অরুণিমা সিনহাঃ আত্মবিশ্বাস ও সাহসের এক নাম, Class 10 ,SEBA ,Bengali Medium

অরুণিমা সিনহা

ক। অরুণিমা রেলগাড়িতে চড়ে দিল্লি যাচ্ছিলেন—সিআইএসএফ-এর পরীক্ষা দিতে.

খ। অরুণিমার বয়স ছিল ২৪ বছর যখন দুর্ঘটনা ঘটে.t

গ। অরুণিমা ভলিবল খেলায় পারদর্শী ছিলেন, জাতীয় স্তরের খেলোয়াড় ছিলেন.

ঘ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অরুণিমার হিমালয় শিখরে ওঠার স্বপ্ন তীব্র হয়ে উঠেছিল.

৫। অরুণিমা নিম্নলিখিত সম্মান লাভ করেছিলেন: পদ্মশ্রী (২০১৫) তেনজিং নোরগে সম্মান  অ্যামেজিং ইন্ডিয়ান অ্যাওয়ার্ড

সম্মানসূচক ডক্টরেট, FLO সম্মান, অন্যান্য পুরস্কারt

সংক্ষিপ্ত উত্তর

ক। সোনার চেনটি মায়ের দেওয়া আশীর্বাদ ছিল, তাই ডাকাতদের হাতে দিতে চাননি.

খ। অরুণিমার বোন, পর্বতারোহী বাচেন্দ্রী পাল, ক্রিকেট খেলোয়াড় যুবরাজ সিং তাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন.

গ। ক্রিকেটার যুবরাজ সিং অরুণিমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন; তিনি নিজে ক্যান্সারে ভুগছিলেন.

ঘ। আইল্যান্ড পিক প্রথমে আরোহণ করেছিলেন, তার উচ্চতা ৬১৫০ মিটার.

৫। স্টিফেন হকিং একজন বিশ্ববিখ্যাত ব্রিটিশ পদার্থবিদ। তাঁর অসুবিধা—তিনি ‘এলএস’ নামে মোটর নিউরন রোগে  আক্রান্ত ছিলেন, যার ফলে দেহের চলাফেরা সীমিত হয়ে পড়েছিল.

দীর্ঘ উত্তর

অরুণিমা কোন ঘটনায় পা হারিয়েছিল? এই ঘটনা কি তাকে তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পেরেছিল?

Ans: অরুণিমা সিংহ একজন ভারতীয় পর্বতারোহী এবং প্রাক্তন জাতীয় ভলিবল খেলোয়াড়। ২০১১ সালে, তিনি লখনউ থেকে দিল্লি যাচ্ছিলেন একটি ট্রেনে করে, সেই সময় কিছু দুষ্কৃতী তার গলার সোনার চেন ছিনতাই করার চেষ্টা করে। বাধা দিলে তারা তাকে চলন্ত ট্রেন থেকে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এই ভয়াবহ ঘটনায়, পাশে আরেকটি দ্রুতগামী ট্রেনের ধাক্কায় তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন এবং তার বাঁ পা কেটে বাদ দিতে হয়।

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা তার মনোবলকে ভাঙতে পারেনি। বরং, এই ঘটনাই তাকে এক নতুন লক্ষ্যের দিকে চালিত করে। হাসপাতালে থাকার সময়ই তিনি স্থির করেন যে তিনি বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করবেন। তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে বিন্দুমাত্র দমাতে পারেনি। বরং, এটি তার সংকল্পকে আরও দৃঢ় করেছে। ২০১১ সালের সেই ভয়াবহ ঘটনার পর, নিজের অদম্য ইচ্ছা এবং দৃঢ় সংকল্পের জোরে অরুণিমা সিংহ ২০১৩ সালে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তিনিই প্রথম মহিলা যিনি কৃত্রিম পা নিয়ে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেন। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বা কোনো দুর্ঘটনা একজন দৃঢ়-সংকল্পবদ্ধ মানুষকে তার লক্ষ্য থেকে কখনওই বিচ্যুত করতে পারে না।

2 পর্বত অভিযানে অরুণিমা কী ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছিল? এবং কীভাবে তা অতিক্রম করেছিল?

Ans: পর্বতারোহী অরুণিমা সিন্‌হার জীবনকাহিনি মানব ইচ্ছাশক্তি ও সাহসের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। পর্বত অভিযাত্রার পথে তাঁকে অসংখ্য শারীরিক ও মানসিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। ট্রেন দুর্ঘটনায় একটি পা হারানোর পর কৃত্রিম পা নিয়ে হিমালয়ের মতো দুর্গম পথে এগোনো ছিল অকল্পনীয় চ্যালেঞ্জ। বরফঢাকা শৃঙ্গের প্রচণ্ড ঠান্ডা, হিমেল ঝড়, শ্বাসকষ্ট, অক্সিজেনের স্বল্পতা, তীব্র ব্যথা ও দুটি পা হতে রক্তপাত তাঁকে বারবার দুর্বল করে তুলেছিল। মৃত্যু-আশঙ্কা আর চরম ক্লান্তি প্রতিটি পদক্ষেপে তাঁকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।

অরুণিমা বুঝেছিলেন—শরীরের দুর্বলতা নয়, মানসিক শক্তিই সাফল্যের মূল ভিত্তি। তাই প্রতিটি কষ্টকে তিনি প্রেরণায় রূপান্তরিত করেছিলেন। অবশেষে ২০১৩ সালে তিনি এভারেস্ট জয় করে প্রমাণ করেন যে, প্রতিবন্ধকতা মানুষের স্বপ্নকে দমাতে পারে না। তাঁর এ সাফল্য শুধু ব্যক্তিগত জয় নয়, বরং সারা বিশ্বের কাছে সংগ্রাম ও সাহসের এক অনন্ত প্রেরণার কাহিনি।

✅গ। অরুণিমা সিনহার এভারেস্ট বিজয়ের কাহিনি বর্ণনা করো

Ans: অরুণিমা সিন্‌হার এভারেস্ট বিজয়ের কাহিনি মানব সাহস ও দৃঢ়তার এক অবিনশ্বর দৃষ্টান্ত। ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় একটি পা হারিয়েও তিনি চিকিৎসালয়ের শয্যা থেকেই সংকল্প করেছিলেন—একদিন বিশ্বের সর্বোচ্চ শিখরে জয়লাভ করবেন। সেই অদম্য ইচ্ছাশক্তিই তাঁকে এগিয়ে দেয় এক অনন্য পথে।

নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং-এ প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তিনি প্রথমে ৬১৫০ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক জয় করেন। এরপর টাটা স্টিল অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের সহায়তা ও কিংবদন্তি পর্বতারোহী বাচেন্দ্রী পালের দিকনির্দেশনায় তিনি কঠোর অনুশীলন শুরু করেন। প্রতিটি দিন ছিল সংগ্রামের, কিন্তু তাঁর লক্ষ্য ছিল সুদৃঢ়—এভারেস্ট জয়।

 

অবশেষে শুরু হয় পঞ্চান্ন দিনের এভারেস্ট অভিযান। পথে তীব্র ঠান্ডা, রক্তক্ষরণ, অক্সিজেনের অভাব, এমনকি মৃতদেহের মুখোমুখি হওয়ার মতো কঠিন অভিজ্ঞতা তাঁকে বারবার দুর্বল করে তুললেও তিনি হার মানেননি। অদম্য সাহস, অধ্যবসায় এবং অটল মনোবল তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যায় শিখরের দিকে।

অবশেষে ২০১৩ সালের ২১ মে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে অরুণিমা এভারেস্টের শিখরে ভারতের পতাকা স্থাপন করেন। তিনি হয়ে ওঠেন বিশ্বের প্রথম অঙ্গহীন নারী, যিনি এভারেস্ট জয় করেছেন। তাঁর এই বিজয় কেবল ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির কাছে প্রেরণার এক দীপ্ত দৃষ্টান্ত।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *