আদরিণী, Class 10 , SEBA, Questions & Answers

 

আদরিণী

Q.1 নগেন বাবুর পেশা কী?

ANS:- ডাক্তারি।

Q.2 জয়রামের পেশা কী?

ANS:- মোক্তারি।

Q.3 কুঞ্জবিহারী বাবু পেশায় ছিলেন?

ANS:- উকিল।

Q.4 মেঝ বাবু কে?

ANS:- জমিদার নরেশ রায় চৌধুরী।

Q.5 জয়রামের বয়স কত?

ANS:- পঞ্চাশের উর্ধে।

Q.6 জয়রাম কার কাছে হাতি চেয়ে পাঠালেন?

ANS:- মহারাজ নরেশচন্দ্র চৌধুরি রায়বাহাদুরের কাছে।

Q.7 জয়রামের আদি নিবাস কোথায় ছিল?

ANS:- যশোর জেলায়।

Q.8 জয়রামের গাভীটির কী নাম ছিল?

ANS:- মঙ্গলা।

Q.9 কার নামে জয়রাম তার গরুর বাছুরের নাম রেখেছিলেন?

ANS:- এজলাসের এক ডেপুটি বাবুর নামে।

Q.10 উমাচরণ লাহিড়ীর বাসস্থান কোথায়?

ANS:- বীরপুরে।

Q.11 চৈত্র সংক্রান্তির মেলা কোথায় হয়?

ANS:- বামনহাটে।

Q.12 আদরিণী কে?

ANS:- জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের হাতির নাম আদরিণী।

Q.13 হাতি তোর ____ পায়ে ____ । (শূন্যস্থান পূরণ করাে)

ANS:- হাতি তোর গোদা পায়ে নাতি।

Q.14 জয়রামের কয় ছেলে?

ANS:- তিন ছেলে।

Q.15 “হাতি তোর গোদা পায়ে নাতি” এখানে ‘নাতি’ শব্দের অর্থ কী?

ANS:- লাথি।

Q.16 ‘আদরিণী’ গল্পে উল্লেখিত মেলা দুটির নাম লেখো।

ANS:- বামনহাটের মেলা ও রসগঞ্জের মেলা।

Q.17 “আদরিণী” গল্পটি কার লেখা?

ANS:- সাহিত্যিক প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়।

Q.18 পীরগঞ্জের চৌধুরিদেব বাধ মোক্তার কে?

ANS:- জয়রাম মুখোপাধ্যায়।

Q.19 কে হাতির ললাটে তেল ও সিন্দুর দিল?

ANS:- জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের বড় পুত্রবধু।

Q.20 আদরিণী হাতিটির পিছনে মাসে কত টাকা খরচ হত?

ANS:- ত্রিশ-চলিশ টাকা।

Q.21 আদরিণীকে কোন হাটে বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল?

ANS:- আদরিণীকে বামনহাটে বিত্রি করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Q.1 জয়রাম হাতি চেয়ে পাঠালেন কেন?

ANS:- পীরগঞ্জের জমিদার নরেশ রায় চৌধরি তার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে নগেন ডাক্তার, জুনিয়ার উকিল কুঞ্জবাবু এবং জয়রাম মোখোপাধ্যায়কে নেমন্তন পাঠান। ডাক্তার নগেনবাবু ও জুনিয়র উকিলবাবুর অনুরোধে জয়রাম মোক্তার চৌধুরি রায় বাহাদুরের কাছে পত্র মারফত হাতি চেয়ে পাঠান বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য। অবশ্য চৌধুরীরা হাতি পাঠাননি।

Q.2 কার নামে এবং কেন জয়রাম তার বাছুরের নাম রেখেছেন?

ANS:- এক ডেপুটির নামে জয়রাম তার বাছুরের নাম রেখেছেন। একদিন এজলাসে এক ডেপুটির সঙ্গে তাঁর বচসা হয়। সেদিনই বিকেলে বাড়ি এসে দেখে, তার মঙ্গলা গাভি একটি এড়ে বাছুর প্রসব করেছে। তখন আদর করে উক্ত ডেপুটি বাবুর নামে বাছুরটির নামকরণ করেন।

Q.3 জয়রামের বর্তমান নিবাস কোথায়?

ANS:- জয়রামের আদি নিবাস ছিল বাংলাদেশের যশোর জেলায়। কিন্তু তার বর্তমান নিবাস এপার বাংলায়।

Q.4 কী কারণে আদালতে জয়রাম মোক্তারের জরিমানা হয়েছিল?

ANS:- একবার এক ডেপটির সামনে জয়রাম মোক্তার আইনের তর্ক করছিলেন, কিন্তু হাকিম কিছুতেই তার কথায়, সায় দিচ্ছিলেন না। অবশেষে রাগের মাথায় জরম মোক্তার বলে বসলেন – আমার স্ত্রীর যতটুক, আইন-জ্ঞান আছে, হুজুরের তাও নাই দেখছি সেদিন, আদালত অবমাননার জন্য জয়রাম মোক্তারের পাঁচ টাকা জরিমানা হয়েছিল।

Q.5 জয়রাম কোথা থেকে হাতি ক্রয় করলেন এবং কেন?

ANS:- জয়রাম বীরপুরের উমাচরণ লাহিড়ীর কাছ থেকে একটা বাচ্চা  হাতি ক্রয় করলেন। পাড়ার নগেন ডাক্তার ও জুনিয়র উকিল কুঞ্জবিহারী বাবুর অনোরোধে জয়রাম মোক্তার বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য পত্র মারফত চৌধুরি বাবুদের কাছে একটি হাতি ছেয়ে বসেন। চোধরিরা বা তার অনোরোধ প্রত্যাখান করেন। এতে তার মতো খ্যাতনামা মোক্তারের আত্মসম্মানে আঘাত লাগে। তাই তিনি হাতি ক্রয় করে ফেলেন।

Q.6 কে, কার কাছে হাতি চেয়ে পাঠিয়েছিলেন?

ANS:- জয়রাম মোক্তার চৌধুরি রায় বাহাদুরের কাছে তার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে পত্র মারফত হাতি চেয়ে পাঠান।

Q.7  “আপনি জ্ঞানী লোক, মায়া পরিত্যাগ করোন।” উক্তিটি কার? কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি করা হয়েছে?

ANS:- উক্তিটি জয়রামবাবুর বন্ধুদের। জয়রাম বাবু বড়ো নাতিনি কল্যাণীর এক জায়গায় বিয়ে স্থির হয়েছে, আর আড়াই হাজার টাকা হলেই এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। কিন্তু জয়রামবাবুর আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। এরমধ্যে খবর আসে তার কনিষ্ঠ পুত্র বিএ পরীক্ষায় ফেল করেছে। সে সময় তার বন্ধুরা হাতিটিকে বিক্রি করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে উক্তিটি করা হয়েছে

Q.8 আদরিণী কে? আদরিণীকে নিয়ে জয়রাম কীরূপ সমস্যায় পড়েছিলেন?

ANS:- আদরিণী জয়য়রাম মোক্তারের পালিত মাদি হাতির নাম। জয়রাম মোক্তারের আর্থিক অবস্থা দিন দিন মন্দের দিকে যাচ্ছিল। দিন দিন ব্যয় বেড়েই যাচ্ছিল। এদিকে হাতিটির খরচের জন্য মাসে ত্রিশ চল্লিশ টাকার প্রযোজন হত। এই খরচ জোগানো তার কাছে একটি বড়ো রূপে সমস্যা দেখা দিয়েছিল।

Q.9 কল্যাণী কে? কত তারিখে বিয়ে ঠিক হয়েছিল?

ANS:- কল্যাণী হল জয়রাম মোক্তারের বড়ো নাতনি। ১০ই জ্যৈষ্ঠ তার বিয়ে স্থির হয়েছিল।

Q.10 ‘তাই ত! সব মাটি?’ কে কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন?

ANS:- সন্ধ্যার একটু আগে জয়রামবাবু বৈঠকখানায় বসে পাশাখেলা দেখছিলেন। সে সময় পত্রবাহক ভৃত্য ফিরে এসে জানাল যে চৌধুরি বাড়ি থেকে হাতি পাওয়া যায়নি। তাই বিয়ে বাড়িতে যাওয়া অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। এ প্রসঙ্গেই নগেন্দ্র বাবু উদ্ধৃত উক্তিটির অবতারণা করেছিলেন।

Q.11 পত্রবাহক ভৃত্য হাতি সম্পর্কে কী খবর এনেছিল?

ANS:- জয়রাম মোক্তার চৌধুরি বাহাদুরের কাছে পত্র মারফত বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য একটি হাতি চেয়ে পাঠান। কিন্তু সন্ধ্যার কিছু পূর্বে পত্রবাহক ভৃত্য ফিরে এসে জানায় যে, হাতি পাওয়া যায়নি। জয়রাম মোক্তার বিশদভাবে জানতে চাইলে ভৃত্য বলে, দেওয়ানজীকে চিঠি দিয়েছিল। তিনি চিঠি নিয়ে মহারাজের কাছে গিয়েছেন। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে খবর জানান যে, ‘বিয়ের নেমন্তন্ন হয়েছে তার জন্যে হাতি কেন? গোরুর গাড়িতে আসতে বোলো।’

 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Q.1 জয়রাম মুখোপাধ্যায় কে? তার স্বভাবের পরিচয় দাও।

ANS:- জয়রাম মুখোপাধ্যায় একজন নামকরা মোক্তার। তার হৃদয়খানি অত্যন্ত কোমল ও স্নেহপ্রবণ। তবে তার মেজাজ কিছুটা রুক্ষ প্রকৃতির। যৌবনে তিনি রীতিমত বদরাগী ছিলেন। সেকালে হাকিমেরা একটু অবিচার অত্যাচার করলেই তিনি রেগে চেঁচিয়ে অনর্থপাত করে তুলতেন। তিনি যেমন অর্থোপার্জন করতেন, তেমনি অকাতরে অনুদানও করতেন। অত্যাচারিত, উৎপাদিত গরীব লোকের মোকদম বিনা মাশুলে, এমনকী নিজ খরচে বহন করা পর্যন্ত চালিয়ে দিতেন।

Q.2 জয়রামের প্রথম দিকের জীবনযাপন কেমন ছিল?

ANS:- জয়রামের আদি নিবাস যশোর জেলায়। এখানে যখন প্রথম মোক্তারি করতে আসেন তখন তিনি অত্যন্ত গরীব ছিলেন। সহায় সম্পত্তি বলতে কিছুই তার ছিল না। কেবল মাত্র এক ক্যাম্বিসের বেগ আর একটি পিতলের ছটি সম্বল করে এপার বাংলায় আসেন। মাসিক তেরো সিকিতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে নিজের হাতে রেঁধে খেয়ে মোক্তারি ব্যবসা আরম্ভ করেছিলেন।

Q.3 ‘পরের জিনিষ, জোর ত নেই।’ উক্তিটি কার? কোন প্রসঙ্গে তিনি এই উক্তিটি করেছেন?

ANS:- জয়বামের জনৈক বন্ধু এই উক্তি করেছেন।

জয়রাম বাবু বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য ভূত্য মারফত পত্রযোগে মহারাজ নরেশচন্দ্র রায়চৌধুরির কাছে হাতি চেয়ে পাঠান। চৌধুরি বাবু সেই ভৃত্য মারফত জানান যে, বিয়ে বাড়িতে আসার জন্য হাতি পাঠানো যাবে না। এতে জয়রাম বাগে ক্ষোভে, লজ্জায়, রোষে একেবারে ক্ষিপ্ত প্রায় হয়ে ওঠেন। তার হাত-পা ঠক ঠক করে কাপতে থাকে। মুখমণ্ডলের শিরা-উপশিরা ফুলে উঠতে থাকে। জমায়েত হওয়া ভদ্রলোকেরা খেলা রন্ধ করে হাত গুটিয়ে নেন। সে সময়ই জয়রাম বাবুর জনৈক বন্ধু উদ্ধৃত উক্তিটি করেন।

Q.4 আদরিণী কে? তার আগমনে গ্রামে কী অবস্থা হয়েছিল বর্ণনা করো।

ANS:- আদরিণী জয়রাম বাবুর একটি মাদি হাতির নাম।

আদরিণী নামের মাদি হাতিটি জয়রামবাবুর বাড়িতে আসা মাত্র পাড়ার সকল ছেলেরা বৈঠকখানার উঠোনে এসে ভিড় করে দাড়ায়। দু-একটি ছেলে সুর করে বলতে থাকে – ‘হাতী, তোর গোদা পায়ে নাতি’। এতে বাড়ির লোকেরা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে অপমান করে তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।

Q.5 জয়রামের বাড়িতে আদরিণীকে কীরূপ আপ্যায়ন করা হয়েছিল?

ANS:- আদরিণী গিয়ে অন্তঃপুরে দরজার কাছে দাড়ায়। জয়রামবাবু বিপত্নীক ছিলেন। তাই তর বড়ো বউমা একটা ঘটিতে জল নিয়ে বাইরে এলেন। সেই জল ভয়ে ভয়ে কোনরকম হাতিটির চারটি পায়ে একটু একটু করে ঢেলে দেন। মাহুতের ইশারায় হাতি জানু পেতে বসলে বড়ো বউমা তেল ও সিদুর তার কপালে লেপে রাঙিয়ে দেন। ঘন ঘন শাঁখ বাজতে থাকে। তারপর আদরিণী উঠে দাড়ালে একটা ধামায় আতপচাল, কলা ও অন্যান্য মাঙ্গলিক দ্রব্য তার সামনে রাখা হয়। আদরিণী কিছুটা শুড় দিয়ে তোলে তোলে খায়। বেশির ভাগই চারদিকে ছড়িয়ে ফেলে দেয়।

Q.6 ‘যেনো হারানো ধন ফিরিয়া পাওয়া গিয়াছে’ উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

ANS:- জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের বড়ো নাতনি কল্যাণীর ১০ই জ্যৈষ্ঠ বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে। তার ‘আদরিণী’ নামের পোষা মাদি হাতিকে বামুন হাটের মেলায় বিক্রি করার জন্য আনা হয়েছে। হাতি বিক্রি করে টাকা হাতে এলে জয়রাম বাবু বিয়ের গহনা গড়তে দেবেন।

কিন্তু ১লা বৈশাখ সন্ধ্যার সময় আদরিণী বিক্রি না হয়ে ঘরে ফিরে এলো। উপযুক্ত মূল্য দেওয়ার মতো ক্রেতা জোটেনি। এদিকে আদরিণীকে ফিরে আসা দেখে বাড়ীতে কোলাহল পড়ে যায়। সে সময় আদরিণী বিক্রি হয়নি বলে কারোও মনে খেদের চিহ্ন দেখা যায়নি। বরং মনে হয়েছ যেনো হারানো ধন ফিরে পাওয়া গিয়েছে। সকলের আচরণে এরুপ মনে হতে লাগল।

Q.7 “যত দায় এই ষাট বৎসরের বুড়ারই ঘাড়ে। ষাট বৎসরের বুড়াটি কে? তিনি কীভাবে দায়ে পড়েছিলেন?

ANS:- ষাট বৎসরের বুড়োটি হলেন জয়রাম মুখোপাধ্যায়।

তিন ছেলে, নাতি নাতনি নিয়ে জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের বিরাট পরিবার। ছোট নাতনি কল্যাণী বারো বছরে পা দিয়েছে। দেখতে দেখতে যেরূপ বড়ো হয়ে উঠছে, যে তার বিয়ে তাড়াতাড়ি না দিলেই নয়। নানা জায়গা থেকে তার সম্বন্ধ আসছে, কিন্তু ঘর, বর মনের মতন হয় না। যদি বা ঘর বর মনের মতো হয়, তবে বরপক্ষ প্রচুর পণ দাবি করে বসে। মেয়ের বাপ এ বিষয়ে একেবারে নির্লিপ্ত। সে নেশাভাঙ করে, তাস পাশা খেলে, বাঁশি বাজিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তাই যত দায় এই ষাট বছরের বুড়ো জয়রান মুখোপাধ্যায়ের ঘাড়ে পড়ে।

Q.8 ‘জানতে পেরেছে, ওরা অন্তর্যামী কিনা।’ উক্তিটি কার? ওরা বলাতে এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে? এখানে জানার ব্যাপারটা কী ব্যাখ্যা করো।

ANS:- উক্তিটি জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের। ‘ওরা’ বলতে এখানে ‘আদরিণী’ নামের মাদি হাতি সহ সমস্ত মূক প্রাণীদের কথা বলা হয়েছে। প্রাণীরা ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, অনুভব করতে পারে। তারা অন্তর থেকে তা অনুভব করে। আদরিণী বুঝতে পেরেছিল তাকে জয়রামবাবুর বাড়ি থেকে চিরদিনের মতো বিদায় জানাতে সবাই হাজির হয়েছে। তাই বিদায়বেলায় তার এত সেবা যত্ন। সে বুঝতে পেরেছে যে সে আর জয়রাম বাবুর বাড়িতে ফিরে আসবে না।

Q.9 ‘যাবার ত খুবই ইচ্ছে’ – কার কোথায় যাবার ইচ্ছে এবং কেন?

ANS:- নগেন্দ্র ডাক্তারের পীরগঞ্জের মেজবাবুর মেয়ের বিয়েতে যাবার খুবই ইচ্ছে। কারণ, লোকমুখে শুনেছেন খুব ধুমধাম করে মেজবাবুর মেয়ের বিয়ে হবে। বেনারস থেকে বাই আসছে, কলকাতা থেকে খেমটা আসছে। তাই তার যাবার খুবই ইচ্ছে হচ্ছে।

Q.10 “আমার স্ত্রীর যতটুকু আইন জ্ঞান আছে হুজুরের তাও নাই দেখছি।” – এখানে আমার স্ত্রী বলতে কার স্ত্রীর কথা বলা হয়েছে? হুজুরই বা কে? কেন তাকে একথা বলেছেন?

ANS:- এখানে আমার স্ত্রী বলতে জয়রাম মোক্তারের স্ত্রীর কথা বলা হয়েছে। হুজুর হলেন হাকিম। এক ডেপটির সামনে জয়রাম মোক্তার আইনের তর্ক করছিলেন, কিন্তু হাকিম কিছুতেই তাঁর কথায় সায় দিচ্ছিলেন না। অবশেষে রাগের মাথায় জয়রাম উল্লেখিত উক্তিটি বলেছেন।

Q.11 জয়রাম যে হাতি ভাড়ার বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন তার বয়ান নিজের ভাষায় লেখো।

ANS:- জয়রাম মোক্তারের তার পোষা মাদি হাতি ভাড়া দেওয়ার জন্য যে বিজ্ঞাপন দিচ্ছিল তার বয়ান তিনি নিজেই লিখেছিলেন। বয়ানের বিষয়বস্তু ছিল এইযে – বিয়ের শোভাযাত্রা, দূর-দূরান্তে যাতায়াত প্রভৃতি করার জন্য আদরিণী নামে এক মাদি হাতি ভাড়া দেওয়া হবে ভাড়া দিনে মাত্র তিন টাকা হস্তিনীর খোরাকি এক টাকা, মাহুতের খোরাকি ||0 একুনে 8||0  ধার্য করা হয়েছে। যাহার আবশ্যক হইবে নিম্নের ঠিকানায় তত্ত্ব লইবেন। এই বয়ানের নিচে ছিল জয়রামবাবুর নাম এবং ঠিকানা।

Q.12 এখন ব্যবসায়ের প্রতি জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের আর অনুরাগ নেই কেন?

ANS:- এখন ব্যবসায়ের প্রতি জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের আর সেই আগের মতো অনুরাগ নেই। ব্যবসার প্রতি বড়োই বিরক্ত হয়ে উঠেছেন। কারণ ছোকরা মোক্তারগণ যাদেরকে এক সময় উলঙ্গ অবস্থায় পথে খেলা করতে দেখেছেন, তারা এখন শামলা (আদাতের পোশাক বিশেষ) মাথায় দিয়ে তার প্রতিপক্ষ হয়ে দাড়িয়ে চোখ মুখ ঘুরিয়ে ফর ফর করে ইংরেজিতে হাকিমকে কী বলতে থাকে, তিনি তার কিছুই বুঝতে পারেন না। পাশে থাকা ইংরেজি জানা জুনিয়রকে ‘উনি কী বলেছেন?’ জিজ্ঞাসা করলে জুনিয়র তার তর্জমা করে তাকে বোঝাতে বোঝাতে অন্য প্রসঙ্গ এসে পড়ে। এতে মুখের জবাব তার মুখেই রয়ে যায়। নিস্ফল রোষে তিনি ফুলতে থাকেন। তাছাড়া আগে হাকিমগণ তাকে যেরূপ শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন, এখনকার নতুন হাকিমগণ আর তা করেন না।

 

Q.1 “….. ওদের একে একে বিক্র করে ফেল।” – উক্তিটি কার? কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করা হয়েছে? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

ANS:- উক্তিটি জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের। এ ব্যবসা ছেড়ে দেবার পর জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের তিন ছেলে, নাতি-নাতনি নিয়ে বিশাল সংসার কোন রকমে চলতে থাকে। সুদের টাকায় আর তার চলে না। ধীরে ধীরে তার মূলধনে হাত পড়তে লাগল। কোম্পানির কাগজের সংখ্যাও কমতে লাগল। এমতাবস্থায় বন্ধু-বান্ধবরা তাঁর ‘আদরিণী’ নামের হাতিটি বিক্রি করে খরচ কমাতে বলায় তিনি এই উক্তিটি করেছেন।

আসল কথা হল জয়রাম মুখোপাধ্যায় মশায় গত পাঁচ বছরে ‘আদরিণী’ নামের এই হাতিটিকে তাঁর নাতি নাতিনিদের মতোই ভালোবেসে ফেলেছেন। তাই খরচ কমানোর জন্য হাতিটিকে বিক্রি করে দিতে বলায় তিনি বলেছিলেন, “তার চেয়ে বল না, তোমার এই ছেলেপিলে নাতি-নাতনিদের খাওয়াতে অনেক টাকা ব্যয় যাচ্ছে ওদের একে একে বিক্রী করে ফেল।”

Q.2 “ওঁর মুখ দিয়ে ব্রহ্মবাক্য বেরিয়েছে …” ব্রহ্মবাক্য বলতে কী বোঝায়? কার মুখ দিয়ে এই বাক্য নির্গত হয়েছে এবং বাক্যটি কী?

ANS:- নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণের মুখনিঃসৃত বাক্যকে ব্রহ্মবাক্য বলা হয়। এই ব্রহ্মবাক্য বেরিয়েছে প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় রচিত ‘আদরিণী’ গল্পের প্রধান চরিত্র জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের মুখ থেকে। জয়রামের ‘আদরিণী’ নামের একটি মাদি হাতি ছিল যাকে জয়রাম ও তার পরিবার অতো ভালোবাসত। জয়রাম আদরিণীকে নিজ নাতি নাতনির মতো আদর কতেন। কিন্তু বয়স হওয়ার পর তার মুক্তারি ব্যবসা আর ভালো চলছিল না। এদিকে সংসারের ব্যয়ও বেড়েই চলছিল। তাই তার পক্ষে হাতি পোষাও কঠিন হয়ে পড়ে। আদরিনী কে পোষার জন্য জয়রামবাবুর মাসে ৩০-৪০ টাকা ব্যয় হয়। ব্যয়ভার লাঘব করার জন্য আদরিনী কে ভাড়াও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও সুবিধে হয়নি। তাই অবশেষে বন্ধুদের পরামর্শে তাকে বামুনহাটের মেলায় বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আদরিণীকে মেলায় পাঠানোর সময় জয়রামবাবু বলেছিলেন, ‘আদর, যাও মা, বামুনহাটের মেলা দেখে এস।’ উপযুক্ত মূল্য দেবার খরিদ্দার না পাওয়ায় আদরিণী বিক্রি হল না। কথায় বলে নিষ্ঠাবান বেদজ্ঞ রাহ্মণ কিছু বললে সেটা ফলবেই। তাই জয়রামের গ্রামেরই একজন প্রতিবেশী বলেছে, ‘জয়রামের মতো সৎ নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ দেখে এসো’ কথাটি বলেছিলেন বলেই আদরিণী বিক্রি না হয়ে আবার বাড়ি ফিরে এসেছে।

Q.3 আজ আর বৃদ্ধ তাহার কাছে গিয়া বিদায় সম্ভাষণ করিতে পারিলেন না। – বৃদ্ধটি কে? তিনি কাকে বিদায় সম্ভাষণ করতে পারলেন না এবং কেন?

ANS:- বৃদ্ধটি জয়রাম মুখোপাধ্যায়।।

তিনি ‘আদরিণী’ নামের তার মাদি হাতিটিকে বিদায় সম্ভাষণ করতে পারলেন না।

জয়রামবাবু পাঁচ বছর আগে আদরিণীকে কেনেন। এই প্রাণীটি তার বড়োই আদরের ছিল। তিনি তার নাতি-নাতনিদের মতো তাকে অত্যন্ত ভালো বাসতেন। কি বড়ো নাতনি কল্যাণীর বিয়েতে অর্থ সংগ্রহ করতে না পারায় একপ্রকার বাধ্য হয়ে বন্ধুদের পরামর্শে আদরিণীকে বিক্রি করতে বামুনহাটের মেলায় পাঠান। সেখানে উপযুক্ত দাম দেওয়ার মতো খদ্দের না মেলায় আদরিণী বাড়িতে ফিরে আসে। বামুনহাটের মেলার পর, সেখান থেকে আরও দশ ক্রোশ উত্তরে রসুলগঞ্জে এক সপ্তাহ ধরে আর এক মেলা হয়। যে সকল গরু-মহিষাদি বামুনহাটে বিক্রি হয় না সে সব গিয়ে রসূলগঞ্জে জমা হয়। সেখানেই আদরিণীকে পাঠাবার সিদ্ধান্ত হল। তাই আবার আদরিণী মেলায় যাবে। এবার আর মুখোপাধ্যায় মশায় তার কাছে গিয়ে বিদায় সম্ভাষণ করতে পারলেন না। কারণ আদরিণীকে বিদায় সম্ভাষণ করতে তার হৃদয় ভেঙ্গে পড়ছে। তাই বিদায়ের শেষ মুহুর্তে সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে আদরিণীকে বিদায় সম্ভাষণ করতে পারলেন না।

Q.4 ‘দাদামশায় আদর যাবার সময় কাদছিল।’- উক্তিটি কার? ‘আদর’ কে? সে কোথায় যাচ্ছিল? আদর যাবার সময় কাদছিল কেন?

ANS:- উক্তিটি জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের বড়ো নাতনি কল্যাণীর। ‘আদর’ হল জয়রামের ‘অদিরিণী’ নামের পোষা মাদি হাতি।

জয়রামবাবু আদরিণীকে রসুলগঞ্জের সপ্তাহব্যাপী মেলায় বিক্রির জন্য পাঠিয়েছিলেন। পশুরা তাদের দুঃখের কথা ভাষায় প্রকাশ করতে না পারলেও চোখে মুখে তার ছায়া ফুটে উঠে। আদরিণীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। জয়রামবাবু যে তাকে মেলায় বিক্রি করতে পাঠাচ্ছে এবং সে যে আর কোনো দিন এই বাড়িতে ফিরে আসতে পারবে না সেটা সেও(আদরিণী) বোঝতে পেরেছিল। তাই দুঃখে সে(আদরিণী) কাদছিল।

Q.5 আদরিণীর বিদায় পর্বে জয়রাম কী বলে মনকে প্রবোধ দিয়েছিলেন?

ANS:- আদরিণীকে জয়রাম সত্যিকারে ভালোবাসতেন। মেয়ের মতো তাকে আদর করতেন। তাই রসুলগঞ্জের মেলাতে তাকে বিক্রি করতে পাঠিয়ে দেওয়ার তার হৃদয় ভেঙ্গে গিয়েছিল। এরই মধ্যে বড়ো নাতিনি কল্যাণী এসে বললো “‘আদর’ যাবার সময় কাদছিল”। তখন তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাটিতে বসে পড়েন এবং বলতে থাকেন- “জানতে পেরেছে, ওরা অন্তর্যামী কিনা। ও বাড়িতে যে আর ফিরে আসবে না তা জানতে পেরেছে। যাবার সময় দেখা না করায় তিনি খুব কষ্ট পেয়েছেন। তাই কল্যাণীর চলে যাবার পর সজল নয়নে আপন-মনে বলতে থাকেন। যাবার সময় আমি তোর সঙ্গে দেখা করলাম না। সে কি তোকে অনাদর করে না। না তা নয়, তুই তো অন্তর্যামী। তুই কি আমার মনের কথা বুঝতে পারিসনি। খুকির বিয়েটা হয়ে যাক। তারপর তুই যার ঘরে যাবি তাদের বাড়ি গিয়ে আমি তোকে দেখে আসবো। তোর জন্য সন্দেশ নিয়ে যাব, রসগোল্লা নিয়ে যাবো। যতদিন বেঁচে থাকবে তোকে কি ভুলতে পারবো। মাঝে মাঝে গিয়ে তোকে দেখে আসবো। তুই মনে কোন অভিমান করিস নে মা।” আপন মনে এসকল কথা বলে জয়রাম মনকে প্রবোধ দিয়েছিলেন।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর

Q.1 জয়রামের চরিত্র বর্ণনা করো।

ANS:-জয়রাম ছিলেন এক বিখ্যাত মোক্তার, যিনি শুধু পেশাগত দক্ষতার কারণেই নয়, তার মানবিক গুণাবলির জন্যও বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। তার হৃদয় ছিল অত্যন্ত নরম ও স্নেহশীল, যদিও বাইরের আচরণে মাঝে মাঝে এক ধরনের রুক্ষতা প্রকাশ পেত। যৌবনে তিনি ছিলেন প্রবল বদরাগী; হাকিমদের সামান্য অবিচারও তিনি সহ্য করতে পারতেন না এবং তার তীব্র প্রতিবাদ করতেন। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মেজাজ অনেকটাই শান্ত ও স্থিতিশীল হয়ে ওঠে।

 

মোক্তারি করে তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করলেও তা নিজের বিলাসে ব্যয় না করে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করতেন। দরিদ্র, অত্যাচারিত ও উৎপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো ছিল তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য। তাদের মামলা তিনি প্রায়শই বিনা মাশুলে লড়তেন, এমনকি প্রয়োজন হলে নিজের অর্থ ব্যয় করতেও দ্বিধা করতেন না। এতে তার মানবিকতা ও সমাজসেবামূলক মানসিকতার পরিচয় স্পষ্ট হয়।

এছাড়া জয়রামের স্নেহপ্রবণ স্বভাব বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে তার পোষা মাদি হাতির প্রতি ভালোবাসায়। তিনি হাতিটিকে নিজের কন্যার মতো করে দেখাশোনা করতেন, যা তার কোমল হৃদয়ের পরিচয় বহন করে। কঠোরতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই স্নেহময় দিক পাঠকদের মনে গভীর দাগ কাটে।

সুতরাং বলা যায়, “আদরিণী” গল্পের জয়রাম এক বহুমাত্রিক চরিত্র। কখনো তিনি দৃঢ় প্রতিবাদী, কখনো সমাজসেবক, আবার কখনো স্নেহশীল হৃদয়ের অধিকারী। তার এই বিচিত্র বৈশিষ্ট্য পাঠকমনে সহজেই গভীর আকর্ষণ সৃষ্টি করে।

)Q.2 জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের জীবন সম্পর্কে যা জান লেখো।

ANS:- ANS:- জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের আদি নিবাস ছিল বর্তমান বাংলাদেশের যশোর জেলায়। জীবিকার সন্ধানে তিনি বহুদিন আগে এ অঞ্চলে মোক্তারি করতে আসেন। তখনকার দিনে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অতি দুর্বল। এখানে আসতে হলে তাঁকে পদ্মা নদী পার হতে হতো, কিছুটা পথ নৌকোয়, কিছুটা গরুর গাড়িতে এবং অবশিষ্টটা হেঁটে অতিক্রম করতে হয়েছিল। সেই সময় তার কোনো সম্পত্তি ছিল না, অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল একেবারেই দুর্বল। মাসিক তেরো সিকায় একটি ছোট ঘর ভাড়া করে তিনি নিজের হাতে রান্না করে একা মোক্তারি জীবন শুরু করেছিলেন।

 

অথচ এই সামান্য অবস্থা থেকে কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও মেধার জোরে তিনি একসময় এ জেলার প্রধান মোক্তার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। ধীরে ধীরে তার আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়। তিনি একটি পাকা দালান নির্মাণ করেন, নিজের বাগান ও পুকুর খনন করান এবং বেশ কিছু কোম্পানির কাগজও ক্রয় করেন। ফলে তিনি সমাজে এক বিশিষ্ট ও সম্মানিত অবস্থান লাভ করেন।

 

ইংরেজি জানা নতুন প্রজন্মের মোক্তাররা আসতে শুরু করলেও তার খ্যাতি ও প্রভাব একটুও হ্রাস পায়নি। অভিজ্ঞতা, বিচক্ষণতা ও ন্যায়নিষ্ঠার কারণে তিনি এখনও জেলার প্রধান মোক্তার হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন।

 

সব মিলিয়ে জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের জীবন এক প্রেরণার দৃষ্টান্ত। শূন্য হাতে শুরু করে তিনি যে একদিন সমৃদ্ধি ও সম্মান অর্জন করেছিলেন, তা তাঁর অধ্যবসায়, পরিশ্রম ও যোগ্যতার ফল।

Q.3 ‘হাতী দিলে না। হাত দিলে না।’ উক্তিটি কার? প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো।

ANS:- উক্তিটি জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের।

জয়রামবাবু চৌধুরি বাড়ির বাধা মোক্তার। তিনি অনেক দিন ধরে চোধুরিদের কাজ করে আসছেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই তার মনে হয়েছিল জমিদার নরেশ চন্দ্র রায় চৌধুরির মেয়ের বিয়েতে উপস্থিত হওয়ার জন্য হাতি চেয়ে পাঠালে অবশ্যই তিনি সে ব্যবস্থা করে দেবেন। তাই বন্ধুদের অনুরোধকল্পে তিনি চৌধুরি বাড়িতে ভৃত্য মারফত হাতি চেয়ে পাঠান। কিন্তু জয়রামের ভৃত্য চৌধুরি বাড়ি থেকে ফিরে এসে জানায়, হাতি পাওয়া যায়নি। সে জয়রামকে জানায় যে, দেওয়ানজীকে চিঠি দেওয়ার পর তিনি সেই চিঠি মহারাজের কাছে নিয়ে যান। কিছু সময় পর দেওয়ানজী ফিরে এসে বলেন, ‘বিয়ের নেমন্তন্ন হয়েছে তার জন্যে হাতী কেন? গোরুর গাড়িতে আসতে বোলো।’ একথা শুনে জয়রাম রাগে, ক্ষোভে, লজ্জায়, যেন একেবারে ক্ষিপ্তপ্রায় হয়ে উঠলেন। তার হাত পা ঠক ঠক করে কাঁপতে লাগল। মুখমণ্ডলের শিরা উপশিরাগুলি স্ফীত হয়ে উঠে। এতে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হন। তাই জয়রাম বাবু এই উক্তিটি করেছিলেন। আসলে চৌধুরি মশাই যে এভাবে তাকে অপদস্ত করতে পারেন, তা তিনি কখনো কল্পনাই করতে পারেননি।

Q.4 ‘এ বিবাহে আমার যাওয়াই হবে না’। উক্তিটি কার? এখানে কার বিয়ের কথা বলা হয়েছে? বক্তা ওই বিয়েতে যেতে চান না কেন?

ANS:- উদ্ধৃত উক্তিটি মোক্তার জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের।

এখানে পীরগঞ্জের জমিদার মেজবাবুর মেয়ের বিয়ের কথা বলা হয়েছে।

পাড়ার নগেন ডাক্তার, জুনিয়র উকিল কুঞ্জবিহারী এবং নামকরা মোক্তার জয়রাম মুখোপাধ্যায় এরা সবাই ওই বিয়েতে নিমন্ত্রণ পেয়েছে। কিন্তু তাদের এখানে যেতে এবং ফিরে আসতে দিন সময় লেগে যাবে। তাই ডাক্তার ও উকিলের অনরোধে জয়রাম মোক্তার বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য চৌধুরি বাবুদের কাছে একটি হাতি চেয়ে পাঠান। চৌধুরিরা জানান যে বিয়ে বাড়িতে আসার জন্য হাতি পাঠানো যাবে না। এতে জয়রাম চটে গিয়ে বিয়ে বাড়িতে নাযাওয়ার কথা বলেন। তিনি তিনিও জেদ করে বলেন যে বিয়ে বাড়িতে গেলে হাতী চড়েই যাবেন, তা না হলে বিয়ে বাড়িতে যাবেনই না। ওর মনে হয়েছে, চৌধুরীবাবুরা তাকে হাতী না দিয়ে বন্ধু বান্ধবদের কাছে যথেষ্ট ছোট করেছেন।

Q.5 মেজবাবুর মেয়ের বিয়েতে যাওয়ার জন্য জয়রাম কি উপায় অবলম্বন করলেন এবং কেন?

ANS:- পীরগঞ্জের জমিদার মেজবাবুর মেয়ের বিয়েতে নিমন্ত্রিত হন নগেন ডাক্তার, জুনিয়র উকিল কুঞ্জবিহারী এবং জয়রাম মোক্তার। কিন্তু বিয়েবাড়িতে যাওয়া মোটেই সহজ ছিল না। কারণ, সেখানে ঘোড়ার গাড়ির কোনো রাস্তা ছিল না। গরুর গাড়িতে গেলে যেতে দু’দিন এবং ফিরতেও দু’দিন লেগে যেত, যা ব্যস্ত মোক্তার জয়রামের পক্ষে খুবই অসুবিধাজনক ছিল।

     এই পরিস্থিতিতে নগেন ডাক্তার ও কুঞ্জবিহারীর অনুরোধে জয়রাম চৌধুরি পরিবারের কাছে একটি হাতি ধার চেয়ে পাঠান। কিন্তু চৌধুরিরা তাকে অপমানজনকভাবে জানিয়ে দেন যে, তিনি চাইলে গরুর গাড়িতে চড়ে আসতে পারেন। এতে জয়রাম ভীষণ রেগে যান। সম্মান রক্ষার্থে এবং নিজের মর্যাদা বজায় রাখতে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি কারও দয়া ভিক্ষা করবেন না।

   অবশেষে জয়রাম নিজেই একটি মাদি হাতি কিনে নেন এবং তার জন্য দুই হাজার টাকা খরচ করেন। এই হাতিতেই চড়ে তিনি গর্বের সঙ্গে মেজবাবুর বাড়ির বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন।

Q.6 জয়রাম কীভাবে সাংসারিক অচলাবস্থায় পড়লেন এবং কীভাবে তা থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করলেন তা বর্ণনা করো।

ANS:- জয়রাম মুখোপাধ্যায় একজন নামকরা মোক্তার ছিলেন। আইন বিষয়ে তার প্রচুর জ্ঞান ছিল। অধিকাংশ মামলা-মোকদ্দমায় তিনি জিততেন। সেই সুবাদে প্রচুর অর্থও উপার্জন করেছিলেন। তিনি কেবলমাত্র ক্যাম্বিসের একটি ব্যাগ এবং পেতলের একটি ঘটিকে সম্বল করে যশোর জেলা থেকে এপার বাংলায় মোক্তারি করতে এসেছিলেন। এখন তার পাকার দালানকোঠা, বাগান, পুকর। এছাড়া কোম্পানির কাগজ কিনেছেন। তিনপুত্র, দুই পুত্রবধূ, নাতি-নাতনি, চাকর-বাকর নিয়ে বিশাল পরিবার। এই পরিবার পরিচালনার জন্য জয়রাম মোক্তারকে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হত। কিন্তু বর্তমানে তার আয় অনেক কমেছে। এজলাসে ইংরেজি জানা অনেক উকিল, মোক্তার এসেছে। যার ফলস্বরূপ পুরনো মোক্তারদের আইন ব্যবসা লাটে উঠেছে। তাদের কদর আর এখন নেই। ফলে জয়রাম মোক্তারের আয় কমতে লাগল। ধীরে ধীরে মূলধনে তার হাত পড়ল। অপরদিকে সংসারের ব্যয়ভার বৃদ্ধি পেল। প্রথম দু’ছেলে কোন কাজকর্ম না করে কেবল আনন্দ ফুর্তি করে দিন কাটায়। ছোটো ছেলেটি কলকাতায় থেকে পড়াশুনা করে। এদিকে বড়ো নাতনি কল্যাণীর বিয়ের বয়স হয়েছে। কিন্তু বিয়ে দেওয়ার মতো অর্থ জয়রাম মোক্তারের নেই। এ ভাবেই তিনি সাংসারিক অচলাবস্থায় পড়েছিলেন। এরূপ অবস্থায় বন্ধুরা আদরিণীকে বেচে দেওয়ার পরামর্শ দেন। প্রথমদিকে জয়রাম মোক্তার বন্ধুদের পরামর্শ গ্রহণ করেননি। কিন্তু পরে তিনি বন্ধদের পরামর্শে ‘আদরিণী’কে বিক্রি করতে সম্মত হন। এভাবেই আর্থিক সংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার চেষ্টা করেন।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *