—
পাঠ-৬: পুত্রভিক্ষা
কবি: মানকুমারী বসু
—
ক – পাঠভিত্তিক
৩। উত্তর দাও।
(ক) ‘পুত্রভিক্ষা’ কবিতায় ‘রাজরানি’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
Ans— ‘পুত্রভিক্ষা’ কবিতায় রাজরানি বলতে দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর মহিষী কয়াধুকে বোঝানো হয়েছে। তবে কয়াধু নিজেকে ‘রাজরানি’ বলতে চাননি, বরং নিজেকে “বিধাতার বিড়ম্বনা জগতের কাঙ্গালিনী” বলেছেন।
(খ) প্রহ্লাদের পিতামাতার নাম উল্লেখ করো।
Ans— প্রহ্লাদের পিতার নাম হিরণ্যকশিপু (দৈত্যরাজ) এবং মাতার নাম কয়াধু (মহিষী)।
(গ) ‘সে যে আঁচলের নিধি’— কে কাকে ‘আঁচলের নিধি’ বলেছেন?
Ans— প্রহ্লাদের মাতা কয়াধু তাঁর পুত্র প্রহ্লাদকে ‘আঁচলের নিধি’ বলেছেন।
(ঘ) “জানি তব রাজ-করে, ন্যায়-দণ্ড শোভা করে,”— ‘রাজ-করে’ শব্দটির অর্থ কি? এখানে রাজা কে?
Ans— ‘রাজ-করে’ শব্দের অর্থ হলো রাজার হাতে। এখানে রাজা হলেন দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপু।
(ঙ) ‘জনক পালক, তারে— কভু কি নাশিতে পারে’— এখানে কে কার জনক?
Ans— এখানে হিরণ্যকশিপু তাঁর পুত্র প্রহ্লাদের জনক (পিতা)।
—
৪। অর্থ ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
(ক)
“সে মোর প্রভাত-রবি, সায়াহ্ন চাঁদের ছবি;
সে যে মোর নবস্ফুট বসন্তের ফুল,
আ-মরি সে চন্দ্রানন, জীবন-জুড়ান ধন;
সে যে আঁচলের নিধি, জগতে অতুল!”
Ans— এই অংশে কয়াধু তাঁর পুত্র প্রহ্লাদের প্রতি গভীর বাৎসল্য প্রেম প্রকাশ করেছেন। তাঁর কাছে প্রহ্লাদ কেবল পুত্র নয়, সে যেন প্রভাতকালের সূর্য (আশার প্রতীক), সন্ধ্যার চাঁদের ছবি (শান্তি ও সৌন্দর্যের প্রতীক), এবং নতুন ফোটা বসন্তের ফুল (শুদ্ধতা ও আনন্দের প্রতীক)। তার চাঁদের মতো মুখখানি (চন্দ্রানন) হলো জীবন-জুড়ানো ধন এবং জগতের অতুলনীয় আঁচলের নিধি। এই উপমাগুলির মাধ্যমে কয়াধু বোঝাতে চেয়েছেন যে পুত্রের জীবন তাঁর কাছে কতটা মূল্যবান এবং তার প্রাণদণ্ড যেন রাজার নিজের জীবনের আলো নিভিয়ে দেওয়ার শামিল।
(গ)
“হিয়া তো অশনি নহে— নহে নহে তো নিষাদ।”
Ans— এখানে কয়াধু দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর কাছে করুণ মিনতি করছেন। ‘অশনি’ শব্দের অর্থ বজ্র বা বজ্রের মতো কঠোর কিছু; ‘নিষাদ’ বলতে বোঝানো হয়েছে নিষ্ঠুর শিকারীকে। কয়াধু রাজাকে বলছেন, তাঁর হৃদয় তো বজ্রের মতো নির্দয় বা পাথরের মতো কঠোর হতে পারে না, আর তিনি তো একজন নিষ্ঠুর শিকারীও নন। রাজা একজন পিতা, তাই তাঁর উচিত পুত্রের প্রতি স্নেহ অনুভব করা। এই কথা বলে কয়াধু রাজাকে তাঁর স্বাভাবিক মানবিক ও পিতৃ-স্নেহ জাগিয়ে তুলে পুত্রকে ক্ষমা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
—
৫। সংক্ষিপ্ত উত্তর লেখো।
ক। ‘ত্রিভুবনে জয় হোক তব মহিমায়’— কে, কার সম্বন্ধে, কোন ঘটনা প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছিলেন।
Ans— এই উক্তিটি কয়াধু তাঁর স্বামী দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর সম্বন্ধে করেছিলেন।
ঘটনা প্রসঙ্গ: পুত্র প্রহ্লাদকে যখন তাঁর পিতা হরিবিদ্বেষী দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপু মৃত্যুদণ্ড দেন, তখন পুত্রকে প্রাণভিক্ষা করার সময় কয়াধু এই উক্তিটি করেছিলেন। তিনি রাজাকে অনুরোধ করেন যেন তিনি পুত্রকে ফিরিয়ে দেন এবং এর বিনিময়ে তিনি সমস্ত রাজত্ব ছেড়ে দূরে থেকে রাজার মহিমার জয়গান করবেন।
খ। ‘পুত্রভিক্ষা’ পদ্যে মাতৃহৃদয়ের ব্যাকুলতার যে পরিচয় পাও, তা নিজের ভাষায় লেখো।
Ans— ‘পুত্রভিক্ষা’ কবিতায় মাতৃহৃদয়ের চরম ব্যাকুলতা ও আকুলতা প্রকাশ পেয়েছে। কয়াধু নিজেকে ‘রাজরানি’ না বলে ‘কাঙ্গালিনী’ ও ‘অভাগিনী মা’ হিসেবে রাজার কাছে উপস্থিত হয়েছেন। তিনি রাজদণ্ড বা রাজবিধানের কথা ভুলে গিয়ে কেবল একজন মা হিসেবে পুত্রের জীবন ভিক্ষা চেয়েছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, তাঁর পুত্র রাজদণ্ড ভয় বোঝে না, সে শুধু খেলা করে। সে সামান্য ধমকেও কেঁদে ওঠে। তাই এমন নির্দোষ শিশুকে শিলা বেঁধে সিন্ধু জলে ডোবানো বা অভিচারানলে পোড়ানো কতটা নিষ্ঠুর! পুত্রের প্রাণ তাঁর জীবন-জুড়ানো ধন, তাই তার প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে তিনি রাজ্য ধন সব ছেড়ে দূরে থেকে রাজাকে নিত্য নমস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই সবের মধ্যে দিয়ে তাঁর চরম ব্যাকুল মাতৃহৃদয়ের চিত্র ফুটে উঠেছে।
গ। পুত্রকে বিনাশ করার জন্য রাজা কী কী উপায় অবলম্বন করেছিলেন?
Ans— কবিতার ইঙ্গিত অনুসারে, হরিভক্ত পুত্র প্রহ্লাদকে বিনাশ করার জন্য রাজা হিরণ্যকশিপু কয়েকটি নিষ্ঠুর উপায় অবলম্বন করেছিলেন—
— পুত্রকে প্রাণদণ্ড দেওয়া।
— তাকে হাতীর পায়ের নিচে পিষে মারা।
— শিলা বেঁধে তাকে সিন্ধু জলে ডুবিয়ে মারা।
— তাকে অভিচারানলে পোড়ানো।
—
খ – ভাষা-অধ্যয়ন (ব্যবহারিক ব্যাকরণ)
৬। শব্দের অর্থ ও বাক্যে প্রয়োগ করো।
— রাজদ্রোহী — রাজার বিরুদ্ধে দ্রোহকারী। — রাজদ্রোহী ব্যক্তি কঠোর শাস্তি পেল।
— দেশদ্রোহী — দেশের প্রতি দ্রোহকারী। — দেশদ্রোহী কাউকে ক্ষমা করা উচিত নয়।
— পিতৃদ্রোহী — পিতার আদেশ বা ইচ্ছার বিরোধী। — প্রহ্লাদকে তার পিতা ধর্মদ্রোহী বলেছিলেন, কিন্তু সে পিতৃদ্রোহী ছিল না।
—
৭। লিঙ্গ পরিবর্তন করো।
— কাঙ্গাল — কাঙ্গালিনী
— ভাগ্যবন্ত — ভাগ্যবতী
— দীন — দীনা
— অভাগা — অভাগী
— ভিখারি — ভিখারিণী
—
৮। শব্দগুলিকে ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করো ও বাক্য রচনা করো।
— দেহ (শরীর) — সুস্থ থাকতে দেহকে ভালো রাখতে হবে।
— দেহ (দেওয়া) — ভিখারিকে কিছু খাদ্য দেহ।
— করে (হাতে) — রাজার করে ন্যায়দণ্ড শোভা পায়।
— করে (করা) — সে রোজ সকালে পড়াশোনা করে।
— করি (হাতি) — করি-পদতলে পুত্রকে পিষতে চেয়েছিল রাজা।
— করি (করা) — আমরা রোজ প্রার্থনা করি।
—
৯। পদান্তর করো।
— দিন — দৈনিক
— শোভা — শোভিত
— প্রাণ — প্রাণবন্ত
— স্নেহ — স্নিগ্ধ
— শিশু — শৈশব
— বিচার — বিচার্য
— ভক্তি — ভক্ত
— দোষ — দোষী
—
১০। গদ্যরূপ দাও।
— পরশিলে — স্পর্শ করলে
— চুম্বিতে — চুম্বন করতে
— তব — তোমার
— বিনাশিবে — বিনাশ করবে
— গ্রাসিয়াছে — গ্রাস করেছে
— মতি — বুদ্ধি
— মরমে — হৃদয়ের গভীরে
— নাশিতে — বিনাশ করতে
— হিয়া — হৃদয়
—
১৪। সন্ধি-বিচ্ছেদ করো।
— দুর্গতি = দুঃ + গতি
— নিষাদ = নিঃ + সাদ
— সম্বল = সম্ + বল
— নমস্কার = নমঃ + কার
—
১৫। এক কথায় প্রকাশ করো।
(ক) ভুবনের সমাহার — ত্রিভুবন
(খ) ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন যিনি — আস্তিক
(গ) বিষ্ণুর উপাসনা করেন যিনি — বৈষ্ণব
—
গ – জ্ঞান-সম্প্রসারণ
১৮। তুমি কোথাও দূরে গেলে বা দেরি করে ঘরে ফিরলে তোমার মার উৎকণ্ঠা হয়, সেটি অনুভব করে নিজের ভাষায় লেখো।
— যখনই আমি দূরে কোথাও যাই বা ফিরতে দেরি হয়, মা অস্থির হয়ে ওঠেন। প্রতি মুহূর্তে ফোন করে জানতে চান— “কোথায় আছিস? কখন ফিরবি? কী খাচ্ছিস?” সময়মতো না ফিরলে তাঁর কণ্ঠস্বরে আতঙ্ক আর অভিমানের সুর শুনতে পাই। মা তখন শুধু রাস্তার কথা ভাবেন, মনে করেন হয়তো কোনো বিপদ হয়েছে। ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই মা ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে স্বস্তি পান, যেন আমি বহু বছর পর ফিরেছি। তাঁর এই উৎকণ্ঠা আমাকে শেখায় যে পৃথিবীর কোনো ভালোবাসা মাতৃস্নেহের মতো নিঃশর্ত নয়। এটিই বাৎসল্য রসের প্রকাশ।
—
