খরগোশ ও সিংহ’
পাঠ -2 খরগোশ ও সিংহ’ গল্পটির ওপর ভিত্তি করে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর ও সমাধান নিচে দেওয়া হলো।
পাঠভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর (Page 4-5)
১। শব্দার্থ মেলানো
হিতাহিত : ভালোমন্দ
হাজির : উপস্থিত
নিস্তার : রক্ষা, উদ্ধার
প্রতিবিম্ব : জলে বা আয়নায় দেখা প্রতিচ্ছবি
বন্দি : আটক
২। সঠিক উত্তর বেছে বৃত্ত পূরণ
খরগোশ কোথায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখেছিল?
(খ) কুয়োর জলে
মন্দমতি কেন কুয়োয় ঝাঁপ দিল?
(ঘ) কুয়োর ভেতরে আরেকটি সিংহ রয়েছে ভেবে
৩। উত্তরের কারণ আলোচনা
আমি নির্দিষ্ট বিকল্প উত্তরটি শুদ্ধ ভেবে বেছে নিলাম কারণ:
খরগোশ চলতে চলতে একটি কুয়োর কাছে এসে থমকে গিয়েছিল। সে উঁকি মেরে দেখল কুয়োর জলে তার প্রতিবিম্ব ভাসছে।
মন্দমতি (সিংহ) রাগে কুয়োর দিকে তাকাল এবং কুয়োর জলে নিজের প্রতিবিম্বকে দেখে দুষ্ট সিংহটা ভেবে গর্জন করে উঠল। এরপর সে শত্রুকে আক্রমণ করার জন্য কুয়োর মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
৫। ভেবেচিন্তে উত্তর লেখা
ক। বনের পশুদের কে শিকার করছিল?
Ans.বনের পশুদের মন্দমতি নামের এক দুষ্ট সিংহ শিকার করছিল।
খ। খরগোশ কুয়োর জলে কী দেখেছিল?
Ans.খরগোশ কুয়োর জলে তার নিজের প্রতিবিম্ব স্পষ্টভাবে ভাসতে দেখেছিল।
গ। খরগোশ মন্দমতিকে কয়টি খরগোশের কথা বলেছিল?
Ans.খরগোশ মন্দমতিকে বলেছিল যে তারা পাঁচজন খরগোশ একসঙ্গে আসছিল।
ঘ। কুয়োর জলে প্রতিবিম্ব দেখে সিংহ কী করেছিল?
Ans কুয়োর জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে সিংহ সেটাকে দুষ্ট সিংহ ভেবে গর্জন করে উঠেছিল এবং হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে শত্রুকে আক্রমণ করার জন্য কুয়োর মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
ঙ। বনের পশুরা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল? এই সিদ্ধান্তের Ans.ফলে তাদের কী লাভ হবে বলে ভেবেছিল?
বনের পশুরা সিংহের কাছে গিয়ে অত্যন্ত মিনতি করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে তারা প্রতিদিন একটি করে পশু সিংহের ভোজনের জন্য তার কাছে পাঠাবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে তারা ভেবেছিল যে সিংহকে কষ্ট করে শিকার করতে হবে না, আর তারা বেঁচে-বর্তে থাকবে।
চ। সিংহটির নাম কী ছিল?
Ans.সিংহটির নাম ছিল মন্দমতি।
৬। সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করে উত্তর
ক। খরগোশ তার দেরি হওয়ার কারণ সিংহকে কী জানিয়েছিল?
Ans। খরগোশ তার দেরি হওয়ার কারণ সিংহকে জানিয়েছিল যে, তারা পাঁচজন খরগোশ একসঙ্গে সিংহের কাছে আসছিল, কিন্তু আচমকা আরেকটি সিংহ এসে পথ আটকাল। সেই সিংহটি নিজেকে বনের রাজা দাবি করে, বাকি চারজনকে বন্দি করে এবং খরগোশকে সেই উদ্ধত সিংহকে ডেকে আনার জন্য পাঠায়।
খ। খরগোশ কীভাবে মন্দমতির থেকে বনের পশুদের বাঁচিয়েছিল?
Ans. খরগোশ তার বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে মন্দমতির হাত থেকে বনের পশুদের বাঁচিয়েছিল।
সে কুয়োর জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে একটি কৌশল চিন্তা করে।
সে ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করে সিংহের কাছে পৌঁছায় এবং অন্য একটি সিংহের গল্প ফেঁদে মন্দমতিকে উত্তেজিত করে।
এরপর সে মন্দমতিকে কুয়োর কাছে নিয়ে গিয়ে কুয়োর জলে তার প্রতিবিম্ব দেখিয়ে বলে যে দুষ্ট সিংহটা কুয়োর ভেতরে লুকিয়েছে।
রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে মন্দমতি সেই প্রতিবিম্বকে আসল শত্রু ভেবে কুয়োয় ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং মারা যায়।
৭। কে, কাকে বলেছে
ক। “এতে আপনাকেও আর কষ্ট করে শিকার করতে হবে না, আর আমরাও বেঁচে-বর্তে থাকব।”
Ans। বনের পশুরা সিংহকে (মন্দমতি) বলেছিল।
খ। “কী। ওর এত সাহস! আমাকে এখনই ওর কাছে নিয়ে চল্। আজ সে আমার হাত থেকে কোনোভাবেই নিস্তার পাবে না।”
Ans। : সিংহ (মন্দমতি) খরগোশকে বলেছিল।
ভাষা অধ্যয়ন (Page 5-6)
৮। বিপরীত শব্দ
পরিষ্কার : নোংরা/অপরিষ্কার
উত্তম : অধম/খারাপ
ভয় : সাহস/নির্ভয়
শুরু : শেষ
হিত : অহিত
ভেতর : বাহির
নীচ : উঁচু
৯। বাক্য রচনা
অরণ্য : সুন্দরবনের অরণ্যে অনেক ধরনের জীব-জন্তু থাকে।
প্রস্তাব : পশুরা প্রতিদিন একটি পশু পাঠানোর প্রস্তাব সিংহকে দিয়েছিল।
প্রতিবিম্ব : খরগোশ কুয়োর জলে তার নিজের প্রতিবিম্ব দেখেছিল।
বিচক্ষণ : ক্ষুদ্র খরগোশের বিচক্ষণতার জন্য বনের পশুরা বেঁচে গেল।
১০। ধ্বন্যাত্মক শব্দ ও অনুকার শব্দ
ধ্বন্যাত্মক শব্দ:
নিচে দাগ দেওয়া ধ্বন্যাত্মক শব্দ: কুয়োটা জলে পরিপূর্ণ, জলটাও টলটলে পরিষ্কার।
কয়েকটি ধ্বন্যাত্মক শব্দ: ঝমঝম (বৃষ্টির শব্দ), টিকটিক (ঘড়ির শব্দ), ম্যাও ম্যাও (বিড়ালের ডাক)
অনুকার শব্দ:
কয়েকটি অনুকার শব্দ: জলটল, চাটা, কথাটথা, বইটই
১১। অন্ত্যমিল খুঁজে বার করা
দই : কই, মই, খই
চাল : ভাল, ডাল, ঢাল
ভুল : মূল, কুল, ঝুল
বন : রণ, ক্ষণ, ধন
জ্ঞান সম্প্রসারণ (Page 7)
১৪। খরগোশের বুদ্ধির যথাযথতা
হ্যাঁ, খরগোশের বুদ্ধি যথাযথ ছিল।
বিচক্ষণতা: খরগোশ তার আসন্ন বিপদকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত হিতাহিত বিচার করতে পেরেছিল এবং একটি বিচক্ষণ কৌশল তৈরি করেছিল।
লক্ষ্য অর্জন: তার বুদ্ধির ফলে শুধু নিজের জীবনই বাঁচেনি, বরং বনের সকল পশুদের স্থায়ীভাবে বিপদ থেকে মুক্তি দিয়েছিল।
ব্যবহারিক জীবনের জ্ঞান: পঞ্চতন্ত্রের গল্পগুলি মূলত ব্যবহারিক জীবনের জ্ঞান অর্জনের জন্য রচিত হয়েছিল। খরগোশের এই বুদ্ধি ছিল অপরীক্ষিতকারম্ (হঠকারিতা) তন্ত্রের বিপরীত, যেখানে মন্দমতি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিল।
১৬। মন্দমতির থেকে রক্ষার কৌশল
খরগোশের জায়গায় আমি থাকলে মন্দমতির হাত থেকে বাঁচার জন্য হয়তো একই রকম কৌশল অবলম্বন করতাম, তবে সামান্য ভিন্ন উপায়ে:
সময়ক্ষেপণ ও স্থান পরিবর্তন: সিংহের কাছে দেরিতে যেতাম এবং বলতাম যে পথে আমি একটি অদ্ভুত গর্জন শুনেছি। সেই শব্দটি একটি ভয়ঙ্কর গুহার দিক থেকে আসছিল, যেখানে অন্য পশুরা লুকিয়ে আছে।
লোভ সৃষ্টি: আমি বলতাম, সেই গুহার কাছে গেলে সিংহ আরও অনেক বেশি শিকার একসঙ্গে পেতে পারে।
আয়নার ব্যবহার: আমি মন্দমতিকে এমন একটি পুকুর বা জলাধারের কাছে নিয়ে যেতাম যার পাড় খুব পিচ্ছিল। সেখানে জল আয়নার মতো পরিষ্কার হবে।
ফাঁদে ফেলা: গুহার ভেতরে প্রবেশের আগে, আমি পুকুরের ধারে উঁকি দিয়ে দ্রুত সরে আসতাম এবং বলতাম: “মহারাজ, আপনার শত্রু গুহার বদলে জলে লুকিয়েছে! সে আপনার ভয়ে কাঁপছে, দেখুন!” সিংহর রাগ ও অহংকার কাজে লাগিয়ে, সে যখন জলে তার প্রতিবিম্ব দেখত, আমি তখন পিছলে পড়ে যাওয়ার মতো করে তাকে ধাক্কা মারার ভঙ্গি করতাম যাতে সে রাগে বা অসতর্কতায় জলে বা কাদায় পড়ে যায়।
১৭। শব্দ দিয়ে বাক্যরচনা
জীবন-মরণ : বনের পশুদের কাছে সেই সময়টা ছিল জীবন-মরণের প্রশ্ন।
পরিপাটি : তার জামাকাপড় সবসময় পরিপাটি থাকে।
হাট-বাজার : গ্রামের লোকেরা সকালে হাট-বাজার করতে যায়।
কম-বেশি : আজ সব জায়গায় কম-বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
হিতাহিত : রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে মন্দমতি কুয়োয় ঝাঁপ দিল।
তর্জন-গর্জন : খিদের জ্বালায় সিংহ তর্জন-গর্জন করছিল।
ভালো-মন্দ : আমাদের সব সময় মানুষের ভালো-মন্দ বিচার করে চলা উচিত।
জীব-জন্তু : জীব-জন্তুরা মিলেমিশে বনের মধ্যে শান্তিতে থাকে।
