আদাব, Chapter -9, Class- 8 , SEBA

নিচে সমরেশ বসু রচিত ‘আদাব’ পাঠের সমস্ত প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হলো —
(




পাঠভিত্তিক প্রশ্ন
১। পাঠটি পড়ে গল্পের মূল বক্তব্যটি সংক্ষেপে বলো।
মূল বক্তব্য:
সমরেশ বসু রচিত ‘আদাব’ গল্পের মূল বক্তব্য হলো সাম্প্রদায়িক সংঘাতের পটভূমিতে মানবতার জয় এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আবশ্যকতা। দাঙ্গা-বিধ্বস্ত পরিস্থিতিতে পরিচয় গোপন করে ভয়ে ডাস্টবিনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা একজন হিন্দু সুতা-মজুর ও একজন মুসলমান মাঝির মধ্যে প্রথমত অবিশ্বাস ও সন্দেহ ছিল। কিন্তু বিপদের মুখে তাদের মানবীয় পরিচয়ই মুখ্য হয়ে ওঠে। উভয়ে পরিবার ও প্রিয়জনের কথা ভাবতে ভাবতে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও মমতা অনুভব করে। মৃত্যুর আশঙ্কা জেনেও মাঝি তার পরিবারের জন্য ঈদের জামা-কাপড় নিয়ে ফেরার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে। সেই আকাঙ্ক্ষা সুতা-মজুরের মনে অনুকম্পা জাগায় এবং তাদের মধ্যে ধর্মের প্রাচীর ভেঙে যায়। মৃত্যুর মুহূর্তে ‘আদাব’ বিনিময়ের মধ্য দিয়ে তারা মানবতার বার্তা দেয়। গল্পটি দেখায়, সংকটে জাতি-ধর্ম নয়, মানুষের ভালোবাসাই সর্বশ্রেষ্ঠ।




২। উত্তর দাও –

(ক) কার সঙ্গে কার দাঙ্গা –
হিন্দু আর মুসলমানের সঙ্গে দাঙ্গা।

(খ) কোথায় আগুন জ্বলছে –
বস্তিতে বস্তিতে আগুন জ্বলছে।

(গ) ডাস্টবিনটার অন্য দিকে কী আছে –
ডাস্টবিনটার দুই পাশে দুটি প্রাণী ছিল, অর্থাৎ একদিকে একজন, অন্যদিকে আর একজন।

(ঘ) পুঁটুলিটা কার দিকে বাড়িয়ে দিল –
পুঁটুলিটা সুতা-মজুরের দিকে বাড়িয়ে দিল।




৩। সঠিক উত্তরটি বেছে লেখো –

(ক) ‘আদাব’ গল্পটির লেখক –
সমরেশ বসু।

(খ) ডাস্টবিনের দুপাশে দুটি –
প্রাণী।

(গ) হঠাৎ কাছাকাছি ওঠে একটি –
শোরগোল।




৪। নীচের বাক্যগুলোর তাৎপর্য বুঝিয়ে লেখো –

(ক) ভূত দেখার মতো চমকে উঠল সুতা-মজুর।
তাৎপর্য:
দাঙ্গার বিভীষিকাময় পরিবেশে ডাস্টবিনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা সুতা-মজুর প্রথমে মাঝিকে নিজের শত্রু ভেবে আতঙ্কিত হয়। মাঝি যখন ‘সোবহান্ আল্লা!’ বলে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে, তখন সুতা-মজুর বুঝতে পারে সে মুসলমান। দাঙ্গার আবহে এই পরিচয় শুনেই সে এতটা ভয় পেয়ে যায় যে যেন ভূত দেখেছে—এই বাক্যটি তাদের মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ ও আতঙ্কের গভীরতা প্রকাশ করে।

(খ) ভুলুম না ভাই এই রাত্রের কথা।
তাৎপর্য:
দাঙ্গার রাতের শেষে মাঝি এই কথা বলে বিদায় নেয়। সেই ভয়ংকর রাতেও হিন্দু সুতা-মজুর ও মুসলমান মাঝির মধ্যে যে মানবিক সহমর্মিতা ও মমতার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, সেটি মাঝি কখনও ভুলবে না—এই কথার মধ্যেই প্রকাশ পায় অসাম্প্রদায়িক ঐক্যের গভীর আবেগ ও মানবতার জয়।




৬। উত্তর লেখো –

(ক) ‘পারলাম না ভাই’— বক্তা কী পারল না?
বক্তা মাঝি তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যার কাছে পৌঁছাতে পারল না। ঈদের জন্য সে জামা-শাড়ি কিনেছিল, কিন্তু বিদায়ের পর পুলিশ অফিসারের গুলিতে নিহত হয়। তার শেষ আর্তনাদে সুতা-মজুর বুঝতে পারে—মাঝি তার পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করতে পারল না।

(খ) মাঝি ও সুতা-মজুরের কথাবার্তায় যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধরা পড়েছে তা বিশ্লেষণ করে দেখাও।
মাঝি ও সুতা-মজুরের কথাবার্তায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বহুমাত্রিক প্রকাশ পাওয়া যায়—
– বিপদের মুখে সহমর্মিতা : একে অপরকে খুনী ভেবে ভীত হলেও তারা কারও ক্ষতি করে না।
– পারস্পরিক বিশ্বাস : মাঝি তার ঈদের কাপড় দেখিয়ে বিশ্বাস জাগায়, সুতা-মজুর সন্দেহ কাটিয়ে তাকে বিশ্বাস করে।
– জীবনরক্ষা সহযোগিতা : পুলিশ আসার শব্দে তারা একসঙ্গে পালাতে উদ্যত হয়।
– মানবিক অনুভব : মাঝির পরিবারের কথা শুনে সুতা-মজুরের মনে অনুকম্পা জাগে।
– অসাম্প্রদায়িক বিদায় : বিদায়ের সময় তারা একে অপরকে ‘আদাব’ বলে সম্ভাষণ জানায়—যা তাদের মানবিক ঐক্যের প্রতীক।




ভাষা-অধ্যয়ন (ব্যবহারিক ব্যাকরণ)

৭। পাঠ থেকে ছয়টি যুগ্মশব্দ লেখো –
– নারী-শিশুর
– হাত-পা-গুলোকে
– পোলা-মাইয়ার
– পোলামাইয়ারা
– মা-বউ
– রাস্তাঘাট




৮। দুটি সমার্থক পদকে সমাসে বদ্ধ করো –
– হাসা ও হাসি → হাসা-হাসি (হাসাহাসি)
– নির্মম ও নিষ্ঠুর → নির্মম-নিষ্ঠুর
– মারা ও মারি → মারা-মারি
– কাটা ও কাটি → কাটা-কাটি




৯। দুই বা ততোধিক বিশেষ্য পদকে এক পদের দ্বন্দ্ব সমাসে পরিণত করো –
– হাটে ও বাজারে ও দোকানে → হাট-বাজার-দোকান
– জাতি ও ধর্ম ও বর্ণ → জাতি-ধর্ম-বর্ণ
– স্বর্গ ও মর্ত্য ও পাতাল → স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল
– জন্ম ও মৃত্যু → জন্ম-মৃত্যু




১০। দুটি বিশেষণ পদকে দ্বন্দ্ব সমাসে পরিণত করো –
– সত্য ও মিথ্যা → সত্য-মিথ্যা
– সুখী ও অসুখী → সুখী-অসুখী
– ছোটো ও বড়ো → ছোটো-বড়ো
– ভালো ও মন্দ → ভালো-মন্দ




১১। নিম্নলিখিত সমাসবদ্ধ পদগুলোকে সমস্যমান পদে পরিবর্তন করো –
– মাঠে-ময়দানে → মাঠে ও ময়দানে
– দুধে-ভাতে → দুধে ও ভাতে
– দেশে-বিদেশে → দেশে ও বিদেশে
– তেলে-জলে → তেলে ও জলে




১৩। নীচের অনুচ্ছেদে যতি চিহ্ন ব্যবহার করে আবার লেখো –
লোকটা ডাস্টবিনটাকে ঠেলে দিল একটু। খানিকক্ষণ চুপচাপ। আবার নড়ে উঠল ডাস্টবিনটা; ভয়ের সঙ্গে এবার একটু কৌতুহল হল। আস্তে আস্তে মাথা তুলল লোকটা… ওপাশ থেকেও উঠে এলো ঠিক তেমনি একটি মাথা। মানুষ! ডাস্টবিনের দুই পাশে দুটি প্রাণী—নিস্পন্দ, নিশ্চল। হৃদয়ের স্পন্দন তালহারা—ধীর, স্থির। চারটে চোখের দৃষ্টি ভয়ে, সন্দেহে, উত্তেজনায় তীব্র হয়ে উঠেছে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। উভয়ে উভয়কে ভাবছে খুনী। চোখে চোখ রেখে উভয়েই একটা আক্রমণের প্রতীক্ষা করছে, কিন্তু অপেক্ষার পরও কোনো পক্ষ থেকেই আক্রমণ এলো না। এবার দুজনের মনেই একটি প্রশ্ন জাগল—হিন্দু, না মুসলমান?




জ্ঞান-সম্প্রসারণ

১৫। ওপরের অনুচ্ছেদ দুটি ভালো করে পড়ে উত্তর দাও –

(ক) রূপকথার বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী –
– লোকসাহিত্যের অন্তর্গত চিরন্তন কাল্পনিক কাহিনি
– কৃত্রিম জগৎ
– গাছ-পালা ও পশুপাখিরা মানুষের মতো কথা বলে
– আয়তনে দীর্ঘ ও বর্ণনামূলক
– ভাষা সহজ ও অনাড়ম্বর
– ঘটনায় অলৌকিকতার স্পর্শ থাকে
– নীতিকথা ও উপদেশমূলক

(খ) ছোটোগল্পের বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী –
– আধুনিক যুগের সৃষ্টি
– গদ্য সাহিত্যের বিশেষ শাখা
– আয়তনে ক্ষুদ্র কিন্তু ব্যঞ্জনাধর্মী
– নাটকীয়তা, উৎকণ্ঠা, চরম মুহূর্ত ও সংবদ্ধ গঠনশৈলী থাকে
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছোটোগল্পের সার্থক প্রবর্তক ও শ্রেষ্ঠ রূপকার

(গ) রূপকথা ও ছোটোগল্পের পার্থক্য কী –
– রূপকথা লোকসাহিত্যের অন্তর্গত, ছোটোগল্প আধুনিক সৃষ্টি
– রূপকথা কাল্পনিক, ছোটোগল্প বাস্তবধর্মী
– রূপকথা আয়তনে দীর্ঘ, ছোটোগল্প সংক্ষিপ্ত
– রূপকথায় পশুপাখি কথা বলে, ছোটোগল্পে মানুষের জীবনের প্রতিফলন
– রূপকথায় অলৌকিকতা, ছোটোগল্পে নাটকীয় বাস্তবতা
– রূপকথা নীতিকথামূলক, ছোটোগল্প ব্যঞ্জনামূলক

(ঘ) বাংলা ছোটোগল্পের সর্বশ্রেষ্ঠ রূপকার কে –
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।




১৭। ওপরের কবিতাটির মূল বক্তব্য লেখো –
সুনির্মল বসুর ‘মহিম-রহিম’ কবিতার মূল বক্তব্য হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও মানবতা। মহিম ও রহিম দুই ভিন্ন ধর্মের শিশু হলেও তারা একপ্রাণ। ধর্মের ভেদাভেদ তাদের স্পর্শ করেনি। মক্তবে পড়া রহিম ও পাঠশালায় পড়া মহিম একই পথে হাত ধরে চলে—তাদের বন্ধুত্ব মক্কা ও কাশী, জমজম ও গঙ্গাকে এক করে দেয়। মসজিদ-মন্দিরের বিভেদ মুছে গিয়ে ‘চেরাগের বাতি’ ও ‘পঞ্চপ্রদীপ’ গলাগলি করে জ্বলে। আল্লা ও ভগবান তাদের আনন্দে মিলিত হন। কবিতার বার্তা হলো—প্রতিটি মুসলমান ঘরে রহিম, প্রতিটি হিন্দুর অন্তরে মহিমের স্মৃতি জেগে থাকুক, যেন ধর্মভেদ ভুলে সবাই একে অপরের সঙ্গে খোলাখুলি ও আন্তরিকভাবে মিশে চলতে পারে।



Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *