শক্তির উৎস সমুহ, Chapter -14
শক্তির উৎস সমুহ, Chapter -14
অনুশীলনী (পৃষ্ঠা ১৩-১৪)
১. গরম জলের জন্য সৌর জল-উত্তাপক যন্ত্র ব্যবহার করা যায় না-
(a) সূর্য করোজ্জ্বল দিনে
(b) মেঘলা দিনে
(c) গরম দিনে
(d) বায়ু প্রবাহ যুক্ত দিনে।
উত্তর: (b) মেঘলা দিনে
* ব্যাখ্যা: সৌর জল-উত্তাপক যন্ত্র সূর্যের আলো থেকে তাপ শক্তি সংগ্রহ করে জল গরম করে। মেঘলা দিনে পর্যাপ্ত সূর্যালোক না থাকায় এটি কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে না।
২. নিম্নলিখিত কোন্টি জৈব-ভর শক্তির উৎস নয়?
(a) কাঠ
(b) গোবর গ্যাস
(c) নিউক্লীয় শক্তি
(d) কয়লা
উত্তর: (c) নিউক্লীয় শক্তি
* ব্যাখ্যা: কাঠ, গোবর গ্যাস (জৈব পদার্থের পচন থেকে প্রাপ্ত) এবং কয়লা (প্রাচীন উদ্ভিদের দেহাবশেষ) সবই জৈব পদার্থ থেকে উদ্ভূত শক্তি উৎস (জৈব-ভর বা জীবাশ্ম জ্বালানী)। নিউক্লীয় শক্তি পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে পাওয়া যায়, এটি জৈব-ভর নয়।
৩. ব্যবহার করা অধিকাংশ শক্তির উৎস প্রকৃতপক্ষে সঞ্চিত সৌর শক্তি। নিম্নলিখিত কোন্ উৎস আসলে সৌরশক্তি থেকে সংগৃহিত নয়?
(a) ভূ-তাপশক্তি
(b) বায়ু শক্তি
(c) নিউক্লীয় শক্তি
(d) জৈব-ভর
উত্তর: (a) ভূ-তাপশক্তি এবং (c) নিউক্লীয় শক্তি
* ব্যাখ্যা:
* বায়ু শক্তি: সূর্যের অসম তাপের কারণে বায়ু প্রবাহ সৃষ্টি হয়।
* জৈব-ভর: উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তি ব্যবহার করে বেড়ে ওঠে। কাঠ, গোবর, কয়লা, পেট্রোলিয়াম সবই আদিতে সৌরশক্তি সঞ্চিত করে।
* ভূ-তাপশক্তি: পৃথিবীর অভ্যন্তরের ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন এবং তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের ফলে উৎপন্ন তাপ থেকে আসে ।
* নিউক্লীয় শক্তি: পরমাণুর নিউক্লিয়াসের বিভাজন বা সংযোজন থেকে উৎপন্ন হয়।
* সুতরাং, ভূ-তাপশক্তি এবং নিউক্লীয় শক্তি সরাসরি সৌরশক্তি থেকে উদ্ভূত নয়। (যদি একটি উত্তর বাছতে হয়, নিউক্লীয় শক্তি সবচেয়ে উপযুক্ত কারণ ভূ-তাপের উৎসে তেজস্ক্রিয়তা জড়িত যা পরোক্ষভাবে নক্ষত্রের সৃষ্টির সাথে যুক্ত হতে পারে, কিন্তু সরাসরি সৌরশক্তি নয়)।
৪. জীবাশ্ম জ্বালানী এবং প্রত্যক্ষ সৌরশক্তির তুলনা ও পার্থক্য লিখ।
উত্তর:
| বৈশিষ্ট্য | জীবাশ্ম জ্বালানী (কয়লা, পেট্রোলিয়াম) | প্রত্যক্ষ সৌরশক্তি |
|—|—|—|
| উৎস | কোটি কোটি বছর ধরে মৃত জীবদেহ চাপা পড়ে তৈরি। | সূর্য থেকে সরাসরি প্রাপ্ত আলো ও তাপ। |
| নবায়নযোগ্যতা | নবায়ন অযোগ্য (সীমিত ভাণ্ডার)। | নবায়নযোগ্য (অফুরন্ত)। |
| পরিবেশগত প্রভাব | দহনের ফলে বায়ু দূষণ (কার্বন, সালফার, নাইট্রোজেন অক্সাইড), অ্যাসিড বৃষ্টি, গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন হয়। | ব্যবহারকালে দূষণমুক্ত। (সৌরকোষ নির্মাণে কিছু দূষণ হতে পারে)। |
| প্রাপ্যতা | নির্দিষ্ট স্থানে কেন্দ্রীভূত, উত্তোলন ও পরিবহন প্রয়োজন। | দিনের বেলায় সর্বত্র (মেঘমুক্ত আকাশে) পাওয়া যায়। |
| ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা | যেকোনো সময় ব্যবহার করা যায়। | শুধুমাত্র দিনের বেলায় এবং মেঘমুক্ত আবহাওয়ায় কার্যকর। |
| ব্যয় | উত্তোলন ও পরিশোধনে ব্যয় আছে, ব্যবহারের প্রযুক্তি সহজলভ্য। | প্রাথমিক স্থাপনার ব্যয় বেশি, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম। |
৫. শক্তির উৎস হিসাবে জৈব-ভর এবং জলবিদ্যুত শক্তির তুলনা কর এবং পার্থক্য লিখ।
উত্তর:
| বৈশিষ্ট্য | জৈব-ভর (কাঠ, গোবর গ্যাস) | জলবিদ্যুৎ শক্তি |
| উৎস | উদ্ভিদ ও প্রাণীজ পদার্থ (কাঠ, গোবর, কৃষিজ বর্জ্য)। | নদীর স্রোত বা বাঁধের সঞ্চিত জলের স্থিতিশক্তি। |
| নবায়নযোগ্যতা | নবায়নযোগ্য (গাছ লাগিয়ে বা গবাদি পশু থেকে পাওয়া যায়)। | নবায়নযোগ্য (বৃষ্টির জলের উপর নির্ভরশীল)। |
| পরিবেশগত প্রভাব | কাঠের দহনে বায়ু দূষণ হয়। গোবর গ্যাস অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্ন, কিন্তু মিথেন উৎপন্ন হতে পারে (গ্রিন হাউস গ্যাস)। | বাঁধ নির্মাণে পরিবেশগত সমস্যা হয় (জমি ও বাসস্থান ডুবে যাওয়া, মিথেন গ্যাস উৎপন্ন)। |
| প্রাপ্যতা | গ্রামীণ এলাকায় সহজলভ্য। | নির্দিষ্ট নদী বা পাহাড়ি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। |
| ব্যবহার | প্রধানত রান্না ও তাপ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। জৈব গ্যাস আলো জ্বালাতেও কাজে লাগে। | মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। |
| উৎপন্ন পদার্থ | দহনের পর ছাই থাকে (কাঠ, গোবর চাপড়া)। গোবর গ্যাসে উৎকৃষ্ট সার পাওয়া যায়। | কোনো বর্জ্য পদার্থ উৎপন্ন হয় না। |
৬. নিম্নলিখিত উৎসসমূহ থেকে শক্তি উৎপাদনের সীমাবদ্ধতা কি?
(a) বায়ু
(b) তরঙ্গ
(c) জোয়ার ভাঁটা।
উত্তর:
(a) বায়ু শক্তি:
* বায়ুকল কেবল সেই স্থানেই স্থাপন করা যায় যেখানে বছরের বেশিরভাগ সময় ধরে জোরে বায়ু বয় (গড় গতিবেগ > 15 km/h) ।
* বায়ুপ্রবাহ অনিয়মিত, তাই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য শক্তি সঞ্চয়ের (যেমন ব্যাটারি) ব্যবস্থা প্রয়োজন।
* বায়ুশক্তি ফার্ম স্থাপনের জন্য অনেক বড় জায়গার প্রয়োজন হয়।
* প্রাথমিক স্থাপনার খরচ অনেক বেশি।
* রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়বহুল।
(b) তরঙ্গ শক্তি:
* কেবলমাত্র সমুদ্র উপকূলবর্তী স্থানে যেখানে শক্তিশালী তরঙ্গ পাওয়া যায়, সেখানেই এটি কার্যকর।
* তরঙ্গের শক্তি অনিয়মিত ও পরিবর্তনশীল।
* যন্ত্রপাতি স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়বহুল এবং কঠিন, বিশেষ করে সামুদ্রিক পরিবেশে।
* বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের প্রযুক্তি এখনও ততটা উন্নত নয়।
(c) জোয়ার ভাটা শক্তি:
* সমুদ্রের নিকটবর্তী সংকীর্ণ খাঁড়িতে বাঁধ নির্মাণের উপযুক্ত স্থান খুব সীমিত।
* জোয়ার-ভাটার শক্তির পার্থক্য সব জায়গায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে।
* বাঁধ নির্মাণ ব্যয়বহুল এবং এটি সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
* জোয়ার-ভাটার সময় অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, নিরবচ্ছিন্ন নয়।
৭. কিসের ভিত্তিতে নিম্নলিখিত শক্তি উৎসের শ্রেনী বিভাজন করবে-
(a) নবীকরন যোগ্য এবং নবীকরন অযোগ্য শক্তি উৎস?
(b) নিঃশেষ যোগ্য এবং অনিঃশেষ শক্তি-উৎস?
উত্তর:
(a) নবীকরন যোগ্য (Renewable) এবং নবীকরন অযোগ্য (Non-renewable) শক্তি উৎস: এই শ্রেণীবিভাগ করা হয় উৎসটি পুনরায় পূরণ হওয়ার হারের উপর ভিত্তি করে।
* নবায়নযোগ্য: যে শক্তির উৎসগুলি ব্যবহারের পরেও নিঃশেষ হয়ে যায় না বা প্রকৃতিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে পুনরায় পূরণ হয় (যেমন সৌরশক্তি, বায়ু শক্তি, জলবিদ্যুৎ, জৈব-ভর) ।
* নবায়ন অযোগ্য: যে শক্তির উৎসগুলির ভাণ্ডার সীমিত এবং একবার ব্যবহার করলে তা পুনরায় তৈরি হতে কোটি কোটি বছর সময় লাগে বা আদৌ তৈরি হয় না (যেমন কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, নিউক্লীয় জ্বালানী)।
(b) নিঃশেষ যোগ্য (Exhaustible) এবং অনিঃশেষ (Inexhaustible) শক্তি-উৎস: এই শ্রেণীবিভাগ করা হয় উৎসের ভাণ্ডারের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে।
* নিঃশেষ যোগ্য: যে শক্তির উৎসগুলির ভাণ্ডার সীমিত এবং ব্যবহারের ফলে একদিন শেষ হয়ে যাবে (যেমন কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস)। এটি নবায়ন অযোগ্য উৎসের সমার্থক।
* অনিঃশেষ: যে শক্তির উৎসগুলির ভাণ্ডার কার্যত অফুরন্ত এবং ব্যবহারের ফলে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই (যেমন সৌরশক্তি, বায়ু শক্তি, জোয়ার-ভাটা শক্তি)। এটি নবায়নযোগ্য উৎসের সমার্থক।
৮. আদর্শ শক্তি উৎসের কি কি গুনাগুন থাকা প্রয়োজন?
উত্তর: একটি আদর্শ শক্তি উৎসের নিম্নলিখিত গুণাবলী থাকা প্রয়োজন:
* উচ্চ ক্যালোরি মান: প্রতি একক ভর বা আয়তনে বেশি পরিমাণে কার্য সম্পাদন বা শক্তি উৎপন্ন করতে পারা।
* সহজলভ্যতা: সহজে পাওয়া যাওয়া।
* সংরক্ষণ ও পরিবহন: সংরক্ষণ ও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া সহজ ও নিরাপদ হওয়া।
* সাশ্রয়ী: খরচ কম হওয়া।
* পরিবেশ বান্ধব: ব্যবহারের ফলে কম দূষণ সৃষ্টি করা বা দূষণমুক্ত হওয়া।
* নিয়ন্ত্রণযোগ্যতা: শক্তি উৎপাদন সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যাওয়া।
* নিরাপত্তা: ব্যবহার করা নিরাপদ হওয়া।
৯. সৌর কুকার ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা লিপিবদ্ধ কর। কোন অঞ্চলে সৌর কুকারের ব্যবহার সীমিত?
উত্তর:
সুবিধা:
* এটি পরিবেশ বান্ধব, কোনো দূষণ ঘটায় না।
* নবায়নযোগ্য সৌরশক্তি ব্যবহার করে, তাই জ্বালানীর কোনো খরচ নেই।
* ব্যবহার করা নিরাপদ।
* রক্ষণাবেক্ষণের খরচ প্রায় নেই।
* খাবার ধীরে ধীরে রান্না হওয়ায় তার পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।
অসুবিধা:
* শুধুমাত্র দিনের বেলায় এবং রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে ব্যবহার করা যায়। মেঘলা দিনে বা রাতে কাজ করে না।
* রান্না হতে অনেক বেশি সময় লাগে।
* খাবার ভাজা বা রুটি সেঁকার মতো উচ্চ তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় এমন রান্না করা যায় না।
* সূর্যের অবস্থান অনুযায়ী কুকারটিকে মাঝে মাঝে ঘোরাতে হতে পারে।
সীমিত ব্যবহার:
* যেসব অঞ্চলে বছরের বেশিরভাগ সময় মেঘলা থাকে বা সূর্যালোক কম পাওয়া যায় (যেমন মেরু অঞ্চল বা খুব বৃষ্টিবহুল অঞ্চল), সেখানে সৌর কুকারের ব্যবহার সীমিত।
১০. শক্তির বর্দ্ধিত চাহিদার পরিবেশগত প্রভাব কি। শক্তির ব্যবহার হ্রাস করার জন্য কি কি উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে?
উত্তর:
পরিবেশগত প্রভাব:
* জীবাশ্ম জ্বালানী (কয়লা, পেট্রোলিয়াম): বায়ু দূষণ (গ্রিন হাউস গ্যাস যেমন CO_2, অম্ল বৃষ্টির জন্য দায়ী SO_2, NO_2), জল ও মাটি দূষণ, বিশ্ব উষ্ণায়ন।
* জলবিদ্যুৎ: বাঁধ নির্মাণের ফলে বনভূমি ও কৃষিজমি ধ্বংস, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, মানুষের উচ্ছেদ, মিথেন গ্যাস নির্গমন ।
* নিউক্লীয় শক্তি: তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থ অপসারণ ও সংরক্ষণের সমস্যা, দুর্ঘটনার ঝুঁকি, পরিবেশ দূষণ ।
* বায়ু শক্তি: বায়ুকল স্থাপনের জন্য বৃহৎ জমির প্রয়োজন, পাখিদের জন্য ঝুঁকি, শব্দ দূষণ।
* জৈব-ভর (কাঠ): বনভূমি ধ্বংস, বায়ু দূষণ (যদি অদক্ষভাবে পোড়ানো হয়)।
শক্তির ব্যবহার হ্রাস করার উপায়:
* শক্তি সংরক্ষণ: অপ্রয়োজনে আলো, পাখা, এসি বন্ধ রাখা। শক্তি-সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি (যেমন LED বাল্ব, স্টার রেটিং যুক্ত ফ্রিজ, এসি) ব্যবহার করা।
* পরিবহন: ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে গণপরিবহন, সাইকেল ব্যবহার করা বা হেঁটে যাতায়াত করা।
* পুনর্ব্যবহার ও পুনর্নবীকরণ: বিভিন্ন সামগ্রী পুনর্ব্যবহার বা রিসাইকেল করা, কারণ নতুন সামগ্রী উৎপাদনে প্রচুর শক্তি প্রয়োজন হয়।
* গৃহ নির্মাণ: বাড়ি তৈরির সময় প্রাকৃতিক আলো-বাতাস ব্যবহারের সুযোগ রাখা, ছাদে সৌর প্যানেল বসানো।
* সচেতনতা বৃদ্ধি: শক্তির অপচয় রোধ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো।
* বিকল্প শক্তির ব্যবহার: সৌরশক্তি, বায়ু শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা।
