ধুলামন্দির”,Chapter- 3, Class-9, SEBA

ধুলামন্দির”,Chapter- 3, Class-9, SEBA

“ধুলামন্দির”,Chapter- 3, Class-9, SEBA
২. শুদ্ধ উত্তরটি বেছে বের করো।
(ক) প্রকৃত পক্ষে দেবতার আবাস কোথায়?
(৩)সর্বত্র
(খ) ঈশ্বর কার কাছে বাঁধা থাকেন?
(২) সৃষ্টির কাছে
(গ) কবির মতে প্রকৃত ধর্ম কী?
(৩) কর্ম
(ঘ) ঈশ্বরের দু’হাতে কী লেগে থাকে বলে কবি বলেছেন?
(১) ধুলা
(ঙ) কবি পূজারিকে কী ছেড়ে ধুলার পরে আসতে বলেছেন?
(৪) শুচিবসন
৩. বাক্য রচনা করো।
* আরাধনা: মন্দিরের রুদ্ধদ্বারে দেবতার আরাধনা করা বৃথা।
* সৃষ্টিবাঁধন: স্বয়ং প্রভুও তাঁর সৃষ্টিবাঁধন এড়িয়ে যেতে পারেন না।
* ফুলের ডালি: কবি পূজারীকে ফুলের ডালি রেখে কর্মে যোগ দিতে বলেছেন।
* ধুলাবালি: ঈশ্বরের সান্নিধ্য পেতে হলে বস্ত্রে ধুলাবালি লাগাতে ভয় পেলে চলবে না।
৪. শূন্যস্থান পূর্ণ করো।
(ক) রুদ্ধদ্বারে দেবালয়ের কোণে কেন আছিস ওরে।
(খ) কাহারে তুই পূজিস সংগোপনে।
(গ) কর্মযোগে তাঁর সাথে এক হয়ে ঘর্ম পড়ুক ঝরে।।
(ঘ) আপনি প্রভু সৃষ্টিবাঁধন প’রে বাঁধা সবার কাছে।
(ঙ) ছিঁডুক বস্ত্র লাগুক ধুলাবালি-
৫. অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন।
(ক) ‘ধুলামন্দির’ কবিতার কবি কে?
উত্তর: ‘ধুলামন্দির’ কবিতার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
(খ) কবিতাটি কবির কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
উত্তর: কবিতাটি কবির ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
(গ) প্রকৃতপক্ষে দেবতার বা ঈশ্বরের বাস কোথায়?
উত্তর: প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর সর্বত্রই বিরাজমান।
(ঘ) ভক্তরা ভজনা বা পূজার্চনা করেন কেন?
উত্তর: ভক্তরা ভগবানের সান্নিধ্য লাভ করার উদ্দেশ্যে ভজনা বা পূজার্চনা করেন।
(ঙ) প্রকৃত ধর্ম কী?
উত্তর: প্রকৃত ধর্ম হলো কর্ম।
(চ) কবির মতে দেবতা আসলে কোথায় থাকেন?
উত্তর: কবির মতে, দেবতা রৌদ্রে-জলে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে তাদের কাজের মধ্যে থাকেন।
(ছ) ঈশ্বর বা প্রভু কাহার নিকট বাঁধা থাকেন?
উত্তর: ঈশ্বর বা প্রভু তাঁর নিজের সৃষ্টির কাছে বাঁধা থাকেন।
৬. সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন।
(ক) কবিতায় কবি ভগবান বা দেবতাকে কোথায় পাওয়া যেতে পারে বলে প্রকাশ করেছেন?
উত্তর: কবি প্রকাশ করেছেন যে ভগবান বা দেবতাকে মন্দিরের রুদ্ধদ্বারে পাওয়া যাবে না। তিনি সেখানে আছেন যেখানে চাষা মাটি ভেঙে চাষ করছে এবং শ্রমিকেরা পাথর ভেঙে পথ তৈরি করছে। ভগবান রৌদ্রে-জলে শ্রমজীবী মানুষদের সাথে আছেন এবং তাঁর দুই হাতে কাজের ধুলা লেগে আছে।
(খ) কবির মতে মুক্তির উপায় কী বর্ণনা করো?
উত্তর: কবির মতে, মুক্তি অন্য কোথাও নেই কারণ প্রভু নিজেই সৃষ্টির বাঁধনে সবার কাছে বাঁধা আছেন। তাই মুক্তি পেতে হলে ধ্যান এবং ফুলের ডালি রেখে, শুচি বসন ছেড়ে কর্মের মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে এক হতে হবে। ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভই হলো মুক্তি, এবং তা কর্মযোগের মাধ্যমে ঘর্ম ঝরিয়েই সম্ভব।
(গ) কর্মযোগ বলতে কী বুঝায়? কর্মের প্রকৃত অর্থ কী?
উত্তর: ‘কর্মযোগ’ বলতে বোঝায় কর্মের মাধ্যমে ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ম হওয়া। এই কবিতায়, কর্মের প্রকৃত অর্থ হলো ঈশ্বরের উপাসনাকে মন্দিরের চার দেওয়ালের বাইরে, ধুলিমাখা হাতে শ্রমজীবী মানুষের সাথে কায়িক পরিশ্রমে লিপ্ত হওয়া। এই কর্মে ঘর্ম ঝরানোর মাধ্যমেই ঈশ্বর প্রাপ্তি সম্ভব।
(ঘ) রুদ্ধ দেবালয়ে দেবতা থাকেন কী? কেন?
উত্তর: না, রুদ্ধ দেবালয়ে দেবতা থাকেন না। কবি পূজারীকে চোখ মেলে দেখতে বলেছেন যে দেবতা ঘরে নেই। কারণ ঈশ্বর ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে বা মন্দিরের চার দেওয়ালের মধ্যে বদ্ধ হয়ে থাকেন না। তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে গেছেন যেখানে সাধারণ মানুষ, যেমন চাষা ও শ্রমিকেরা, মাঠে-ঘাটে কাজ করছে।
(ঙ) কবির মতে দেবতা প্রাপ্তির প্রকৃত উপায় কী?
উত্তর: কবির মতে, দেবতা প্রাপ্তির প্রকৃত উপায় ভজন-পূজন বা ধ্যান নয়। প্রকৃত উপায় হলো ‘কর্মযোগ’। ঈশ্বরকে পেতে হলে তাঁরই মতো শুচি বসন ছেড়ে ধুলার ‘পরে নামতে হবে এবং শ্রমজীবী মানুষের সাথে রৌদ্রে-জলে এক হয়ে কাজ করতে হবে। সেই কর্মে ঘর্ম ঝরানোর মাধ্যমেই তাঁর সাথে এক হওয়া যায় এবং ঈশ্বর প্রাপ্তি সম্ভব হয়।
৭. রচনাধর্মী উত্তর লেখো।
(ক) ‘ধুলামন্দির’ কবিতার সারাংশ লেখো।
উত্তর: ‘ধুলামন্দির’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেখিয়েছেন যে ঈশ্বরের প্রকৃত আবাস মন্দির বা দেবালয়ের রুদ্ধদ্বারে নয়, বরং তা খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের কর্মক্ষেত্রের মধ্যে। কবি পূজারীকে প্রশ্ন করেছেন, কেন সে মন্দিরের অন্ধকারে সংগোপনে পূজা করছে, যখন দেবতা নিজেই সেখানে উপস্থিত নেই।
ঈশ্বর সেই চাষার কাছে গেছেন যিনি মাটি ভেঙে চাষ করছেন, বা সেই শ্রমিকের কাছে যিনি বারো মাস পাথর ভেঙে পথ নির্মাণ করছেন। তিনি রৌদ্র-জলে সবার সাথে আছেন এবং তাঁর দুই হাতেও সেই কাজের ধুলা লেগে আছে। তাই কবি পূজারীকেও শুচি বসন ত্যাগ করে সেই ধুলার পৃথিবীতে নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
কবি বলেছেন, মুক্তি অন্য কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়, কারণ স্বয়ং ঈশ্বরও তাঁর সৃষ্টির বাঁধনে বাঁধা। তাই ধ্যান, পূজার ফুল ফেলে দিয়ে, বস্ত্র ছিঁড়ে ধুলাবালি মেখে কর্মযোগের মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে একাত্ম হওয়াই ঈশ্বর প্রাপ্তির ও মুক্তির প্রকৃত পথ।
(খ) কর্মের মধ্যে দিয়ে দেবতার সান্নিধ্য পাওয়া যায়- কথাটির মূল বক্তব্য আলোচনা করো।
উত্তর: ‘ধুলামন্দির’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রচলিত ভজন-পূজনের ধারণার বাইরে গিয়ে এক নতুন আধ্যাত্মিক পথের সন্ধান দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের ধারণা, ঈশ্বর কেবল দেবালয়ে বা মন্দিরে বাস করেন। কিন্তু কবি দেখিয়েছেন, ঈশ্বর সেই রুদ্ধদ্বার মন্দিরের অন্ধকার কোণে আবদ্ধ নন।
ঈশ্বরের প্রকৃত অবস্থান হলো কর্মক্ষেত্রে। তিনি সেই শ্রমজীবী মানুষদের মধ্যে বিরাজমান, যারা কায়িক পরিশ্রমে নিযুক্ত। কবি উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ঈশ্বর সেখানে আছেন যেখানে চাষা চাষ করছে বা শ্রমিকেরা পথ নির্মাণ করছে। ঈশ্বর স্বয়ং সেই শ্রমিকদের সাথে রৌদ্রে-জলে কষ্ট স্বীকার করেন, তাই তাঁর হাতেও ধুলো লেগে আছে।
অতএব, ঈশ্বরের সান্নিধ্য পেতে হলে পূজারীকেও সেই কর্মের জগতে প্রবেশ করতে হবে। শুচি বসন ছেড়ে, ফুলের ডালি ফেলে দিয়ে, ঈশ্বরের মতোই ধুলোমাখা হাতে কর্মে লিপ্ত হতে হবে। কর্মের মাধ্যমে ঘর্ম ঝরিয়েই ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ম হওয়া সম্ভব, এটাই ‘কর্মের মধ্যে দিয়ে দেবতার সান্নিধ্য পাওয়া যায়’—এই বক্তব্যের মূল কথা।
(গ) ‘ধুলামন্দির’ কবিতার মূল ভাব ব্যক্ত করো।
উত্তর: ‘ধুলামন্দির’ কবিতার মূল ভাব হলো—ঈশ্বরকে মন্দিরের চার দেওয়ালে খুঁজে পাওয়া যায় না, তাঁর সন্ধান মেলে কর্মে ও শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে। কবি প্রচলিত পূজাপদ্ধতি, যেমন—রুদ্ধদ্বারে ভজন, পূজন, ধ্যান বা ফুলের ডালি দিয়ে আরাধনাকে অর্থহীন বলেছেন, কারণ দেবতা সেখানে নেই।
দেবতা নেমে এসেছেন ধুলার পৃথিবীতে, যেখানে সাধারণ মানুষ রৌদ্রে-জলে পরিশ্রম করছে। তিনি চাষা ও শ্রমিকের সহকর্মী। তাই ঈশ্বরকে পেতে হলে শুচি বসন ত্যাগ করে সেই ধুলার মন্দিরে, অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে, নেমে আসতে হবে। মুক্তি বা ঈশ্বর প্রাপ্তির একমাত্র পথ হলো ‘কর্মযোগ’—অর্থাৎ, শ্রমের মাধ্যমে ঘর্ম ঝরিয়ে ঈশ্বরের সাথে একাত্ম হওয়া।
(ঘ) ‘ধুলামন্দির’ কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তর: ‘মন্দির’ হলো দেবতার আলয় বা দেবগৃহ। সাধারণ মানুষ মনে করে, ঈশ্বর মন্দিরের রুদ্ধদ্বারের ভিতরেই বাস করেন। কিন্তু ‘ধুলামন্দির’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে দিয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন, দেবতা মন্দিরে নেই, তিনি আছেন ধুলার পৃথিবীতে।
যেখানে চাষা মাটি ভেঙে চাষ করে, শ্রমিক পাথর কাটে, সেই কর্মক্ষেত্রই ঈশ্বরের প্রকৃত আবাস। ঈশ্বর স্বয়ং রৌদ্রে-জলে সেই শ্রমিকদের সাথে আছেন এবং তাঁর দুই হাতেও ‘ধুলা’ লেগে আছে। কবি পূজারীকে আহ্বান জানিয়েছেন, ঈশ্বরের সান্নিধ্য পেতে হলে শুচি বসন ছেড়ে সেই ‘ধুলার ‘পরে’ নেমে আসতে।
সুতরাং, এই কবিতায় কবি ‘ধুলা’-কেই পবিত্র এবং ঈশ্বরের আবাসস্থল বা ‘মন্দির’ রূপে প্রতিষ্ঠা করেছেন। ধুলোমাখা কর্মক্ষেত্রই ভগবানের প্রকৃত দেবালয়। তাই, কবিতার বিষয়বস্তুর নিরিখে ‘ধুলামন্দির’ নামকরণটি অত্যন্ত সার্থক ও ব্যঞ্জনাময়।
৮. সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা লেখো।
(ক) “রৌদ্রে জলে আছেন সবার সাথে, / ধুলা তাঁহার লেগেছে দুই হাতে-“
উত্তর: উৎস: উদ্ধৃত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ধুলামন্দির’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ: কবি পূজারীকে জানাচ্ছেন যে, সে মন্দিরের রুদ্ধদ্বারে বৃথাই ঈশ্বরের সন্ধান করছে, কারণ ঈশ্বর সেই মন্দির ছেড়ে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের কাছে চলে গেছেন।
ব্যাখ্যা: ঈশ্বর কেবল মন্দিরের আরাধ্য দেবতা নন, তিনি কর্মের দেবতা। তিনি সেইসব মানুষের সাথে আছেন, যারা চাষা বা শ্রমিকের মতো রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কায়িক পরিশ্রম করে। ঈশ্বর শুধু তাদের কাজের সাক্ষী নন, তিনি নিজেও সেই কাজে অংশ নেন। তাই সাধারণ শ্রমিকদের মতোই তাঁর দুই হাতেও মাটির ধুলা লেগে আছে। এর মাধ্যমে কবি বুঝিয়েছেন, ঈশ্বর ও শ্রমজীবী মানুষ একাত্ম এবং কর্মই ঈশ্বর লাভের পথ।
(খ) ‘নয়ন মেলে দেখ দেখি তুই চেয়ে- দেবতা নাই ঘরে।।’
উত্তর: উৎস: উদ্ধৃত লাইনটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ধুলামন্দির’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে, যা তাঁর ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের অন্তর্গত।
প্রসঙ্গ: কবি সেই পূজারীকে সম্বোধন করে এই উক্তিটি করেছেন, যিনি দেবালয়ের দরজা বন্ধ করে অন্ধকারে একাকী ঈশ্বরের আরাধনা করছেন।
ব্যাখ্যা: কবি প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসে আঘাত হেনে বলেছেন যে, মন্দিরের চার দেওয়ালের মধ্যে ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়া নিষ্ফল। পূজারী যাকে পূজা করছে, সেই দেবতা আসলে সেই ‘ঘরে’ বা মন্দিরে নেই। কবি তাই পূজারীকে অজ্ঞানতা ও অন্ধ বিশ্বাস ত্যাগ করে ‘নয়ন মেলে’ অর্থাৎ জ্ঞানচক্ষু দিয়ে সত্য উপলব্ধি করতে বলেছেন। প্রকৃত সত্য হলো, ঈশ্বর মন্দির ছেড়ে কর্মমুখর ধুলার পৃথিবীতে নেমে গেছেন।
(গ) ‘আপনি প্রভু সৃষ্টিবাঁধন প’রে বাঁধা সবার কাছে।’
উত্তর: উৎস: এই পঙক্তিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ধুলামন্দির’ কবিতা থেকে গৃহীত।
প্রসঙ্গ: কবি যখন পূজারীকে কর্মযোগে লিপ্ত হয়ে মুক্তি খোঁজার আহ্বান জানান, তখনই ‘মুক্তি’র প্রকৃত অর্থ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই উক্তিটি করেছেন।
ব্যাখ্যা: সাধারণ মানুষ ভজন-পূজনের মাধ্যমে ‘মুক্তি’ লাভ করতে চায়। কিন্তু কবি বলছেন, মুক্তি আসলে কোথাও নেই। কারণ, স্বয়ং প্রভু বা ঈশ্বর, যিনি এই বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, তিনি নিজেই তাঁর সৃষ্টির বাঁধনে বাঁধা পড়েছেন। তিনি তাঁর সৃষ্টিকে ছেড়ে থাকতে পারেন না; তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যেই, শ্রমজীবী মানুষের সাথেই বিরাজমান। যেহেতু ঈশ্বর নিজেই ‘সৃষ্টিবাঁধন’-এ আবদ্ধ, তাই সৃষ্টির বাইরে গিয়ে আলাদা করে কোনো মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। সৃষ্টির সেবা ও কর্মের মাধ্যমেই ঈশ্বরের সঙ্গে মিলিত হওয়া সম্ভব।
(ঘ) ‘রাখো রে ধ্যান, থাক্ রে ফুলের ডালি, / ছিঁডুক বস্ত্র লাগুক ধুলাবালি-‘
উত্তর: উৎস: উদ্ধৃত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ধুলামন্দির’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ: মন্দিরে উপাসনারত পূজারীকে কবি ঈশ্বর প্রাপ্তির প্রকৃত পথ নির্দেশ করতে গিয়ে এই কথাগুলি বলেছেন।
ব্যাখ্যা: কবির মতে, ঈশ্বরকে পাওয়ার জন্য প্রচলিত ধ্যান, পূজার উপকরণ যেমন ‘ফুলের ডালি’ ইত্যাদির কোনো প্রয়োজন নেই। ঈশ্বর যেহেতু ধুলার পৃথিবীতে শ্রমজীবী মানুষের সাথে আছেন, তাই তাঁকে পেতে হলে পূজারীকেও সেই ধুলার স্তরে নামতে হবে। ‘শুচি বসন’ বা পরিচ্ছন্নতার অহংকার ত্যাগ করতে হবে। বস্ত্র ছিঁড়ে ধুলাবালি লাগলেও সেই কর্মকেই উপাসনা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। ধুলিমাখা হাতে কর্মে লিপ্ত হওয়াই ঈশ্বরের প্রকৃত আরাধনা।
৯. তাৎপর্য লেখো।
(ক) ধুলা তাঁহার লেগেছে দুই হাতে
উত্তর: এর তাৎপর্য হলো—ঈশ্বর কর্মবিমুখ নন, তিনি স্বয়ং একজন কর্মী। তিনি মন্দিরে পূজা গ্রহণ করেন না, বরং তিনি চাষা ও শ্রমিকের সাথে মাঠে-ঘাটে কাজ করেন। তাই তাঁর হাতে চন্দন বা ফুলের দাগ নেই, আছে পরিশ্রমের ‘ধুলা’। এটি ঈশ্বরের সঙ্গে শ্রমজীবী মানুষের একাত্মতাকে বোঝায়।
(খ) মুক্তি? ওরে মুক্তি কোথায় পাবি, মুক্তি কোথায় আছে?
উত্তর: এই পঙক্তির মাধ্যমে কবি ‘মুক্তি’ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। কবি বোঝাতে চেয়েছেন, ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনো ‘মুক্তি’ সম্ভব নয়। যেহেতু ঈশ্বর নিজেই তাঁর সৃষ্টির বাঁধনে বাঁধা, তাই সৃষ্টির মধ্যেই থাকতে হবে। কর্মযোগের মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে একাত্ম হওয়াই প্রকৃত মুক্তি, আলাদা করে পালানোর কোনো পথ নেই।
(গ) পাথর ভেঙ্গে কাটছে যেথায় পথ, খাটছে বারো মাস।
উত্তর: এর তাৎপর্য হলো—ঈশ্বর সেইখানেই আছেন যেখানে কঠিন শ্রম ও সৃষ্টির কাজ চলছে। ‘পাথর ভেঙে পথ কাটা’ অত্যন্ত কষ্টসাধ্য এবং জনকল্যাণমূলক কাজ। যারা ‘বারো মাস’ অর্থাৎ সারা বছর এই ধরনের কঠিন পরিশ্রম করে, ঈশ্বর তাদের সঙ্গেই থাকেন। মন্দির নয়, এই কঠোর কর্মক্ষেত্রই ঈশ্বরের প্রকৃত আবাস।
১০. টীকা লেখো।
* মন্দির: মন্দির বা দেবালয় হলো দেবতার গৃহ বা উপাসনার স্থান। সাধারণ মানুষ মনে করে, ঈশ্বর মন্দিরের রুদ্ধদ্বারের আড়ালে বাস করেন এবং সেখানেই ভজন-পূজনের মাধ্যমে তাঁর সান্নিধ্য পাওয়া যায়। কিন্তু ‘ধুলামন্দির’ কবিতায় কবি এই ধারণাকে নস্যাৎ করে বলেছেন, দেবতা মন্দিরের অন্ধকার কোণে নেই, তিনি ধুলার পৃথিবীতে কর্মের মধ্যে আছেন।
* মুক্তি: ‘মুক্তি’ শব্দের অর্থ উদ্ধার বা বন্ধন থেকে ছাড়া পাওয়া। আধ্যাত্মিক অর্থে, মুক্তি বলতে বোঝায় মোক্ষলাভ বা সংসারের মায়া ত্যাগ করে ঈশ্বরের সাথে লীন হওয়া। কবিতায়, পূজারী এই মুক্তির আশাতেই ধ্যান-পূজা করছে। কিন্তু কবি বলেছেন, ঈশ্বর নিজেই যখন ‘সৃষ্টিবাঁধন’-এ বাঁধা, তখন আলাদা করে মুক্তি খোঁজা বৃথা। কর্মের মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে একাত্ম হওয়াই প্রকৃত মুক্তি।
* কর্মযোগ: ‘কর্মযোগ’ হলো কর্মের মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে যুক্ত বা একাত্ম হওয়ার পথ। ‘ধুলামন্দির’ কবিতায় কবি দেখিয়েছেন, প্রচলিত ভজন-পূজা নয়, বরং ঈশ্বরের মতো শুচি বসন ছেড়ে ধুলোমাখা হাতে শ্রমজীবী মানুষের সাথে কাজে যোগ দেওয়াই ঈশ্বর প্রাপ্তির উপায়। ঈশ্বরের সৃষ্টির সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে ঘর্ম ঝরানোর এই পথটিই হলো ‘কর্মযোগ’।
১১. ভাষা ব্যাকরণ।
বাক্য পরিবর্তন করো।
(১) তাহাকে সকলেই চিনে। (অস্ত্যর্থক)
উত্তর (প্রশ্নাত্মক): তাহাকে কে না চিনে?
(২) রবীন্দ্রনাথ ভারতের শ্রেষ্ঠ কবি। (অস্ত্যর্থক)
উত্তর (প্রশ্নাত্মক): রবীন্দ্রনাথ ভারতের শ্রেষ্ঠ কবি কি?
(৩) সকলে ভুল করে। (অস্ত্যর্থক)
উত্তর (প্রশ্নাত্মক): ভুল কার না হয়?
(৪) তোমার নাম সকলেই জানে। (অস্ত্যর্থক)
উত্তর (নঞর্থক): তোমার নাম কে না জানে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *