পাঠ্যবইয়ের ভিতরের এবং অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর
ভূগোল বিজ্ঞান অধ্যয়নে প্রযুক্তির প্রয়োগ: ক্রিয়াকলাপ ও অনুশীলনী (পৃষ্ঠা ৬৬ – ৬৯)
পৃষ্ঠা ৬৭ (উত্তর লেখো)
প্রশ্ন ১. স্কেল বা মাপক কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তর ১. স্কেল বা মাপক তিন প্রকারের। সেগুলো হল—
১. ভাষা বা উক্তির স্কেল (Scale of statement)
২. নিরূপক ভগ্নাংশের স্কেল (Represetative Fraction)
৩. রৈখিক স্কেল (Graphical scale)
প্রশ্ন ২. কোন ধরনের স্কেল সব দেশের মানুষ সহজে ব্যবহার করতে পারে?
উত্তর ২. নিরূপক ভগ্নাংশের স্কেল সব দেশের মানুষ সহজে ব্যবহার করতে পারে। কারণ এই স্কেল একক না থাকা অনুপাতে বা ভগ্নাংশে প্রকাশ করা হয়—তাই পৃথিবীর যেকোনো স্থানে যেকোনো এককে এটিকে ব্যবহার করা যায়।
পৃষ্ঠা ৬৮ (ক্রিয়াকলাপ)
প্রশ্ন ১. দূর সংবেদন, ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা এবং গোলকীয় স্থান নির্নয়ন ব্যবস্থার দ্বারা কি কি নির্ণয় করা দলগতভাবে আলোচনা করে লেখো।
উত্তর ১. দূর সংবেদন, ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা (GIS) এবং গোলকীয় স্থান নির্নয়ন ব্যবস্থা (GPS) দ্বারা যেসব বিষয় নির্ণয় করা যায়:
* দূর সংবেদন (Remote Sensing):
* কোনো একটি বস্তুকে স্পর্শ না করে দূর থেকে তার নিরীক্ষণ বা পরিমাপ করে প্রয়োজনীয় তথ্য আহরণ করা যায়।
* কৃত্রিম উপগ্রহে স্থাপিত সংবেদকের (Sensors) সাহায্যে ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন অবয়বের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
* ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা (GIS):
* ভূ-পৃষ্ঠের প্রাকৃতিক এবং মানব পরিবেশ সম্পর্কীয় বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ—পরীক্ষণ—বিশ্লেষণ—এবং মানচিত্রের মাধ্যমে প্রদর্শন করা যায়।
* কম্পিউটার ব্যবহার করে বিশাল তথ্যরাজি সহজে বিশ্লেষণ করা যায়।
* গোলকীয় স্থান নির্ণয়ণ ব্যবস্থা (GPS):
* ভূ-পৃষ্ঠে কোনো স্থানের অবস্থান সম্বন্ধীয় তথ্য—যেমন দ্রাঘিমাংশ—অক্ষাংশ—উচ্চতা ইত্যাদি নির্ণয় করা যায়।
* মহাসাগরের বুকে জাহাজ চালানো বা জরিপ কার্যের মতো কাজে কোনো স্থানের সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা যায়।
অনুশীলনী (পৃষ্ঠা ৬৯)
১। সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও-
প্রশ্ন ১. (ক) স্কেল বা মাপক বলতে কী বোঝ?
উত্তর ১. (ক) মানচিত্রে দুটো স্থানের মধ্যের দূরত্ব এবং ভূ-পৃষ্ঠে সেই একই দুটো স্থানের মধ্যের প্রকৃত দূরত্বের অনুপাতকে স্কেল বা মাপক বলে। স্কেল মানচিত্র অঙ্কনের জন্য অপরিহার্য।
প্রশ্ন ২. (খ) ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ?
উত্তর ২. (খ) ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা হল একটি অতি উত্তম নির্ভরযোগ্য কম্পিউটার ভিত্তিক ব্যবস্থা যা ভূ-পৃষ্ঠের প্রাকৃতিক ও মানব পরিবেশ সম্পর্কীয় বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন এবং বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই ব্যবস্থা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য সংগ্রহ, পরীক্ষণ, বিশ্লেষণ ও প্রদর্শন কার্য সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে।
২। শুদ্ধ উত্তরে চিহ্ন দাও-
প্রশ্ন ১. (ক) দ্রাঘিমাংশ এবং অক্ষাংশের ভিত্তিতে প্রথম মানচিত্র অঙ্কন করেছিলেন-
উত্তর ১. (ক) (২) টলেমি
প্রশ্ন ২. (খ) ১/১০,০০০ এভাবে প্রকাশ করা স্কেলই হল-
উত্তর ২. (খ) (১) নিরূপক ভগ্নাংশ
প্রশ্ন ৩. (গ) সবচেয়ে প্রাচীন মানচিত্র উদ্ধার হয়েছে-
উত্তর ৩. (গ) (২) মেসোপটেমিয়াতে (ইরাক)
৩। বিস্তৃতভাবে লেখো-
প্রশ্ন ১. মানচিত্র অঙ্কনের ক্রমবিকাশের সম্বন্ধে একটি টীকা লেখো।
উত্তর ১. মানচিত্র অঙ্কনের ক্রমবিকাশ একটি দীর্ঘ সময়ের প্রক্রিয়া, যা সভ্যতার শুরু থেকেই চলে আসছে।
* প্রাচীন যুগ: সবচেয়ে প্রাচীন মানচিত্র মেসোপটেমিয়াতে (ইরাক) টেরাকোটা ফলকে অঙ্কিত হয়েছিল। মিশরেরা নীল নদীর বন্যাক্রান্ত অঞ্চলের মানচিত্র অঙ্কন করত। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে চীন দেশে স্কেলের ধারণা সহ মানচিত্র অঙ্কন করার প্রমাণ পাওয়া যায়।
* শাস্ত্রীয় অবদান: প্রাচীন পণ্ডিতদের মধ্যে টলেমি (খ্রিস্টপূর্ব ৯০-১৬৮) মানচিত্র অঙ্কনের ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা দেখিয়েছিলেন এবং দ্রাঘিমাংশ ও অক্ষাংশের সাহায্যে নানা স্থানের অবস্থান নির্ণয় করার চেষ্টা করেছিলেন।
* আবিষ্কারের যুগ: কলম্বাস, ভাস্কো-ডা-গামা প্রমুখ অভিযাত্রীরা বিভিন্ন স্থান আবিষ্কার করে পৃথিবী সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি করেন।
* আধুনিক যুগ ও প্রযুক্তি: ইউরোপে মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কার মানচিত্র প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। শিল্প বিপ্লবের পর সম্পদের বিতরণ, ব্যবহার ইত্যাদি দেখিয়ে বিষয়ভিত্তিক মানচিত্র (Thematic Maps) তৈরি হতে শুরু করে। ভারতে ইংরেজরা বিজ্ঞানসম্মত কৌশলের সূচনা করে—১৭৬৭ সনে সার্ভে অব ইন্ডিয়া নামের প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেছিল।
* সাম্প্রতিক প্রযুক্তি: বর্তমানে দূরসংবেদন প্রযুক্তি এবং কম্পিউটার ব্যবহার করে অতি নিখুঁত মানচিত্র তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
৪। ভূগোল অধ্যয়নে কী কী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় লেখো।
উত্তর ৪. বর্তমানে ভূগোল অধ্যয়নের ক্ষেত্রে স্থানিক তথ্য প্রযুক্তিকে প্রধানত ব্যবহার করা হয়। এর তিনটি পদ্ধতি হল:
* ১. দূর সংবেদন (Remote Sensing): এই কৌশলে কোনো বস্তুকে স্পর্শ না করে দূর থেকে নিরীক্ষণ বা পরিমাপ করে প্রয়োজনীয় তথ্য আহরণ করা হয়।
* ২. ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা (Geographical Information System – GIS): এটি কম্পিউটার ভিত্তিক এক উত্তম ব্যবস্থা। এর সাহায্যে ভূ-পৃষ্ঠের প্রাকৃতিক ও মানব পরিবেশের তথ্য সংগ্রহ, পরীক্ষণ, বিশ্লেষণ ও প্রদর্শন করা যায়।
* ৩. গোলকীয় স্থান নির্ণয়ণ ব্যবস্থা (Global Positioning System – GPS): এর সাহায্যে ভূ-পৃষ্ঠের স্থানের অবস্থান সম্বন্ধীয় তথ্য—যেমন দ্রাঘিমাংশ, অক্ষাংশ, উচ্চতা ইত্যাদি নির্ণয় করা হয়। মহাকাশে স্থাপিত কৃত্রিম উপগ্রহের সংকেতের মাধ্যমে এই কাজটি সম্পন্ন হয়।
*
