অসমের ভূগোল, Part-2, Class 10 SEBA, New Course

২৩। অসমে কী কী ধানের চাষ করা হয়? এদের বিষয়ে সংক্ষেপে লেখো।

Ans. অসমের প্রধান খাদ্যশস্য হলো ধান, এবং জলবায়ু ও ঋতু ভেদে এখানে প্রধানত তিন প্রকার ধানের চাষ করা হয়:

| ধানের প্রকার | চাষের সময়কাল | সংক্ষেপে বৈশিষ্ট্য |

| আমন (Sali/Winter Rice) | বীজ বোনা হয় মে-জুনে, ফসল কাটা হয় নভেম্বর-ডিসেম্বরে। | এটি অসমের প্রধান ধানের ফসল। এটি মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ৭০ শতাংশ। প্রচুর বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। |

| আউশ (Ahu/Autumn Rice) | বীজ বোনা হয় ফেব্রুয়ারি-এপ্রিলে, ফসল কাটা হয় জুন-জুলাইয়ে। | দ্রুত বর্ধনশীল। বৃষ্টি বা বন্যার আগে এটি কাটা হয়, তাই এটি প্রারম্ভিক ফসল হিসেবে পরিচিত। |

| বোড়ো (Boro/Summer Rice) | বীজ বোনা হয় নভেম্বর-জানুয়ারিতে, ফসল কাটা হয় মার্চ-মে মাসে। | এটি মূলত নদী বা বিলের ধারে হয় এবং চাষের জন্য সেচের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে এর উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। |

এছাড়াও, অসমের কিছু উপজাতি এবং পাহাড়ি অঞ্চলে জুম চাষের মাধ্যমে পাহাড়ি ধান (hill rice) এবং ঐতিহ্যবাহী কিছু স্থানীয় জাতের ধানের চাষও করা হয়।

২৪। ধান কেন অসমের প্রধান শস্য হিসেবে পরিগণিত হয়েছে?

Ans. ধান অসমের প্রধান শস্য হিসেবে পরিগণিত হওয়ার কারণগুলি হলো:

* অনুকূল পরিবেশ: অসমের উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু এবং উচ্চ বৃষ্টিপাত (বার্ষিক 1500 মিমি এর বেশি) ধান চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।

* উর্বর জমি: ব্রহ্মপুত্র ও বরাক উপত্যকার পলিমাটি ধান চাষের জন্য আদর্শ।

* ঐতিহ্যগত খাদ্য: ধান (ভাত) হলো অসমীয়াদের ঐতিহ্যগত প্রধান খাদ্য। তাই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এটি অপরিহার্য।

* জল ও শ্রমিক সহজলভ্যতা: বর্ষাকালে ধান চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জলের সহজলভ্যতা এবং কৃষিকাজে নিযুক্ত বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের সহজলভ্যতা ধান চাষকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।

* সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব: ধান চাষ গ্রামীণ অর্থনীতিকে মজবুত করে এবং বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক উৎসব (যেমন বিহু) ধান তোলার সঙ্গে যুক্ত।

২৫। অসমে কী কী ডাল-জাতীয় শস্যের চাষ করা হয়?

Ans. অসমে প্রধানত নিম্নলিখিত ডাল-জাতীয় শস্যগুলির চাষ করা হয়:

* মাসকলাই (Blackgram): এটি অসমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ডাল।

* মুগ (Greengram): অনেক জেলাতে, বিশেষ করে রবি মরসুমে এর চাষ হয়।

* অড়হর (Arhar/Pigeon Pea): এটিও বেশ কিছু অঞ্চলে, বিশেষত টিলা বা উঁচু জমিতে চাষ করা হয়।

* খেশারী (Lathyrus/Khesari): অপেক্ষাকৃত কম উর্বর জমিতেও এটি চাষ করা যায়।

* মটর (Pea): শীতকালে বা রবি মরসুমে চাষ করা হয়।

ডাল-জাতীয় শস্যগুলি মাটির উর্বরতা (বিশেষত নাইট্রোজেন সংবন্ধনের মাধ্যমে) বৃদ্ধি করে, তাই ধান চাষের পর এগুলো চাষ করা হয়।

২৬। অসমের জুম চাষের বিষয়ে সংক্ষেপে লেখো।

Ans. জুম চাষ বা স্থানান্তরিত কৃষি (Shifting Cultivation) হলো অসমের পাহাড়ি অঞ্চলগুলির (যেমন কার্বি আংলং ও ডিমা হাসাও) উপজাতিদের মধ্যে প্রচলিত এক ধরনের আদিম কৃষি পদ্ধতি।

* পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে পাহাড়ের ঢালু অঞ্চলের একটি অংশ পরিষ্কার করে (গাছপালা কেটে) এবং তা পুড়িয়ে ছাই মাটিতে মিশিয়ে উর্বরতা বাড়ানো হয়। তারপর সেই জমিতে কয়েক বছর ধরে ফসল (যেমন ধান, ভুট্টা, বাজরা) ফলানো হয়।

* স্থানান্তর: কয়েক বছর পর যখন মাটির উর্বরতা কমে যায়, তখন কৃষকরা সেই জমি পরিত্যক্ত রেখে নতুন একটি জমিতে একই পদ্ধতিতে চাষ শুরু করে।

* পরিবেশগত প্রভাব: যদিও এটি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবিকার একটি অংশ, তবে পরিবেশগত দিক থেকে এটি ধ্বংসাত্মক। এটি বন উজাড় (Deforestation), মাটি ক্ষয় (Soil Erosion) এবং পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। সরকার বর্তমানে এই পদ্ধতির পরিবর্তে স্থায়ী কৃষির প্রচারে জোর দিচ্ছে।

২৭। ২০১৪ সালের অসমের শিল্পীয় এবং বিনিয়োগ নীতির প্রধান লক্ষগুলি কী কী?

Ans. ২০১৪ সালের অসমের শিল্পীয় ও বিনিয়োগ নীতির (Assam Industrial and Investment Policy 2014) প্রধান লক্ষ্যগুলি ছিল:

* ব্যাপক শিল্পায়ন: অসমকে একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্যে পরিণত করা এবং দ্রুত শিল্পায়নের মাধ্যমে রাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা।

* কর্মসংস্থান সৃষ্টি: বিশেষত গ্রামীণ ও শিক্ষিত যুবকদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।

* পরিকাঠামো উন্নয়ন: শিল্পায়নকে সমর্থন করার জন্য বিদ্যুৎ, সড়ক, জল সরবরাহ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো শিল্প-সহায়ক পরিকাঠামো উন্নত করা।

* শিল্পের বৈচিত্র্য: শুধু চা ও তেল-ভিত্তিক শিল্পের উপর নির্ভর না করে, কৃষি-ভিত্তিক, পর্যটন এবং তথ্যপ্রযুক্তি (IT) সহ অন্যান্য নন-ট্র্যাডিশনাল শিল্পে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা।

* ছোট ও মাঝারি উদ্যোগের (MSME) প্রচার: ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলিকে আর্থিক সহায়তা ও প্রযুক্তিগত সমর্থন দিয়ে তাদের বিকাশকে উৎসাহিত করা।

* উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার: অসমকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য একটি ‘গেটওয়ে’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

২৮। পরিসেবা খণ্ডের শিল্পবলতে কী বোঝায়? উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে লেখো।

Ans. পরিসেবা খণ্ড (Service Sector) – পরিষেবা খণ্ড বলতে অর্থনীতির সেই অংশকে বোঝায় যেখানে পণ্য উৎপাদন না করে মূলত পরিষেবা প্রদান করা হয়। এই খণ্ডটিকে তৃতীয় খণ্ড (Tertiary Sector) বা সেবা ক্ষেত্র-ও বলা হয়। পরিসেবা খণ্ড সরাসরি মানুষের চাহিদা মেটায় বা অন্যান্য অর্থনৈতিক খণ্ডকে (কৃষি ও শিল্প) সহায়তা করে।

উদাহরণ

* পরিবহন ও যোগাযোগ: বাস, ট্রেন, বিমান দ্বারা যাত্রী ও পণ্য পরিবহন; ডাক পরিষেবা, ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা।

* ব্যাংকিং ও বীমা: ব্যাঙ্কগুলি দ্বারা আর্থিক পরিষেবা প্রদান এবং বীমা সংস্থাগুলি দ্বারা ঝুঁকি মোকাবিলার পরিষেবা।

* শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাসপাতাল, ক্লিনিক দ্বারা প্রদত্ত পরিষেবা।

* বাণিজ্য ও পর্যটন: দোকান ও বাজার দ্বারা পণ্য বিক্রয় এবং হোটেল, ট্রাভেল এজেন্সি দ্বারা পর্যটন পরিষেবা।

* তথ্যপ্রযুক্তি (IT) ও সফটওয়্যার: সফটওয়্যার তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ, কল সেন্টার পরিষেবা।

অসমের অর্থনীতিতে এই খণ্ডটির গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে, বিশেষত পর্যটন, পরিবহন ও ব্যাংকিং ক্ষেত্রে।

২৯। অসমের প্রধান কৃষিভিত্তিক শিল্পগুলি কী কী?

Ans. অসমে প্রচুর পরিমাণে কৃষি পণ্য উৎপাদিত হওয়ায় এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠেছে। প্রধানগুলি হলো:

* চা শিল্প (Tea Industry): এটি অসমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বৃহত্তম কৃষিভিত্তিক শিল্প। চা পাতা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ব্ল্যাক টি (Black Tea) তৈরি করা হয়।

* চিনি শিল্প (Sugar Industry): আখ থেকে চিনি উৎপাদনের জন্য কিছু চিনি কল রয়েছে।

* ধান কল (Rice Mills): উৎপাদিত ধান থেকে চাল বের করার জন্য অসংখ্য ছোট ও বড় ধান কল ছড়িয়ে রয়েছে।

* ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্প: আনারস, কমলা, কলা ও অন্যান্য ফল থেকে জ্যাম, জেলি, জুস এবং আচার তৈরির ছোট উদ্যোগ।

* পাট শিল্প (Jute Industry): পাটকে প্রক্রিয়াকরণ করে বস্তা, দড়ি ও অন্যান্য পণ্য তৈরির শিল্প।

* খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প: সরিষা, তিল ও অন্যান্য তেলবীজ থেকে তেল নিষ্কাশন।

৩০। অসমের চা শিল্পের বিষয়ে সংক্ষেপে লেখো।

Ans. অসমের চা শিল্প রাজ্যের অর্থনীতির ভিত্তি এবং এক বিশাল ঐতিহ্যের প্রতীক।

* ঐতিহাসিক গুরুত্ব: এটি ভারতে চা শিল্পের জন্মস্থান। ব্রিটিশ আমলে এর সূচনা হয় এবং ১৮৩৯ সালে এটি প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়।

* উৎপাদন: অসম বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ চা উৎপাদনকারী অঞ্চল এবং ভারতের মোট চা উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক এখানেই হয়। প্রধানত আসাম টি (Assam Tea) নামে পরিচিত একটি বিশেষ ধরনের কালো চা (Black Tea) উৎপাদিত হয়।

* বিশেষত্ব: অসমের চা তার গভীর রঙ, শক্তিশালী সুগন্ধ এবং তীব্র স্বাদের জন্য বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত।

* অর্থনৈতিক প্রভাব: চা শিল্প প্রচুর সংখ্যক মানুষের (বিশেষত চা বাগানের শ্রমিক) জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং রাজ্যের রাজস্ব ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে বিশাল অবদান রাখে।

* অবস্থান: রাজ্যের উচ্চ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা (ডিব্রুগড়, তিনসুকিয়া, শিবসাগর) এবং নিম্ন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার কিছু অংশ প্রধান চা উৎপাদনকারী এলাকা।

৩১। অসমে মীন শিল্পের বর্তমান অবস্থা কেমন আলোচনা করো?

Ans. অসমে মীন শিল্প (Fisheries) বা মৎস্য চাষের অবস্থা সম্ভাবনাময় হলেও কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

* বিশাল সম্ভাবনা: অসমকে ‘জলের দেশ’ বলা হয়। ব্রহ্মপুত্র ও বরাক নদী, অসংখ্য উপনদী, বিল (জলাশয়), পুষ্করিণী এবং জলাভূমি মৎস্য চাষের জন্য এক বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ সরবরাহ করে।

* অর্থনৈতিক ও জীবিকার গুরুত্ব: মৎস্য চাষ রাজ্যের বহু মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস এবং প্রোটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

* বর্তমান অবস্থা:

* রাজ্যটি মাছ উৎপাদনে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে, তবে এখনও চাহিদা পূরণের জন্য পার্শ্ববর্তী রাজ্য ও দেশ থেকে মাছ আমদানি করতে হয়।

* বিল ও জলাভূমিগুলির অবক্ষয় ও দূষণ প্রাকৃতিক মৎস্য উৎপাদন হ্রাস করছে।

* আধুনিক মৎস্য চাষ পদ্ধতি (যেমন বায়োফ্লক, খাঁচায় মাছ চাষ) এখনও পর্যাপ্তভাবে প্রয়োগ হয়নি।

* সরকারি উদ্যোগ: সরকার এখন মাছের উৎপাদন বাড়াতে মৎস্যজীবীদের প্রশিক্ষণ, উন্নত পোনা সরবরাহ এবং আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে এই খণ্ডকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে।

৩২। অসমের কৃষি উন্নয়নের সমস্যাগুলি উল্লেখ করো।

Ans. অসমের কৃষি উন্নয়নের প্রধান সমস্যাগুলি হলো:

* বন্যা ও ভূমি ক্ষয়: প্রতি বছর নিয়মিত ও ব্যাপক বন্যা ফসল ও কৃষি পরিকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি করে এবং নদীর ক্ষয়সাধন কৃষিজমি কমিয়ে দেয়।

* খণ্ডিত ও ক্ষুদ্র জমি: বেশিরভাগ কৃষকের হাতে ক্ষুদ্র ও বিচ্ছিন্ন জমি থাকায় আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার কঠিন হয়ে পড়ে।

* সেচের অভাব: পর্যাপ্ত জলসম্পদ থাকা সত্ত্বেও, আধুনিক সেচ ব্যবস্থার অভাবের কারণে চাষাবাদ এখনও বৃষ্টির জলের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীল।

* বাজারজাতকরণের সমস্যা: গ্রামীণ এলাকায় সঠিক পরিবহন ও সংরক্ষণাগার (কোল্ড স্টোরেজ) ব্যবস্থার অভাবে কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় না।

* আধুনিক পদ্ধতির অভাব: বেশিরভাগ কৃষক এখনও ঐতিহ্যবাহী চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার করেন, যা ফসলের উৎপাদনশীলতাকে কমিয়ে দেয়।

* ঋণ ও পুঁজির অভাব: ক্ষুদ্র কৃষকদের কাছে প্রয়োজনীয় বীজ, সার ও যন্ত্রপাতি কেনার জন্য পর্যাপ্ত ঋণ বা পুঁজির অভাব।

৩৩। অসমের শিল্পের বিকাশ এখনও কেন মন্থর হয়ে আছে তার কারণগুলি লেখো।

Ans. অসমের শিল্পের বিকাশ মন্থর হওয়ার প্রধান কারণগুলি হলো:

* দুর্বল পরিকাঠামো: শিল্প বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ, পরিবহন (সড়ক, রেল), এবং যোগাযোগ পরিকাঠামোর অভাব।

* ভূগোল ও বাজার: উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় অসম জাতীয় মূল বাজার থেকে ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন। ফলে উৎপাদিত পণ্য পরিবহন করতে অতিরিক্ত সময় ও খরচ লাগে।

* সীমিত পুঁজি ও বিনিয়োগ: বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ (যেমন বন্যা, বিদ্রোহ) এবং স্থানীয় পুঁজির অভাবের কারণে শিল্পপতিরা অসমে বিনিয়োগে দ্বিধা করেন।

* বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ: ঘন ঘন বন্যা শিল্প পরিকাঠামোর ক্ষতি করে এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত করে।

* কাঁচামালের ব্যবহার: চা এবং তেল/গ্যাস ছাড়া অন্য প্রাকৃতিক সম্পদগুলি (যেমন বাঁশ, বনজ পণ্য) পুরোপুরি শিল্পে ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটের অভাব।

* রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিদ্রোহ: অতীতে দীর্ঘ সময় ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিভিন্ন বিদ্রোহ বিনিয়োগের পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

৩৪। অসমের পর্যটন শিল্পের সমস্যাগুলি উল্লেখ করো।

Ans. অসমের পর্যটন শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, এর বিকাশের প্রধান সমস্যাগুলি হলো:

* দুর্বল পরিকাঠামো: পর্যটন স্থানগুলিতে ভালো রাস্তা, মানসম্পন্ন আবাসন (হোটেল, গেস্ট হাউস) এবং স্যানিটেশন সুবিধার অভাব।

* পরিবহন ও সংযোগ: অভ্যন্তরীণভাবে ভালো সড়ক যোগাযোগ এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে পৌঁছানোর জন্য পরিবহনের সহজলভ্যতার অভাব।

* পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সচেতনতা: কিছু অঞ্চলে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে পর্যটনবান্ধব আচরণের সচেতনতার অভাব।

* বাজারজাতকরণ ও প্রচারের অভাব: অসমের পর্যটন কেন্দ্রগুলি, বিশেষত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে, পর্যাপ্তভাবে প্রচারিত নয়।

* পর্যটনের বহুমুখীকরণ: পর্যটন মূলত বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ (যেমন কাজিরাঙা) এবং কিছু ঐতিহাসিক স্থানের উপর কেন্দ্রীভূত; অ্যাডভেঞ্চার, সংস্কৃতি বা স্বাস্থ্য পর্যটনের মতো অন্যান্য ক্ষেত্রগুলির বিকাশ এখনও কম।

৩৫। অসমের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনাগুলি কী কী?

Ans. অসমের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বেশ কিছু শক্তিশালী সম্ভাবনা রয়েছে, যেগুলি কাজে লাগালে রাজ্য দ্রুত উন্নতি করতে পারে:

* তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস: রাজ্যের বিপুল তেল ও গ্যাস সম্পদ ব্যবহার করে পেট্রোকেমিক্যাল, সার এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলির বিকাশ করা যেতে পারে।

* কৃষিভিত্তিক শিল্প: চা, বাঁশ, ফল ও মশলা-এর মতো কৃষি পণ্যের প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের (Food Processing) বিকাশ। অসমের বাঁশ সম্পদ ব্যবহার করে কাগজের কল ও হস্তশিল্পের উন্নতি সম্ভব।

* পর্যটন: কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান, মানস, মাজুলীর মতো সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক স্থানগুলির সঠিক প্রচার ও পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পকে শক্তিশালী করা।

* জলবিদ্যুৎ: ব্রহ্মপুত্র ও এর উপনদীগুলির বিশাল জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনা ব্যবহার করে রাজ্যের বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণ এবং শিল্পায়নকে সমর্থন করা।

* জলপথ: ব্রহ্মপুত্র নদীকে জাতীয় জলপথ-২ হিসেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি করা।

* ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান: ভারত সরকারের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি-র কারণে অসমকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং এশিয়ান দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্য ও সংযোগের কেন্দ্রবিন্দু বা প্রবেশদ্বার (Gateway) হিসেবে গড়ে তোলা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *