আমাদের পরিবেশ, Chapter -15
আমাদের পরিবেশ, Chapter -15
অনুশীলনী (পৃষ্ঠা ৯-১০)
১. নিম্নলিখিত কোন্ বিভাগটি জৈব-বিনাশক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত?
(a) ঘাস্, ফুল এবং চামড়া।
(b) ঘাস্, কাঠ এবং প্লাষ্টিক।
(c) ফলের খোসা, পিঠা এবং লেবুর রস।
(d) পিঠা, কাঠ এবং ঘাস।
উত্তর: (a), (c) এবং (d)
* ব্যাখ্যা: জৈব-বিনাশক পদার্থ হল সেগুলি যা জৈবিক প্রক্রিয়া দ্বারা ভেঙে যায়।
* (a) ঘাস, ফুল এবং চামড়া – তিনটিই জৈব-বিনাশক।
* (b) ঘাস এবং কাঠ জৈব-বিনাশক, কিন্তু প্লাস্টিক জৈব-অবিনাশক।
* (c) ফলের খোসা, পিঠা (কেক) এবং লেবুর রস – তিনটিই জৈব-বিনাশক।
* (d) পিঠা (কেক), কাঠ এবং ঘাস – তিনটিই জৈব-বিনাশক।
* টীকা: প্রশ্নটির একাধিক সঠিক উত্তর রয়েছে কারণ (a), (c), এবং (d) বিকল্পের সব উপাদানই জৈব-বিনাশক। সাধারণত এই ধরনের প্রশ্নে একটি বিকল্পে জৈব-অবিনাশক বস্তু (যেমন প্লাস্টিক) দিয়ে ভুল উত্তর তৈরি করা হয়, যা এখানে (b) বিকল্পে করা হয়েছে।
২. নিম্নের কোন্টি খাদ্য-শৃঙ্খল গঠন করে?
(a) ঘাস্ গম এবং আম।
(b) ঘাস্ ছাগল এবং মানুষ
(c) ছাগল, গরু এবং হাতী।
(d) ঘাস্ মাছ এবং ছাগল।
উত্তর: (b) ঘাস্ ছাগল এবং মানুষ
* ব্যাখ্যা: খাদ্য শৃঙ্খল দেখায় কে কাকে খায়। ঘাস (উৎপাদক) \rightarrow ছাগল (প্রাথমিক খাদক) \rightarrow মানুষ (গৌণ খাদক)। এটি একটি সঠিক খাদ্য শৃঙ্খল। অন্যান্য বিকল্পগুলি ভুল কারণ (a)-তে সব উৎপাদক, (c)-তে সব প্রাথমিক খাদক, এবং (d)-তে খাদ্যস্তর ঠিক নেই (মাছ ঘাস খায় না, ছাগল মাছ খায় না)।
৩. নিম্নলিখিত কোন্টি পরিবেশবান্ধব কার্য্য?
(a) কেনাকাটার সময় ‘ক্রয় করা বস্তু রাখতে কাপড়ের থলি ব্যবহার করা।
(b) অপ্রয়োজনীয় বাতি এবং পাখা বন্ধ করা।
(c) স্কুলে হেঁটে যাওয়ার বদলে মার স্কুটারে যাওয়া।
(d) উপরোক্ত সবগুলি।
উত্তর: (a) কেনাকাটার সময় ‘ক্রয় করা বস্তু রাখতে কাপড়ের থলি ব্যবহার করা এবং (b) অপ্রয়োজনীয় বাতি এবং পাখা বন্ধ করা।
* ব্যাখ্যা:
* (a) কাপড়ের থলি ব্যবহার করলে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমে, যা পরিবেশবান্ধব।
* (b) অপ্রয়োজনীয় আলো ও পাখা বন্ধ করলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়, যা পরিবেশবান্ধব কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায়শই পরিবেশের উপর প্রভাব পড়ে।
* (c) হেঁটে যাওয়ার পরিবর্তে স্কুটারে গেলে জ্বালানী খরচ হয় এবং দূষণ ঘটে, তাই এটি পরিবেশবান্ধব নয়।
* (d) যেহেতু (c) পরিবেশবান্ধব নয়, তাই এই বিকল্পটি ভুল।
* টীকা: প্রশ্নটিতে একটি উত্তর চাওয়া হয়েছে বলে মনে হলেও, (a) এবং (b) উভয়ই সঠিক পরিবেশবান্ধব কাজ।
৪. যদি একটি পৌষ্টিক স্তরের সব জীবকে বধ করা হয় তবে কি হবে?
উত্তর: যদি একটি পৌষ্টিক স্তরের সমস্ত জীবকে মেরে ফেলা হয়, তবে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
* এর উপরের পৌষ্টিক স্তরের জীবগুলি খাদ্যের অভাবে মারা যাবে বা অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হবে।
* এর নীচের পৌষ্টিক স্তরের জীবগুলির সংখ্যা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পাবে (কারণ তাদের খাদক থাকবে না), যা তাদের খাদ্য উৎসের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করবে এবং সেই উৎসকে নিঃশেষ করে ফেলতে পারে।
* সামগ্রিকভাবে, খাদ্য জাল (Food Web) ভেঙে পড়বে এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাবে।
৫. একটি পৌষ্টিক স্তরের সকল জীবসত্তার মৃত্যু হলে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্নভাবে তার প্রভাব পড়বে কি? পরিস্থিতিতন্ত্রের কোনও ক্ষতি ঘটানো ছাড়া কোনও পৌষ্টিক স্তরের জীবকে কিভাবে সরানো যেতে পারে?
উত্তর: হ্যাঁ, একটি পৌষ্টিক স্তরের সমস্ত জীবের মৃত্যু হলে বিভিন্ন স্তরে তার প্রভাব ভিন্ন ভিন্ন হবে।
* উৎপাদক স্তর (সবুজ উদ্ভিদ) ধ্বংস হলে পুরো বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়বে কারণ শক্তির মূল উৎসই থাকবে না।
* প্রাথমিক খাদক (তৃণভোজী) স্তর ধ্বংস হলে মাংসাশী প্রাণীরা খাদ্যাভাবে পড়বে এবং উৎপাদক স্তরের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ঘটবে।
* উচ্চ স্তরের খাদক (মাংসাশী) স্তর ধ্বংস হলে তাদের শিকারের সংখ্যা অত্যাধিক বেড়ে যাবে, যা তার নীচের স্তরগুলিতে প্রভাব ফেলবে।
* বিয়োজক স্তর ধ্বংস হলে মৃত জৈব পদার্থের পচন বন্ধ হয়ে যাবে এবং পুষ্টি মৌলগুলির চক্রাকার আবর্তন ব্যাহত হবে।
বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি না করে কোনো পৌষ্টিক স্তরের সমস্ত জীবকে সরানো কার্যত অসম্ভব। প্রতিটি স্তরই খাদ্য জালের অংশ এবং শক্তি প্রবাহ ও পুষ্টি চক্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সম্পূর্ণ স্তর অপসারণ করলে ভারসাম্য নষ্ট হবেই।
৬. জৈব বৃহত্তরীকরণ কি? এই বৃহত্তরীকরণের স্তর পরিস্থিতি তন্ত্রের বিভিন্ন স্তরে কি বিভিন্ন রকম?
উত্তর:
* জৈব বৃহত্তরীকরণ (Biological Magnification): যে প্রক্রিয়ায় কিছু ক্ষতিকারক, জৈব-অবিনাশক রাসায়নিক পদার্থ (যেমন কীটনাশক, ভারী ধাতু) খাদ্য শৃঙ্খলের মাধ্যমে প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রতিটি পরবর্তী পৌষ্টিক স্তরে ক্রমশ বেশি ঘনত্বে জমা বা সঞ্চিত হয়, তাকে জৈব বৃহত্তরীকরণ বলে।
* বিভিন্ন স্তরে প্রভাব: হ্যাঁ, বৃহত্তরীকরণের মাত্রা বা স্তর পরিস্থিতি তন্ত্রের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন রকম। এই রাসায়নিকগুলির ঘনত্ব উৎপাদক স্তরে সবচেয়ে কম থাকে এবং খাদ্য শৃঙ্খলের প্রতিটি ধাপে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে, সর্বোচ্চ পৌষ্টিক স্তরের জীবগুলির (যেমন শীর্ষ মাংসাশী বা মানুষ) দেহে এই ক্ষতিকারক পদার্থগুলির ঘনত্ব সর্বাধিক হয়।
৭. আমাদের উৎপাদিত জৈব-অবিনাশক বর্জ্য দ্বারা কি সমস্যা হবে?
উত্তর: আমাদের উৎপাদিত জৈব-অবিনাশক বর্জ্য (যেমন প্লাস্টিক, কাচ, ধাতু, কিছু কীটনাশক) নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি সৃষ্টি করে:
* পরিবেশে স্থায়িত্ব: এগুলি জৈবিক প্রক্রিয়ায় ভাঙে না, তাই পরিবেশে শত শত বা হাজার হাজার বছর ধরে অপরিবর্তিত অবস্থায় থেকে যায়।
* ভূমি দূষণ: মাটিতে জমা হয়ে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে এবং ভূমির স্বাভাবিক গঠন ব্যাহত করে। ল্যান্ডফিলগুলিতে বিশাল স্থান দখল করে।
* জল দূষণ: জলাশয়ে জমা হয়ে জলকে দূষিত করে, জলজ প্রাণীর ক্ষতি করে এবং নিকাশী ব্যবস্থা বন্ধ করে দিতে পারে।
* বায়ু দূষণ: এগুলি পোড়ালে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়ে বায়ু দূষণ ঘটায়।
* জীবজগতের ক্ষতি: প্রাণীরা ভুল করে এগুলি খেয়ে ফেলতে পারে বা এগুলিতে আটকে গিয়ে আহত বা মারা যেতে পারে। খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে জৈব বৃহত্তরীকরণ ঘটাতে পারে।
৮. যদি আমাদের উৎপাদিত সমস্ত বর্জ্য বিনাশক হয় তাহলে পরিবেশের উপর এদের প্রভাব কি পরবে না?
উত্তর: না, আমাদের উৎপাদিত সমস্ত বর্জ্য যদি জৈব-বিনাশকও হয়, তাহলেও পরিবেশের উপর তার প্রভাব পড়বে।
* বিয়োজনের হার: যদি বর্জ্য উৎপাদনের হার প্রাকৃতিক বিয়োজনের হারের চেয়ে বেশি হয়, তবে বর্জ্য জমা হতে থাকবে এবং দূষণ ঘটাবে।
* অক্সিজেনের অভাব: জলাশয়ে অতিরিক্ত জৈব বর্জ্য বিয়োজিত হওয়ার সময় প্রচুর অক্সিজেন ব্যবহার করে, ফলে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গিয়ে জলজ প্রাণীর মৃত্যু হতে পারে (ইউট্রোফিকেশন)।
* দুর্গন্ধ ও রোগজীবাণু: বর্জ্য পচনের সময় দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে এবং রোগজীবাণু বিস্তারে সাহায্য করতে পারে।
* গ্রিনহাউস গ্যাস: অক্সিজেনবিহীন পরিবেশে (যেমন ল্যান্ডফিলের গভীরে) জৈব বর্জ্যের পচনের ফলে মিথেন (CH_4) গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস।
সুতরাং, বর্জ্য জৈব-বিনাশক হলেও তার সঠিক ব্যবস্থাপনা (যেমন কম্পোস্টিং, বায়োগ্যাস উৎপাদন) প্রয়োজন, নতুবা পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বেই।
৯. ওজোন স্তরের ক্ষতি উদ্বেগের কারণ কেন? এই ক্ষতি সীমিত করতে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?
উত্তর:
* উদ্বেগের কারণ: ওজোন স্তর বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে অবস্থিত একটি স্তর যা সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকারক অতিবেগুনী (UV) রশ্মিকে শোষণ করে পৃথিবীপৃষ্ঠে আসতে বাধা দেয়। এই স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা পাতলা হয়ে গেলে (ওজোন হোল) অধিক পরিমাণে UV রশ্মি পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। এই অতিরিক্ত UV রশ্মি মানবদেহে ত্বকের ক্যান্সার, চোখে ছানি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া এটি উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণীরও ক্ষতি করে।
* গৃহীত পদক্ষেপ: ওজোন স্তর ক্ষতির প্রধান কারণ হিসাবে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) এবং অন্যান্য হ্যালোকার্বন গ্যাসগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলি রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, অ্যারোসল স্প্রে ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হত। এই ক্ষতি সীমিত করার জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল মন্ট্রিল প্রোটোকল (1987)। এই চুক্তির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী দেশগুলি CFC এবং অন্যান্য ওজোন-ক্ষয়কারী পদার্থের উৎপাদন ও ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে ওজোন স্তরের ক্ষয় অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে এবং ধীরে ধীরে এর পুনরুদ্ধার ঘটছে।
