জীবন সঙ্গীত
জীবন সঙ্গীত
১) অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।
ক) ‘জীবন-সংগীত’ কবিতার কবি কে?
উত্তর: ‘জীবন-সংগীত’ কবিতার কবি হলেন হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
খ) কবি মানুষের আয়ুকে কিসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?
উত্তর: কবি মানুষের আয়ুকে শৈবালের উপর থাকা জলের বিন্দুর সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী।
গ) এ পৃথিবীতে কোন বস্তু দুর্লভ?
উত্তর: এ পৃথিবীতে মহিমা বা গৌরব অর্জন করাই দুর্লভ।
ঘ) কবিতাটি কোন কবির কোন কবিতার বঙ্গানুবাদ?
উত্তর: কবিতাটি আমেরিকান কবি হেনরি ওয়ার্ডসওয়ার্থ লংফেলোর ‘A Psalm of Life’ কবিতার ভাবানুবাদ।
ঙ) কবি সংসারকে কিসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?
উত্তর: কবি সংসারকে একটি সমরাঙ্গন বা যুদ্ধক্ষেত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
চ) কবির মতে যশোলাভের উপায় কী?
উত্তর: কবির মতে, মহাজ্ঞানী মহাজনদের পথ অনুসরণ করে সময়ের বুকে নিজের পদচিহ্ন রেখে যাওয়াই যশোলাভের উপায়।
ছ) কবির মতে পৃথিবীতে মানুষের জীবন কবার হয়?
উত্তর: কবির মতে, পৃথিবীতে মানুষের এই অমূল্য জীবন একবারই পাওয়া যায়।
জ) সময়ের ধর্ম কী?
উত্তর: সময়ের ধর্ম হলো কারো জন্য অপেক্ষা না করে দ্রুত বেগে ধাবিত হওয়া এবং কখনও স্থির না থাকা।
ঝ) আত্মার স্বরূপ কী?
উত্তর: আত্মার স্বরূপ হলো এটি অনিত্য বা ক্ষণস্থায়ী নয়, অর্থাৎ আত্মা অবিনশ্বর ও চিরস্থায়ী।
ঞ) কবির মতে কী করে দুঃখের ফাঁস গলায় পড়ে?
উত্তর: কবির মতে, জীবনে শুধু সুখের আশা করলেই দুঃখের ফাঁস গলায় পড়ে, কারণ জীবনের উদ্দেশ্য কেবল সুখভোগ নয়।
ট) সময়ের ধর্ম কী?
উত্তর: সময়ের ধর্ম হলো অবিরাম বয়ে চলা। সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না, তাই তার সদ্ব্যবহার করা উচিত।
২) শূন্যস্থান পূর্ণ করো।
ক) কর যুদ্ধ বীর্যবান্ যায় যাবে যাক্ প্রাণ মহিমাই জগতে দুর্লভ।
খ) সঙ্কল্প সাধন হবে ধরাতলে কীর্তি রবে সময়ের সার বর্তমান।
গ) মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন হয়েছেন প্রাতঃস্মরণীয়।
ঘ) করোনা মানবগণ বৃথা ক্ষয় এ জীবন সংসার সমরাঙ্গন মাঝে।
৩) সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।
ক) পৃথিবীতে যশোলাভের প্রকৃত উপায় কী?
উত্তর: পৃথিবীতে যশোলাভের প্রকৃত উপায় হলো মহাপুরুষদের পথ অনুসরণ করা। তাঁরা যেমন সময়ের বুকে নিজেদের কীর্তির ছাপ রেখে গেছেন, আমাদেরও উচিত সেরকম কাজ করে যাওয়া, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম সেই পথ অনুসরণ করে যಶಸ್วี হতে পারে।
খ) কবি দারা-পুত্র-পরিবার পরিবেষ্টিত সংসার নিয়ে মানুষকে ক্রন্দন করতে নিষেধ করেছেন কেন?
উত্তর: কবি সংসারকে ক্ষণস্থায়ী মায়ার বাঁধন বলে মনে করেছেন। দারা, পুত্র, পরিবার—এইসব সম্পর্ক চিরস্থায়ী নয়। তাই ‘কে তোমার, তুমি কার’ এই ভেবে কেঁদে জীবন নষ্ট না করে জীবনের মূল উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কবি ক্রন্দন করতে নিষেধ করেছেন।
গ) জীবাত্মা সম্বন্ধে কবির অভিমত কী?
উত্তর: জীবাত্মা সম্বন্ধে কবির অভিমত হলো এটি অনিত্য বা নশ্বর নয়। দেহ ক্ষণস্থায়ী হলেও আত্মা অবিনশ্বর। তাই এই নশ্বর জীবনের মোহে পড়ে আত্মার অনন্ত সম্ভাবনাকে নষ্ট করা উচিত নয়।
ঘ) কবি আপন ব্রত সাধনে মানুষকে কী করতে বলেছেন?
উত্তর: কবি আপন ব্রত সাধনে মানুষকে নিজের কাজে রত থাকতে এবং একাগ্রচিত্তে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করতে বলেছেন। কর্ম ও ভক্তির সমন্বয়ের মাধ্যমেই জীবনের উদ্দেশ্য সফল হতে পারে।
ঙ) মানুষের জীবনে বরণীয় হওয়ার পথ কীভাবে প্রশস্ত হওয়া সম্ভব?
উত্তর: জীবনে বরণীয় হওয়ার পথ প্রশস্ত করতে হলে মহাজ্ঞানী মহাজনদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হবে। তাঁদের মতো সৎ কাজ করে সময়ের বালুচরে নিজের কীর্তির ছাপ রেখে যেতে হবে, যা দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবে এবং যশের অধিকারী হবে।
চ) বিশ্বের মানবজাতিকে কবি ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করতে নিষেধ করেছেন কেন?
উত্তর: ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত এবং অতীতের ঘটনা প্রবাহ চলে গেছে। একমাত্র বর্তমান সময়ই আমাদের হাতে রয়েছে কাজ করার জন্য। তাই কবি ভবিষ্যতের উপর নির্ভর না করে বর্তমান সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর কথা বলেছেন।
পৃষ্ঠা নং ১০৪
৪) রচনাধর্মী উত্তর দাও।
ক) ‘জীবন-সংগীত’ কবিতাটির সারাংশ লেখো।
উত্তর: ‘জীবন-সংগীত’ কবিতায় কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় মানব জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, এই জীবন নিছক স্বপ্ন বা মায়া নয়, বরং এটি একটি কর্মক্ষেত্র। পার্থিব জগতের স্ত্রী, পুত্র, পরিবারের মতো মায়াময় সম্পর্ককে জীবনের সার ভেবে ক্রন্দন করা বৃথা। কারণ আত্মা অবিনশ্বর, তাই এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে শুধু সুখের আশা বা দুঃখের ভয়ে ভীত না হয়ে, संसाररूपी যুদ্ধক্ষেত্রে বীরের মতো সংগ্রাম করা উচিত। অতীত বা ভবিষ্যতের কথা না ভেবে, বর্তমান সময়কে কাজে লাগিয়ে মহাপুরুষদের পথ অনুসরণ করে নিজের কীর্তি স্থাপন করাই জীবনের সার্থকতা। এভাবেই মানুষ মরণশীল হয়েও জগতে অমরত্ব লাভ করতে পারে।
গ) কবিতায় কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কীভাবে মানব জীবনের প্রকৃত সত্য প্রকাশ করেছেন, তা আলোচনা করো।
উত্তর: কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ‘জীবন-সংগীত’ কবিতায় মানব জীবনের প্রকৃত সত্যকে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, জীবন কেবল এক রাতের স্বপ্ন নয়, বরং এটি একটি কঠোর বাস্তবতা। সংসারকে তিনি একটি যুদ্ধক্ষেত্রের সাথে তুলনা করেছেন, যেখানে মানুষকে নির্ভীক সৈনিকের মতো লড়াই করে যেতে হয়। জীবনের উদ্দেশ্য কেবল সুখ খোঁজা বা দুঃখ থেকে পালানো নয়, বরং নিজের কর্তব্য পালন করা। কবি দেখিয়েছেন যে আয়ু, সম্পদ সবই শৈবালের শিশিরের মতো ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু এর মাঝেই জীবাত্মা হলো অবিনশ্বর। তাই এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে ভবিষ্যতের উপর নির্ভর না করে, বর্তমানকে কাজে লাগিয়ে মহৎ কীর্তি স্থাপন করার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত সত্য নিহিত আছে।
ঘ) মানব জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং সমরাঙ্গন তুল্য— কীভাবে এ জীবন সার্থক হতে পারে, যুক্তিসহ আলোচনা করো।
উত্তর: কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, মানব জীবন শৈবালের উপর শিশিরবিন্দুর মতো ক্ষণস্থায়ী এবং সংসার একটি যুদ্ধক্ষেত্রের মতো। এমন একটি জীবনকে সার্থক করতে হলে মানুষকে কিছু নির্দিষ্ট পথ অবলম্বন করতে হবে। প্রথমত, জীবনের মায়াময় সম্পর্ক নিয়ে দুঃখ না করে, বীরের মতো সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যতের উপর নির্ভর না করে বা অতীত নিয়ে অনুশোচনা না করে বর্তমান সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। তৃতীয়ত, মহাজ্ঞানী এবং মহৎ ব্যক্তিদের দেখানো পথে চলে নিজের কীর্তি স্থাপন করতে হবে, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। এভাবেই কর্তব্য পালন ও সংগ্রামের মাধ্যমে এই ক্ষণস্থায়ী জীবনকে অর্থবহ ও সার্থক করে তোলা সম্ভব।
ঙ) ‘জীবাত্মা অনিত্য নয়’— কথাটির বিস্তারিত আলোচনা করো।
উত্তর: ‘জীবাত্মা অনিত্য নয়’—এই উক্তিটির মাধ্যমে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, মানুষের দেহ নশ্বর হলেও আত্মা অবিনশ্বর। আমাদের জীবন, পার্থিব সম্পদ, এবং সম্পর্ক সবই অস্থায়ী এবং সময়ের সাথে সাথে বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু আত্মা চিরস্থায়ী। কবি এই দার্শনিক সত্যকে ভিত্তি করে মানুষকে উচ্চতর লক্ষ্যে অনুপ্রাণিত করতে চেয়েছেন। যেহেতু আত্মা অমর, তাই জীবনের উদ্দেশ্য কেবল জাগতিক ভোগ-বিলাস হওয়া উচিত নয়। বরং এমন মহৎ কাজ করা উচিত যা আত্মার মতোই চিরস্থায়ী কীর্তি হিসেবে পৃথিবীতে থেকে যাবে। এই বিশ্বাসই মানুষকে ভয়হীন হয়ে সংসার-রূপী যুদ্ধক্ষেত্রে সংগ্রাম করার শক্তি জোগায়।
৫) নিহিতার্থ লেখো।
ক) সময়ের সার বর্তমান।
Ans . আলোচ্য অংশটি কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত ‘ জীবন সঙ্গীত ‘ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
অতীত ইতিমধ্যেই চলে গেছে আর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তাই মানুষকে যদি সত্যিই কিছু অর্জন করতে হয়, তবে তা করতে হবে বর্তমান মুহূর্তের সদ্ব্যবহার করে। বর্তমান সময়ই আমাদের হাতে থাকা একমাত্র শক্তিশালী সম্পদ। অতীতের ভুল-ভ্রান্তি নিয়ে চিন্তা করে দুঃখ বা অনুতাপ করার কোনো লাভ নেই। ভবিষ্যতের কথা নিয়ে বেশি ভাবলে মানুষ প্রায়ই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো উচিত। শিক্ষা, কর্ম, নৈতিকতা ও আত্মউন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিলে বর্তমান সময়ই সর্বোচ্চ ফলাফল দেয়। এটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে জীবনকে অর্থপূর্ণ করতে বর্তমান সময়কে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবহার করা অপরিহার্য।
—
খ) মহিমাই জগতে দুর্লভ।
Ans . আলোচ্য অংশটি কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত ‘ জীবন সঙ্গীত ‘ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
প্রকৃত মহিমা বা গৌরব খুব কম মানুষের জন্যই সম্ভব। সাধারণ জীবনযাপনের মাধ্যমে কেউ তেমন মহানতা অর্জন করতে পারে না। মহিমা পেতে হলে সাহস, পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং লক্ষ্যনিষ্ঠা থাকা আবশ্যক। শুধু স্বার্থসিদ্ধি বা স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে বসে থেকে কেউ জীবনে বিশিষ্ট কীর্তি স্থাপন করতে পারে না। যারা বীরত্ব, ধৈর্য্য ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজের লক্ষ্য পূরণে নিয়োজিত থাকে, তারাই কেবল সত্যিকারের মহিমা লাভ করে। কবি আমাদের শেখাচ্ছেন যে, এই দুনিয়ায় মহান কিছু অর্জন করা সহজ নয়। এ জন্য আত্মত্যাগ ও কঠোর পরিশ্রম অপরিহার্য।
—
গ) আয়ুঃ যেন শৈবালের নীর।
Ans . আলোচ্য অংশটি কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত ‘ জীবন সঙ্গীত ‘ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
মানুষের জীবন খুব স্বল্প ও নশ্বর। শৈবালের উপর জলের ফোঁটা যেমন অল্প সময়ের জন্য থাকে এবং দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, তেমনি মানুষের জীবনকালও ক্ষণস্থায়ী। জীবনের সীমিত সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানো না হলে তা নষ্ট হয়ে যায়। তাই মানুষকে অমূল্য সময়ের গুরুত্ব বোঝা উচিত এবং জীবনকে অর্থপূর্ণ করার চেষ্টা করতে হবে। অলসতা বা অযথা আনন্দ-সুখে সময় নষ্ট করা উচিত নয়। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে শিক্ষণীয় কাজ, নৈতিকতা, কর্তব্য ও সৎ প্রচেষ্টা করে সময়কে কাজে লাগানোই বুদ্ধিমানের কাজ।
—
ঘ) ভবিষ্যতে ক’রো না নির্ভর।
Ans . আলোচ্য অংশটি কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত ‘ জীবন সঙ্গীত ‘ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
মানুষকে ভবিষ্যতের ওপর নির্ভর করে বসে থাকা উচিত নয়। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, তাই যা করা সম্ভব, তা অবশ্যই বর্তমান সময়ে করা উচিত। যদি আমরা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অপেক্ষা করি, তবে সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে। বর্তমান সময়ের সদ্ব্যবহার করলেই সাফল্য সম্ভব। এই নীতি মানুষকে সচেতন করে যে, জীবনকে অর্থপূর্ণ করতে এখনই উদ্যোগী হতে হবে। পরিকল্পনা করা অবশ্যই জরুরি, কিন্তু শুধু পরিকল্পনা করে বসে থাকা যথেষ্ট নয়। কর্মসংস্কার ও সতর্ক মনোযোগ দিয়ে বর্তমান সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলেই মানুষ জীবনে সাফল্য ও সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে।
—
ঙ) সংসার-সমরাঙ্গন।
Ans . আলোচ্য অংশটি কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত ‘ জীবন সঙ্গীত ‘ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
জীবন বা সংসার কোনো আরামদায়ক শয্যা নয়, বরং এটি একটি যুদ্ধক্ষেত্র। প্রতিদিন মানুষকে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক বাধা মোকাবিলা করতে হয়। সংসারে স্থায়ী শান্তি নেই; কাজ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। এই যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ী হতে হলে ধৈর্য, সাহস ও কর্তব্যপরায়ণতা অপরিহার্য। যারা কঠোর পরিশ্রম ও ন্যায়ের পথে চলেন, তারাই সংসারের জটিলতা পেরিয়ে সফল হন। কবি এখানে বোঝাচ্ছেন যে, জীবনে প্রতিনিয়ত প্রতিকূলতা থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু সঠিক মনোভাব ও দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে সেই যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয়ী হওয়া সম্ভব।
৬) টীকা লেখো – লং ফেলো।
উত্তর: হেনরি ওয়ার্ডসওয়ার্থ লংফেলো (১৮০৭-১৮৮২) ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন প্রখ্যাত আমেরিকান কবি। তাঁর কবিতাগুলি সংগীতময়তা এবং নৈতিক শিক্ষার জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। তাঁর লেখা ‘A Psalm of Life’ কবিতাটি বিশ্বজুড়ে খ্যাতি লাভ করে এবং মানুষকে জীবন সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করে। হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এই কবিতাটিরই ভাবানুবাদ করে ‘জীবন-সংগীত’ রচনা করেন।
৭) ব্যাখ্যা লেখো।
—
ক) ‘‘মানব জনম সার এমন পাবে না আর বাহ্য দৃশ্যে ভুলো না রে মন।।’’
Ans . আলোচ্য অংশটি কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত ‘ জীবন সঙ্গীত ‘ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
এই পঙক্তিটি মানবজন্মের গুরুত্ব ও দামীত্বের উপর বিশেষ জোর দেয়। কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, মানুষের জীবনে জন্ম একেবারেই অমূল্য। এটি এমন একটি সুযোগ, যা বারবার পাওয়া যায় না। তাই যদি মানুষ শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্য, ধন-সম্পদ, বা পৃথিবীর মায়া-মোহে মনোযোগ দিয়ে জীবন কাটায়, তবে সে জীবনের আসল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়। মানুষের জীবন একবারের জন্যই, তাই এটি শুধু সংক্ষিপ্ত সুখ-সুবিধার জন্য নষ্ট করা উচিত নয়। মানুষের উচিত তার জীবনকে সত্যিকারের উদ্দেশ্যপূর্ণ ও ফলপ্রসূ কাজে ব্যবহার করা। আত্মবিকাশ, ধর্ম, নৈতিকতা ও সঠিক কর্তব্য পালনের মাধ্যমে জীবনকে পূর্ণতা দেয়া সম্ভব। কবি এখানে মনকে সচেতন করার আহ্বান জানাচ্ছেন যেন সে অস্থায়ী বাহ্যিক আকর্ষণকে তুচ্ছ মনে করে জীবনের আসল মহিমা উপলব্ধি করে।
—
খ) ‘‘সাধিতে আপন ব্রত স্বীয় কার্যে হও রত একমনে ডাক ভগবান।।’’
Ans . আলোচ্য অংশটি কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত ‘ জীবন সঙ্গীত ‘ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
এই পঙক্তিটি মূলত ব্যক্তির কর্তব্য ও একাগ্রতার গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে। কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, নিজের জীবনের লক্ষ্য বা ব্রত পূরণ করতে হলে মানুষকে সম্পূর্ণ একাগ্রতা নিয়ে নিজ নিজ কাজের প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে। কাজের মধ্যে যদি মনোযোগ না থাকে বা বারবার বিচ্যুত হয়, তবে কাজের ফলাফল অর্জন করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি, কাজের মধ্যে ঈশ্বরের স্মরণ ও ভক্তি রাখলে কর্মে সাফল্য আসে এবং আত্মিক শান্তিও অর্জিত হয়। এটি আমাদের শেখায় যে, জীবন শুধুমাত্র লক্ষ্য পূরণেই নয়, বরং একনিষ্ঠতার মাধ্যমে সেই লক্ষ্য অর্জনে বিশ্বাসী থাকা জরুরি। কাজের প্রতি নিবিষ্ট থাকলে ও ঈশ্বরের নাম মনে রাখলে জীবনে সাফল্য ও পূর্ণতা আসে।
—
গ) সেই চিহ্ন লক্ষ্য করে অন্য কোন জন পরে যশোদ্বারে আসিবে সত্বর।
Ans . আলোচ্য অংশটি কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত ‘ জীবন সঙ্গীত ‘ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
এই পঙক্তিতে কবি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছেন। মহাপুরুষেরা তাদের জীবন ও কর্মের মাধ্যমে সমাজে এমন পদচিহ্ন রেখে যান যা অনুসরণযোগ্য। যারা সেই চিহ্ন লক্ষ্য করে চলতে পারে, তারা সহজে সাফল্যের পথে পৌঁছাতে পারে। এটি শিক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক দেখায়—পূর্বসূরীদের দৃষ্টান্ত ও কীর্তি আমাদের পথপ্রদর্শক হতে পারে। যে ব্যক্তি সঠিক পথে চলতে জানে এবং তাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে, সে অল্প সময়ে সাফল্য অর্জন করতে পারে। কবি এখানে অন্যদের জন্য একটি শিক্ষণীয় বার্তা দিচ্ছেন যে, জীবনে পথভ্রষ্ট না হয়ে যারা মহৎ ও সৎ পথ অনুসরণ করে, তারাই যথাসময়ে যশের দ্বারে পৌঁছায়।
—
ঘ) করোনা সুখের আশ, প’রো না দুঃখের ফাঁস জীবনের উদ্দেশ্য তা নয়।
Ans . আলোচ্য অংশটি কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত ‘ জীবন সঙ্গীত ‘ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
এই পঙক্তিতে কবি জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে একটি গভীর ভাব প্রকাশ করেছেন। মানুষ সাধারণত সুখের খোঁজে থাকে, কিন্তু কেবল সুখের আশায় জীবন কাটালে তা অনেক সময় দুঃখের ফাঁদে পরিণত হয়। সুখের জন্য সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে আমাদের বিচ্যুত করে। কবি মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, জীবনের মূল উদ্দেশ্য হলো কর্তব্যপরায়ণ হওয়া, সংসারের উন্নতি সাধন করা, নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করা। সুখ শুধুমাত্র ফলাফল, এটি প্রধান লক্ষ্য নয়। তাই জীবনকে সংযম, ন্যায় এবং কর্তব্যের মাধ্যমে পরিচালনা করাই প্রকৃত অর্থে সফলতা এবং মানসিক শান্তি এনে দেয়। সুখ-বিষয়ক অযথা আকাঙ্ক্ষা আমাদের জীবনকে ক্ষয় করতে পারে।
৮) ব্যাকরণ
ক) ব্যাসবাক্য সহ সমাসের নাম লেখো।
ধরাতল – ধরার তল (সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস)
যশোদ্বারে – যশের দ্বার (সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস)
প্রাতঃস্মরণীয় – প্রাতে স্মরণীয় যিনি (উপপদ তৎপুরুষ সমাস)
কীর্তিধ্বজা – কীর্তি রূপ ধ্বজা (রূপক কর্মধারয় সমাস)
বরণীয় – বরণ করার যোগ্য (উপপদ তৎপুরুষ সমাস)
জীবাত্মা – জীব রূপ আত্মা (রূপক কর্মধারয় সমাস)
খ) বিপরীত শব্দে পরিবর্তন করো।
লক্ষ্য – অলক্ষ্য
ভয় – সাহস
জন্ম – মৃত্যু
সময় – অসময়
সুখ – দুঃখ
যত্ন – অযত্ন
কাতর – অকাতর
বর্তমান – অতীত
রত – বিরত
দৃঢ় – শিথিল
সার – অসার
গ) পদ পরিবর্তন করো।
বীর্যবান – বীর্য
ভয় – ভীত
লক্ষ্য – লক্ষিত
ব্রত – ব্রতী
সময় – সাময়িক
সাধন – সাধিত
সার – সারবান
কাতর – কাতরতা
ঘ) বিশেষ্য ও বিশেষণ পদের বিশিষ্টার্থক প্রয়োগ করে বাক্য রচনা করো।
বিশেষ্য পদ
মুখ:
মুখ করা (ঝগড়া করা): সামান্য কারণে সে আমার সাথে মুখ করলো।
মুখ রাখা (সম্মান বাঁচানো): পরীক্ষায় ভালো ফল করে তুমি বংশের মুখ রেখেছ।
কান:
কান দেওয়া (মনোযোগ দেওয়া): পড়ার সময় অন্য দিকে কান দিও না।
কান ভাঙানো (কুমন্ত্রণা দেওয়া): তার বিরুদ্ধে আমার কান ভাঙানোর চেষ্টা কোরো না।
চোখ:
চোখ রাঙানো (রাগ দেখানো): আমাকে অকারণে চোখ রাঙিও না।
চোখে ধুলো দেওয়া (প্রতারণা করা): লোকটি পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে গেল।
গা:
গা ঢাকা দেওয়া (আত্মগোপন করা): অপরাধী পুলিশ আসার আগেই গা ঢাকা দিয়েছে।
গায়ে কাঁটা দেওয়া (রোমাঞ্চিত হওয়া): ভূতের গল্পটি শুনে আমার গায়ে কাঁটা দিল।
বিশেষণ পদ
পাকা:
পাকা কথা (চূড়ান্ত কথা): বিয়ের বিষয়ে দুই পরিবারের মধ্যে পাকা কথা হয়ে গেছে।
পাকা হাত (দক্ষ): তিনি একজন পাকা হাতের রাঁধুনি।
বড়:
বড় মুখ (অহংকার): এত বড় মুখ করে কথা বলা তোমার ঠিক নয়।
বড় মন (উদার): এমন দান করতে হলে বড় মন লাগে।
কড়া:
কড়া কথা (কটু কথা): তিনি রেগে গিয়ে আমাকে কয়েকটি কড়া কথা শুনিয়ে দিলেন।
কড়া নজর (সতর্ক দৃষ্টি): আসামীর উপর পুলিশের কড়া নজর রয়েছে।
নরম:
নরম মন (দয়ালু): তার মন খুব নরম, সহজেই অন্যের দুঃখে কাতর হয়।
নরম হওয়া (শান্ত হওয়া): অনেক বোঝানোর পর তার রাগ নরম হলো।
