ভারতীয় সংস্কৃতির ভিত্তি, Chapter -10, Class -6, SEBA, New Book
ভারতীয় সংস্কৃতির ভিত্তি, Chapter -10, Class -6, SEBA, New Book
অনুশীলনী – ১ (পৃষ্ঠা ৮৫)
১। নিম্নলিখিত প্রশ্নের উত্তর দাও-
* (ক) ‘বেদ’ মানে কী?
Ans. সংস্কৃত ভাষায় ‘বেদ’ মানে হল ‘জ্ঞান’।
* (খ) গ্রাম কী?
Ans. ‘গ্রাম’ হল কয়েকটি ‘কুল’ বা পরিবারের সমষ্টি।
* (গ) বৈদিক যুগের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন নারীর নাম লেখো।
Ans. বৈদিক যুগের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন নারী হলেন- বিশ্ববারা, লোপামুদ্রা, ঘোষা, অপলা।
২। বৈদিক যুগের সমাজ ব্যবস্থার উপর একটি টীকা লেখো।
Ans. বৈদিক যুগের সমাজ পিতৃপ্রধান ছিল। সমাজের সবচেয়ে ছোট একক ছিল পরিবার (‘কুল’ বা ‘গৃহ’), যার প্রধানকে বলা হত গৃহপতি। কয়েকটি পরিবার মিলে গঠিত হত ‘গ্রাম’, যার প্রধান ছিলেন ‘গ্রামনী’। কয়েকটি গ্রাম মিলে তৈরি হত ‘বিশ’, যার প্রধান ছিলেন ‘বিশপতি’। আবার, কয়েকটি বিশ একত্রিত হয়ে গঠিত হত ‘জন’, যা ছিল সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক একক এবং এর প্রধানকে ‘রাজন’ বলা হত। রাজনকে তাঁর কাজে সৈন্য, পুরোহিত এবং ‘সভা’ ও ‘সমিতি’ নামে দুটি পরিষদ সাহায্য করত। যদিও সমাজ পুরুষ প্রধান ছিল, তবে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কাজকর্মে মহিলারাও সমানভাবে অংশগ্রহণ করতেন।
৩। বেদে উল্লিখিত মৌলিক ধারণাগুলো কী কী?
Ans. বেদে উল্লিখিত প্রধান মৌলিক ধারণাগুলি হল:
* ধর্ম: সৎ পথে থেকে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা।
* কর্ম: ভালো কাজের ফল ভালো হয় এবং খারাপ কাজের ফল খারাপ হয়।
* মোক্ষ: আধ্যাত্মিক চিন্তার মাধ্যমে জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি লাভ করা।
অনুশীলনী – ২ (পৃষ্ঠা ৮৬)
১। নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো-
* (ক) জড়বাদের প্রচারক কে ছিলেন?
Ans. জড়বাদের প্রচারক ছিলেন চার্বাক।
* (খ) লোকায়ত বলতে কী বোঝো?
Ans. জড়বাদ সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছিল বলে একে ‘লোকায়ত’ বলেও অভিহিত করা হয়।
* (গ) কে প্রথম জড়বাদের ধারণা প্রকাশ করেছিলেন?
Ans. অনুমান করা হয় যে, দার্শনিক বৃহস্পতি সর্বপ্রথম জড়বাদের ধারণা প্রকাশ করেছিলেন।
* (ঘ) জড়বাদ অনুসারে জগতের সব বস্তু কী কী উপাদানের সমষ্টি?
Ans. জড়বাদ অনুসারে জগতের সব বস্তু ভূমি, জল, আগুন ও বায়ু – এই মূল উপাদানগুলির সমষ্টি।
অনুশীলনী – ৩ (পৃষ্ঠা ৮৮)
১। নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও-
* (ক) মহাবীর কে ছিলেন?
Ans. মহাবীর ছিলেন জৈন মতবাদের প্রবর্তক ও প্রচারক এবং জৈন ধর্মের শেষ (২৪তম) তীর্থঙ্কর।
* (খ) জৈন ধর্মে মোট কতজন তীর্থঙ্কর আছেন? প্রথম তীর্থঙ্কর কে ছিলেন?
Ans. জৈন ধর্মে মোট ২৪ জন তীর্থঙ্কর আছেন বলে বিশ্বাস করা হয়। প্রথম তীর্থঙ্করের নাম ছিল ঋষভনাথ বা আদিনাথ।
* (গ) জৈন ধর্মের পাঁচটি নীতি কী কী?
Ans. জৈন ধর্মের পাঁচটি প্রধান নীতি হল – অহিংসা (কোনো জীবিত বস্তুর ক্ষতি না করা), সত্য (সবসময় সত্য কথা বলা), অস্তেয় (চুরি না করা), ত্যাগ (সম্পত্তি না রাখা), এবং ব্রহ্মচর্য (ব্রহ্মচারী জীবন যাপন করা)।
* (ঘ) প্রাচীন ভারতের কোন দুজন রাজা জৈন ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন?
Ans. প্রাচীন ভারতের বিখ্যাত রাজা বিম্বিসার এবং অজাতশত্রু জৈন ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
* (ঙ) জৈন ধর্মের অনুগামীদের কোন কোন দুটি ভাগে ভাগ করা যায়?
Ans. মহাবীরের মৃত্যুর পর তাঁর অনুগামীরা দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর নামে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল।
* (চ) মহাবীরের উপদেশসমূহ প্রাকৃত ভাষায় কী নামে সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে?
Ans. মহাবীরের উপদেশগুলো প্রাকৃত ভাষায় ‘অঙ্গ’ নামে সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে।
২। ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে নতুন চিন্তাধারার উন্মেষের কারণ কী ছিল?
Ans. সময়ের সাথে সাথে বৈদিক যুগের আচার-অনুষ্ঠান ও রীতি-নীতিতে পরিবর্তন আসে। নতুন বিশ্বাস ও কর্ম, যেমন উপনিষদে পুনর্জন্ম ও কর্মফলের ধারণা এবং বেদান্তে ‘ব্রহ্ম’ তত্ত্বের উদ্ভব হয়, যা বৈদিক চিন্তাধারাকে প্রসারিত করে। এই পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপট এবং সম্ভবত বৈদিক আচারের জটিলতা বা সামাজিক প্রভাব, জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের মতো নতুন আধ্যাত্মিক চিন্তাধারার উন্মেষের পথ তৈরি করেছিল।
৩। বর্ধমান মহাবীর কেন সন্ন্যাস জীবন যাপন করাকে সমর্থন করেছিলেন?
Ans. বর্ধমান মহাবীর রাজকুমার হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেও সংসারের মায়া-মোহের প্রতি তাঁর আসক্তি ছিল না। ৩০ বছর বয়সে তিনি বাড়ি ছেড়ে সন্ন্যাসীর জীবন শুরু করেন এবং দীর্ঘ ১২ বছর কঠোর তপস্যার পর ‘কৈবল্য’ বা আত্মজ্ঞান লাভ করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সংসারের সব মায়া-মোহ ত্যাগ করে এবং ত্রিরত্ন (সৎ কর্ম, সৎ জ্ঞান, সৎ ব্যবহার) অনুসরণ করে আত্মা পুনর্জন্মের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারে। এই কারণেই তিনি সন্ন্যাস জীবন যাপনকে সমর্থন করেছিলেন।
অনুশীলনী – ৪ (পৃষ্ঠা ৯০)
১। নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও-
* (ক) বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক কে ছিলেন?
Ans. বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক ছিলেন গৌতম বুদ্ধ।
* (খ) গৌতম বুদ্ধের পিতৃপ্রদত্ত নাম কী?
Ans. গৌতম বুদ্ধের পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিল সিদ্ধার্থ।
* (গ) গৌতম বুদ্ধ কোথায় তপস্যায় বসেছিলেন?
Ans. গৌতম বুদ্ধ বোধগয়া নামক স্থানে তপস্যায় বসেছিলেন।
* (ঘ) কোন গাছকে ‘বোধিদ্রুম’ বলা হয়?
Ans. যে অশ্বত্থ গাছের নীচে গৌতম বুদ্ধ দিব্যজ্ঞান লাভ করেছিলেন, সেই গাছটিকে ‘বোধিদ্রুম’ বলা হয়।
* (ঙ) বৌদ্ধ মতবাদের মূল চারটি মহান সত্য কী কী?
Ans. বৌদ্ধ মতবাদের মূল চারটি মহান সত্য হল: (ক) পৃথিবী দুঃখময়, (খ) মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা থেকেই দুঃখের উৎপত্তি হয়, (গ) আশা-আকাঙ্ক্ষা দমন করলে দুঃখ থেকে মুক্তি সম্ভব, এবং (ঘ) সেই মুক্তির জন্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ বা আটটি পথ অনুসরণ করা প্রয়োজন।
* (চ) বৌদ্ধধর্মের প্রধান গ্রন্থের নাম কী?
Ans. বৌদ্ধধর্মের প্রধান গ্রন্থের নাম ‘ত্রিপিটক’।
* (ছ) বৌদ্ধধর্মের গণশিক্ষার কেন্দ্র তিনটি কী কী ছিল?
Ans. বৌদ্ধধর্মের গণশিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠা তিনটি উল্লেখযোগ্য বিহার ছিল নালন্দা, বিক্রমশিলা, তক্ষশীলা।
২। বৌদ্ধ ধর্মের মূল মতবাদগুলো বর্ণনা করো।
Ans. বৌদ্ধ ধর্মের মূল ভিত্তি হল চারটি মহৎ সত্য এবং অষ্টাঙ্গিক মার্গ। চারটি মহৎ সত্য ব্যাখ্যা করে যে জীবন দুঃখময়, দুঃখের কারণ হল মানুষের কামনা-বাসনা বা আশা-আকাঙ্ক্ষা, এই কামনা ত্যাগ করলেই দুঃখ থেকে মুক্তি (নির্বাণ) সম্ভব, এবং এই মুক্তির পথ হল অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুসরণ করা। অষ্টাঙ্গিক মার্গ হল আটটি সঠিক পথ: সৎ চিন্তা, সৎ সিদ্ধান্ত, সৎ বাক্য, সৎ স্মৃতি, সৎ চেষ্টা, সৎ কর্ম, সৎ আচরণ, এবং সৎ ধ্যান। বুদ্ধদেব অহিংসা নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন এবং মুক্তি লাভের জন্য যাগ-যজ্ঞ বা বলি বিধানের প্রয়োজন নেই বলে মনে করতেন। তিনি জাতিভেদ প্রথারও বিরোধিতা করেছিলেন এবং সৎ পথে সহজ সরল জীবন যাপনের উপর জোর দিয়েছিলেন।
৩। ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে বৌদ্ধ ধর্মের অবদান সম্পর্কে লেখো।
Ans. ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে বৌদ্ধ ধর্মের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
* সাহিত্য: পালি ভাষায় রচিত ‘ত্রিপিটক’ এবং বুদ্ধের পূর্বজন্মের কাহিনি অবলম্বনে রচিত ‘জাতক কথা’ ভারতীয় সাহিত্যের অমূল্য ভান্ডার।
* স্থাপত্য ও ভাস্কর্য: সাঁচি, নালন্দা প্রভৃতি স্থানে নির্মিত বৌদ্ধ স্তূপ, উপাসনার জন্য নির্মিত চৈত্য এবং ভিক্ষুদের বাসস্থান ও শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত বিহার ভারতীয় স্থাপত্যকলার গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
* শিল্পকলা: গান্ধার শিল্পরীতি এবং অজন্তা-ইলোরার গুহাচিত্র বৌদ্ধ শিল্পের উৎকৃষ্ট উদাহরণ, যা ভারতের শৈল্পিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
* শিক্ষা: নালন্দা, বিক্রমশিলা, তক্ষশীলার মতো বৌদ্ধ বিহারগুলো প্রাচীন ভারতে গণশিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল।
অনুশীলনী – ৫ (পৃষ্ঠা ৯১)
১। নিম্নলিখিত প্রশ্নের উত্তর দাও-
* (ক) জনজাতি বলতে কী বোঝো?
Ans. ভারতবর্ষে বহিরাগত বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর আগমনের অনেক পূর্ব থেকেই যে সমস্ত জনগোষ্ঠী বসবাস করত এবং যারা বৈদিক সংস্কৃতির পাশাপাশি নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয়, বিশ্বাস ও পরম্পরা বজায় রেখেছিল, তাদের জনজাতি বলা হয়।
* (খ) কোন কোন উৎস থেকে জনজাতীয়দের অতীত সম্বন্ধে জানতে পারি?
Ans. যেহেতু জনজাতীয়দের অনেক পরম্পরা অলিখিত, তাই তাদের অতীত সম্বন্ধে জানার প্রধান উৎস হল তাদের মধ্যে মুখে মুখে প্রচলিত লোক পরম্পরা, যেমন – লোকাচার, লোককথা ইত্যাদি।
* (গ) কোন জনজাতি ডোনিপোলোর উপাসনা করে?
Ans. অরুণাচল প্রদেশের আদি জনজাতি এবং অসমের মিসিং জনগোষ্ঠী ‘ডোনিপোলো’-র উপাসনা করে।
* (ঘ) জনজাতীয় বিশ্বাসে প্রধানত কাকে ঈশ্বরের স্থান দেওয়া হয়?
Ans. অনেক জনজাতীয় বিশ্বাসে প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানকে (যেমন – পাহাড়, নদী, গাছ, জীব-জন্তু, পাথর) পবিত্র মনে করা হয় এবং দেবতা রূপে পূজা করা হয়। এছাড়াও, অনেক গোষ্ঠীর মধ্যে একজন পরম সত্তা বা সৃষ্টিকর্তার ধারণাও প্রচলিত আছে।
* (ঙ) মুণ্ডা ও সাঁওতাল আদিবাসীরা কাকে উপাসনা করেন?
Ans. মুণ্ডা ও সাঁওতাল আদিবাসীরা সমগ্র বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে সিংবোঙ্গাকে পূজা করেন।
২। ভারতের জনজাতীয় বিশ্বাসসমূহের বিষয়ে সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
Ans. ভারতের জনজাতীয় বিশ্বাসসমূহ অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং এগুলি মূলত মৌখিক পরম্পরায় টিকে আছে। এই বিশ্বাসগুলির একটি দিক হল প্রকৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও উপাসনা; পাহাড়, নদী, অরণ্য, জীবজন্তু প্রায়শই পবিত্র হিসেবে গণ্য হয় এবং দেবতা রূপে পূজিত হয়। মেঘালয়ের ‘মাউফ্লাং পবিত্র অরণ্য’ এর একটি উদাহরণ। অনেক জনজাতির মধ্যে একজন পরম সৃষ্টিকর্তার ধারণা বিদ্যমান, যেমন – আদি ও মিসিংদের ‘ডোনিপোলো’ বা মুণ্ডা-সাঁওতালদের ‘সিংবোঙ্গা’। স্থানীয় দেব-দেবীকে অনেক সময় বৃহত্তর হিন্দু দেব-দেবীর সঙ্গে সম্পর্কিত করা হয়, যেমন – তামিলদের মুরুগন বা অসমের বড়োদের বাথৌবোড়াই (শিব)। প্রাচীনকাল থেকেই বৈদিক হিন্দু ধর্ম এবং বিভিন্ন জনজাতীয় বিশ্বাসের মধ্যে পারস্পরিক আদান-প্রদান ও প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
