লড়াই”, Chapter- 11, Class-9, SEBA

লড়াই”, Chapter- 11, Class-9, SEBA

“লড়াই”, Chapter- 11, Class-9, SEBA
১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও
ক। কার ব্যাগ থেকে টাকা চুরি হয়েছিল?
উত্তর: প্রশান্তের ব্যাগ থেকে টাকা চুরি গিয়েছিল।
খ। সিদ্ধার্থদের ক্লাসের শিক্ষক কে ছিলেন?
উত্তর: সিদ্ধার্থদের ক্লাসের শিক্ষক ছিলেন মহেন্দ্র মাস্টার।
গ। নির্মল কার খোঁজে দোকানে গিয়েছিল?
উত্তর: নির্মল সিদ্ধার্থের খোঁজে দোকানে গিয়েছিল।
ঘ। সিদ্ধার্থ তার পেন্সিল-বাক্সে কী সঞ্চয় করে রেখেছিল?
উত্তর: সিদ্ধার্থ তার পেন্সিল-বাক্সে বাবার দেওয়া চকোলেটের লেবেলগুলো (জমানো কাগজ) সঞ্চয় করে রেখেছিল।
ঙ। [প্রশ্ন ৬ হিসাবে মুদ্রিত] নির্মলকে কেন বহুদিনের বাইরে যেতে হয়েছিল?
উত্তর: নির্মলের শরীরে একটা জটিল রোগ হওয়ায় তাকে বহুদিনের জন্য বাইরে যেতে হয়েছিল।
২। নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
ক। সিদ্ধার্থ কেন প্রশান্তের ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করেছিল?
উত্তর: সিদ্ধার্থ নিষিদ্ধ ড্রাগস মিশ্রিত সিগারেটে আসক্ত হয়ে পড়েছিল। সেই নেশার জিনিস কেনার জন্য দোকানদার তার কাছে পয়সা দাবি করে, কারণ সেগুলোর অনেক দাম। এই টাকার জন্যই সিদ্ধার্থ প্রথমে মায়ের সোনার বালা চুরি করে এবং পরে সহপাঠীদের ব্যাগও হাতড়াতে শুরু করে। এভাবেই সে নেশার টাকা জোগাড় করতে প্রশান্তের ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করেছিল।
খ। কী কী কারণে সিদ্ধার্থ নেশাসক্ত হয়ে পড়েছিল?
উত্তর: সিদ্ধার্থ নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য নেশাসক্ত হয়ে পড়েছিল:
* পারিবারিক অশান্তি: ছোটবেলা থেকেই সিদ্ধার্থ মা-বাবার মধ্যে প্রচণ্ড ঝগড়া, চেল্লামেল্লি ও গালিগালাজ দেখে আসছিল।
* একাকীত্ব: বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর সে প্রবল একাকীত্ব, স্নেহমমতার অভাব এবং অসহনীয় শূন্যতায় ভুগতে শুরু করে।
* প্রলোভন: এই মানসিক অবস্থায় সে পান-দোকানির কাছে তার দুঃখের কথা বলে এবং দোকানদার তাকে ‘দুঃখ কমে যাবে’ বলে প্রলুব্ধ করে ড্রাগস মিশ্রিত সিগারেট ধরিয়ে দেয়।
গ। নির্মল সিদ্ধার্থকে খুঁজে কেন পান দোকানে গিয়েছিল?
উত্তর: সিদ্ধার্থের আচরণে পরিবর্তন (যেমন – ক্লাসে পিছিয়ে বসা, স্কুল কামাই) এবং পান দোকানে তার ঘনঘন উপস্থিতি নির্মলকে কৌতূহলী ও সন্দিগ্ধ করে তুলেছিল। নির্মল সেই রহস্যময় দোকানদারকে বিশ্বাস করত না। সে তার বন্ধু সিদ্ধার্থকে এই “রহস্যের গোলোকধাঁধায়” হারিয়ে যেতে দিতে চায়নি, তাই তার খোঁজ করতেই সে পান দোকানে গিয়েছিল।
ঘ। সিদ্ধার্থ কেন প্রথমত নির্মলের মুখোমুখি হতে চায়নি?
উত্তর: সিদ্ধার্থ বেপরোয়া স্বভাবের হলেও নির্মলের মুখোমুখি হতে চায়নি কারণ নির্মলের মতো বন্ধুর মুখোমুখি হওয়া সহজ ছিল না। মহেন্দ্র মাস্টারের মতো কড়া শিক্ষকের কঠোর বাক্যবাণ বা আক্রমণের প্রত্যুত্তর দেওয়া সহজ, কিন্তু নির্মলের কোমল অথচ দৃঢ় কথার উত্তর দেওয়া সম্ভব ছিল না। নির্মলের আন্তরিক প্রশ্নগুলো তার মধ্যে “অস্বস্তিকর মৌনতা” তৈরি করত, যা এড়ানোর জন্যই সে প্রথমত নির্মলের মুখোমুখি হতে চায়নি।
ঙ। নির্মলের জটিল রোগের কথা জানতে পেরে সিদ্ধার্থ কী বলেছিল?
উত্তর: নির্মলের জটিল রোগের আকস্মিক খবরে সিদ্ধার্থ প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে “নির্বাক নিঃস্পন্দ” (speechless and motionless) হয়ে গিয়েছিল। সে এতটাই হতবাক হয়ে পড়েছিল যে কী বলবে তা ভেবে উঠবার আগেই নির্মল আবার কথা বলতে শুরু করে। তবে, কিছুক্ষণ পর নির্মলের হাত আঁকড়ে ধরে সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে সে নেশা ছাড়ার “নিশ্চয় চেষ্টা” করবে।
৩। দীর্ঘ উত্তর লেখো
ক। ‘তোর কি হয়েছে আমাকে বলতেই হবে সিদ্ধার্থ’- নির্মলের এই কথাগুলি সিদ্ধার্থকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?
উত্তর: নির্মলের এই কথাগুলি সিদ্ধার্থের যন্ত্রণাদগ্ধ মনের মধ্যে সংগীতের মতো বেজে চলেছিল। এই কথাগুলির মধ্যে সে সেই না-পাওয়া ভালবাসা ও আশ্রয়ের সন্ধান পেয়েছিল, যা তার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল।
এই কথাগুলো তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল:
১.  আত্মানুসন্ধান: মহেন্দ্র মাস্টারের মতো কঠোর শাসনে সে অভ্যস্ত ছিল, কিন্তু নির্মলের মতো বন্ধুর আন্তরিক প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া তার পক্ষে অস্বস্তিকর ছিল।
২.  বিবেক দংশন: এই কথাগুলো তার মনে এত গভীর প্রভাব ফেলেছিল যে, সে এক সপ্তাহ স্কুলে বা সেই পান দোকানে যেতে পারেনি। কথাগুলো তার ভেতরের প্রতিরোধকে জাগিয়ে তুলেছিল।
৩.  মানসিক আশ্রয়: সিদ্ধার্থের ঘরের “মৃত্যুশীতল নির্জনতায়” নির্মলের এই কণ্ঠস্বরই তার একমাত্র সঙ্গী হয়ে উঠেছিল, যা তাকে অন্ধকারের অতল থেকে টেনে তুলতে চাইছিল।
৪.  স্বীকারোক্তি: শেষ পর্যন্ত নির্মলের এই আন্তরিক জেদই সিদ্ধার্থকে মুখ খুলতে বাধ্য করে। নির্মলকে সে একটা “অপ্রত্যাশিত অবলম্বন” হিসেবে আঁকড়ে ধরে এবং তার জীবনের সমস্ত যন্ত্রণা ও ড্রাগস আসক্ত হওয়ার করুণ কাহিনী অকপটে বলে ফেলে।
খ। সিদ্ধার্থ কেন নিঃসঙ্গতায় ভুগছিল বুঝিয়ে বলো।
উত্তর: সিদ্ধার্থের নিঃসঙ্গতার মূল কারণ ছিল তার “ভাঙা সংসার” (broken home) এবং স্নেহমমতার চরম অভাব।
* পারিবারিক কোন্দল: বোঝার বয়স হওয়ার পর থেকেই সে মা-বাবার মধ্যেকার “দুর্বাদল বচসা” (terrible quarrels), প্রচণ্ড চেঁচামেচি ও গালিগালাজ দেখে আসছিল। এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে সে কার পক্ষ নেবে, সেই নিদারুণ প্রশ্নের আঘাতে তার “কোমল হৃদয়ে” অবিরত “রক্তক্ষরণ” হত।
* স্নেহের অভাব: সে মা ও বাবার “কোমল স্পর্শ” থেকে বঞ্চিত ছিল। বিনিদ্র রাতগুলোয় তার চোখের জল মোছার কেউ ছিল না।
* বিচ্ছেদ: বাবা তাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার পর সে আরও একা হয়ে পড়ে। বাবার সাথে দেখা হলেও সেই সাক্ষাতে তার বুক “অসহনীয় শূন্যতায়” ভরে উঠত।
* মায়ের উদাসীনতা: অন্যদিকে, তার মা-ও তার প্রতি মনোযোগ কমিয়ে দিয়েছিলেন। সিদ্ধার্থ স্কুল না গেলেও মা সেভাবে খোঁজ নিতেন না।
এইভাবে বাবা-মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়ে, সকল অবলম্বন হারিয়ে সিদ্ধার্থ এক তীব্র নিঃসঙ্গতা ও দুঃখের দহনে ভুগছিল।
গ। নির্মল কীভাবে সিদ্ধার্থকে ভুল পথ থেকে টেনে এনেছিল বিস্তারিত বর্ণনা করো।
উত্তর: নির্মল তার “ভালবাসা এবং দায়িত্ববোধ” দিয়ে সিদ্ধার্থকে ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে এনেছিল।
১.  সন্দেহ ও পর্যবেক্ষণ: নির্মল প্রথম সিদ্ধার্থের পরিবর্তনগুলি (যেমন – একা বসা, স্কুল কামাই) এবং রহস্যময় পান দোকানে তার ঘনঘন যাতায়াত লক্ষ করে।
২.  সরাসরি কিন্তু কোমল প্রশ্ন: চুরির ঘটনার পর সে সিদ্ধার্থকে সরাসরি প্রশ্ন করে, কিন্তু তার স্বরে কঠোরতার বদলে কোমলতা ছিল। সে বারংবার তাকে বলতে বলে, “তোর কি হয়েছে আমাকে বলতেই হবে”।
৩.  অদম্য অনুসন্ধান: সিদ্ধার্থ এড়িয়ে গেলেও নির্মল হাল ছাড়েনি। সে সিদ্ধার্থের খোঁজে সেই বিপজ্জনক পান দোকানে পর্যন্ত চলে যায়।
৪.  ত্যাগ স্বীকার: সেখানে গিয়ে নির্মল দোকানদারের সঙ্গীদের হাতে আক্রান্ত হয়; তার নাক ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। সিদ্ধার্থ যখন জানতে পারে যে নির্মল “তোর খবরে” অর্থাৎ তারই জন্য মার খেয়েছে, তখন সিদ্ধার্থের মনে তা গভীরভাবে ছাপ ফেলে।
৫.  সহানুভূতিশীল শ্রোতা: নির্মলের এই ত্যাগ ও আন্তরিকতায় সিদ্ধার্থ মুখ খোলে। নদীর ধারে বসে সে নির্মলকে “বুক উজাড় করে” তার মা-বাবার বিচ্ছেদ থেকে ড্রাগস আসক্ত হওয়ার সমস্ত করুণ কাহিনী বলে ফেলে।
৬.  বাস্তব সমাধান: নির্মল তাকে বকাঝকা না করে, নেশার পরিণতির (অকাল মৃত্যু, অপরাধ জগত) কথা মনে করিয়ে দেয়। সে তাকে মহেন্দ্র মাস্টারের বদলে সহানুভূতিশীল অনুভব স্যারের কাছে সব খুলে বলার এবং ডাক্তারের সাহায্য নেওয়ার বাস্তব পথ দেখায়।
৭.  অনুপ্রেরণা: সবশেষে নির্মল তার নিজের “জটিল রোগের” বিরুদ্ধে “লড়াই”-এর কথা বলে সিদ্ধার্থকে বোঝায় যে জীবনে সবাইকেই লড়তে হয়।
এভাবেই নির্মল বন্ধুত্ব, ত্যাগ ও সঠিক পথনির্দেশ দিয়ে সিদ্ধার্থকে অন্ধকারের পথ থেকে আলোর পথে ফিরিয়ে এনেছিল।
ঘ। ‘তার মতো ছেলের কথার উত্তর দিতে না পেরে অস্বস্তিকর মৌনতচায় কেবল ছটপটানোয় সার-‘ কথাগুলির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: এই কথাগুলি সিদ্ধার্থের মানসিক অবস্থা বর্ণনা করে যখন নির্মল তার চুরির বিষয়ে প্রশ্ন করেছিল। এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হলো—শাসন ও স্নেহের মধ্যে পার্থক্য।
সিদ্ধার্থ ছিল “বেপরোয়া” ও বিদ্রোহী প্রকৃতির। সে মহেন্দ্র মাস্টারের মতো কড়া শিক্ষকের “কর্কশ কঠোর বাক্যবাণ” বা চোখের শাসানিকে ভয় পেত না; বরং চোখে চোখ রেখে তার প্রত্যুত্তর দিতে পারত। এটা ছিল তার কাছে পরিচিত এক সংঘাত।
কিন্তু নির্মল তার বন্ধু। সে যখন “কোমলতা” মিশিয়ে তার কাছে জানতে চায়, “তোর কি হয়েছে আমাকে বলবি?”, তখন সিদ্ধার্থ নিরুপায় হয়ে পড়ে। নির্মলের প্রশ্নে কোনো শাসন ছিল না, ছিল কেবল আন্তরিক উদ্বেগ ও ভালোবাসা। সিদ্ধার্থ, যে নিজে স্নেহ-বঞ্চিত, সে এই আন্তরিকতার সামনে তার বিদ্রোহের বর্ম ধরে রাখতে পারেনি। নির্মলের মতো বন্ধুর কাছে সে মিথ্যা বলতে পারছিল না, আবার সত্যিটাও স্বীকার করতে পারছিল না। এই দ্বিধাই তার মধ্যে “অস্বস্তিকর মৌনতা” তৈরি করে, এবং সে কেবল ছটফট করতে থাকে।
ঙ। ‘হাসা যায় না, খেলা যায় না, ঘুমোনো যায় না, এতটাই তীব্র সেই শূন্যতার ভার- দুঃখের দহন-‘ কথাগুলি কার সম্পর্কে এবং কেন বলা হয়েছে বুঝিয়ে বলো।
উত্তর: এই কথাগুলি সিদ্ধার্থ সম্পর্কে বলা হয়েছে।
এটি বলার কারণ হলো তার জীবনের অসহনীয় একাকীত্ব ও যন্ত্রণা। মা-বাবার বিচ্ছেদের পর বাবা যখন তার সাথে দেখা করতে আসতেন এবং চকোলেট দিতেন, তখন সেই চকোলেটের স্বাদের চেয়েও সিদ্ধার্থের বুকে “অসহনীয় শূন্যতা” ও “দুঃখের দহন” অনেক বেশি তীব্র হয়ে উঠত। তার পেন্সিল বাক্স চকোলেটের কাগজে ভরে ওঠার চেয়েও দ্রুত তার বুক শূন্যতার ভারে ভরে উঠছিল।
এই শূন্যতা আসলে ছিল তার স্নেহহীন, ভাঙা সংসারের যন্ত্রণা। সে স্বাভাবিক শৈশবের আনন্দ—হাসি, খেলা, বা নিশ্চিন্ত ঘুম—সবকিছু হারিয়ে ফেলেছিল। এই তীব্র মানসিক কষ্টই তাকে পরবর্তীকালে ভুল পথে চালিত করেছিল।
চ। সিদ্ধার্থ কীসের তাড়নায় মায়ের সোনার বালা চুরি করেছিল? এবং পরে কেন তার অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছিল বুঝিয়ে বলো।
উত্তর: সিদ্ধার্থ ড্রাগস আসক্ত হয়ে পড়েছিল এবং সেই নেশার জিনিস কেনার জন্য দোকানদার তার কাছে টাকা চায়। এই নেশার টাকার “তাড়নায়” সে একদিন মায়ের বাথরুমে যাওয়ার সুযোগে তার “সোনার বালা চুরি করে নিয়েছিল”।
পরে তার “অন্তর্দ্বন্দ্ব” সৃষ্টি হয়েছিল কারণ, ওই চুরির দায়ে পুলিশ এসে তাদের বাড়ির নিরপরাধ “কাজের মেয়েকে” ধরে নিয়ে গিয়ে লক আপে ভরে দেয়। এই ঘটনায় সিদ্ধার্থের বিবেক জেগে ওঠে। একদিকে “ভাল-মন্দ, ভুল-শুদ্ধ, কাজের মেয়েটির করুণ মুখ” আর অন্যদিকে “নেশার প্রতি তীব্র আসক্তি”—এই দুইয়ের টানাপোড়েনে সে এক নির্ঘুম রাত কাটায়। এই অপরাধবোধ ও আসক্তির দ্বন্দ্বেই তার মনে হয়েছিল যেন তার “ভেতরকার মানুষটার মৃত্যু হয়েছে”।
ছ। ‘আসলে মন চাইলেই সুখী হওয়া যায় জানিস।’- নির্মল কোন প্রসঙ্গে সিদ্ধার্থকে এই কথাগুলো বলেছিল?
উত্তর: সিদ্ধার্থ যখন নদীর ধারে বসে নির্মলের কাছে তার সমস্ত দুঃখের কথা বলে আক্ষেপ করে বলেছিল যে “জীবনটাই আমাকে প্ররোচিত করলে?”, সেই প্রসঙ্গেই নির্মল তাকে এই কথাগুলো বলেছিল।
সিদ্ধার্থের নিঃসঙ্গতা ও হতাশা কাটানোর জন্য নির্মল তাকে বোঝাতে চেয়েছিল যে সুখী হওয়ার জন্য শুধু মানুষের ভালবাসার ওপর নির্ভর করার দরকার নেই। সে বলে, মানুষ “প্রকৃতির জগৎ”-কে (নদী, পাহাড়, আকাশ, চাঁদ, তারা) ভালোবাসতে পারে, “গানের জগৎ” বা “বইয়ের জগৎ”-এর মধ্যে আশ্রয় খুঁজতে পারে। নির্মলের মতে, এইসব সৌন্দর্যকে যারা ভালোবাসতে পারে, তারা কখনো “নিঃস্ব” হয় না। এভাবেই সে সিদ্ধার্থকে বোঝাতে চেয়েছিল যে সুখ বাইরের পরিস্থিতিতে নয়, বরং নিজের মনের ভেতরের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।
জ। লড়াই গল্পটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তর: “লড়াই” গল্পটির নামকরণ সর্বাংশে সার্থক ও তাৎপর্যপূর্ণ। গল্পটি আবর্তিত হয়েছে একাধিক স্তরের ‘লড়াই’-কে কেন্দ্র করে:
    সিদ্ধার্থের লড়াই: গল্পের প্রধান চরিত্র সিদ্ধার্থ প্রথমে তার ভাঙা সংসারের হতাশা ও নিঃসঙ্গতার সাথে লড়াই করে। পরে সে ড্রাগসের মারাত্মক আসক্তির বিরুদ্ধে এক কঠিন লড়াই শুরু করে। পাঠবোধ অংশে বলা হয়েছে, “নেশাসক্তি থেকে মুক্তি একটা যুদ্ধের মতো” এবং এটা “নিজের বিরুদ্ধে লড়াই”।
    নির্মলের লড়াই: সিদ্ধার্থের বন্ধু নির্মলও এক নীরব লড়াই লড়ে চলেছে। সে নিজের “শরীরে জটিল একটা রোগ” নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করছে।
  বন্ধুকে বাঁচানোর লড়াই: নির্মল তার বন্ধু সিদ্ধার্থকে অন্ধকারের পথ থেকে ফেরাতেও একটি লড়াই করে। সে সিদ্ধার্থের বিশ্বাস অর্জনের জন্য লড়াই করে, এমনকি পান দোকানে গিয়ে শারীরিক আক্রমণেরও শিকার হয়।
   জীবনের লড়াই: সবশেষে, গল্পটি এই দর্শনে পৌঁছায় যে, “সকল মানুষের জীবনই যেন এক-একটা লড়াই। যুদ্ধ।” নির্মল বলে, হারজিত যাই হোক, “লড়াই চালিয়ে যেতে হবে”।
সুতরাং, সিদ্ধার্থের নেশামুক্তির সংগ্রাম এবং নির্মলের রোগের বিরুদ্ধে সংগ্রাম—এই দুই সমান্তরাল ‘লড়াই’-এর মাধ্যমে জীবনের বৃহত্তর সংগ্রামকেই গল্পকার তুলে ধরেছেন। তাই “লড়াই” নামটি যথার্থ।

৪। বাক্য রচনা করো
* সব শেয়ালের এক রা: (একই মত পোষণ করা) – ক্লাসের সব দুষ্টু ছেলেরা ধরা পড়ে ‘সব শেয়ালের এক রা’-এর মতো একে অপরের ওপর দোষ চাপাতে লাগল।
* ল্যাজে-গোবরে: (ভীষণ অপ্রস্তুত বা বাজে অবস্থা) – পরীক্ষার প্রস্তুতি না নেওয়ায়, প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে সিদ্ধার্থ একেবারে ল্যাজে-গোবরে হয়ে গেল।

৫। শব্দদ্বৈত ও ধ্বন্যাত্মক শব্দগুলো … বাক্য রচনা করো
* গালিগালাজ: সিদ্ধার্থের মা-বাবার মধ্যে রোজকার গালিগালাজ তার মনকে বিষিয়ে তুলেছিল।
* খোলামেলা: নির্মলের সাথে খোলামেলা কথা বলার পরই সিদ্ধার্থের মনের ভার হালকা হলো।
* ডাক্তার-বদ্যি: নির্মলের জটিল রোগের জন্য ভালো ডাক্তার-বদ্যি দেখানো খুবই জরুরি।
* অসুখ-বিসুখ: সিদ্ধার্থ ‘শরীর ভালো নেই’ বলে অসুখ-বিসুখের অজুহাতে স্কুল কামাই করছিল।
* জল-ঝড়: জল-ঝড়ের রাতে একা ঘরে থাকতে সিদ্ধার্থের খুব ভয় করত।
* পাল-পরব: বাবা-মা আলাদা হয়ে যাওয়ার পর সিদ্ধার্থের জীবন থেকে সব পাল-পরবের আনন্দ মুছে গিয়েছিল।
* কাচু-মাচু: মহেন্দ্র মাস্টারের ধমক খেয়ে প্রশান্ত কাচু-মাচু মুখে দাঁড়িয়ে রইল।
* আল্লা-রসুলের: পান দোকানি আল্লা-রসুলের দোহাই দিয়েও নির্মলকে বিশ্বাস করাতে পারল না যে সে ভালো লোক।
* ছুটোছুটি: নির্মলকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সিদ্ধার্থ ছুটোছুটি করে তার কাছে এল।
* চেঁচামেচি: সিদ্ধার্থের মা-বাবার প্রচণ্ড চেঁচামেচি বাড়িতে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি করত।
* সায়ের-সুবো: পান দোকানদারের সায়ের-সুবো বাইকের ওপর বসে নির্মলের দিকে নজর রাখছিল।
* ছুড়ি-কাঁটা: আজকাল অনেকেই ভাতের বদলে ছুড়ি-কাঁটা দিয়ে অন্য খাবার খেতে অভ্যস্ত।
* কথাবার্তা: নির্মল আর সিদ্ধার্থ নদীর ধারে বসে অনেকক্ষণ ধরে কথাবার্তা বলল।
* ছিমছام: নির্মল ছেলেটি খুব ছিমছাম ও গোছানো স্বভাবের।
* ভোজভাত: বন্ধুর জন্মদিনের ভোজভাত খেতে গিয়ে সিদ্ধার্থের বাড়ি ফিরতে রাত হলো।
* হাতাহাতি: পান দোকানের ছেলে দুটির সাথে নির্মলের প্রায় হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
* দ্বন্দ্বরণে: নেশার আসক্তি আর কাজের মেয়ের করুণ মুখের কথা ভেবে সিদ্ধার্থের মনে এক দ্বন্দ্বরণে চলছিল।
* লেখাজোখা: সিদ্ধার্থ কতদিন স্কুল কামাই করেছে, তার কোনো লেখাজোখা ছিল না।
* দড়াদড়ি: পুলিশ এসে চোর সন্দেহে কাজের মেয়েটিকে দড়াদড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে গেল।
* ভোঁ-ভোঁ: অন্ধকার ঘরটায় একটা জোনাকি ভোঁ-ভোঁ করে উড়ে বেড়াচ্ছিল।
* ঠুংঠাং: রান্নাঘরে বাসনপত্রের ঠুংঠাং শব্দ শুনে সিদ্ধার্থ বুঝল মা বাড়ি ফিরেছে।
* গুঁতাগুঁতি: চলন্ত সিটিবাসে ওঠার জন্য লোকেরা একে অপরকে গুঁতাগুঁতি করছিল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *