পাঠ্যবইয়ের ভিতরের এবং অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর
অসমের নদী: ক্রিয়াকলাপ ও অনুশীলনী (পৃষ্ঠা ৫৫ – ৬১)
পৃষ্ঠা ৫৮ (ক্রিয়াকলাপ)
প্রশ্ন ১. (ক) ব্রহ্মপুত্রের উত্তরের প্রধান উপনদীগুলোর একটি তালিকা তৈরি করো।
উত্তর ১. (ক) ব্রহ্মপুত্রের উত্তরের প্রধান উপনদীগুলোর তালিকা:
— সিয়াং
— দিবং
— লোহিত
— সিমেন
— জীয়াঢল
— রাঙানদী
— ভরলি
— সোবণশিরি
— পাগলদিয়া
— পুঠিমারি
— বেঁকি
— মানস
— সোনকোষ
— গঙ্গাধর
প্রশ্ন ২. (খ) ডিব্রু-সৈখোয়া, কাজিরাঙা এবং লাউখোয়া ব্রহ্মপুত্র নদীর কোন পারে অবস্থিত?
উত্তর ২. (খ)
* ডিব্রু-সৈখোয়া—ব্রহ্মপুত্র নদীর উত্তর পারে অবস্থিত।
* কাজিরাঙা—ব্রহ্মপুত্র নদীর দক্ষিণ পারে অবস্থিত।
* লাউখোয়া—ব্রহ্মপুত্র নদীর দক্ষিণ পারে অবস্থিত।
পৃষ্ঠা ৫৯ (ক্রিয়াকলাপ)
প্রশ্ন ১. চিত্র ৭.৬তে দেওয়া মানচিত্রটি দেখে ব্রহ্মপুত্রের উত্তর এবং দক্ষিণ পারের প্রধান উপনদীগুলোর দুটো তালিকা প্রস্তুত করো।
উত্তর ১. চিত্র ৭.৬ অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্রের উত্তর ও দক্ষিণ পারের প্রধান উপনদীগুলোর তালিকা:
ব্রহ্মপুত্রের উত্তর পারের উপনদীসমূহ
— সিয়াং
— দিবং
— লোহিত
— সিমেন
— জীয়াঢল
— রাঙানদী
— ভরলি
— পাগলদিয়া
— পুঠিমারি
— বেঁকি
— মানস
— সোনকোষ
— গঙ্গাধর
ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ পারের উপনদীসমূহ
— বুড়িদিহিং
— দিখৌ
— ভোগদৈ
— ধনশিরি
— কপিলি
— যমুনা
— কলং (শাখাদী)
— কৃষ্ণাই
— জিঞ্জিরাম
প্রশ্ন ২. ভূচিত্রাবলীতে অসমের মানচিত্র দেখে বুড়িস্রোত, খেরকটিয়া স্রোত এবং কলং স্রোত কোন কোন জেলা দিয়ে বয়ে গেছে লেখো।
উত্তর ২. ভূচিত্রাবলী অনুযায়ী এদের প্রবাহ:
* বুড়িস্রোত—(মূলত) তিনসুকিয়া জেলা দিয়ে প্রবাহিত।
* খেরকটিয়া স্রোত—(মূলত) ডিব্রুগড় জেলা দিয়ে প্রবাহিত।
* কলং স্রোত—(মূলত) নগাঁও এবং মরগাঁও (বর্তমানে হোজাই সহ) জেলা দিয়ে প্রবাহিত।
পৃষ্ঠা ৬২ (ক্রিয়াকলাপ)
প্রশ্ন ১. অসমের দুটি নদী বন্দরের নাম লেখো।
উত্তর ১. অসমের দুটি নদী বন্দরের নাম হলো—
— পাণ্ডু (গুয়াহাটি)
— ধুবড়ি
প্রশ্ন ২. তোমার শোনা কিছু গানে অসমের নদী-উপনদীগুলোর নামের উল্লেখ আছে, সেই নামগুলো লেখো।
উত্তর ২. অসমের নদী-উপনদীগুলোর নামের উল্লেখ আছে এমন কয়েকটি নাম (উদাহরণ):
— লুইত (ব্রহ্মপুত্রের প্রাচীন নাম)
— ব্রহ্মপুত্র
— বরাক
— দিহিং
— কপিলি
প্রশ্ন ৩. মানচিত্র দেখে বরাক নদীর প্রধান উপনদীগুলোর নাম লেখো।
উত্তর ৩. মানচিত্র ৭.১০ অনুযায়ী বরাক নদীর প্রধান উপনদীগুলোর নাম:
— জলেরা
— সাথাল
— মধুরা
— জাগাই
— ধলেশ্বরি
— কাটাখাল
— সোনাই
— লঙ্গাই
অনুশীলনী (পৃষ্ঠা ৬৪ – ৬৫)
১। সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও-
প্রশ্ন ১. (ক) ব্রহ্মপুত্র নদীর উৎসের হিমবাহটির নাম কী?
উত্তর ১. (ক) ব্রহ্মপুত্র নদীর উৎসের হিমবাহটির নাম হলো—চেমা-য়ুং-দুং (Chema-yung-dung) হিমবাহ।
প্রশ্ন ২. (খ) ব্রহ্মপুত্র নদীর মোট দৈর্ঘ্য কত?
উত্তর ২. (খ) ব্রহ্মপুত্র নদীর মোট দৈর্ঘ্য হলো—প্রায় ২,৯০৬ কিলোমিটার।
প্রশ্ন ৩. (গ) ব্রহ্মপুত্র নদীর উৎস কোন রাষ্ট্রে স্থিত?
উত্তর ৩. (গ) ব্রহ্মপুত্র নদীর উৎস তিব্বত (চীন) রাষ্ট্রে স্থিত।
প্রশ্ন ৪. (ঘ) উচ্চগতি অঞ্চলে নদীর গতিপথের আকৃতি কী ধরনের?
উত্তর ৪. (ঘ) উচ্চগতি অঞ্চলে নদীর গতিপথের আকৃতি—ইংরেজি V অক্ষরটির মতো (গিরিখাত) হয়।
প্রশ্ন ৫. (ঙ) ব্রহ্মপুত্র নদী কোন কোন রাষ্ট্রের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে?
উত্তর ৫. (ঙ) ব্রহ্মপুত্র নদী—চীন (তিব্বত)—ভারত (অরুণাচল প্রদেশ ও অসম)—এবং বাংলাদেশ—এই তিনটি রাষ্ট্রের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
২। শুদ্ধ উত্তরটি লেখো –
প্রশ্ন ১. (ক) গিরিখাত নিম্নভূমি/মোহনা/উচ্চভূমি অঞ্চলের ভূ-আকৃতি।
উত্তর ১. (ক) গিরিখাত উচ্চভূমি অঞ্চলের ভূ-আকৃতি।
প্রশ্ন ২. (খ) নদীর জালের মতো রূপ সাধারণত পর্বত/সমভূমি/মালভূমিতে দেখা যায়।
উত্তর ২. (খ) নদীর জালের মতো রূপ সাধারণত সমভূমিতে দেখা যায়।
প্রশ্ন ৩. (গ) প্লাবনভূমির চর নদীর খনন/পরিবহণ/অবক্ষেপণের ফলে সৃষ্টি হয়।
উত্তর ৩. (গ) প্লাবনভূমির চর নদীর অবক্ষেপণের ফলে সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন ৪. (ঘ) বরাক নদী অসমের ২/৩/৪টি জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে।
উত্তর ৪. (ঘ) বরাক নদী অসমের ৩টি জেলার (কাছাড়, হাইলাকান্দি, করিমগঞ্জ) মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে।
৩। ‘ক’ অংশের সঙ্গে ‘খ’ অংশ মেলাও –
| ‘ক’ অংশ | ‘খ’ অংশ (সঠিক মিল) |
|—|—|
| সাংপো | তিব্বত |
| মাজুলি | নদীদ্বীপ |
| অরুণাচল | সিয়াং |
| কলং | স্রোত |
| নদীদ্বীপ | মাজুলি |
| আঁকা-বাঁকা গতিপথ | সর্পিল গতি) |
দ্রষ্টব্য: ‘আঁকা-বাঁকা গতিপথ’ এবং ‘স্রোত’ এর সরাসরি মিলের চেয়ে ‘স্রোত’ এর সাথে ‘কলং’ নদীটিই অধিক প্রাসঙ্গিক, তবে প্রদত্ত বিকল্পে একটি মিল অতিরিক্ত থাকার কারণে এমনটা করা হলো।
৪। সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো-
প্রশ্ন ১. (ক) নদীর উচ্চগতি অংশের কার্য
উত্তর ১. (ক) নদীর উচ্চগতি অংশের কার্য:
— এটি মূলত পার্বত্য অঞ্চলে দেখা যায় যেখানে ভূমির ঢাল খাড়া থাকে।
— নদীর গতিপথে স্রোতের বেগ প্রবল থাকে।
— প্রধান কাজ হলো নদীগর্ভ খনন—প্রবল স্রোতে পাথর, বালি, মাটি ভেঙে নীচে নিয়ে যায়।
— উচ্চগতিতে নদীর আকৃতি ইংরেজি V অক্ষরের মতো গিরিখাত তৈরি করে।
প্রশ্ন ২. (খ) নদীর মধ্যগতি অংশের কার্য
উত্তর ২. (খ) নদীর মধ্যগতি অংশের কার্য:
— এটি সাধারণত সমভূমি অঞ্চলে দেখা যায়, যেখানে নদীর ঢাল মৃদু হয়।
— নদীর গতিবেগ তুলনামূলকভাবে ধীর থাকে।
— এই অংশে নদীর পার্শ্ব খনন (নদী ভাঙন) এবং অবক্ষেপণ (পলি জমানো) কার্য বেশি হয়।
— পার্শ্ব খনন ও অবক্ষেপণের ফলে নদীর গতিপথ আঁকা-বাঁকা বা সর্পিল (meandering) হয়।
প্রশ্ন ৩. (গ) নদীর নিম্নগতি অংশের কার্য
উত্তর ৩. (গ) নদীর নিম্নগতি অংশের কার্য:
— এটি নদীর মোহনার কাছাকাছি অংশে দেখা যায়, যেখানে নদীর ঢাল অতি কম এবং গতিবেগ অত্যন্ত ধীর।
— এখানে নদীর পলি পরিবহণ ক্ষমতা একেবারেই কম।
— প্রধান কাজ হলো অবক্ষেপণ—ফলে নদীর মোহনার অংশে ব-দ্বীপের সৃষ্টি হয়।
— গতিপথ অতি ধীর হওয়ায় ব্রহ্মপুত্রের মতো নদী এখানে জালের মতো অসংখ্য চরের সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন ৪. (ঘ) বরাক নদীর গতিপথ
উত্তর ৪. (ঘ) বরাক নদীর গতিপথ:
— বরাক নদীর উৎপত্তি নাগাল্যান্ড ও মণিপুরের সীমান্তবর্তী মরাম অঞ্চল থেকে।
— উৎস থেকে মণিপুরের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে মণিপুর-মিজোরাম সীমান্তে উত্তর দিকে গতি করে।
— অসমে প্রবেশ করার আগে জিরি নাম নিয়ে পশ্চিম দিকে ঘুরে কাছাড় জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।
— এরপর হাইলাকান্দি এবং করিমগঞ্জ জেলার উত্তর অংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কুশিয়ারা এবং সুরমা নামে দু ভাগে ভাগ হয়।
— এই শাখাগুলো পুনরায় মিলে মেঘনা নামে পদ্মার সঙ্গে মিশে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
— অসম ও বাংলাদেশে এর গতিপথ অতি সর্পিল এবং অসংখ্য জলাশয় সৃষ্টি হয়েছে।
৫। উৎস থেকে মোহনা অবধি ব্রহ্মপুত্র নদীকে বিভিন্ন স্থানে কী কী নামে জানা যায়।
উত্তর ৫. উৎস থেকে মোহনা অবধি ব্রহ্মপুত্র নদীকে বিভিন্ন স্থানে যেসব নামে জানা যায়:
— সাংপো: তিব্বত মালভূমি অংশে।
— সিয়াং: অরুণাচল প্রদেশের উপরের অংশে (পার্বত্য অঞ্চলে)।
— দিহং: পাশিঘাটের দক্ষিণে অসমের সমভূমিতে প্রবেশের সময় (শদিয়ার কাছে দিবং ও লোহিতের সঙ্গে মেশার আগে পর্যন্ত)।
— ব্রহ্মপুত্র: শদিয়ার কাছে দিবং ও লোহিত নদীর সঙ্গে মেশার পর ধুবড়ি পর্যন্ত অসম অংশে।
— লৌহিত্য/লোহিত/লুইত: ব্রহ্মপুত্রের অসম অংশের প্রাচীন নাম।
— যমুনা: বাংলাদেশে (গঙ্গার সঙ্গে মেশার পর)।
৭। নদী বা উপনদীর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বসবাস করা লোকদের সেই নদী বা উপনদীর সঙ্গে কী ধরনের সম্বন্ধ হয় লেখো।
উত্তর ৭. নদী বা উপনদীর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের লোকদের সঙ্গে এদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও বহুমুখী:
* অর্থনৈতিক সম্পর্ক: নদীর পলিমাটি কৃষি উৎপাদনের জন্য জমিকে উর্বর করে তোলে—মানুষ মাছ শিকারকে জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করে—নদী জলসিঞ্চন ব্যবস্থায় সাহায্য করে—এবং জল পরিবহণের মাধ্যমে যাতায়াত ও বাণিজ্যের সুবিধা দেয়।
* সাংস্কৃতিক সম্পর্ক: নদ-নদীগুলো কৃষ্টি-সংস্কৃতির উৎস হিসেবে বিশেষ স্থান অধিকার করে—স্থানীয় গান, নাটক ইত্যাদিতে নদীর উল্লেখ পাওয়া যায়।
* বিপদ ও সংগ্রাম: প্রতি বছর বন্যা ও নদী ভাঙনের কারণে মানুষের ঘর-বাড়ি, জীব-জন্তু, কৃষিক্ষেত্র ইত্যাদি বিস্তর ক্ষতি হয়—যা জীবনধারণে সংগ্রাম সৃষ্টি করে।
* পর্যটন ও বিনোদন: নদী ও তার পার্শ্ববর্তী তৃণভূমি, জলাশয়গুলো পরিবেশ-পর্যটনের আকর্ষণীয় ক্ষেত্র হতে পারে।
৯। গুয়াহাটি থেকে ডিব্রুগড় পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ পারে স্থিত উপনদীসমূহের নাম লেখো। প্রয়োজনবোধে শিক্ষক, ভূচিত্রাবলির সাহায্য নেবে।
উত্তর ৯. গুয়াহাটি থেকে ডিব্রুগড় পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ পারে স্থিত প্রধান উপনদীসমূহ হলো (পশ্চিম থেকে পূর্বে):
— ভরলু
— কপিলি
— কলং (শাখাদী)
— যমুনা
— ধনশিরি
— ভোগদৈ
— দিখৌ
— দিহিং (বুড়িদিহিং)
