জীবনের মৌলিক একক, Chapter -5
এখানে অনুশীলনীতে থাকা সমস্ত প্রশ্ন এবং তাদের উত্তর দেওয়া হল:
অনুশীলনী
প্রশ্ন ১। উদ্ভিদ কোষ এবং প্রাণীকোষের পার্থক্য দেখাও এবং এই পার্থক্য বোঝানোর জন্য কি কি উপায় অবলম্বন করবে?
উত্তর:
উদ্ভিদ কোষ এবং প্রাণীকোষের প্রধান পার্থক্যগুলি হলো:
* কোষ প্রাচীর: উদ্ভিদকোষে কোষপর্দার বাইরে সেলুলোজ নির্মিত একটি দৃঢ় কোষ প্রাচীর থাকে। প্রাণীকোষে কোষ প্রাচীর থাকে না।
* প্লাষ্টিড: উদ্ভিদকোষে প্লাষ্টিড (যেমন, সালোকসংশ্লেষের জন্য ক্লোরোপ্লাস্ট) থাকে। প্রাণীকোষে প্লাষ্টিড থাকে না।
* গহ্বর (Vacuole): পরিণত উদ্ভিদকোষে সাধারণত একটি বড় কেন্দ্রীয় গহ্বর থাকে যা কোষের স্ফীতি ও দৃঢ়তা প্রদান করে। প্রাণীকোষে গহ্বর থাকলেও সেগুলি খুব ছোট আকারের হয়।
এই পার্থক্যগুলি বোঝানোর জন্য, একটি যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দুটি অস্থায়ী স্লাইড পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। প্রথমটি পিঁয়াজের শল্কপত্রের কোষ (উদ্ভিদকোষ) এবং দ্বিতীয়টি মানুষের গালের ভেতরের চামড়ার কোষ (প্রাণীকোষ)। এই দুটি কোষের গঠনগত উপাদানগুলি তুলনা করলেই পার্থক্যগুলি স্পষ্ট বোঝা যাবে।
প্রশ্ন ২। প্রোক্যারিওটিক বা প্রকোষকেন্দ্রীয় কোষ এবং ইউক্যারিওটিক, বা সংকোষকেন্দ্রীয় কোষের পার্থক্য কি?
উত্তর:
প্রকোষকেন্দ্রীয় (প্রোক্যারিওটিক) এবং সংকোষকেন্দ্রীয় (ইউক্যারিওটিক) কোষের মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলি নিচে দেওয়া হলো:
* আকার: প্রকোষকেন্দ্রীয় কোষ সাধারণত ছোট (১-১০ মাইক্রন) হয়, অন্যদিকে সংকোষকেন্দ্রীয় কোষ তুলনামূলকভাবে বড় (৫-১০০ মাইক্রন) হয়।
* নিউক্লিয়ার অঞ্চল: প্রকোষকেন্দ্রীয় কোষে সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াস থাকে না; নিউক্লিয়ার পর্দা না থাকায় নিউক্লিয়ার অঞ্চলটি অস্পষ্ট হয়, যাকে নিউক্লিওয়েড বলে। সংকোষকেন্দ্রীয় কোষে নিউক্লিয়ার পর্দা দিয়ে ঘেরা সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াস থাকে।
* ক্রোমোজোম: প্রকোষকেন্দ্রীয় কোষে সাধারণত একটি ক্রোমোজোম থাকে। সংকোষকেন্দ্রীয় কোষে একটার বেশি ক্রোমোজোম থাকে।
* কোষীয় অঙ্গানু: প্রকোষকেন্দ্রীয় কোষে পর্দা ঘেরা কোষীয় অঙ্গানু (যেমন মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাষ্টিড) থাকে না। সংকোষকেন্দ্রীয় কোষে পর্দা ঘেরা কোষীয় অঙ্গানু উপস্থিত থাকে।
প্রশ্ন ৩। কোনও কোষের কোষ পর্দা বা প্লাজমা পর্দা ফেটে গেলে কি হবে?
উত্তর:
কোষ পর্দা বা প্লাজমা পর্দা হলো কোষের বাইরের আবরণ যা কোষের ভেতরের উপাদানগুলিকে বাইরের পরিবেশ থেকে আলাদা করে রাখে এবং পদার্থের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। যদি এই পর্দা ফেটে যায় বা বিনষ্ট হয়, তবে কোষের ভেতরের সাইটোপ্লাজম এবং কোষ অঙ্গানুগুলি বাইরের পরিবেশে বেরিয়ে পড়বে, ফলে কোষের সংগঠন নষ্ট হয়ে যাবে এবং কোষটির মৃত্যু ঘটবে।
প্রশ্ন ৪। কোনও কোষে যদি গলগি এ্যাপারেটাস না থাকে তবে ঐ কোষের জীবনে কি হবে?
উত্তর:
গলগি এ্যাপারেটাসের (গলগি বডি) প্রধান কাজ হলো এন্ডোপ্লাজমিক জালিকাতে সংশ্লেষিত হওয়া পদার্থগুলিকে রূপান্তরিত করা, সঞ্চয় করা এবং পুটলী বেঁধে (প্যাকেজিং) কোষের ভেতরে বা বাইরে পরিবাহিত করা। এটি লাইসোজোম সৃষ্টিতেও ভূমিকা নেয়। যদি কোষে গলগি এ্যাপারেটাস না থাকে, তবে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি (যেমন পদার্থের সঞ্চয়, প্যাকেজিং, পরিবহন এবং লাইসোজোম গঠন) বন্ধ হয়ে যাবে, যা কোষের স্বাভাবিক জীবন প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে।
প্রশ্ন ৫। কোষের কোন অঙ্গানুকে ‘শক্তিঘর’ (Power-house) বলা হয়? এবং কেন?
উত্তর:
মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের ‘শক্তিঘর’ (Power house) বলা হয়।
কারণ: জীবের বিভিন্ন জৈবিক কাজে যে শক্তির প্রয়োজন হয়, সেই শক্তি ATP (Adenosine triphosphate) রূপে মাইটোকন্ড্রিয়াতে উৎপন্ন হয়। এই ATP-কে কোষের ‘শক্তি মুদ্রা’ (Energy currency) বলা হয়, যা শরীর নতুন রাসায়নিক উপাদান প্রস্তুত করতে বা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করে।
প্রশ্ন ৬। কোষ-পর্দা গঠন করা লিপিড এবং প্রোটিন কোথায় সংশ্লেষিত হয়?
উত্তর:
কোষ-পর্দা গঠনকারী লিপিড (বা চর্বি) মসৃন এন্ডোপ্লাজমিক জালিকায় (SER) সংশ্লেষিত হয়। প্রোটিন অমসৃন এন্ডোপ্লাজমিক জালিকায় (RER) থাকা রাইবোজোম দানায় সংশ্লেষিত হয়। এই প্রোটিন এবং লিপিডগুলিই পরে কোষপর্দার গঠনে ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন ৭। এ্যামিবা নিজের খাবার কিভাবে সংগ্রহ করে?
উত্তর:
এ্যামিবা এন্ডোসাইটোসিস বা অন্তঃকোষিকার্তি প্রক্রিয়ার দ্বারা খাদ্য গ্রহণ করে। কোষপর্দার স্থিতিস্থাপকতার কারণে, এ্যামিবা তার চারিপাশের পরিবেশ থেকে খাদ্যবস্তুকে গ্রহণ করতে পারে।
প্রশ্ন ৮। অস্মোসিস বা অভিস্রবন কি?
উত্তর:
অভিস্রবন (Osmosis) হলো একটি বিশেষ ধরনের ব্যাপন প্রক্রিয়া। নির্বাচনাত্মক ভেদ্য পর্দার (selectively permeable membrane) মধ্য দিয়ে দ্রাবকের (যেমন জলের) অণুগুলি যখন দ্রাবকের বেশী ঘনত্বযুক্ত স্থান থেকে দ্রাবকের কম ঘনত্বযুক্ত স্থানে চলাচল করে, তখন সেই প্রক্রিয়াকে অভিস্রবন বলে।
প্রশ্ন ৯। নীচের অভিস্রবনের পরীক্ষাটি কর:
(চারটে আলুর কাপের পরীক্ষা) [cite: 397-400]
(i) B এবং C কাপে কেন জল গর্তে চলে এল।
উত্তর: B (চিনি) এবং C (লবণ) কাপে আলুর গর্তের ভেতরে ঘন দ্রবণ তৈরি হয়েছিল, ফলে ভেতরের জলের ঘনত্ব বাইরের পাত্রের জলের ঘনত্ব থেকে কম ছিল। [cite_start]আলু একটি নির্বাচনাত্মক ভেদ্য পর্দার মতো কাজ করায়, অভিস্রবন প্রক্রিয়ায় বাইরের পাত্রের জল (বেশী ঘনত্ব) আলুর কোষ ভেদ করে ভেতরের গর্তে (কম ঘনত্ব) চলে আসে।
(ii) A আলুর কাপ রাখা দরকারী হ’ল কেন?
উত্তর: A আলুর কাপটি খালি রাখা হয়েছিল। এটি একটি ‘নিয়ন্ত্রক’ (Control) হিসাবে কাজ করে। এর মাধ্যমে প্রমাণ করা যায় যে শুধুমাত্র অভিস্রবন প্রক্রিয়ার ফলেই (অর্থাৎ চিনি বা লবণের উপস্থিতির কারণে) B ও C কাপের গর্তে জল জমেছে, আলু স্বাভাবিকভাবে জল শোষণ করে গর্ত পূর্ণ করে না।
(iii) A এবং D কাপে জল গর্তে কেন এল না?
উত্তর:
* A কাপে: A কাপের গর্তটি খালি ছিল, তাই ভেতরের এবং বাইরের জলের ঘনত্বের কোনো পার্থক্য ছিল না। ফলে অভিস্রবন ঘটেনি।
* D কাপে: D কাপের আলুটিকে সেদ্ধ করা হয়েছিল। সেদ্ধ করার ফলে আলুর কোষগুলো মরে যায়। মৃত কোষের কোষপর্দা তার নির্বাচনাত্মক ভেদ্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, তাই অভিস্রবন প্রক্রিয়া ঘটতে পারে না।
