বিদ্যুৎ প্রবাহের রাসায়নিক ফলাফল,Chapter -14, Science, Class-8 ,SEBA
বিদ্যুৎ প্রবাহের রাসায়নিক ফলাফল,Chapter -14, Science, Class-8 ,SEBA
অনুশীলনী (Exercises)
১) শূণ্যস্থান পূর্ণ করো:
(a) বেশির ভাগ তরল পদার্থ যেগুলোর মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ হয় সেগুলো- ____, ____ এবং ____ -এর দ্রব।
উত্তর: বেশির ভাগ তরল পদার্থ যেগুলোর মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ হয় সেগুলো- অম্ল (এসিড), ক্ষার এবং লবণের -এর দ্রব।
(b) কোন ও দ্রবে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রবাহ করা হয় তার ফলে- ____ ক্রিয়া হয়।
উত্তর: কোন ও দ্রবে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রবাহ করা হয় তার ফলে- রাসায়নিক ক্রিয়া হয়।
(c) কপার সালফেটের দ্রবে বিদ্যুৎ প্রবাহ করলে মেরুর সংগে সংযোগ করা পাতের উপর তামার অবক্ষেপন ব্যাটারির ____ প্রান্তে হবে।
উত্তর: কপার সালফেটের দ্রবে বিদ্যুৎ প্রবাহ করলে মেরুর সংগে সংযোগ করা পাতের উপর তামার অবক্ষেপন ব্যাটারির ঋণাত্মক প্রান্তে হবে।
(d) বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে যে পদ্ধতিতে একটি ধাতুতে অন্য ধাতুর আবরণ দওয়া হয় তাকে ____ বলে।
উত্তর: বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে যে পদ্ধতিতে একটি ধাতুতে অন্য ধাতুর আবরণ দওয়া হয় তাকে বৈদ্যুতিক প্রলেপন বলে।
২) যখন টেস্টারের মুক্ত দিকগুলো দ্রবে ডুবানো হয়, তখন চুম্বকের শলাকাটি নড়ে। কেন হয় বর্ণনা করো?
উত্তর: যখন টেস্টারের মুক্ত দিকগুলো একটি পরিবাহী দ্রবে ডোবানো হয়, তখন টেস্টারের বর্তনীটি সম্পূর্ণ হয় এবং তার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। আমরা জানি বিদ্যুৎ প্রবাহের একটি চুম্বকীয় ক্রিয়া (Magnetic effect) আছে। এই চুম্বকীয় ক্রিয়ার ফলেই চুম্বক শলাকাটি (কম্পাসের কাঁটা) নড়ে ওঠে বা বিক্ষেপ দেখায়।
৩) তিনটি তরল পদার্থের নাম বলো যখন সেগুলোকে চিত্র 14.9 এর মতো পরীক্ষা করা হয় তখন, সেগুলো চুম্বকের শলাকাটি নাড়াতে পারবে।
উত্তর: তিনটি তরল পদার্থ যা চুম্বকের শলাকাটি নাড়াতে পারবে (অর্থাৎ বিদ্যুৎ পরিবাহী) হলো:
* লেবুর রস
* ভিনেগার
* কলের জল (বা সাধারণ লবণের দ্রব)
৪) 14.10 চিত্রে দেখানো অবস্থায় বাল্বটি জ্বললো না। সম্ভবপর কারণগুলো লিখো। তোমার উত্তর ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: চিত্র 14.10-এ বাল্বটি না জ্বলার বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে:
* তরলটি কু-পরিবাহী: পাত্রের মধ্যে থাকা তরল পদার্থটি বিদ্যুতের কু-পরিবাহী (Poor conductor) হতে পারে (যেমন পাতিত জল), যার ফলে বর্তনীটি অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে এবং বাল্বটি জ্বলছে না।
* দুর্বল বিদ্যুৎ প্রবাহ: তরলটি পরিবাহী হলেও উৎপন্ন বিদ্যুৎ প্রবাহ খুব দুর্বল (Weak current) হতে পারে। এই দুর্বল প্রবাহ বাল্বের ফিলামেন্টকে উত্তপ্ত করে জ্বালানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
* বর্তনীতে ত্রুটি: টেস্টারের সংযোগ শিথিল (Loose connection) হতে পারে।
* নষ্ট সরঞ্জাম: বাল্বটি নষ্ট (Fused) অথবা ব্যাটারিগুলো শেষ (Used up) হয়ে যেতে পারে।
৫) দুটো তরল পদার্থ বিদ্যুৎ প্রবাহ পরীক্ষা করার জন্য একটি টেস্টার ব্যবহার করা হয়েছে। ‘A’ তে বাল্বটি খুব উজ্বল হয়ে জ্বলেছে কিন্তু ‘B’ বাল্বটি স্বল্পালোকিত হয়েছে। এটার কারণ…
(a) ‘B’ তরল পদার্থ থেকে ‘A’ তরল পদার্থ বিদ্যুৎ এর সুপরিবাহী।
(b) ‘A’ তরল পদার্থ থেকে ‘B’ তরল পদার্থ বিদ্যুৎ এর সুপরিবাহী।
(c) দুটো তরল পদার্থই সমানে বিদ্যুৎ প্রবাহ করে।
(d) তরল পদার্থের বিদ্যুৎ প্রবাহের গুণকে এভাবে তুলনা করা যায় না।
উত্তর: (a) ‘B’ তরল পদার্থ থেকে ‘A’ তরল পদার্থ বিদ্যুৎ এর সুপরিবাহী।
(ব্যাখ্যা: বাল্ব উজ্জ্বল হয়ে জ্বলার অর্থ হলো বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে। যেহেতু তরল ‘A’-তে বাল্বটি বেশি উজ্জ্বল, তাই এটি তরল ‘B’-এর চেয়ে ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী।)
৬) বিশুদ্ধ জল কি বিদ্যুৎ প্রবাহ করতে পারে? যদি না, আমরা কি করলে বিশুদ্ধ জলকে বিদ্যুৎ এর সুপরিবাহী বানাতে পারব?
উত্তর: না, বিশুদ্ধ জল (পাতিত জল) বিদ্যুৎ প্রবাহ করতে পারে না, কারণ এতে কোনো দ্রবীভূত লবণ থাকে না, তাই এটি বিদ্যুতের কু-পরিবাহী।
বিশুদ্ধ জলকে বিদ্যুৎ এর সুপরিবাহী বানানোর জন্য এতে নিম্নলিখিত পদার্থ মেশানো যেতে পারে:
* এক চিমটি সাধারণ লবণ
* কয়েক ফোঁটা লেবুর রস বা অন্য কোনো এসিড
* কয়েক ফোঁটা ক্ষার, যেমন কস্টিক সোডা
৭) যখন কোথাও আগুন লাগে, অগ্নিনির্বাপক বাহিনী জল ব্যবহার করার আগে ঐ এলাকার বিদ্যুৎ যোগান বন্ধ করে দেয়। কেন এরকম করা হয় বর্ণনা করো।
উত্তর: আগুন নেভানোর জন্য যে জল (যেমন কল, পাম্প বা পুকুরের জল) ব্যবহার করা হয়, তা বিশুদ্ধ নয়। এই জলে প্রাকৃতিক ভাবেই খনিজ লবণ দ্রবীভূত থাকে। লবণ মিশ্রিত এই জল বিদ্যুতের সুপরিবাহী। যদি বিদ্যুৎ সংযোগ চালু থাকা অবস্থায় জলের ধারা কোনো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বা তারের সংস্পর্শে আসে, তবে বিদ্যুৎ সেই জলের ধারার মাধ্যমে প্রবাহিত হতে পারে। এর ফলে অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের বা আশেপাশে থাকা ব্যক্তিদের মারাত্মক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই বিপদ এড়ানোর জন্যই আগুন নেভানোর কাজ শুরু করার আগে এলাকার বিদ্যুৎ যোগান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
৮) সমুদ্রতীরে বাস করা একটি ছেলে টেস্টার দিয়ে তার পানীয় জল ও সমুদ্রের জল পরীক্ষা করল। সে দেখল সমুদ্রের জলের ক্ষেত্রে কম্পাসের কাটা বেশি নড়ল। তার কারণ বর্ণনা করতে পারবে কি?
উত্তর: পানীয় জলে (যেমন কলের জল) কিছু পরিমাণে খনিজ লবণ দ্রবীভূত থাকে, যার জন্য এটি বিদ্যুৎ পরিবহন করে। কিন্তু সমুদ্রের জলে দ্রবীভূত লবণের পরিমাণ পানীয় জলের তুলনায় অনেক অনেক বেশি থাকে।
যেহেতু দ্রবীভূত লবণ জলকে বিদ্যুতের সুপরিবাহী করে তোলে, তাই বেশি লবণযুক্ত সমুদ্রের জল পানীয় জলের চেয়ে অনেক ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী। ভালো পরিবাহী হওয়ায় সমুদ্রের জলের মধ্য দিয়ে বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, যা একটি শক্তিশালী চুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে। একারণেই সমুদ্রের জলের ক্ষেত্রে কম্পাসের কাঁটাটি বেশি নড়ে।
৯) অধিক বৃষ্টিপাতের সময় একজন বিদ্যুৎকর্মী বিদ্যুতের কিছু সামগ্রী ঠিক করার জন্য যদি ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করে সেটা কি নিরাপদ হবে? বর্ণনা করে।
উত্তর: না, এটি মোটেই নিরাপদ হবে না। অধিক বৃষ্টিপাতের সময় চারপাশ, যেমন মাটি, বৈদ্যুতিক খুঁটি ইত্যাদি সম্পূর্ণ ভিজে যায়। ভেজা হাতে বা ভেজা মেঝেতে দাঁড়িয়ে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম স্পর্শ করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। বৃষ্টির জল (যা বায়ুর অম্ল বা অন্যান্য পদার্থের সাথে মিশে পরিবাহী হতে পারে) এবং ভেজা মাটি বিদ্যুতের সুপরিবাহী হিসেবে কাজ করে। এই অবস্থায় বিদ্যুতের সামগ্রী ঠিক করার সময় বিদ্যুৎকর্মীর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার মারাত্মক বিপদ থাকে।
১০) প্রহেলিকা শুনেছে যে বৃষ্টির জল, পাতিত জলের মতোই ভাল। তাই ও কিছু পরিমাণ বৃষ্টির জল জমিয়ে টেস্টার দিয়ে সেই জল পরীক্ষা করল। সে দেখল কম্পাসের কাটা নড়ছে। কেন এরকম হল?
উত্তর: যদিও বৃষ্টির জল পাতিত জলের মতো বিশুদ্ধ হওয়ার কথা, কিন্তু এটি যখন বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে পড়ে, তখন বায়ুতে ভাসমান বিভিন্ন দূষিত পদার্থ, যেমন অম্ল (Acid) বা অন্যান্য লবণের কণা, এর সাথে মিশে যায়। এই দ্রবীভূত অম্ল বা লবণ বৃষ্টির জলকে বিদ্যুতের পরিবাহী করে তোলে। এই কারণেই টেস্টার দিয়ে পরীক্ষা করায় কম্পাসের কাঁটা নড়ে উঠেছে, যা প্রমাণ করে যে জলটি বিদ্যুৎ পরিবহন করছে।
১১) তোমার চারপাশে থাকা বৈদ্যুতিক প্রলেপ দেওয়া আছে এমন কিছু বস্তুর তালিকা প্রস্তুত করো।
উত্তর: আমাদের চারপাশে থাকা বৈদ্যুতিক প্রলেপ দেওয়া বস্তুগুলোর তালিকা হলো:
* সাইকেলের হাতল ও চাকার বেড় (ক্রোমিয়ামের প্রলেপ)
* গাড়ির বিভিন্ন অংশ (যেমন বাম্পার)
* রান্নাঘরের গ্যাসের চুলা
* বাথরুমের জলের কল
* মহিলাদের কম দামী অলংকার (সোনা বা রূপার প্রলেপ দেওয়া)
* খাদ্যবস্তু সংরক্ষণের টিনের কৌটো (লোহার উপর টিনের প্রলেপ)
* সেতু বা মোটরগাড়িতে ব্যবহৃত লোহা (মরিচা রোধ করতে জিঙ্কের প্রলেপ)
১২) ক্রিয়াকলাপ 14.7 যে পদ্ধতি ব্যবহার দেখেছে ঐ পদ্ধতিতেই তামা শুদ্ধ করা হয়। বিশুদ্ধ তামার পাতলা পাত ও অশুদ্ধ তামার ভারী দণ্ড তড়িৎদ্বার হিসেবে ব্যবহার হয়। অশুদ্ধ তামার দণ্ড থেকে বিশুদ্ধ তামা পাতলা তামার পাতে নিয়ে আসতে হবে। ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্তে কোন তড়িৎদ্বার যুক্ত করতে হবে এবং কেন?
উত্তর: ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্তে অশুদ্ধ তামার ভারী দণ্ডটি যুক্ত করতে হবে।
কারণ: বিদ্যুৎ প্রলেপন প্রক্রিয়ায়, যখন কপার সালফেট দ্রবণের মতো পরিবাহী দ্রবের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ চালনা করা হয়, তখন দ্রবণ থেকে মুক্ত তামা ব্যাটারির ঋণাত্মক মেরুর সাথে যুক্ত তড়িৎদ্বারের দিকে আকর্ষিত হয় এবং তার উপর জমা হয় (অধঃক্ষিপ্ত হয়)। একই সময়ে, ধনাত্মক প্রান্তের সাথে যুক্ত তড়িৎদ্বার (এই ক্ষেত্রে অশুদ্ধ তামার দণ্ড) থেকে সমপরিমাণ তামা ক্ষয় হয়ে দ্রবণে মিশে যায়।
তাই, তামা শুদ্ধিকরণের জন্য, অশুদ্ধ দণ্ডটিকে ধনাত্মক প্রান্তে রাখলে তা থেকে বিশুদ্ধ তামা দ্রবণে আসবে এবং সেই তামা ঋণাত্মক প্রান্তে থাকা বিশুদ্ধ পাতের উপর জমা হবে।
