অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১। অর্থনৈতিক ভূগোল কাকে বলে ? এর মূল বিষয়বস্তু কী ? অর্থনৈতিক ভূগোলের প্রধান শাখাগুলি উল্লেখ করো ।
উত্তৰঃ ভূগোলের যে শাখায় সম্পদের উৎপাদন , বিতরণ , উপভোগ এবং বিনিময়ের সঙ্গে জড়িত মানুষের কার্যকলাপ স্থান – কাল সাপেক্ষে অধ্যয়ন করা হয় , তাকে অর্থনৈতিক ভূগোল বলে ।
মানুষের জীবনধারণের জন্য যা কিছু প্রয়োজন , যেমন — প্রাকৃতিক সম্পদ , বিভিন্ন প্রকারের দ্রব্য সামগ্রী , মানুষের কার্যাবলী , রীতিনীতি , ক্ষমতা ও কর্মকুশলতা অর্থনৈতিক ভূগোলের বিষয়বস্তু । প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীতে থাকা প্রাকৃতিক এবং মানব – সৃষ্ট পরিবেশের উপাদানসমূহের বিভিন্নতার জন্য মানুষের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ সকল স্থানে একই হয় না । পৃথিবীর সকল স্থানই একটি অন্যটির উপর নির্ভরশীল । ভূগোল বিষয়টির একটি প্রধান শাখা অর্থনৈতিক ভূগোল । অর্থনৈতিক ভূগোলের কয়েকটি উপশাখা আছে । সেইগুলি হল — কৃষি ভূগোল , ঔদ্যোগিক ভূগোল , সম্পদ ভূগোল , পরিবহণ ভূগোল , বাজার ভূগোল , পর্যটন ভূগোল , ইত্যাদি প্রধান ।
প্রশ্ন ২। অর্থনৈতিক ভূগোলের পরিসর সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তৰঃ অর্থনৈতিক ভূগোল প্রধানত মানুষের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের বিতরণ এবং এর সাথে জড়িত বিভিন্ন কারক ও প্রক্রিয়া অধ্যয়ন করে। এর মূল পরিসর কয়েকটি বিশেষ প্রশ্নের ওপর ভিত্তি করে গঠিত:
১) অর্থনৈতিক কার্যকলাপ কোথায় অবস্থিত?
২) এর বৈশিষ্ট্য কী কী?
৩) এটি অন্য কোন পরিঘটনার সাথে জড়িত?
৪) এটি যেখানে রয়েছে, সেখানে কেন রয়েছে?
৫) যদি অন্য কোনো স্থানে এটি থাকত, তবে বেশি সুবিধাজনক হত কিনা?
প্রথম তিনটি প্রশ্ন পরম্পরাগত অর্থনৈতিক ভূগোলের সাথে সম্পর্কিত, আর পরের দুটি প্রশ্ন আধুনিক অর্থনৈতিক ভূগোলের ভিত্তি তৈরি করেছে। অর্থনৈতিক ভূগোলবিদ জর্জ চিসহোমের মতে, একটি স্থান বা অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ও দিক নির্ধারণই এর মূল উদ্দেশ্য। অন্যদিকে, C. F. Jones এবং G. G. Darkenwald-এর মতে, অর্থনৈতিক ভূগোল উৎপাদন ও বাণিজ্যের মধ্যে পার্থক্য এবং অঞ্চলগুলোর অগ্রগতির কারণ উদঘাটন করে।
প্রশ্ন ৩। মানুষের অর্থনৈতিক বৃত্তি বলতে কী বোঝ ? এই অর্থনৈতিক বৃত্তিগুলো কী কী ?
উত্তৰঃ মানুষ জীবন ধারণের জন্য বিভিন্ন প্রকার অর্থনৈতিক কার্যে লিপ্ত হয় । এই সকল অর্থনৈতিক কার্যই হল মানুষের বৃত্তি । এই অর্থনৈতিক কার্য বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নরূপ । এই গুলিই হল মানুষের বৃত্তি । এই বৃত্তি বিভিন্ন
পরিবেশ ও ভৌগোলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে । মানুষের অর্থনৈতিক বৃত্তি চার প্রকারের :
( ক ) প্রাথমিক বৃত্তি ( Primary Occupation ) :- যে কার্যের দ্বারা মানুষ প্রকৃতি হতে সম্পদ আহরণ করে তাকে প্রাথমিক বৃত্তি বলে । যেমন — কৃষিকার্য , মাছ ধরা , বনজ সম্পদ আহরণ , খনিজ সম্পদ আহরণ ইত্যাদি ।
( খ ) দ্বিতীয়ক বৃত্তি ( Secondary Occupation ) :- যে কার্য দ্বারা মানুষ প্রকৃতি থেকে আহরণ করা বিভিন্ন দ্রব্য নানা ধরনের প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের ব্যবহারোপযোগী করে তোলাকে দ্বিতীয়ক বৃত্তি বলে । যেমন — শিল্পোৎপাদন প্রক্রিয়া , বিভিন্ন নির্মাণ তথা পুনর্নির্মাণ কার্য ইত্যাদি ।
( গ ) তৃতীয়ক বৃত্তি ( Tertiary Occupation ) :- যে কার্যের দ্বারা প্রাথমিক ও দ্বিতীয়ক বৃত্তির মাধ্যমে উৎপাদিত সামগ্রীগুলো উপভোক্তার কাছে পৌছায় তাকে তৃতীয়ক বৃত্তি বলে । যেমন — যাতায়াত , পরিবহণ , বাজার , পাইকারী ও খুচরা বিক্রী , পর্যটন , যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদির সাথে জড়িত অর্থনৈতিক কার্যসমূহ ।
( ৪ ) চতুৰ্থক বৃত্তি ( Quaternary Occupation ) :- যে কার্যের দ্বারা দ্বিতীয় ও তৃতীয়ক বৃত্তিসমূহকে অতি সহজ ও ফলপ্রসূ করে তোলাতে সাহায্য করে তাকে চতুর্থক বৃত্তি বলে । যেমন — ব্যাঙ্ক , অন্যান্য বিত্তীয় প্রতিষ্ঠান , প্রচার মাধ্যম , প্রশাসন , শিক্ষা – গবেষণা ইত্যাদির সাথে জড়িত কাৰ্যসমূহ ।
প্রশ্ন ৪। অর্থনৈতিক ভূগোলের প্রধান শাখাসমূহের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
উত্তৰঃ অর্থনৈতিক ভূগোলের প্রধান শাখাসমূহ হল―
নীচে অর্থনৈতিক ভূগোলের প্রধান শাখাসমূহ ও বিষয়বস্তুর একটি তালিকা দেওয়া হল ―
অর্থনৈতিক ভূগোলের শাখা | বিষয়বস্তু |
( ১ ) কৃষি ভূগোল | ১। অর্থনৈতিক ভূগোলের একটি অন্যতম প্রধান শাখা । এই ভূগোলে কৃষিকাজের সাথে জড়িত কারকসমূহ , কৃষির প্রকার , কৃষিকার্যের বিবরণ ও পদ্ধতি , শস্যের উৎপাদন ও এর সাথে জড়িত সূত্র , কৃষিসামগ্রীর বাজার তথা আমদানি রপ্তানি ইত্যাদি অধ্যয়ন করা হয় । |
( ২ ) ঔদ্যোগিক ভূগোল | ২। এখানে উদ্যোগ স্থাপনের সাথে জড়িত অর্থনৈতিক তথা অন্যান্য কারকসমূহ , উদ্যোগের প্রকার ও ভৌগোলিক বিতরণ , ঔদ্যোগিক সামগ্রীর উৎপাদন , উদ্যোগ অবস্থানের সাথে জড়িত সূত্র , ঔদ্যোগিক সামগ্রীর বাজার তথা আমদানি রপ্তানি ইত্যাদি অধ্যয়ন করা হয় । |
( ৩ ) সম্পদ ভূগোল | ৩। এখানে সম্পদের প্রকার , আঞ্চলিক বিতরণ , সম্পদ উদ্ঘাটন তথা উৎপাদনের সাথে জড়িত কারক সমূহ , সম্পদ ও উন্নয়নের সম্পর্ক , সম্পদের সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি অধ্যয়ন করা হয় । |
( ৪ ) পরিবহণ ভূগোল | ৪। এই ভূগোলে পরিবহণ ব্যবস্থার প্রকার ও সাথে জড়িত কারকসমূহ , সম্পদ বিতরণে পরিবহণের ভূমিকা , মানুষের যাতায়াত তথা অর্থনৈতিক কার্যকলাপে পরিবহণের ভূমিকা , অর্থনৈতিক উন্নয়ন , যেমন — ঔদ্যোগিক উন্নয়ন , কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়নে পরিবহণের উন্নয়নের ভূমিকা ইত্যাদি অধ্যয়ন করা হয় । |
( ৫ ) বাজার ভূগোল | ৫। এখানে বাজার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা ও এর কারকসমূহ , বাজারের প্রকার ও বিতরণ এবং এর সাথে জড়িত সূত্রসমূহ অধ্যয়ন করা হয় । |
( ৬ ) পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ভূগোল | ৬। এখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে জড়িত কারকসমূহ , পরিকল্পনা ব্যবস্থা , বহনক্ষম উন্নয়ন , অঞ্চল তথা উপাদান ভিত্তিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ইত্যাদি অধ্যয়ন করা হয় । |
( ৭ ) পর্যটন ভূগোল | ৭। এখানে পর্যটন ও এর বিকাশের সাথে জড়িত কারকসমূহ , পর্যটনের প্রকার , পর্যটন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রক্রিয়া ও পরিকল্পনা ইত্যাদি অধ্যয়ন করা হয় । |
প্রশ্ন ৫। সম্পদ ভূগোলকে কেন অর্থনৈতিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা বলা হয় ?
উত্তৰঃ অর্থনৈতিক ভূগোল ও এর শাখা – উপশাখার অধ্যয়নে সম্পদ ভূগোলের সাথে ওতঃপ্রোতভাবে জড়িত । কারণ কোনো একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেশটির সম্পদের মান ও প্রাচুর্যের ওপর বিশেষভাবে নির্ভর করে । অর্থনৈতিক ভূগোলে সম্পদের প্রকার , আঞ্চলিক বিতরণ , সম্পদ উদঘাটন তথা উৎপাদনের সাথে জড়িত কারকসমূহ , সম্পদ ও উন্নয়নের সম্পর্ক , সম্পদের সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সম্বন্ধে ভূগোলে বিশেষভাবে আলোচনা করা হয় ।
প্রশ্ন ৬। মানুষের জীবনধারণে যেসব বস্তু উপকারী ও কার্যকরী, সেগুলিকেই সম্পদ বলা হয়। যেমন—বায়ু, জল, সূর্যরশ্মি, মাটি, গাছপালা, ফলমূল, খনিজ পদার্থ ইত্যাদি। কোনো বস্তুকে সম্পদ বলা হলে তার মধ্যে উপযোগিতা ও কার্যকারিতা থাকতে হবে। এই দুই গুণ থাকলেই তা মানুষের কল্যাণে ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক হয়।
সম্পদের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ:
১) উন্নততর সংস্কৃতি ও জ্ঞান সম্পদের উপযোগিতা বৃদ্ধি করে।
২) স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্পদের কার্যকারিতা বাড়ানো যায়।
৩) সম্পদের অবস্থান তার আর্থিক গুরুত্ব নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ।
৪) সরকারের দক্ষতা ও সঠিক প্রশাসন সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে।
মানুষ তার জ্ঞানের মাধ্যমে প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানের উপকারিতা অনুধাবন করে এবং নতুন সম্পদের উদ্ভাবন করে। তাই মানুষ নিজেই একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, যাকে মানব সম্পদ বলা হয়।
প্রশ্ন ৭। ‘ সম্পদ পরিবর্তনশীল’— ব্যাখ্যা করো ।
উত্তরঃ সম্পদ পরিবর্তনশীল — এ বিষয়টি অনস্বীকার্য। বর্তমানে যেকোনো বস্তু মানুষের ব্যবহারে না এলেও বা ক্ষতিকর মনে হলেও ভবিষ্যতে তা মানব কল্যাণে ব্যবহৃত হতে পারে। এমন বস্তু যা মানুষ neither উপকারী না অপকারী মনে করে, তাকে নিরপেক্ষ বা নিষ্ক্রিয় সামগ্রী বলে। যেমন—প্রাচীনকালে কয়লা বা খনিজ তেলের ব্যবহার না জানায় সেগুলো ছিল নিরপেক্ষ। আবার কিছু বস্তু বা পরিবেশিক পরিস্থিতি মানুষকে ক্ষতি করে, যেমন—অনুর্বর জমি বা বন্যাপ্রবণ অঞ্চল—এগুলোকে প্রতিরোধক বলা হয়।
কিন্তু মানুষের জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এই নিরপেক্ষ সামগ্রী ও প্রতিরোধক অনেক সময় সম্পদে রূপান্তরিত হয়েছে। একইভাবে, বর্তমানে উপকারী সম্পদ ভবিষ্যতে নিষ্ক্রিয় বা অপকারী হয়ে উঠতে পারে। তাই সম্পদের ব্যবহার ও মূল্যায়ন সময় ও প্রয়োজনে পরিবর্তিত হয়।
প্রশ্ন ৮। সম্পদের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে উদাহরণসহ সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ সম্পদ বলতে এমন বস্তু বা উপাদানকে বোঝায় যার উপযোগিতা রয়েছে এবং যা মানুষের চাহিদা পূরণে সক্ষম। শুধু ভৌত বা রাসায়নিক গুণ থাকলেই কোনও বস্তুকে সম্পদ বলা যায় না, তার কার্যকারিতা থাকতে হয়। মানুষের চাহিদা ও ব্যবহার অনুযায়ী একসময় অপ্রয়োজনীয় বস্তুও পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় সম্পদে পরিণত হতে পারে। এই ধারণাই সম্পদের কার্যকারিতা তত্ত্বের মূল কথা।
কৃষি, খনিজ, শিল্প ও বাণিজ্যের মতো ক্ষেত্রগুলিতে সম্পদের প্রয়োগ ও গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। মানুষ প্রকৃতি থেকে স্থল, জল, সূর্য ও বায়ু—এই চারটি মৌলিক উৎস থেকে নানা ধরনের সম্পদ পেয়েছে এবং তা ব্যবহার করে সমাজকে সমৃদ্ধ করেছে।
মানবজাতি তার বুদ্ধি, জ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে জীবনযাত্রাকে উন্নত করেছে। তাই সম্পদ শুধু চাহিদা পূরণেই নয়, মানব সভ্যতার অগ্রগতিতেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ৯। সম্পদ এবং মানুষের মধ্যেকার সম্পর্ক কী সে – বিষয়ে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ মানুষের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকারের বস্তুকেই সম্পদ বলা হয় । সম্পদ হতে হলে এর কার্যকারিতা ও উপকারিতা গুণ দুটি থাকতে হবে । এই দুটি গুণ থাকার জন্যই সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে মানব কল্যাণ ও আর্থ – সামাজিক উৎকর্ষ সাধন সম্ভব হয়েছে । কাজেই সম্পদ এবং এর ব্যবহার মানব সমাজের উন্নয়নের সঙ্গে ওতঃপ্রোতভাবে জড়িত । প্রকৃতি , মানুষ এবং সমাজ সংস্কৃতি তথা বিজ্ঞান – প্রযুক্তির আন্তঃক্রিয়ার ফলেই এক একটি সম্পদের সৃষ্টি হয় । মানুষ সম্পদের সঙ্গে দুভাবে জড়িত — সম্পদের উৎপাদক ও উপভোক্তা হিসাবে । তদুপরি প্রকৃতিতে থাকা সামগ্রীগুলির কার্যকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কীয় গুণগুলি মানুষের জ্ঞানের মাধ্যমে উদ্ঘাটন করা হয় । মানুষের জ্ঞানের পরিসর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন সম্পদের সৃষ্টি এবং ব্যবহার হচ্ছে । সম্পদের উৎপাদক বা সৃষ্টিকর্তা হিসাবে মানুষও একপ্রকারের সম্পদ যাকে মানব সম্পদ বলা হয় ।
প্রশ্ন ১০। সম্পদ এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তির মধ্যে কী সম্পর্ক বিদ্যমান সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ মানুষ তার প্রযুক্তিজ্ঞানের বলে বিভিন্ন কৃষিজ , শিল্পজ, বনজ , সামুদ্রিক সম্পদকেও ভিন্নতর প্রয়োজনভিত্তিক দ্রব্যে রূপান্তরিত করে নিয়েছে — সৃষ্টি করেছে বিভিন্ন শিল্প । প্রাকৃতিক সম্পদগুলি আহরণের স্থান থেকে শিল্পকেন্দ্রিক স্থানে নিয়ে আসা আবার সেখান থেকে উৎপাদিত দ্রব্য জনমুখী করবার প্রয়োজনে শহর ও গ্রাম – গঞ্জ গড়ে নিয়ে আসার জন্য মানুষ সড়কপথ , রেলপথ , বিমানপথ , নৌ – পথে পরিবহণ ব্যবস্থা তৈরি করে নিয়েছে । নদীপ্রবাহে বাঁধ নির্মাণ করে একই কর্মকাণ্ডের মধ্যে জলসেচ , জলবিদ্যুৎ উৎপাদন , সড়ক পরিবহণ প্রভৃতি বহুমুখী প্রকল্প ( Multipurpose Project ) গড়ে নিয়েছে । মানুষের জ্ঞানের প্রসার ও বিজ্ঞান – প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে পৃথিবীতে থাকা এরূপ বহু নিরপেক্ষ সামগ্রী এবং প্রতিরোধক মানুষের সুপ্রচেষ্টার ফলে সম্পদে রূপান্তরিত হয়েছে । কাজেই প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট ব্যবহারের তারতম্য নির্ভর করে মানুষের চাহিদার পরিবর্তন এবং নতুন প্রযুক্তির উন্নয়নের উপর ।
প্রশ্ন ১১। উদাহরণসহ সম্পদের শ্রেণিবিভাজন সম্পর্কে লেখো ।
উত্তরঃ সৃষ্টিপ্রক্রিয়া অনুসারে সম্পদসমূহকে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যেতে পারে :-
১। সৃষ্টিপ্রক্রিয়া অনুসারে –
( ক ) প্রাকৃতিক সম্পদ ।
( খ ) মানব সৃষ্ট সম্পদ ।
( গ ) মানব – সম্পদ ।
( ক ) প্রাকৃতিক সম্পদ :- যে সকল সম্পদ , সূর্যরশ্মি , বায়ু , জল , মাটি , গাছ পালা , জীবজন্তু, খনিজ পদার্থ , নদ – নদী ইত্যাদি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়ে প্রকৃতিতে বিস্তার লাভ করেছে সে সকল সম্পদগুলোকে প্রাকৃতিক সম্পদ বলে । প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ কঠিন , বায়বীয় বা জলীয় অবস্থায় পাওয়া যায় । যেমন — কয়লা , খনিজ তেল , প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদ যেগুলোকে আমরা শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করি ।
( খ ) মানব – সৃষ্ট সম্পদ :- মানুষ প্রকৃতি থেকে আহরণ করে অনেক সামগ্রীকে প্রয়োজন সাপেক্ষে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে রূপান্তর করে নিজেদের ব্যবহারোপযোগী করে তোলে । যেমন- বাঁশ থেকে কাগজ , কার্পাস থেকে কাপড় , খনিজ তেল থেকে নানা প্রকারের রঙ , ন্যাপথা , কৃত্রিম কাপড় , রাসায়নিক সার , কীটনাশক দ্রব্য , সাবান , প্লাস্টিক , কৃত্রিম রবার , মোম ইত্যাদি । গাছ – পালা থেকে নানাপ্রকারের ঔষধ , কাঠ , গৃহনির্মাণ সামগ্রী ইত্যাদি । মানুষের প্রচেষ্টাতে উৎপাদিত এ সমস্ত সামগ্রীগুলোকে মানব সৃষ্ট সম্পদ বলে ।
( গ ) মানব সম্পদ :- সম্পদের উৎপাদক বা সৃষ্টিকর্তা হিসেবে , মানুষ একপ্রকারের সম্পদ — যাকে মানব সম্পদ বলে । জনসংখ্যা , বুদ্ধি , পেশীশক্তি প্রভৃতিকে মানব সম্পদের অন্তর্গত ধরা হয় । বিভিন্ন সম্পদের মত মানুষ একটি মূল্যবান সম্পদ । জনসম্পদ বা মানব সম্পদ একটি দেশের সম্পদ সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । জনসম্পদের সঠিক ব্যবহার ঘটলে দেশ সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে। মানব সম্পদের প্রাচুর্য থাকলে শিল্পের জন্য শ্রমিক সুলভ হয় । সস্তায় শ্রমিকের সরবরাহ থাকার ফলে শিল্পজাত দ্রব্যের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায় এবং স্বল্পমূল্যে শিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানি করা যায় । দেশের প্রকৃত মানব সম্পদের হিসেব সংখ্যা দিয়ে হয় না , হিসেব করতে হয় গুণগত মান দিয়ে ৷
২। গঠন অনুসারে সম্পদকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় ।
( ক ) জৈবিক সম্পদ ।
( খ ) অজৈবিক সম্পদ ।
( ক ) জৈবিক সম্পদ :- জৈবিক সম্পদ বলতে পৃথিবীর সেইসব সম্পদকে বোঝায় যেগুলি জীবজগৎ থেকে উৎপন্ন হয় । যেমন — উদ্ভিদ , বনভূমি , প্রাণী জগৎ প্রভৃতি ।
( খ ) অজৈবিক সম্পদ :- যে সম্পদগুলো জীবজগৎ থেকে সৃষ্ট নয় সেগুলো অজৈবিক সম্পদ । যেমন — জল , শিলা , খনিজ দ্রব্য , বায়ু , কয়লা ইত্যাদি ।
৩। স্থায়িত্ব অনুসারে সম্পদকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়—
( ক ) নবীকরণযোগ্য সম্পদ ।
( খ ) অনবীকরণযোগ্য সম্পদ ।
( ক ) নবীকরণযোগ্য সম্পদ :- প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর মধ্যে কিছু কিছু সম্পদ একবার মাত্র ব্যবহারের ফলেই একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায় না । এদের পুনর্বার পুর্ণীকৃত প্রক্রিয়ার দ্বারা পুনরায় ব্যবহারোপযোগী করে রাখা যায় , তাদেরকে নবীকরণযোগ্য বা পুনঃ পুর্ণীকৃত সম্পদ ( Renewable or Inexhaustible Resource ) বলে । যেমন — সূর্যরশ্মি , বায়ু, গাছ – পালা , জীব জন্তু , মানুষ , শস্য ইত্যাদি নবীকরণযোগ্য সম্পদ ।
( খ ) অনবীকরণযোগ্য সম্পদ :- যে সকল সম্পদ ব্যবহারের পর নবীকরণ করা সম্ভব হয় না এবং একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায় , সে সকল সম্পদকে অনবীকরণযোগ্য বা ক্ষয়শীল সম্পদ ( Non Renewable or Exhaustible Resource ) বলে । যেমন – কয়লা , খনিজ তেল , খনিজ পদার্থ , প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি অনবীকরণযোগ্য সম্পদ ।
৪। মালিকীস্বত্বের ভিত্তিতে সকল সম্পদকে তিনভাগে ভাগ করা যায়—
( ক ) ব্যক্তিগত ।
( খ ) জাতীয় । এবং
( গ ) আন্তর্জাতিক সম্পদ ।
( ক ) ব্যক্তিগত সম্পদ :- মানুষের নিজ নিজ দখল বা অধিকারে থাকা ভূমি , সা – সম্পত্তি এবং নিজস্ব গুণ যেমন — ভাল চরিত্র , শিক্ষা , কর্মদক্ষতা ইত্যাদিকে ব্যক্তিগত সম্পদ বলে ।
( খ ) জাতীয় সম্পদ :- দেশের সকল ব্যক্তির সম্পদের সমষ্টি, নদী , পাহাড় , খনিজ সম্পদ , বনজ সম্পদ , মৃত্তিকা , জমি , জীবজন্তু , শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান , প্রশাসনিক ব্যবস্থা , সরকার প্রভৃতি জাতীয় সম্পদের অন্তর্গত ।
( গ ) আন্তর্জাতিক সম্পদ :- সমগ্র পৃথিবীর প্রতিটি দেশের জাতীয় সম্পদ এবং সমগ্র বিশ্বের অধীনে থাকা সম্পদ যেমন— সাগর – মহাসাগর , খনিজ সম্পদ , জীবজন্তু , বায়ুমণ্ডল , অরণ্য অঞ্চল ইত্যাদিকে একত্রে আন্তর্জাতিক সম্পদ বলা হয় । কারণ এই সমস্ত সম্পদ মানব জাতির কল্যাণে ব্যবহৃত হয় ।
প্রশ্ন ১২। প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে কী বোঝায় ? উদাহরণসহ ‘ সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তরঃ প্রাকৃতিক সম্পদঃযে সকল সম্পদ , যেমন — সূর্যরশ্মি , বায়ু , জল , মাটি , গাছ – পালা , জীবজন্তু , খনিজ পদার্থ , নদ- নদী ইত্যাদি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়ে প্রকৃতিতে বিস্তার লাভ করেছে সে সকল সম্পদগুলোকে প্রাকৃতিক সম্পদ বলে । প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ কঠিন , বায়বীয় বা জলীয় অবস্থায় পাওয়া যায় । যেমন — কয়লা , খনিজ তেল , প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদ যেগুলোকে আমরা শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করি ।
প্রশ্ন ১৩। মানব সৃষ্ট সম্পদ কী ? উদাহরণসহ এর ব্যবহার সম্পর্কে যা জান লেখো।
উত্তরঃ মানব সৃষ্ট সম্পদ হলো সেইসব সম্পদ, যা মানুষ তার জ্ঞান, দক্ষতা ও প্রযুক্তির সাহায্যে প্রাকৃতিক সম্পদকে রূপান্তরিত করে তৈরি করে। এদের সৃষ্টি ও উন্নয়নের পেছনে মানুষের মেধা, শ্রম ও প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
উদাহরণ:
– কারখানা
– যানবাহন (গাড়ি, ট্রেন, বিমান)
– মেশিনারি
– সেতু ও রাস্তা
– ভবন ও ঘরবাড়ি
– বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র
ব্যবহার:
- কারখানা ও মেশিনারি শিল্প উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, যা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে।
- যানবাহন মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে সহায়তা করে।
- সেতু ও রাস্তা পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করে তোলে।
- বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে আধুনিক জীবনযাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
এইসব সম্পদ মানুষের প্রয়োজন পূরণ, উন্নয়ন ও আর্থিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রশ্ন ১৪। নবীকরণযোগ্য এবং অনবীকরণযোগ্য সম্পদের মধ্যে পার্থক্য কী কী ? উদাহরণসহ সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ নবীকরণযোগ্য সম্পদ :- প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর মধ্যে কিছু কিছু সম্পদ একবার মাত্র ব্যবহারের ফলেই একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায় না । এদের পুনর্বার পুর্ণীকৃত প্রক্রিয়ার দ্বারা পুনরায় ব্যবহারোপযোগী করে রাখা যায় , তাদেরকে নবীকরণযোগ্য বা পুনঃ পুর্ণীকৃত সম্পদ ( Renewable Inexhaustible Resource ) বলে । যেমন — সূর্যরশ্মি , বায়ু , গাছ – পালা , জীব জন্তু , মানুষ , শস্য ইত্যাদি নবীকরণযোগ্য সম্পদ ।
অনবীকরণযোগ্য সম্পদ :- যে সকল সম্পদ ব্যবহারের পর নবীকরণ করা সম্ভব হয় না এবং একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায় , সে সকল সম্পদকে অনবীকরণ যোগ্য বা ক্ষয়শীল সম্পদ ( Non Renewable or Exhaustible Resource ) বলে । যেমন — কয়লা , খনিজ তেল , খনিজ পদার্থ , প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি অনবীকরণযোগ্য সম্পদ ।
প্রশ্ন ১৫। সম্পদ সংরক্ষণ বলতে কী বোঝ ? এর প্রয়োজনীয়তা কী ?
উত্তরঃ সম্পদের ব্যবহার ও এদের সংরক্ষণ ওতঃপ্রোতভাবে জড়িত । সাধারণত কোনো ধরনের বিনাশ এবং অপব্যবহার না করে সম্পদের সম্ভাব্য পূর্ণ ব্যবহারকার্য বা ধারণাকে সম্পদ সংরক্ষণ বলে ।
সম্পদ – সংরক্ষণের মূল উদ্দেশ্য হল আমরা প্রকৃতি থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় সম্পদসমূহ এমনভাবে আহরণ করে ব্যবহার করতে হয় যাতে এর দ্বারা আমরা সকলে অনেকদিন ধরে উপকৃত হতে পারি । প্রাকৃতিক সম্পদ পৃথিবীর সকল স্থানে সমানভাবে পাওয়া যায় না । জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং মানব সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে । উন্নত দেশগুলোতে উচ্চমাত্রায় হওয়া প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জনবিস্ফোরণের ফলে বৃদ্ধি পাওয়া প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার সমগ্র বিশ্ব জুড়ে বহু প্রাকৃতিক সম্পদ বিশেষ করে অনবীকরণ সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার এক ভয়াবহ ইঙ্গিত দেখা দিয়েছে । এর মোকাবিলা করার জন্য এক উপায় হিসেবে সমগ্র বিশ্বতে সম্পদ সংরক্ষণের কার্যসূচী গ্রহণ করা হয়েছে । অন্যথায় পৃথিবীতে মানুষ এবং মানব সভ্যতার স্থায়িত্ব অনিশ্চিত হয়ে পড়বে । কাজেই সম্পদের সংরক্ষণ অপরিহার্য ।
প্রশ্ন ১৬। সম্পদ সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো ।
উত্তরঃ সম্পদ সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। প্রথমত, একটি সম্পদের বিকল্প খোঁজার জন্য গবেষণা চালানো দরকার, যেমন—প্রাকৃতিক রবারের পরিবর্তে কৃত্রিম রবার বা নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার। দ্বিতীয়ত, পুনরাবর্তনের মাধ্যমে ব্যবহৃত দ্রব্য পুনরায় ব্যবহার করে সম্পদ সংরক্ষণ করা যায়। তৃতীয়ত, অভিযোজন বা নবপ্রচলনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদকে উপযোগী করে তোলা যায়। চতুর্থত, উৎপাদনের সময় বর্জ্য হ্রাসের মাধ্যমে অপচয় কমানো সম্ভব। পঞ্চমত, সম্পদ সংরক্ষণ বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা ও শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। এছাড়া, সংরক্ষণ সম্পর্কিত আইনের কঠোর প্রয়োগ, সম্পদের সঠিক মূল্যায়ন এবং ভবিষ্যতের প্রয়োজন অনুধাবন করাও গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এসব পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ সম্ভব।প্রশ্ন ১৭। সম্পদ সংরক্ষণের সাথে জড়িত সংস্থা এবং সেইসবের ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ প্রাকৃতিক সম্পদ নিঃশেষ হওয়ার আগেই তা সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বহু সংস্থা কাজ করছে। আন্তর্জাতিকভাবে IUCN (International Union for Conservation of Nature) অন্যতম প্রধান সংস্থা, যা ১৯৪৮ সালে ফ্রান্সে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সংস্থার উদ্দেশ্য হলো প্রাকৃতিক সম্পদ ও জৈব বৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ও গবেষণা। IUCN-এর নেতৃত্বে WWF (World Wide Fund for Nature) ও WCMC (World Conservation Monitoring Centre) গঠিত হয়েছে। ভারতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কাজ করে। এর অন্তর্গত ১৯৮৬ সালে গঠিত হয়েছে Indian Council of Forestry Research and Education। বেসরকারিভাবে বিজ্ঞান ও পরিবেশ কেন্দ্র, গ্রীণপিস ইন্ডিয়া ও ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করছে। অসমেও অসম বিজ্ঞান সমিতি ও ‘আরণ্যক’-এর মতো সংস্থা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ৫ জুন বিশ্বব্যাপী ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ পালিত হয়।
প্রশ্ন ১৮। সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো :
উত্তরঃ ( ক ) সম্পদ :- মানুষের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকারের বস্তুকেই সম্পদ বলে । বিখ্যাত সম্পদ সমীক্ষক অধ্যাপক জিমারম্যান বলেছেন , সম্পদ বলতে কোনো বস্তু বা পদার্থকে বোঝায় না ; কোনো বস্তু বা পদার্থ নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা অভাব পূরণ করতে যে ভূমিকায় কাজ করে সেই কর্মক্ষমতাকে সম্পদ বলে । পৃথিবীতে বায়ু , জল , সূর্যরশ্মি , মাটি , গাছপালা , ফল – মূল , খনিজ পদার্থ ইত্যাদি মানুষের কাজে ব্যবহৃত হয় । অর্থনৈতিক ভূগোলের ভাষায় কোনো দ্রব্য বা পদার্থ সম্পদ নয় , দ্রব্যের উপযোগিতা ও কার্যকারিতাকে সম্পদ বলে । কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় ও নির্দিষ্ট সময়ে মানুষের চাহিদা মেটানোর উপযোগী কোনো পদার্থ বা দ্রব্য যে কাজ করতে সক্ষম সেই কাজকে সম্পদ বলে ।
( খ ) মানব সম্পদ :- প্রাকৃতিক সম্পদসমূহকে মানুষের ব্যবহার উপযোগী করার জন্য মানুষের কার্যদক্ষতা , শিক্ষা , প্রযুক্তি এবং আগ্রহের প্রয়োজন । ঐ সকল গুণ থাকার জন্য মানুষকে মানব সম্পদ বলা হয় । প্রকৃতপক্ষে মানুষই সম্পদের সৃষ্টিকর্তা । দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যায় যে , জাপান প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব সত্ত্বেও মানব সম্পদকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর এক প্রথম সারির দেশে পরিণত হয়েছে ।
( গ ) সম্পত্তি :- অর্থনীতির সূত্র অনুযায়ী যে সকল বস্তুর বিনিময়মূল্য আছে , সেইগুলিকে সম্পত্তি ( Wealth ) বলা হয়। ব্যবহারোপযোগী হওয়া ছাড়াও সম্পত্তির যোগান তুলনামূলকভাবে সীমিত এবং একে মূল্যের বিনিময়ে হস্তান্তর করা যেতে পারে । যেমন — মাটি , ঘর – বাড়ি , যন্ত্রপাতি , কোম্পানির অংশ ইত্যাদি । এর বাজার মূল্য আছে।
( ঘ ) নবীকরণযোগ্য সম্পদ :- যে সকল প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত হলেও প্রাকৃতিক স্বাভাবিক নিয়মে আবার নিজে নিজেই পূরণ হয়ে যায় , সেই সকল সম্পদকে নবীকরণযোগ্য বা প্রবাহমান ( Renewable Inexhaustible Resource ) সম্পদ বলা হয় । যেমন — সূর্যের আলো , বায়ুপ্রবাহ , গাছপালা , জীব – জন্তু , মানুষ ইত্যাদি । কিছু কিছু নবীকরণযোগ্য সম্পদ আছে যা ব্যবহারের জন্য সাময়িকভাবে হ্রাস পেলেও পুনরায় নিজে নিজেই পূরণ হয়ে যায় । যেমন — অরণ্য , সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি ।
( ঙ ) ব্যক্তিগত সম্পদ :- মানুষের নিজ নিজ দখল বা অধিকারে থাকা ভূমি , সম্পত্তি এবং নিজের ভালো গুণ যেমন — ভালো চরিত্র , শিক্ষা , কর্মদক্ষতা ইত্যাদিকে ব্যক্তিগত সম্পদ (Individual or Personal Resource ) বলা হয়।
( চ ) জাতীয় সম্পদ :- একটি দেশের তত্ত্বাবধান বা দখলে থাকা সকল সম্পত্তি যেমন — রাস্তা – ঘাট , ভূমি , নদ – নদী , সেতু , অরণ্যে থাকা গাছ – পালা ও জীব – জন্তু , শিক্ষানুষ্ঠান , প্রশাসনিক ব্যবস্থা , সরকার ইত্যাদি জাতীয় সম্পদ ।
( ছ ) জৈব সম্পদ :- পৃথিবীর যে সকল সম্পদ জীবজগৎ হতে উৎপন্ন হয়েছে সেইসকল সম্পদকে জৈব সম্পদ বলা হয় । যেমন — উদ্ভিদ , প্রাণীজগৎ , বনভূমি , মৎস্য , শস্য ইত্যাদি ।
( জ ) সম্পদ সংরক্ষণ :- কোন ধরনের বিনাশ এবং অপব্যবহার না করে সম্পদের সম্ভাব্য পূর্ণ ব্যবহার করা কার্য বা ধারণাকে সম্পদ সংরক্ষণ ( Conservation of Resources ) বলা হয় । সম্পদ সংরক্ষণ বলতে সম্পদের ব্যবহার না করে কেবল ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চিত করে রাখাকে বুঝায় না । সমগ্র বিশ্ব জুড়ে বহু অনবীকরণযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ নিঃশেষ হবার অশুভ ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে । এই ভয়াবহ সমস্যা হতে রক্ষা পাবার একমাত্র উপায় হল সম্পদ সংরক্ষণ।
( ঝ ) সম্পদের পুনরাবর্তন :- সীমিত পরিমাণে থাকা কাঁচা সামগ্রীর ব্যবহার হ্রাস করবার জন্য ব্যবহারের উপযোগী বর্জিত দ্রব্য পুনরাবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুনর্বার ব্যবহার করা যায় । উদাহরণস্বরূপ পুরোনো পলিথিন ব্যাগ , প্লাষ্টিক বোতল, কাগজ , লোহার সামগ্রী ইত্যাদিকে পুনরাবর্তনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সম্পদের কাঁচা সামগ্রী কিছু পরিমাণে হলেও সংরক্ষণ করা যায় ।
( ঞ ) IUCN :- সমগ্র বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সুরক্ষা ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় , রাষ্ট্রীয় , আঞ্চলিক তথা স্থানীয় পর্যায়ে বহু সরকারি – বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনের জন্ম হয়েছে । রাষ্ট্রসংঘের অন্তর্গত আন্তঃরাষ্ট্রীয় পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা ( International Union for Conservation of Nature — IUCN ) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । ১৯৪৮ সালে UNESCO অর্থাৎ রাষ্ট্রসংঘের শৈক্ষিক , বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থার প্রথম সঞ্চালক প্রধান জুলিয়ান হাক্সলের ( ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী ) প্রচেষ্টাতে ফ্লান্সে IUCN প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । এই সংস্থাটির মূল উদ্দেশ্য হল সমগ্র বিশ্বের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরুক্ষণ তথা জৈব বৈচিত্র্য সম্পর্কে অধ্যয়ন , গবেষণা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা । IUCN- র নেতৃত্বে WWF for Nature ( World wide Fund for Nature ) ও বিশ্ব সংরক্ষণ নিরীক্ষণ কেন্দ্র ( World conservation Monitoring Centre ) স্থাপিত হয়েছে ।
প্রশ্ন ১৯। পার্থক্য লেখো :
( ক ) সম্পদ এবং সম্পত্তি :
উত্তরঃ
সম্পদ | সম্পত্তি |
১। এর বিনিময় মূল্য থাকতেও পারে অথবা নাও থাকতে পারে । | ১। এর বিনিময়মূল্য আছে । |
২। হস্তান্তর যোগ্য নয় । | ২। হস্তান্তর যোগ্য । |
৩। বাজার মূল্য থাকতে পারে অথবা নাও থাকতে পারে । | ৩। এর বাজার মূল্য আছে । |
৪। সকল সম্পত্তিই সম্পদ । | ৪। সকল সম্পত্তি সম্পদ নাও হতে পারে । |
৫। এর মাধ্যমে জনকল্যাণ হয় । | ৫। এর মাধ্যমে মানবজাতির উপকার বা অপকার দুটোই হতে পারে । |
( খ ) অর্থনৈতিক ভূগোল এবং সম্পদ ভূগোল :
উত্তরঃ
অর্থনৈতিক ভূগোল | সম্পদ ভূগোল |
১। অর্থনৈতিক ভূগোল সম্পদ ভুগোলের অন্তর্ভুক্ত নয় । | ১। কিন্তু সম্পদ ভূগোল অর্থনৈতিক ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত একটি উপশাখা । |
২। অর্থনৈতিক ভূগোলের সীমা বিস্তৃত । | ২। সম্পদ ভূগোলের সীমা সসীম । |
( গ ) সম্পদ এবং নিষ্ক্রিয় সামগ্রী :
উত্তরঃ
সম্পদ | নিষ্ক্রিয় সামগ্রী |
১। মানুষের উপকার সাধন করে । | ১। ইহা মানুষের কোন উপকার সাধন করে না । |
২। ইহা পরিবর্তনশীল । | ২। ইহা অপরিবর্তনশীল । |
৩। সম্পদ প্রতিরোধক সামগ্রী নয় । | ৩। নিষ্ক্রিয় বা নিরপেক্ষ সামগ্রী প্রতিরোধক সামগ্রী হতে পারে । |
( ঘ ) জৈব এবং অজৈব সম্পদ :
উত্তরঃ
জৈব | অজৈব সম্পদ |
১। জৈব সম্পদের জীবন আছে । | ১। অজৈব সম্পদের জীবন নেই । |
২। জৈব সম্পদের সৃষ্টি অল্প হতে পারে । | ২। অজৈব সম্পদের সৃষ্টি সময়ে হতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন । |
( ঙ ) নবীকরণযোগ্য এবং অনবীকরণযোগ্য সম্পদ :
উত্তরঃ
নবীকরণযোগ্য সম্পদ | অনবীকরণযোগ্য সম্পদ |
১। একবার ব্যবহারের পরও পুনর্ব্যবহার করা যায় । | ১। একবার ব্যবহারের পর নিঃশেষ হয়ে যায় । |
২। ইহা সঞ্চয়ের ভাণ্ডার হিসেবে দীর্ঘদিন থাকবে । | ২। ইহা পৃথিবী হতে নিশ্চিহ্ন হতে পারে । |
৩। ইহা ব্যবহারের পর নিজে নিজেই স্বাভাবিক নিয়মে পূরণ হয়ে যায় । | ৩। ইহা নিজে নিজে পূরণ হতে পারে না । |
( চ ) ব্যক্তিগত সম্পদ এবং জাতীয় সম্পদ :
উত্তরঃ
ব্যক্তিগত সম্পদ | জাতীয় সম্পদ |
১। ইহা কোন ব্যক্তি – বিশেষের নিজ দখলে থাকে। | ১। ইহা দেশের সকল ব্যক্তির সম্পদ । |
২। ব্যক্তিগত সম্পদের রক্ষণা বেক্ষণ ব্যক্তি নিজে করে । | ২। ইহা দেশের সরকার দেখা – শোনা করে । |
৩। ব্যক্তিগত সম্পদ হস্তান্তর যোগ্য নয় । | ৩। সরকার পরিবর্তনের সাথে নতুন সরকারের হস্তগত হতে পারে । |
( ছ ) মানব – সৃষ্ট সম্পদ এবং মানব সম্পদ :
উত্তরঃ
মানব – সৃষ্ট সম্পদ | মানব সম্পদ |
১। মানুষের উন্নত বুদ্ধি ও শিক্ষা প্রয়োগ করে সৃষ্টি করা হয় । | ১। বিপুল সংখ্যক মানুষই মানব সম্পদ । |
২। মানুষের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানব – সৃষ্ট সম্পদ বৃদ্ধি পেতে পারে । | ২। চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত নয় । |
৩। মানব – সৃষ্ট সম্পদ মানুষের গুণ ও কৌশলের ওপর নির্ভরশীল । | ৩। মানব সম্পদ জনসংখ্যার ওপর নির্ভরশীল । |
( জ ) সম্পদের পুনরাবর্তন এবং অভিযোজন :
উত্তরঃ
সম্পদের পুনরাবর্তন | অভিযোজন |
১। একে পুনরায় ব্যবহার করা যায় । | ১। এটি অন্য কোন সম্পদের সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবহারোপযোগী করা হয় । |
২। এথেকে সম্পদ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় । | ২। এর দ্বারা সংরক্ষণ নাও হতে পারে । |
৩। এর দ্বারা সম্পদ ও আর্থিক অপচয় রোধ করা সম্ভব । | ৩। এতে অপচয় রোধ করার সাথে সাথে নতুন ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করা হয় । |