প্রচুর জল বহন করে।

* ব্যবহার:

* জলবিদ্যুৎ: এই নদীগুলিতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে (যেমন সুবর্ণসিঁড়ি লোয়ার ড্যাম)।

* সেচ: কৃষি কাজের জন্য এই জল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

* জলপরিবহন: ব্রহ্মপুত্র নদীকে জাতীয় জলপথ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

* মৎস্য চাষ: অসংখ্য বিল (অপেক্ষাকৃত ছোট জলাশয়), হ্রদ এবং নদীগুলি মৎস্য চাষের কেন্দ্র।

* সমস্যা: বর্ষাকালে এই বিপুল জলরাশি প্রায়শই ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করে। এছাড়াও, নদীর ক্ষয়সাধন (Erosion), পলি সঞ্চয় (Siltation) এবং জলদূষণ জলসম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রধান চ্যালেঞ্জ।

১৭। অসমের প্রাকৃতিক সম্পদগুলির অবক্ষয়ের কারণগুলি কী কী?

Ans.অসমের মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদগুলির অবক্ষয়ের প্রধান কারণগুলি হলো:

* বন উজাড় (Deforestation): অবৈধভাবে কাঠ কাটা, কৃষিক্ষেত্র বৃদ্ধি, এবং জনবসতি ও পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য বনাঞ্চল ধ্বংস করা হচ্ছে, যা বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল এবং বনজ সম্পদের ক্ষতি করছে।

* অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও জনপ্রব্রজন: বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ মেটাতে কৃষি ও বসতি এলাকার সম্প্রসারণ করা হচ্ছে, যা বনাঞ্চল ও জলসম্পদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।

* অনির্ধারিত খনন: খনিজ সম্পদ (যেমন কয়লা, চুনাপাথর) এবং তেল ও গ্যাসের অনিয়ন্ত্রিত খনন পরিবেশ দূষণ এবং ভূমিক্ষয় বাড়াচ্ছে।

* পরিবেশ দূষণ:

* জলদূষণ: শিল্প (বিশেষত তেল শোধনাগার ও কাগজ কল) এবং কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কীটনাশক নদীর জলকে দূষিত করছে।

* বায়ুদূষণ: ইটের ভাটা এবং যানবাহনের ধোঁয়া বায়ু দূষণ ঘটাচ্ছে।

* বন্যা ও নদী ক্ষয়সাধন: প্রতি বছর নিয়মিত বন্যার কারণে উর্বর টপ-সয়েল বা উপরের মাটি ধুয়ে যাচ্ছে এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলের ভূমি সম্পদ ক্ষয় হচ্ছে।

১৮। বর্ধিত জনসংখ্যা প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলেছে?

Ans. বর্ধিত জনসংখ্যা অসমের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর বহুলাংশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে:

* বনজ সম্পদের অবক্ষয়: মানুষের খাদ্য, বাসস্থান, কাঠ ও কৃষিজমির চাহিদা মেটাতে বনাঞ্চল দ্রুত হারে ধ্বংস করা হচ্ছে, যার ফলে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল এবং পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

* ভূমি সম্পদের উপর চাপ: বর্ধিত খাদ্য চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত জমিতে চাষ করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত চাষের ফলে মাটির উর্বরতা কমছে এবং ভূমিক্ষয় বাড়ছে।

* জলসম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার ও দূষণ: পানীয় জল, সেচ এবং শিল্পের জন্য জলসম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়াও, বর্জ্য ও শিল্প-দূষণ নদীর জলকে ব্যবহারের অনুপযোগী করে তুলছে।

* খনিজ সম্পদের দ্রুত ক্ষয়: জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বাড়তে থাকা চাহিদা মেটানোর জন্য কয়লা, তেল, ও গ্যাস-এর মতো অ-নবায়নযোগ্য (Non-renewable) খনিজ সম্পদগুলি দ্রুত হারে উত্তোলন করা হচ্ছে, যা এই সম্পদগুলির ভবিষ্যৎ মজুতকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।

১৯। অসমের বৃহৎ জনসংখ্যা রাজ্যের বোঝা (সমস্যা) নাকি সম্পদ? আলোচনা করো।

Ans. অসমের বৃহৎ জনসংখ্যা একই সাথে বোঝা (সমস্যা) এবং সম্পদ উভয়ই হতে পারে, নির্ভর করে কীভাবে এই জনসংখ্যাকে পরিচালনা করা হয়।

বোঝা বা সমস্যা হিসেবে

* সম্পদের উপর চাপ: বৃহৎ জনসংখ্যা রাজ্যের সীমিত প্রাকৃতিক (যেমন জল, বন, জমি) এবং মানবসৃষ্ট সম্পদের (যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি) উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।

* অর্থনৈতিক চাপ: উচ্চ বেকারত্বের হার, দারিদ্র্য এবং মৌলিক পরিকাঠামোগত পরিষেবা প্রদানে সরকারের উপর চাপ।

* পরিবেশগত অবক্ষয়: জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বন উজাড়, দূষণ এবং ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পায়।

সম্পদ হিসেবে

* মানব সম্পদ: যদি এই জনসংখ্যাকে সঠিকভাবে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে দক্ষ করে তোলা যায়, তবে তারা রাজ্যের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

* শ্রমশক্তির সরবরাহ: বিপুল সংখ্যক কর্মক্ষম জনসংখ্যা শিল্প, কৃষি এবং পরিষেবা খণ্ডে শ্রমশক্তির জোগান দেয়, যা উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য।

* বাজার সম্প্রসারণ: বৃহত্তর জনসংখ্যা অভ্যন্তরীণ পণ্যের জন্য একটি বিশাল বাজার সৃষ্টি করে, যা শিল্পায়নকে উৎসাহিত করতে পারে।

উপসংহার: জনসংখ্যাকে সম্পদে রূপান্তর করতে হলে, সরকারকে মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং দক্ষতা বিকাশের (Skill Development) ওপর জোর দিতে হবে, যাতে কর্মক্ষম জনসংখ্যা উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে। তা না হলে এটি রাজ্যের জন্য একটি অর্থনৈতিক বোঝাই থেকে যাবে।

২০। অসমে মানব সম্পদ গড়ার জন্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত?

Ans. অসমে জনসংখ্যাকে মানব সম্পদে (Human Resource) পরিণত করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা উচিত:

* শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি: প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার মান উন্নত করা এবং বিশেষত বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (STEM) শিক্ষাকে জোরদার করা। বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার (Vocational and Technical Education) প্রসারে বিনিয়োগ করা।

* দক্ষতা বিকাশ (Skill Development): বাজারের চাহিদা অনুযায়ী যুবক-যুবতীদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা। যেমন – ডিজিটাল সাক্ষরতা, চা শিল্পে দক্ষতা, পর্যটন ও আতিথেয়তা, এবং তেল ও গ্যাস শিল্প সংশ্লিষ্ট কারিগরি জ্ঞান।

* স্বাস্থ্য ও পুষ্টি: স্বাস্থ্যসেবা পরিকাঠামো উন্নত করা এবং পুষ্টির অভাব দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়া। স্বাস্থ্যকর জনশক্তিই একমাত্র উৎপাদনশীল হতে পারে।

* কর্মসংস্থান সৃষ্টি: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (MSME), কৃষিভিত্তিক শিল্প, এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশে জোর দেওয়া, যা ব্যাপক হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে।

* উদ্যোক্তা উন্নয়ন (Entrepreneurship Development): যুবকদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য, পরামর্শ এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করা।

২১। অসমের অর্থনীতিতে কৃষিখণ্ডের ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

Ans.অসমের অর্থনীতিতে কৃষিখণ্ড একটি প্রধান এবং ঐতিহ্যবাহী ভূমিকা পালন করে, যদিও সময়ের সাথে সাথে এর আপেক্ষিক গুরুত্ব কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।

* জীবিকা ও কর্মসংস্থান: রাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। এটি গ্রামীণ জনসংখ্যার প্রধান জীবিকা।

* রাজস্বের উৎস: চা, ধান, পাট ও সরিষার মতো কৃষি পণ্যগুলি রাজ্য ও দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখে। বিশেষত চা শিল্প রাজ্যের রাজস্ব এবং বৈদেশিক মুদ্রার একটি অন্যতম প্রধান উৎস।

* শিল্পের ভিত্তি: কৃষি অসমের কৃষিভিত্তিক শিল্পগুলির (যেমন চা প্রক্রিয়াকরণ, চিনি কল, ধান কল) জন্য কাঁচামাল সরবরাহ করে।

* সমস্যা: কৃষিখণ্ড এখনও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা (যেমন বন্যা, খরা) এবং সেচের অভাব-এর উপর অত্যধিক নির্ভরশীল। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার কম এবং ক্ষুদ্র ও খণ্ডিত জমিগুলিও এর উৎপাদনশীলতাকে প্রভাবিত করে।

২২। অসমের কৃষি-জলবায়বীয় অঞ্চল কয়টি কী কী? এগুলোর বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে উল্লেখ করো।

Ans. অসমকে সাধারণত ৬টি প্রধান কৃষি-জলবায়বীয় অঞ্চলে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো:

* নিম্ন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা অঞ্চল (Lower Brahmaputra Valley Zone):

* বৈশিষ্ট্য: উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু, মাঝারি বৃষ্টিপাত, পলিমাটি।

* ফসল: ধান, পাট, সরিষা, বিভিন্ন ডাল।

* উত্তর ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা অঞ্চল (North Brahmaputra Valley Zone):

* বৈশিষ্ট্য: উচ্চ বৃষ্টিপাত, দো-আঁশ মাটি, ব্রহ্মপুত্রের বন্যার প্রভাব।

* ফসল: ধান, চা, আখের চাষ।

* উচ্চ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা অঞ্চল (Upper Brahmaputra Valley Zone):

* বৈশিষ্ট্য: বেশি বৃষ্টিপাত, অপেক্ষাকৃত উষ্ণ, উর্বর পলিমাটি।

* ফসল: চা, ধান (আউশ, আমন, বোড়ো), সরিষা। এই অঞ্চল চা শিল্পের জন্য বিখ্যাত।

* পার্বত্য অঞ্চল (Hills Zone) – কার্বি আংলং ও ডিমা হাসাও:

* বৈশিষ্ট্য: শীতল ও শুষ্ক জলবায়ু, পাহাড়ি ও অনুর্বর মাটি।

* ফসল: জুম চাষ (স্থানান্তরিত কৃষি), কমলা, আনারস এবং মশলা।

* বরাক উপত্যকা অঞ্চল (Barak Valley Zone):

* বৈশিষ্ট্য: উষ্ণ, আর্দ্র, উচ্চ বৃষ্টিপাত।

* ফসল: ধান, চা, ডাল ও তৈলবীজ।

* মধ্য ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা অঞ্চল (Central Brahmaputra Valley Zone):

* বৈশিষ্ট্য: মাঝারি বৃষ্টিপাত, ধান চাষের জন্য উপযুক্ত সমভূমি।

* ফসল: ধান (প্রধান), পাট, আখ।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *